সংসার পর্ব-১৭

0
167

#সংসার
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ১৭

সদর দরজা খোলা ছিল। রূপায়ন, অনুপমাকে নিয়ে বাড়িতে পা রেখেই শুনতে পেল, সীমা আর নিপা ঝগড়া করছে। সীমা জোরে শব্দ তুলে থালাবাসন ফেলে দিচ্ছে আর চিৎকার করে বলছে,
-‘তুই ভাল না দেখেই তো, স্বামীর সংসারটাও করতে পারলি না। বাপের বাড়ি এসে পরে আছিস। আবার গলাবাজি করিস?
নিপাও কম যায় না। দ্বিগুণ স্বরে চেঁচিয়ে বলল,
-‘মুখ সামলে কথা বলো বৌদি! তুমি এত ভাল মানুষ। তারপরও ছোটদাভাই তোমাকে রেখে, আরেকজনের কাছে যেতে চায় কেন?
সীমা বলল,
-‘সব রক্তের দোষ।
-‘কী বলতে চাইছো তুমি?
-‘কী আর বলব। তোদের ভাইবোনের চরিত্র ঠিক নাই।
-‘মুখ সামলে কথা বলো বৌদি।
-‘আমার কথা ভাল না লাগলে এখানে পড়ে আছিস কেন? যা না যা! আমার হাড্ডি, মাংস জ্বালিয়ে না খেয়ে,
স্বামীর সংসারে ফিরে যা।
-‘আমি কী তোমার রোজকার খাই? তুমি আমাকে এত বড় বড় কথা বলছো?
-‘আমার জামাইয়ের কামাই তো খাস।
-‘তোমার জামাইটা কী আকাশ থেকে পড়েছে বৌদি? এত জামাই নিয়ে গর্ব করতেছো?
-‘চুপ কর নিপা। আমি এত কথা শুনব না। যদি হাতে হাতে কাজ করে খেতে পারিস তো খাবি। আর নাহয় আমি তোকে রেঁধেবেড়ে খাওয়াতে পারব না।
নিপা কেঁদে দিল। বলল,
-‘বড়দাভাই বাড়ি ছেড়েছে একমাসও হয়নি। এই একমাসে তুমি আমাকে কতবার খাওয়ার খোঁটা দিলে বৌদি? তোমার ভয়ে আমার দিদিরাও এখন আর আসতে চায় না। তাদের না কী বাপের বাড়ি থেকে মন উঠে গেছে। ছোটদাভাইকেও তো ভেড়া বানিয়ে রেখেছো। আমাদের কারো কথা শুনে না। তোমার কথায় নাচে শুধু।
-‘তোদের বোনেরা তো আসেই আমাদের সংসারকে অশান্তি করতে৷ তোদের কে বলেছিল? ওইরকম একটা জঘন্য কাজ করতে? আমার সংসারে অশান্তি করলে আমি ওদের ছেড়ে দেব ভেবেছিস?
-‘তুমি অনেক অভদ্র আর বেয়াদব বৌদি।
-‘এই নিপা কী বললি তুই? আমি অভদ্র? আমি বেয়াদব? তাহলে তোরা কী? বড়দাভাই তোদের সবকয়টাকে অতিরিক্ত দিতে দিতে অমানুষ বানিয়েছে।

-‘এসব কী হচ্ছে?
রূপায়ন শীতল কণ্ঠে বলল। সীমা, রূপায়নকে দেখে, তাড়াহুড়ো করে মাথায় ঘোমটা দিল। নিপা দৌঁড়ে গিয়ে রূপায়নকে জড়িয়ে ধরল। কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-‘তুই আমাদের না বলে, কোথায় চলে গিয়েছিলি বড়দাভাই?
রূপায়ন বলল,
-‘আমাকে বাড়ি ছাড়তে তো তোরাই বাধ্য করেছিলি।
নিপা অপরাধী কণ্ঠে বলল,
-‘আমাদের ভুল হয়ে গেছে বড়দাভাই। ক্ষমা করে দে?
-‘মা কোথায়?
নিপা মলিন কণ্ঠে বলল,
-‘মা ঘরে শুয়ে আছে। তুই চলে যাওয়ার পর থেকে আমরা কেউ ভাল নেই রে। ছোটবৌদি সারাক্ষণ আমাদের সাথে ঝগড়া করে। কাজ না করলে কটুকথা শোনায়৷ ছোটদাভাই সবসময় ভাল মাছ, মাংস কিনে না। যদি কখনো হাতখরচ বাবদ টাকা চাই। দেয় তো না। উল্টো হাজারটা কটুকথা শুনিয়ে দেয়৷ তুই তো এমন ছিলি না বড়দাভাই?
রূপায়ন, সীমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘ নিপাকে খাওয়া, পড়া নিয়ে খোঁটা দাও কেন সীমা?
সীমা দমে গেল না৷ বলল,
-‘পরের মেয়ের দোষ ধরার আগে নিজের ভাইবোনের দোষগুলো জেনে নিবেন বড়দাভাই। আপনার ভাইবোন এতই যখন ভাল। তাহলে আপনার বউয়ের সাথে নোংরামি করতে গিয়েছিল কেন? আপনার বোনগুলো আপনার বউকে তাড়ানোর জন্য কী জঘন্য নাটক সাজিয়েছিল! মনে নেই? সেই ভাইবোনদের হয়ে, আজ আপনি সাফাই গাইছেন?
রূপায়ন কী উত্তর দিবে ভেবে পেল না। অনুপমা এগিয়ে এসে বলল,
-‘পুরোনো কথা তুলছো কেন সীমা? যা হওয়ার সে-তো হয়েই গেছে।
-‘স্যরি বড়দি তুমি মহান হতে পারো। তবে আমি এতটাও মহান না। কেউ আমার সংসারে থেকে আমাকে উঠতে, বসতে কথা শোনাবে আর আমি তাকে ছেড়ে দেব।
নিপা বলল,
-‘একমাসেই এই অবস্থা। ছোটদাভাই সংসার চালালে তো আমরা এই বাড়িতে টিকতেই পারব না। যাইহোক বড়দাভাই তুই রেস্ট নে। আমি লেবুর শরবত করে আনি। নিপা হন্তদন্ত পায়ে রান্নাঘরে চলে গেল। এক ফাঁকে রুপা আর দিপাকেও রূপায়নের বাড়ি ফিরে আসার কথা ফোনে জানিয়ে দিল।

নন্দিতাদেবী ধীর পায়ে, সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলো। বড়ছেলে আর বড়বৌকে দুইহাতে বুকে টেনে নিয়ে, খুশিতে কেঁদে দিল। বলল,
-‘আমার রূপায়ন হলো এই বাড়ির প্রাণ। এতদিন প্রাণহীন বাড়িটাকে, বাড়ি মনে হতো না। মনে হতো, ভুল করে কোনো নরক পুরতে ঢুকে পড়েছি। সারাক্ষণ ঝগড়াঝাঁটি, অশান্তি, লেগেই থাকতো।
রূপায়ন মায়ের দিকে তাকাল। এই কয়দিনেই মানুষটা কেমন শুকিয়ে গেছে। বলল,
-‘তুমি ভাল আছো তো মা?
-‘তোদের ছাড়া ভাল থাকি কী করে বাবা? বৌমার কপালে, গালে কিসের কাটা দাগ? আগে তো মনে হয় দেখিনি।
অনুপমা বলল,
-‘ও কিছু না মা। এমনিই পরে গিয়ে সামান্য কেটে গেছে। আপনার শরীরের এখন কী অবস্থা? নিয়মিত ঔষধ খান?
নন্দিতাদেবী দীর্ঘশ্বাস ফেলল। রূপায়ন গোবিন্দর হাত দিয়ে টাকা পাঠাতো ঠিকই। তবে নিপা সেই টাকা নিয়ে নিত। নন্দিতাদেবী না দিতে চাইলে চুরি করে নিয়ে, খরচ করে ফেলতো। ফলে আর নিয়মিত ঔষধ খাওয়া হয় না। মুখে বলল,
-‘খাচ্ছি। ও সীমা?
-‘বলুন?
-‘কী রান্না হচ্ছে? ওরা কতদিন পর বাড়ি ফিরল। কিছু ভাল-মন্দ রান্না করো?
সীমা বিরসমুখে বলল,
-‘ভালমন্দ থাকলে তবেই না রান্না করব মা। মাসের শেষ। ঘরে মাছ, মাংস নেই।
নন্দিতাদেবীর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। রূপায়ন যখন সংসার চালাতো। এই নাই..নাই..স্বভাবটা কারো মাঝেই ছিল না। বড়ছেলেটা সবকিছু থাকতে থাকতেই এনে দিতো। সারাক্ষণ ফ্রীজ ভর্তি মাছ, মাংসে ঠাসা থাকতো। আর এখন? ভাবতেই বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। রূপায়ন বলল,
-‘বিকালে বাজারে যাব। কী কী আনতে হবে, কেউ একটু লিষ্ট করে দিও।
নিপা শরবতের গ্লাসটা রূপায়নের হাতে তুলে দিল। নন্দিতাদেবী বলল,
-‘সবে বাড়ি আসলি। বিশ্রাম নে। কাল নাহয় বাজারে যাবি ক্ষণ।
-‘তোমাকে সে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না মা। ঔষধগুলো কী আছে? না ফুরিয়ে গেছে?
-‘নেই। তবে পরে আনলেও হবে।
-‘পরে আনলে হবে মানে কী মা? নিশ্চয়ই ঠিকমতো ঔষধ খাওনি, তাই না?
মিথ্যে করে বলল,
-‘খেয়েছি বাবা।

বড়দাভাই বাড়ি ফিরেছে। খবর পেয়ে রুপা, দিপা এসেছে। এসে দেখল, রূপায়ন বাজারে গিয়েছে। অনুপমা ওদের ঘর গোছাচ্ছে।
রূপা, দিপা, অনুপমাকে মুগ্ধ চোখে দেখল, মেয়েটি দিন দিন আরও বেশি সুন্দরী হয়ে উঠেছে। বিয়ের পরে যেন আসল রূপ, জৌলুস ফুটে উঠেছে। অনুপমা হালকা হেসে বলল,
-‘কেমন আছো?
দিপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
-‘আছি কোনরকম। কোথায় গিয়েছিলে গো তোমরা? কত ফোন দিয়েছি জানো? ফোন বন্ধ।
-‘আসলে তোমার বড়দাভাইয়ের ফোনটা চুরি হয়ে গেছে।
নিপা বলল,
-‘ওহ..ভালোই আমার বড়দাভাইকে বশ করেছো, তাই না বৌদি?
অনুপমা হেসে দিল। বলল,
-‘স্বামীকে যদি বশই না করতে পারি! তাহলে আর কিসের বউ হলাম?
খোঁচাটা ঢোকের সাথে আস্তে করে হজম করে নিল নিপা। এখন আর বৌদিকে বেফাঁস কিছু বলা যাবে না। আবার যদি বড়দাভাই রাগ করে, বাড়ি ছেড়ে চলে যায়?
রুপা বলল,
-‘বড়দাভাই চলে যাওয়ার পর আমরা তো বাপের বাড়ি আসতেই ভয় পেতাম। অরুপ আর অরুপের বউটা এত্ত হারামী। একজন বাজার করা বাদ দিয়ে দিতো।আরেকজন রান্না করা বাদ দিতো। কিছু বললে, হাজারটা কটুকথা শুনিয়ে দিতো।
দিপা বলল,
-‘সবাই তো আর বড়দাভাই না। বড়দাভাইকে বলে, ওদের সংসার আলাদা করে দিতে বলবা বৌদি। হারামী গুলো তখন বুঝবে কত ধানে কত চাল।
সীমা এসে ওদের কথা শুনে ফেলল। বলল,
-‘ভালোই তো আমার নামে বড়দিকে কান পড়া দিচ্ছো? দল পাল্টে ফেললে বুঝি? আগে তো বড়দিকে চোখ পেতে দেখতেই পারতে না তোমরা। সারাক্ষণ বড়দির নামে আমার কাছে বদনাম করতে। এই বড়দির চরিত্রে দোষ আছে, বড়দি বেহায়া, নির্লজ্জ। তা নাহলে বড়দাভাইকে পটিয়ে একা একা বিয়ে করতে পারত না। আরও কত কী!
নিপা বলল,
-‘এই তুমি এখানে কী করছো?
সীমা বলল,
-‘তোমাকে আমার সেই কৈফিয়ত দেওয়া লাগবে না কী? আর বড়দি এদের কথায় পটে যেও না। এরা হলো একেকটা গিরগিটি। ক্ষণে ক্ষণে রঙ পাল্টায়।
রুপা রেগে গিয়ে বলল,
-‘মুখ সামলে কথা বলো সীমা? বেশি বাড় বেড়ো না। তোমার বিষদাঁত ভেঙে গুড়িয়ে দিবো কিন্তু।
সীমা দমে গেল না। দুপা এগিয়ে এসে বলল,
-‘আসিস আমার বিষদাঁত ভাঙতে। তোদের সবাইকে জেলের ভাত খাওয়াব আমি।
নিপা বলল,
-‘দেখেছো বড়বৌদি? ওর মুখের ভাষা?
সীমা বলল,
-‘তোর মুখের ভাষা কেমন আমার জানা আছে নিপা। তুই তো বড়দাভাইকে একবার ‘কুলাঙ্গার’ বলেছিলি।
নিপা দমে গেল। এর সাথে মুখ লাগানোই বৃথা। সীমা বলল,
-‘বড়দি নীচে আসো। ভাত খেয়ে যাও৷ বড়দাভাই বাজার থেকে এসেছে। তোমাকে ডাকছে!
-‘তুমি যাও। আমি আসছি।

রূপা, দিপাও অনুপমার পিছুপিছু চলে গেল। রূপায়নেক কাছে নিজেদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইল।

রাতে ভরপেট খেয়েদেয়ে নিজেদের ঘরে গিয়ে, বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পরল রূপায়ন। বলল,
-‘যত যাই বলো, নিজের ঘরে শুয়ে থাকার মতো শান্তি পৃথিবীর আর কোথাও নেই অনুপমা।
অনুপমা অন্যমনস্ক হয়ে ছিল। রূপায়ন মৃদু ধাক্কা মেরে বলল,
-‘কী হলো কোথায় হারিয়ে গেলে?
অনুপমা নীচু কণ্ঠে বলল,
-‘এই মাসেও হলো না। কখনো তো এমন হয় না।
রূপায়ন, প্রেগন্যান্সি কিট অনুপমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-‘নিয়ম বলে দেওয়া আছে, ভোরে উঠে পিউর ইউরিন টেস্ট করো।
অনুপমা লজ্জা পেল। বলল,
-‘যদি না হয়?
রূপায়ন নীচু কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল,
-‘আমরা আবার ট্রাই করব।
-‘ধেৎ..
সারারাত অনুপমার ঘুম হলো না। বার বার ঘড়ি দেখে, এক প্রকার ছটফটিয়ে দীর্ঘ রজনী কাটল। খুব ভোরে উঠে, একটা পরিষ্কার গ্লাসে সামান্য ইউরিন নিল। কাঁপা হাতে কিটটা ভিজিয়ে দুরুদুরু বুকে পাঁচ/ছয় মিনিট অপেক্ষা করতে লাগল। রূপায়ন তখনো গভীর ঘুমে মগ্ন। ঘড়ির কাটায় ছয়মিনিট পূর্ণ হতেই চোখদুটো বন্ধ করে, কিটটা উঠালো অনুপমা। যদি রেজাল্ট নেগেটিভ আসে? ভয় হচ্ছে। চোখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। ঈশ্বরকে ডাকতে ডাকতে, আস্তে করে চোখটা খুলে দেখল, কিটের ভেতর দুটো গাঢ় লাল দাগ স্পষ্টভাবে জ্বলজ্বল করছে। অনুপমার বুকের ভেতর ধড়ফড় করছে। অতিরিক্ত খুশিতে চোখে জল এসে গেছে। একবার হাতে ধরে রাখা কিটের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার রূপায়নের ঘুমন্ত মুখের দিকে। অজান্তেই একহাত পেটে চলে গেল। রূপায়নের নতুন সত্তা একটু একটু করে, অনুপমার পেটের ভেতর বেড়ে ওঠছে। ভাবতেই সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেল। কিটটা হাতের মুঠোতে ধরে, আস্তে আস্তে রূপায়নকে ডাকতে লাগল অনুপমা। রূপায়ন ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল,
-‘কী হয়েছে?
-‘তুমি বাবা হতে চলেছো।”
রূপায়ন একলাফে উঠে বসল। ঘুমের রেশ ছুটে গেছে। চোখ ডলে কিটটা ভাল করে দেখল। রূপায়নের চোখের কোণে জল জমেছে, ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠেছে।
অনুপমা নীচু কণ্ঠে বলল,
-‘তুমি খুশি হওনি?
রূপায়ন, অনুপমার কপালে গভীর চুমু এঁকে দিল। ঘন ঘন শ্বাস ফেলে, বুঁজে আসা কণ্ঠে বলল,
-‘আমি আমার এই ছত্রিশ বছরের জীবনে এতটা খুশি কখনো হইনি অনুপমা। তু-মি ভাবতে পারছো? আমার সত্তা তোমার মাঝে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে? এরচেয়ে শ্রেষ্ঠ পাওয়া আর কী হতে পারে অনুপমা? ‘তুমি আমার জীবনে রোদ ঝলমলে আকাশ, শুধু আলো দিয়েই যাচ্ছো!”
শাড়ির আঁচল দিয়ে, রূপায়নের চোখের জল মুছিয়ে দিল অনুপমা। রূপায়ন অনেকটা সময় অনুপমাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বসে রইল।

রূপায়নের বাচ্চা অনুপমার গর্ভে। কথাটা জানাজানি হতেই সবাই খুব খুশি। শুধু খুশি হতে পারল না নিপা। বড়দাভাই বিয়ে করেই পর হয়ে গেছে। বাচ্চা হলে তো নিপাকে আগের মতো একটুও ভালোবাসবে না, আদর করবে না, নিপার আবদার পূরণ করবে না। শুধু নিজের বাবুকেই ভালোবাসবে। অনুপমার সুখী সুখী চেহারা দেখে, নিপা ভেতরে ভেতরে হিংসায় জ্বলে গেল। সারাক্ষণ চোখের সামনে অনুপমা ন্যাকামী করে। তার না কী কিছুই খেতে ভাল লাগে না। বমি করে ঘর ভাসায়। বড়দাভাই বউয়ের বমি পরিষ্কার করে। ইয়াক..ছিঃ। পারলে বউকে কোলে নিয়ে হাঁটে। সারাক্ষণ বৌদির কানের কাছে বলবে, অনুপমা এটা খাও, ওটা খাও? এটা করো না, ওটা করো না? এখানে-ওখানে যেও না। বউকে নিয়ে বড়দাভাইয়ের ন্যাকামী দেখলেও গা জ্বলে যায়। ইচ্ছে করে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিতে। বড়বৌদির তিনমাস রানিং! এখনো খুব বেশি দেরি হয়ে যায়নি। এই বাচ্চাটাকে কিছুতেই পৃথিবীর আলো দেখতে দেওয়া যাবে না। কী করলে ভ্রুণটা বৌদির গর্ভেই মরে যাবে? আর নিপাও দোষী হবে না। এত সেনসেটিভ একটা বিষয়। কাউকে বলার সাহস পাচ্ছে না নিপা। উফ, এত ভাবতে ভাবতে মাথা ফেটে যাওয়ার জোগার হয়েছে।
কী মনে করে ইউটিউবে সার্চ দিল। এবং গর্ভপাত ঘটানোর ঔষধ পেয়েও গেল। উত্তেজনায় নিপার হাত কাঁপছে। ঔষধের নামটা স্ক্রীণশর্ট দিয়ে রেখে দিল। এখন শুধু ঔষধটা কিনে এনে বড়বৌদিকে খাইয়ে দেওয়ার অপেক্ষা মাত্র।

(চলবে)