সংস্পর্শে তুমি পর্ব-০১

0
13

#সংস্পর্শে_তুমি
#পর্ব_১
#নাহিদা_ইসলমা

বাসর ঘরে বসে আছি। আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের অবন্তীর সাথে গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো আমার সদ্য বিয়ে করা স্বামী শুভ্র রহমানের। আজকে অবন্তী ও শুভ্র রহমানের বিয়ের দিন থাকলে ও ভাগক্রমে বিয়েটা অবন্তী সঙ্গে নয় আমার সঙ্গে হয়েছে। অবন্তী ও শুভ্রের প্রেমের সম্পর্ক থাকলে ও হঠাৎ বিয়ের দিন কেনো অবন্তী অন্য ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে যাওয়ার আগে চিঠিতে আমার নাম লিখে দিয়ে গেছে যে অবন্তী সব কথা আমি জানি এবং তাকে পালিয়ে বিয়েতে ও আমি তাকে সাহায্য করেছি। তাই জেদ করে শুভ্র আমাকে বিয়ে করেছে।

যখন নিচে ছিলাম তখন শুভ্রের ফুপু আমাকে শুনি শুনিয়ে বলছিলো,
–এই মেয়েকে তো শুভ্র ভালোবাসে না। ভালোবেসেছিলো অবন্তীকে কিন্তু অবন্তী অন্য ছেলের সাথে পালিয়েছে তাই এই মেয়েকে জেদ করে বিয়ে করেছে। শুভ্র যে রাগি সংসার টিকবে তো নাকি প্রতিশোধ নেওয়া শেষ হলে সংসার ভেঙ্গে যাবে….

কথাগুলো শুনে আমার মাটির ভেতরে ডুকে যেতে ইচ্ছে করছিলো। জীবনে কোনোদিন প্রেম করিনি বিয়ের পর নিজের স্বামীকে ভালোবাসবো বলে কিন্তু এখন কি হলো আমার জীবনটা ই এখন কারো প্রতিশোধের আগুনে জ্বালানি হিসবে ব্যবহার করবে।

অবন্তী আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সে আমার বোনের চেয়েও বেশি ছিলো। শুভ্র আর অবন্তী যখন প্রেম করতো তখন আমি তাদের কথা বলার সুযোগ করে দিতাম। কোথাও ঘুরতে গেলে ও আমাকে নিয়ে যেতো আমি এক প্রকার পাহারাদার ছিলেম। সব কিছুতে সাহায্য করতাম ভাবতে ই অবাক লাগছে নিজের স্বামী প্রেম করেছে তাতে আমি সাহায্য করেছি।
কেউ একজন আসছে বুঝতে পেরে সোজা হয়ে বসলাম। কতক্ষণ যাবৎ বসে আছি হিসাব নেই। বসে থাকতে থাকতে পা কোমড় ব্যথা হয়ে গেছে।
শুভ্র রুমের ভেতর ডুকে ই জোড়ে অহনাকে থাপ্পড় মারতে ই টাল সামলাতে না পেরে অহনা নিচে পড়ে যায়। শুভ্র নিচ থেকে চুলের মুঠি ধরে উঠিয়ে আরেকটা থাপ্পড় মারতে ই খাটের সাইড বক্সে লেগে অহনার ঠোট কেটে যায়।
জোরে চিৎকার করে কান্না করতে ই শুভ্র অহনার খুব কাছে গিয়ে বললো,

–তোর তো ঠোট থেকে রক্ত ঝড়ছে আর আমার হৃদয় থেকে। তুই ইচ্ছে করে এমনটা করেছিস। তুই কীভাবে এতো কিছু জানার পর ও চুপ ছিলিস। আমাকে বলতি পারতি। বলিসনি তোদের পরিকল্পনা ছিলো এইগুলো। আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। এখন দেখ কষ্ট শুধু আমি একা না তুই ও পাবি।
আমি মাথা উচু করে বললাম,
— আপনার প্রেম আপনি ধরে রাখতে পারেননি এতে আমার কি দোষ।
বলার সাথে সাথে আমার মুখ চেপে ধরে বললো,
–একদম চুপ। আর কোনো মেয়েকে ই আমি বিশ্বাস করি না। তোদেরকে ঘৃণা করি। মেয়ে মানে ই ঘৃণা।

–আপনার মা বোন মেয়ে এবং একজন মেয়ের কারণে ই আপনি পৃথিবীর আলো দেখেছেন।

–তোর সাথে আমার মা বোনের তুলনা দিবি
এটুকু বলে ই সাইডে থাকা একুরিয়াম টা ভেঙ্গে ফেলে। ফ্লোরে জিন্দা লা-শ হয়ে পড়ে আছি। এজীবন থাকার চেয়ে না থাকাটা ই শ্রেয় ছিলো। শুভ্র রহমানকে অনেক কিছু বলার থাকলে ও বলতে পারিনি আমাকে আটকে দিয়ে গেছে আমার ই প্রাণ প্রিয় বান্ধবী। আমার বাবা মা নেই চাচার কাছে মানুষ হয়েছি। চাচা খেটা খাওয়া মানুষ। নুন আনতে পান্তা ফুরাতো। চাচি তো মাশাআল্লাহ জল্লাদের থেকে কোনো অংশ কম নাম্বার দেওয়া যাবে না। এতো কষ্ট করে বড় হওয়ার পর ও স্বামীর ঘরে এখন বীনা দোষে ও দোষী হতে হলো।
বলকুনিতে শুভ্র সিগারেটের ধোয়া উড়াচ্ছে। আড়চোখে অহনাকে ফ্লোরে শোয়া অবস্থায় দেখে কিছুটা শান্তি লাগছে। ইচ্ছে করছে মেরে ই ফেলি তবে এভাবে না আস্তে আস্তে কষ্ট দিয়ে।

শুভ্রের মায়ের মুখে রাজ্যের যত মেঘ আছে সব এসে একসাথে উনার মুখে জমছে। ছেলের বউ একেবারে ই পছন্দ হয়নি। অবন্তী তার অনেক পছন্দ ছিলো। পছন্দ না হবার ও কারণ নেই। অবন্তী বাবার তো অঢেল টাকা পয়সা ছিলো। সম্পত্তি ও ছিলো তার একটা অংশ তো শুভ্র পেত।
— মা এসব বন্ধ করো বাড়ি৷ ভর্তি মেহমান এসব কি বলছো।[শুভ্রের বোন মৌ]

—তোর ভাই তো ফকিন্নি মেয়ে একটা বিয়ে করছে। বাপ ভাই কিছু নেই।
–আমাদের এতো টাকা পয়সা খাবে কে মা। আমাদের ভাই তো দুইটা ই আর আমি একা। যা আছে দুই ভাইয়ের জীবন শেষ হয়ে তাদের ছেলে মেয়েরা ও আরামসে দিন কাটাতে পারবে। তাও তোমার হয়না।

— না হয় না এখন আমার চোখের সামনে থেকে যা মৌ। রাগে আমার মাথা গরম হয়ে আছে।

–এতো রাগ যে করো অবন্তী যদি পালিয়ে না যে তাহলে তো আর অহনা এমনি এমনি এ বাড়িতে আসতে পারতো না।
_________________________
শুভ্র অহনাকে কোলে তুলে বিছানায় ফেলে দেয়। কোমড়ে বেশ ভালোই ব্যথা লেগেছে। ঘটনা বুঝতে মিনিট পাঁচেক লেগে গেলো। শুভ্র দরজা খুলে দিতে ই মৌ বলছে,
–অহনাকে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে বল। সবাই অহনার জন্য অপেক্ষা করছে।
কেউ এসেছে বলে ই অহনকে এভাবে নিচ থেকে উপরে তুলেছে। অহনা আস্তে আস্তে উঠার চেষ্টা করলো,অহনাকে উঠতে দেখে শুভ্র বললো,
–নিচে যাবি ঠিক আছে তবে মুখ খুলবি না। যদি কাউকে কিছু বলিস তাহলে তোর অবস্থা কালকে রাত থেকে খারাপ হয়ে যাবে।

অহনার দেখতে বেশ সুন্দর। গায়ের রং ফর্সা।বেশি সুন্দর তার চুলগুলো। চুলগুলো কোমড়ের নিচে পড়ে। কিন্তু ফর্সা মুখে ঠোঁটের কোনে কাটা দাগটা যেনো মুখের সুন্দর কেড়ে নিয়েছে।

অহনা উঠে রুমটা পরিষ্কার করে নিলো। রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে একটা বক্স পেলো। বক্সটা থেকে অহনার চিনতে বাকি রইলা। এই গিফটা অবন্তী দেওয়া। অহনাকে নিয়ে ই এই গিফটা প্যাক করেছিলো। ভেতরে কি আছে খুলে দেখেনি। কৌতুহল বশত খুলতে ই দেখলো অবন্তী আর শুভ্রের ছবি সাথে কিছু শুকনো গোলাপ।
অহনাকে এটা দেখে যেখানো ছিলো রেখে দেয়।
লাগেজ থেকে মেরুন কালারের শাড়ি বের করে। সোজা শাওয়ার নিতে চলে যায়। শাওয়ার শেষে কোনো রকম শাড়ি পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজেকে দেখতে ই ঠোঁটের কোনে কাটা দাগে চোখ পড়ে। ঠোটটা ফুলে আছে। ভেতরে অনেকটুকু কেটে গেছে। কপালে সাইডে ও কেটে গেছে সেখানে দাগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কনসিলার দাগটা ঢাকতে বেশ ভালো কাজ করবে। যেই ভাবা সেই কাজ কনসিলার দিয়ে দাগটা ঢেকে নিলো।
আস্তে আস্তে অহনা নিচে নামলো। নিচে নামতে ই অহনাকে দেখে সবাই মিটমিট করে হাসছে। শুভ্রের ভাবি দৌড়ে এসে আমাকে নিয়ে আবার রুমে গেলো।
–কি করেছো এটা এভাবে কেউ শাড়ি পেচায়। আর ঠোঁটের কোনে এগুলো ঢেকে রাখতে হয় অহনা। শুভ্রটা ও বজ্জাত তোমার একি হাল করেছে।

–ভাবি এইগুলো কি বলছেন?
–আরে লজ্জা পাচ্ছো কেন হয় এমন সবার ই হয়।
আমার কথাগুলো শুনে হজম হচ্ছে না। কি বলে এইগুলো তাও মুখে বুজে সহ্য করে নিলাম।
শাড়ি পড়ানো শেষ করে ভাবি আমাকে নিচে নিয়ে যেতে দেখলাম অনেক মানুষ বসে আছে। ভাবি বললো সবাই দাদি চাচি ফুপি হয়। আমি গিয়ে দাড়াতে ই ফুপি বলা শুরু করলো,
–তোমার শ্বাশুড়ি কে সালাম করো বউ।
চোখ তুলে তাকাতে ই দেখলাম দূরে কোনার এক সোফায় অন্য দিকে ফিরে বসে আছে। আমি যাওয়ার আগে ই বলে উঠলো,
–না না দরকার নেই যেখানে আছো ঐখানে ই থাকো আমার কাছে আসবে না। বলে ই উঠে চলে যায়।
শুভ্র সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে ই তার সাথে মজা শুরু করে সবাই, কিন্তু শুভ্র খুব ই গম্ভীর। সবাই ভারিরা এসে জোর করে শুভ্র আর অহনাকে এক সাথে বসায়।
–এতো দূরে বসছো কেনো শুভ্র, রাতে তো অনেক কাছাকাছি ছিলে যায় প্রমাণ ঠোঁটের কোনে আছে। এখন বউকে জড়িয়ে ধরে বসতে কি সমস্যা…….

চলবে,