সংসার পর্ব-১৫

0
157

#সংসার
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ১৫

-‘বড়দাভাই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে মানে কী মা? এতবড় সংসার এখন চলবে কীভাবে?

-‘সে আমি কী জানি? তোরা ভাইবোনেরা ভাল জানিস!
-‘বোকার মতো কথা বলো না মা। আমরা ভাল জানি মানে কী? বড়দাভাইকে তুমি যেতে দিলে কেন?
সীমা রান্নাঘর থেকে এসে বলল,
-‘রাতে কী রান্না হবে? মাস শেষ, ঘরে চাল নেই, ফ্রীজে মাছ, মাংসও নেই।
অরুপ বলল,
-‘সংসার খরচবাবদ বড়দাভাই তোমাকে কোনো টাকা দিয়ে যায়নি মা?
-‘না।
-‘ও কোথায় গেছে? কবে বাড়ি ফিরবে? কিছু বলে গেছে?
-‘কিছুই বলে যায়নি।
অরুপ রেগে গেল। চিৎকার করে বলল,
-‘বাড়িতে এত মানুষ। কেউ ওদের যাওয়ার সময় বাঁধা দাওনি কেন? কবে আসবে তাও না কী বলে যায়নি!
দিপা বলল,
-‘ফোন দিয়ে দ্যাখ? বড়দাভাই এখন কোথায় আছে?
-‘ভাল কথা মনে করেছিস!
অরুপ প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে বড়দাভাইয়ের নাম্বারে ডায়াল করল। ফোন বন্ধ।
সীমা বলল,
-‘চাল না আনলে কিন্তু রাতের খাবার বন্ধ।
অরুপ চিন্তিত মুখে বলল,
-‘আরেহ… রুটি টুটি কিছু একটা বানিয়ে নাও। কাল সকালে চাল এনে দেব।
সীমা বলল,
-‘এতগুলো মানুষের রুটি আমি একা একা বানাতে পারব না। কাউকে সাথে আসতে বলো?
অরুপ, নিপাকে বলল,
-‘এভাবে হা করে দাঁড়িয়ে না থেকে, সীমার সাথে রান্নাঘরে যা।
-‘আমি পারব না।
-‘না পারলে তোর রাতের খাবার বন্ধ। সীমা তিনটে রুটি কম বানাবে।
নিপা রেগে গেল। বলল,
-‘বড়দাভাই সংসারে সব খরচ দেয়। বড়বৌদি একাহাতে সবার রান্না করত। তারপরও কোনদিন খাওয়া নিয়ে বা কাজ নিয়ে কথা শোনায়নি।
অরুপ তাচ্ছিল্য করে বলল,
-‘এতই যখন বড়বৌদির জন্য দরদ উথলে উঠছে। তাহলে বড়বৌদিকে তাড়ানোর জন্য এত নাটক করেছিলি কেন, সবাই মিলে? আর আমি বড়দাভাই না। আমার কষ্টের টাকার দাম আছে। অপ্রয়োজনে আমি এক পয়সাও ব্যয় করব না।
সবাই অদ্ভুত চোখে অরুপের দিকে তাকিয়ে আছে। নন্দিতাদেবী মলিন হেসে বলল,
-‘একদিনেই এই কথা বলছিস অরুপ? অথচ আমার রূপায়ন তোদের সবার কটুকথা শুনেও, তুচ্ছতাচ্ছিল্য মুখ বুজে মেনে নিয়েও এতগুলো বছর শক্ত হাতে সংসারের ঘানি টেনেছে। কখনো একবার ছেড়ে দুবার একটা জিনিসের কথা বলে দেওয়া লাগেনি।
-‘তোমাদের বুঝতে হবে, হাতের পাঁচ আঙুল কখনো সমান হয় না মা। আমাকে বড়দাভাই ভাবলে ভুল করবে।

রাতে নিপা জেদ করে খেলো না। না খেয়েই শুয়ে পরল। অবশ্য কেউ আর খাওয়ার জন্য জোর করেনি।
বেলা করে ঘুম ভেঙে দেখল, ফোনে সৌরভের নাম্বার থেকে অনেকগুলো মিসকল উঠে রয়েছে। আবারও ফোনটা বেজে উঠল। নিপা ফোন রিসিভ করতেই সৌরভ চেঁচিয়ে বলল,
-‘তোমার বড়দাভাইয়ের কখনো ভাল হবে না নিপা।
নিপা তাচ্ছিল্য করে বলল,
-‘শকুনের আর্শীবাদে কখনো গরু মরে না।
-‘নিপা…!
-‘একদম ধমকাবে না।
-‘তোর বড়দাভাই কোন সাহসে আমার চাকুরী খেয়েছে?
-‘কী বললে?
সৌরভ অস্থির হয়ে বলল,
-‘শুনতে পাওনি?
নিপা মনে মনে বেজায় খুশি হলো। বলল,
-‘বেশ করেছে। এবার বুঝবি ঘরে বউ থাকতেও আরেকটা বিয়ে করার কী জ্বালা। আমিও দেখব, বেকার সৌরভের সাথে ওই মেয়েটার ঠিক কতদিন মাখো মাখো সম্পর্ক থাকে।

রূপায়ন, অনুপমাকে নিয়ে ফুলপিসির বিক্রমপুরের বাড়িতে গিয়ে উঠেছে। বিশাল একতলা বাড়িটা টিন ও কাঠ দিয়ে কী সুন্দর কারুকার্য করা। বাড়ির সামনে পাকা শান বাঁধানো পুকুর। পুকুরে অজস্র বুনো কলমিফুল ফুটে রয়েছে। অনুপমা জানালা দিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে পুকুরের দিকে তাকিয়ে আছে। একপশলা ঝিরিঝিরি বাতাস অনুপমার চোখে, মুখে উপচে পড়ছে। চুলগুলো এলোমেলো উঁড়ছে। রূপায়ন আঁধশোয়া হয়ে, অনুপমার দিকে তাকিয়ে, চায়ে চুমুক দিল। পিসি ভেজা হাত মুছতে মুছতে অনুপমার পাশে বসল। রূপায়নকে বলল,
-‘একদম উচিৎ কাজ করেছিস রুপ! এবার যদি ওদের একটু শিক্ষে হয়। একবার যখন ঘর ছেড়ে বেড়িয়েছিস। সহজে আর বাড়ি যাবি না। বউমাকে নিয়ে মনের সুখে ঘুরে বেড়া। সংসারে তো একটা সময় থিতু হতেই হবে। তার আগে জীবটাকে উপভোগ করে নে। একবার বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গেলে আর হুটহাট কোথাও বের হওয়া যায় না।
রূপায়ন কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে বলল,
-‘তুমিই একবার চিন্তা করো পিসি? স্বার্থে টান লাগায় আমার ভাইবোনগুলো নামতে নামতে কতটা নীচে নেমে গেছে। গোবিন্দ সঠিক সময় বাড়ি না গেলে, কী যে হতো! ভাবলেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আমার বউকে শখ করে কিছু কিনে দিলেও সবাইকে কৈফিয়ত দেওয়া লাগে। আমার বউকে দিলাম! ওদের কেন দিলাম না। এই নিয়ে আমার বউয়ের সাথে অযথা অশান্তি করে। আমি বাড়ি না থাকলে সারাক্ষণ কটুকথা শোনায়। অনুপমাও তো একটা মানুষ। কতক্ষণ সহ্য করা যায়?
-‘কিছু মনে করিস না, তোর আর বৌদির প্রশ্রয়ে ওরা এতটা অমানুষ হয়ে গেছে রুপ। ভাইবোনদের ছোটবেলা থেকে মানুষ করেছিস, ভাইকে ঘুষ দিয়ে চাকুরী দিয়ে দিয়েছিস। বোনদের ভরি ভরি স্বর্ণ, লাখ লাখ টাকা যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিয়েছিস। এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। ধীরে ধীরে ওদের দেওয়া-থোওয়া কমিয়ে না দিয়ে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিস। ওদের স্বভাবটা তোরাই খারাপ বানিয়েছিস। অরুপ চাকুরী করে তবুও তুই ওর কাছ থেকে সংসার খরচবাবদ টাকা নিস না। বোনদের বিয়ে হয়েছে। তুই কেন এখনো ওদের বিলাসিতা পূরণ করবি? ওদের জামাই আছে না? আবার না কী টাকা ধার নিয়েও তোকে ভেতর দেয় না। আমার আপন ভাতিজা-ভাতিজী হলে কী হবে, একেকটা আস্ত বেয়াদব হয়েছে। এবার বুঝবে তুই কতটা জুড়ে ছিলি ওদের জীবনে! আমার ভাবতেও অবাক লাগে, যে মানুষটা ওদের জন্য এত করল, কোথায় তার বউকে মাথায় করে রাখবে! তা না৷ উল্টো বৌমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। তুই যদি শুরু থেকেই কঠোরভাবে রাশটা টেনে ধরতি। আজ বৌমার সাথে এতবড় অন্যায় করার সাহস পেতো না রুপ।
রূপায়ন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পিসি একটু থেমে বলল,
-‘ভাল কথা। অরুপ ফোন দিয়েছিল?
-‘কী বলল?
-‘তুই এখানে এসেছিস না কী জিজ্ঞেস করেছে।
-‘তুমি কী বলেছো পিসি?
-‘আমি ‘না’ বলেছি। শুধু আমাকে না! সবাইকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করছে। কারো বাসায় গিয়েছিস না কী!
-‘তুমি কাউকে বলো না পিসি। আমরা তোমার কাছে আছি।
-‘মাথা খারাপ! তবে শোন, এখানে বোরিং সময় না কাটিয়ে, বৌমাকে নিয়ে একটু ঘুরে আয়।
-‘হ্যাঁ যাব।
পিসি ব্যস্ত পায়ে ভাত নামাতে চলে গেল। রূপায়ন, অনুপমার হাত ধরে বুকের মাঝে টেনে নিল। অনুপমার কাঁধে হাত রেখে,নাকে নাক ঘষে বলল,
-‘যাবে না কী আরও একবার?
অনুপমা চোখ তুলে তাকাল। বলল,
-‘কোথায়?
-‘এবার খাগড়াছড়ি যাব। কী বলো?
-‘ওখানে গিয়ে কী হবে?
রূপায়ন আলতো করে অনুপমার কানের লতিতে মুখ ঠেকিয়ে বলল,
-‘প্রথমবার তো জ্বর বাঁধিয়ে নিলে। ভাল করে ঘুরতেই পারলে না। তুমি-আমি ঘুরব, ফিরব, খাব-দাব, আর..
-‘আর কী?
রূপায়ন ফিসফিস করে বলল,
-‘তোমায় অনেক অনেক আদর করব।
অনুপমা কেঁপে উঠল। চোখের পাতায় ভেসে উঠল, কংলাক ঝর্ণার সেই দৃশ্য। সেদিন মানুষটা কেমন উন্মাদ হয়ে, অনুপমাতে বিচরণ করছিল। রূপায়নের অসহ্য ভালোবাসায় অনেকটা সময় ধরে যেমন অনুপমা আবেশে বুঁদ হয়ে ছিল। যদি কেউ দেখে ফেলে? সেই কথা ভেবে একটু একটু ভয়ও লাগছিল। মধুর কিছু সময়, চাইলেই কী সহজে ভোলা যায়?
-‘অনুপমা?
-‘হুম..
-‘কোথায় হারিয়ে গেলে?
-‘আবারও যাব।
-‘কোথায়?
-‘যেখানে গেলে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা শুধু তোমার সাথে থাকা যাবে। তোমাকে হাত বাড়িয়ে ছোঁয়া যাবে। মন খুলে কথা বলা যাবে। আর…
-‘আর..কী?
অনুপমা লজ্জা পেল। বলল,
-‘কিছু না।
রূপায়ন মুখ টিপে হেসে দিল। বলল,
-‘বাকিটা আমি বলি?
-‘না প্লিজ!

বাড়িতে সারাক্ষণ ঝগড়াঝাঁটি, অশান্তি লেগেই থাকে। অরুপ বাজার করে খুব হিসাব করে। বোনেরা হুটহাট চলে এলে, ভালমন্দ যে কিছু রান্না করবে। সীমা তাও করে না। এই নিয়ে, বোনেরা সীমাকে কথা শোনালে, সীমা মুখের উপর বলে দেয়।
-‘দুদিন পরপরই তো আসেন। সবসময় ভালমন্দ রান্না করতে হবে কেন? সবসময় ফ্রীজে ভাল মাছ, মাংস থাকে না কী?
-‘আগে থাকত কীভাবে?
-‘আগের সাথে এখনকার তুলনা দিলে তো হবে না বড়দি। আগে সংসার বড়দাভাই চালাতো। এখন অরুপ চালায়। যার যেমন ইনকাম সে তো সেই ভাবেই চালাবে।
-‘অরুপ ইমকাম ভালোই করে। শুধু তোমার মুখেই নাই নাই শোনা যায়। ননদদের খাওয়াতে গেলেই কম পরে তোমার। অথচ তোমার বাবার বাড়ি থেকে কেউ এলে কী রেখে কী করবা..অস্থির হয়ে যাও।
-“আমার বাবার বাড়ির লোকেরা, আপনাদের মতো সারাবছর এসে পরে থাকে না। বছরে এক কী দুবার আসে।
-‘মুখ সামলে কথা বলো সীমা। আসুক আজ অরুপ বাড়িতে।
সীমাও কম যায় না। রান্নাবাদ দিয়ে এগিয়ে এলো। চড়া কণ্ঠে বলল,
-‘কী করবে অরুপ এসে? আমি কী কিছু ভুল বলেছি? নিজেদের সংসার বাদ দিয়ে বাবার বাড়ি এসে পরে থাকেন। লজ্জা লাগে না? কাছে বিয়ে হয়েছে তাই কী? স্বামীর টাকা বাঁচিয়ে বাড়িতে বিল্ডিং করতেছেন আর বাবার বাড়ি এসে অন্নধ্বংস করতেছেন। চক্ষু লজ্জা বলেও তো একটা কথা আছে।
রূপা চিৎকার করে মাকে ডাকল। বলল,
-‘ও..মা..? কোথায় গেলে? এসে শুনে যাও? পরের বাড়ির মেয়েদের জন্য এখন নিজের বাপের বাড়িতেও আসতে পারব না আমরা? আমরা না কী আমার ভাইয়ের অন্নধ্বংস করতেছি। মা…?

রোজ রোজ এত অশান্তি নন্দিতাদেবীর আর ভাল লাগে না। সেদিন রূপায়নের সাথে চলে গেলেই বরং ভাল হতো। গতকাল গোবিন্দ এসেছিল। সবার অগোচরে নন্দিতাদেবীর হাতে ঔষধ কেনার জন্য টাকা দিয়ে গিয়েছে। রূপায়ন না কী পাঠিয়েছে। বড়ছেলেটা এখন কোথায় আছে, কেমন আছে কে জানে! গোবিন্দ তো বলল, ওরা ভালোই আছে। ভাল থাকলেই ভাল।

অরুপ অফিস ছুটির পর ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরতেই সবাই একজোট হয়ে সীমার নামে নালিশ করল। অরুপ ক্ষেপে গেল। মেজাজ নিয়ে বলল,
-‘সীমাকে নিয়ে তোদের এতই যখন অসুবিধে তাহলে তোরা আসিস কেন? সীমার রান্না ভাল হয় না, আমি ভাল বাজার করি না। গাদা খাটুনি খেটে এসে, রোজ রোজ তোদের অভিযোগ শুনতে আমার একটুও ভাল লাগে না। অনেক তো বাপেরবাড়ি বেড়ালি। এবার যার যার সংসারে মন দে। আমার বউ তার বাপের বাড়ি গিয়ে কয়দিন পরে থাকে?
রূপার চোখে জল এসে গেল। বুঁজে আসা কণ্ঠে বলল,
-‘বাহ্..বাহ্.. এখন বউ আপন হলো! আর আমরা পর হয়ে গেছি তাই না?
অরুপ বলল,
-‘আমি একবেলা না খেয়ে থাকলে, আমার বউও না খেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করে ৷ আমি ঘড়ি ধরে, সঠিক সময়ে বাড়ি না ফিরলে, আবার বউ বার বার ফোন দেয়। কোথায় আছি, কী করছি, এখনো বাড়ি ফিরছি না কেন? জিজ্ঞেস করে আমাকে অস্থির করে ফেলে। আমার অসুখ হলে, সারারাত জেগে আমার সেবা যত্ন করে, একবার ডায়রিয়া হয়ে তিনদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। সীমা ছায়ার মতো আমার সাথে লেগে ছিল। মাসের শেষে আমার যখন হাত ফাঁকা থাকে, তখন নির্দ্বিধায় সীমা নিজের জমানো টাকা দিয়ে আমাকে সাহায্য করে। এখন তোরাই বল? কার আপন হওয়ার কথা? আসলে আপন, পর বলে, কিছু হয় না। একেকটা সম্পর্কের সৌন্দর্য একেক রকম। শুধু আমরা সব সম্পর্ককে একসাথে গুলিয়ে ফেলে কষ্ট পাই! এই যা…
রুপা বলল,
-‘তোর জ্ঞান তোর কাছে রাখ অরুপ। বড়দাভাইকে একবার বাড়িতে আসতে দে! সব বলে দিবো।
অরুপ তাচ্ছিল্য করে বলল,
-‘কী আর বললি তুই? ধর, তোর জামাই যদি তোকে ঠিকমতো ভরণপোষণ না দিয়ে তার বোনদের পিছে অযথা টাকা খরচ করে। তুই মেনে নিবি? নেহাৎ বড়দাভাই ভাল মানুষ। বেছে বেছে বউটাও পেয়েছে লক্ষ্মীমন্ত। তাই এখনো তোদের বাপের বাড়িতে এত জোর।
অরুপ মাকে ডেকে বলল,
-‘বড়দাভাইয়ের এখনো কোন খোঁজ পেলাম না মা। কোথায় আছে কে জানে! দোকানটাও আজ কতদিন যাবৎ বন্ধ। সব কাস্টোমার তো ছুটে যাচ্ছে।
-‘তোদের জন্যই তো ছেলেটা আজ বাড়ি ছাড়া।
অরুপ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
-‘আমাদের ভুল হয়ে গেছে মা। যদি জেনে থাকো বড়দাভাই কোথায় আছে। তাহলে বাড়ি ফিরে আসতে বলো প্লিজ? এতবড় সংসার তোলা টাকা দিয়ে চালাতে আমি সত্যিই হিমশিম খাচ্ছি। তার উপর তোমার মেয়েদের একটার পর একটা অভিযোগ তো লেগেই আছে।

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্য রূপায়নের হাত ধরে অনুপমা বাসের মাঝামাঝি সিটে বসল। ঢাকার রোড ছেড়ে বাসটা আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে অনেকটাদূর এগিয়ে যেতেই বাসটা খুব বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট হলো। এত জোরে সামনে থেকে ছুটে আসা ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেলো। বাসের সামনের কাঁচ, জানালার কাঁচ ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে গেছে। বাসটা উল্টিয়ে রোডের সাইডে বড় গাছের সাথে কোনমতে ঠেকে রইল। যাত্রীদের অবস্থা খুব শোচনীয়।

(চলবে)