#শ্যামারণ্য
#পর্বঃ৪৩ (অন্তিম পর্ব) (প্রথমাংশ)
লেখনীতেঃ #ফাহমিদা_মেহেজাবীন
(১৮+ এলার্ট দেওয়া হলো,কেউ চাইলে অংশটা স্কিপ করে যেতে পারেন,তাই আলাদা পোস্ট করেছি। বাকিটা সন্ধ্যায় পেয়ে যাবেন)
“তারপর আমি দড়জা খুলে দেখি আবার সোনালী আলো জ্বলজ্বল করছে,তারপর সেই দুনিয়ার অরণ্যের সাথে সেখানে পা রাখার কিছুক্ষণ পর ঠাস করে দড়জা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আওয়াজ আসে,চোখ খুলে দেখি আমি এখানে ফিরে এসেছি। তারপর দেখি আপনি উঠে বসেছেন। সেই শেকলটাও আর নেই আশেপাশে। তাহলে কি দাঁড়ালো বলুন বলুন,আমি আমার স্বামীকে গোটা একটা যুদ্ধ জয় করে ফিরিয়ে এনেছি।
আহ! আমার মহত্বের কথা যদি কোনো সাহিত্যিক জানতে পারতো,তাহলে গোটা একখানা উপন্যাস লিখে ফেলতো আমাদের জীবনের উপর,আর নাম দিতো ‘শ্যামারণ্য’। ”
শ্যামা বেশ রসিয়ে রসিয়ে অরণ্যকে পুরো গল্পটা বলে শোনালো।
অরণ্য সেই কখন থেকে ভ্রু কুঁচকে থম মেরে কি যেনো ভেবে চলেছে,কিছু বলছেও না। শ্যামা তার এতো সুন্দর কাহিনির এতো নীরস প্রতিক্রিয়া দেখে বিরক্ত হয়ে বলে উঠে,
“কি হলো?আমি কত কষ্ট করে ফিরিয়ে এনেছি আপনাকে,সব শুনে চুপ করে আছেন কেনো?কিছু তো বলুন।”
অরণ্য তার দিকে তাকিয়ে অভিমানী কন্ঠে বলে উঠে,
“তুমি ওকে চুমু খেয়েছো?”
শ্যামার তার কাজের জন্য বাহবা পাওয়ার সব আশায় জল ঢেলে যায় এই প্রশ্ন শুনে। সে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,
“আমার এতো বড় কাহিনিতে শুধু এই চুমুর অংশটুকুই মনে ধরেছে আপনার? আমি কিন্তু আগেভাগে বলে দিচ্ছি, এটা নিয়ে কোনো খোটা শুনবোনা আমি। আমার মাথা ঠিক ছিলোনা,ভুলে একটু আধটু হয়ে গেছে আরকি।”
অরণ্য পাল্টা প্রতিবাদ করে বলে,
“না না এসব বলে একদম পার পাওয়া যাবেনা। তুমি ওই ছেলেকে চুমু খাবে কেনো?চুমু দিয়েই তো পাগল বানিয়ে দিয়েছিলে,তাইতো আমার বউ নিজের জন্য চুরি করতে চেয়েছিলো বেয়াদব ছেলেটা।”
“উফফ অরণ্য, ওটাও একদিক থেকে ধরতে গেলে আপনিই ছিলেন। আপনার মতিগতি খারাপ,অন্য বেডার বউয়ের দিকে নজর দেন,সেটাতে আমার চুমুর কি দোষ? আর আপনার জন্য যে ইংরেজ সুন্দরীরা আপনার রান্নাঘরে গিয়ে বাঙালি রান্না পর্যন্ত করে খাওয়াতো সেই খোটা আমি একবারও দিয়েছি আপনাকে?”
“তুমি কিন্তু এখন কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছো শ্যামা। আর আমি মোটেও খোটা খাওয়ার মতো কোনো কাজ করিনি। দেখলেই তো আমি সেই জগতেও মানা করে দিয়েছিলাম। ”
শ্যামা ভেংচি কেটে বলে,
“হ্যাঁ একেবারে উদ্ধার করেছেন মানা করে দিয়ে। আগে যদি সময়মতো কঠোর গলায় মানা করে দিতেন তাহলে সেই মেয়ে আপনার রান্নাঘর পর্যন্ত পৌছাতো নাকি? কিন্তু না,করেন নি মানা,আপনার তো ভালো লাগে মেয়েরা আপনার পেছন পেছন ঘুরলে। ইচ্ছে করে করেন সব,আমি বুঝিতো।”
অরণ্য শ্যামাকে একটানে কাছে টেনে কোমড় জড়িয়ে ধরে,ঠোঁটের কোণে দুষ্টুমিমাখা হাসি খেলা করছে তার, শ্যামার কোমড়ে চিমটি কেটে বলে সে,
“কি বললে আবার বলো তো?আমি ইচ্ছে করে মেয়েদের আমার কাছে আসতে দিই?আমার ভালো লাগে ওরা আমার পেছনে ঘুরলে?”
শ্যামা ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠে,
“আহ লাগছে অরণ্য! আমিতো মজা করছিলাম শুধু। আপনি অনেক ভালো,এক আমিতে আসক্ত,আমি ধন্য আপনাকে পেয়ে। ছেড়ে দিন প্লিজ!”
অরণ্য শ্যামাকে এক ঝটকায় বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দেয় তার উপর।
চমকে উঠে শ্যামা হঠাৎ অরণ্যের এতো গভীরভাবে কাছে আসায়,অরণ্যের হৃদস্পন্দন পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছে সে,তার নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে তার চোখেমুখে,লজ্জায় অন্য পাশে মুখ ঘুরিয়ে নেয় সে।
কিন্তু অরণ্য তার থুতনিতে হাত রেখে মুখ ঘুরিয়ে তার দিকে মুখোমুখি করে নেয় আবার,চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের। লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠে শ্যামা। দুজনের হৃদস্পন্দন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে।
অরণ্য ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুষ্টুমির ছলে জিজ্ঞেস করে শ্যামাকে,
“আচ্ছা সব নাহয় বাদ দিলাম। আমি তোমাকে শখানেক চুমু কখন খেয়েছি বলোতো?এখনো তো পঞ্চাশও পার হয়নি।”
শ্যামা লজ্জায় দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলে বলে,
“এমনি বলে ফেলেছি সেটা। এগুলো আর না তুললে হয়না।”
অরণ্য শ্যামার দুই হাত মুখের উপর থেকে সরিয়ে দুই পাশে চেপে ধরে ঘোরলাগা কন্ঠে বলে উঠে,
“না তুললে কিভাবে হবে?আমার বউয়ের শ খানেক চুমু খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে,সেই ইচ্ছে পূরণ করতে হবেনা? তবে তোমার ইচ্ছে পূরণ করতে হলে কিন্তু চরম অবাধ্য হতে হবে আমাকে,আমি অবাধ্য হলে সহ্য করতে পারবে তো আমাকে শ্যামা?”
শ্যামা অরণ্যের কথার অর্থ বুঝতে পেরে লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নেয়,পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে তার উনার এমন নেশাক্ত চাহনির সামনে থেকে। কিন্তু অরণ্য তার বাহুবন্ধনী দিয়ে অনেক আগেই তার পালানোর সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
অরণ্য শ্যামাকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখে তার কানের কাছে নাক ঘষতে ঘষতে শান্ত কন্ঠে আদেশ করে,
“আমার দিকে তাকাও শ্যামা।”
অরণ্যের তপ্ত নিঃশ্বাস তার পুরো শরীরের লোম দাঁড় করিয়ে দেয় যেনো,আর সহ্য করতে না পেরে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় শ্যামা অরণ্যের ঘোর লাগা সর্বনাশা দৃষ্টির দিকে। অরণ্যও তাকায় শ্যামার মায়াবী চোখের দৃষ্টির দিকে, হারিয়ে যায় দুজনে একে অপরের চোখের মাদকতায়।
কয়েক ইঞ্চি ব্যবধানের অবসান ঘটিয়ে অধরে অধর ডুবিয়ে দেয় একে অপরের। একে অপরকে কাছে টেনে নেয় পরিপূর্ণভাবে।
আজ না কোনো জড়তা রয়েছে,না একে অপরকে হারানোর ভয়।
সকল বাধা থেকে মুক্ত দুটি হৃদয়ের মিলন হয়,মিলিত হয় দুটি দেহ। তাদের বৈবাহিক জীবনের নতুন সূচনা করে দুজনে।
ভোরের আলো যখন ফুটতে শুরু করেছে বাইরে,দুজনের কারোও চোখে ঘুম নেই তখনও। একে অপরের বাহুতে আবদ্ধ অবস্থায় একে অপরের দিকে ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে আছে দুজনে।
সূর্যের এক ফালি কিরণ যখন জানালা গলে এসে অরণ্যের কপালে পড়ে,শ্যামা অরণ্যের এলোমেলো চুলে বিলি কাটতে কাটতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আনমনেই বলে উঠে,
“সুন্দর…আজকের সূর্যের আলোটা একটু বেশিই সুন্দর,আর তার থেকেও বেশি সুন্দর এই আলোর নীচের আপনি। আপনার মুখে আছড়ে পড়া এই সূর্যের কিরণ আমাকে যেনো অভিনন্দন জানাচ্ছে, বলছে যে আজ থেকে না আমি ঘুম থেকে উঠে আমার পাশে শূন্য বিছানা পাবো,না আপনার আর্তনাদ শুনে ঘুম ভাঙবে আমার। আমার প্রতিটা সকাল এভাবেই শুরু হবে,আপনার বুকে মাথা রেখে,আপনার শরীরের সুবাসের সাথে। এই ভয় নিয়ে বাঁচতে হবেনা যে আপনি হারিয়ে যাবেন আমার সামনে থেকে, এখন থেকে আমাকে উঠেই ভাবতে হবেনা আজকের সারাদিনটা কিভাবে কাটবে আমার,অপেক্ষা করতে হবেনা রাতের,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে হবেনা আপনাকে কাছে পাওয়ার জন্য।
সত্যিই অরণ্য,আজকের সকালটা সবচেয়ে বেশি সুন্দর।
এই সকাল আমাকে উপহার হিসেবে আপনাকে দিয়েছে।”
অরণ্য শ্যামার এক গোছা চুল কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে স্মিত হেসে বলে উঠে,
“সত্যিই আজকের সকালটা অনেক বেশিই সুন্দর। ১০৪বছর পর এসেছে এই সকালটা আমার জীবনে। এমন একটা সকালের কথা অনেকবার কল্পনা করেছি আমি। কিন্তু এই সকালটা আমার কল্পনা থেকেও বেশি সুন্দর। কারণ এই সকালটা তুমি নিয়ে এসেছো আমার জীবনে,সাথে এইরকম অজস্র সকাল তোমার সাথে কাটানোর আমন্ত্রণ নিয়ে।
আমি সত্যি অনেক খুশি আজকে শ্যামা। আমার থেকে সুখী ব্যক্তি এই মুহুর্তে আর কেউ হতে পারেনা।
আর আমি এই সুখী জীবনের শুরু নতুনভাবে করতে চাই,আমাকে আরেকবার বিয়ে করবে শ্যামা?”
অবাক হয়ে বলে উঠে শ্যামা,
“আবার বিয়ে?আমাদের বিয়ে তো হয়ে গেছে।”
“না এভাবে নয়। পুরো নিয়ম মেনে। তোমার মা বাবার অনুমতি নেওয়া হবে,তাদের সন্তুষ্ট করে তাদের মেয়ের হাত চাইবো আমি,আংটি বদল হবে,হলুদ হবে, লাল বেনারসি পড়ে বউ সাজবে তুমি,আমি তোমার মা বাবা ও পুরো সমাজের উপস্তিতিতে তোমাকে নিজের করে নিয়ে আসবো।
আরও একবার তোমাকে নিজের করে নিবো,লুকিয়ে বা শর্তের আড়ালে নয়, পূর্ণাঙ্গ বধূ সাজিয়ে নিয়ে আসবো তোমাকে নিজের করে।”
শ্যামা লাজুক হেসে অরণ্যের বুকে মুখ লুকিয়ে বলে উঠে,
“আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আপনার জন্য চিন্তা হচ্ছে আমার।”
অরণ্য ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
“চিন্তা?চিন্তা কেনো হবে আমার জন্য?”
শ্যামা অরণ্যের উন্মুক্ত বুকে থুতনি ঠেকিয়ে মুখ উঁচু করে বলে উঠে,
“মা আর হেনা নাহয় আপনার চাঁদ মুখখানা দেখে পটে যাবে,কিন্তু আমার বাবা কিন্তু আমার জন্য পাত্র খোঁজার ব্যপারে অনেক খুতখুতে। উনাকে ইমপ্রেস করতে না পারলে কিন্তু উনি মেয়ে দিবেন না আপনার কাছে।”
“দিবেন না বললেই হলো নাকি?তুলে নিয়ে যাবো উনার মেয়েকে। দেখি তখন কিভাবে অনুমতি না দিয়ে থাকেন।”
শ্যামা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে অরণ্যের কথা শুনে। তাদের দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটির মধ্য দিয়েই শুরু হয় তাদের নতুন জীবনের প্রথম সকালটা।
(চলবে)
#শ্যামারণ্য
#পর্বঃ৪৩ (অন্তিম পর্ব) (বর্ধিতাংশ)
লেখনীতেঃ #ফাহমিদা_মেহেজাবীন
ট্রেনের জানালার ধারে বসে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছে অরণ্য,চলন্ত ট্রেনের হাওয়ার ঝাপটা তার চোখেমুখে আছড়ে পড়ছে,তার চুল গুলো আরও এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে সেই হাওয়া। আজ অনেক বছর পর এভাবে দিনের আলোতে ভ্রমণ করতে পেরে মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেছে তার।
বাইরের দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে একমনে কিছু একটা ভেবে চলেছে সে।
শ্যামা তার পাশেই বসে ব্যাগ হাতড়ে সব নিয়েছে কিনা আরেকবার চেক করে নিচ্ছে। আজকে তারা শ্যামার মা বাবার সাথে অরণ্যের প্রথম সাক্ষাতের জন্য যাচ্ছে।
শ্যামা এই নিয়ে অরণ্য থেকেও বেশি নার্ভাস,তাই বারবার একি ব্যাগ বারবার গুছিয়ে চলেছে।
এদিকে হঠাৎ কোণাচোখে লক্ষ্য করে শ্যামা,পাশের সিটের দুটি মেয়ে তখন থেকে অরণ্যকে চোখে গিলে খাচ্ছে। ব্যপারটা তার মোটেও সহ্য হলোনা।
সে এবার ব্যাগ পাশে রেখে অরণ্যের গা ঘেঁষে বসে তার বাহু জড়িয়ে নিয়ে মেয়েগুলোর দিকে কটমট চোখে তাকায়।
মেয়েগুলো তার ইশারা বুঝতে পেরে লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। ঠোঁট বাঁকিয়ে সন্তুষ্টির হাসি হাসে শ্যামা।
এদিকে অরণ্যের বাহুতে শ্যামার হাতের টান অনুভব করায় ফিরে তাকায় অরণ্য তার দিকে।
সে শ্যামার কান্ড কারখানা লক্ষ্য করে হেসে ফেলে। শ্যামা অরণ্যের হাসি দেখে গাল ফুলিয়ে বলে উঠে,
“একদম হাসবেন না। এই সবকিছু আপনার দোষ। কে বলেছিলো আপনাকে এতো সুন্দর হতে?একটু কম সুন্দর হলে কি কোনো ক্ষতি ছিলো?”
“আরে আমার উপর চটে যাচ্ছো কেনো?এখানে আমার কি দোষ?”
“সব দোষ ই আপনার।আপনি স্বামী আমার,আপনাকে দেখার অধিকার একমাত্র আমার। আপনাকে দেখে অন্য মেয়ে নয়ন জুড়াবে কেনো?”
“আচ্ছা বাবা সব আমার দোষ। দুঃখিত মহারাণী,হয়েছে?শান্ত হোন এখন।”
“শান্ত কিভাবে হবো?বাবা-মা যখন শুনবে আমাদের বিয়ের কথা তখন কি হবে ভেবে ভেবে আমার জান শুকিয়ে যাচ্ছে।
উনাদের তো বলতেও পারবো না যে কোন পরিস্থিতিতে বিয়ে হয়েছে আমাদের। বাবা তো এসব শুনেই রেগে যাবেন।”
অরণ্য শ্যামার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে তাকে শান্ত করার ভঙ্গিতে বলে উঠে,
“এতো বিচলিত হচ্ছো কেনো শ্যামা?সব ভালোই হবে,আমরা এর চেয়েও বড় বাধা পার করে এসেছি,তোমার বাবাকে মানানো তার চেয়ে কঠিন হবেনা নিশ্চয়ই?আর উনি না মানলে আমিতো বলেছিই পালিয়ে বিয়ে করে নিবো। এতো চিন্তা করিওনা,সব ভাবা আছে আমার।”
শ্যামা ভেংচি কেটে বলে,
“হ্যাঁ,সব ভেবে রেখেছেন উনি। সর্বজান্তা একেবারে। ধুর আপনি বুঝবেন না আমার চিন্তা। আমার জীবনে কিছুই এতো সহজে ঘটেনা।
আমার তো মনে হচ্ছে বাড়ি গিয়ে দেখবো, অন্য এক বিপদ আমাদের জন্য আগেভাগে গিয়ে অপেক্ষা করছে সেখানে।”
“তুমি একটু বেশিই ভাবছো শ্যামা। আর কোন বিপদ আসবে আমাদের? এসব বাদ দাও,কয়েক ঘন্টা পর তো এমনিতেই পৌছে যাবো সেখানে। এই কয়েকঘন্টা আর এতো চিন্তা করে কি হবে?শান্ত থাকো।”
শ্যামা অরণ্যের বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে বলে উঠে,
“মনের ভেতর একটা খচখচানি থেকেই যায় অরণ্য,যতই চেষ্টা করিনা কেনো বেশি না ভাবার। আমরা কি কিছু ভুলে যাচ্ছি? বারবার মনে হচ্ছে আমরা অনেক জরুরি কিছু মিস করে যাচ্ছি।”
“অবশ্যই অনেক জরুরি কিছু মিস করে যাচ্ছি।”
চমকে উঠে মুখ তুলে তাকায় শ্যামা,ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কি?কি মিস করে যাচ্ছি আমরা?”
অরণ্য গম্ভীর কন্ঠে জবাব দেয়,
“ওই জগতের অরণ্যের কাছে শ্যামা নেই।”
শ্যামা রেগে দুম করে একটা কিল বসিয়ে দেয় অরণ্যের বাহুতে,
“উফফ! ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি পুরো। ভেবেছিলাম সিরিয়াস কিছু বলবেন,এভাবে ভয় লাগাবেন না তো।”
অরণ্য ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠে,
“আমি কিন্তু যথেষ্ট সিরিয়াস এই ব্যপারে। ভেবে কুল পাচ্ছিনা আমি। সেই দুনিয়ায় আমার জীবনে তুমি নেই,তাহলে আমার কি হবে?”
“আপনি না ওই অরণ্যের উপর রেগে ছিলেন?এখন আবার মায়া দেখাচ্ছেন কেনো?তখন তো খুব ভাব নিচ্ছিলেন যে ওকে আমি রিজেক্ট করে এসেছি।”
“হ্যাঁ রেগে ছিলাম,খুশিও হয়েছি তুমি ওকে রিজেক্ট করে এসেছো। কিন্তু হাজার হোক,ওটাও আমি তো,মায়া তো হবেই। আমার এমন একটা জীবন কল্পনা করতেও গা শিরশির করে উঠছে যেখানে আমার স্ত্রী হিসেবে তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকবে।”
শ্যামা নির্লিপ্ত গলায় বলে উঠে,
“ওই জগতের অরণ্যের চিন্তা আপনাকে করতে হবেনা। উনার কাছে মা আছেন উনাকে দেখার জন্য,উনি ভালোই আছেন এই মুহুর্তে। আর আমার তো এখনো মনে হয় ওই জগতে আমিও নিশ্চয়ই আছি,বিয়ে আমার সাথেই হবে আপনার যেই দুনিয়াতেই যান,এই নিয়ে চিন্তা নেই আমার।”
অরণ্য ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে,
“তুমি এতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এতো ঠান্ডাভাবে কিভাবে নিতে পারো?”
“যেভাবে আপনি আমার বাবাকে মানানোর ব্যাপারটা এতো হালকাভাবে নিচ্ছেন সেভাবে আরকি।”
অরণ্য এবার চুপ হয়ে যায়,এর পিঠে কোনো উত্তর দিতে পারেনা। কিছুক্ষণ নীরব থেকে আবার হঠাৎ বলে উঠে,
“ওই জগতে যদি সত্যিই একটা তুমি থেকে থাকো,তাহলে আমার বিশ্বাস আমি তোমাকে খুঁজে না পেলেও তুমি ঠিক খুঁজে নিবে আমাকে।”
শ্যামা মুচকি হেসে বলে উঠে,
“একদম ঠিক,আপনি যতই দূরে চলে যান না কেনো,ঠিক খুঁজে নিবো আমি আপনাকে। আমার উপর বিশ্বাস রাখুন।”
অরণ্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্মিত হেসে বলে,
“তোমার বিশ্বাসের উপর পূর্ণ বিশ্বাস আছে আমার শ্যামা। আমি নিশ্চিত তুমি আমাকে ঠিক খুঁজে নিবে।”
শ্যামা অরণ্যের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে ছোট্ট করে জবাব দেয়,
“হুম”
অরণ্য শ্যামার কপালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বলে,
“ভালোবাসি… ”
শ্যামা মুচকি হেসে জবাব দেয়,
“আমিও ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে অরণ্য”
(সমাপ্ত)
[আপাতত এখানেই ইতি টানছি। আমার লেখা প্রথম গল্পটাকে এতো এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ 🙏❤️]