#সংস্পর্শে_তুমি
#পর্ব_৪
#নাহিদা_ইসলম
অবন্তী নাম দেখে ই শুভ্রে মাথাটা গরম হয়ে গেলো। অহনাকে টান দিয়ে দেওয়ার সাথে এক হাত দিয়ে চেপে ধরলো অন্য হাত দিয়ে অহনার পেটে হাত দিয়ে শাড়িটা সাইড করে জলন্ত সিগারেট চেপে ধরলো। কানের কাছে ঠোঁট লাগিয়ে বললো, দুজন কি প্ল্যান করছিস আমাকে মেরে ফেলার। অহনা ব্যথায় চিৎকার করে কান্না করেছে। শুভ্র হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরেছে যেনো চিৎকারের শব্দ কেউ শুনতে না পায়।
–একদম চুপ। কেনো কল দিয়েছে বল। তুই প্রথম থেকে ই সব জানতি আমার অগোচরে দুজন মিলে কি প্ল্যান করিস। ইচ্ছে করছে মে-রে ই ফেলি। খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না। আমার ও হচ্ছে তফাৎ শুধু তোরটা দেখা যাচ্ছে আমার টা দেখা যায় না।
বেশ কিছুক্ষন অহনাকে এভাবে ধরে রাখার পর ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
অহনা পেটে হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। চোখ দিনে পানি পড়ছে আর ভাবছে কবে এই কারাগার থেকে মুক্তি মিলবে। সবার সংসার হয় না কিছু মানুষের সংসার নামক কারাগার হয়।
ভোর পাচ টায় ঘুম থেকে দ্রুত উঠলাম গতকালকে এতো কথা শুনার পর আজ নামাজ পড়ে আর ঘুমালাম না। সোজা নিচে গিয়ে কাজ করা শুরু করলাম।
শায়লা রহমান ঘুম থেকে উঠার পর ই অহনাকে কিচেন দেখে মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। যা চেয়েছে তাই ই হচ্ছে। এসব মেয়ে কি করে নিজের আয়ত্তে রাখতে হয় তা তিনি খুব ভালো করে ই জানেন। উঠার সাথে সাথে রহিমার মতো অহনা ও চা নিয়ে হাজির। আর কি চাই। প্রথম ধাপে সফল তিনি। হামিদার সাথে কথা হয়ে গেছে লামিয়াকে বাড়ির বউ করলে হামিদা বেগমের সম্পত্তির অংশ ও এ বাড়ি থেকে নিবে না উল্টো হামিদা বেগমের স্বামীর যা সম্পত্তি আছে সব হামিদা বেগমের নামে লিখে দিবে। এডভান্স হিসেবে পঞ্চাশ লাখ আগে ই দিয়ে দিবে। কাজ শেষ করতে পারলে বাকি টাকা শায়লা রহমান পেয়ে যাবে।
শুভ্র অফিসের জন্য বের হবে তার আগে নাস্তা করবে। টেবিলে বসা মাত্র ই শায়লা দৌড়ে এসে ছেলের কি লাগবে তা এগিয়ে দিচ্ছে। অহনা খাবার প্লেট এগিয়ে দিতে গেলে শায়লা চোখ রাঙ্গায়। অহনা বুঝতে পারলে এখন আর তার কোনো কাজ নেই।
–মা পরোটা তো মজা হয়েছে আজকে কে পরোটা বানিয়েছে।
–আমি বাবা।
শুভ্র মায়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
–রহিমা কোথায়।
–সে আর আসবে না বলেছে। কাজে না থাকতে চাইলে কি জোর করে রাখা যায়।
শায়লার এমন মিথ্যে শুনে অহনার বুঝতে আর বাকি রইলো না সে কত বড় কাল পিট।
শুভ্র নাস্তা করা শেষ হলে কোনো কথা না বলে ই অহনার হাত ধরে টানতে টানতে নিজের সাথে নিজে যাচ্ছে। অহনা ও কোনো প্রশ্ন করছে না। জানে প্রশ্ন করলে উত্তর পাবে না। বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকে গাড়ি। গাড়ির সামনের সিটে অহনাকে বসিয়ে দিলো। নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে লাগলো।
–কোথায় যাচ্ছি আমাকে বলা যাবে?
প্রশ্নটা শুনে সাথে সাথে উত্তর দিয়ে দেয়।
___আমার বাবার কাছে।
বাবার কাছে শোনার পর মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিয়ের পর থেকে একবার ও শুভ্রের বাবাকে দেখিনি। হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খেলে ও তা তো আর জিজ্ঞেস করতে পারবে না।
ডুপ্লেক্স একটা বাড়ির ভেতরে গিয়ে গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে নামতে ই অহনার পায়ে থাকা জুতো গুলো ছিড়ে যায়। শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে চোখে সানগ্লাস পড়ে পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়েছে অহনা স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে দেখে শুভ্র কিছুটা বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করলো,
–সমস্যা কি হাটছো না কেনো?
অহনা কোনো কথা না বলে পা উপরে উঠিয়ে দেখালো জুতা ছিড়ে গেছে।
শুভ্র অহনাকে কোলে তুলে নিয়ে সামনে দিকে হাটা শুরু করলো দরজার সামনে এসে দেখলো দুজন মেয়ে দাড়িয়ে আছে। একজনের হাতে মিষ্টি অন্য জনের হাতে পানির গ্লাস।
–স্যার আপনি আসবেন বলে বড় সাহেব আমাদের বলেছে নতুন বউ বরণ করে ভেতরে প্রবেশ করাতে।
অহনা আস্তে করে বললো,
–আমাকে নামান।
শুভ্র সাথে সাথে নামিয়ে দিলো। দুজন মিষ্টি মুখ করে ভেতরে প্রবেশ করে। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে ই দেখলে একজন লোক পেপার পড়ছে। মুখ ডাকা পড়ে থাকলে ও অহনার বুঝতে বাকি রইলো না এটা শুভ্রের বাবা আরাফাত রহমান।
রুমের ভেতর মানুষের উপস্থিত টের পেয়ে পেপার সরাতেই অহনা সালাম দিলো,
–আসসালামু আলাইকুম বাবা।
আরাফাত রহমান হাসি দিয়ে অহনার সালামের উত্তর দিয়ে বললো পাশে এসে বসতে। অহনা তার পাশে চেয়ার টেনে বসতে ই মাথায় হাত দিয়ে বললো,
–জানি মা তুমি ঐ বাড়িতে ভালো নেই। শুভ্র তোমাকে কেমন রেখেছে তা অজানা কিন্তু একজন ইবলিশ সেখানে বসবাস করে সে যে তোমাকে খুব ভালোভাবে নেয়নি তা জানা আছে।
মায়ের নামে নেগেটিভ কিছু শুনতে নারাজ শুভ্র সাথে সাথে বলে উঠলো,
–বাবা আমার মায়ের নামে এসব বলবে না।আর তুমি তো আট বছর যাবৎ আমার মায়ের থেকে আলাদা আছো। আমি তো তোমাদের এক সাথে হতে বলি না। শুধু যথাযথ সম্মান টা দাও।
শুভ্রের কথায় আরাফাত রহমান কোনো উত্তর দেয়নি শুধু হেসে উড়িয়ে দিয়েছে।
সকাল বেলা শুভ্রের ঘুম ভেঙ্গেছে আরাফাত রহমানের ফোনে। তাকে জরুরি ভাবে অহনাকে নিয়ে তার বাসায় আসতে বলেছে। তাই নাস্তা করে ই অহনাকে নিয়ে এই বাসায় এসে হাজির।
শ্বশুরের থেকে উপহার পেয়ে বেশ খুশি অহনা। একটা বক্স দিয়েছে তাকে এতে সুন্দর গোল্ডেন নুপুর। অহনা খুশি হয়ে সাথে সাথে বললো,
–বাবা এটা আমি পড়বো এখন?
আরাফাত রহমান হেসে বললো,
–পড়ো মা তোমার জন্য ই তো এনেছি। এটা কিন্তু কাউকে দিবে না। কোনো ইবলিশ যদি চায় তাহলে বলবা আমার নিষেধ। যখনই আমার কাছে আসবা এই নুপুরগুলো পড়ে আসবা।
শুভ্র শুধু অহনাকে দেখছে কিভাবে হাসছে এই নুপুরগুলো পেয়ে মনে হচ্ছে পৃথিবীর অর্ধেক অংশ তার নামে কেউ লিখে দিয়েছে।
–তোমাদের কথা শেষ হয়েছে, এখন কি আমি অফিসে যেতে পারি?
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এগারোটা বেজে গেছে তাই আরাফাত রহমান আর আটকালো না।
শুভ্র বাসা থেকে বের হয়ে ও অহনাকে কোলে করে গাড়িতে উঠিয়েছে। অনেকটুকু হেটে গাড়িতে উঠতে হয়। শুভ্র গাড়ি অন্য রাস্তা দিয়ে ড্রাইভ করতে দেখে অহনা প্রশ্ন করে
–আমরা কি বাসায় যাচ্ছি না?
–না অফিসে যাচ্ছি তোমাকে শপিং করে দিবো।
অহনা কথাটা শুনে কি রিয়াকশন দিবে বুঝতেছে না। এই ছেলে করছে টা কি। এই ছেলে এখন ই মেঘ, এখনই বৃষ্টি, আবার এখন ই উতপ্ত সূর্যের ন্যায় নিজের রুপ ধারণ করে।
শপিং মলে গাড়ি পার্কিং করে। আমাকে গাড়ি থেকে নামতে নিষেধ করলো,উফ বাঁচলাম। জুতা ছিড়ে গেছে বলে মনে হয় নিজে গিয়ে ই জুতা নিয়ে আসবে। আমার ভাবনা শেষ হওয়ার আগে ই আমাকে আবার কোলে তুলে নিলো। সবার সামনে দিয়ে আমাকে নিয়ে উপরে উঠছে আমি লজ্জায় আচল দিয়ে মুখ ঢেকে নিলাম। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে…..
চলবে,
[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]