#সংসার
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ১৬
বাসটা উল্টিয়ে রোডের সাইডে বড় গাছের সাথে কোনমতে ঠেকে রইল। যাত্রীদের অবস্থা শোচনীয়। বাস চালকসহ সামনের সিটে বসা চারজন স্পট ডেট। কারো কারো অবস্থা খুব গুরুতর। রূপায়ন, অনুপমার কাঁধ চেপে ধরে বসে ছিল। দুজনই বাসের ভেতর ছিটকে পরেছে। রূপায়নের চোট লেগে শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে, ছিড়ে গেছে। অনুপমা সিটের সাথে জোড়ে মাথায় বারি খেয়েছে। জালানার গ্লাস ভেঙে, কাঁচের টুকরোগুলো মুখে, ঘাড়ে, গলায় গেঁথে গেছে। ভাগ্য সহায় ছিল। বড় ধরনের কিছু হয়নি। চারপাশে এত রক্ত, হাহাকার, কান্নাকাটি, আপনজন হারানোর আর্তচিৎকার দেখে, দুজনই প্রচুর ভয় পেয়েছে। এই প্রথম চোখের সামনে, পর পর পাঁচজনের মৃত্যু দেখল, রূপায়ন, অনুপমা। কেমন মাথাটা থেঁতলে গেছে, ভাঙা কাঁচ ভেঙেচুরে শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। এত নির্মম মৃত্যু দেখে অনুপমা শব্দ করে কেঁদে দিল। মাথা প্রচণ্ড ঘুরছে, হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। অসহ্য ব্যথায় পুরো শরীর অসার হয়ে আসছে। স্থানীয়রা ছুটে এসেছে। যে যেভাবে পারছে, জীবিত মানুষকে উদ্ধার করছে, গুরুতর মানুষগুলোকে নিজ উদ্যোগে গাড়ি করে সদর হাসাপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছে। রূপায়ন আর অনুপমাকেও হাসপাতালে পাঠিয়ে দিল। রূপায়ন বুকে চাপ খেয়েছে, তবে জ্ঞান হারায়নি। শক্ত করে অনুপমার একহাত চেপে ধরে বসে আছে। আর বিড়বিড় করে বলছে,
-‘আমার বউয়ের শরীরে কত কাঁচের টুকরো গেঁথে গেছে। কেউ একটু খুলে দেন প্লিজ?
রূপায়নকে ডাক্তার দেখে, ড্রেসিং করে দিল। ব্যথার ঔষধ লিখে দিল। বলল,
-‘কিছু খেয়ে, এই ঔষধ গুলো খেয়ে নিবেন।
অনুপমার শরীর থেকে ধীরে ধীরে সবগুলো কাঁচের টুকরো খুলে দিল ডাক্তার। অনুপমা ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদছে। মাথায় ব্যান্ডেস করে দিল। হাতে ব্যথা কমানোর জন্য ইনজেকশন পুশ করে দিল।
রূপায়ন পকেটে হাত দিয়ে দেখল, ফোন, টাকা কিছুই নেই। হাসপাতালে আসার আগেও তো ফোন, টাকা সাথে ছিল। যারা রূপায়নদের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছে। তাদের মাঝের কেউ চুরি করেছে হয়তো।
এত এত মন খারাপের মাঝেও হেসে দিল রূপায়ন। কয়েকদিনের না কামানো দাড়িতে হাত বুলিয়ে, নীচু কণ্ঠে বলল,
-‘আপনার ফোনটা একটু দেওয়া যাবে?
ডাক্তার বেশ অবাক হলো। একটা রুগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর, নিজের ফোন বের করে দিতেও কেমন যেন লাগছে। ইতঃস্তত করে নিজের ফোনটা বের করে দিল। রূপায়ন ব্যস্ত হাতে পিসির নাম্বারে ফোন দিয়ে, এক্সিডেন্টের কথা সংক্ষেপে জানালো। এবং কোথায় আছে বলে দিল।
পিসি কান্নাকাটি জুড়ে দিল। রূপায়ন বলল,
-‘আমরা ভাল আছি পিসি। আমাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। ফোন, টাকা, চুরি হয়ে গেছে।
-‘তোরা ওখানেই থাক৷ আমরা আসছি।
প্রায় ঘণ্টাতিনেক অপেক্ষা করার পর পিসি এলো। দুইহাতে রূপায়ন, অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে, শব্দ করে কেঁদে দিল পিসি। অপরাধী কণ্ঠে বলল,
-‘আমার জন্যই তোদের আজ এই অবস্থা।
রূপায়ন বলল,
-‘এভাবে বলো না পিসি।
-‘বৌদি যদি জানে! তোরা এক্সিডেন্ট করেছিস! অতিরিক্ত টেনশনে স্ট্রোক করেই মারা যাবে মানুষটা।
রূপায়ন বলল,
-‘মাকে বলো না পিসি।
অনুপমাকে ধরে ধরে নিয়ে গেল রূপায়ন। গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে, নিজেও পাশে বসল। অনুপমা আস্তে করে মাথাটা রূপায়নের কাঁধে এলিয়ে দিল। চোখ বুজলেই সেই ভয়ংকর দৃশ্যটা চোখের পাতায় ভেসে উঠছে। আজ মৃত্যুর কত কাছ থেকে ফিরে এলো ওরা। ‘সত্যিই প্রত্যেকটা মানুষ চলার পথে, মৃত্যু মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।’ শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
অনুপমা বলল,
-‘বাড়ি যাব।
রূপায়ন পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
-‘এখন না। কিছুদিন পর যাব।
অনুপমা বিষাদমাখা কণ্ঠে বলল,
-‘নিজেদের সংসার ফেলে, এভাবে ঘুরে বেড়াতে ভাল লাগছে না।
-‘তুমি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছো অনুপমা। তাই এমন মনে হচ্ছে। সংসার তো আমরা করবোই। তবে তোমাকে আর কখনো যেন, আমার ভাইবোনদের কাছে তুচ্ছ কারণে অপমানিত হতে না হয়। পাকাপোক্ত ভাবে সেই ব্যবস্থা করেই ওই বাড়িতে আমরা ফিরব অনুপমা।
-‘তারপরও যদি ওরা বাড়াবাড়ি করে?
রূপায়ন কী যেন ভাবল৷ ইতঃস্তত করে বলল,
-‘সংসার আলাদা করে দেবো।
অনুপমা, রূপায়নের চোখের দিকে তাকিয় বলল,
-‘মন থেকে বলছো, এই কথা?
রূপায়ন মাথা নীচু করে ফেলল। অনুপমা মৃদু হেসে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
-‘আমি এতটাও খারাপ না। শুধুমাত্র নিজের সুখের কথা ভেবে, সবার সুখ-শান্তি কেড়ে নেবো। তোমার ভাইবোনগুলোকে সেই ছোটবেলা থেকে বাবার ছায়া দিয়ে, পেলেপুষে বড় করেছো তুমি। সেই অধিকার বোধ থেকেই তোমার কাছে ওদের আবদারটা সবসময় বেশি থাকে। এখন যদি তুমি আলাদা হয়ে যাও, ওদের ভালমন্দ না দ্যাখো৷ ওরা কোথায় যাবে বলোতো?
উত্তরে রূপায়ন, অনুপমার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াল। ভালোবাসার মানুষগুলো যদি বুঝদার হয়, একজীবন দিব্যি সুখে-দুঃখে একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায়।
রূপায়ন ফিসফিস করে বলল,
-‘তুমি এত ভাল কেন?
অনুপমা লাজুক হেসে ফিসফিস করে বলল,
-‘নিজের মনকে প্রশ্ন করো!
-‘তারমানে, আমিও ভাল দেখে, বেছে বেছে পৃথিবীর সেরা নারীটাকে নিজের করে পেয়েছি?
-‘জানি না।
রূপায়ন বলল,
-‘আমি যেমন তোমাকে ফেলতে পারব না। তেমন ওদেরও কখনো ফেলতে পারব না। ওরা আমার ভাইবোন হলেও সন্তান সমতূল্য। ওরা ভুল করলে আমি ওদের বকাঝকা করি, রাগ দেখাই, কখনো কখনো হয়তো গায়েও হাত তুলি। ধরো, তোমার সাথে ওদের বনিবনা হচ্ছে না। হয়তো সংসার আলাদা করে দিলাম। কিন্তু যখন জানব, কোন কারণে আমার ভাইবোন আর্থিকভাবে দূর্বল হয়ে পরেছে। সংসার চালাতে পারছে না। আমি কী ওদের সাহায্য করব না? ওদের বিপদে পাশে দাঁড়াব না? অবশ্যই ওদের ভালমন্দ দেখব আমি। তবে আমি চাই, ওরা তোমাকে প্রাপ্য সম্মান করুক।
রাতে অনুপমা কিছুই খেতে পারল না। সারা শরীর ম্যাচম্যাচ করছে। ধীরে ধীরে কাটা জায়গা ব্যথাটাও বেড়ে যাচ্ছে। রূপায়ন ড্রেসিং করে দিল। জোর করে হালকা কিছু খাইয়ে দিয়ে, ঔষধ খাইয়ে দিল।
সপ্তাহখানেক সময় লাগল পুরোপুরি সুস্থ হতে। পিসির বাড়ি আরও দিন পনেরো থেকেই কেমন অস্থির লাগছে। বাড়ি যাওয়ার জন্য, মনটা ছুটে গেছে। প্রতিবেশীরা গল্পচ্ছলে প্রায় অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, -‘বাড়ি যাইবা কোনদিন?
অনুপমার মনটা ছোট হয়ে যায়। আস্তে করে বলে,
-‘এই তো যাব! খুব শীঘ্রই।
প্রতিবেশীরা কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে,
-‘প্রেমের বিয়া না কী গো? কেউ মাইনা লয়নাই?
অনুপমা কী উত্তর দিবে ভেবে পায় না। চুপ করে থাকে।
রূপায়ন কোথায় যেন গিয়েছিল। এসে বলল,
-‘ব্যাগ গুছিয়ে নাও অনুপমা। আমরা একটা জায়গায় বেড়াতে যাব।
-‘কোথায়?
-‘তোমার জেঠুর বাড়ি। সেখানে দুটো দিন থেকে, সোজা বাড়ি চলে যাব। মা অস্থির হয়ে গেছে। বুঝোই তো হার্টের পেশেন্ট।
অনুপমা উচ্ছ্বাস নিয়ে ব্যাগ গোছালো। আটমাস যাবৎ বাড়ি যায় না অনুপমা। সেই যে জেঠা-জেঠী, অনুপমাকে বউ সাজিয়ে রূপায়নের হাতে মন্দির থেকে তুলে দিল। এই আটমাসে একবারও জেঠা-জেঠী অনুপমার শ্বশুরবাড়িতে যায়নি। আর না ওদের কখনো যেতে বলেছে। বাড়ির ছবি মানসপটে ভেসে উঠতেই মনটা আনন্দে নেচে উঠল।
এই প্রথম রূপায়নকে সাথে নিয়ে নিজের বাড়িতে পা রাখল অনুপমা। ওরা আসাতে জেঠী বোধহয় খুশি হয়নি। রূপায়নের সামনে হাসি মুখে কথা বললেও অনুপমার চোখে চোখ পড়তেই চোখ, মুখ কুঁচকে ফেলল। অনুপমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। চাপা কণ্ঠে বলল,
-‘জামাইকে নিয়ে আসার কী দরকার ছিল? এখন শুধু শুধু একগাদা টাকা খরচ হবে। আবার ইয়াবড় ব্যাগ সাথে এনেছিস। সত্যি করে বলতো? কতদিন থাকবি? না কী তোকে সারাজীবনের জন্য রেখে যেতে এসেছে জামাই?
অনুপমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। মলিন হেসে বলল,
-‘কালকেই চলে যাব জেঠী।
-‘তাহলে এতবড় ব্যাগ সাথে এনেছিস কেন?
-‘আসলে..
-‘আসল আর নকল নেই। আমার কোমড়ে ব্যথা। নিজের রান্নাটাই ঠিকমতো রাঁধতে পারি না। তার উপর তোরা এসে জুটেছিস। তোর জামাইয়ের জন্য তিনপদের উপরে রাঁধতে পারব না। বলে দিলাম।
অনুপমার প্রচণ্ড কান্না পেল। ছোটবেলা থেকেই এই সংসারের সব কাজ একাহাতে করতে হতো অনুপমাকে। কখনো কাজ নিয়ে অভিযোগ করেনি অনুপমা। আজ জেঠী কত সহজেই বলে দিল। সে রূপায়নের জন্য বেশিকিছু রাঁধতে পারবে না। আজ মা-বাবার অভাববোধ খুব তীব্র ভাবে অনুভব করছে অনুপমা। আজ যদি নিজের মা বেঁচে থাকত! এত বড় কথাটা অনুপমাকে বলতে পারত? অথচ রূপায়ন আসার সময় হাজার টাকার উপরে ফল, মিষ্টি, দই নিয়ে এসেছে। অনুপমার প্রচণ্ড লজ্জা লাগছে। না এলেই বরং ভাল হতো।
বাইরের ঘরে আসতেই অনুপমার লাল চোখ, মুখ দেখে রূপায়ন ইশারায় জিজ্ঞেস করল,
-‘কী হয়েছে?
অনুপমা মাথা নেড়ে বলল,
-‘কিছু না।’
জেঠী ফল, মিষ্টি, দই রূপায়ন, জেঠুকে খেতে দিল। জেঠু অল্প খেয়েই উঠে গেল। বলল,
-‘তুমি খাও বাবা। আমি বাজার থেকে ঘুরে আসি।
-‘সবে এগারোটা বাজে! এখন বাজারে যাবেন জেঠু?
-‘আমাদের গ্রামে বার বেলায়, বাজার বসে বাবা।
রূপায়ন উঠে পরল। বলল,
-‘আমিও যাব আপনার সাথে জেঠু?
-‘এই গরমে শুধু শুধু তুমি গিয়ে কী করবা বাবা?
-‘কিছুই হবে না। আপনি চলুন তো!
ঘণ্টাখানেক পর, জেঠু হাঁক ছেড়ে জেঠীকে ডাকল। মুখে হাসি টেনে বলল,
-‘দেখেছো? জামাই কী কাণ্ড করেছে? সব বাজার জামাই করেছে। কত করে বললাম, আমি টাকা দেই। একটা পয়সাও আমাকে দিতে দিল না। উল্টো বলল,
-‘অষ্টমঙ্গলায় তো জামাই বাজার করার কথা। তখন আসতে পারিনি আমরা। ধরে নিন, এখন অষ্টমঙ্গলার জামাই বাজার করলাম।
বড় কাতলা মাছ, পদ্মার বোয়াল মাছ, দেশী মুরগির মাংস, দুধ, চিনি, তেল, মসশা, শাকসবজি সহ চালও কিনে এনেছে রূপায়ন।
জেঠী বেজায় খুশি। আহ্লাদী কণ্ঠে বলল,
-‘এতকিছু কিনতে গেলে কেন বাবা? শ্বশুরবাড়িতে এসে আবার ভাতের চাল কিনে কেউ?
-‘অষ্টমঙ্গলায় এলে সবকিছু কিনে দিতে হয় জেঠী। এটা আমাদের বাড়ির নিয়ম।
-‘ভাল..ভাল।
রূপায়ন, অনুপমাকে বলল,
-‘জেঠী অসুস্থ মানুষ। তুমি বরং রান্নাটা সেরে নাও অনুপমা।
অনুপমা খুশিমনে রান্নাঘরে চলে গেল। রূপায়ন মনে মনে বলল,
-‘তোমার ওই ঠোঁটের কোণের তৃপ্তির হাসিটাই আমি সারাজীবন দেখে যেতে চাই অনুপমা।
অনুপমা মনের সুখে রান্না করছে। জেঠী পানের খিলি মুখে পুরে বলল,
-‘কী ভাল জামাই পেয়েছিস অনুপমা। শুধু শুধু কতটাকার বাজার করে দিল।
-‘তুমি খুশি তো জেঠী?
-‘সে আর বলতে! তুই যা বলিস, জামাই তাই শুনে, বুঝি?
-‘আমার কিছু বলতেই হয় না জেঠী৷ ও চাওয়ার আগেই সবকিছু এনে দেয় আমায়।
-‘ভাগ্য গুনে জামাই পেয়েছিস রে। মাঝে মাঝে তোর জেঠুর সাথে ফোনেও না কী কথা বলে৷ আর আমার নিজের মেয়ের জামাইগুলো? ভুলেও কখনো ফোন দেয় না। বাড়িতে বেড়াতে আসলে কতকিছু রান্না করে খাওয়াই৷ একটা কিছু কম পড়লেই মেয়েদের কথা শোনায়। অশান্তি করে। সবই কপাল বুঝলি?
অনুপমা সেকথার উত্তর দিল না। মানুষ মানুষকে ঠকাতে চাইলে কী হবে! ঈশ্বর কখনো মানুষকে ঠকায় না।
বিকালে সরিষা ফুলের আউল ধরে, রূপায়ন, অনুপমা অনেকক্ষণ হাঁটল। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। ধনেপাতার ঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত। রূপায়ন হলুদ রঙা একমুঠো সরিষাফুল ছিড়ে অনুপমার খোঁপায় গুঁজে দিল। অনুপমা খিলখিলিয়ে হেসে দিল। রূপায়ন মাথা চুলকে, বড় বড় সরিষা গাছের আড়ালে টেনে নিল অনুপমাকে। শেষ বিকালের সোনালী রঙা সূর্যটা অনুপমার সারামুখে লুটোপুটি খাচ্ছে। রূপায়ন ঘোর লাগা মুগ্ধ দৃষ্টিতে অনুপমাকে দেখছে। অনুপমার নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। এই মেয়েটাকে এত কেন ভাল লাগে রূপায়নের? প্রকৃতি যেমন একেক মৌসুমে নতুন রঙে সাজে। এই মিষ্টি মেয়েটার কোমল মুখখানিতেও একেক সময় একেক রকম সৌন্দর্য বিরাজ করে। রূপায়ন ধীরে ধীরে অনুপমার খুব কাছে চলে এলো। যতটা কাছে এলে, একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ তীব্র ভাবে অনুভব করা যায়। অনুপমা দুপা পিছিয়ে গেল। কাঁপা কণ্ঠে বলল,
-‘লোকে দেখলে কী ভাববে?
-‘ভাবুক।
-‘বাড়ি চলো তো?
-‘এখানে আসায় ভুল হয়েছে অনুপমা।
অনুপমা মন খারাপ করে বলল,
-‘কেন?
-‘তোমাকে তো খুব একটা কাছেই পাচ্ছি না। শুধু কাজ আর কাজই করে যাচ্ছ।
অনুপমা হেসে দিল। বিড়বিড় করে বলল,
-‘রাতে কিন্তু কাজ নেই।
-‘রাতেই তো আসল কাজ সোনা।
-‘ধেৎ..
জেঠীর বাসায় দুটো দিন থেকে ওরা যখন একমাস পর, বাড়ি ফিরল। তখন বাড়ির অবস্থা ভয়াবহ!
(চলবে)