#শ্যামাবতী_প্রেয়সী
#পর্বঃ ৪
#জেসমিন_জেমি
শিকদার মহল আজ নিরব।
বাড়ীর বড় কর্তা মাহদুল শিকদার রাগে টগবগ করছে। তাদের বাড়ীর মেয়েকে ছোট করা তার সাথে উচু গলায় কথা বলা। মুখের উপর বলা রিজভীর কথা গুলো এখনোও কানে বাজছে । রিজভী মেকি হেসে মাহদুলকে বলেছে,
এতোই যখন আদরের মেয়ে তবে আপনার ছেলের বউ কেনো করছেন না মামা। অন্যের ঘাড়ে কেনো চাপাতে চাইছেন?
সহসা কথা বলতে পারেন নি মাহদুল শিকদার। রিজভী শব্দ করে হেসে উঠে বলেছিলো,
আপনারা নিজেদের আপদ আমার ঘাড়ে চাপাতে চাচ্ছিলেন?
মাহদুল শিকদার চেঁচিয়ে উঠতেই রিজভী তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
চিৎকার করছেন কেনো মামা?
পরপর বললো,
আপনাদের কথা মতো পরীকে বিয়ে করতে রাজি হলেও আমি কখনোই পরীকে মন থেকে বিয়ে করতে চাইনি। রইলো কথা পরীর মতো মেয়েকে আমি কেনো কোনো ছেলেই বিয়ে করতে চাইবে না। কেউ ই চাইবে না তার বউ পরীর মতো হোক।
মাহদুল শিকদার রাগে কা’পতে লাগলেন। রিজভী বেয়াদবকে সামনে পেলে নির্ঘাত কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতো এতোক্ষণে। মাহদুল শিকদার ফোনের এপাঁশ থেকে শক্ত গলায় বললো,
দুদিনের মধ্যে তোর থেকে ভালো ছেলে দেখে পরীর বিয়ে দিবো।
রিজভী অপাঁশে বাঁকা হাসলো, বললো
দেখা যাক তবে।
তাচ্ছিল্য স্বরে বললো,
তবুও নিজের ছেলের কথা বলছেন না।
দেখেছেন আপনারা নিজের ভালোটা ঠিকই বুঝেন।
রিজভীর প্রতিটা কথা মাহদুল শিকদারের রাগের পরিমান বাড়িয়ে দিচ্ছে। রিজভীর কথা গুলো আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে। মাহদুল শিকদার খট করে ফোন কেটে দিলো৷ লিভিং রুমে পিনপিন নিরবতায় ছেয়ে গেলো। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রিজভী ছেলেটা ভালো। ভালো একটা জব করছে। দেখতে শুনতে ভালো। তার থেকে বড় কথা এ বাড়ীর ছোট মেয়ে সাইদার ছেলে। সাইদা যখন অনেক করে নিজের ছেলের জন্য পরীকে চাইলো সবাই রাজি হয়ে গেলো। রিজভী তখন রাজি ছিলো হঠাৎ করে এমনটা হবে কেউ ভাবতেও পারেনি।
পরী কড়িডোরে দাঁড়িয়ে সবটা শুনলো। লজ্জায় তার ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে। দুচোখ বেয়ে অঝড়ে অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ছে। আল্লাহ তাকে কেনো কালো রঙ দিয়ে পৃথিবীতে পাঠালো? যেখানে তার প্রিয় বান্দারা সুন্দরের পূজারি। যেখানে সবাই সুন্দরের কদর করে। পৃথিবীতে শ্যামবর্ণের মানুষরা অবহেলিত। ওদেরকে কেউ ভালোবাসে না, কেউ না। বরং ওদেরকে সবাই আপদ মনে করে।
পরী দৌড়ে রুমে চলে গেলো পরীর সাথে সাথে রিপ্তী ও ছুটলো। পরী রুমে ঢুকেই দরজা আটকে দিলো। রিপ্তী চেঁচিয়ে বললো,
পরী আপা দরজা খুলো। দরজা খুলো।
পরী অপাঁশ থেকে বললো,
চিন্তা করিস না রিপ্তী। আমি ঠিক আছি।
যা এখান থেকে আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই।
রিপ্তী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
সত্যি ঠিক আছো তুমি?
পরী হ্যাঁ বললো রিপ্তী সরে এলো সেখান থেকে।
মাহমুদ শিকদার বড় ভাইজানের মেজাজ বিগড়ে গেছে বুঝেছে। তারও মেজাজ খারাপ হয়েছে রেগে আছে তবে ভাইজান যে অতিমাত্রায় রেগে গেছে। আয়রা বেগম আচলে মুখ চেপে কিচনে পা বাড়ালো৷ তার মেয়ের কপালে কি আছে কে জানে । মেয়েটা আর কত কথা শুনবে? আল্লাহ মেয়েটার কপালে কি রেখেছে? আল্লাহ কেনো মেয়েটার এতো পরিক্ষা নিচ্ছে?
মাহমুদ শিকদার ভাইজানকে বললো,
ভাইজান শান্ত হোন।
জুলেখা বেগম ছুটে এসে স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললো,
দয়া করে শান্ত হোন।
মাহদুল শিকদারের রাগ কমলো না। আজ বাদে কাল বিয়ে। টুকিটাকি কাজ বাদে সব কাজের বায়না দেওয়া হয়ে গেছে। বিয়ের কার্ড ছাপানোও বোধহয় হয়ে গেছে শুধু বাড়ীতে আসতে বাকি । বিয়েটা না হলে শিকদার বাড়ীর সম্মান থাকবে? মাহদুল রাগে হনহনিয়ে শিকদার মহল ছাড়লো। মাহমুদ শিকদার দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাইজানের পিছু ছুটলো।
—————–
রাত ১১ টা।
পরী ছাঁদের রেলিঙ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। ঠান্ডা হাওয়া বইছে চারপাঁশে। অন্ধকার রাত আকাশে চাঁদের দেখা নেই। ছাদের অন্যপাঁশটায় নিভু নিভু আলোয় বাতি জ্বলছে। এদিকটায় তেমন একটা আলো নেই। অন্ধকারে দূরের আকাশে তাকিয়ে আছে। হাতের উলটো পিঠে চোখের জ্বল মুছে নিলো মেয়েটা। উহু সে রিজভীর জন্য কাঁদছে না। তবে কেনো কাঁদছে সেই কারনটাও তার জানা নেই। পরী বেশ সময় ছাঁদে দাঁড়ালো। হঠাৎ করেই ছাদ পুরো অন্ধকার হয়ে গেলো। বাতিটা নিভে গেছে। কারেন্ট চলে গেছে হয়তো। পরী আঁশপাঁশে তাকালো। অন্ধকারে ধীরপায়ে হেঁটে ছাঁদের দরজায় আসতেই ডান হাতে টান অনুভব করলো পরী হকচকিয়ে উঠলো। ভয়ে চিৎকার করবে এমন সময় কেউ মুখ চেঁপে ধরলো। পরী অস্ফুটস্বরে উ উ উ শব্দ করলো। নিজের সামনে এক লম্বা চওড়া পুরুষ দাঁড়িয়ে সেটা ঠাহর করতে পারলো তবে অন্ধকারে লোকটাকে চিনতে পারলো না। পরী অন্ধকারে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো । পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে মেয়েটার ভয়ে আতঙ্কে কুঁকড়ে গেলো। গলা শুঁকিয়ে উঠলো। পরী ছুটার জন্য ছটফট করতে লাগলো কিন্তু পারলো না। লোকটার পড়নের শার্টের সামনের অংশ শক্ত করে চেঁপে ধরলো। লোকটা পরীর কানের কাছে হিসহিসিয়ে বললো,
হুসসসসস। ডোন্ট প্যানিক জান।
পরী আবারো নড়েচড়ে উঠলো লোকটা এবার অন্ধকারে পরীর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। পরী এক হাতে লোকটাকে ধাক্কা দিতেই লোকটা হিসহিসিয়ে বললো,
ইশশশশ! দিস ইস নট ফেয়ার শ্যামাবতী।
পরী চমকালো শ্যামাবতী? এই সেই লোক যে তাকে শাড়ী পাঠিয়েছে। পরী আবারো উ, উ, উ শব্দ করলো। লোকটা নিচু হয়ে পরীর চোখের পাতায় শব্দ করে চুমু এঁকে দিলো। হিসহিসিয়ে বললো,
উমম তুমি আমার হয়ে অন্যকারো জন্য কাঁদছো?
যত খুশি কেঁদে নাও। কেননা কালকের পর আমি ব্যতিত অন্য কারো নামে নিশ্বাসও নিতে পারবে না প্রেয়সী। জাস্ট কিছু সময়ের অপেক্ষা জান।
পরী গোল গোল চোখ করে সবটা শুনছে। পরী এটুকু বুঝতে পারছে লোকটা ভীষন লম্বাচওড়া। কেননা কথা বলার জন্য লোকটাকে বারবার নিচু হতে হচ্ছে। পরী বোধহয় লোকটার বুক সমান হবে এর জন্য লোকটাকে অনেকটুকু ঝুঁকতে হচ্ছে। এ বাড়ীতে এমন মানুষ তো একজন সে হচ্ছে মেহতাব ভাই। পরী মনে মনে আওড়ালো,
মেহতাব ভাই?
পরপর নিজেকে নিজে বললো,
ছিহ কি ভাবছিস পরী মেহতাব তোর বড় ভাই।
হঠাৎ লোকটা পরীকে ছেড়ে দিলো৷ অন্ধকারে চট করে পরীর থেকে সরে গেলো। পরী অন্ধকার হাতরে লোকটাকে খুঁজলো কিন্তু কাউকে পেলো না। হাতে মোবাইল নেই সিঁড়ির লাইট অফ । পরীর হাত পা এখনো কাঁপছে। পরী কাঁপাকাঁপা পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নিলেই সামনে লাইট জ্বলে উঠলো। সিঁড়িতে মোবাইলের ফ্লাশ অন করে মেহতাব দাঁড়িয়ে আছে। পরী কাঁপাকাঁপা গলায় ডাকলো,
মেহতাব ভাই।
মেহতাব ধীরকন্ঠে বললো,
হুম।
পরী বললো,
আপনি ছাদে ছিলেন?
মেহতাব ভ্রু কুঁচকালো থমথমে কন্ঠে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো,
না।
পরী কিছু বললো না। মেহতাবের পিছু পিছু নামলো।
——–
মেহতাব নিজের বেডে আধশোয়া হয়ে ফেসবুক স্ক্রল করছে । কিছু সময় পর এহতিশাম রুমে ঢুকলো। পড়নে ব্লাক শার্ট, গ্রে জিন্স। সিল্কি চুলগুলো এলেমেলো। ফর্সা লোমশযুক্ত হাতে ব্যান্ডের ব্লাক ওয়াচ। এইতো কিছুক্ষণ আগেই বাসায় ফিরেছিলো মেহতাব আর এহতিশাম৷ সকাল সকাল কোথাও একটা গিয়েছিলো। এহতিশাম রুমে ঢুকতেই মেহতাব কপাল কুচকালো। ভ্রু নাড়িয়ে বললো,
কোথায় ছিলি?
এহতিশাম ওয়াশরুমে যেতে যেতে বললো,
নিচে।
মেহতাব ‘ওহ’ বলে মোবাইলে মনোযোগ দিলো।
চলবে?
(ভুলক্রুটি মার্জনীয়)