#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁
#পর্ব~২
#লেখনীতেঃsuraiya rafa
[প্রাপ্ত মনস্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]
বসন্তের সকাল,চারিদিকে মৃদুমন্দ ঝিরিঝিরি বাসন্তিক হাওয়া বইছে, কতইবা বেজেছে দশটা কি এগারোটা তবুও মাথার উপর চলছে সূর্য্যের তান্ডব নৃত্য। শীত যাবে যাবে করে এখনো যায়নি, তার আগেই সূয্যি মামা তার প্রখরতা দিয়ে ধরনী উত্তপ্ত করে দিয়েছে।
সূর্য্যের তীর্যক রশ্মিকে পিঠে পিছলে দিয়ে একপ্রকার ছুটে বটতলার ছায়ার নিচে এসে দাঁড়ালো তিথি।
ওখানে অরু আর নীলিমা ওও ছিল।
–কিরে এভাবে ছুটে এলি কেন? কিছু হয়েছে?
তারস্বরে জিজ্ঞেস করে নিলীমা।
অরু ও প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
অরুর ভার্সিটি জয়েন করার পরে পুরো বাংলা ডিপার্টমেন্টের মধ্যে এই দুটোই বন্ধু জুটেছে ওর, তার মধ্যে ওই ইন্ট্রোভার্ট, নীলিমা যাও মোটামুটি একটু চুপচাপ থাকে, কিন্তু তিথী মোটেই চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে নয়, ভার্সিটির সব থেকে গড়ম খবরটা ওর কাছ থেকেই পায় অরুরা,হোক সেটা গসিপ কিংবা কোনো ইম্পর্টেন্ট নিউজ। এছাড়া ডিপার্টমেন্টের অন্য ব্যাচমেটদের সাথে অরুর মুখ চেনাচিনি আছে কিনা সন্দেহ,কিভাবেই বা থাকবে ভার্সিটি জীবন নড়বড়ে ওর,এটেনডেন্স এর জন্যও পর্যন্ত ভার্সিটি আসতে দেয়না অনু, তবুও আপার বকুনি ঝকুনি খেয়ে মাসের মধ্যে দু’একটাবার পা রাখে ভার্সিটির চত্বরে। যদিও সেটা পড়াশোনার জন্য নয়,বরং পছন্দের শ্যাম পুরুষকে একটা নজর দেখার আশায়, সবার আড়ালে তার মুখখানা হৃদমাঝারে স্ক্যান করে নিলেই শান্তি ওর।
নীলিমার কথার প্রতিউত্তরে
তিথি হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
— পানি দে দোস্ত, তারপর সব বলছি।
নীলিমা ব্যাগ থেকে পানি এগিয়ে দিলে ঢকঢক করে পানি পান করে দম নেয় তিথি,
–আহ এতোক্ষণে প্রানটা ঠান্ডা হলো।
— কি হয়েছে বললি নাতো? আবারও জিজ্ঞেস করে অরু।
তিথি এগিয়ে গিয়ে অরুর হাত ধরে বলে,
— ওহ,হ্যা তোর কাছেই আসছিলাম অরু, কাল ভার্সিটিতে কেন এলিনা বলতো??তাহলেই তো তো সব জানতে পারতি।
— কি হয়েছে একটু খুলে বল? তাছাড়া কেন আসিনি সেটাতো তুই জানিসই,তাহলে নতুন করে কেন প্রশ্ন করছিস তিথি?
— কাল নিখিল ভাইদের সমাবর্তন অনুষ্ঠান ছিল নিখিল ভাই সেরা ছাত্রত্বের পুরষ্কার পেয়েছে।
নীলিমা সস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
— ওহ এটাতো ভালো কথা।
–তারপর আরও একটা ঘোষণা হয়, আমি পরে সিনিয়রদের থেকে জেনেছি,
অরু সচকিত হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
–কি?
–নিখিল ভাই মাস্টার্স করবে না, উনি হায়ার স্টাডিসের জন্য স্কলারশিপ পেয়েছে, খুব শীঘ্রই ইউ এস এ চলে যাবে।
অরু চমকায় না, কোনো রকম প্রতিক্রিয়াও করেনা, অসস্থির লেস মাত্র নেই ওর মুখশ্রীতে। খুশি থাকার একমাত্র কারনটা হারিয়ে যাচ্ছে ও কি আদোও ঠিক আছে?? ওর ভেতরে যে অস্থির ঝড়োহাওয়া শুরু হয়ে গেছে,মনে হচ্ছে হৃদয়টা শক্ত করে খাঁ’মচে ধরেছে কেউ, গলাটা শুকনো কাঠে পরিনত হয়েছে,তবুও থমথমে মুখে ছোট্ট করে অরু জবাব দেয়,
–ওহ
এটুকু শব্দ উচ্চারণে অরুর অ’গ্নিস্ফুলিংঙ্গ উগরে দেওয়ার মতো কষ্ট হলো। তবুও বান্ধবীদের সামনে মুখের মিথ্যে হাসিটা ঠিকই ধরে রাখলো,কারণ আর যাই হোক একপাক্ষিক ভালোবাসা কিংবা আধুনিক শব্দে বলতে গেলে ক্রাশ কে হারানোর জন্য কা’ন্নাকা’টি করে ভাসিয়ে দেওয়া কিংবা সবাইকে বলে বলে সিমপ্যাথী কুড়ানোর মতো আত্মসম্মানহীন মেয়ে অরু নয়।
এমনিতেই ওর মায়ের অসুস্থতা নিয়ে অনেকেই করুনা দেখাতে আসে, যা ওর শরীরে জ্ব’লন ধরিয়ে দেয়, অরুর করুনা মোটেই পছন্দ নয়, তবে নিজ অধিকারের ক্ষেত্রে সর্বদা সতর্ক ও। যা ওর সেটা ওরই।
কিন্তু নিখিল ভাই? সেতো তো ওর নয়, কোনো কালে ছিলোও না। ওই কেবল একতরফা ভালোবেসে গিয়েছে,নিখিল ভাইতো ওকে ছোট বোন ছাড়া কিছুই ভাবেনা, শুধু ওকে কেন ছাত্র নেতা হিসেবে সব জুনিয়র মেয়েরাই তার ছোটো বোনের সমতুল্য, অরু আলাদা করে তো কিছুই নয়।
— ক্যাম্পাসের দিকে দেখ নিখল ভাই আসছে।
তিথির কথায় অরুর দিবাস্বপ্নে ভাটি পরে, তরিৎ গতিতে ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে বেরিয়ে দেখতে পায় ক্যাম্পাস থেকে গেইটের দিকেই এগিয়ে আসছে নিখিল ভাই, কালো ডেনিমের সাথে নীল পাঞ্জাবীতে কি সুন্দর লাগছে তাকে, কাধে ঝুলে আছে ল্যাপটপের ব্যাগ,কানে হেটফোন।
সেদিকে একধ্যানে তাকিয়ে তিথি বলে,
–কি এতো গান শোনেন উনি??
কাঠফাটা রোদে উজ্জ্বল শ্যামলা চেহারাটা জলজল করছে তার, মুখে লেগে আছে সেই সুন্দর হাসিটা। অরু চোখ বন্ধ করে বলতে পারে এই ইনোসেন্ট দেখতে ছেলেটার প্রেমে পরে যাওয়া কোন মেয়ের জন্য চুটকির ব্যাপার মাত্র।
********************************
নিখিল ভাই ওদের সামনে আসতেই সবাই একযোগে সালাম দিলো তাকে, সিনিয়র বলে কথা। সালামের জবাব দিতে নিখিল ও একটু থামলো, সামনে না গিয়ে ওদের দিকে কয়েক কদম এগিয়ে আসলো।
নিখিল ভাই ওদের দিকে আসছে দেখে অরু নীলিমার পেছনে গিয়ে গুটিশুটি হয়ে দাড়ালো।
কেঁ’টে ফেলা ডগার ন্যায় কেমন নেতিয়ে পরেছে ওর শরীরটা।
–আরে অরোরা না??
নিখিল ভাইয়ের আকষ্মিক সম্মোধনে ধরা পরে যাওয়া চোরের ন্যায় হুরমুর করে সামনে তাকায় অরু। হ্যা সূচক মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
–জজি ভাইয়া।
–ভালো আছো তো? এখন আর রাস্তা পার হতে ভয় নেই তো??
কি সুন্দর অমায়িক কথার ধরন, আরও একবার হোঁচট খায় অরু।
— নিখিল ভাই কিছু জিজ্ঞেস করছে অরু, উত্তর দে.. তিথির ধা’ক্কায় সম্মতি ফিরে পেলো অরু।
তারপর হ্যা না দুদিকেই মাথা নাড়াতে থাকে, আসলে কি করবে কি বলবে ও কিছুই ঠাহর করতে পারছে না,
ওর অবস্থা দেখে নীলিমা তিথি দুজনই অবাক যে মেয়ে কাঠকাঠ কথার জবাব দিতে ছাড়েনা সে কিনা ভেজা বিড়ালের মতো আচরণ করছে।
জুনিয়ররা সঙ্কোচ বোধ করছে দেখে নিখিল আর দাড়ায় না, সকল কে বিদায় জানিয়ে তারাহুরো করে যায়গা ত্যাগ করে।
নিখিল চলে যেতেই নীলিমা তেঁতিয়ে ওঠে,
— স্টুপিড একটা, এটাই শেষ সুযোগ ছিল, নিখিল ভাই নিজে এসেছিল, আর তুই কি করলি?? হাবলার মতো উত্তর, দক্ষিণ পূর্ব, পশ্চিম মাথা ঝাঁকিয়ে গেলি?
অরু জবাব দেয়না, এই মূহুর্তে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে, গলাটা নিম পাতার মতো তেঁতো হয়ে এসেছে। চারিদিক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। হয়তো প্রেশার ফল করেছে। কয়েকবার চোখের পলক ফেলে, অস্ফুটেই অরু বলে,
— ভাল্লাগছে না বাসায় যাবো, আমাকে একটা রিকশা ঠিক করে দে’না তিথি।
— চলে যাবি মানে এটেনডেন্সটা এটলিস্ট দিয়ে যা।
নীলিমার কথায় অরুর ভেতরের তেঁতো ভাবটা বেরিয়ে এলো, মাথাটা ঝাঁঝিয়ে উঠলো, অরু চটে গিয়ে বললো,
— বলেছি তো বাসায় যাবো।
***************************************
শরীর আর মনের একরাশ অসুখ নিয়ে টলতে টলতে ক্রীতিক কুঞ্জে এসে পৌঁছেছে অরু।
বিশাল সদরদরজা ঝনঝন আওয়াজ করে খুলে ভেতরে ঢুকতেই আরও বিরক্ত হয়ে যায় ও।
মামা, মামি আর একমাত্র মামাতো ভাই রেজওয়ান ওরফে রেজা এসেছে।
অরু আর অনুর জীবনের এতো এতো ঝামেলার মধ্যে উটকো ঝামেলা এই পরিবারটা। কথা নেই বার্তা নেই যখন তখন এসে হাজির।আসবে তো আসবে একটা না একটা ঝামেলা পাঁকিয়ে তারপর বিদেয় হবে।
আজমেরী শেখ যখন সুস্থ সবল ছিলেন তখন দিন রাত আগমন ঘটতো এদের, তিন বেলা ফ্রিতে রাজকীয় খাবার আর মহলের নরম গদিতে আরাম আয়েশ করে একটানা দশদিনও কাটিয়ে দিতো। বাড়ি যাওয়ার নাম গন্ধ পর্যন্ত নিতো না।
অরুর মামাতো ভাই রেজা এলাকার পাতি মা’স্তান, যার দরুন তার ছেলে পেলেদের ও নিয়ে আসতো একমাত্র ফুফুর আলীসান বাড়িতে।
অরু আর অনু এসবে বেশ লজ্জিত হতো যত যাই হোক তাদের তো এভাবে আরেকজনার অন্ন ধ্বংস করার কোনো অধিকার নেই। একমাত্র ভাই, ভাবী বলে আজমেরী শেখ তেমন কিছুই বলতেন না।
অনু,অরু একটু গাইগুই করলে ওদের কেও চোখ পাঁ’কাতেন আড়ালে।
সবকিছু এভাবেই চলছিল, কিন্তু আজমেরী হক একেবারে বিছানা সজ্জায় চলে গেলে মামা মামির আসল রূপ দেখতে পায় অরুরা।
আপন বোনকে দেখা তো দুরে থাক গত একবছরে হাসপাতালের গন্ডি অবধি মারায়নি ওদের মামা,
বরং দু’দিন পরপর বউ ছেলেকে নিয়ে এবাড়িতে এসে অনুকে মানসিক অশা’ন্তিতে ভুগিয়েছে দিনরাত। তাদের কথা একটাই,
— বাবা নেই, মায়েরও ও গ্যারান্টি নেই, আজবাদে কাল মায়ের কিছু হয়ে গেলে ওদের দু বোনের কি হবে? আজ বা কাল এ বাড়ির ছোট সাহেব ঠিকই ফিরবে, তখন তো দুই বোনের কোনো গতি থাকবে না, তাই এখনই যদি তার একমাত্র সুযোগ্যপুত্র রেজার সাথে অনুর বিয়েটা হয়ে যায় তাহলে একটা কুল তো হবে,আর যাই হোক নদীতে তো আর ভেসে যেতে হবে না।
অরু বুঝে পায়না এতোবড় দুনিয়া থাকতে ওরা নদীতে কেন ভেসে যাবে, কি অপ’রাধ ওদের?
অনুর রাগের ঘট এমনিই পরিপূর্ণ, এসব শুনলে আরও বেশি মাথা খারাপ হয়ে যায়, চে’চামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলে সে, বিপরীতে মামির গা জালানো কথাতো আছেই। এককথায় এরা বাড়িতে পা রাখা মানেই ঝামেলা আর অশা’ন্তি।
**************************************
অরু হলরুমের চারদিকে চোখ বুলায়, অনু কোথাও নেই,
— তারমানে আপা এখনো হসপিটালে যাক ভালোই হলো।
ওর মামি ডাইনিং এ বসে আঙুর চিবুচ্ছে, রেজা কাঁউচে বসে পায়ে পা তুলে টিভি দেখছে।মামা আপাতত আসেপাশে নেই।
অরু সবটাই দেখলো, তারপর না দেখার ভান করে দোতলায় পা বাড়ালো।
দুটো সিঁড়ি মারাতেই পেছন থেকে ডাক পরলো মামির,
— কিরে দেখলি আমরা এখানে বসে আছি তাও ঢ্যাং ঢ্যাং করে উপরে চলে যাচ্ছিস।মামিকে চোখে পরেনা নাকি? আর আমার বউমা কোথায়?
অরু চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো, এটারই ভয় পাচ্ছিলো ও। অনেক প্রশ্ন করেছে মামি, এক কথায় উত্তর দিতে হবে কি বলা যায়??
— অরু পেছনে ফিরে বললো,মাথা ব্যাথা করছে মামি, একটু ঘুমাবো, আর আপা হসপিটালে মায়ের কাছে।
— করে’নে, করে’নে, আরাম আয়েশ যা পারিস করে’নে, আজ বাদে কাল বাড়ির মালিক ফিরলে তোদের তো ঘা’র ধরে বের করে দেবে, অনুটাকে কতোবার বুঝিয়েছি এ কথা,কতোবার বলেছি আমার রেজার সাথে বিয়েটা দিয়ে দেই,কিন্তু মেয়েটা বড্ড বে’য়াদব হয়েছে,বড়দের মুখে মুখে ত’র্ক করে। বাবা মায়ের শাসন না থাকলে এই হয়।
মামির কথায় অরুর নেতিয়ে পরা রাগটা আবারও তরতর করে ঝাঁঝিয়ে উঠলো। তীক্ষ্ণ সু’চেঁর মতো কথা গুলো গিয়ে শরীরে বিধ’লো, ও পেছনে না ঘুরেই বললো, –তুমি যে নরম চেয়ারে বসে আঙুর চিবুচ্ছো, ওটাও কিন্তু এবাড়ির ছোট সাহেবের টাকা দিয়েই কেনা মামি।
তাছাড়া জামশেদ জায়ান চৌধুরীর অবর্তমানে আমার মা’ই কিন্তু জেকে গ্রুপের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান।
ওর কথায় একটা তাছ্যিল্যের হাসি খেলে গেলো অরুর মামির মুখে,মনে মনে বললেন, এইটুকুনি মেয়ে ভালোই খই ফুটেছে মুখে।তারপর শ’ত্রুকে পাল্টা তী’র নি’ক্ষেপ করার মতো করে বললেন,
— হতে পারে তোর মায়ের অধিকার আছে,কিন্তু তোদের দু’বোনের তো কোনো অধিকার নেই, তোরা হলি কচুরিপানা।তাছারা তোদের মায়ের আর কদিন, বড় জোর হলে ছয়মাস।
— মামি, অনেক বেশি বেশি বলে ফেলছো এবার, আমাদের মায়ের কিচ্ছু হবেনা।মাকে আমরা বিদেশে নিয়ে যাবো।
আবারও সেই গা জালানো হাসি ছুড়লেন অরুর মামি, বললেন,
–তোর কি মনে হয়?? জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী বা তার কোম্পানি তোদের নেওয়ার জন্য বসে আছে? শুনেছি তোর জন্যই নাকি বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল তাকে।
মামির সাথে আর ত’র্কে পেরে উঠলো না অরু, দুশ্চি’ন্তাগ্রস্থ জটলা পাকানো মস্তিস্কটা আর চাপ নিচে পারছে না, হাত পা থরথর করে কাঁপছে। এই মূহুর্তে গলা থেকে একটা কথাও বের হচ্ছে না, মামি যে এতো নোং’রা ভাবে ওকে আ’ক্র’মন করবে ভাবতে পারেনি অরু।
ও সামনের দিকে আরও একবার চোখ বোলালো কয়েকজোড়া আ’ক্রমণা”ত্নক চোখ। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই ওকে ভ’স্ম করে দেবে এরা। ওও আর এক মূহুর্তেওও হল রুমে দাড়ালো না সিরি ডিঙিয়ে দোতলায় নিজের রুমে গিয়ে সপাটে দরজা আটকে দিলো।
*****************************
ভেতরটা ছিঁ’ড়ে যাচ্ছে, অসহায়ত্ব চারিদিক জংলা আবরণের মতো ঘীরে ধরেছে। মামির তর্কের আ’ঘাতে নিখিল ভাই চলে যাওয়ার কষ্টটা যেন নুন ম’রিচের ছিঁ’টা।
আর ভালো লাগছে না, নীলিমা আর তিথির মতো জীবনটা সাভাবিক কেন হলো না ভাবছে অরু। কেন ওর জীবনে এতো দায়বদ্ধতা? কেন নিখিল ভাইয়ের প্রতি ভালো লাগাটা নিজের মাঝে খুব সহজে তুলে ধরতে পারলো না ও।?এটা কি শুধুই অন্তর্মুখী হওয়ার দরুন, নাকি পরিবারের টানাপোড়েন আর দায়বদ্ধতা।
নিখিলের চলে যাওয়া ভাবতে ভাবতে অরুর মনে পরে যায় নিখিলের সাথে প্রথম দিনের সাক্ষাৎের কথা,
এইতো কয়েকমাস আগের কথা,
ভার্সিটিতে এডমিশনের জন্য এসেছে অরু, মায়ের অসুস্থতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অতোবড় বিদ্যাপিঠে পড়ার সুযোগ হয়নি অরুর। মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়ে যতটুকু পেরেছে তাতেই গুচ্ছতে সুযোগ হয়েছে।
আজ কাগজ পত্র নিয়ে এসেছে সবটা জমা দিতে হবে তাই,
শীতের সকাল, ঠান্ডাটা পুরোপুরি জেঁকে না বসলেও মিষ্টি রোদের মৃদু আলোতে ভালোই আরাম লাগছে। সকাল হতেই অফিসগামী সারিসারি গাড়ির বহর ছুটেছে রাস্তা জুড়ে, ঢাকা শহরে বেড়ে ওঠা হলেও একাএকা রাস্তাঘাট পার হওয়ার অভ্যাস নেই অরুর। সেই দরুন তখন থেকে ভার্সিটির রাস্তার বিপরীতে অসহায়ের মতো দাড়িয়ে আছে সে। কখন রাস্তাটা একটু ফাঁকা হবে আর ও দৌড়ে রাস্তা পার হবে। অনেকে তো গাড়ির ফাঁক ফোকর দিয়েই চলে যাচ্ছে কিন্তু অরুর সাহস হচ্ছে না। এক পা এগোচ্ছে তো দু পা পিছাচ্ছে।
এভাবেই লেফ্ট রাইট চলতে থাকলো প্রায় আধঘন্টা, অরু বিরক্ত হয়ে গিয়েছে। এরকম হলে প্রতিদিন ভার্সিটিতে আসবে কি করে সে??
–ভয় লাগছে??
পেছন থেকে তী’রের ফলার মতো ছুটে আসা পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে হকচকিয়ে পেছনে ঘুরলো অরু। দেখলো মুখে টোল পরা স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে ওকেই প্রশ্ন করেছে লোকটা।
অরু থ মেরে আছে, হা না কিছুই বলছে না, কি করে বলবে ও তো হাসিতেই কুপোকাত।
লোকটা পাশ থেকে কাউকে ডেকে উঠল,
–এই অন্তু ওকে রাস্তাটা পার করে দে’তো।
পেছন থেকে ছেলেটা বললো,
— জ্বি ভাই দিচ্ছি।
ব্যাস তখনই ছিল ভালোলাগার শুরু।অরু বুঝেছিল এই লোকের ভার্সিটিতে বিশাল জনপ্রিয়তা।
তারপর থেকে শুরু হয় অরুর লুকিয়ে লুকিয়ে পর্যবেক্ষন, উদাসীন দুপুরে, কিংবা ম’রচে যাওয়া বিকালে ক্যাম্পাসের এথায় সেথায় তাকেই খুজে বেড়াতো চোখ দুটো। এক নজর দেখা হয়ে গেলে খুশিতে পুলকিত হতো মনটা, ঝিলিক দিয়ে উঠলো মুখের কোনে মিষ্টি হাসি।যা এখনো চলমান……
কখনো সামনে দাড়িয়ে কথা বলা হয়নি,অরু এও জানেনা নিখিল তার নামটা জানলো কি করে? তবে নিখিলের বায়োডাটা সবই অরুর জানা বলতে গেলে মুখস্থ।
কিন্তু আপসোস এখন এসব কোনো কাজেই আসবে না, নিখিল ভাই চলে যাবে, হাজার কিলোমিটার দুরে হবে তার ঠাঁই, সাইন্সল্যাবের ক্যা’মিক্যাল আর এক্সপেরিমেন্টের মাঝে অরোরা নামটাই হয়তো ভুলে যাবে ওর সবচেয়ে প্রিয় নিখিল ভাই আর কখনো দেখা হবে কিনা তারও গ্যারান্টি নেই। ভাবতেই চোখের কার্নিশ বেয়ে তপ্ত নোনা জল গড়িয়ে পরে অরুর।
“তুমি যদি আমার না হও, তবে সুখের অসুখ তোমাকে জ্বা’লিয়ে পু:ড়িয়ে ছা’রখার করে দিক”
বোকা অরু তখনও জানতো না ওর জন্য কেউ এর থেকেও বি’ষা’ক্ত ভালোবাসা নিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
*******************************
চলবে…….
#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি
#পর্ব_৩
#লেখনীতে_suraiya rafa
.শুধু মাত্র প্রাপ্ত মনস্কদের জন্য।
.
রাস্তার দু’ধারে সারিসারি ম্যাপল গাছের বহর।বসন্ত হওয়ার দরুন টুপটাপ বৃষ্টি কনার ন্যায় গায়ে এসে একটু একটু বাসন্তিক ছোয়া লাগিয়ে উড়ে গিয়ে নিঃশব্দে পিচঢালা তকতকে রাস্তায় লুটিয়ে পরছে হলুদ কমলা রঙের ম্যাপল লিফ।
এমন দৃশ্য দেখতেই যেন প্রশান্তি খেলে যায় চোখে।আর ফরেইন কান্ট্রি থেকে এলেতো কথায়ই নেই,নিরব শুনশান রাস্তার ধারে ফাঁকা বেঞ্চিতে বসে বসন্ত বিকেলের একটু খানি সৌন্দর্য্য দেখে দেখেই পুরো যুগ পার করে দেওয়ার মতোই সস্থিতে দুচোখ ভরে ওঠে।
তবে এই মূহুর্তে রাস্তার দুই সাইডে দাড়িয়ে থাকা লোক সমাগমের কারোরই ম্যাপল লিফের সৌন্দয্য বিশ্লেষনে আগ্রহ নেই। বরং সুন্দর টকটকে ম্যাপল গাছের ফাঁক ফোকরে উচ্ছ্বাসিত জনতার ভীর যেন উপচে পড়ছে। তারা অন্যকিছু দেখার জন্য অধীর আগ্রহে সামনের রাস্তায় তাকিয়ে হাত নেড়ে যাচ্ছে নির্বিগ্নে সেই সাথে তাদের প্রবল উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে একই সুরে হইহই করে ওঠা প্রতিধ্বনিতে।ছেলে, বুড়ো যুবক যুবতী সবাই তাতে সামিল। দেখে মনে হচ্ছে তারা কোন পারফর্ম কিংবা প্রতিযোগিতা দেখার জন্য জমায়েত হয়েছে। শুধু যে এইটুকুনি যায়গা ধরে মানুষের ভীর এমনটা নয়, লোকালয় ছাড়িয়ে সানফ্রান্সিসকো শহরের গোল্ডেন গেইট ব্রীজ পেরিয়ে প্রশান্ত মহাসাগর আর পাহাড়ের মধ্যবর্তী সরু আঁকাবাঁকা রাস্তাটা যতদূর অবধি চোখে পরে,ঠিক ততোদূর পর্যন্তই উচ্ছ্বসিত মানুষের সমাগম।
সায়নী সিওর এই রাস্তা ক্যালিফোর্নিয়া অবধি চলে গিয়েছে।
মানুষের এতো আগ্রহ আর হইচই দেখে একটু কৌতুহল নিয়েই সামনে রাস্তায় ওদের দিকে এগিয়ে গেলো সায়নী।
ঠিক তখনই, হুট করে একদম হুট করেই বেশ কয়েকটা বাইক ভোঁ ভোঁ আওয়াজ করে তরিৎ গতিতে রাস্তা অতিক্রম করে চলে গেলো। বাইক গুলো এতোই তারাতারি চলে গিয়েছে যে সায়নি চোখে পলক ফেলা’র সময়টুকু অবধি পেলোনা।
বাইক গুলো রাস্তা ক্রস করতেই সবাই জেকে জেকে বলে চেঁচিয়ে উঠলো। সবার চিয়ারআপ আর উচ্ছ্বাস দেখে সায়নি বোধ করলো এখানে বাইক রাইডিং কম্পিটিশন হচ্ছে। কিন্তু এরকম ঠান্ডা আবহাওয়ায় পাহাড়ি রাস্তায় কিকরে এতো দ্রুত রাইড করছে এরা?? ভয় ডর নেই নাকি?? এগুলো দেখে আবার মানুষ আনন্দে নাচানাচি করছে,যেমন এরা তেমন এদের বিনোদন স্টুপিড আমেরিকান,ঠোঁট উল্টে মনেমনেই মেজাজ খারাপের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় সায়নী।
ও চলেই যাচ্ছিল তখন আবারও দ্বিতীয় বারের মতো হাওয়ার গতিতে ছুটে আসা বাইক গুলো রাস্তা ক্রস করে চলে যায়, তৎক্ষনাৎ সবার মুখে মুখে আবারও সেই জেকে নামের হিরিক পরে যায়।
— আচ্ছা জেকে কে??
কৌতূহলী মস্তিস্কে প্রশ্নটা আসতেই হাটার গতি থামিয়ে দিলো ও দাড়িয়ে থাকলো এই ভ’য়া’নক বাইক রেচিং শেষ হবার অপেক্ষায়।
টানা তিনবার একই ভাবে রাইড শেষে চারবারের সময় শেষ হলো কম্পিটিশন। পরপর সাতটা বাইক এসে একই যায়গায় থামলো। সায়নী জানে সবার আগে যে(kTM 390 adventure) বাইকটা পৌঁছেছে ওটাই জেকে রাইড করেছে।
কারন চারদিক থেকে ভেসে আসা জেকে নামের জয়জয়কার আর আনন্দ উচ্ছ্বাসই তার জানান দিয়ে যাচ্ছে।
তবে জেকে নামক লোকটা একটু অন্যরকম এতোএতো চিয়ারআপেও কোনোরূপ হেলদোল নেই তার, খুবই সাভাবিক মুখভঙ্গি,চ্যাম্পিয়ন হয়েও খুশির লেসমাত্র নেই তার মুখে। অথচ রানার আপ হওয়া বাইকারটা খুশিতে ফেটে যাচ্ছে। সেই খুশি তার মুখে চোখে জোয়ারের জলের ন্যায় উপচে পরছে।
জেকে হেলমেট খুলে উরুর উপরে সেটাকে সটান বসিয়ে দেয়, হেলমেট খুলতেই বেরিয়ে আসে তার স্টাইলিস ঘাড় ছুঁইছুঁই লম্বা চুল গুলো।ঘার অবধি চুলে তাকে জেন্টেলম্যান লাগছে না মোটেই বরং স্টাইলিস্ট সুপারস্টার বললে হয়তো মানানসই হবে বাক্যটা। মনে হচ্ছে ব্র্যান্ড নিউ বাইকের কয়েকদফা শ্যুট করে মাত্রই থেমেছে সে ।
ডানহাত দিয়ে বেখেয়ালে চুলগুলোকে ব্যাকব্রাশ করতে করতেই অন্য হাতে পরে থাকা অ্যাপেল ওয়াচটায় একনজর চোখ বুলিয়ে নিয়ে আবারও হেলমেটটা পরে নিলো সে।
ওদিকে চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার বিতরণের জন্য স্টেজে তাকে বারবার ডাকা হচ্ছে। জেকে হেলমেট পরেই সেদিকে একবার চাইলো। আশ্চর্য্য সবাই ডাকছে তবুও কেমন বেখেয়ালি ভঙ্গিমা তার, শেষমেশ কতৃপক্ষের একজন তারকাছে এগিয়ে আসতেই জেকে বলে,
–ওয়েট আ মিনিট।
তারপর কাউকে কল করতেই কয়েক মিনিটের মধ্যে একটা কালো গাড়ি এসে থামলো ওখানে,
গাড়ি থেকে ফর্মাল ড্রেসকোর্ট পরিহিত একজন নামতেই, জেকে লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–লুক হি ইজ মাই এসিসট্যান্ড প্রত্যয় এহসান, গিভ হিম দা প্রাইজ মানি।
লোকটা বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকায়,
–আর ইউ কিডিং মি?
–নো আ’ম সিরিয়াস।
–দেন হোয়াই আর ইউ এটেন্ড দা গেইম?এন্ড রি’স্ক ইউর লাইফ?লোকটার কথায় বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।
জেকে তীর্যক হাসলো, কাঁধ দুটো সামান্য উপরে তুলে ভাবলেশহীন মুখে বললো,
— ইউ নো?রাইডিং ইজ থ্রি’লিং অলসো ডে’ঞ্জা’রাস। এন্ড আই লাভ ডে’ঞ্জা’র আ লট।
শান্ত এবং স্থীর কন্ঠস্বর, তবে শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দেবার মতোই ভ’য়া’নক কথার টোন।
শেষ কথাটা বলে,চোখে বিশালাকৃতির রোদচশমা চড়িয়ে, শাঁই শাঁই করে নিজের( kTM 390) বাইক নিয়ে পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে মূহুর্তেই হারিয়ে গেলো জেকে। সবার দৃষ্টি এখনো সেদিকেই স্থীর। কতৃপক্ষের লোকটা বিরক্ত হলো,তবে চটে গেলোনা, এই ছেলে প্রতি বছর একটা না ঝামেলা পাঁকাবেই এটা তার বোধগম্য হয়ে গিয়েছে এতোদিনে, হয় কোনো প্রতিদন্দ্বিকে ইচ্ছে মতো পে’টাবে, নয়তো রাইডিং এর মাঝ পথেই বাইক ঘুড়িয়ে নিয়ে চলে যাবে, আর না হলে প্রাইস গিভিং এ এসে ঝামেলা পাঁকাবে।
শুধু পপুলারিটির আর অডিয়েন্সের ডিমান্ডেই সারা বছর ঘুরে ঘুরে রাজি করানো হয় তাকে, নয়তো এমন আধপাগ’ল, র’গচটা ছেলেকে জীবনেও কম্পিটিশনে আনতেন না তিনি। বাপের বয়সই হোক কিংবা দাদার কারও কথার দু পয়সা সম্মান পর্যন্ত দেয়না এই ছেলে।
–সাচ আ সাই’কোপ্যাথ। বিরবিরিয়ে কথাটা বলে থমথমে মুখ নিয়ে নিজ স্থানে ফিরে গেলো লোকটা।
–এটিটিউড, এপেয়ারেন্স, গুড লুক এভরিথিং ইজ সো ম্যানলি। মুগ্ধ নয়নে ফাঁকা রাস্তার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো এক বিদেশিনী।
সায়নীর পাশেই মেয়েটা দাঁড়ানো।
ও মেয়েটার মুগ্ধতা দেখে একটু যেচেই জিজ্ঞেস করলো,
–হু ইজ হি?
মেয়েটা নে’শা লাগানো চোখে বললো,
— হি ইজ জেকে, দা চ্যাম্পিয়ন।
সায়নী মাছি তাড়ানোর মতো করে বললো,
–আই নো দ্যাট বাট….
সায়নীর কথাটা শেষ করতে হলো না, তার আগেই বিদেশিনী ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলে,
–ওহ হি ইজ ওয়াসিপ ঝায়ান খ্রিতিক। হি ইজ আ ভেরি গুড রাইডার।
বিদেশিনীর আধও আধও বাংলা শুনে সায়নী মুঁচকি হাসে, তারপর পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
–হি লুকস ডিফরেন্ট।
বিদেশিনী ভ্রু কুঁচকায়।
সায়নী মনে মনে ভাবে, লোকটা দেখতে একেবারেই অন্যরকম, টকেটকে গৌড় বর্ন, শরীরের গঠন, চেহারা সব কিছুতে ব্রিটিশদের ছাপ স্পষ্ট,অথচ গোল ভাসমান কালো মনি যুক্ত চোখদুটো দেখলে যে কেউ বলবে এশিয়ান কোনো দেশের, কোনো এক সম্ভ্রান্ত গোত্রের উত্তরাধিকার সে, এটলিস্ট এটিটিউড তো তাই বলে।
বিদেশিনী এখনও তার ধূসর চোখে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে, সায়নী মেকি হেসে বলে নাথিং নাথিং, আই জাস্ট সে, হি ইজ সো হ্যান্ডসাম।
–ইয়াহ লুক লাইক আ হলিউড হিরো।
বাই’দা ওয়ে হটস ইওর নেম?
বিদেশিনী সম্মোহনী হাসি দিয়ে জানায়,
— ক্যাথলিন ক্রিসটিয়ান। ইওর?
–আ’ম সায়নী মুখার্জি।
— ওহ আর ইউ ফরেইনার?
— ইয়াহ আ’ম ফ্রম ইন্ডিয়া।
তারপর নিজেদের মধ্যে আরও কিছু কুশল বিনিময় হয় ওদের। এক পর্যায়ে সায়নী জানতে পারে ক্যাথলিন জেকে কে মোটামুটি পার্সোনালি চেনে। আর জেকে আসলে ব্রিটিশ ফ্রিটিশ কিছু নয়,বরং আমেরিকান সিটিজেন ধারী আদ্যপান্ত বাঙালি পুরুষ। তাহলে এই ছেলের চেহারায় এতোটা ভীনদেশী ছাপ কেন? প্রশ্নটা থেকেই গেলো সায়নীর কৌতুহলী মনে।
*************************************
টানা দু’দিন হতে চললো মামিরা বিদেয় হয়েছে। অরু জানতো অনু বাড়িতে ফিরলেই ঝামেলা শুরু হবে, আর হয়েছেও সেটাই।
মামির গা জালানো কথা অরু চুপচাপ মেনে নিলেও অনু খালি মুখে সহ্য করতে পারে না মোটেই, কারন আর যাই হোক মাকে হাসপাতালের এক কামরার বেডে শুয়িয়ে রেখে তার পক্ষে বিয়ের পিঁড়িতে বসা সম্ভব নয়, রেজার মতো পাতি মা’স্তানের সাথে তো নয়ই।
মামিকে এসব মুখের উপর বলে দেওয়া মানে ভ’য়াব’হ ঝড়ের পূর্বাভাস, আর তাই হলো কথায় কথায় গমগমে হয়ে উঠলো পুরো মহল,একপর্যায়ে কথাকা’টাকা’টি থেকে শুরু হয়ে গেলো বিশাল ত’র্ক ।
অনুর মেজাজ সর্বক্ষনই তুঙ্গে থাকে, এই মূহুর্তে মামির কথার আ’ঘাত তার মধ্যে চরম বিরক্তি আর উত্তেজনার সৃষ্টি করলো, শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পরলো অযাচিত ক্ষো’ভ আর রাগ, রাগের মাথায় হলরুমের কাঁচের জিনিস গুলো একটা একটা করে আঁ’ছার মেরে ভা’ঙতে লাগলো সে।
হলরুমে ঝনঝন করে কাঁচ ভা’ঙার আওয়াজ শুনে অরু নিজের কা’ন্নাকাটিতে লাগাম টেনে বাইরে বেরিয়ে এলো,দেখলো তার ভদ্র,শান্ত, আর নরম মনের আপার সবচেয়ে ক্ষু’ব্ধ রূপ।
ওর এমন রাগ দেখে মামি যে খানিকটা ভরকে যায়নি এমন নয়, তবে সেও দমে যাওয়ার পাত্রি নন,তার ক্ষি’প্ত মুখশ্রী দেখে মনে হচ্ছে এর শেষ দেখেই ছারবেন তিনি।
অবশেষে পরিস্থিতি সামাল দিতে, রেজা নিজের মাকে নিয়ে তৎক্ষনাৎ ক্রীতিক কুঞ্জ থেকে বিদায় নেয়।
–আর কখনো আসবেনা তোমরা…
ওরা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনু গিয়ে ঝনাৎ করে মহলের সদর দরজা আটকে দেয়,তারপর নিজের রুমে ঢুকে কক্ষ বন্ধী করে নয় নিজেকেও।
অরু দৌড়ে যায় বোনকে আটকানোর জন্য, তবে সেটা বড্ড দেরি হয়ে যায়, তার আগেই সপাটে দরজার খিল আটকে দেয় অনু।
অরু জানে তার আপা আজ রুম থেকে বের হবে না, অরু ডাকতে ডাকতে বেহুশ হয়ে গেলেও না। তবু ও কিছুক্ষন ধরে ডাকাডাকি করে ক্ষান্ত হয়ে ফিরে যায় অরু।সে রাতে দু বোনের কারোরই আর খাওয়া হলো না।
পরেরদিন সকালে নিজ হাতে নাস্তা,মায়ের জন্য স্যুপ সব কিছু বানিয়ে অরু আবারও কড়া নারলো অনুর দরজায়।
এবার অনু দরজা খুললো, পড়নে স্যুতি চুড়িদার হাতে টোটে ব্যাগ, লম্বা চুল গুলোতে এটে আছে সুন্দর ফ্রেন্স বেনি। দেখেই বোঝা যাচ্ছে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য একেবারে তৈরি হয়েই বেরিয়েছে সে।
আপাকে পরিপাটি হয়ে বেরোতে দেখে বিমূর্ষ চোখ দুটো খুশিতে টইটুম্বুর হলো অরুর।
অনুকে প্রশ্ন করার কোনো অবকাশ না দিয়েই অরু একেরপর এক বলতে লাগলো,
–টেবিলে নাস্তা রেডি, মায়ের স্যুপ হটপটে ভরে রেখেছি, আর ইমেইল ওও পাঠিয়ে দিয়েছি।
চল একসাথে খাবো,
কথা শেষ করে অরু সামনে হাঁটা ধরতেই, ওর হাত টেনে ধরে ওকে বুকে জড়িয়ে ন্যায় অনু। আপার রাগ কমেছে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে, খুশিতে পুলকিত হয়ে শক্ত হাতে বোনের গলা জড়িয়ে ধরে অরু নিজেও।
— আপা তুই কেন বদলে গেলি বলতো, কাল তোর রা’গ দেখে আমি নিজেও ভ’য় পেয়ে গিয়েছিলাম।
অনু ঠোঁট টিপে মুচকি হাসে, তারপর বলে,
— বিশ্বাস কর আমি একটুও বদলাইনি,স্বজন রূপী কাল সা”প গুলোকে বের করার জন্যই একটু বেশিবেশি করেছি, নইলে কতদিন পরে পরে আমাদের মাথা খেতো কে জানে??
— তোর কি বুদ্ধি আপা,জিনিয়াস।
অনু আবারও হেসে বলে, হয়েছে, কাল থেকে কিছুই খাইনি,চল নাস্তা খাবো, নয়তো মায়ের কাছে যেতে লেট হয়ে যাবে।
অরু আনমনে বলে,
–আমার আপার হাসি সব চেয়ে সুন্দর নিখিল ভাইয়ের চেয়েও।
************************
নিখিল ভাই, নামটা মস্তিস্কে গিয়ে ঠেকতেই দুদিন আগের ভাবনার ইতিটানে অরু। সকালে ঘুম থেকে উঠে ইমেইল পাঠাতে গিয়েই সেদিনের কথা গুলো ভাবছিল ও,তারপর সেদিন সকাল থেকে বিকেল অবধি ঘটে যাওয়া কুৎ’সিত ঘটনা গুলো একেএকে হানা দেয় আনমনা মস্তিষ্কে।
আজ শুক্রবার আপা একটু দেরি করেই হাসপাতালে যাবে আজ, অরু রাতেই বলে রেখেছিল যে সেও মাকে দেখতে যাবে। তাই খুব সকালে উঠেই ইমেইলের কাজ সেরে ফেলছে ও।
তারপর একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে যখন মোবাইল হাতে নিলো দেখলো নিলীমার অনেকগুলো মিসডকল ভাসছে।
–নিলীমা কল দিয়েছে, তারমানে ইম্পরট্যান্ট কিছুই হবে, কিন্তু কি??
অজানা অনেক প্রশ্নে আবারও মাথাটা ধরে এলো অরুর,কিন্তু ও এতো ভাবতে চায়না,তাই তারাহুরো করে নিলীমাকে কল ব্যাক করলো।
একবার রিং হয়েছে কি হয়নি,তারমধ্যেই নিলীমা কল তুললো।
— কি হয়েছে নিলীমা, এতো গুলো কল দিলি তুই ঠিক আছিস?
— আমি ঠিকই আছি, তুই ঠিক আছিস কিনা সেটা বল, আচ্ছা তুই এমন কেন? দিন দুনিয়া ভুলে হিমালয় পর্বতের সন্ন্যাসীনি হয়ে যাস, নাকি মহাসমুদ্রে ডুব দিস কোনটা বল আমাকে?
— কি অদ্ভুত প্রশ্ন নীলিমা,আমি কেন এসব করতে যাবো? শোন আমার বিয়ে করে সংসার করার বহুত শখ সন্ন্যাসী টন্ন্যাসী এসব কথা ভুলেও বলবি না।
— তাহলে ফোন কেন তুলিস নাআআআ।বিরক্তিতে চিৎকার দিয়ে উঠলো নিলীমা।
— আহ আস্তে বল কানে লাগছে তো, আর ফোন সাইলেন্ট মুডে ছিল।
— তাহলে তুই কেন বসে আছিস এখনো? তুই ও সাইলেন্ট মুডে চলে যা, আর তোর শখের নিখিল ভাই আমেরিকা গিয়ে কোন এক সাদাচামড়ার মেয়েকে বিয়ে করে সুখে ঘর সংসার করুক।
–কি হয়েছে নিলীমা?
অরুর কন্ঠে দৃঢ়তা আর সচকিত ভাবটা স্পষ্ট।
–নিখিল ভাই আজই চলে যাচ্ছে, এতোক্ষণে হয়তো এয়ারপোর্টের কাছাকাছি চলেও গিয়েছে, এটাই তোর শেষ সুযোগ অরু, আমি আর তিথি মেইন রাস্তায় সিএনজি তে ওয়েট করছি তারাতারি চলে আয়, নয়তো এ জীবনে আর নিখিল ভাইকে দেখতে পাবি না তুই।
নিখিল ভাইয়ের সাথে আর দেখা হবেনা, টোল পরা মন ভুলানো হাসিতে মাতোয়ারা হবেনা হৃদয়টা, নিখিল ভাইকে ছাড়া ক্যাম্পাসটাই তো ম”রে যাবে, হৃদয়টা হাড়হীম করা ব্যাথায় শক্ত হয়ে এসেছে অরুর, এবার আর অজান্তে নয়, জেনে শুনেই ফু্ঁ’পিয়ে কেঁ’দে উঠলো ও। মোবাইলের নেটওয়ার্ক ছাপিয়ে সেই ফোঁ’পানোর আওয়াজ গিয়ে পৌঁছালো নিলীমার কানেও।
— দ্রুত চলে আয়, শেষ বারের মতো দেখা হয়েও যেতে পারে,নিঃসংকোচে কথাটা বলে কল রেখে দিলো নিলীমা।
নিলীমার শেষ কথাটা কর্নকূহরে পৌছাতেই অরু আর কা’ন্নাকা’টি করে সময় নস্ট করলো না, টেবিল থেকে পার্সটা ছো মেরে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
নিখিল ভাই চলে যাচ্ছে যাক, কিন্তু মনের কথাটা তো একটাবার শুনে যাক, নিজের একপাক্ষিক ভালোবাসার কোন প্রতিদান চায়না অরু,শুধু শেষবারের মতো মুখ ফুটে বলতে চায়, দিনের পর দিন নিজের মন গহীনে বোনা মাকড়শার জালের ন্যায় ঠুনকো সপ্ন গুলোর কথা।
এই মূহুর্তে অরুর অষ্টাদশী মন বলছে তাকে মন গহীনের সুপ্ত ভালোলাগার কথা না জানালে জীবনটাই বৃথা।
অনু কেবলই খাবার দাবার হটপটে ভরে রেডি হয়ে নেমেছে, তখনই দেখতে পায় হনহন করে কোথাও বেরিয়ে যাচ্ছে অরু।
–কিরে কোথায় যাচ্ছিস, হাসপাতালে যাবিনা?
অরু জবাব দেয়না, এক প্রকার ছুটে বেরিয়ে যায় বাগানবিলাসে ঘেরা ক্রীতিক কুঞ্জ থেকে।
অনুর অযাচিত মন আনমনে বলে,
–ইমেইলটা পাঠালো কিনা কে যানে? চেক করে দেখতে হবে।
**********************************
মানুষ জীবনে আশা নিয়ে বাঁচে, আশা বিহীন এই উত্থান পতনের জীবনে বেঁচে থাকা দূ’রহ বৈকি আর কিছুই না। সবাই দিন শেষে ভাবে নতুন প্রহর তার জন্য নতুন সুখ বয়ে আনবে। কিন্তু কখনো কখনো সেই নতুন প্রহর আসতে বড্ড দেরি হয়ে যায়, সেই সাথে হারিয়ে যায় সুখের আশাটুকুও। এখন এই মূহুর্তে দাড়িয়ে অরুর সুখের আশা’টাও হারিয়ে গিয়েছে,নীলাম্বর আকাশের কোন একফালি শুভ্র মেঘের আড়ালে।খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে কাঁ’দছে অরু। হৃদয়টা এবার সত্যি সত্যি ফাঁকা লাগছে, নিখিল ভাইয়ের সাথে শেষ দেখাটা হলোনা আর। এয়ার্পোটের সামনে এমন কা’ন্নারত মেয়েটাকে দেখে অনেকেই কিংকর্তব্যবিমূঢ়।আবার অনেকেই ভাবছে হয়তো কাছের কেউ দূরদেশে পারি জমিয়েছে সেই দুঃখেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। তাতে অবশ্য অরুর যায় আসেনা,আপাতত হিতাহিত জ্ঞানশূন্য ওর মস্তিষ্ক। ও উড়ন্ত প্লেনের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
–আমি আপনাকে ঠিক খুঁজে বের করবো নিখিল ভাই, আপনার আমার আবারও দেখা হবে, আমি ইউ এস এ যাবো,আপনার জন্য হলেও যাবো, ওই জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী না নিলেও যাবো।
–হয়েছে অরু থাম এবার।
তিথি ওকে থামাতে ব্যাস্ত, কে জানতো অরুর মতো চুপচাপ সভাবের মেয়েটা এভাবে কেঁ’দে কে’টে দুনিয়া ভাসাবে, তাহলে হয়তো ওরা এই প্ল্যান কোনোকালেই করতো না।
আবারও একই নাম ক্রীতিক জায়ান চৌধুরী। নিলীমা বুঝতে পারেনা ব্যাপারটা, তাই সচকিত হয়ে প্রশ্ন ছু’ড়ে,
— আচ্ছা অরু তুইতো শেখ, তাহলে তোর ভাইয়া চৌধুরী কেন??
অরু কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে বলে,
–ওই বদমা’শ লোকটা আমার ভাইয়া না, ইভেন কিছুই না আমাদের।
–তাহলে, তাকে কেন ইমেইল পাঠাস প্রতিদিন?
— তাকে পাঠাইনা তো, জেকে গ্রুপের হেড অফিসে পাঠাই, মায়ের অসু’স্থতা জানানোর জন্য, শুধু মাত্র জায়ান ক্রীতিকের এপ্রোভালের জন্যই সবটা আটকে আছে যে।আবারও কা’ন্নায় ভিজে আসে অরুর দু-চোখ।
— তাহলে কে সে??
— আমরা একটা অমিমাংশিত সম্পর্কে আটকে আছি নিলীমা, আমার যখন আট বছর বয়স তখন মায়ের সাথে ক্রীতিক কুঞ্জে প্রথম পা রাখি আমরা দু বোন।তখন ওনার বয়স কতইবা হবে বিশ বছর।উনি আমার থেকে প্রায় বারো বছরের বড়। আমার মা, জায়ান ক্রীতিকের বাবা মানে জামশেদ জায়ানের দ্বিতীয় স্ত্রী।
শুনেছি ওনার দাদাসাহেব জোর করে ওই বয়সে দ্বিতীয় বার বিয়ে করিয়েছিলেন ওনার বাবাকে কোন এক কারনবশত।
তিথি আর নিলীমা একই সুরে বলে,
— তার মানে তোদের সাথে ওনার র’ক্তের কোন সম্পর্ক নেই??
অরু এদিক ওদিক না সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে
–না নেই, তবে ওনার বাবার অবর্তমানে আমার মা’ই জেকে গ্রুপের চেয়ারম্যান।
তিথি বললো,
— আচ্ছা অরু উনি দেশে আসেন না।আই মিন বাড়িটা তো ওনার।
অরু না সূচক মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো,
— গত আট বছর ধরে আসেনি, বছর তিনেক আগে যখন ওনার বাবা মা’রা গেলেন তখন নাকি এসেছিলেন, তবে বাড়িতে প্রবেশ করেননি, বাইরে থেকেই দাফন কাফনের কাজ সেরে সেদিনের ফ্লাইটেই চলে গিয়েছেন।
তিথি ঠোঁট উল্টে বললো,
— বুঝেছি তোদের উনি একটুও পছন্দ করেননা, সেই জন্যই তো নিজের বাড়িতে পর্যন্ত আসেননা।যতই হোক তোরা হলি ওনার সৎ মায়ের আগের পক্ষ।
অরু ঠোঁট উল্টে বললো,
–কি জানি।
তখনই হঠাৎ করে মোবাইল স্ক্রীনে অনুর নাম্বার ভেসে ওঠে।
সচকিত হয়ে ওঠে অরু, সেই সাথে অকস্মাৎ ভেঙে যায় অবচেতন মস্তিস্কের ধ্যান। আসপাশটা অবলোকন করে বুঝতে পারে ও কত বড় বোকামি করেছে, গভীর থেকে গভীরতর গোপনীয় কথাটা তরতর করে সাজিয়ে গুছিয়ে বান্ধবীদেরকে বলে দিয়েছে। এবার তো তিথি আর নিলীমাও ওকে কচুরিপানা অথবা পরগাছা উপাধি দেবে।
–আচ্ছা তাহলে তোর বাবা কোথায়??
অরু আর জবাব দেয়না,বরং আড়ালে শুষ্ক ঢোক গেলে,
— আপা কল করছে আমি আসি। এই বলে দ্রুত প্রস্থান করে অরু।
তিথি আর নিলীমা পেছন থেকে উদগ্রীব হয়ে বলে, আরে আরে এভাবে টলতে টলতে কই যাচ্ছিস পরে যাবিতো।
অরুর তাতে ধ্যান নেই, ওও যতদ্রুত সম্ভব ওদের চোখের আড়াল হতে চায়।
******************************
একরাশ ভারাক্রা’ন্ত মন আর নিজের করা বোকামিতে বিরক্ত হয়ে দ্রুত বাড়ি ফেরে অরু।
সদর দরজা পার হতেই অনুর হাতের শক্ত চপ’টা’ঘা’তে আবারও বিশ্বয়ে বিমূঢ় হয়ে ওঠে ওর মুখশ্রী। মনে মনে একটাই প্রশ্ন আওরায় নিজেকে
–কি করেছি আমি? আমার উপরেই কেন পৃথিবীর সবার এতো রা’গ??
চলবে…..