#সংস্পর্শে_তুমি
#পর্ব_১৭
#নাহিদা_ইসলাম
শুভ্র অহনা ও এসে তাদের সাথে বসে। মৌ তিয়াস আগে থেকে ই বসা ছিলো। শায়লা রহমান গিয়ে হামিদার পাশে বসে। সবাই গল্প করছিলো হঠাৎ কারেন্ট চলে যায়। অন্ধকারের মধ্যে কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না। শুভ্র অহনাকে চুমু খেতে যায় ঠিক সেই সময় কারেন্ট চলে আসে। শুভ্রের এমন কান্ড দেখে তিয়াস জোরে হেসে দেয় মৌ কোনো রকম হাসি আটকে আছে। লামিয়ার মুখটা দেখার মতো ছিলো লামিয়া রাগে মনে হচ্ছিলো অহনাকে গিলে ফেলবে।
সবাই রাতে খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে যায়। অহনা রুমে ডুকবে তার আগে লামিয়া হাত ধরে টান দিয়ে ছাদে চলে যায়।
–আমার হাতে ব্যথা পাচ্ছি হাত ছাড়ুন।
লামিয়া হাত ছেড়ে অহনার সামনে দাড়িয়ে বললো,
–অহনা তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো আমি শুভ্রকে পছন্দ করি ভালোবাসি। দেখো তোমার সাথে আমার কোনো রাগ নেই। ভালো ভাবে বলছি তুমি শুভ্রের জীবন থেকে চলে যাও।
অহনা হেসে বললো,
–আপনি বলবেন আর আমি চলে যাবো তাই না?
–অহনা জেদ করো না চলে যাও তোমার ভালো হবে।
অহনা ভ্রুকুচকে জিজ্ঞেস করলো,
–কে আপনি আমার ভালো চান বুঝি?
–ভালো চাই বলে ই তোমাকে সাবধানে করলাম। এখন চলে যাও। নয়তো পালানোর সুযোগ পাবে না।
অহনা কথাটা শুনে ই শব্দ করে হাসতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষন হেসে বললো,
–আমি চলে গেলে কি হবে?আপনি বিয়ে করবেন শুভ্র কে?
–হ্যাঁ।
— একজন বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করার এতো ইচ্ছে?
–এতো কথা বলো না আমি যখন বুঝতে শিখেছি ভালোবাসা কি তখনই আমি শুভ্রকে ভালোবাসি। তুমি তো এসেছো দুইদিন।
–আমার সোজা কথা শুনে রাখুন আমি শুভ্রকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।
কথাটা বলে ই অহনা ছাঁদ থেকে দ্রুত নিচে নেমে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে ই শুভ্রকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। শুভ্রের ব্যাপারটা বুঝতে বেশকিছুক্ষন লাগে। অহনাকে শুভ্র সামনে এনে চোখ মুছে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কান্না করছো কেনো?
অহনা চুপ করে শুধু শুনছে কোনো উত্তর দিচ্ছে না।
–আমাকে বলো কি হয়েছে মা তোমাকে কিছু বলেছে?
অহনা মাথা নেড়ে না বলে কিন্তু মুখে কোনো কথা বলছে না। শুভ্র অহনার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,
–প্লিজ বলো জান তোমার কান্না আমার একদম সহ্য হচ্ছে না।
অহনা চোখ মুছে বেডে বসে শুভ্রকে ইশারায় বসতে বললো,
–কিছু হয়নি বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছিলো তাই কান্না পাচ্ছে।
–মিথ্যে বলছো অহনা। আমাকে বলতে চাচ্ছো না এটা বলো।
অহমা শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,
— কিছু হয়নি শুয়ে পড়ুন।
হঠাৎ শুভ্রকে তার মা ডাকতে ই শুভ্র রুম থেকে বের হয়ে যায়। মায়ের রুমে যেতে ই দেখে তমা লামিয়া হামিদা বেগম শায়লা রহমান বসে আছে। কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে কথা বলছিলো শুভ্র রুমে ডুকার সাথে সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। শায়লা রহমান তার প্রেসক্রিপশন শুভ্রের হাতে দিয়ে বললো,
–বাবা রাতে ঔষুধ নাই। ঔষুধ না খেলে আমার রাতে ঘুম আসবে না।
শুভ্র হাতে থাকা ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো এগারোটা আটত্রিশ বাজে।
–মা এতো রাতে ঔষুধ লাগবে? খাওয়া শেষ করে বসে আছো তো অনেকক্ষন হলো এতোক্ষণ বলনি কেনো?
–এতোক্ষণ আমার ঔষুধে কথা একটু ও মনে ছিলো না লামিয়া মনে করেছিলো তাই।
–ঔষুধ ও ভুলে যাও মা। আচ্ছা যাচ্ছি।
যাচ্ছি বলে ই শুভ্র অহনাকে বলে বের হয়ে যায়। শুভ্র বাসা থেকে বের হবার পর ই তমা অহনার জন্য একটা ঔষুধ নিয়ে রুমে ডুকে। হঠাৎ তমাকে রুমে ডুকতে দেখে অহনা জিজ্ঞেস করে,
–কিসের ঔষুধ এটা নিয়ে এসেছিস কেনো?
–শুভ্র ভাইয়া বললো তোকে এই ঔষুধ খাওয়ানোর কথা। সকাল থেকে ই তোর মাথা ব্যথা ঔষুধটা খেলে কমবে।
অহনার সকাল থেকে ই মাথা ব্যথা কিছুতে ই কমছে না। এতোক্ষণ মাথা ব্যথায় বেশ খারাপ লাগছিলো খাবার খাওয়ার আগে শুভ্রকে ঔষুধের কথা বলেছিলো। অহনা তমার থেকে ঔষুধ টা নিয়ে খেয়ে নিলো।
ঔষুধ টা খাওয়ার কিছুক্ষণ পর লামিয়া শায়লা আর হামিদা বেগম রুমে ডুকে। তমাকে ডেকে তাদেরকে সাহায্য করতে ডাকে। তমাকে অহনার পা চেপে ধরতে বলে আর হামিদা আর শায়লা দুইহাত ধরছে। পাশে থাকা বালিশটা নিয়ে অহনা মুখের দিকে তাকায়। অহনা ঘুমাচ্ছে লামিয়া হেসে বললো,
–বলেছিলাম তো চলে যাও নয়তো পালানোর সুযোগ পাবে না।
তমা ভেতর ফেটে কান্না আসছে। অহনা আর তার একসাথে বেড়ে উঠা। সে তো নিজের বোন ই কোনো রকম কষ্ট করে কান্না চাপিয়ে রেখেছে।
লামিয়া মুখের উপর বালিশ রেখে চাপ দিতে দিতে হাত রাখতে ই শুভ্র রুমে ডুকে। শুভ্র রুমে ডুকতে ই তমা চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে দেয়। শুভ্র এতো দ্রুত চলে আসবে তা লামিয়া কখনোই ভাবতে পারেনি।
শুভ্র ডিরেক্ট গিয়ে লামিয়ার চুলের মুঠি ধরে ইচ্ছে মতো মারে। লামিয়ে মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যায়। পুলিশ রুমে ডুকে শুভ্রকে থামায়। তমার কান্না কিছুতে ই থামছে না। তমা শুভ্রের সামনে আসতে ই শুভ্র নরম সূরে বললো,
–ধন্যবাদ বোন তুমি না থাকলে আমি কখনো আমার আপনা মানুষগুলো পড়ে থাকা মুখোশ খুলতে পারতাম না।
তমাকে বিয়ের দিন শর্তে দিয়েছিলো শায়লা রহমান যা বলে শুনতে হবে। সন্ধ্যায় শায়লা রহমান ডেকে নিয়ে বললো অহনাকে মেরে ফেলবে তাদের সাহায্য করতে হবে নয়তো তাকে তিয়াসের লাইফ থেকে সরিয়ে ফেলবে। তমা প্রথমে রাজি না হলে ও পরে রাজি হয় তমা সব কথা মোবাইলে রেকর্ড করে শুভ্রকে পাঠিয়েছিলো। শুভ্র বলেছিলো তাদের প্ল্যান মতো কাজ করতে শেষটা শুভ্র সামলে নিবে। শুভ্র ঔষুধ আনতে গাড়ি নিয়ে বের হলে বাহিরে গাড়ি রেখে দেওয়াল টপকে নিজে ভেতরে প্রবেশ করে এবং পিছনের দরজা খুলে দিয়ে পুলিশদের ভেতরে ডুকতে সাহায্য করে। শায়লা রহমানের বিরুদ্ধে শক্তপোক্ত প্রমাণ লাগতো তাই শুভ্র এই ঝুঁকি নিতে বাধ্য হলো।
শুভ্রের বাবা আরাফাত রহমান শায়লাকে ডিভোর্স দিয়েছে অনেকদিন হয়েছে। তাই তারা আলাদা বাসায় থাকে। শায়লার এই লোভ তাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। লোভ আর স্বার্থপরতার কারণে আরাফাত রহমানের সাথে সংসারটা ভেঙ্গে গিয়েছিলো।
সবাইকে পুলিশ এরেস্ট করেছে। অহনা ঘুমাচ্ছে এতোকিছু হয়ে গেলে ও অহনা কিছু বুঝতে পারেনি।
তিয়াস আর মৌ কে ও ঘুমের ঔষুধ দিয়েছে যেনো তারা কিছু বুঝতে না পারে।
________________________
সকাল এগারোটা অহনা বেডের উপর বসে আছে। উঠছে একটু আগে। শুভ্রের মুখে সব কথা শুনে কান্না করছে।
–বুঝেছেন গতকাল আমি কেনো কান্না করছিলাম কারণ লামিয়া আমাকে বলেছিলো চলে যেতে। লামিয়া আপনাকে ভালোবাসে আমি চলে গেলে আপনাকে বিয়ে করবে। আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন টাকা কোথা থেকে আপনার মা আমাকে টাকা দিয়েছে চলে যাওয়ার জন্য।
কথাটা শুনে শুভ্র একটুও অবাক হয়নি। শায়লা রহমানের পক্ষে সব সম্ভব।
শুভ্র অহনাকে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
–সব কালো ছায়া সরে গেছে এখন আমরা ভালো থাকবো। আর কষ্ট পেয়ো না
★★
অহনা সোফায় শুয়ে আছে শুভ্রের কোলে মাথা রেখে। তমা তিয়াস আর মৌ শপিং এ গিয়েছে। অহনার ভয় কিছুটা কাটলে ও শুভ্র সব সময় ভয় পায় অহনাকে নিয়ে। মেইন গেইটে কেউ নক করেছে অহনা উঠে গিয়ে দরজা খুলেতে ই দেখলো অবন্তী দাড়িয়ে আছে……
চলবে,
[ভুলক্রটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]