#সংস্পর্শে_তুমি
#পর্ব_১২
#নাহিদা_ইসলাম
সকালে সবার আগে ঘুম থেকে উঠে অহনা। দ্রুত তমা জিনিয়াকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তমা প্রশ্ন করলো,
–অহনা আমাদের সাথে যাচ্ছিস ভালো কথা কিন্তু এভাবে লুকিয়ে কেনো?
অহনা বেশকিছুক্ষন চুপ থাকার পর উত্তর দিলো,
–এই বাসা থেকে একেবারে চলে যাচ্ছি আর আসবো না।
কথাটা শুনে তমা বললো,
— অহনা কি চাচ্ছিস জানি না তবে আমি বুঝতে পারছি নিজের কষ্ট নিজে বাড়াচ্ছিস। ভাইয়াকে তো দেখলাম না তোর সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করতে।
–তোর দেখতে হবে কেনো। আমার লাইফ আমি বুঝে নিবো তুই এতো টেনশন নিস না তমা।
ঘুম থেকে উঠে অহনাকে না দেখে শুভ্র দ্রুত কিচেনে আসলো। কিচেন না দেখে তার মার রুমের দিকে যেতে ই দেখে দরজা বন্ধ এখনও ঘুম থেকে উঠেনি বাসার কেউ। শুভ্র ছাদে গেলে,অন্যরুম গুলো খুজলো। অবশেষে বাগানে গেলো কিন্তু অহনার দেখে নেই। গেস্ট রুমে গিয়ে দেখলো তমা জিনিয়া ও নেই। দ্রুত মেইন গেইটের সামনে যেতে ই দেখলো দারোয়ান ঘুমাচ্ছে। শুভ্রের চিৎকারে দারোয়ানের ঘুম ভাঙ্গতে ই উঠে দাড়ায়।
—কখন থেকে ঘুমাচ্ছেন চাচা, কাউকে বাসা থেকে বের হতে দেখেছেন।
–কখন ঘুমিয়েছি বলতে পারবো না স্যার। গেইটে তো তালা লাগানো চাবি তো
কথাটা বলে ই গেইটের দিকে তাকাতে দেখে চাবি তালায় লাগানো গেইট খোলা। শুভ্রের আর বুঝতে বাকি রইলো না অহনা চলে গেছে।
শুভ্র উপরে এসে ফ্রেশ হয়ে গাড়ির চাবিটা নিয়ে বের হয়ে যায় অহনাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
অহনা বাড়ি পৌঁছাতে ই রাসু বেগম মুখখানা মলিন করে ফেললো। বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরের দিকে পা বাড়াতে ই রাসু বেগম প্রশ্ন করলো,
–কি অঘটন ঘটিয়ে সকাল সকাল আসলি অহনা।
অহনা শান্তভাবে উত্তর দিলো,
–কোনো অঘটন ঘটায়নি তবে আমি আর ঐ বাড়িতে ফিরছি না।
কথাটা বলতে ই অহনার দিকে তেড়ে এসে থাপ্পড় মারতে গিয়ে ও থেমে যায় রাসু বেগম।
–আর কত অশান্তি দিবি আমাকে। বিয়ে দিয়ে মনে হয়েছিলো শান্তি হয়েছি কিন্তু সেই তো আবার ঝামেলা করলি তোর মনে হয় আমাদের শান্তি পছন্দ হয় না।
–চাচি দয়া করে আমাকে থাকতে দেও। আমি তোমার সব কাজ করে দিবো। আর কথা দিচ্ছি কিছু দিনের ভেরত ই আমি বাড়ি থেকে চলে যাবো।
–এখনই বাড়ি থেকে বের হয়ে যা। কিছু দিন লাগবে না এই অভাবের সংসারে আমি আর তোকে টানতে পারবো না।
–চাচি আমাকে ছোটবেলা ই মেরে ফেলতে কেনো বড় করেছিলো।
রাসু বেগম অহনার হাত ধরে বাড়ির বাহিরে নিয়ে বললো,
–রাস্তা দেখছিস যেখানে ইচ্ছে চলে যা আমাদের আর জ্বালিয়ে খাস না।
রাসু বেগম বাড়িতে ডুকে তমা জিনিয়াকে বললো,
–তোদের বাবা যেনো এসব না জানে ঘরে যা তোরা।
তমা জিনিয়া সাহস নেই তার মায়ের মুখের উপর কথা বলার তবে অহনার জন্য কষ্ট হচ্ছে। কোথায় যাবে মেয়েটা।
ঘুম থেকে উঠে শায়লা আর হামিদা বেশ খুশি। শায়লা খুশিতে আত্মহারা, তার কোনো কিছু করতে হয়নি। আপদ এমনি বিদায় হয়েছে। হামিদা বেগম হেসে বললো,
–ভাবি সকাল সকাল এতো ভালো সংবাদ পাবো কখনো ভাবি নাই। আসেন আপনি আমি মিলে শুভ্র আর লামিয়ার বিয়ের ডেট ফিক্সড করে ফেলি। কাকে দাওয়াত করবো। কতজন মানুষের আয়োজন হবে সব ঠিক করে ফেলি।
শায়লা হেসে বললো,
–তাদের বিয়েটা দ্রুত দিতে হবে নয়তো আবার শুভ্র বেঁকে বসবে। আর শোন বিয়ের আগে আমার বাকি টাকাটা কিন্তু দিয়ে দিতে হবে।
–ভাবি এসব নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার টাকা আপনি ঠিক মতো পেয়ে যাবেন। এখন শুধু বিয়েটা সময়ের অপেক্ষা।
মৌ নিচে দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
–মা অহনা কেনো চলে গেলো। ভাইয়া কি করছিলো বউ চলে যায় খেয়াল করলো না।
হামিদা বেগম মৌয়ের কাছে গিয়ে হাতে ধরে টেনে সোফায় বসালো।
–শুভ্র আর লামিয়ার বিয়েতে তোর যা যা ইচ্ছে সব শপিং করিয়ে দিবো মৌ। তুই আর এই অহনার কথা বলিস না।
মৌ হেসে বললো,
–দিবাস্বপ্ন কিন্তু ভালো না। কি একটা অবস্থা মেয়েটা যে কারণে ই হক বাসা থেকে বের হয়েছে মাত্র এর মধ্যে ই তোমরা এসব ভেবে ফেলেছো। যতসব আজগুবি চিন্তাভাবনা।
মৌয়ের কথা শোনে হামিদার মুখটা মলিন হয়ে গেলো। হামিদাকে শান্তনা দিতে শায়লা বললো,
–আরে তুমি মন খারাপ করছো কেনো মৌ তো বাচ্চা ওর কথা কি শুনো
আমি আর বাড়িতে ডুকার চেষ্টা করেনি। মনে হচ্ছে আমার এই পৃথিবীতে কেউ আর রইলো না। আমি তো অনাথ। অনাথদের এমনিতে ও কেউ থাকে না।হাটছি আনমনে কোথায় যাবো জানি না। হঠাৎ মনে পড়লো আমার এক ফ্রেন্ডের কথা যে গার্লস হোস্টেলে থাকে।ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করতে গিয়ে দেখলাম মোবাইলটা ফেলে এসেছি। ভাগ্য যখন খারাপ হয় তখন হয়তো এমন ই হয়। মেইন রোডে এসে রিক্সা নিলাম। উদ্দেশ্য গার্লস হোস্টেল।
শুভ্রের গাড়ি চালিয়ে অহনার বাসার দিকে যাচ্ছিলো হঠাৎ রিক্সায় অহনাকে দেখে রিক্সা পেছন নিলো। বিশ মিনিটে আসার পর রিক্সা থেকে নামতে ই শুভ্র গাড়ি রেখে দ্রুত দৌড়ে অহনার হাত ধরে।
আচমকা হাত ধরতে ই অহনা পিছনে তাকিয়ে দেখে শুভ্র। শুভ্রকে দেখে চমকে উঠে অহনা। অহনা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
–আর কি চান। আমি আপনার লাইফে থাকতে চাচ্ছি না। জোর করে রাখবেন নাকি।
–প্রয়োজন পড়লে তাই করবো অহনা। রাস্তা মাঝখানে সংযত হও সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
–তাকিয়ে থাকুক। আপনি আমার হাত ছেড়ে চলে যান। তাহলে তো হলো
–আমি আমার বউকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।
–আমি আপনার কাছে সময় মতো ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবো এখন চলে যান।
–তাই নাকি। আগে ডিভোর্স পেপার দাও তারপর যাবো। আমি আমার বউকে একা রেখে যাবো না।
কথাটা বলে ই শুভ্র অহনাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইলে অহনা কোনো রকম হাত ছাড়িয়ে জোড়ে হাটা দিয়ে রাস্তা পার হয়ে যায়। কয়েক কদম হাটার পর জোরে বিকট শব্দে অহনা পিছনের দিকে তাকাতে ই দেখলো শুভ্রের দেহেটা দূরে ছিটকে পড়ে আছে।
শুভ্র রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা প্রাইভেট কার ধাক্কা দেয়। শুভ্র রাস্তায় গাড়ি না দেখে ই দ্রুত রাস্তা পার হতে চেয়েছিলো।
কিছুক্ষণ জন্য অহনা থমকে যায় কি হয়েছে বুঝে উঠতে পারছে না। পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। পা বাড়ানোর মতো শক্তি মনে হচ্ছে নাই। পা বাড়াতে গিয়ে অহনা রাস্তায় বসে পড়ে। উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করছে বেশকিছু ক্ষন পার হওয়ার পর অহনা উঠে দাড়াতে সক্ষম হয়। রাস্তায় থাকা সব মানুষ শুভ্রের দেহের চারপাশ ঘিরে রেখছে। মাথা থেকে প্রচুর র-ক্তক্ষরণ হচ্ছে। ভয়ে কেউ সামনে এগোচ্ছে না। র-ক্ত যেনো স্রোতের মতো পড়ছে। অহনা কোনো রকম ভীড়ের মধ্যে দিয়ে শুভ্রের কাছে পৌঁছে। এতোক্ষণ এম্বুলেন্স পুলিশ সব চলে আসে। দ্রুত শুভ্রের দেহটা এম্বুলেন্সে তুলে। অহনা চিৎকার করে বললো,
–আমাকে কেউ নিয়ে এম্বুলেন্সে নিয়ে যান প্লিজ।
দুজন মহিলার সাহায্যে অহনাকে এম্বুলেন্স উঠানোর পর অহনা গিয়ে শুভ্রের মাথার কাছে বসে। নিজের ওড়না দিয়ে শুভ্রের মাথা বেধে দেয়। শুভ্রে শার্টটা খুলে রক্ত মুছে শুভ্রের বুকে কান পেতে দেখলো নিশ্বাস নিচ্ছে কিনা। এতো মায়াতো আগে হয়নি শুভ্র জন্য। অহনার শরীর কাঁপছে দুহাত দিয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করেছে………
চলবে,
[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]