#সংসার_নাকি_সম্মান
#পর্ব_০১
#অনন্যা_অসমি
ভরসন্ধ্যায় ছেলের বউকে ব্যাগে জামাকাপড় রাখতে দেখে কপালে ভাঁজ পড়ল আনন্দির শাশুড়ী শর্মিলা মল্লিকের। ” ভরসন্ধ্যায় আবার কোন নাটক শুরু করল এই মেয়ে?”
দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলেন তিনি।
” ব্যাগপত্র গোছাচ্ছো কেন বউমা?” শাশুড়ীর শীতল তবে কৌতূহলী কন্ঠে প্রশ্নখানা শুনে হাতের শাড়িটা আর ব্যাগে রাখল না আনন্দি।
” উনি তো চলে যাবেন পরশু, তাই আজ থেকেই ব্যাগপত্র গুছিয়ে রাখছি।”
কপালে ভাজ পড়ল শর্মিলা মল্লিকের।
” উজান চলে যাবে কিন্তু তুমি কেন কাপড়চোপড় ব্যাগে ঢোকাচ্ছো?”
” সেকি কথা মা। আমি ওখানে কি আবার জামাকাপড় কিনব নাকি? বিয়েতে তো অনেক কিছুই পেলাম, সেখান থেকে প্রয়োজনীয়গুলো তো নিতে অসুবিধা নেই। পরবর্তীতে কিছু প্রয়োজন হলে না হয় ওখান থেকে কিনে নেব।”
” উজানের সাথে তুমিও যাবে নাকি?” শর্মিলা মল্লিকের চোখ-মুখ কুচকে এলো যেন। আনন্দি হাসি বজায় রেখেই বলল, ” হ্যাঁ মা।”
তিনি কিছু বললেন না, থমথম মুখ করে চলে গেলেন যেন।
আনন্দি এবং শর্মিলা দেবীর বড় ছেলে উজান, তাদের বিবাহের বয়সসীমা মাত্র দু’সপ্তাহ। উজান ঢাকা শহরে একটা কোম্পানিতে ম্যানজারের পদে আছে। দু’জনের বিয়ে পারিবারিকভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।
সন্ধ্যাবেলা চা নাস্তা করার জন্য শর্মিলা দেবীর ঘরে সামনে এলো আনন্দি। কাছাকাছি এসে পৌঁছাতেই কানে এসে ঠেকল উজানের কন্ঠস্বর।
” বউ কি তোর সাথে চলে যাবে নাকি?”
” ওই…. আব… হয়ত হ্যাঁ। ওই বলল তাই আরকি মানা করতে পারিনি।”
শর্মিলা চাপা তবে রাগান্বিত কন্ঠস্বরে তিরস্কার করে বললেন, ” মাসও পেরোইনি এখন থেকেই বউয়ের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাচ্ছো। বাহ্!”
উজান কিছু বলার সাহস পেল না। তিনি পুনরায় বললেন, ” শোন বউ কোথাও যাবে না। ঘরদোর ফেলে সে তোমার সাথে লেগে থাকলে কি করে হবে? সে এই বাড়ির বউ, তাকে এখানেই থাকতে হবে। পরবর্তীতে আমি যেন এই নিয়ে কোন জলঘোলা হতে না দেখি।”
শাশুড়ীর এহেন ব্যবহারে চমকে উঠল আনন্দি। মনে তার প্রশ্ন জাগল,
” যেখানে স্বামী নেই সেটা কিধরণের ঘর? এই পরিবারের সাথে যোগসূত্র আমার স্বামীর কারণে। সেই স্বামীর পাশে যদি না থাকি তবে আমার মূল্য কি আধো থাকবে?”
ভাবল ভিতরে গিয়ে সরাসরি শাশুড়ীকে প্রশ্নটা করবে সে। পরক্ষণে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করল, ভাবল প্রথমে উজানের সাথে সরাসরি কথা বলতে হবে।
” বিয়ের পূর্বে আপনি কিন্তু বলেছিলেন আমাকে আপনার সাথে করে নিয়ে যাবেন। তাহলে এখন মত পরিবর্তন করছেন কেন?”
আনন্দির আচমকা প্রশ্নে থতমত খেয়ে খেয়ে গেল উজান। তবে তা প্রকাশ না করে কপট রাগ দেখিয়ে জানতে চাইল,
” তুমি কি আমার আর মায়ের কথা আঁড়ি পেতে শুনছিলে?”
” আঁড়ি পেতে শোনার কোন ইচ্ছে আমার ছিল না। আমি মাকে সন্ধ্যার নাস্তার জন্য ডাকতে গিয়ে আপনাদের কথোপকথন শুনেছিলাম। কিন্তু আমার প্রশ্নের উওর আমি পাইনি উজান।”
উজান কিছুসময় চুপ রইল। যেন মস্তিষ্ককে কথা সাজিয়ে নিচ্ছে সে। আনন্দির মাঝে অস্থিরতা কাজ করলেও সে তা প্রকাশ করল না। অপেক্ষা করল উজানের উওর শোনার জন্য।
” দেখো আনন্দি আমি তোমাকে বলেছিলাম তোমাকে আমি আমার সাথে ঢাকা শহরে নিয়ে যাব। আমি তো বলছিনা তোমাকে আমি নেব না। তবে আমাদের বিয়ের মাত্র দু’সপ্তাহ হয়েছে। এখনই যদি তুমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাও তো সবাই খারাপ মন্তব্য করবে আড়ালে কিংবা সামনাসামনি। তোমার নিজের কাছেই তা ভালো লাগবে না। তাছাড়াও ওখানে গেলে সব তোমাকে একা সামলাতে হবে। হুট করে একা সবকিছু সামলাতে গিয়ে তুমি নিজেই হিমশিম খাবে। বুদ্ধিমানের কাজ হবে তুমি বরং কিছুদিন এখানে থেকে মায়ের সাথে হাতেহাতে সবকাজ দেখেশুনে নাও, সবার সাথে মিলেমিশে সখ্যতা গড়ে তুলো। পরেরবার যখন আমি আসব তখন না হয় তোমাকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।”
আনন্দির মুখভার হয়ে গেল, বলতে চেয়েও বলল কিছু। উজান বুঝল মেয়েটার মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। এগিয়ে এসেছে তার কাঁধে হাত রেখে আবারো বলল,
” মাত্র কয়েকদিনেরই তো ব্যপার আনন্দি।
এখন যদি তুমি আমার সাথে চলে যাও মায়ের মন খারাপ হবে, নতুন সম্পর্কের শুরুতেই তোমার সাথে মায়ের দূরত্ব তৈরি হবে। মায়ের মনে গেঁথে যাবে বউমা ভালো নয়, প্রথম থেকেই শাশুড়ীকে অমান্য করে চলছে। মায়ের মনে তোমার জন্য বিদ্বেষ তৈরি হবে। তুমি কি তাই চাও?”
আনন্দি মাথা নেড়ে না-বোধক উওর দিল।
” তাহলে? আমি জানি তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে। স্বামী হিসেবে তোমাকে আমি যুক্তি দিয়ে পরামর্শ দিলাম। এবার তুমি ভেবে দেখো কোন সিদ্ধান্তটা তোমার জন্য ভালো হবে।”
আনন্দি সত্যিই চিন্তায় পড়ে গেল। তার এখন কি করা উচিত? স্বামী সাথে পাড়ি দেবে নাকি স্বামীর সঙ্গ ছাড়া এই বাড়িতেই থাকবে।
চলবে……