#সংস্পর্শে_তুমি
#পর্ব_৭
#নাহিদা_ইসলাম
চোখ লাগবে যেভাবে তাকিয়ে আছো।
–আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত মহাশয়। আপনি চাইলে চলে যেতে পারেন।
শুভ্র পেছন থেকে এক হাত দিয়ে অহনার কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
–যাওয়ার জন্য আসেনি অহনা। আর আমার এতো কিউট বউটা রেখে চলে যাবো কি করে।
অহনা শুভ্রের হাত পেছন থেকে সরিয়ে সামনে তাকাতে ই দেখলো তমা দাড়িয়ে আছে তাই এসব বলছে এটা আর বুঝতে বাকি রইলো না। তমা লজ্জা পেয়ে দরজা থেকে দ্রুত তার ঘরে চলে গেলো।
অহনা শাড়ি খুলে থ্রি পিস পড়ে নিলো ফ্রেশ হয়ে চাচির কাছে গিয়ে কাজ হাত লাগতে ই চাচি বলে উঠলো,
–থাক অহনা আর দেখাতে হবে না এই বাড়ির সব কাজ যে তুই করতি। তোর জামাইকে দেখাতে চাচ্ছিস যে চাচি তোকে দিয়ে সব কাজ করায়।
অহনা হেসে বললো,
–দেখানো কি আছে চাচি। এখন এসব কথা বাদ দেও।আমি কালকে তো চলে ই যাবো রাত থেকে কালকে দুপুর পর্যন্ত কোনো রকম আমাকে সহ্য করে নেও।
শুভ্র ফ্রেশ হয়ে খাটের এক কোনে বসে আছে। গ্রামের পরিবেশ তার বরাবরই ই পছন্দ। তার নানুবাড়ি ও গ্রামে ছিলো। ছোটা বেলায় কত এসেছে। কিন্তু বড় হওয়ার পর থেকে কখনো নানু বাড়ি যাওয়ার নাম ই নেইনি। যাবে কি করে মা থাকলে তো নানুর বাড়ি সুন্দর। শায়লা রহমান তার সৎ মা। কিন্তু ছোট থেকে কখনো সৎ মা বলে মনে করেনি। তাদের সম্পর্ক এতোই ভালো যে কেউ দেখলে বুঝতে পারবে না শুভ্রের সৎ মা শায়লা রহমান। শুভ্রের আট বছর বয়সে ই তার মা মারা যায়। আগুনে পুড়ে মারা যায়। তার নানুর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া পর ঐখানে ই ঘরে আগুন লাগে আর ঘরের ভেতরে থাকা শুভ্র মা মারা যায়। মায়ের কথা মনে হলে ই চোখের পানি ধরে রাখা সম্ভব হয় না। তবে ছেলে মানুষ কাঁদতে নেই। শুভ্র মাঝে মাঝে তার রুমের দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুঁজে কাদে যখন মায়ের কথা মনে হয়। তিয়াস মৌ তার সৎ ভাইবোন।
অহনা শুভ্রকে দেখে বেশ অবকা হচ্ছে এ কোন শুভ্রকে দেখছে। নিরবতা ভেঙ্গে বলে উঠলো,
–আপনি কাঁদছেন কেনো জানতে পারি।
শুভ্র চোখ মুছে স্বাভাবিক ভাবে বললো,
–জানালার সাইডে বসে ছিলাম তো বাতাসে চোখে কিছু একটা পড়েছে।
অহনা কথা বাড়ালো না বললো,
–চলেন খাবেন।
শুভ্র কোনো কথা না বলে অহনার সাথে খেতে চলে গেলো। খাওয়া শেষ করে বসতে ই অহনার চাচা আর চাচাতো ভাই পিয়াস বাসায় আসলো।
–কেমন আছো বাবা আমি আমাদের বাজারে দোকানে ছিলাম। আজ তো হাটের দিন দোকান ফেলে আসতে পারিনি।
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো চাচা।সমস্যা নেই চাচা এসে জিজ্ঞেস করার পর চাচি বলেছে আপনি দোকানে আছেন। আর পিয়াস তুমি কালকে সকাল সকাল উঠবে তোমাকে নিয়ে গ্রাম ঘুরে দেখবো।
অহনা শুভ্র তাদের ঘরে চলে যায়।
–আজকে আমি তো আর মাটির মধ্যে ঘুমাতে পারবো না তাই আমি সাইডে শুই। একদম নড়াচড়া করবো না। আপনার ঘুমের ডিস্টার্ব হবে না।
–আমি নিষেধ করিনি।
অহনা শুয়ে পড়তে ই শুভ্র তার পকেট থেকে বার্না ক্রিম বের করে অহনার পাশে বসতে ই বললো,
–এখানে কেন বসেছেন।
এটুকু বলার সাথে সাথে কারেন্ট চলে যায়। অহনার পাশে ই মোমবাতি রাখা ছিলো সে দ্রুত মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়।
–চুপ করে শুয়ে পড়ো এটা পোড়া জায়গায় লাগিয়ে দিচ্ছি দ্রুত শুকিয়ে যাবে।
অহনা এবার অট্টহাসি দিলো শুয়া থেকে মাথাটা একটু উচু করে বললো,
–এতো দরদের কারণ?
এমন প্রশ্নে শুভ্র অবাক হয়নি। অহনাকে এক হাতে ধাক্কা দিয়ে শুইয়ে দিয়ে অন্য হাত দিয়ে ক্রীমটা লাগিয়ে দেয়।
_________________________
সকালে নাস্তা করে শুভ্র বসতে ই তার ফোনে কল আসে রিসিভ করতে ই লামিয়া দ্রুত অফিসে যাওয়ার জন্য বলছে। ডিজাইন সেকশনের কাজ আটকে আছে। না গেলে সবার বসে থাকতে হবে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে অহনাকে নিয়ে ডিরেক্ট অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ে।
লামিয়া চেয়ারে বসে বসে হাসছে। আর কত নাটক সাজাতে হবে শুভ্রকে পেতে হলে তা অজানা। অহনার কথা মনে হতে ই বেশ রাগ হচ্ছে সব তো প্ল্যান মতো ই হচ্ছিলো হঠাৎ অহনার এন্ট্রিটা ই সবকিছু নষ্ট করে দিয়েছে। তিনদিন হলো শুভ্র অফিসে আসছে না তাই শুভ্রকে অফিসে নিয়ে আসার জন্য ডিজাইন সেকশনের কাজ বন্ধ রেখেছে। এটা না বললে শুভ্র আসবে না তাই তো এই কথা বলা।
শুভ্র অহনাকে নিয়ে অফিসে ঢুকে নিজের কেবিনে বসতে ই লামিয়া ঢুকে পড়ে। এভাবে নক না করে ঢুকে পড়ায় শুভ্রের রাগ হয়। লামিয়া এসে অহনাকে দেখতে পেয়ে তার মেজাজ বিগড়ে যায়। তাও নিজেকে সংযত রেখে শুভ্রের সাথে কথা বলছে।
আমি কিছুটা দূরে দাড়িয়ে আছি। লামিয়া মেয়েটা বেশ গায়ে পড়া স্বভাবের। কেমন শুভ্রের উপরে গিয়ে পড়ছে। তাতে আমার কি কোলে বসে থাকুক।
লামিয়া আঁড়চোখে অহনাকে দেখছে, খুব ভালো করে বুঝতে পারছে অহনা তাকে খেয়াল করছে।
শুভ্র চেয়ার থেকে উঠে অহনার কাছে গিয়ে অহনাকে টেনে নিজের কাছে এনে পিছন থেকে ডান হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে বলে,
–লামিয়া আমার বউ অহনা।
মুখে হাসি টেনে লামিয়া অহনার সাথে হাত মেলালে ও ভেতরটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছিলো।
শুভ্র খেয়াল করেছে কেবিনে ঢুকার পর থেকে অহনাকে ইগনোর করে যাচ্ছে লামিয়া। বড় ভাইয়ের বউ হিসেবে ও কথা বলতে পারতো তাও করেনি।
অফিসের সব কাজ শেষ করে অহনাকে নিয়ে ই বাসায় ফিরেছে শুভ্র। অহনা রুমে ঢুকার আগে ই শায়লা রহমানের ডাক পেয়েছে। দ্রুত উনার রুমে যেতে ই বললো,
–খালি হাতে এসেছো যে। কিছু দিয়ে দেয়নি। আর দিবে ই বা কি করে থাকতে তো হবে।
–মা আমার যে নাই তা নিশ্চয়ই বিয়ের আগে ই জানেন। আমি আপনার বাসায় উড়ে এসে পড়িনি আমাকে আপনার ছেলে বিয়ে করে এনেছে। আমার কিছু নাই তা দেখে ই বিয়ে করেছে।
–আমার ছেলে তো আর শখ করে বিয়েটা করেনি।
–আমি ও শখ করে আপনার ছেলে বিয়ে করিনি।
–মুখে যেহেতু জোর আছে হাতে ও তোমার জোর থাকবে। তাই তোমার বাম দিকে রাখা কাপড়গুলো হাতে কেচে ছাঁদে শুকাতে দাও।
অহনা তার বাম দিকে তাকাতে ই দেখলো অনেকগুলো কাপড় থাকা। দেখে কষ্ট ও লাগছে হাসি ও পাচ্ছে তাকে কষ্ট দিতে তাদের কত আয়োজন। অহনা সবগুলো কাপড় নিয়ে কেচে দিয়ে ছাঁদে শুকাতে দিয়ে নিচে চলে আসে।
শুভ্র বাসায় আসার পর বিছানায় শুয়ে পড়তে ই কখন ঘুমিয়ে পড়ে তা বুঝতে পারেনি। ঘুম থেকে উঠে সোজা শাওয়ার নিতে ওয়াশরুম ঢুকে। অহনা কাপড় মেলে রুমে এসে ওয়াশরুমে যাবে এমনি দেখে ভেতরে শুভ্র। ভেজা কাপড় নিয়ে কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকা যায়। কাপড় ধুয়ে গিয়ে অহনাও অনেকটা ভিজে গেছে। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে দরজায় ঠকঠক করতে ই শুভ্র দরজা খুলে টান দিয়ে অহনাকে ভেতরে নিয়ে যায়।
চলবে,
[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]