#সংসার
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ১৩
-‘আমার ছোট বোনকে ভালোবেসে বিয়ে করার পরও আবার তোমাকে কেন বিয়ে করতে হলো সৌরভ?
সৌরভ মাথা নীচু করে বসে রইল। বিয়ের পর থেকেই রূপায়নের হিম শীতল চাউনী, আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠস্বর শুনলে, বুকের ভেতর ধড়ফড় করে। ভেবেছিল রূপায়ন বাড়িতে আসার আগেই নিপাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু গাধীটা জেদ ধরে বসে আছে। সে সংসার করবে না। নিপা, সৌরভের সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস। নিপাকে ছেড়ে দেওয়া মানে, সব একসাথে হারিয়ে পথে বসা। সৌরভের মতো বেকার বখে যাওয়া ছেলে, নিপার ফ্যামিলি ব্যাকরাউন্ড জেনেই নিপার সাথে রিলেশনে গিয়েছিল। অল্পবয়সী আবেগী মেয়েটাকে কঠিন ভাবে প্রেমের ফাঁদে ফেলে, তবেই নিজের কার্যসিদ্ধি করেছে। যখন যা প্রয়োজন হয়েছে। নিপাকে প্রেশার দিয়ে রূপায়নের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে সৌরভ৷ মাঝখান থেকে সৌরভের অফিস কলিগ লিমা মেয়েটার সাথে পরকীয়া করে ফেঁসে গেছে সৌরভ। নিপার অগোচরে লিমার সাথে লুকিয়ে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছিল। এই পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কে জানত, চালাক মেয়েটা পেট বাঁধিয়ে নিয়ে, সরাসরি প্রমাণসহ সৌরভের বাড়িতে এসে উঠবে?
রূপায়ন তখনো জ্বলজ্বলে চোখে একদৃষ্টিতে সৌরভের মুখের দিকে তাকিয়ে, বোঝার চেষ্টা করছিল, সৌরভের মনে কী চলছে!
নিপা কেঁদেকেটে অস্থির হয়ে বলল,
-‘এই জানোয়ারটা আর কী বলবে বড়দাভাই? ওর বলার কোনো মুখ আছে? আমি এই লম্পটটার সাথে না সংসার করব, আর না ওই বাড়িতে যাব। বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত যা যা দিয়েছিলি তুই! সব কড়াই গন্ডায় বুঝে নেবো আমি।
সৌরভ আঁতকে উঠল। নিপাটা এবার বেশি বাড়াবাড়ি করছে। ইচ্ছে করছে এক থাপ্পড়ে গাল ফাটিয়ে দিতে। না…এখন মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। সৌরভ, রূপায়নের পা’দুটো জড়িয়ে ধরল। বিষাদমাখা কণ্ঠে বলল,
-‘আমার ভুল হয়ে গেছে বড়দাভাই। আমি ওই মেয়েটাকে ডিভোর্স দিয়ে, শুধুমাত্র নিপাকে নিয়ে সংসার করতে চাই!
দীর্ঘক্ষণ জার্নি করে রূপায়নের মাথা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে সৌরভকে ইচ্ছেমতো পেটাতে৷ নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে বলল,
-‘আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আমি এখনো পাইনি সৌরভ?
-‘বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে যা খুশি শাস্তি দিন। আমি মাথা পেতে নেব৷ তবে নিপাকে কিছুতেই ছাড়তে পারব না আমি।
নিপা রাগে চিড়বিড়িয়ে বলল,
-‘তোর সংসার আমি কিছুতেই করব না। তোকে আমি জেলের ভাত খাওয়াব। ঘরে বউ থাকতে আরেকটা বিয়ে করার শখ চিরতরে মিটিয়ে দেব।
নন্দিতাদেবী বলল,
-‘এই ছেলেটা সুবিধার না। তোকে আমি, রূপায়ন কত বুঝিয়েছি। তখন তো তুই আমাদের একটা কথাও শুনিসনি নিপা। উল্টো আমাদের ভয় দেখাতি, সৌরভের সাথে বিয়ে না দিলে বিষ খেয়ে মরবি। এই নিয়ে কত অশান্তি করেছিস। তোর সাথে তখন তোর বাকি ভাইবোনগুলোও তাল দিয়েছে।
-‘ভুল করেছি মা। এই জানোয়ারটাকে বিয়ে করে মস্তবড় ভুল করেছি।
রূপায়ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
-‘এখন তুমি যেতে পারো সৌরভ। বাকি কথা কোর্টে হবে।
সৌরভ, আচমকা নিপার হাত চেপে ধরে, উন্মাদের মতো বলল,
-‘চলো..বাড়ি চলো..? আমি তোমাকে রেখে কিছুতেই যাব না। আর কিসের কোর্ট হ্যাঁ? নিপাকে আমি ডিভোর্স দেব না…।
রূপায়ন, সৌরভের বাহু চেপে ধরে বলল,
-‘নিপার হাত ছাড়?
-‘আমার বউকে আমি ধরেছি। আপনার কী?
রূপায়ন শীতল কণ্ঠে বলল,
-‘বউয়ের জন্য এতই যখন চিন্তা। আরেকটা বিয়ে করেছিস কেন?
-‘আপনাকে কৈফিয়ত দেওয়া লাগবে না কী? নিপা বাড়ি চলো?
-‘যাব না। ছাড় আমাকে?
-‘যেতে তোমাকে হবেই নিপা।
নিপাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগল। অরুপ ছুটে এসে সৌরভের গলা চেপে ধরল। সৌরভ নিপাকে ছেড়ে দিয়ে, অরুপকে পাল্টা আক্রমণ করে বসল। রূপায়ন কাউকেই ছাড়াতে পারছে না। নিপা মেঝেতে বসে বসে অঝোরে কাঁদতে লাগল। মুহূর্তেই বাড়ির ভেতর চিৎকার, চেঁচামেচি, গন্ডগোলের সৃষ্টি হয়ে গেল।
সৌরভ ছাড়া পেতেই নিপার হাত চেপে ধরে, অস্থির হয়ে বলল,
-‘ তুমি যদি এই মুহূর্তে আমার সাথে না যাও! আমি কিন্তু নিজেকে শেষ করে দেব নিপা?
নিপা বলল,
-‘দে শেষ করে! আমার সামনে মরে যা তুই। কিসের অভাবে রেখেছিলাম আমি তোকে? তুই কেন ওই মেয়েটাকে বিয়ে করলি? কী এমন আছে, ওই মেয়েটার মাঝে? যা আমার মাঝে নেই।
রূপায়ন, নন্দিতাদেবীকে নীচু কণ্ঠে বলল,
-‘এভাবে নিপার সংসারটা ভেঙে দেওয়া কী ঠিক হবে মা?
দিপা পাশ থেকে বলল,
-‘কেন ঠিক হবে না? আলবাত হবে। তুই এখন এই কথা বলছিস কেন বড়দাভাই? ওহ..তুই তো এখন বিয়ে করেছিস। তোর নিজের সংসার হয়েছে। নিপা বাড়িতে থাকলে তোর বউয়ের অসুবিধে হবে। এখন তো আর বোনদের ভাল লাগবে না তোর।
রূপায়ন বলল,
-‘কথায় কথায় অনুপমাকে টানিস না। শুনতে ভাল লাগে না।
-‘এখন তো ভাল লাগবেই না। আস্তে আস্তে আমাদের অসহ্য লাগবে। বোনেরা বেড়াতে এলেও বিরক্ত হবি তোরা।
নন্দিতাদেবী বলল,
-‘কোন কথা থেকে কোন কথা বলছিস? তোর মাথা ঠিক আছে দিপা?
-‘আমি একদম ঠিক আছি মা। বরং তোমার বড়ছেলের সুন্দরী বউ পেয়ে মাথা একদম ঠিক নেই। সৌরভের কূকীর্তি জানার পরও বড়দাভাই কোন সাহসে নিপাকে সৌরভের সংসার করতে বলে?
-‘এই কথা আমি কী একবারও বলেছি?
-‘তুই তো তাই বুঝালি বড়দাভাই।
রূপায়ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
-‘বেশ তোরা যখন আমার থেকে ভাল বুঝিস। তাহলে তোরাই ঠিক কর, কী করবি। আমাকে আর এর ভেতরে জড়াবি না।
রুপা বলল,
-‘অকৃতজ্ঞ কোথাকার। আমরা ঠিক করব মানে কী রে? তোর যদি টাকা খরচ হয়! সেই ভয়ে কেটে পড়তে চাইছিস বুঝি?
রূপায়ন বুকের ভেতর হাত রেখে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
-‘আমার এই কলিজাটাও যদি এখন তোদের সবাইকে ভুনা করে খাওয়াই না। তারপরও তোদের মন পাব না। ঠিকই খুঁত ধরবি। আসলে, আমি বিয়ে করে বিরাট ভুল করে ফেলেছি। সত্যিই তো আমার কী দরকার ছিল বিয়ে করা? সারাজীবন গাঁদা খাটুনি খেটে, রোজকার করে তোদের বিলাসিতা পূরণ করতাম৷ সেই বরং ভাল ছিল। তাই না?
সবাই চুপ করে রূপায়নের কথা শুনলো। রূপায়ন চিৎকার করে বলল,
-‘কী রে এখন চুপ করে আছিস কেন? কথা বল? রোজ রোজ আমার আর অশান্তি ভাল লাগে না। কী চাস তোরা? আমি চলে যাই? যাব চলে?
ঠাণ্ডা মানুষগুলো রেগে গেলে কেমন ভয়ংকর রুপ ধারণ করে। নন্দিতাদেবী উত্তেজিত হয়ে বলল,
-‘এসব কী অলক্ষুণে কথা বাবা? তুই কেন বাড়ি ছেড়ে চলে যাবি?
নন্দিতাদেবী রুপা, দিপার দিকে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বলল,
-‘তোদের বিয়ে দিয়েছি। যার যার সংসার হয়েছে। এখন থেকে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে খবরদারি করবি। খবরদার বলে দিলাম, আজকের পর থেকে, আমাদের সংসারে নাক গলাতে আসবি না তোরা। ছেলেটার বিয়ের পর থেকে তোরা কারণে অকারণে অশান্তি করার চেষ্টা করিস। আর সৌরভ পাগলামি না করে তুমি এখন বাড়ি যাও। বাড়িতে যেটাকে এনে উঠিয়েছো৷ আগে সেই মেয়েটাকে বিদায় করো। পরে আমরা ভেবে দেখব, নিপা যাবে কী যাবে না। আমার মেয়ে ফেলনা না। তার মা, ভাই এখনো বেঁচে আছে।
সৌরভ, নিপাকে হুমকি ধামকি দিয়ে চলে যেতেই নন্দিতাদেবী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
-‘অনেকটা পথ গাড়ি জার্নি করে এসেছিস! রূপায়ন ঘরে যা। বিশ্রাম কর। নিপার ব্যপারে পরে কথা বলা যাবে।
রূপায়ন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। নন্দিতাদেবী ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসে পরল। নিপা নীরবে কাঁদছে। রুপা, দিপা মাকে ছেড়ে দিল না। মুখে যা আসল, তাই বলে গেল। নন্দিতাদেবীর ধৈর্যের বাদ ভেঙে গেল। শীতল কণ্ঠে বলল,
-‘তোদের জন্য যদি আমার রূপায়ন সংসার করতে না পারে। ভগবানের দিব্যি কেটে বলছি, তোদের কাউকে সংসার করতে দেব না আমি। আসলে আমারই ভুল হয়েছে। সেই ছোট্ট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত রূপায়নের ঘাড়ে কাঁঠাল ভেঙে তোদের খাইয়ে, পড়িতে, দিয়েথুয়ে, বদঅভ্যেস করেছি। এখন তোদের একটু কম পড়লেই তোরা রূপায়নকে আক্রমণ করিস। আমার বড়ছেলেটা শুধু তোদের দুহাত ভরে দিয়েই গেল। বিনিময়ে তোরা কী দিয়েছিস ওকে? এখন সবার বিয়ে হয়েছে। সংসার হয়েছে। ভাইয়ের সংসারে পরে না থেকে, অযথা অশান্তি না করে, নিজের সংসারে মনোযোগী হও। আমার ননদরাও আমার সংসারে এতটা অশান্তি করতো না। যতটা তোরা ওই নতুন বিয়ে হয়ে আসা বউটাকে জ্বালানোর জন্য মরিয়া হয়ে থাকিস। বিশ্বাস কর, তোদের পিসিরা এত জ্বালালে আমি সংসার করতে পারতাম না।
তিক্তসত্যি কথাগুলো রুপা, দিপার সহজে হজম হলো না। মাকে কড়া কণ্ঠে কিছু বলতে চাইল! তবে নন্দিতাদেবী সে কথা না শুনে , নিপার হাত ধরে নিজের ঘরে চলে গেল।
অরুপের ওই ঘটনার পর থেকে সীমা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে। দরকার ছাড়া খুব একটা অরুপের সাথে কথা বলে না। রাতে বিছানায় অরুপ ঘনিষ্ঠ হতে চাইলেও সীমা কোন উচ্ছ্বাস দেখায় না। তবে নিপা চলে আসাতে সীমা মনে মনে অনেক খুশি। অরুপ ঘরে আসতেই সীমা তাচ্ছিল্য করে বলল,
-‘দেখতে তো পরের মেয়েকে ঠকালে, ঘরের মেয়েকেও ঠকতে হয়?
-‘কী বলতে চাইছো তুমি?
-‘কিছুই বলতে চাইছি না। সবারই ঘরে বউ রেখে বাইরে ছুঁকছুঁক করতে ইচ্ছে করে। শুধু কারোটা প্রকাশ পায়। কারোটা পায় না।
রূপায়ন ঘরে এসে দেখল, অনুপমা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। দরজা আটকে দিয়ে রূপায়ন খাটে উঠে বসল। নীচু কণ্ঠে বলল,
-‘কী গো মাথা ব্যথা কমেনি?
অনুপমা, রূপায়নের কোলের মাঝে এসে শুলো। রূপায়ন, অনুপমার কপালে হাত রেখে চমকে উঠল। জ্বর আবার বেড়েছে। শরীর পুড়ে যাচ্ছে। রূপায়ন বলল,
-‘ঝর্ণার জলে এতটা সময় ধরে ভেজা একদম ঠিক হয়নি।
অনুপমা, রূপায়নের পেটে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে বলল,
-‘তাহলে জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু সময়, তোমার সাথে একাকী উপভোগ করতাম কীভাবে?
রূপায়ন হেসে দিল। এই মেয়েটা আশেপাশে থাকলেই অটোমেটিক মন ভাল হয়ে যায়। বলল,
-‘একবার বর্ষাকালে, তোমায় নিয়ে মেঘের দেশে আবারও যাব। ভাল করে তো ঘুরতেই পারলে না। খাগড়াছড়িতেও দেখার, উপভোগ করার মতো অনেক দর্শনীয় স্থান আছে।
-‘তুমি আগেও গিয়েছিলে বুঝি?
-‘অজস্রবার গিয়েছি। হাতে টাকা থাকলেই ট্যুরে চলে যেতাম।
-‘একাই?
-‘না। কখনো বন্ধু বান্ধবের সাথে গিয়েছি। কখনো ফ্যামিলি নিয়ে গিয়েছি। ট্র্যাভেল গ্রুপের সাথেও গিয়েছি কয়েকবার।
-‘তুমি এত ভ্রমণপিপাসু? দেখে কিন্তু বোঝা যায় না।
রূপায়ন উঠে গেল। গামছা ভিজিয়ে এনে অনুপমার মাথায় জলপট্টি দিয়ে বলল,
-‘এখন থেকে বুঝবে। সময় পেলেই তোমাকে নিয়ে কোথাও না কোথাও বেড়িয়ে পরব।
-‘ভাল কথা নিপার কী হলো?
রূপায়ন মন খারাপ করে বলল,
-‘নিপার সংসারটা বোধহয় টিকবে না। যে জেদী মেয়ে। সৌরভকে আমার প্রথম থেকেই পছন্দ ছিল না। তখন আমার কথা কেউ গুরুত্বই দিল না। অবশ্য এই বাড়িতে আমার কথার গুরুত্ব কবেই ছিল। শুধু আমার টাকার গুরুত্ব। বাদ দাও এসব কথা। নিপার ব্যপারে তোমার কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।
-‘তুমি মন খারাপ করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
দিনগুলো যখন রূপায়ন-অনুপমার দুষ্টু, মিষ্টি ভালোবাসায়, অভিমানী ঝগড়ায়, বেশ কাটছিল। তখনই শুরু হলো সংসারে নতুন অশান্তি। নিপা কিছুদিন ঘরবন্দী হয়ে থাকলেও এখন না বলেকয়ে কোথায় হুটহাট বেড়িয়ে যায়। প্রায়ই রাত করে বাড়ি ফিরে। এই নিয়ে কেউ কিছু বললেও কোমড় বেঁধে ঝগড়া করে। নিপা, সৌরভকে ডিভোর্স নোটিশ পাঠিয়েছে। কিন্তু সৌরভ সাইন করে দেয়নি। উল্টো প্রায়ই নিপাকে বিভিন্ন নাম্বার থেকে ফোন করে ব্ল্যাকমেইল করে। বোনদের পরামর্শে নিপাও শর্ত জুড়ে দিয়েছে। যদি অনুপমাকে এই বাড়ি থেকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বের করতে পারে। তবেই সৌরভের সংসারে ফিরে যাবে নিপা। সৌরভ একবাক্যে রাজি। আসলে অনুপমা বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে সবারই কমবেশি অসুবিধে হচ্ছে। এখন আর রূপায়ন কাউকেই প্রয়োজন ছাড়া টাকা দেয় না। চাইলেই বলে, হাতের অবস্থা ভাল না। পরে দেব। অথচ নিজের বউকে দুইহাত ভরে দেয়। মাকে নিয়মিত ডাক্তার দেখায়, পুরো সংসার একাহাতে চালায় তখন খুব টাকা থাকে হাতে। বোনেরা চাইলেই নাই নাই শুরু হয়ে যায়। রুপার জামাই একটা জমি নেবে। কত করে বলল,
-‘তোমার ভাইকে লাখ পাঁচেক টাকা ধার দিতে বলো। আমি বছর দুই পরেই শোধ করে দেব।
অথচ রূপায়ন একটা পয়সাও দেয়নি। মুখের উপর বলে দিয়েছে, হাতে টাকা নেই। নিশ্চয়ই বউটা কাউকে কিছু না দিতে বুদ্ধি দিয়েছে। তাহলে এতদিন তো দুহাত ভরে দিয়েছে। এখন চাইলেও দেয় না কেন? মা টাও হারামী। সারাক্ষণ বড়ছেলের সাপোর্ট নেয়। ভাইবউয়ের নামে যে মায়ের কাছে দুটো নিন্দে করবে। তাও যুৎ পায় না। সবাই বুঝে গেছে। এই মেয়েটাকে বাড়ি থেকে তাড়াতে পারলেই সবার সব সমস্যার সমাধান হবে। রূপায়ন আবারও আগের মতো সবাইকে দুহাত ভরে দিবে।
নিপা একদিন রাতে অনুপমার রুমে এসে বলল,
-‘কী করো বৌদি?
-‘এই তো। তোমার দাদার সাথে ফোনে কথা বললাম।
-‘দাদার ফিরতে কী আজ রাত হবে?
-‘হয়তো। কেন? কিছু লাগবে?
-‘না..না। এমনিই জিজ্ঞেস করলাম। আসলে রাতে আমার একা একা ঘুম হয় না। তুমি আজরাতে আমার সাথে ঘুমাবে বৌদি?
-‘কিছু মনে করো না নিপা। একা শুতে যদি তোমার ভাল না লাগে! তবে মায়ের কাছে ঘুমাবে৷ আমি দুঃখিত।
নিপা ভেতরে ভেতরে রাগে, দুঃখে ফেটে পরল। নির্লজ্জ মেয়েমানুষ কোথাকার! একদিন বরের সাথে না শুলে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে? তবে মুখে কিছু বলল না। হন্তদন্ত পায়ে ছুটে গেল।
সবাই একজোট হয়ে যখন দিনের পর দিন, খুব কৌশলে নানা ছক কষে, অনুপমাকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। একদিন সত্যি সত্যি সেই মাহেন্দ্রক্ষণটা এসেই গেল বুঝি।
(চলবে)