#সংসার
পর্ব ১৩
ধারাবাহিক গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা
“সারাক্ষণই যদি বাপের বাড়ি নিয়ে পড়ে থাকো,সংসার করবে কখন? তোমার বাপের বাড়িতে একটা না একটা সমস্যা লেগেই থাকে। বাপ অসুস্থ, হাসপাতালে যেয়ে ডিউটি দাও, মা অসুস্থ , দৌড়াও মা’কে দেখতে, সেবাযত্ন করতে, তাঁর সংসার কিছুটা গোছগাছ করে দিতে, বোনের বাড়ি তো বাংলাদেশের এক নম্বর প্রব্লেমেটিক বাড়ি,ঘটনা কিছু না কিছু হতেই থাকে।
সংসারটা করবে কখন শুনি? ”
রাগে-দুঃখে-বিষ্ময়ে তিতলী স্তব্ধ হয়ে গেলো। কেমন করে এ কথা বললো আদনান? বিয়ের পরে কম স্যাক্রিফাইস করেছে তিতলী? আদনান -তিতলী ব্যাচমেট ছিলো। বুয়েটে, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ। দু’জনেই পরীক্ষায় ভালো করতো। পরস্পরকে পছন্দ করে গার্জিয়ানদের জানালে দুই পক্ষ রাজি হয়ে যান। দু’জনেই খুব ভালো চাকরি করতো । তিতলীর পেটে অরণ্য এলো। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় খুব কষ্ট করেছে তিতলী। আদনানের মা উচ্চ শিক্ষিত। তবে তিনি চাকরি করেন নি। তাঁর ইচ্ছা হয়নি,দরকারও পড়েনি। আদনানের বিয়ে দিয়ে তিনি প্রথম যে কাজটা করলেন, বাঁধা দুই গৃহকর্মীকে ছাড়িয়ে দিলেন অজুহাত বানিয়ে, হুসনাকে তিতলী আসার এক মাস পরে, তার পরের মাসেই জোহরাকে। ছুটা খালা রহিমা বহাল থাকলেন ঘর ঝাড়া-মোছা, হাঁড়ি পাতিল মাজার জন্য। তিতলী শাশুড়িকে পুণর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানিয়েছিলো, ” আম্মু, এতো বড় বাসা, আমরা এতোজন মানুষ, লোক তো লাগবে আম্মু। ” শাশুড়ি জবাব দিয়েছিলেন, “আর বোলো না। দুইটা মেয়েই মহা বদমাশ ছিলো। বহু কস্টে হজম করতাম। আদনানের বিয়ে হবে দেখে সবকিছু সহ্য করছিলাম। একটা বিয়েতে কাজকর্ম তো নেহাত কম না। বিয়ের ঝামেলা চুকেছে, এখন ওদের আর খাতির করতে পারবো না।”
” কি অন্যায় করতো আম্মু ওরা? ”
“কি করতো না? ফাঁকিবাজি, কাজকর্ম পরিস্কার না।”
“এবারে ওদের দায়িত্ব আমাকে দেন, আমি খেয়াল রাখবো। ”
” না বাবা, ওরা থাকলে আমি অসুস্থ হয়ে পড়বো। অন্য মানুষ দেখো।”
তিতলি অন্য মানুষের খোঁজ আনে। শাশুড়ি না করে দেন।
“তোমরা সব বাইরে যাও,আমি একলা বাসায় থাকি, অপরিচিত মানুষে আমার খুব ভয়। আর বাঁধা লোকের কি দরকার? আমরা অল্প কয়জন মানুষ, অল্প কাজ। হাতে হাতে নিজেরাই করে নিবো।”
শাশুড়ি গৃহকর্মী রাখতে দিলেন না। বাসায় তিতলীর শ্বশুর,শাশুড়ি, এক দেবর,এক ননদ, একটাই স্বামী আর তিতলী স্বয়ং। ভোর বেলায় অফিসের গাড়ি ধরতে হয়। কিন্তু নাস্তার ব্যবস্থা নেই। আদনান পাউরুটি এনে রাখে। তিতলী সবার জন্য ডিম ভাজে, চা বানায়। কোনোভাবে নাকে মুখে গুঁজে অফিসে দৌড়ায়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এসে তাকেই নাস্তা বানাতে হয়, রাতের খাবারও বানাতে হয়। কারণ , বাকিরা করে না। খাওয়া তো লাগবেই। অরণ্য পেটে আসার পরে শুরু হলো নিদারুণ কষ্ট। বমি ভাব, বমি, মাথা ঘোরা, একই সাথে তীব্র ক্ষুধা , আবার খাবারের গন্ধ নাকে আসলে খুব খারাপ লাগা। কী কষ্ট! এই নিয়ে যতোটুকু সম্ভব, রান্না, ঘর গোছানো, অফিস। সকালে হয় নিজে কিছু করে খাও, নইলে না খেয়ে বিদায় হও। তিতলী যে পরিবার থেকে এসেছে, সেখানে একা নিজের জন্য নাস্তা বানিয়ে খাওয়ার চল নেই। যা রান্না হবে, সবার জন্য হবে। মাঝেমাঝে না খেয়ে বের হতো তিতলী, অফিসের ক্যান্টিনে নাশতা খেতো , ওগুলোতে এতো তেল যে
তিতলীর অ্যাসিডিটি আরও বেড়ে যেতো। দুপুরেও ক্যান্টিন। সন্ধ্যার পরে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরে খাবার নেই। শাশুড়ি বলতেন,”কি রাঁধবো, সেটাই বুঝতে পারছি না। আমরা গতকালের খাবার দিয়ে লাঞ্চ সেরে নিয়েছি। রাতে তো রান্নার দরকার।”
“চা খেয়েছেন আপনি আর আব্বা? ”
“এখনো খাইনি। একটু পরে বানাবো ভাবছিলাম। তুমি যদি বানাও, তাহলে আমার, তোমার আব্বা আর আফরার জন্যও বানিও। ওর পরীক্ষা। ”
বাসার একটা মানুষ জিজ্ঞেস করতো না ওর শরীর কেমন, সারাদিন কিছু খেয়েছে কিনা। স্বয়ং আদনানও না। তিতলী মাঝেমধ্যে বলতো,” আমি এখন রান্নাঘরে ঢুকতে পারবো না। অফিসে তুমি যে খাটনি খেটে এসেছো, আমিও একই পরিমাণ খেটে এসেছি। তোমাদের সন্ধ্যার নাশতার যোগান দিয়েছি। এখন রান্নাঘরে ঢুকতে পারবো না। ” আদনান তখন বাইরে যেয়ে
নান-চিকেন নইলে বিরিয়ানি নিয়ে আসতো সবার জন্য। সবাই মজা করে খেতো।শুধু তিতলীর মন ঘরের ভাত তরকারির জন্য কেমন কেমন করতো। দোকানের হাবিজাবি খেতে ওর কষ্ট হচ্ছে , একথা আদনান সহ সবাই বুঝেও বুঝতো না।
এইসব কথা বাবা-মা-ভাই-বোনকে বলে তাদের কষ্ট দিতে চায়নি তিতলী। মা-বাবা অনেকবার তাঁদের কাছে এসে থাকতে বলেছিলেন তিতলীকে, অফিসের ওজুহাত দিয়ে রাজি হয়নি তিতল ।বাবার বাড়ি থেকে অফিস করা অনেক ঝামেলা হয়ে যাবে।অফিস থেকে বরাদ্দকৃত গাড়িটা এই রুটে আসবে না। বাসার গাড়িটাও তিতলীকে দেওয়া সম্ভব হয়নি, ঐ সময়ে নোমান, তমারও অফিসে আসা যাওয়ার দরকার হয়।
নিশাত বা তিতির তিতলীর বাসায় খাবার পাঠালে খুব রাগ করতো মেয়েটা মা-বোনের উপরে। “খবরদার খাবার পাঠাবে না, আমরা এখানে না খেয়ে থাকি নাকি? ” ঝাঁঝালো গলায় বলতো তিতলী। পুরো বাড়ির জন্য রান্না করে খাবার দিতেন নিশাত বা তিতির। সবাই মিলে আগ্রহ করে তা একবেলাতেই খেয়ে শেষ করতো। আর এটা দেখলেই তিতলীর ভীষণ রাগ হতো। কেমন মানুষ তোমরা? তোমাদের বংশধরকে পেটে নিয়ে যে মেয়েটা অফিসে ঘরে উদয়াস্ত পরিশ্রম করছে, তার জন্য এক মুঠো ভাতও রেঁধে রাখো না তোমরা। একজন প্রেগন্যান্ট মায়ের কতো ক্ষুধা লাগে, জানো না? নিজেরা কিছু করবে না, আবার আমি দোকান থেকে ফলমূল, পাউরুটি , শুকনা খাবার যা কিছু আনি, ঝটিকা বেগে শেষ হয়ে যায়। বেতনের বড় একটা অংশ দিতে হয় সংসারের পিছনে। শ্বশুর খুব ভালো,সাধাসিধে, আপনমনে থাকা মানুষ, কিন্তু শাশুড়ি, আদনান, আফরা, ওদের ভাই আরিজ? শাশুড়ির মেলা টাকা। উচ্চপদস্থ স্বামীর বেতনের প্রায় সব তিনি নিজের অ্যাকাউন্টে জমা রাখতেন। বৌমাকে দুদিন পরপর সুন্দর সুন্দর জামা, শাড়ি কিনে দেন, খাবার নয়। জামাকাপড় খাবে নাকি তিতলী? আর এই যে পোশাক কিনে দিচ্ছেন , দামী স্টোনের সেট কিনে দিচ্ছেন, এটা তিতলীর পছন্দ না। আসল ঘরে মুষল নেই, ঢেঁকি ঘরে চাঁদোয়া। তাছাড়া শাশুড়ি কেনাকাটা করছেন ছেলের টাকা দিয়ে। সোজা তিতলীর বেডরুমে ঢুকে পড়ে আদনানের মানিব্যাগ থেকে যা খুশি বের করে নেন। মা তিনি, নেওয়ার শতভাগ অধিকার আছে তাঁর, কিন্তু কেন তিনি পুত্রবধূকে এমন নাজেহাল করছেন? কেন সুকৌশলে বাঁধা মানুষ দুটোকে তাড়ালেন এবং নতুন গৃহকর্মী অ্যালাও করছেন না?
অরণ্য জন্মালো। খুশির ধূম পড়ে গেলো। সবাই অরণ্যকে চোখে হারায়। কিন্তু অরণ্যের সদ্য প্রসূতি মায়ের দিকে খেয়াল নেই কারো। মাতৃত্বকালীন স্বল্প ছুটির সময়টা তিতলী পার করে দিলো দিন-রাত বাবুর পরিচর্যা করে, আর ফাঁকে ফাঁকে রান্না করে, ঘর গুছিয়ে। সকালে দুর্বল শরীরে নিজের জন্য দুধ-সাগু বানাচ্ছিলো একদিন তিতলী, শাশুড়ি একটু চেখে বললেন, “চমৎকার তো। বেশি করে বানাও, সবাইকে দিও।”
এরপরে অরণী পেটে এলো। চিত্র পাল্টালো না। তখন আরও কষ্ট। অরণ্যের দেখাশোনা, সংসার নামের ঘানিটা টানা, অফিসে কাজের চাপ। এছাড়া বাড়িতে মামাশ্বশুর, খালা শাশুড়ি, কাজিন দেবর ননদ লেগেই থাকে। অরণ্য -অরণী সবার বড় আদরের ঠিকই , কিন্তু তাদের ঠিকঠাক দেখাশোনার জন্য কেউ নেই। বাচ্চাদের অযত্ন, অসুখ -বিসুখ, সংসারের বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখে চাকরিটা ছেড়ে দিলো তিতলী। মানসিক ভারসাম্য হারাতে বসেছিলো সে। অরণীর তিন বছর বয়সে জোর করে আলাদা বাসা নিলো তিতলী। আদনানদের বড় বাসা হলে কি হবে,মানুষও বাড়ছিলো সমানুপাতিক হারে। দেবর বৌ আনলো ঘরে, অরণ্য -অরণী হলো, বাকিরাতো আছেই, আদনানের বদান্যতায় তিতলীর প্রাইভেসি প্রথম থেকেই ছিলোনা। আদনানের বাবা -মা মাস্টার বেডরুমে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। বাকি দুইটা অ্যাটাচড বাথরুম ও বারান্দাওয়ালা ঘর দেবর ও ননদের। আদনানের বিয়ের পরও তার ভাই বোনদের হুঁশ হয়নি বড় ভাই ভাবিকে একটা ঘর ছেড়ে দেওয়ার। তিতলীর নিজের বাথরুম ছিলো না, বারান্দা বহু দূরের কথা। তার বাথরুম মেহমানরা ব্যবহার করতো, অনেক সময় ঠিকমতো পরিস্কার করতো না, গোসলের আগে নিয়ম করে বাথরুম পরিষ্কার করতো তিতলী।
বাসা শ্বশুরবাড়ির কাছাকাছিই নিয়েছে তিতলী, কিন্তু অসুস্থ হলে একবেলা খাবার পাঠানোর কেউ নেই। আদনান জমিয়ে চাকরি করছে, একই বিদ্যা পেটে নিয়ে তিতলী দুই বাচ্চাকে সামলাচ্ছে, তাদের স্কুলে আনা নেওয়া করছে, পড়াচ্ছে, রান্না করছে। আদনান ডিনারে একটু ভিন্নধর্মী খাবার খায়, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য , তারপরেও আদনান এই কথা বললো?
বাবা হসপিটালাইজড হলে একতরফা সেবা করে ভাইয়া। একান্ত দরকার হলে তিতির বা তিতলিকে দিনের বেলায় থাকার জন্য ডেকে পাঠায় নোমান। তাও তার কতো অস্বস্তি ! বোনরা বাবাকে ম্যানেজ করতে পারবে কিনা, বাবার কোনো অসুবিধা হবে কিনা, বোনদের বেশি কষ্ট হবে কিনা, মায়ের অনুপস্থিতিতে ভাগ্নে ভাগ্নিদের কষ্ট হবে কিনা, রাজ্যের দুশ্চিন্তা করে নোমান। বোনদের খাওয়ার জন্য একগাদা খাবার কেবিনে কিনে রাখে। একটু পরপর ফোন করে খবর নেয়। আজ আপার এমন দুরবস্থা, আপাতো ইচ্ছা করে নিজের দুরবস্থা তৈরি করেনি। রাজেশ্বরীর জন্য প্রতিদিন কাঁদে তিতলী, ঘুম ভাঙার পর যখনই মনে পড়ে রাজেশ্বরী দুনিয়ায় নেই, বুক খালি করে কান্না আসে তিতলীর। আপা দুলাভাইকে মেন্টাল সাপোর্ট দিতে রাজ মারা যাওয়ার পরে টানা দুই তিন মাস প্রতিদিন আপার বাসায় গেছে তিতলী, বাচ্চাদের নিয়ে। বাবা-মা -বোনের সাথে শোক ভাগাভাগি করার জন্য, বুবুন-লুম্বিনী-তুতুনের নিদারুণ শোককে প্রশমিত করার জন্য। তারপরে আপার সুইসাইডাল অ্যাটেম্পট কাঁপিয়ে দিয়েছে পুরো পরিবারকে। বোনের বাসায় যাওয়ার আগে রান্নাবাড়া, দুই বাচ্চার স্কুলিং, গোসল, হোমটাস্ক সব করিয়ে নিয়ে যায় তিতলী, তাও আদনানের এই বিশ্রী অভিযোগ?
তিতলী আদনানের দিকে তাকালো। নিজের অজান্তেই সেই চোখে ঘৃণা, বিরক্তি। আদনান স্পষ্ট সেই চোখের ভাষা পড়তে পাড়লো। অনুতপ্তও হলো বৈকি।
তিতলী অরণ্য -অরণীকে নিয়ে বের হয়ে পড়লো বোনের বাসার উদ্দেশ্যে।
” বাবা, এই দেশে থাকবো না, চলো অস্ট্রেলিয়া, কানাডা যেখানে হোক চলে যাই। ”
বারান্দার বেতের চেয়ারে বসে থাকা আসিফ বুবুনের দিকে তাকালো। নিজের শোক তাপে অন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েগুলোর দিকে তেমন খেয়াল করা হয়না। শুকিয়ে কংকাল হয়ে গেছে বুবুন।
“কেনো আব্বু? বাইরে সেটেল করলে লাভ কি হবে? ”
“লাভ হবে এই যে, রাজেশ্বরীর মতো লুম্বিনী , তুতুন মশার কামড় খেয়ে মরে যাবে না। ডাক্তারদের কাছ থেকে আত্মীয় বন্ধু সমস্ত সুবিধা নিংড়ে নিয়ে উল্টো তাদেরই আবার অপমান করবে না, লোটাসের আম্মা আর খালাদের মতো মানুষের চেহারা দেখতে হবে না। নানা-বুবু,মামারা, তিতলি আম্মুরা সবাই শিফট করবে আমাদের সাথে।”
“লোটাসের আম্মা,খালারা তোমার কি হয় বুবুন ? ”
বুবুনের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। দৃঢ় গলায় বললো, “স্যরি বাবা। আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি কিন্তু তোমার বোনদের সহ্য করতে পারিনা। উনারা আমার কেউ হন না বাবা। আমার মা’কে যারা অকারণে কষ্ট দিয়েছে বা দিবে, তাদের কাউকে আমি ছাড়বো না। ”
তিতির মৃত্যুর দুয়ার হতে ফিরে এসেছে। সাত দিন যমের সাথে লড়াই করতে হয়েছে। তিতিরকে বাঁচানোর আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন ডাক্তাররা। তাঁদের মতে, তিতিরের বেঁচে যাওয়াটা অনেক বড় একটা মিরাক্যল। কি ভয়ংকর অবস্থায় সময় পার করেছে পরিবারের প্রতিটি সদস্য, অন্যান্য আত্মীয় বন্ধুরা। কতোবার ভেবেছে বুবুন, সে আত্মহত্যা করবে। ছাদ থেকে লাফিয়ে, হাতের শিরা কেটে কিংবা গায়ে আগুন দিয়ে। মৃত্যু ভয় একেবারেই লোপ পেয়েছিলো বুবুনের। রাজ নেই , এখন মাও নেই হয়ে যাবে। এই শূন্য পৃথিবীতে কি করে বাঁচবে বুবুন? লুম্বিনী আর তুতুনের কথা ভাবলে বুক ফেটে যেতো, পাগল পাগল লাগতো, বেনামাজি বুবুন নামাজ পড়া শুরু করলো। হাসপাতালে আইসিইউ এর বারান্দায় দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা
জায়নামাজে পড়ে থাকতো বুবুন, সারাক্ষণ দু-চোখ বেয়ে দরদর করে পানি ঝরতো, শরীর কাঁপতো, বমি হয়ে যেতো,কিচ্ছু খেতে পারতো না। অবস্থা এমন হয়েছিলো যে, বুবুনকে ভর্তি করা হলো কেবিনে, সিডেট করে রাখা হতো, হাতে স্যালাইন চলতো, নাকে নল দিয়ে খাওয়ানো হতো।
চলবে।
#সংসার
পর্ব ১৪
ধারাবাহিক গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা
“কেমন করে এ কাজ করেছিলি তুই? একবার আমাদের কথা, বিশেষ করে বাচ্চা তিনটার কথা মনে হয়নি তোর? ”
” আগে বলতে, তিতির, তোকে সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে চার বাচ্চার জন্য, এখন বলতে হচ্ছে তিন বাচ্চা। ”
“মাগো, তোর কষ্ট আমরা কি বুঝিনা? আমাদের কম কষ্ট ? নো ডাউট, মায়ের কষ্ট সবচেয়ে বেশি। কিন্তু ধৈর্য্য ধরতে হবে তো মা। তুই তো ধর্মপ্রাণ মেয়ে। কোরান শরীফে পড়িস নি, আল্লাহ বান্দাদের পরীক্ষা নেন ক্ষয় ক্ষতি, অভাব এমনকি মৃত্যু দিয়ে। দেখেন, কোন্ বান্দা কতোটা ধৈর্য্যশীল। যারা আল্লাহর উপরে, তাঁর ফয়সালার উপরে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে, তারা সব ক্ষয় ক্ষতি, কষ্ট সহ্য করে নেয়। জানি,বলা সহজ, করা সহজ না। কিন্তু প্রকৃত ঈমানদাররা ভেঙে পড়েন না। ধৈর্য্যে বুক বেঁধে তারা অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যান, ইবাদত করেন, আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করেন। ঈমান আর একের পর এক সৎ কাজ ঈমানদার মানুষকে সবসময় ব্যস্ত রাখে, মহৎ কাজের মধ্যে তারা শান্তি, স্বস্তি খুঁজে নেয়। জীবন একটা জার্নি, মা। যতোটুকু সুন্দর ভাবে, পবিত্র ভাবে, কর্মঠ ভাবে জার্নিটা করা যায়। জীবনের ট্রেন আল্লাহর হুকুমে থামবে, তুই মাঝপথে চেইন টানলি,ট্রেন কি থামলো? ভুল করেছিলি মা, আর কখনো এমন চিন্তা মাথাতেও আনবি না।প্রতিজ্ঞা কর। ”
“আমি আমার মেয়েটাকে আর কোনোদিন দেখতে পাবো না। সারা পৃথিবীর অলিগলি চষে বেড়ালেও খুঁজে পাবোনা ওকে। কোনোদিন ঐ ছোট্ট মিষ্টি মুখটা দেখবো না, পাকা পাকা কথা শুনবো না, রাজ কোনোদিন গলা জড়িয়ে ধরে বলবে না, মা, আমার লাল ভেলভেটের জুতা লাগবে, মা, ভাত খেতে ইচ্ছা হচ্ছে না, আমাকে একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাও না, আমার ইফতার খেতে অনেক ভালো লাগে, আমার প্লেটে ছোলা,বড়া, বেগুনি, ফুলকপির চপ, ডিমের চপ আরও বেশি করে দিতে হবে। মেয়ে আমার আর কোনোদিন আবদার করবেনা, এটা চেয়ে ওটা চেয়ে বিরক্ত করবে না, মা বলে ডাকবে না, গলা জড়িয়ে ঘুমাবে না, গন্ধ সুন্দর বলে বাবার আফটার শেভ লোশন মেখে ঘুরে বেড়াবে না, কিভাবে রাজকে ছাড়া বেঁচে থাকবো আমি ! এক সেকেন্ড ও আমার কাছে অনেক লম্বা সময়,সেখানে কিভাবে পুরো জীবনটা কাটবে? আর কোনোদিন দেখা হবে
না, কোনোদিন না। ”
নাজমুল সাহেব আর নিশাতের মুখ ভিজে যাচ্ছিলো চোখের জলে। কিন্তু বুকের মধ্যে দাউদাউ করে আগুন জ্বললেও তাঁদের স্হির থাকতে হবে। তিতিরের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা দেখে তাঁরা ভরসা পাচ্ছেন না। সে মৃত্যুর জন্য মুখিয়ে আছে। শরীর হাড় জিরজিরা, চামড়া ফ্যাকাসে, চুল আরও পাতলা হয়ে গেছে। নিজেদের সংসারের কথা ভুলে যাওয়ার যোগাড় হয়েছে নাজমুল -নিশাতের। তিতিরের বাড়ি ছাড়ার জো নেই। আবার কোন অঘটন ঘটাবে! বাচ্চা তিনটার মানসিক অবস্থাও খুবই খারাপ। এদের ছেড়ে যাওয়া যায়? আসিফের প্রতি খুব টান নাজমুল -নিশাতের, ওর কথাটাও ভাবেন তাঁরা। রাজ চলে যাওয়ার পরে দশমাস হয়ে গেছে, এখনতো এদের সবারই শক্ত হওয়া উচিৎ। যাও বা একটু ঠিকঠাক হচ্ছিলো, আসিফের বোনদের কল্যাণে আবারও কতো বড় বিপর্যয় ঘটলো।
মৃতপ্রায়, অচেতন তিতিরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন নিশাত,নাজমুল সাহেব আর বুবুন। তিতলী উন্মাদের মতো চিৎকার করছিলো। নোমান,আদনান একই সাথে আসিফের সাথে যোগাযোগের আর অ্যাম্বুলেন্সের চেষ্টা করছিলো। আসিফের দুইটা ফোনের একটাতেও সংযোগ পাওয়া যাচ্ছিলো না বলে তিতিরের ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে ছুটলো আসিফের ছোটো বোনের বাসায়। তিতিরকে সবচেয়ে কাছের হাসপাতালে নিয়ে গেলো আদনান, নোমান, মেরিনা ভাবী আর তাঁর স্বামী। এতো ধৈর্য্যশীলা হয়েও নিশাত পাগলের মতো আচার আচরণ করছিলেন, নাজমুল সাহেব আর বুবুনও তাই, তিতলীর অবস্থাও সুবিধার ছিলো না, আশেপাশের ফ্ল্যাটের ভাই -ভাবীরা ছিলেন এঁদের পাহারায়, পরম মমতা আর ভালোবাসায় বুবুন,নাজমুল সাহেব,নিশাত, তিতলীর দেখাশোনা করেছিলেন সারা রাত এবং পরের বেশ কয়েকটি দিন। আদনানের ফোন পেয়ে তিতিরের মামা,খালা,চাচা,ফুপুরা, কাজিন সহ অন্যান্য আত্মীয়রা ছুটে এসেছিলেন, সবাই ভাগাভাগি করে আগলে রেখেছিলেন প্রিয় মানুষগুলোকে। দিনের পর দিন। হাসপাতালে ডিউটি, বাসায় ডিউটি। সবচেয়ে বুদ্ধিমতীর কাজ করেছিলো তমা। তিতির দরজা খুলছে না দেখে সে বিপদ আঁচ করে ফেলেছিলো। ওমনি ছোঁ মেরে তুতুন, লুম্বিনী, অরণ্য, অরণী,ইরফান, আয়মানকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো সে। কোনো বাচ্চাই যেতে চাচ্ছিলো না, তমা টোপ দেখিয়ে তাদের বাসার বাইরে বের করলো। গাড়িতে সবকটাকে ভরে চলে গেলো বাসায়। এতো রাতে কোথাও খাবার পাওয়া যাবে না। তমা বাচ্চাদের বুঝালো, লোটাস মারা গেছে তাই তিতিরের মন খুব খারাপ, এজন্য দরজা খুলছে না। কয়েকদিন ধরে তিতির আর আসিফকে , সেই সাথে বাকিদেরও খুব দৌড়াদৌড়ি করতে হবে লোটাসদের বাসায়, তাই কয়েকদিন পিচ্চির দলের এখানে থাকা ভালো।এই বাসায় তিনবেলা পিকনিক হবে, প্রতিদিন লং ড্রাইভে যাওয়া হবে, স্কুল বাদ, বারবিকিউ পার্টি হবে, নদীতে নৌকায় করে বেড়াতে যাওয়া হবে, খুব মজা করবে সবাই মিলে। ফোনে খবর পেয়ে তিতিরের দুই মামাতো বোন চলে এলো। কমবয়সী, ভীষণ হাসিখুশি, অতি প্রিয় দুই আন্টিকে দেখে মুখে হাসি ফুটলো শিশুদলের। শুধু ইরফান গোপনে তমার কাছে যেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো, “তিতির পাখি কি মরে গেছে, আম্মু? ”
ড্রাইভার যখন লোটাসদের বাসায় পৌঁছালো, তখন লোটাসের বাপ-মায়ের পাগলপ্রায় অবস্থা। আসিফ নিঃশব্দে ভাগ্নির জন্য কাঁদছিলো। যদিও চোখ ছিলো শুকনো। তিতির-বুবুনের কাছে নাজমুল সাহেব -নিশাত আছেন, এটা একটা বড় ভরসা। আব্বা আম্মা ঠিক সামলে নেবেন ওদের। আসিফ অবাক হয়ে দেখলো, তার অন্যান্য ভাই বোনেরা খুব একটা শোকগ্রস্ত নয়। ছোটোবোনকে স্বান্ত্বনা দিচ্ছে মাঝেমধ্যে, দিতে হয় তাই। অন্যের আর্তনাদ শুনলে যেমন অটোম্যাটিক চোখে পানি আসে, এদেরও তাই। মুখটা এমন অবস্থায় করুণ রাখতে হয়, তাই রাখা। অবশ্য খুব অবাক হওয়ার বিষয় নয় এটা। আসিফ জানে, তার ভাইবোনেরা যার যার নিজের সন্তান, সংসার ছাড়া আর কারোর ওপর তেমন মায়া রাখে না। আপন ভাইবোনদের ছেলেমেয়েদের উপরে এদের তেমন টান নেই, বরং ঈর্ষা আছে। নিজের বাচ্চার চাইতে বোনের বাচ্চা পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেলে কিংবা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে বেশি সফলতা পেলে মামা-খালারা মোটেও খুশি হয় না। আসিফ আগে এমন ছিলো কিছুটা, তিতিরের সাথে বিয়ের পর থেকে চারদিক দেখেশুনে নিজের অনেক ভুল বুঝতে পেরে শুধরে নিয়েছে আসিফ। ভাইবোনদের শুধরানোর চেষ্টা করেছে বহুবার, বহুভাবে। লাভ হয়নি।
নিজেদের গাড়ি ঢুকতে দেখে আসিফ ভেবেছিলো তিতির আবার এসেছে বুঝি বাবা-মাকে নিয়ে। শ্বশুর শাশুড়ির কর্তব্যবোধ সাংঘাতিক, ভালোবাসাও।সেটা পেয়েছে তিন ছেলে মেয়ে। নোমান -তিতির-তিতলী তাদের আট সন্তানকে একই চোখে দেখে। আর সেখানে আসিফের ভাইবোনেরা? আসিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলো এবং প্রচন্ড বিস্ময়ের সাথে দেখেছিলো ড্রাইভার আকরাম একা কান্নাভেজা চোখে তার দিকে ছুটে আসছে।
“স্যার, আপনার মোবাইল দুইটাই বন্ধ কেনো? সর্বনাশ হয়ে গেছে স্যার, ম্যাডাম বিষ খেয়েছেন, ম্যাডাম বোধ হয় নাই।”
অনেক জোরে কেঁদে কেঁদে কথা বলছিলো আকরাম। পুরো বাড়ি শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।যতো অন্যায় করুক, খুব ভালো করে তারা জানে, আসিফ -তিতির তাদের বিপদে আপদে, যে কোনো সমস্যায় স্বার্থহীন ভাবে পাশে দাঁড়ায়। এটাও জানে, বিনা কারণে তারা কি পরিমাণ যন্ত্রণা দেয় বৌদের।
তিতিরের নন্দাইরা ভিন্ন পরিবারের। তাদের মধ্যে সংকীর্ণতা অনেক কম। তিতির-আসিফকে তারা খুব শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে। ভাগ্নেভাগ্নিরাও মামা-মামিকে ভালোবাসে। তিতির তাদের অতি প্রিয় মামি। কাজেই বড় একটা গুঞ্জন উঠলো বাড়িতে, অনেকেই চিৎকার করে কেঁদে উঠলো, ভগ্নীপতিরা আসিফের কাছে চলে আসলো, বোনরা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।
আসিফের শরীর এবং বোধবুদ্ধি অসাড় হয়ে গিয়েছিলো। বড় দুই দুলাভাই আর ছোট ভাই রওনা হলো তার সাথে। আরেক গাড়িতে আরও আত্মীয় স্বজন।
আসিফ যখন তার হাসপাতালে পৌঁছালো, তখন সেখানে অনেক ভীড়। দুইটা হাসপাতাল ফিরিয়ে দিয়েছিলো তিতিরকে। পয়জনিং এর কেস তারা নিবে না। পেশেন্ট ডাক্তার? তাহলেতো প্রশ্নই ওঠে না। ঢাকা মেডিকেলে যেতে গিয়েও কি মনে করে প্রফেসর বরুণ কান্তিকে ফোন করেছিলো নোমান। উনি নিজেদের হাসপাতালে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়ে আসতে
বলেছিলেন। ভীষণ সাহায্য করেছিলেন প্রফেসর বরুণসহ আসিফের সব কলিগেরা।
হতবিহবল আসিফকে ধরে এই প্রথম কেঁদে উঠেছিলো নোমান। তাও আসিফের ঘোর কাটেনি। অধ্যাপক বরুণ জড়িয়ে ধরেছিলেন আসিফকে।তিনি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন তিতির টিকবে না। কিন্তু তিনি ও অন্যান্য ডাক্তাররা প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। যেনো একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন , তিতিরকে বাঁচাতে হবে। অধ্যাপক আবদুল মজিদ, ডাঃ শাকুর, ডাঃ তৌহিদরা আল্লাহর সাহায্য চাইতেন কাতর ভাবে। অধ্যাপক বরুণ, অধ্যাপক কাজলেরা দিনের মধ্যে কয়েকবার সুপারিশ করতেন, “হে ভগবান! মেয়েটাকে বাঁচিয়ে দাও। ওকে ওর তিন বাচ্চার কাছে ফিরিয়ে দাও। ”
এরমধ্যে বুবুন সবাইকে চরম আতংকে ফেলে দিলো। সে তখন বদ্ধ উন্মাদ। সুইসাইডের জন্য মরিয়া। প্রতি সেকেন্ডে তাকে কঠিন পাহারা দিয়েছে একেকজন। হসপিটালাইজড ছিলো বুবুনও।
তমা প্রাণপণে যত্ন করেছে তুতুন আর লুম্বিনীকে। নিজের ছেলেদের দিকেও ফিরে তাকায়নি।এতো ক্যারিয়ারিস্ট মেয়ে, অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিলো দুই সপ্তাহ। লুম্বিনীকে নিউরোলজিস্ট, সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যেতো শিডিউল মেনে। ছেলেদের আর ভাগ্নে ভাগ্নিদের ট্রেনে করে ঘুরিয়ে আনলো সিলেট থেকে। তুতুন-লুম্বিনীর পছন্দের সব খালা,মামী, কাজিনদের নিয়ে খুব সুন্দর রিসোর্টে থাকলো দুই দিন। তাও মাঝেমধ্যেই চিকন সুরে কাঁদতো
তুতুন। হাসি, হৈ হুল্লোড়ের মধ্যেও লুম্বিনী থাকতো একদম চুপ, নিস্তেজ,নিস্প্রাণ। সে কল্পনার চোখে দেখতে পেতো রাজ আর সে একই রকম সাজগোজ করে খেলা করছে। রাজের কথা ভাবতে সবচেয়ে ভালো লাগে লুম্বিনীর, আবার ভীষণ কষ্টও হয়। একদিন সাইকিয়াট্রিস্ট আন্টিকে জিজ্ঞেস করেছিলো লুম্বিনী, ” রাজ কোথায় থাকে এখন? ”
“রাজ দারুণ সুন্দর জায়গায় থাকে এখন। ও যে কি আনন্দ করছে! ও তো এখন আল্লাহর কাছে।আল্লাহর মেহমান। ”
“আমার কাছে কেন আসে না? ”
“একবার আল্লাহর মেহমান হলে আসা যায়না মামনি।”
“কি করলে আল্লাহর মেহমান হওয়া যায়? ”
“আল্লাহ পাকই ঠিক করেন আম্মু যে কাকে কখন মেহমান বানাবেন।”
“আমার কথা রাজের মনে নেই? আমার কথা ও বলে না? ”
“এখন মনে নেই। অনেক অনেক বছর পরে তুমি যখন আল্লাহর মেহমান হবে, তখন তোমাকে দেখেই রাজ ছুটে আসবে, তোমাকে জাপটে ধরে বলবে,” আমার লুম্বিনী এসেছে।” আবার তোমরা আগের মতো দুই বোন একসাথে থাকবে। তবে সোনা, নিজের থেকে কেউ আল্লাহর মেহমান হতে গেলে আল্লাহ খুব রাগ করেন, তাকে আর মেহমান বানান না। এই কথাটা সবসময় মনে রাখবে। ওখানে যেয়ে রাজ মজার মজার খাবার খায়, স্কুলে যায়, মন দিয়ে পড়ে, প্রজাপতি আর ফড়িঙের সাথে খেলা করে। ওখানে ওর কোনো কষ্ট নেই। শুধু আনন্দ আর আনন্দ। ওখানে জ্বর হয়না, মন খারাপ হয়না।ভীষণ ভালো আছে রাজেশ্বরী।
রাজ ভালো আছে শুনে খুব ভালো লাগে লুম্বিনীর, কিন্তু বোনকে দেখার জন্য ওর ছোট্ট বুক ফেটে যায়। কতোদিন রাজেশ্বরীকে দেখেনি, কতোদিন একসাথে স্কুলে যাওয়া হয়নি, বাবা-মা-বড় ভাইয়া বাসায় না থাকলে টিভি ছেড়ে উদ্দাম নাচ নাচা হয়নি, ময়না খালা হিন্দিতে সিনেমার গানের চ্যানেল দিয়ে দিতেন। লুম্বিনীর কিছু ভালো লাগেনা,কিচ্ছু না।
চলবে।