সংস্পর্শে তুমি পর্ব-১৩

0
214

#সংস্পর্শে_তুমি
#পর্ব_১৩
#নাহিদা_ইসলাম

শুভ্রে শার্টটা খুলে রক্ত মুছে শুভ্রের বুকে কান পেতে দেখলো নিশ্বাস নিচ্ছে কিনা। এতো মায়াতো আগে হয়নি শুভ্র জন্য। অহনার শরীর কাঁপছে দুহাত দিয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করেছে।
পরেরদিন সকাল নয়টা,
অহনা এম্বুলেন্সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। হসপিটাল আনার পর জ্ঞান ফিরলে ও কেমন অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো তাই ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছে। শুভ্র এখন আগের থেকে সুস্থ। মাথা আর ডান পায়ে ব্যথা পেয়েছে অনেক। নার্স সকালে এসে নতুন একটা স্যালাইন দিয়ে গেছে। সাথে তরল খাবার খাওনের জন্য বলেছে।
শুভ্রের জ্ঞান ফেরার পর অহনাকে দেখেছে কেবিনের ডান সাইডের শুয়ে আছে। চুুপি চুপি মৌকে হাতে ইশারা করলো শুভ্র। মৌ কাছে আসতে ই জিজ্ঞেস করলো,
–অহনা এভাবে শুয়ে আছে কেনো? ও কি ব্যথা পেয়েছে।
–এখন তো দেখছো শুয়ে আছে কিছুক্ষণ পর মা বের করে দিবে।
কথাটা বলার সাথে সাথে শুভ্র রেগে গেলো।
শায়লা আর লামিয়া দুজন একসাথে এতোক্ষণ কথা বলছিলো। মৌ শুভ্র থেকে দূরে সরে যেতে ই লামিয়া স্যুপে বাটি থেকে চামচ দিয়ে শুভ্রের মুখে স্যুপ দিচ্ছে আর এখন কেমন লাগে তা জিজ্ঞেস করছে।
অহনার ঘুম ভাঙ্গতে ই দেখে শুভ্র বেডে শুয়ে আছে লামিয়া স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে। অহনা চোখ খুলেছে দেখতে ই শায়লা দ্রুত এসে বললো,
–ঘুমিয়েছো শান্তিতে এখন এই মুহুর্তে বেরিয়ে যাও। আর কোনো দিন আমার ছেলের জীবনটা তচনচ করতে এসো না। তোমাকে বিয়ে করার পর আমার ছেলে একদিন ও শান্তিতে ছিলো না। আর কালকে অবশেষে আমার ছেলেকে মেরে ই ফেলতে। অহনার হাত ধরে টেন দিতে ই শুভ্র বললো,
–মা তুমি চুপ করো। অহনা আমার বউ। আমার বউয়ের ব্যাপার আমাকে বুঝে নিতে দেও।
–শুভ্র
–মা প্লিজ। আমার কথা বলতে ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। আমাকে তোমরা একটু শান্তি দেও।
শায়লা রহমান ছেলের কথায় রাগ করে হসপিটাল থেকে মৌকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। অবশ্য হসপিটালে থাকতে তার একটু ও ভালো লাগছিলো না।কীভাবে যাবে তার চিন্তা করছিলো। এখন একটা কারণ খুজে পেল বের হয়ে গেলো। লামিয়া আর অহনা শুধু আছে।

লামিয়ার ইচ্ছে করছে অহনাকে বের করে দিতে। মেয়েটাকে দেখলে ই শরীরে জ্বালা ধরে। রেগে গিয়ে বললো,
–এই তোমার জন্য ই না শুভ্রের আজকে এই অবস্থা। তোমার কি একটু ও খারাপ লাগছে না। একটু ও অনুশোচনাবোধ নেই? চলে যাবে ভালো কথা আবার আসছো কেনো। এখন ও রাস্তা খোলা আছে চলে যাও।
অহনা লামিয়ার কথায় কাঁদছে। নিজেকে তার সত্যি ই অপরাধী মনে হচ্ছে। তার জন্য ই তো শুভ্রের এখন এতো কষ্ট হচ্ছে।
–এসব নেকামো শেষ হলে চলে যাও। জাস্ট তোমার মুখটা দেখতে চাই না।
শুভ্র এতোক্ষন দেখছিলো লামিয়া কি বলে। শুভ্রের কথা বলতে কষ্ট হয়। কথাগুলো অস্পষ্ট হয়। মনোযোগ দিয়ে না শুনলে বুঝা যায় না।
শুভ্র হাতের ইশারায় লামিয়াকে ডাকলো। লামিয়া কাছে আসতে ই বললো,
–অহনা আমার বউ। তার জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে আমি নিবো। অহনাকে আর একটা কথা ও বলবে না। এবার যাও অফিস থেকে মেসেজ এসেছে। ফ্যাশন শোয়ের ডেট আজকে ফিক্সড হবে। এগোটায় মিটিং আমি উপস্থিত হতে পারছি না বলে তুমি যাচ্ছো। আমি বলে দিয়েছি তুমি বেরিয়ে যাও।
লামিয়া এখন শুভ্রকে ছেড় যেতে চাচ্ছে না।কিন্তু অফিসের কাজ ও ছাড়া যায় না। লামিয়া কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে শুভ্র অহনার দিকে তাকালো অহনা নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। মাথা একেবারে নিচু করে রেখেছে। শুভ্র অহনাকে ডাকলো। চারবার ডাকার পর অহনা বুঝতে পারলো তাকে শুভ্র ডাকছে। অহনা শুভ্রের দিকে তাকেতে ই শুভ্র দুই হাত মেলে দিলো অহনাকে ইশারা করে আসতে বললো। অহনার বাচ্চাদের মতো দৌড়ে এসে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। অহনা কান্না করতে করতে বলে আমার জন্য আপনার এমন হয়েছে আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দেন। শুভ্র তার বুক থেকে অহনার মাথা ডান হাত দিয়ে উপরে তুলে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
–পাঁচ মিনিট এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকো একটু রিলাক্স হও। তারপর মনে যা কথা আছে সব বলো।
অহনা আবার জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। শুভ্র আবার মুখ তুলে বললো,
–কান্না করলে এ বুকে জায়গা নাই কিন্তু।
অহনা মাথা নিচু করে চুপ করে যায়।
★★★
হসপিটাল থেকে বাসায় ফেরার পর বেশকিছু দিন কেটে গেছে শুভ্র এখন সুস্থ। শুভ্র বাসায় ফেরার পর তার মায়ের রাগ ভাঙ্গাতে তার রুমে এই নিয়ে আটবার এসেছে। এবার রুমল যেতে ই শায়লা মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে।
–মা তুমি আর কতদিন রাগ করে থাকবে।
শায়লা চুপ করে বসে আছে কোনো কথা বলছে না।একদিনে মধ্যে অনেকবার শায়লা রহমানের রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু একবার ও তিনি কথা বলেননি।
–মা এইবার যদি তুমি কথা না বলো তাহলে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবো। আর কখনো আসবো না।
শুভ্রে এই কথা বলার সাথে সাথে শায়লা রহমান শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,
–আমার একটা শর্ত আছে। তাহলে আমার রাগ ভাঙ্গতে পারে।
–কি বলো তোমার সব শর্ত মানতে আমি রাজি তা ও কথা বলো।
–প্রমিস করছিস তো শুভ্র।
শুভ্র বলে দিলো,
–হ্যাঁ মা এখন বলো।
–অহনাকে আমি তোর যোগ্য মনে করি না। সে আজ থেকে আমার সাথে থাকবে। আমি যেদিন তোর উপযুক্ত মনে করবো সেদিন তোদের আবার নতুন করে বিয়ে দিবো।
–মা আমি…কথাটা বলতে গিয়ে ও আটকে গেলো। আচ্ছা মা তুমি যা বলো তাই। কিন্তু অহনা এই বাসা থেকে কোথাও যাবে না।

শুভ্র ইশারায় অহনাকে ডেকে বাহিরে চলে যায়। অহনা উপরে যেতে নিবে ঠিক সেই সময় শায়লা বললো,
–অহনা তোমার উপরে যাওয়া নিষেধ।
বেচারি মুখটা মলিন করে চলে এসেছে। শুভ্র সোফার বসে আছে, উঠে রুমের ভেতরে থাকা জিনিসপত্র দেখছে আর আরচোখে দেখছে অহনা বের হয় নাকি।
শায়লা হামিদাকে কল দিয়ে বললো,
–হামিদা আমার বাকি টাকা রেডি রাখো। অহনাকে শুভ্রের থেকে আলাদা করে দিয়েছি। আর বেশি সমস্যা করলে সময় বের করে তাকে মে-রে দিবো।
হামিদা বেগম তো বেশ খুশি।
–ভাবি আপনার উপর আমার ভরসা আছে। আপনি আপনার কাজ করেন। টাকা সময় মতো পেয়ে যাবেন।
শায়লা বেলকনিতে দাড়িয়ে কথা বলছে এই ফাঁকে শুভ্র রুমে ডুকে। অহনাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। সিড়ি বাম দিকে এখানে অনেকটা আড়াল হয়ে আছে ভালো করে খেয়াল না করলে কেউ বুঝতে পারবে না কেউ আছে এখানে। শুভ্র এখানে অহনাকে দাড় করিয়ে কপালে বেশ কয়েকটি চুমু দেয়।
–আমার ভাগ্য দেখো কি, যখন বিয়ে করলাম ভুল বুঝাবুঝির কারণে বউয়ের থেকে দূরে ছিলাম। তারপর আবার অসুস্থতা এখন সুস্থ হয়েছি কোথায় বউকে একটু আদর করবো তা না আবার কি হয়ে গেলো। জান তোমাকে ছেড়ে কিভাবে ঘুমাবো।
অহনা হেসে দিয়ে বললো,
–আমাকে ছাড়া আগে যেভাবে ঘুমিয়েছেন ঐভাবে ই ঘুমাবেন।
শুভ্র অহনাকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ের চুলগুলো সাইড করে হালকা করে কামড় দিয়ে বলে,
–আমার কষ্ট তুমি হাসছো জান। মায়া হয়না আমার জন্য তাই না।
— এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে তো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।
শুভ্র অহনাকে ছেড়ে দিয়ে অহনার দিকে তাকাতে ই অহনা শুভ্রের ঠোঁট গভীর চুমু দিয়ে দৌড়ে রুমে চলে যেতে ই দেখলো শায়লা রহমান রুমের মাঝখানে দাড়িয়ে আছে। অহনার দিকে তাকিয়ে……
চলবে,
[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]