সংসার নাকি সম্মান পর্ব-০৭

0
2

#সংসার_নাকি_সম্মান
#পর্ব_০৭
#অনন্যা_অসমি

” ঘুম হলো?”

” হুম। তুমি ঘুমাওনি?”

” ঘুমিয়েছি। যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।”

মুখ হাত ধুয়ে আনন্দি বেরিয়ে দেখল উজান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে।

” কোথাও যাবে?”

” ওই একটু বাইরে বের হচ্ছি।”

” ও…..। ঘুমের মাঝে মনে হলো মায়ের কন্ঠ শুনেছিলাম। কিছু বলেছেন তোমাকে?”

আমতাআমতা করতে লাগল উজান। এখন সে আনন্দিকে মায়ের কথাগুলো বলতে চাইছেনা, তাই পাশ কাটিয়ে গেল৷

” ও কিছু না, এমনিতেই ডেকেছিল। তুমি থাকো আমি আসছি, সন্ধ্যায় কিছু তৈরি করো না। আমি বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসবো। সাবধানে কাজ করো।” বলে আনন্দির কপাল হাত চুম্বন করে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল।

তার আচরণে আনন্দির সন্দেহ হলো বটে তবে পরিষ্কার করে তো কিছুই জানতে পারল না। তাই মন থেকে তার খচখচানি মোটেও দূর হলো না৷
.
.

শর্মিলা দেবী আশেপাশে থাকা ওনার বয়সী কয়েকজন মহিলার সাথে হাঁটতে বেরিয়েছেন বিকেল করে। সেই সময় উজান আনন্দিকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো৷ মূলত তার উদ্দেশ্য ছিল দুই পরিবারের জন্যই কিছু কেনাকাটা করা আর আনন্দির সাথে একান্তে সময় কাটানো।

মলে এ দোকান ও দোকান ঘুরে দেখছে আর খুনসুটি করছে দু’জনে৷ আনন্দির হাতে সদ্য কেনা নতুন একজোড়া চুড়ি ঝিনঝিন করে শব্দ তৈরি করছে। শব্দ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার জন্য আনন্দি বারবার হাত নাড়াচাড়া করছে। তার কান্ডে উজান হেসে প্রশ্ন করল,

” খুব পছন্দ হয়ে নাকি চুড়ি গুলো?”

” অবশ্যই। বাড়ি গিয়ে চুড়িগুলো খুলে বক্সে ভরে আলমারিতে বন্ধ করে রাখব।”

” ওমা…! চুড়ি কি আলমারিতে তুলে রাখার জন্য কিনেছ?”

” চুড়ি তো মানুষ হাতে দেওয়ার জন্যই কেনে। কিন্তু এটা অন্যগুলোর থেকে ভিন্ন। তোমার থেকে পাওয়ার প্রথম কোন উপহার। বাইরে রাখলে যদি ভেঙে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় তখন? তার থেকে ভালো তুলে রাখি, মাঝেমাঝে বের করে মুছব আবার ক্ষাণিকের জন্য পড়ব।”

আনন্দির হাত আরো শক্ত করে ধরল উজান। চুড়ি পড়া হাতে হালকা করে ঠোঁট চোয়ালো সে।

” তোমার যত ইচ্ছে এই চুড়ি পড়। ভেঙে যে তখন আমি আবারো কিনে দেব। কিন্তু ভেঙে যাওয়ার ভয়ে তুমি যদি এখন ব্যবহার না কর তখন আপসোস করবে। যেদিন ভেঙে যাবে সেদিন আপসোস হবে কারণ না তুমি পেরেছ জিনিসটাকে সারাজীবন অ’ক্ষত রাখতে না পেরেছ জিনিসটাকে মন ভরে উপভোগ করতে। কি বলেছি বুঝতে পেরেছ?”

” জ্বি জ্ঞানীসাহেব।” বলে হেসে ফেল আনন্দি।

তাদের খুনসুটির মাঝে আচমকা কেউ দৌড়ে এলো এবং একপ্রকার উজানের গায়ের হুমড়ি খেয়ে পড়ল। আচমকা আগমনে উজানের হাত থাকা ব্যাগগুলো পড়তে পড়তে যেন পড়ল না। দু’জনেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় অবাক হলো।

” সুনয়না!”

মেয়েটাকে আবারো দেখে মূর্হূতেই আনন্দির মুখভাব বদলে গেল।

” আরে সুনয়না যে। কেমন আছো?”

” কেমন আছি তা এখন জিজ্ঞেস করছ? বিয়ের পর তো তোমার কোন খোঁজই নেই। ভালোমন্দ খবর জিজ্ঞেসও করো না। কেউ তোমাকে লকারে বন্দি করে রেখেছে নাকি?”

তার বাঁকা কথায় আনন্দির রাগ আরো একস্তর বেড়ে গেল। মনে মনে বিরবির করল,

” আমার স্বামীর কী ঠেকা পড়েছে প্রতিদিন তোর খোঁজ নেওয়ার? কে রে তুই? উজান…দা….. যত্তসব ঢং। ফাউল, নেকা, ঢঙী কোথাকার।”

” আন্টি কোথায়? তোমার সাথে এসেছে?”

” আরে না। মাকে নিয়ে এসব মলে শপিং করা যাই নাকি? ফ্রেন্ডের সাথে এসেছিলাম, সেই শপিং করিয়ে দিয়েছে?”

দু’জনেই সুনয়নার দু’হাতে থাকা ব্যাগগুলোর দিকে তাকাল। বেশ কয়েকটা ব্যাগ আছে তার হাত।

” এসব তোমার ফ্রেন্ড তোমাকে দিয়েছে?” বলল আনন্দি।

সুনয়না ভাব দেখিয়ে বলল, “হ্যাঁ।”

” বেশ উদার মনের তোমার ফ্রেন্ড। সাথে তার পকেটও অনেক উদার।”

” অবশ্যই। জানো উজান দা তোমাকে দেখে এতোটা এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম যে কি বলব।”

উজান হাসল, তবে আনন্দির যেন মোটেও সহ্য হলো না।

” দেখতেই পেয়েছি। যেভাবে আমাদের সামনে উপস্থিত হলে। পরেরবার সাবধানে থেকো গো, না জানি কখন এতোবেশি উৎফুল্ল হয়ে যাও যে পা পিছলে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো। তখন উৎফুল্ল, উত্তেজিত, এক্সাইটেড সব মনোভাব তো যাবেই সাথে নাক-মুখ থে”তলে যাবে, ভোঁতাও হয়ে যেতে পারো।”

তার কথায় রেগে তাকাল সুনয়না। পরক্ষণেই উজানের দিকে তাকাল সে।

” উজান দা…. দেখো না তোমার বউ মনে হয় আমাকে সহ্য করতে পারছে না।”

” আব….. তা কেন হবে সুনয়না। তোমার বুঝতে ভুল হচ্ছে কোথাও।”

উজান চোখের ইশারায় আনন্দিকে শান্ত থাকতে বলল। আনন্দি উল্টো কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। পরিস্থিতি ঠিক করতে উজান বলল,

” সুনয়না তোমার তাড়া না থাকলে চলো কিছু খাওয়া যাক।”

” একদম ভালো কথা বলেছ তুমি। চলো চলো।” বলতে বলতে উজান হাত ধরে একপ্রকার টেনে নিয়ে যেতে লাগল মেয়েটা। এদিকে আনন্দি রেগে ফুলছে। আরেকটু হলেই মেয়েটা ফেটে যাবে। এসেছিল স্বামীর সাথে একান্তে কিছু মিষ্টি মূহুর্ত উপভোগ করবে কিন্তু কি হলো? সেখানেও তৃতীয় ব্যক্তি এসে বাগড়া দিল। তার ভা”গ্য এতো খারাপ কেন? যখনই দু’জনে কিছুটা একান্তে সুন্দর মূহুর্ত কাটাতে চাই তখনই কোন না কোনভাবে তা বিফলে যায়। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আনন্দির চোখে জল জমে গেল। এটা কষ্টের কারণ নাকি রাগের কারণে সে জানে না।

চলবে……