শ্রাবণধারা পর্ব-২২+২৩+২৪

0
82

“শ্রাবণধারা”
পর্ব- ২২
(নূর নাফিসা)
.
.
সকাল থেকেই খালিদ মেম্বার ও মাতবরদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিকেলের বিচার কার্যে উপস্থিত থাকার দাওয়াত করে এলো। দাওয়াত পর্ব শেষে একটু মজিদার সাথেও কথা বলে এসেছে সেই পথ ধরে আসতে। আফজাল হোসেন দুপুরের খাবার খেয়ে বারান্দায় হাতলযুক্ত চেয়ারে বসেছেন দাত খিলাতে। খালিদ এসে মোড়া টেনে মামার পাশে বসে দাওয়াতে উপস্থিত হওয়ার তালিকা ও উপস্থিত না হতে পারা সদস্যদের তালিকা ব্যক্ত করলো মৌখিকভাবে। পরক্ষণে গলার স্বর কিছুটা নিচু করে বললো,
“মামা, মজিদা মামির সঙ্গেও কথা সাইরা আইছি শ্রাবণের ব্যাপারে।”
আফজাল হোসেন উঠুন থেকে চোখ সরিয়ে খালিদের দিকে স্থির করে। খালিদ বলে,
“বাড়িঘরের ঠিকানা কিছু দিতে পারে নাই। জানে না নাকি। উনার এক বইন আছে। হেই বইনের লগে নাকি ক্যামনে পরিচয়। হের পরিচয় দিয়াই মজিদা মামিরে খালা ডেকে ঘর পাইছে। যে কয়দিন থাকছে তার কাছে, বাজারসদাই কইরা নিজেও খাইতো মজিদা মামিরেও খাওয়াইতো।”
“বোনের বাড়ি কই?”
“নিজস্ব বাড়ি নাই। শহরেই থাকে।”
“শহর শহর করছ, শহরের কোন জায়গায়? নির্দিষ্ট জায়গা নাই?”
“তা তো বলে নাই। শহর বলতে উনি শহরই চিনে।”
“পরিষ্কার তথ্য জানতে পারলেই জানাইছ। এই আউলা বাতাসের বাউল হওয়ার দরকার নাই।”
মামাকে সঠিক তথ্য দিতে না পারায় খালিদের মুখাবয়বে সামান্য হতাশা ভেসে উঠে। বাড়িঘর চিনলে না জায়গামতো গিয়ে খোঁজ করে আসতো। না জানলে তার আর কি করার? এমনি কথা বলতে বলতে পরী ও শ্রাবণকে দেখতে পায় পশ্চিম দিক হতে আসছে। পরীর হাতে একটা জাম্মুরা। গোয়ালের কাছের জাম্মুরা গাছ থেকে একটা জাম্মুরা পেরে নিতেই গিয়েছিল দুজন। ফিরছে ঘরে। তাদের দেখতেই খালিদ বিড়বিড়িয়ে মামাকে বলে,
“তার কাছে জিজ্ঞেস কইরা নিলেই তো হয়, মামা।”
কথা বলেন না আফজাল হোসেন। শ্রাবণ তাদের দুজনকে সেদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাথায় অর্ধেক তোলা আঁচল পুরোটা তুলে আনে৷ চুপচাপ বারান্দায় প্রবেশ করে। আফজাল হোসেন গম্ভীরমুখে পিছু ডাকেন।
“শ্রাবণ?”
ঘাড় ঘুরিয়ে পিছু ফিরে তাকায় শ্রাবণ।
“জ্বি, আব্বা?”
“তোমার আব্বার নাম কি?”
“কেন, আব্বা?”
“কইতে কি সমস্যা? জানতে পারি না?”
“না, ঠিক তা না। ভেবেছি কোনো জরুরী। আমার বাবার নাম আহমেদ।”
পাশ থেকে হুট করেই পরী বলে,
“আহমেদ? এইডা কোনো নাম হইলো, ভাবি?”
“কেন?”
“আগে পরে কিছু তো থাকবো। হুদা আহমেদ কিরুম হইলো?”
“হুম, রাখলে হয়তো থাকতেই পারে। নয়তোবা না।”
মুচকি হাসিতে উত্তর করে ঘরে চলে যায় শ্রাবণ। দরজাটা হালকা চাপিয়ে দেয়। পরী জাম্বুরা হাতে রান্নাঘরের দিকে চলে গেছে। কোনোরকম উদ্দেশ্যহীন কড়াকড়ি জিজ্ঞাসায়ও এগিয়ে যেতে পারেন না আফজাল হোসেন। তবে সন্দেহের চোখদুটো ক্রমশই আরও জড়ো হয়ে আসে। কথার মধ্যে কেমন একটা জটলা দেখতে পান। কিন্তু তার গহ্বরে প্রবেশ তো দূর, খোলসটা পর্যন্ত যেন স্পর্শ করতে পারেন না। খালিদকে যেতে বলে ভাবতে বসে যান। শহরে তেমন কোনো আত্মীয় তার নেই। আহমেদ নামেও কাউকে চিনে বলে স্মরণ করতে পারেন না। যা-ই রাজনৈতিক পর্যায়ে এমপি মন্ত্রীদের সাথে তার টুকটাক সাক্ষাৎ হয়, এদের মধ্যেও কেউ আছে কি না খেয়াল করতে পারছেন না। এমপি মন্ত্রীর মেয়ে তার ঘরেই আসতে যাবে কোন দুঃখে! ভেজালটা ঠিক কোথায়, ভেবে পাচ্ছেন না ঠিক। ভাবতে গেলেই বারবার কেন মনে হচ্ছে মেয়েটা তাকে ইচ্ছাকৃত এমন ভাবনায় ফেলতে চাইছে?
বিপু আর ইফতেখার দুজনেই একত্রে বাড়ি ফিরেছে এসময়। খালিদ মাত্রই তাদের সামনে দিয়ে গেলো গেইটের পথ ছেড়ে। কিছুটা এগিয়েই হঠাৎ কিছু মনে পড়তে আবার পিছু ফিরে বিপুকে ডাকে। দুই ভাই-ই পেছনে তাকিয়েছিল ডাকের সাথে সাথে। পরক্ষণে ইফতেখার গেইটের ভেতরে প্রবেশ করলেও বিপু দাঁড়িয়ে গেছে। চারেক কদম এগিয়েছে খালিদের দিকে। খালিদও এগিয়েছে সম গতিতে। মুখোমুখি হয়েই জিজ্ঞেস করে,
“কালকা তোর সাথে বোরকা পরা মাইয়াডা সত্তর মামার মাইয়া আছিলো না?”
“কবে? কখন?”
“কালকা দুপুরে।”
কিঞ্চিৎ চিন্তামগ্নতার ভঙ্গিতে থেকে বিপু জবাব দেয়,
“দুপু…রে। ও, হ্যাঁ। কান্তা ছিল। সত্তর কাকার মেয়েটাই।”
“তুই হের পিছে পিছে ঘুরছে ক্যা? হের আগেও দেখছি আমি।”
“এর আগে না আপনি আমাকে ভাবির পেছনে ঘুরতে দেখেছিলেন, খালিদ ভাই?”
“শ্রাবণের আগে তোরে ওই মাইয়ার সঙ্গেই বেশি দেখা গেছে। তারা তোগো শত্রুর চোখে দেখে জানছ, তারপরেও কি দরকারে তাগো সামনে পিছনে ঘুরঘুর করছ?”
বিপু ঠোঁটের ধারে সামান্য হাসি এলিয়ে বলে,
“তার সাথে আমার প্রেম। আব্বার কাছে বলে দিয়েন এইবার। আব্বা ব্যবস্থা করলেই ব্যাপারটা সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়। নয়তো ইফতি ভাইয়ের মতোই ঘটনা না দ্বিতীয়বার আমাকে ঘটাতে হয়। আপনি আমার বড় ভাই। কিছু তো করতেই পারেন আমার জন্য, খালিদ ভাই।”
তার মজার কথা যেন খালিদের চোখমুখকে আরও উগ্রতার দিকে নিয়ে যায়। বিপু মুখের হাসি সুস্পষ্ট করে চলে আসে বাড়িতে। সত্যিই প্রেম নাকি তাকে ক্ষেপাতে মজা করে গেলো, বুঝে এলো না খালিদের। হনহনিয়ে চলে যায় নিজ বাড়ির দিকে। সুস্পষ্ট হাসিমুখে গেইট দিয়ে প্রবেশ করলেও বাবাকে বারান্দায় বসে থাকতে দেখে হাসির রেশটা অনেকটাই অস্পষ্ট করে ঘরে আসে সে। এদিকে ইফতেখার নিজের ঘরে এসে যখন গোসলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, পকেটে নুপুর জোড়া শব্দ করে উঠলো। গতকাল দিয়ে এসেছিল ঠিক করতে। এখন নিয়ে এসেছে। ভাবলো, আগে শ্রাবণকে দিয়েই আসা যাক। অর্পার ঘরে দরজা চাপানো দেখে দ্বিধাহীনভাবে ঢুকে যেতে পারে না। বাইরে থেকে ডাকে তাই। শ্রাবণ ঘরে থেকে সাড়া দেয়,
“আমি এই ঘরে।”
দরজার এক কপাট ঠেলে ভেতরে আসে ইফতেখার। ঘুমানোর উদ্দেশ্যে শুয়ে ছিল শ্রাবণ। ইফতেখার ডাকতেই উঠে গেছে। পুনরায় দরজা চাপিয়ে ইফতেখার এগিয়ে এসে বলে,
“এখন শুয়ে আছো কেন? অসুস্থ?”
নামতে যেয়েও নামেনি শ্রাবণ। পা ঝুলিয়ে বসে থাকে বিছানায়।
“না। এমনি, ঘুমাতাম।”
“খেয়েছো?”
“নাশতা দেরিতে করলাম যে, ক্ষুধা নেই। ঘুম থেকে উঠে খাবো। আপনাকে খাবার দিবো? গোসল করেছেন?”
“না। করতে যাবো।”
মুঠোয় থাকা নুপুর এগিয়ে দেয় শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ তা নেওয়ার জন্য হাত এগিয়ে বলে,
“কাজ হয়ে গেছে?”
জবাব দেয়নি ইফতেখার। নুপুর জোড়াও নিতে দেয়নি শ্রাবণকে। পুনরায় নিজের মুঠোবন্দী করে নিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি স্পষ্ট করে তুলেছে। শ্রাবণ ভ্রু সামান্য কুচকে নেয় তার প্রতিক্রিয়ায়। মুখে বিদ্যমান রাখে ম্রিয়মাণ বিস্ময়ের হাসি। ইফতেখার নিরবেই তার প্রতিক্রিয়ার জানান দেয় পায়ের কাছে বসে। বুঝতে আর অপেক্ষা রাখে না শ্রাবণ। পা জোড়া পিছিয়ে নিতে চেয়ে বলে,
“করছেন কি! আমার কাছে দিন। আমি পরে নিবো।”
“বসো চুপচাপ। আমি কষ্ট করে ঠিক করে আনলাম না? তার প্রতিদানরূপই কিছু নিতে দাও।”
ঠোঁটের বাঁকে লাজুক হাসি এঁটে রেখে বসে থাকে শ্রাবণ। হাঁটু ভেঙে বসে হাঁটুতে এক পা তুলে নেয় ইফতেখার। তাতেই অস্বস্তি বড্ড রকমের বেড়ে আসে তার। সরিয়ে নিতে চেয়েও পারে না। নিশ্চুপ অস্বস্তি যাপন করে। এক পায়ে নুপুর পরিয়ে অন্য পা তুলে নেয় ইফতেখার। কোমল পায়ের মসৃণতা ও নুপুরের সৌন্দর্য তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেয় নিমেষে। ফুটফুটে গায়ের রঙও দৃষ্টি আকর্ষণের অন্যতম কারণ। প্রিয় পাত্রীর মোহে যেন নতুনভাবে পরে যায় সে। নুপুরখানা জড়িয়ে দিয়েই পা টা আরও উপরে তুলে এনে চুম্বন করে তাতে। শ্রাবণ অপ্রত্যাশিতভাবে কেঁপে উঠে মুহুর্তে। জোরপূর্বক পা টেনে নিয়ে হুট করেই দাঁড়িয়ে যায়। মুখের লজ্জা কিংবা হাসিভাব একদম উধাও। যেন অপ্রত্যাশিত এক রকম বিরক্তিই এসে গেছে মুখাবয়বে। কিঞ্চিৎ আশ্চর্য হয় ইফতেখার। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে দ্বিধাগ্রস্ত গলায় বলে,
“কি হলো?”
নিজ প্রতিক্রিয়ার উপর নিজেই যেন একটু বিব্রত হয়ে উঠে শ্রাবণ। মন ও মুখাবয়বের অস্থিরতা কাটানোর চেষ্টা করে পুনরায় লাজুক ভাবটা ধারণ করতে চায়। ইতস্তত গলায় বলে,
“এসব কি করছেন!”
ইফতেখার স্বস্তিকর পলক ফেলে মুচকি হেসে মাথা টেনে নেয় নিজের দিকে। কপালে চুম্বন করলে চোখ বুজে তা সাদরে অনুভব করে নেয় শ্রাবণ। ইফতেখার পরপরই বলে,
“আমার স্পর্শ কপাল দখল করতে পারলে পা কেন পারবে না?”
“তবুও। কেমন দেখায় না!”
“তুমি সর্বাঙ্গেই আমার কাছে সম্মানের।”
কথাটা কেমন হৃদয় গহীনে বিঁধে যায় শ্রাবণের। বিঁদ্ধ প্রতিক্রিয়া ভেসে উঠতে চায় চোখের কোটরে। দৃষ্টি উঠাতে চায় না সেই সংশয়ে। এমতাবস্থায় একা থাকার বড্ড প্রয়োজন মনে করে। চোখের কোটর ভিজে উঠার আগে নিজেকে একা করে তুলতে চায়। দৃষ্টি না তুলেই লাজুক হাসির সাথে কথার পরপরই তাকে ঠেলে দেয় বাইরের দিকে।
“যান, গোসল করে আসুন! ক’টা বাজে, খেয়াল আছে?”
লজ্জা পেয়েছে ভেবে ধাক্কার বেগেই হেসে চলে যায় ইফতেখার। সাথে সাথেই চোখের পাতা টিপে ধরে রাখে শ্রাবণ। এক ফোটা অশ্রু বাইরে গড়াতে না দেওয়ার চেষ্টা তার। সম্মান? ভরসা? যদি ক্ষুন্ন হয়ে আসে? এই ব্যাথা না প্রাণে, না চোখে সয়ে নিতে পারে ভাবতে গেলেই! এইতো, চেয়ারম্যান বাবার নাম জিজ্ঞেস করার পরই শতরঞ্জিত কতকিছু ভাবতে শুরু করে দিয়েছিল ইতোমধ্যে। ইফতেখারের স্পর্শও অপ্রত্যাশিত ও বিরক্তিকরভাবে ঝেঁকে ধরেছিল সেই ভাবনার পরিক্রমায়।

“শ্রাবণধারা”
পর্ব- ২৩
(নূর নাফিসা)
.
.
দুপুরের ঘুম আর হলো না শ্রাবণের। ইচ্ছাকৃতই ত্যাগ করেছে ঘুমের চিন্তাভাবনা। ইফতেখার গোসল করে এলে দুপুরের খাবার দিলো। নিজেও খেতে বসেছে তার সাথেই তাদের দুই ভাইয়ের ঘরে। ওদিকে পরী ব্যস্ত উঠুনে চেয়ার, পাটি বিছিয়ে দিতে। মানুষজন আসতে শুরু করেছে চেয়ারম্যান বাড়ি। বিচার বসবে খাঁয়ের আর লোকমান দুই ভাইয়ের পরিবারের। শ্রাবণ একটু বাইরে দেখে উঁকি দিয়ে। পরক্ষণে খেতে খেতে ইফতেখারকে জিজ্ঞেস করে,
“সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোথায় ছিলেন?”
“বাজারেই ছিলাম।”
“কি করছিলেন?”
“কেন?”
“এমনি, ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে একটু গোয়েন্দা গিন্নি হতে। ওইযে, কাজ শেষে ঘরে ফিরলে স্ত্রী যেমন কৈফিয়ত চায় না? তেমনই।”
বলেই হেসে উঠে শ্রাবণ। ইফতেখারও মৃদু হাসে। পানি পান করে গ্লাস খালি করে বলে,
“ক্লাবে এমনি বসেছিলাম কতক্ষণ। তারপর তোমার নুপুর নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।”
“ইশ! কি অবসর দিনকাল! সনয়টাকে কাজে লাগানো যায় না কোনোভাবে? ইচ্ছে করে না, চাকরি বাকরি করতে?”
“প্রয়োজন দেখি না।”
“আসলেই দেখেন না? নুপুর ঠিক করতে কত টাকা নিলো?”
“দুইশো।”
“টাকা কোত্থেকে খরচ করেছেন?”
এমন জিজ্ঞাসায় প্লেট থেকে দৃষ্টি উঠিয়ে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়,
“কোত্থেকে আবার? আমার থেকে।”
খালি গ্লাসে পানি ঢেলে পূর্ণ করতে করতে শ্রাবণ বলে,
“সেটাই তো কথা৷ আপনার টাকাটা এসেছে কোত্থেকে? নিশ্চয়ই আব্বার কাছে থেকে?”
“তো আর কোত্থেকে?”
কথার সাথে মৃদু হাসির চেষ্টা করে পুনরায় প্লেটে মনযোগ দেয় ইফতেখার। শ্রাবণও নিজ মুখে সেইটুকু সামান্য হাসি এঁটে রেখে বলে,
“নিজে কিছু করেন না কেন?”
“কি করবো?”
“সাধ্যে, সামর্থ্যে, সততায় যা করা সম্ভব হয়, তা-ই করবেন। তবুও তো কিছু করার একান্তই দরকার আছে আপনার। ভেবে দেখুন, দুইশো টাকার প্রয়োজন হলেও বাবার কাছ থেকে নিবেন। দশ টাকার প্রয়োজন হলেও বাবার কাছ থেকেই নিবেন। আবার লাখ টাকার প্রয়োজন হলেও তা-ই করবেন। কিন্তু আপনার নিজের ইনকামটা তবে কোথায় রয়ে গেলো? বড় কি এখনো হননি? আব্বার চেয়ারম্যান পদ আর কতদিন? এরপর কি সেই আসনটায় আপনি বসবেন?”
কথার মর্মার্থ বুঝতে ভ্রুর কোণ সূক্ষ্ম হয়ে আসে। মনযোগ দেয় সে শ্রাবণের মুখে। শ্রাবণ জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ থেমে আবার বলে,
“আচ্ছা, ঠিক আছে। আপনিই বসার সিদ্ধান্ত নিলেন। তাতেই কি সফল হয়ে গেলেন? পদ যে দখলে পাবেনই নিশ্চয়তা আছে কোনো? আচ্ছা, পেলেনই। তারপর কয়বছর হবে তার স্থায়িত্বকাল? এলাকার মানুষ কি এতোই বেকুব যে ধারাবাহিকভাবে আপনাদের পরিবারকেই চেয়ারম্যান আসনে বসতে দিবেন? এরপর রইলো জমিজমা। আপনার বাবা তার মধ্যে কিছু আবাদযোগ্য রেখেছেন। টুকটাক আয় সেখান থেকে উঠে আসে। সবমিলে দিব্যি চলে যাচ্ছে দিনকাল। কিন্তু দিনের সাথে লোকমুখের গুঞ্জনও কিন্তু বাড়ছে। চেয়ারম্যান জনকল্যাণের টাকায় কিছু কল্যান করছে আর অগাধ ভোগ করে নিচ্ছে। এটা শুধু আমার কথাই না, আপনাদের অজানাও না। তবে একটা দিক ভেবে দেখেন, কথা কিন্তু সত্য। হয়তো কল্যাণের টাকা কল্যাণেই ব্যয় করছেন। কিন্তু আপনাদের আয়টা মূলত চেয়ারম্যান খেতাব থেকেই হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বাবামায়ের কর্তব্য থাকে সন্তানের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার। একটা পর্যায়ে সন্তান যখন উপযুক্ত হয়ে উঠে তখন তাকে দিন বদলাতে হয়। বাবামায়ের বোজাটা নিজ কাঁধে নিয়ে নিতে হয়। বাবার আরও অনেক থাকুক, সমস্যা নেই তো। দেখতে হবে নিজেকে। আমি উপযুক্ত হয়েছি কি না। আমি দায়িত্ব নিতে সক্ষম হয়েছি কি না। আমি আসলে কি করছি?”
“আমি তো আব্বার প্রায় সকল কাজের দেখাশোনা করছি। তবে এখানে কি একটা অংশ আমার আয় হিসেবে গণ্য না?”
শ্রাবণ পলক ফেলে মৃদু হাসে। তারপর বলে,
“আচ্ছা, আমি এখন একটা কথা জিজ্ঞেস করি আপনাকে। এক কথায় উত্তর দিবেন। আপনি কি কাজ করেন?”
ইফতেখার নিরুত্তর তাকিয়ে থাকে তার দিকে। শ্রাবণের দুইচোখের রাশিতে রাশিতে দৃষ্টি বুলায়। ভালো আন্দাজ করতে পারছে, শ্রাবণ কি বুঝাতে চাইছে। তাই কোনোরকম উত্তরই তার দেওয়া হলো না। শ্রাবণ মৃদু হেসে বললো,
“এক কথায় দেওয়ার মতো উত্তর নেই। তাই না? আমার কাছেও নেই এমন কোনো উত্তর যে, আমার স্বামী কি করে? আপনার বাবা যদি আবার মাসে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন দিতো, তবে হয়তো আপনি নিজের একটা পরিচয় সহজেই বের করে ফেলতে পারতেন যে আপনি চেয়ারম্যানের এসিস্ট্যান্ট বা ম্যানেজার। কিন্তু আপনার পরিচয়টা আপাতত চেয়ারম্যানের ছেলে পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এর বাইরে যদি একটা নির্দিষ্ট পরিচয় আপনার থাকতো, আপনি আমার কথায় তখন বলতেন না যে, বাবার কাছ থেকেই টাকা নিয়েছেন। অবশ্যই বলতে পারতেন যে, তা আপনার বেতনের টাকা। তবে আমায় বলুন, একটা পদ পাওয়ার যোগ্য কি আপনি না? নিজ প্রয়োজন, আমার প্রয়োজন, যেকোনো টাকাই চাইতে হলে কৈফিয়ত দিয়ে আপনার আব্বার কাছে চেয়ে নিতে হবে আপনাকে। পিতামাতার কাছে কৈফিয়ত দেওয়াটাকে আমি মন্দ বলছি না, কিন্তু একটা তহবিল যদি আপনার নিজস্ব হয় অবশ্যই কিছু কিছু বিষয়ে কৈফিয়ত ছাড়াই খরচ করার সাহস আপনা আপনিই আপনার মধ্যে সঞ্চার হতো। এই যেমন আপনার আব্বাকে খরচ করতে হলে কারো কাছেই কৈফিয়ত দিতে হয় না। এখন স্ত্রীর একটা কিছু লাগবে, সেটাও বাবাকে জানিয়ে যাওয়াটা কোনো ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আপনারও বিবেকে বাঁধতে পারে। তাছাড়া দেখেন, পিতামাতাকে কিছু স্বেচ্ছায় উপহার দিতে চাইলেন। সেখানেও কৈফিয়ত দিয়ে আপনাকে টাকাটা হাতে পেতে হবে৷ অর্থাৎ ব্যাপারটা এইরকম হয়ে দাঁড়ালো যে বাবার টাকাতেই বাবাকে উপহার দেওয়া। এমন অনেক কারণেই পরিবারের প্রত্যেকটা কর্তারই নিজের অবস্থান তৈরি করার দরকার আছে। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, একটা মানসম্মত চাকরি আপনি করতেই পারেন। চাকরি করলেই মানুষ ছোট হয়ে যাচ্ছে না। আপনার বাবা চেয়ারম্যানও কিন্তু কারো না কারো অধীনস্থ কর্মচারী। তাছাড়া যদি চাকরি করতে ভালো না লাগে বা সুযোগ না থাকে, এই দেখাশোনার উপর নির্ভর না থেকে নিজ উদ্যোগে একটা ব্যবসায়ও গুছিয়ে নিতে পারেন পছন্দ অনুযায়ী। আপনার দিনগুলোর অনেকটা সময়ই অবসর যায়। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অবসরটা কাজে লাগালে মন্দ নয়, বরং ভালো কিছু হয়।”
শ্রাবণ যৌক্তিক কথা বললেও বিপরীতে কিছুই বলে না ইফতেখার। চাকরি কিংবা ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে ভাবেনি কখনো। এখনো ভাবতে চায় না। যেভাবে চলছে, তা টিকিয়ে রাখার চেষ্টাটুকুই বাবাছেলের প্রচেষ্টায় জড়িত। তাছাড়া ওই বালুর মাঠের মতো জায়গা জমিতে প্রজেক্টের ব্যবস্থা করতে পারলে তাদের আয় এমনিতেও বেড়ে আসবে। কিছুই যে একদম করছে না, তা তো না। আবার ভাবনা জুড়ে প্রতিকূল ব্যাপারও হোঁচট খায়। আসলেই তার কোনো কর্মজড়িত নাম নেই এক কথায় বলার মতো! নেই কোনো নির্ধারণযোগ্য সময়ের নির্দিষ্ট আয়! হাত ধুয়ে উঠতে যায় ইফতেখার। এমন সময় শ্রাবণ বলে,
“আপনি চাকরি না করলে আমাকেও তো একটা সুযোগ করে দিতে পারেন। আমারও দিনক্ষণ অবসরই যাচ্ছে।”
গামছায় হাত মুছতে মুছতে শ্রাবণের মুখে তাকিয়ে সে আপত্তিকরভাবে বলে,
“তোমারও চাকরির কোনোই প্রয়োজন দেখছি না। অবসর সংসারে লাগাও।”
“আপনি হয়তো দেখছেন না, কিন্তু আমার প্রয়োজনটুকু আমি ঠিকই দেখতে পাই। এইযে, দ্বিধাহীনভাবে আমি আপনার কাছেও আমার প্রয়োজন গুলো ব্যক্ত করতে পারি না। কিছু চাইতে হলেই চোখের সামনে আব্বার চেহারা ভাসে আপনার আগে। কেননা চাহিদা পূরণ করতে আপনাকে আব্বার সামনে দাঁড়াতে হবে কৈফিয়ত দিতে।”
“আমি কোথায়, কার সামনে দাঁড়ালাম সেটা তো তোমার দেখার বিষয় না। তোমার প্রয়োজন তুমি আমায় বলবে। সাধ্যে থাকলে পূরণ করবো, না থাকলে করবো না। বলতে আর দ্বিধা কিসের?”
ধীর নিশ্বাস ফেলে শ্রাবণ বলে,
“দ্বিধাকে ডেকে আনতে হয় না। আপনা আপনি এসে যায়। তবে আমি মনে করি আমার চাকরির দরকার আছে।”
“তুমি চাকরিতে এতো মজে আছো কেন, বুঝলাম না! অবসর থাকতে ভালো লাগে না?”
ঠোঁট প্রাঙ্গণে মৃদু হাসি ফুটায় শ্রাবণ। প্লেট গুছিয়ে নিতে নিতে বলে,
“অনেক প্রয়োজনই আছে। তার মধ্যে অন্যতম প্রয়োজন, আমি দেনা আছি একজনের কাছে। তার ঋণ পরিশোধ করার জন্য হলেও একটা ব্যবস্থা আমার করতে হবে। দায় নিয়ে মরলে চলবে?”
“দেনা! দেনা কেন আছো?”
“আমি তো আর চেয়ারম্যান পরিবারে জন্মগ্রহণ করিনি, বাবার অর্থকড়ির প্রাচুর্যও পাইনি। নিজের ব্যবস্থা নিজেকে করে নিতে হয়েছে। যখন সাধ্যে না কূলায়, মানুষ তো তখনই দেনায় পড়ে যায়।”
কথা যৌক্তিক। তাই সেদিকে কথার ঢাল না বাড়িয়ে বলে,
“কার কাছে দেনা?”
“আমাদের ওদিকেরই একজন। চিনবেন না আপনি।”
“কত টাকা?”
“কেন? এটাও দিয়ে দিবেন?”
“জ্ঞানী হয়েও কেমন বোকার মতো কথা বলো! দেনা যদি থেকেই থাকো, মুক্তি যদি পেতেই হয় তবে দিবে না কোনোভাবে?”
“ঠিক এজন্যই তো এতোক্ষণ বললাম যে, আপনার নিজস্ব কোনো আয় থাকলে হয়তো আমাকে এইটুকু পরিমাণ দ্বিধাগ্রস্ত হতে হতো না।”
“কত টাকা দেনা?”
“হিসেব দেখে আসতে হবে।”
“মানে!”
“দেনার খাত আমার একটা না। তাই সঠিক হিসেব দেখা ব্যতীত কিছু বলাও যাবে না।”
প্লেট নিয়ে বেরিয়ে যায় শ্রাবণ। সন্দিহান চোখে ইফতেখার তাকিয়ে থাকে তার যাওয়ার পানে। দুদিন পরপর টাকার প্রয়োজন দেখানোটা কোনোভাবেই কারো কাছে স্বাভাবিক মনে হবে না। আর তার দেনার হিসেব সে জানবে না এটা কোনো কথা! সন্দেহাতীত ভাবনার সাথে সে উঠুনে বেরিয়ে আসে। বিচার কার্য শুরু হয় কিছুক্ষণের মধ্যেই। দুই পক্ষের ঘটনা, কৈফিয়ত, চাপা সবটা মিলেই বিকেলের এই সময়টা কোলাহলপূর্ণ করে রাখে চেয়ারম্যান বাড়ির পরিবেশ। শফিক ছেলেটাকে চাচা, চাচীর পায়ে পড়ে মাফ চাইতে হয়। দৈহিক আঘাতের কারণে জরিমানা ধার্য করা হয় লোকমানের উপর। দুই দিনের মধ্যে যেকোনোভাবে এই জরিমানা শোধ করতে হবে তাকে। পরবর্তীতে যদি চেয়ারম্যান কখনো শুনেছে তারা পুনরায় এমন হামলা করেছে, তবে তিনি নিজে আইনী পদক্ষেপ নিবেন হামলাকারীর বিরুদ্ধে। বিশেষভাবে সতর্কবার্তাটা শফিককে দিয়েছেন তিনি। এই বয়সের ছেলেপুলেরাই কথার আগে ক্রুদ্ধ হাতে লাঠি তুলে এগিয়ে যায় রক্ত ঝরাতে। এমন কাজ তিনি দ্বিতীয়টি দেখতে চান না কখনো তার দ্বারা। চেয়ারম্যানের রায় মেম্বার ও মাতবরদের মনপুত হয়। কেউ কারো পক্ষ নিয়ে কথা বলেনি এখানে। ঘটনার স্পষ্টতায় সিংহভাগ দোষে লোকমানের পরিবারই নজরে উঠেছে। চেয়ারম্যানের এই বিচার কার্য শ্রাবণও দেখেছে পুরোটাই, ঘরের দরজা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থেকে। অবিচার করেননি তিনি। কাজেই এই ঘটনার বিচারক হিসেবে প্রশংসনীয় তিনি শ্রাবণের দৃষ্টিতেও। তবে মুখে ফুটেছে তার তাচ্ছিল্যের হাসি। মনে মনে বলে,
“ভাই ভাইয়ের সালিশে উত্তম বিচার তো আপনি করে দিলেন, চেয়ারম্যান সাহেব। কিন্তু আপনি যে অন্যায় করেছেন, তার বিচার কি এই চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন করতে পারবে?”
সন্ধ্যায় ইফতেখারের সাথে শ্রাবণ, অর্পা ও পরী বেরিয়েছে। তারা ফুসকা খাবে না। গরম চটপটি খেতে চায়। কথা বলতে বলতে বাজার ছুঁয়ে নিতেই সদস্য সংখ্যা বেড়ে যায়। বিপু যোগ দিয়েছে আরেক প্লেটের খরচ বাড়াতে। কিন্তু খরচ সে এক প্লেটের বাড়ায়নি। বাড়িয়েছে দুই প্লেটের। দুই প্লেট চটপটি গপাগপ খেয়ে চলে গেছে আবার৷ খেতে খেতে দুষ্টুমিও কম করেনি। মরিচের টুকরোগুলো বেছে বেছে সব ছুড়েছে অর্পা ও পরীর প্লেটে। তাদের চেঁচামেচিতে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ইফতেখার তার দিকে তাকালেই গপাগপ খেয়ে উঠে চলে গেছে সে। শ্রাবণ আর ইফতেখার খেয়েছে ধীর তথা শান্ত গতিতে। চটপটি খাওয়ার পর আবার নিয়েছে ঝালমুড়ি। ঝালমুড়ি খেতে খেতে এগিয়েছে বালির মাঠের দিকে। সামনে কথা বলতে বলতে চলে পরী আর অর্পা। কিঞ্চিৎ দূরত্বে ধীর পায়ে পেছনে হাঁটে তারা দম্পতি। ইফতেখার ঝালমুড়ি নেয়নি তাই শ্রাবণ বারবার তাকে নিজের প্যাকেট থেকে সেধে যাচ্ছে,
“বারবার সাধছি, নেন না? মজা হয়েছে খুব।”
“খাও তুমি। আমি খাবো না, তাই নেইনি।”
“ভালোবেসে দিচ্ছি তো। খাওয়া অত্যাবশকীয় তাই।”
ফিসফিস করে মুখ টিপে হাসে শ্রাবণ। তার দুষ্টুমিতে এক গাল হেসে ইফতেখার এক চিমটি পরিমাণ নিয়ে মুখে দিলো। যেন ঝালমুড়ি নয়, ভালোবাসাটুকুই শুধুমাত্র গ্রহণ করলো।

“শ্রাবণধারা”
পর্ব- ২৪
(নূর নাফিসা)
.
.
বালির মাঠে পা রাখতেই ফোন বেজে উঠে ইফতেখারের। বন্ধু কল করেছে। আজ রাতে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব করেছে। তারা প্ল্যান করছে দুদিন যাবতই। ইফতেখার আগেও একবার নিষেধ করেছে, এখনো করে দিলো। বন্ধু তার নিষেধের প্রেক্ষিতে মন্তব্য রাখে,
“ধুর ব্যাটা! বউ পেয়ে সব ভুলে গেছিস!”
শ্রাবণ কাছে থাকায় সবই শুনেছে তাদের কথা। ইফতেখার ফোন রাখতেই জিজ্ঞেস করে,
“কি ভুলে গেছেন বললো বউ পেয়ে?”
মৃদু হেসে ফোন পকেটে রেখে সে জবাব দেয়,
“এ-ই, ঘুরাঘুরি আর আড্ডা।”
“আড্ডা তো এখনও দেন। প্রতিনিয়তই দেন। আজও না ক্লাবে ছিলেন?”
“এই আড্ডা না। দূরে ঘুরাফেরার আড্ডা।”
“আগে খুব ঘুরাঘুরি করতেন?”
“অনেক।”
“এখন কি আমি নিষেধ করেছি?”
“আমি কি বলেছি নাকি যে, তুমি না করেছো?”
“বলেননি। কিন্তু তারা তো বলে দিলো। কোথায় যাচ্ছে?”
“খাগড়াছড়ি।”
“এতোদূর! কয়দিনের জন্য?”
“তিন দিন।”
“আপনি গেলেন না কেন?”
“এমনি। ঘরে বাইরে কাজকর্ম দেখতে হয়। সেই চাপে ঘুরাঘুরিও তেমন ভালো লাগে না আগের মতো।”
“আপনি আমার জন্যই যাননি।”
কথা বলেই মৃদু শব্দযোগে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে শ্রাবণ। পরক্ষণে বলে,
“ভালো করেছেন, যাননি। আমি জানলে ঠিকই আরও আগেই নিষেধ করে দিতাম। বউ রেখে একা একা কেন ঘুরবেন! আপনার নামে অনেক নালিশ কিন্তু আমার কাছে জমা আছে এমনিতেই।”
“কিসের নালিশ?”
“বিয়ের আগের নালিশ। তাতে অবশ্য আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আগে যেমনই থাকেন না কেন, এখন কেমন আছেন সেটাই আমার দেখার বিষয়।”
“কেমন ছিলাম?”
“জানেন না, কেমন ছিলেন?”
“তুমি কি জানো, সেটা বলো।”
“প্রায়ই রাতের বেলা ঘুরতে বেরিয়ে পড়তেন আর বাসায় ফিরতেন না৷ হয় দূরে কোথাও, নাহয় বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি অবস্থান করতেন। মিথ্যে বললাম?”
মুখাবয়বে চাপা হাসি রেখে ইফতেখার জানতে চায়,
“কে বলেছে এসব?”
“যে-ই বলুক, কথা তো সত্য। এই যে আজ শফিক নামক লোকটার বিচার হলো, এইরকম গায়ে হাত তোলার রেকর্ড আপনারও আছে আমি জানি। তবে যাইহোক, আমি আপনাকে এমন কিছু করতে দেখিনি। আর তাতেই বড় সন্তুষ্ট। ও হ্যাঁ, আপনি আব্বার সাথে রাগ করে একবার দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ির বাইরে কাটিয়েছেন এটাও আমি জানি। এই ব্যাপারটা খুবই বাজে। কোনো একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে ঘর কেন ছেড়ে দিবেন। সব সময় যে সকল চাওয়া বাবা মা পূরণ করবে, এমনটা না-ও হতে পারে। অবশ্যই মানুষ তার সাধ্যসিদ্ধির বাইরে চলতে পারে না। সন্তানদের জন্য যেটা যোগ্য মনে করবেন, সেটাই তারা করে থাকবেন।”
“আমি এমন কিছু চাইও না, যা সাধ্যের বাইরে থাকে। আর রাগারাগি চাওয়া পাওয়া নিয়ে হয়নি।”
“তবে বাড়ি কেন ছেড়েছিলেন?”
“ওই একবার পরীক্ষা না দিয়ে ঘুরাঘুরি করেছিলাম বলেই শিক্ষক বিচার দিয়েছিল। আব্বা বাড়ি এসে বকাঝকা করেছিলেন।”
“তাতেই এতো বড় পদক্ষেপ!”
“উহুম। এমন বকা তো জীবনে কতই খেয়েছি। তিনি বলেছিলেন অযথা টাকা কোনোদিকে ফেলবেন না। পড়াশোনা না করলে কিসের টাকা খসাচ্ছি অযথা? রাস্তাঘাটে বিচার আচারও উনার ভালো লাগে না। আর তাই মানুষ হলে যেন হই, নয়তো বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে। তো গেলাম।”
শ্রাবণ চোখের আঙিনা বিস্ময়াভিভূত করে বলে,
“ভালোই তো জিদ্দি আপনি! তারপরও মানুষ হবেন না পণ করেছেন!”
“মানুষ হলে বাইরেও হওয়া যায়। অমানুষ ঘরেও থাকে। আমার কথা ছিল একটাই, তিনি শাসন করেছেন ভালো কথা। চলে যাওয়ার কথা কেন বলতে গেলেন!”
আযব কান্ডের উপর হাসে শ্রাবণ। জিজ্ঞেস করে,
“বিয়ে করে যে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন, তখন যদি বলতো চলে যেতে। তবেও কি যেতেন?”
“এজন্য হয়তো বলেইনি তেমন কিছু।”
“আম্মা তো বলেছিল।”
“আম্মা বললেও তখন গায়ে লাগেনি। দোষ তো আমার ছিল। তাছাড়া তোমার কদর তো আম্মাই করলো। তাই গেলাম না কোথাও।”
মজার কান্ডে হাসে শ্রাবণ। পরী আর অর্পা ওদিকে খালি পায়ে বালিতে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। শ্রাবণ তাদের দিকে মনযোগ দেয়। জুতা খুলে হাতে নিয়ে সে-ও খালি পায়ে হাঁটে। কিছুটা সময় এখানে কাটিয়ে তাদেরকে বাড়ি নিয়ে আসে ইফতেখার। অর্পা চাইছিল আরও কিছুক্ষণ থাকুক। ইফতেখার আজ আর সময় দিলো না। অন্যকোনো দিন আবার নিয়ে আসবে বললো। বাড়ি ফিরতেই রাস্তা থেকে পাল্লাযুক্ত দৌড় দেয় পরী আর অর্পা। ঘরের দিকে যেতে যেতে শ্রাবণ নিরিবিলিতে ইফতেখারকে বললো,
“পাঁচশো টাকা হবে? কিছু কেনাকাটার প্রয়োজন ছিল। সকালে যাবো বাজারে।”
“কি কিনবে, বললে না এখন? বাজার থেকেই তো এলে।”
“একে তো বেশি টাকা নিয়েছিলেন কি না জানি না, অন্যথায় সাথে তারা ছিল বিধায় বলিনি। পার্সোনাল কিছু।”
“বলো, আমি নিয়ে আসি।”
“আপনি কিনতে পারবেন, মেয়েদের জিনিস! আমাকেই যেতে হবে।”
একান্তই ব্যক্তিগত কিছু হবে ভেবে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করলো না ইফতেখার। পকেট থেকে খুচরা মিলিয়ে পাঁচশো টাকা দিয়ে দিলো শ্রাবণের হাতে। শ্রাবণ ঘরে গেলেও সে গিয়েছে মোটরসাইকেলের কাছে। পিছু ফিরে তাকে মোটরসাইকেলে বসতে দেখেই বারান্দায় থেকে শ্রাবণ জিজ্ঞেস করে,
“মোটরসাইকেলে কোথায় যাচ্ছেন?”
“আসছি, এদিকেই।”
“বন্ধুদের সাথে চলে যাচ্ছেন না তো আবার?”
“আরে না। ঘরে যাও। পেট্রোল নিতে হবে। কাল কাজ আছে, সময় হবে না আবার।”
“টাকাও তো নিলেন না!”
“আমি আরও টাকা পাই তার কাছে।”
মোটরসাইকেলে চড়ে চলে গেলো ইফতেখার। পরবর্তী সকালে আধঘন্টা যাবত বাবার কাছে বসে খাতা-কলমে তালিকা করলো ঘরের প্রয়োজনীয় স্যানিটারির। সাথে ছিলেন ওয়ালিং মিস্ত্রি। কি কি আনতে হবে, তিনি বলছেন আর ইফতেখার লিখে নিচ্ছে। তালিকা করা শেষ হতেই বাবার কাছ থেকে টাকা বুঝে নেয়। এরপর নাশতা করে তৈরি হয় বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। শ্রাবণও নাশতা করে বেরিয়েছে এসময়। ইফতেখার মোটরসাইকেলে চড়ে শ্রাবণকে বাজারে নামিয়ে দিয়ে গেলো তার প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে। ব্যক্তিগত কেনাকাটা বলতে শ্রাবণ কিনেছে নিজের জন্য একটা টুথব্রাশ। তার ব্রাশটা গতকাল বাথরুমে রেখে চলে এসেছিল ভুলে। কিছুক্ষণ পর গিয়েই দেখেছে তেলাপোকা কেটে দিয়েছে একটা অংশ। ঘিনঘিন মনোভাবের কারণে সেইটা আর ব্যবহার করতে পারবে না। তাই একটা নতুন কিনে নিলো। এ-ই ছিল তার কেনাকাটা। তবে বাড়ি ফিরেনি শ্রাবণ। এইটুকু কেনাকাটাতে পাঁচশো টাকাও খরচ হয়নি। বাকিটা খরচ করতে চলে গেছে বহুদূরে, আপন নীড়ে। এই দূর যাত্রার কারণেই মূলত পাঁচশো টাকা চেয়ে নেওয়া। ইফতেখার বাড়ি না থাকায় তার আরও বেশি সুবিধা!
“স্বপ্ন নিকেতন” তার এক আপন নীড়। এখানে সে কাজ করতো একটা সময়। প্রায় পাঁচ বছর টানা কাজ করে গেছে। দেখাশোনা করতো কত বৃদ্ধ বাবামাকে। কারো কারো অবস্থার মায়ায় পড়ে অতি আপন মনে করে খেয়াল রাখতো একেকজনের। কিছু অসহায় মানুষ কুড়িয়ে এনে আশ্রিত করতো। কাউকেবা পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দিতো পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের অন্ধ চোখের পর্দা খুলে দিয়ে। কেউবা এখানে থেকেও পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা পাচ্ছে। কেউবা ভুবনে একা হয়ে স্বেচ্ছায় যোগ দিচ্ছে শেষ বয়সের সময়টা সুন্দর রাখার জন্য। বিনিময়ে এই নিকেতনে দান করে দিচ্ছে নিজের অর্থসম্পদ। কিছু সরকারি, কিছু বেসরকারি আর কিছু জনসাধারণের সহায়তায় বেশ ভালো চলে যাচ্ছে এই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিত ঝরে পড়া ফুলগুলোর। শ্রাবণ যখনই এখানে আসে, এক নতুন ভুবনের দেখা পায়। এক নতুন পরিবার পায়। প্রশান্তির ছোঁয়া পায় মনে। এই আশ্রমে তার স্মৃতি ও স্বপ্ন জড়িত আছে। এই আশ্রম তাকে পরিবার দিয়েছে, এখানে চাকরি বলা যায় তাকে আহারও দিয়েছে। একসময় দিনভর এই আশ্রমের হয়ে কাজ করা, সন্ধ্যায় টিউশনি, আর তারপর কিছুটা সময় সেলাই কাজে লিপ্ত থাকা তার দৈনন্দিন কার্যক্রম তালিকা ছিল। সময়ের কাজ সময়ে সম্পন্ন করে যেতো অক্লান্তভাবে। স্নাতকের সময়টা এমন ছিল যে, বিছানায় বসলেই সবসময় কাছে বই থাকতো। কর্মস্থলে গেলেও বই থাকতো কাঁধের ব্যাগটায়। যখনই সময় পেতো, প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ সম্পন্ন করে নেওয়ার চেষ্টা করতো পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য। পরীক্ষার দিনগুলো কর্মস্থলের ছুটিতে থাকতো। এতো চাপের দিন এখন কেবলই অবসর যাচ্ছে স্বামীর ঘরে। ভাবতেই এক নিশ্বাস পড়ে এই আশ্রমের সীমানায়। আশপাশে তাকিয়ে ঝরে পড়া সুখী ফুলেদের দেখতে দেখতে ভেতরে এগিয়ে যায় শ্রাবণ। দেখা হয় সহকর্মী শিখার সাথে।
“আরে, শ্রাবণ যে! কল করলাম, আর চলে এলে!”
“আম্মার অসুখ, আর আমি আসবো না! কেমন আছেন তিনি?”
“সকালে দেখলাম জ্বর একটু কমেছে। গত দুই দিন অনেক ছিল। ভয় পাচ্ছিলাম, কোনোরকম পরিবর্তন হচ্ছে না বলে।”
“চলো, দেখা করি। বাকিরা কেমন আছে?”
“সবুর কাকা না মারা গেলেন গত দুপুরে।”
ব্যথিত হলো শ্রাবণ।
“ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দীর্ঘ অসুস্থ যাত্রার মুক্তি! উনার দাফন?”
“পরিবার নিয়ে গেছে লাশ। পারিবারিক কবরস্থানে দাফন হয়েছে।”
“পারিবারিক কবরস্থানে জায়গা হলো, অথচ জীবিত দেহটার জায়গা পরিবারে হলো না। আফসোস হয় জানো তো! অর্থকড়ি থাকতেও মানুষ দেখবালের জন্য একটা লোক ঘরে রাখতে পারে না।”
“ছেলে বিদেশ। পুত্রবধূ বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত। বুড়োর খেয়াল কখন রাখবে! বুঝো না?”
তাচ্ছিল্যকর হাসি দুজনের ঠোঁটের কোণেই ঠাই নেয়। শ্রাবণ চলতে চলতে জিজ্ঞেস করে,
“স্যার, ম্যাম কি প্রতিদিনই আসেন?”
“ম্যাম প্রতিদিনই আসেন। স্যার তো একজন দেশের বাইরেই আছেন। আরেকজন আসেন, সপ্তাহে দু তিনবার। ম্যাম তো তোমার কথা জিজ্ঞেস করে। বিকেলে আসবেন। দেখা করে যেয়ো।”
“আমি তো এতোক্ষণ থাকবো না। সপ্তাহ দুই আগে কথা হয়েছিল ম্যামের সাথে ফোনকলে।”
চলতে চলতে আম্মার নিকট হাজির হয় শ্রাবণ। কাঁথা জড়ো করে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছেন ফাতিহা। শ্রাবণ কপালে হাত দিয়ে খালি হাতে জ্বর মাপে। এখনো অনেকটা জ্বরই আছে শরীরে। কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকায় ফাতিহা। শ্রাবণকে দেখে ভেজা চোখে। শ্রাবণ ঠোঁটে সৌজন্যতার হাসি এঁটে জিজ্ঞেস করে,
“কেমন আছেন, আম্মা?”
“যার কেউ নাই, হেয় আর কেমন থাকে রে মা?”
“এমনটা কেন বলছেন? এইযে, আমি আছি না?”
“তোরেও আমি কাছে পাই না৷ তুইও গেছোস দূরে।”
“আমি গেলেও তো আপনার কাছে কতজনকে রেখে গেছি। তারা না আপনার আপনজন? তাদের সাথে মিশতেও তো আপনাকে ভালো থাকতে হবে।”
“তাগো ছাইড়াও শিগগির চইলা যামু মনে হয়।”
কান্নায় ভেঙে পড়েন ফাতিহা। শ্রাবণের চোখেও শ্রাবণধারা বইতে সময় নেয় না। ঠোঁট কামড়ে শক্ত রাখার চেষ্টা করে নিজেকে। পাশে বসে থেকে ফাতিহার চোখের ধার মুছে দিয়ে বলে,
“এসব বলতে নেই। আল্লাহ আমার আম্মাকে হায়াতে বরকত ও সুস্থতা দান করুক। আপনি চলে গেলে আমি কাকে দেখতে ছুটে আসবো এখানে?”
“তুই ভালোই আছোস?”
“জ্বি, আল্লাহর রহমতে আমি খুবই ভালো আছি।”
“স্বামীর বাড়ির লোকেরা আদর করে তোরে?”
“আপনিই না বলতেন, স্বামীর আদর পাওয়া হলে আর কিছুর প্রয়োজন হয় না? আমি বেশ ভালো আছি। এখন আপনাকেও ভালো দেখতে চাইছি। উঠুন তো। মেয়ের হাতে খাবেন কিছু।”
জোরপূর্বক পাউরুটি আর আঙুর খায়িয়ে যায় শ্রাবণ নিজ হাতে। কিছুটা সময় কাটিয়ে আশপাশের পরিচিতদের সাথেও দেখা করে। দুপুর শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে আসে স্বপ্ন নিকেতন থেকে। এক নীড় ছেড়ে চলে যায় অন্যতম আরেক আপন নীড়ে। যেখানে তার আপন স্বত্বার অবস্থান!
সারাদিন বড় বাজারে ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র কিনে বিকেলে বাড়ি ফিরেছে ইফতেখার। বড্ড ক্লান্ত বেশে ফিরেছে ঘরে। থমথমে চোখে ছেলেকে দেখে পারভীন। কিছু বলতে গিয়েও বলে না। ইফতেখার গোসল করে। খেতে বসে। এমনি মালামাল বহন করা স্পীড ভ্যানটা দুয়ারে আসে। শব্দ পেয়ে প্লেট হাতেই বারান্দায় আসে সে। ভ্যান চালককে বলে,
“ঠিকঠাক এসেছেন তো? রাস্তায় আবার কিছু পড়ে টড়ে যায়নি তো?”
“আরে না, বাজান। বাইন্ধা লইছি না সব। পড়বো ক্যা?”
বলতে বলতে ভ্যানে বাঁধা রশি খুলতে থাকে। বকুল কাকা এগিয়ে এসে মালামাল নামাতে ব্যস্ত হয় ভ্যান চালকের সাথে। ইফতেখার চোখ বুলিয়ে নেয় যেমন করে তুলে দিয়ে এসেছিল সব, ঠিকঠাক আছে কি না। পুনরায় ঘরে ফিরতে গেলেই পরী আসে পশ্চিম দিক থেকে। ইফতেখারকে দেখে জিজ্ঞেস করে,
“ভাবিরে সাথে কইরা নিয়া আইছেন, ভাইজান?”
চিন্তিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেমে যায় ইফতেখার। জিজ্ঞেস করে,
“কোত্থেকে নিয়ে আসবো?”
“হেইডা আপনে না জানেন, কই নিয়া গেছেন। আমি জানি?”
বকুল কাকা ডাকে তাকে ছোট ছোট জিনিসপত্র গুলো ঘরে নিয়ে আসতে। পরী চলে যায় সেখানে। ইফতখার ভ্রু মাঝে চিন্তার রেশ রেখেই ঘরে আসে। বাড়ি এসে দেখতে না পেয়ে ভেবেছিল হয়তো পরীর সাথেই এদিক ওদিক আছে। প্রয়োজন না থাকায় খুঁজেওনি। পরীর কথায় ভাবনায় লিপ্ত হয়ে প্লেট নিয়ে পুনরায় বসে। মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করে,
“শ্রাবণ বাড়ি নেই, মা?”
“তোর সাথে যে বের হইছে, এরপর বাড়ি আইছে আর?”
“আমি তো তাকে বাজারে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছি। কিছু কিনবে বলেছিল।”
“কোন বাজারে নামায় দিয়া গেছোস? দিল্লী? আইতে কয়দিন লাগে?”
মায়ের থমথমে মুখের কারণ এতোক্ষণে খেয়ালে ও বুঝে আসে তার। চুপ করে ভাত মুখে দেয়। পাশে বসে পারভীন বিড়বিড় করতেই থাকে, বাড়ির বউ এমন বাইরে ঘুরাফেরা করে বলে। বিপরীতে কোনো কথা রাখে না ইফতেখার। ভাত খাওয়া শেষ করে টাকা হাতে বাইরে যায়। ভ্যান চালক মালামাল নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভাড়ার জন্য। ভাড়া দিয়ে তাকে বিদায় করে আগে। পরক্ষণে ফোন হাতে তুলে কল করে শ্রাবণের নম্বরে। ফোন বন্ধ! হতাশা এবং বিরক্তি, দুই প্রতিক্রিয়াই আক্রমণ করে ইফতেখারকে।

চলবে।