#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি 🍁🍁
#পর্বঃ৪১_প্রথমাংশ
#লেখনীতে_suraiya_rafa
[ক,পি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[কঠোর ভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য ]
সন্ধ্যা রাতের মিটিমিটি শুক তারা ঢাকা পরেছে মেঘের আড়ালে। চাঁদের ও একই অবস্থা, পেঁজা তুলোর মতোন নরম শুভ্র মেঘের আড়ালে বারবার লুকিয়ে পরছে সে। মেঘের এই লুকোচুরি খেলায় পুরো রাস্তা জুড়ে কোমল আলো ছাঁয়া বিরাজ করছে।
একনজরে দেখলে মনে হবে কেউ অবিন্যস্ত হাতে শিউলি ফুল ছড়িয়ে রেখেছে পুরো রাস্তার আনাচে-কানাচে। গলির মোড় থেকে সেই শিউলি ফুলের রাস্তা দ্রুত পায়ে মাড়িয়ে মাত্রই ক্রীতিক কুঞ্জে প্রবেশ করলো নীলিমা।
ওর পরনে কালো পাড়ের খয়েরী তাঁতের শাড়ি। শাড়ি পড়ার খুব একটা অভ্যেস নেই নীলিমার। ওই জন্যই বারবার মনে হচ্ছে খুলে খুলে যাচ্ছে। একদিক থেকে চুল সামলাচ্ছে তো একদিকে শাড়ি।আলগোছে কুঁচি সামলাতে সামলাতেই মহলে প্রবেশ করে নীলিমা।
ঠিক সেই মূহুর্তেই আচমকা ক্যামেরার ফ্ল্যাশে ঝিল ধরে উঠলো ওর দু’চোখ। হঠাৎ আলোক রশ্মির তীক্ষ্ণতা সামলাতে না পেরে নীলিমা চোখ মুখ কুঁচকে দাড়িয়ে পরলো তৎক্ষনাৎ।
ওদিকে নীলিমা দাঁড়িয়ে পরতেই চোখের সামনে এসে কেউ একজন আপসোসের সুরে বললো,
—- গেলো, গেলো, রাগিণীর রাগে ক্যামেরাটা ঝ’লসে গেলো।
এতোক্ষণে নীলিমা বেশ সামলেছে নিজেকে, সামলাতে গিয়ে সামনের ব্যক্তির কথা কর্ণকূহরে পৌঁছাতেই তরাগ করে চোখ খুলে নিলো ও, চোখ খোলা মাত্রই সেদিনের সেই বাঁ’দরটাকে আবারও দেখতে পেয়ে দাঁত খিঁচিয়ে ও বললো,
—– আজকেও আপনি? সত্যি করে বলুন তো এই বাড়িতে ঘুরঘুর করেন কেন? ধা’ন্দাটা কি?
সায়র নীলিমার কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো,
—– এইংগেজমেন্ট খাওয়া দাওয়া সব শেষ, এখন কি সবার ফেলে রাখা ঝুটাঝাটা খেতে এসেছো নাকি?
লোকটার কথায় মেজাজ চড়াও হয়ে গেলো নীলিমার, ও কটমটিয়ে বললো,
—- দরকার পরলে তাই খাবো, তবুও আপনার মতো অমন চিকন আলী হবোনা। ফটোগ্রাফার ওয়ালা, ফটোগ্রাফার ওয়ালার মতোন থাকুন, যান গিয়ে ওদিকে ডেকোরেশনের ছবি তুলুন।
নীলিমা কথার পাছে, সায়র ভাব নিয়ে নিজের উপর থেকে নিচ অবধি আঙুলের ইশারা করে গম্ভীর গলায় বললো,
—– ইটস কলড মডেলিং ফিগার। এটা মেইনটেইন করতে আমাকে কতো ডায়েট করতে হয় তা তুমি জানো?
নীলিমা মুখ ঝা’মটি দিয়ে সায়র কে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললো,
—- জানতেও চাইছি না, রাস্তা ছাড়ুন তো।
সায়র তৎক্ষনাৎ বাঁধ সেধে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে ওঠে ,
—– আরে আরে ওদিকে কোথায় যাচ্ছো?
— সেটাও আপনাকে বলতে হবে?
—- ওদিকে যেও না, অরু তার হাসবেন্ডের রা’গ কমাচ্ছে,তুমি গেলে ডিস্টার্ব হবে।
সায়রের কথায় সিঁড়ির মাঝে আটকে গেলো নীলিমার পা দু’টো । ও সেখান থেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে বিরক্তির নজরে সায়রের দিকে চেয়ে মনেমনে বলে,
—- লোকটা শুধু বাঁ’দর নয়, পা’গল ও বটে,নইলে নিখিল ভাইয়ের শোকে যে অরু সেই কবে থেকে ডিপ্রেশনে ডুবে আছে, বলে কিনা সে নাকি স্বামীর রা’গ ভাঙাচ্ছে? যেখানে নিখিল ভাইই নেই, সেখানে স্বামীটা কি আকাশ চিড়ে বের হবে?আশ্চর্য।
নীলিমা সেই তখন থেকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে, তা টের পেয়ে সায়র চিবুকে আঙুল বোলাতে বোলাতে মিটিমিটি হেসে বলে,
—- ক্রাশ খেলে নাকি?
তারপর নিজেই নিজেকে বাহবা দেওয়ার মতো করে বললো,
—-অবশ্য সবাই খায় তুমি নতুন কিছু নও, যাও তোমার ক্রাশ রিকোয়েস্ট এক্সেপ্টেড।
নীলিমা ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে, আবারও সিঁড়ি ভেঙে উপরে যেতে পেছন ঘুরে বললো,
—- আপনি একটা পা’গলু, সেই সাথে হা’দারাম ও।
সায়র পেছন দিক থেকে সামান্য মাথা চুলকে বিড়বিড়িয়ে বললো,
—- নো ম্যাটার, সবাই বলে।
দোতলায় গিয়ে করিডোরে দাঁড়িয়েই অরুর নাম ধরে ডাকতে শুরু করলো নীলিমা,
— অরুউউ, এ্যাই অরুউ?
নীলিমার আওয়াজ কানে পৌঁছাতেই ক্রীতিককে জো’র জব’রদস্তি করে নিজের থেকে ছাড়িয়ে কোনো মতে গায়ের ওড়নাটা ঠিকঠাক করে তরিঘরি পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো অরু।
অরুকে দেখা মাত্রই নীলিমা ওর কাছে এগিয়ে এসে অবাক হয়ে শুধালো,
—- এ্যাই! তোর ঘর না ওইটা?
তাহলে এই ঘরে কি করিস?
অরু শুষ্ক ঢোক গিলে নীলিমার দিকে চোরা চাহনি নিক্ষেপ করলো, খানিকটা ভেবে চিন্তে দোনোমোনো করে বললো,
—- না মানে ধুধলো, ময়লা পরেছিল, আজ আবার অতিথি এলোনা ওই জন্যই তো পরিস্কার করতে এলাম মাত্র ।
—- তাই বল আমি আরও ভাবলাম আজকের দিনেও রুম আটকে কেঁ’দে ভাসাচ্ছিস বুঝি।
নীলিমার কথায় অরু দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে হাত কচলাতে কচলাতে কিছুটা মেকি হাসলো।
ঠিক তখনই নীলিমা মুখ কালো করে পুনরায় বললো,
—- আংটি বদল,সকল রিচুয়াল শেষ হয়ে গেলো, অথচ তোরা কেউ একটু আমার জন্য অপেক্ষা করলি না, আমিকি কেউ না?
অরু নিজেও এবার একটু লজ্জিত হলো, ওই বা কি করতো? ক্রীতিক আর মা দুজন মিলে ওকে নিয়ে যা শুরু করেছে, দুজনার চোখ রাঙানি খেতে খেতেই জীবন অতিষ্ট অরুর।
তবুও নীলিমাকে ধাতস্ত করে অসহায় কন্ঠে অরু বলে,
—- আসলে প্রত্যয় ভাইয়ার কাজিন অমিত ভাই পা ভে’ঙে হসপিটালে ভর্তি। ওই জন্য প্রত্যয় ভাইয়ার বাবা অনুরোধ করেছেন সকল নিয়ম কানুন যাতে তাড়াতাড়ি আর ঘরোয়া আয়োজনে শেষ হয়, যাতে তারা একবার হসপিটালে গিয়ে অমিত ভাইকেও দেখে যেতে পারেন।
নীলিমা একটু আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কোন অমিত ভাই? তোদের বাংলা একাডেমির অমিত ভাই নয়তো?
অরু হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে বললো,
—- হ্যা উনিই।
অরুর কথায় আপনা-আপনি হাত চলে গেলো নীলিমার হতবাক মুখের উপর, ও আরোষ্ঠ গলায় বললো,
—– হায় আল্লাহ! অমিত ভাইয়ের সাথেই এটা হওয়ার ছিল?
আজকে অমিতকে নিয়ে বাড়িতে ঝামেলা হয়েছে, ক্রীতিক হিং’স্র হা’য়নার মতোই ক্ষে’পে উঠেছিল অরুর উপর। সময় মতো আপসে না এলে, আজকে না জানি রে’গেমেগে আরও কি কি করে ফেলতো এই উন্মাদ লোকটা।
পুরো ব্যাপারটা আরও একবার স্বরণ করে একটা ভ’য়ার্ত ঢোক গিলে,অমিতের টপিক টা তৎক্ষনাৎ পাল্টে ফেললো অরু। নীলিমার দিকে তাকিয়ে সহসা হেসে বললো,
—— চল নিচে গিয়ে ডিনার করবি, আমিও খাইনি, একসাথে খাবো।
নীলিমা অরুর কথায় গু’রুতর নাকোচ করে বললো,
—- যাবোনা, নিচে একটা বাঁ’দর দাঁড়িয়ে আছে।
অরু ভ্রু কুঁচকে বললো,
—- সারা ঘরে লাইট জ্বলছে, এর মাঝে বাঁদর কোথায় পেলি তুই?
নীলিমা আঙুলের ইশারা করে ডিভানে বসে বসে রসগোল্লা চিবুতে থাকা সায়রকে দেখিয়ে বললো,
—– ওই যে দেখ বসে বসে রসগোল্লা খাচ্ছে, ওটাই বাঁদর। শুধু বাঁদর নয় পাশাপাশি হনুমানও। দুই জাতির মিশ্রন।
নীলিমা সায়রের নাম মুখে নিতে না নিতেই সায়র রসগোল্লা সমেত অকস্মাৎ বিষম খেলো। এলিসা ওর দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে ওর পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে বললো,
—– একটু আস্তে খাবিতো।
সায়র এক ঢোক পানি পান করে এলিসার দিকে ছলছলে নয়নে তাকিয়ে বললো,
—- হঠাৎ করে কে এতো মনে করছে আমায়, বলতো?
এলিসা স্ন্যাক্স চিবুতে চিবুতে ফোনের দিকে নজর দিয়ে রুষ্ট গলায় বললো,
—– তোর ক্লায়েন্ট রা ছাড়া আর কে?
নীলিমার মুখ থেকে সায়রকে নিয়ে এরূপ সম্মোধন শুনে তৎক্ষনাৎ দাঁত দিয়ে জিভ কাটলো অরু।
অতঃপর নীলিমা কে একটু সাইডে নিয়ে গিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,
—- কাকে কি বলছিস ভাই? আমেরিকাতে উনি সেলিব্রিটি। ওনার বড় বড় ছবি, পোস্টার পুরো শহরের বিলবোর্ড জুড়ে থাকে তুই জানিস?
নীলিমা ঠোঁট বাকিয়ে ভেংচি কেটে,অরুর কথায় পুরো দস্তুর অনাগ্রহ প্রকাশ করে বললো,
—- সে যাই হোক, কিন্তু এই সেলিব্রিটি বাঁদর তোদের বাড়িতে কি করে?
—- আরেহ উনি, ওনার না মানে ক্রীতিক ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। ক্রীতিক ভাইয়ার সাথেই বাংলাদেশ বেড়াতে এসেছেন, উনি আসলে ইন্ডিয়ান।
অরুর কথা শুনে নীলিমা চোখ মুখ কুঁচকে জোরালো কন্ঠে বললো,
—- কিহ! তোর সেই পা’ষণ্ড ভাইটা দেশে এসেছে? তুই ঠিকই বলেছিলি অরু, ওই শালা এক নম্বরের ব’জ্জাত, নয়তো তার বন্ধু এমন বাঁদরামো করে কেন? বিদেশে বসে এসব হনুমানদের সাথে মিশে মিশেই তোর ভাইটা গোল্লায় গিয়েছে। উমমমম…
নীলিমা ভাষনের মতো করে গলা উঁচিয়ে ক্রীতিকের চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করার আগেই নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরলো অরু।
তারপর ওকে টে’নে হিঁ’চড়ে নিচে নিয়ে যেতে যেতে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
—– নীলিমার বাচ্চারে থাম এবার, এমনিতেই সন্ধ্যা থেকে আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে, এখন আবার তুই তুফান বয়ে আনিস না।
**********************************************
প্রত্যয় আর অনুর বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই বেশ ঘটা করে আয়োজন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
তবে পরিবারের থেকেও একধাপ এগিয়ে ক্রীতিকের বন্ধু মহল।এই বিয়ে নিয়ে তাদের উচ্ছ্বাসের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। যেহেতু অরু ক্রীতিকের বিয়েটা অনাকাঙ্ক্ষিত আর বিরল ভাবে হয়েছে,সেহেতু অনু প্রত্যয়ের বিয়েতে প্রি ওয়েডিং পার্টি থেকে শুরু করে,মেহেন্দী,রং খেলা, হলুদ সব রকম আনুষ্ঠানিকতা করে তবেই বিয়ের স্বাদ পুরোপুরি আস্বাদন করবে ওরা।
বিয়ের মাত্র এক সপ্তাহ বাকি আর সামনে এতো এতো আয়োজন। সেই কথা মাথায় রেখেই ওরা সকলে রেডি সেডি হয়ে বেরিয়েছে শপিং করার উদ্দেশ্যে। ওদের একেক জনার ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে পুরো শপিংমলটাই আজ ওরা তুলে নিয়ে ফিরবে ক্রীতিক কুঞ্জে।
পরন্ত বিকেল রৌদ্রতাপ কমে এসেছে কিছুটা।চারিদিকে নাতিশীতোষ্ণ গুমোট হাওয়া বইছে। এর মাঝেই বাড়ির পুরাতন সদস্য ব্ল্যাক কেডিলাকের সামনে হাজির হয়েছে এলিসা, অর্ণব,সায়র,ক্যাথলিন,অনু,আর মোখলেস চাচা।
প্রত্যয় ওদের বাড়ি থেকে সরাসরি শপিং মলে আসবে। একটু পর অরুও হাজির হয় ওদের মাঝে।
অরুকে গাড়ির নিকট এগিয়ে আসতে দেখে সায়র চোখ ছোট ছোট বানিয়ে ভ্রু কুঞ্চিত করে বললো,
—– আরেহ, হি’টলারের বউ তুমি এখানে কেন? আমাদের কি যাত্রা পথে মাঝ রাস্তায় উড়িয়ে দেওয়ার শখ হয়েছে তোমার? তুমি চাচ্ছো শপিং মলে না গিয়ে, আমরা সরাসরি উপরে চলে যাই তাইতো?
সায়রের ধ’মক খেয়ে ঠোঁট উল্টে অনুর দিকে অসহায় দৃষ্টিপাত করে অরু বলে,
—- আপা দেখনা,
অনু উদ্বিগ্ন হয়ে শুধালো,
—- হ্যারে অরু,ক্রীতিক ভাইয়া কি যাবে না আমাদের সাথে?
অরু বিরক্ত হয়ে রুষ্ট আওয়াজে বললো,
—- আশ্চর্য, তোরা সবাই এমন ভাব করছিস যেন আমিই স্বয়ং জায়ান ক্রীতিক। উনি কি করবেন, না করবেন আমি কিভাবে বলবো? তাছাড়া উনিকি আমার সাথে সব কথা শেয়ার করে? তোদের কি মনে হয়?
অনু বলতে চাইলো,
—-তাহলে জায়ান ক্রীতিকের মতো এমন অ’স্বাদু পুরুষের জন্য এতো পা’গল হওয়ারই বা কি ছিল?
কিন্তু ও সে-সব বললো না, বরং অরুর কথায় ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ। ওদিকে এলিসা সকলকে ডেকে বললো,
—– হয়েছে আর গবেষণা করতে হবেনা ওই যে জেকে আসছে।
এলিসার কথা শুনে ঘুরে গেইটের দিকে দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত করলো সকলে,দেখলো আঙুলের ডগায় বাইকের চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে এদিকেই এগিয়ে আসছে ক্রীতিক।
পরনের অফ হোয়াইট ফুল স্লিভ টিশার্ট, আর সাথে ম্যাচিং ওভার সাইজ অফ হোয়াইট প্যান্টে তাকে আজ আদতে কাল্পনিক গ্রীক গডের মতোই সুদর্শন লাগছে। ঘাড় ছুঁই ছুঁই চুল গুলোকে সেট করার জন্য মাথায় লাগিয়ে রেখেছে বাকেট হ্যাট।
পরনের সবকিছু ধবধবে সাদা হলেও মুখটা কালো আর গম্ভীর হয়ে আছে ক্রীতিকের। গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবে জেকে গ্রুপে জয়েন করার ইচ্ছে ছিল আজকেই। সে হিসেবে গভর্নিং বডির অন্য সদস্যদের ও আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল তাদের নতুন বসের জয়েনিং মিটিং এ। কত কত ইম্পর্টেন্ট ক্লায়েন্টদের ইনভাইট করা হয়েছিল।
অথচ এই বদের হাড্ডি বন্ধু গুলোর জন্য অফিশিয়াল সব প্ল্যান ক্যান্সেল। কাজকর্ম ঠিকেয় তুলে এখন এদের সাথে না চাইতেও শপিং এ বেরোতে হচ্ছে ক্রীতিককে।
ক্রীতিক যতক্ষনে গাড়ির কাছে এসেছে, ততক্ষণে সিট ভাগাভাগি নিয়ে ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে ওরা।
অরু আর অনু দু বোন শুকনো মুখে দাড়িয়ে বড়দের ঝগড়া দেখছে।
এলিসা অর্ণব পুরো দস্তুর যু’দ্ধ লাগিয়েছে সিট নিয়ে। দেখলে কে বলবে এরা কাপল? একজন যে আরেক জনের প্রান ভোমড়া? ওদের ঝগড়া ঝাটির মাঝখানে সায়র একটুখানি মাথা চুলকে বললো,
—- মোখলেস চাচাকে না নিলেই তো হয়।
এলিসা তৎক্ষনাৎ ক্ষ্যা’পাটে কন্ঠে বললো,
—- খবরদার!মোখলেস চাচাকে আমার ভালো লেগেছে, ওনাকে আমি শপিং করিয়ে দেবো।
অর্ণব দাঁত খিঁচে বললো,
—- এতোই যদি চাচাকে ভালো লাগে তাহলে আমি কে?হ্যা?
অতঃপর মোখলেস চাচার দিকে তাকিয়ে অর্ণব কটমটিয়ে বলে,
—- এই চাচা আপনি যান তো আপনাকে নেওয়া হবেনা৷ ভাগুন।
মোখলেস চাচা অপ্রস্তুত হেসে বললো,
—- ইয়ে মানে, আমাকে ডিকিতে তুলে দিলেও হবে।কোনো সমস্যা নেই বাবা।
—– তবুও আপনার শপিং এ যেতে হবে তাইতো?
সায়রের কথার পাছে ক্রীতিক এগিয়ে এসে রাশভারি আওয়াজে শুধালো,
—– কি হয়েছে?
সায়র পিছনে ঘুরে ক্রীতিককে দেখতে পেয়ে বিরক্ত হয়ে বললো,
—– যায়গা সংকট, তোর বউ কে নিতে পারছি না, সরি।
সায়রের কথায় ক্রীতিক আড় চোখে অরুর দিকে তাকালো , যে এই মূহুর্তে ভীত হরিণীর মতো ডাগর চোখে ক্রীতিকের দিকেই তাকিয়ে,ক্রমাগত আঙুলে ওড়না পেচাচ্ছে।
কাল অমন কাছাকাছি আসা,আবেশিত আলিঙ্গনের মাঝেও দুজনার একবারও কথা হয়ে ওঠেনি । তখন আবার নীলিমার ডাকে ক্রীতিককে ধা’ক্কা মে’রে চলে গিয়েছিল অরু। সেই মূহুর্ত থেকেই ক্রীতিক দিগুণ ক্ষেপে আছে অরুর উপর।
রিজেকশন ওর একদম পছন্দ নয়। কুক্ষণেও এই মেয়েকে একা পেলে যে কি করবে সেটা ও নিজেও জানেনা।
ক্রীতিক সেই তখন থেকে ক্ষ্যা’পাটে বা’ঘের মতো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেখেছে, বিষয়টা নজরে আসতেই আড়ালে শুষ্ক ঢোক গিললো অরু।
সায়র ক্রীতিকের সামনে হাত নাড়িয়ে বললো,
—– এক্সকিউজ মি, কথা এদিকে হচ্ছে ওদিকে না।
ক্রীতিক গমগমে আওয়াজে বললো,
—- অরুকে রেখে তোরা চলে যা। আর অনু একটু পরে আসুক, আমি প্রত্যয়কে বলে দিচ্ছি ও অনুকে পিক করে নেবে।
ক্রীতিকের কথায় অরু আচমকা চেঁচিয়ে উঠলো, কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে ভয়ার্ত গলায় বললো,
—– নাহ!আপা আমি ওনার সাথে যাবোনা, আমার ভ’য় করছে।
সায়র ক্যাথলিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
—- ক্যাথ তাহলে তুমি যাও জেকের সাথে।
সায়রের কথা শুনে তৎক্ষনাৎ এলিসার পেছনে লুকিয়ে পরলো ক্যাথলিন। সেবার চুল কা’টার ঘটনার পর থেকেই ক্রীতিককে ভু’তের মতো ভ’য় পায় ক্যাথলিন। সেই ভয়’ঙ্কর রূপ দেখার পর, ক্রীতিকের সাথে কথা বলা তো দূরে থাক, ওর চোখের দিকে পর্যন্ত চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায়না মেয়েটা।
আর ওকে কিনা বলা হচ্ছে সেই যমরাজের সাথে বাইকে বসতে, অসম্ভব।
ক্রীতিকের চেঁচামেচি, অতিরিক্ত কথা মোটেই পছন্দ নয়। এখন এই মূহুর্তে ওদের সবার বাক বিতন্ডায় মেজাজ চড়ে উঠলো ওর। নিজের বিগড়ানো মেজাজটাকে সংবরণ করতে না পেরে সহসা ধমকে উঠলো ক্রীতিক,
—– কি বলেছি কানে যায়নি? অরু বাইকে বস, রাইট নাও।
এবার আর ওরা অপেক্ষা করেনা, বরং ক্রীতিকের কথা মতো, অরু আর অনুকে রেখেই তৎক্ষনাৎ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় ক্রীতিক কুঞ্জের গেইট দিয়ে ।
অনুও প্রত্যয়ের জন্য অপেক্ষা করবে বলে, অরুকে রেখে বাড়ির ভেতর চলে গেলো।
পাছে শুধু অসহায়ের মতো পরে রইলো একলা অরু। ওর ভীত সন্ত্রস্ত চাহনি দেখে মনে হচ্ছে, কেউ বা’ঘের খাঁ’চায় হরিণ শাবক আমানত রেখে গিয়েছে। আর সেই জীবন পন অসহায় হরিণী শাবকখানা ও নিজেই।
—– কি ব্যাপার দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
ক্রীতিকের ভরাট আওয়াজে কম্পিত হয়ে ওঠে অরুর এইটুকুনি তনু শরীর। ও মাথা উঁচিয়ে মিনমিনিয়ে বলে,
—– আপনাকে ভ’য় করছে।
—- আমিকি কি বা’ঘ না ভা’ল্লুক? নাকি কাছে এলে কি তোকে খেয়ে ফেলবো,কোনটা?
ক্রীতিকের কথায় অরু নিশ্চুপ, নির্বিকার ওর ভঙ্গিমা, ওর এহেন নিরবতা দেখে ক্রীতিক শান্ত স্বরে বললো,
—– আমি কিছু বলেছি অরু।তুই আসবি নাকি আমি আসবো, কোনটা?
অরু তৎক্ষনাৎ বাঁধ সেধে দ্রুত পায়ে ক্রীতিকের নিকট এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
— না থাক।
অরু কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে ওর নরম তুলতুলে মোলায়েম হাতটা খপ করে নিজের শক্ত হাতে চেপে ধরলো ক্রীতিক। ওর হাতের বাঁধন এতোটাই শক্ত ছিল যে চোখ মুখ খিঁচিয়ে মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো অরু,
— আহ! লাগছে ছাড়ুন।
ক্রীতিক ছাড়েনা, উল্টে অরুকে বাইকের সাথে চেঁপে ধরে নিজের মুখটা অরুর দিকে বাড়িয়ে দাঁত দিয়ে দাঁত পিষে ক্রীতিক বলে,
—- হাউ ফা’কিং ডেয়ার ইউ অরু?কাল আমাকে ধা’ক্কা মা’রার সাহস কোথায় পেলি তুই? কতবার বলেছি তোকে? আমার রিজেকশন একদম পছন্দ নয়, আদর করতে চাইলে চুপচাপ সেটা করতে দিবি, চুমু খেতে চাইলে চুপচাপ সেটা খেতে দিবি। তখন আমাকে ডির্স্টাব করার দুঃসাহস দেখাবি না। প্রথমবার গাড়িতে বসে যা যা শিখিয়েছিলাম এরমধ্যে ভুলে গিয়েছিস?
অরু অস্রুশিক্ত চোখের পাতায় পলক ফেলে, দু’ফোঁটা নোনাজল ছেড়ে দিয়ে আরোষ্ঠ গলায় বললো,
—- ছাড়ুন না ব্য’থা লাগছে। কষ্ট হচ্ছে তো আমার।
অরুর ভেজা চোখ আর কম্পিত ঠোঁটের শিহরণ দেখে মূহুর্তেই স্বাভাবিক হয়ে উঠলো ক্রীতিকের শক্ত চোয়াল। দুচোখের অ’গ্নিস্ফুলিঙ্গ দপ করে নিভে গিয়ে ঘনীভূত হলো তীব্র কামনা। অরুর কেঁপে ওঠা নরম তুলতুলে ঠোঁট জোড়া চৌম্বকীয় আকর্ষনে টানছে ওকে।
এই ভীত সন্ত্রস্ত ডাগর চোখ, , এই কম্পিত ঠোঁট,এই অভিমানী পান পাতার মতো স্নিগ্ধ মুখ, এই লতানো ছোট্ট শরীর, এসবের মাঝেই বারবার আটকে যায় ক্রীতিক। ক্রো’ধান্বিত মস্তিষ্কটা শান্ত নীড় হয়ে যায় মূহুর্তেই। তীব্র মা’দকতা মিশিয়ে হৃদয়ে ঢেউ তোলে কামনার প্লাবন।
মাঝে মাঝে ক্রীতিকের মনে হয় এ কোনো সাধারণ অষ্টাদশী নয়,বরং এ মেয়ে মায়াবিনী, জা’দুকরিনী,হৃদয়হরনী,যার ছোঁয়া তো দূরে থাক উষ্ণ চাহনিতেও জলোচ্ছ্বাসের সূত্রপাত হয় বছর ত্রিশেক ম্যাচিউরিটি খ্যাত হৃদ গহীনে।
ক্রীতিক সেই তখন থেকে একই ভাবে তাকিয়ে আছে, নিস্প্রভ ওর চাহনী, একবার পলকও ফেলছে না। সামান্য চোখের চাহনি দিয়েই যেন অরুর সুপ্ত নারী সত্তাকে ক্রমশ জাগ্রত করছে নির্লজ্জ লোকটা। ওর কামুক চোখের চাওনিতে বারে বারে আরোষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে অরু। ব্যাপারটা লজ্জাজনক। অরু ও লজ্জা পেলো ভীষণ। সহসা অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে জড়তা মিশ্রিত কন্ঠে বললো,
—- চলুন যাওয়া যাক।
অরুর কথায় ভ্রম কেটে গেলো ক্রীতিকের, সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, অথচ ওরা এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছে ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই, চিরাচরিত ফর্মে ফিরে এসে, নিজের হ্যাট,মোবাইল, সিগারেট, ওয়ালেট সবকিছু অরুকে বুঝিয়ে দিয়ে হেলমেট পরে বাইকে বসে পরলো ক্রীতিক।
অরুও নিঃসংকোচে ক্রীতিকের কাঁধে হাত রেখে বসে পরলো বাইকে। অরু বসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রীতিক বলে ওঠে,
—-ধরে বস।
ক্রীতিকের কথায় অরু এবার নিজের হাতের বাঁধন শক্ত করলো কিছুটা।
পরমূহুর্তেই শাঁই শাঁই আওয়াজ তুলে ক্রীতিক কুঞ্জের বিশাল গেইট ছাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো ইয়ামাহা খচিত ব্র্যান্ডেট বাইকটা।
এই পুরো কাহিনী দোতলার বারান্দা থেকেই সুক্ষ্ম নজরে পরখ করলো অরুর মামাতো ভাই রেজা। পরক্ষনেই ব্যতিগ্রস্থ হাতে আঙুল চালালো মোবাইলে। কাউকে ম্যাসেজ করলো বোধ হয় ।
***********************************************
সন্ধ্যা সারে সাতটা, সোডিয়াম আর চলন্ত গাড়ির উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত ঢাকা শহর। শপিং কমপ্লেক্সের তিনতলা জুড়ে বিশাল ক্যাফেটেরিয়া, তার একপাশে থাই লাগানো বিস্তার দেওয়াল। সেখান থেকে সামান্য উঁকি দিলে পাখির চোখে পুরো শহরটা দেখা যায়।
রাতের শহরের লাল, নীল, সোনালী চকচকে আলো বাদ দিলে ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি যা দেখা যায় তা হলো ট্রাফিক জ্যাম। সেই তখন থেকে পুরো রাস্তাটা জ্যামে আটকে আছে, একনাগাড়ে হর্ণ বাজিয়ে যাচ্ছে শয়ে শয়ে গাড়ির বহর।
হর্ণের আওয়াজে কান ঝালাপালা হওয়ার উপক্রম। কি বিদঘুটে অনুভূতি, যদিওবা এতোদূর থেকে সেই আওয়াজ কানে ভেসে আসছে না, তবুও কোল্ট কফির স্ট্র টাকে আঙুলের সাহায্যে ঘুরাতে ঘুরাতে দূর্বিষহ জ্যামের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে নীলিমা।
নিজের মাঝে অনুভব করতে চাইছে রাস্তার মানুষ গুলোর বি’ষাদময় তিক্ত অনুভূতিকে।
সেই তখন থেকে একইভাবে বাইরে তাকিয়ে আছে দেখে তিথি এবার ডেকে উঠলো ওকে,
—–এ্যাই নীলিমা, তখন থেকে বাইরে তাকিয়ে আছিস কি দেখছিস বলতো?
তিথির ডাকে চোখ ঘুরালো নীলিমা, পুনরায় কোল্ড কফিতে সিপ নিয়ে বললো,
—– কেমন আছিস বল, তোর তো খবরই নেই,বিয়ে-শাদি করে ফেললি নাকি?
নীলিমার কথায় তিথি মুঁচকি হেসে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালে, নীলিমা আবার শুধায়,
—- তা জিজু কোথায়?
এবার তিথি আঙুলের ইশারায় কাউকে দেখাবে,তার আগেই নীলিমার চোখ গেলো তিথির পেছনে এক আগন্তুকের দিকে।যে এই মূহুর্তে চিকেন ফ্রাই আর কোকের ট্রে হাতে নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে ফাঁকা সিট খোঁজায় ভীষণ ব্যস্ত।
—– এখানেও পাগলু?
বিড়বিড়িয়ে কথাটা বলে মেনু কার্ডের আড়ালে তাড়াহুড়ো করে মুখ লুকালো নীলিমা। যা দেখে তিথি উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—- কি হয়েছে,হুট করে এমন চো’রের মতো বিহেভ করছিস কেন?
নীলিমা হিসহিসিয়ে বলে,
—— চুপ কর বিদেশি বাঁদরটা এদিকেই আসছে, একবার দেখে ফেললে বকবক করে মাথা খেয়ে ফেলবে।
—– এক্সকিউজ মি, কে বাঁদর?
আচমকা পুরুষালী রাশভারী আওয়াজে লাফিয়ে উঠলো নীলিমা, থতমত খেয়ে মুখের সামনের মেনু কার্ডটা সরাতেই দৃষ্টিস্থাপন হলো সায়রের কুঁচকানো ভ্রুর ভাজে।
সায়র নীলিমার পাশেই বসেছে, যার দরুন মেনু কার্ডটা সরাতেই চকিতে পেছনে সরে গেলো নীলিমা। কোনো মতে নিজের ভ’য় টাকে আড়াল করে চোখে মুখে মিথ্যে আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে তেঁতো গলায় নীলিমা বললো,
—- আপনি এখানে কি করছেন, এটা আমার সিট চোখে দেখতে পাচ্ছেন না?
সায়র এগিয়ে গিয়ে নীলিমার কফিতে একটা সিপ দিয়ে বললো,
—- দেখাও দেখি কোথায় লেখা আছে এটা তোমার সিট? আমি যতদূর জানি সিটটা ক্যাফের কতৃপক্ষের , এবং এটা সকল কাস্টমারের জন্য বরাদ্দ। মানুষের জিনিস কে নিজের বলা বন্ধ করো লো’ভী মেয়ে। কোনদিন না অন্যের জামাইকে দেখিয়ে বলো, এই জামাই আমার।
তিল কে তাল, আর ক কে কলিকাতা বানিয়ে ফেলবার এক আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে সায়রের মাঝে, সেটা বেশ ভালো মতোই টের পেলো নীলিমা। তাই আপাতত কিছু না বলে অগত্যাই চুমুক দিলো কফিতে।
সায়র কিঞ্চিৎ বাঁকা হেসে বললো,
—- হাউ ইজ ইট?
—– মানে?
সায়র কফির স্ট্র টাকে ইশারা করে বললো,
—– আমার লিপস টেস্ট।
নীলিমার এতোক্ষণে মাথায় ঘুরলো একটু আগে এই একই স্ট্র দিয়ে সায়র ওর কফি পান করছে,আর এখন ও নিজেও খেলো। ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই টিস্যু দিয়ে নিজের ঠোঁট মুছতে মুছতে নীলিমা নাক মুখ কুঁচকে বললো,
—– অ’সভ্য লোক, কি চান আপনি?
—- আপাতত এক চুমুক কফি নিয়ে,সেটাকে কুলকুচি করে সরাসরি তোমার মুখে পুরে দিতে চাই।
সায়রের এমন বিদঘুটে কথায় গা গুলিয়ে এলো নীলিমার, ও অনেকটা বিরক্ত হয়ে বললো,
—– আপনি আসলেই একটা পা’গলু। পঁ’চা,বা’সি, ন’ষ্ট, উৎকৃষ্ট। সব আপনি।
প্রতিউত্তরে সায়র আরও গা গুলানো কিছু কথা ছুঁড়বে, তার আগেই নীলিমার নাম ধরে ডেকে ওঠে অরু।
নীলিমা পেছনে চেয়ে অরুকে দেখে আশ্চর্য কন্ঠে বলে,
—– অরু তুই?
চলবে…..
#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁
#পর্বঃ৪১_বর্ধিতাংশ
#লেখনীতে_suraiya_rafa
[ক,পি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমননদের জন্য]
—– অরু তুই?
অরু এগিয়ে এসে সহসা হেসে বলে,
—– আপা দের বিয়ের শপিং এ এসেছি, তুই কি….
বাকি কথা বাড়ানোর আগেই ওর সাথে চোখাচোখি হলো তিথির ।
তিথি অরুকে দেখে সংকোচ কিংবা অ’পরাধ বোধ করা তো দূরে থাক, উল্টে একটা গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বললো,
—— তাহলে শেষ মেশ ফিরেই এলি আমেরিকা থেকে? তোকে আগেই বলেছিলাম নিখিল ভাইয়ের পেছনে পরে থাকা বন্ধ কর, তোকে দু’পয়সার ও পাত্তা দেবে না নিখিল ভাইয়ের মতো মানুষ ।শুধু শুধু এতো গুলা দিন ধরে মিথ্যে আশা নিয়ে বেঁচে আছিস। হাউ শেইম।
নীলিমা তৎক্ষনাৎ তিথিকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললো,
—– থামবি তুই তিথি? অরুর মনটা এমনিতেই ভালো যাচ্ছে না।
অরু এবার মুখ খুললো, তিথির দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললো,
—– তোকে কে বলেছে আমি মিথ্যে আশায় বেঁচে আছি? আমাকে দেখে কোন দিক দিয়ে তোর অসুখী মনে হচ্ছে?
তিথি তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো,
—- দেখতেই তো পাচ্ছি, শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিস, আমি কিছু বুঝিনা ভেবেছিস?
ওদের ত’র্কের ফাঁকে বাম হাত ঢুকিয়ে, অরুর দিকে ঘুরে আশ্চর্য হয়ে সায়র শুধালো,
—- জেকের মতো আস্ত একটা প্যারা জীবনে উপস্থিত থাকতে, তুমি আবার কার জন্যে শুকিয়ে গেলে এলোকেশী?
সবার উদ্ভট কথা শুনে আ’হাম্মকের মতো ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছে অরু, প্রস্তুতি নিচ্ছে নতুন উদ্যমে তিথিকে কিছু বলার।
ঠিক সেই সময়ে, সবার আকর্ষন কেড়ে নিয়ে বয়জেষ্ঠ একজন ওদের মাঝে চলে এসে তিথির কাঁধে নিঃসংকোচে হাত রেখে বললো,
—– হ্যালো এভরি ওয়ান। কি অবস্থা সবার?
লোকটা স্মার্ট, বেশভূষা দেখেই বোঝা বেশ যাচ্ছে বেশ ধনাঢ্যশালী ব্যক্তি হবে হয়তো। তবে বয়সে ওদের চেয়ে চোখবুঁজে কয়েকগুণ বড় তো হবেই।
সায়র লোকটাকে দেখে জোর পূর্বক হেসে বললো,
—-কে আপনি দাদু?
তিথি তৎক্ষনাৎ লোকটার বেড়ে ওঠা ভূড়িতে আবেশিত হাত ছুয়িয়ে একগাল হেসে বললো,
—– মিট মাই বিলোভট হাসবেন্ড, খন্দকার মোশতাক আহমেদ।
তিথির কথায় ওরা সবাই মুখ টিপে হাসি সংবরণ করলো। সায়র তো কুলিয়ে উঠতে না পেরে মিনিমিনিয়ে বলেই ফেললো,
—– এই দাদু আবার হাসবেন্ড হয় কি ভাবে? দেখে তো মনে হচ্ছে সারাদিন হাঁচি কাশিতেই দিন শেষ হয়ে যায় ওনার, তাহলে বউ সামলায় কখন?
সায়র নীলিমার পাশেই বসা ছিলো বিধায়, নীলিমা ওর উরুতে চিমটি কেটে সহসা থামিয়ে দিয়ে বললো,
—– চুপ করুন, অন্যের অনুভূতিকে সম্মান করতে শিখুন।
নীলিমার শেষ কথাটা সায়রের হৃদয়ে গিয়ে লাগলো, আসলে মেয়েটাকে যতটা রা’গী আর বেয়ারা মনে হয়, ততটাও নয়। মনটা ভালো আছে।
অরু এখনো তিথি আর তার দাদু ওরফে হাসবেন্ডের গদোগদো প্রেম দেখে সার্কাস দেখার মতোই হা করে তাকিয়ে আছে, মনে মনে ভাবছে,
—- ইশ এই দাদুটাও কি রোমান্টিক, অথচ আমার বর কে দেখো,সারাদিন মেজাজ আর মেজাজ। এমন করে একটু লোকের সামনে গদোগদো ভালোবাসা দেখালে কি হয়?
তিথি তার বিলোভট হাসবেন্ডের থেকে চোখ সরিয়ে, অরুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—- এখনো সময় আছে, এরকম একজন দেখে বিয়ে করে নে, পুরো লাইফ আরামছে পায়ের উপর পা তুলে কেটে যাবে।আ…
তিথির কথা মাঝপথেই আটকে গেলো যখন চমৎকার এক পুরুষালী কন্ঠে পেছন থেকে খুব অধিকার নিয়ে অরুকে ডেকে উঠলো কেউ,
—— মিসেস অরোরা জায়ান!
ক্রীতিক হঠাৎ করে পুরো নাম ধরে ডেকে ওঠায়,অরু হকচকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বললো,
—– এইতো আমি।
চলতি ক্লাইমেক্সে আরও খানিকটা আকর্ষন ঢেলে দিতে, সবার মাঝে এসে দাড়ালো ক্রীতিক।সুদর্শন ক্রীতিককে দেখে অকস্মাৎ চিকচিক করে উঠলো তিথির দু’চোখ, ও তব্দা খেয়ে কিছুটা লাজুক হেসে শুধালো,
—- আপনি কে ভাইয়া?
ক্রীতিক বাহুর মাঝে অরুকে নিয়ে বললো,
—– হার বিলোভট হাসবেন্ড, জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী।
অরুর স্বামী কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে চুপসে এইটুকুনি হয়ে গেলো তিথির মুখ, ও পুনরায় অবিশ্বাসের সুরে বললো,
—- ক্রীতিক কুঞ্জের মালিক জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী?
তিথির সম্মোধনে ক্রীতিক অরুর দিকে তাকিয়ে সহসা হাসলো, যার অর্থ হ্যা।
এই মূহুর্তে তিথির থমথমে মুখ খানা দেখে মনে হচ্ছে, কেউ কয়েকশ অ’পমানের চ’পেটা’ঘাতে লাল করে দিয়েছে ওর মুখ।
নীলিমা হতবাক হয়ে অরুকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে বললো,
—- জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী না তোর সৎ ভাই?
অরু হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।
—- তাহলে হাসবেন্ড কি করে হলো?
অরু নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো,
—- বিয়ে করেছে তাই হাসবেন্ড হয়েছে।
নীলিমা হাসফাস করতে করতে বললো,
—- আমি না কিছু মিলাতে পারছি না অরু,তুইতো সেদিনও নিখিল ভাইয়ের জন্য কা’ন্নাকাটি করলি, তাকে ছাড়া নাকি তুই আর কাউকে তোর জীবনে ভাবতে পারিস না, তাহলে হঠাৎ?
অরু ঠোঁট উল্টে ভ্রু কুঁচকে বললো,
—– তোকে কে বললো, আমি নিখিল ভাইয়ের জন্য কেঁদেছি? আমি তো ওনার জন্য কাঁদছিলাম। অরু চোখ দিয়ে ইশারা করে দেখালো ক্রীতিক কে।
নীলিমা হতবিহ্বল কন্ঠে বললো,
—- কিহ! তুই ওনার জন্য কাঁদছিলি?
অরু ঠোঁট ফুলিয়ে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালে নীলিমা পুনরায় বলে,
—- উনি কেন তোকে হঠাৎ বিয়ে করতে গেলো ?আর তুইই বা কি করে, না মানে আসলে কি বলতো সবকিছু আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, আচ্ছা অরু, উনি কি আসলেই তোকে নিজ ইচ্ছেতে বিয়ে করেছে? মানে উনিকি তোর, সত্যিকারের, আপন স্বামী?
অরু না সূচক মাথা নাড়িয়ে ক্রীতিকের দিকে অভিমানী চোখে তাকিয়ে বললো,
—- নিজ ইচ্ছেতে নয় বরং জো’র করে বিয়ে করেছে! নি’র্দয় পা’ষান লোক একটা।
অরুর কথা শুনে নীলিমা হা হয়ে গেলো, হতবিহ্বল কন্ঠে শুধালো ,
—– কি বলিস! ওনার মতো মানুষ তোর মতো পুচকে মেয়েকে জো’র করে বিয়ে করে নিলো? আমি সত্যিই এখন কনফিউজড অরু, কি এমন আছে তোর মাঝে?
অরু ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
—- জানিনা, ওনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর।
—– আচ্ছা তুই ওনাকে ভালোবাসিস?
নীলিমার কথায় অরু তাকায় ক্রীতিকের দিকে, যে এই মূহুর্তে সায়র আর অর্ণবের সাথে কফিতে মন দিয়েছে, অরু এভাবে তাকিয়ে আছে দেখে হুট করেই চোখাচোখি হয়ে গেলো দুজনার, অরু তৎক্ষনাৎ চোখ নামিয়ে মুচঁকি হেসে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।
নীলিমা কৌতুহল বশত শুধালো,
—- আর উনি?
অরু জবাব দেয়,
—– উনি কখনো মুখে ভালোবাসি বলেন না, তবে ওনার মহাসমুদ্রের মতো গভীর ভালোবাসা স্পষ্ট উপলব্ধি করি আমি, যে ভালোবাসার অতলে যাওয়ার সাধ্যি আমার নেই। আছে শুধু এক সমুদ্র ভালোবাসায় নিরন্তর সাঁতার কেটে বেড়ানোর অদম্য ইচ্ছে।
আমি বুঝতে পারি উনি আমার জন্য ঠিক কতটা উ’ন্মাদ।ওনার পা’গলের মতো ভালোবাসা, এতগুলো বছরের অপেক্ষা, সবার আড়ালে দিনের পর দিন আমাকে ছায়ার মতো আগলে রাখা, আমার কষ্টে নিজেকে ভে’ঙেচুরে ফেলার মতো য’ন্ত্রনাদ্বায়ক কাজগুলো, আমাকে ওনার প্রেমে পরতে বাধ্য করেছে নীলিমা। আর যখন সত্যি সত্যি প্রেমে পড়ে গেলাম, তখন আমিও বুঝলাম সত্যিকারের প্রেমে পড়লে ঠিক কতোটা পু’ড়’তে হয়, কতটা য’ন্ত্রনা সহ্য করতে হয়।
আমি সবটা সহ্য করেছি, ওই জন্যই হয়তো এখন এই মূহুর্তে উনি আমার কাছেই রয়েছেন । এখনের এই জায়ান ক্রীতিক আর একান্ত গোপনীয় আমার জায়ান ক্রীতিকের মাঝে রাতদিন ফারাক । ওনার না বলা গোপন ভালোবাসায় এতোটাই আবিষ্ট আমি,যে আর কারোর হাজার বার উচ্চারিত ভালোবাসায়ও এখন আর পোষাবে না আমার নীলিমা। সত্যিই পোষাবে না।
এক নাগাড়ে কথা গুলো শেষ করে, আবারও ক্রীতিকের পানে দৃষ্টি নিক্ষেপন করে অরু। যে এই মূহুর্তে গভীর মনোযোগে ফোন স্ক্রল করছে, আবার মাঝে মাঝেই অরুর দিকে তাকিয়ে দক্ষ অভিভাবকের ন্যায় পর্যবেক্ষন, করছে অরুর গতিবিধি।
***********************************************
— আরে! কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? সবাইতো অন্যদিকে যাচ্ছে।
শপিং শেষ করে,বাড়ি যাওয়ার পথে মাঝরাস্তায় হঠাৎ বাইকের টার্ন অন্যদিকে ঘোরানোর সঙ্গে সঙ্গে একপ্রকার চেঁচিয়ে উঠলো অরু। ওর কথার পাছে ক্রীতিক গম্ভীর গলায় বললো,
—- সো হোয়াট?
—- সো হোয়াট মানে? এতো রাত হয়ে গিয়েছে বাড়ি যাবোনা?
—- আমিতো এখানেই, তাহলে বাড়ি যাওয়ার এতো তাড়া কিসের তোর?
কে আছে বাড়িতে?
অরু মুখ কালো করে বললো,
—- সবাই আমাদের রেখে চলে যাচ্ছে তাই আর কি…
ক্রীতিক অরুকে থামিয়ে দিয়ে স্পিডোমিটারের গতিবেগ বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
—- সবার কথা বাদ, ফোকাস অন মি, আমি যদি না ফেরার দেশে নিয়ে যাই, তবে তুই সেখানেই যাবি, ইভেন উইথ আউট এনি ফা’কিং কোশ্চেন। এখন ধরে বস।
অরু বললো,
—- ধরলাম তো।
ক্রীতিক তীর্যক কন্ঠে বললো,
—- আরও শক্ত করে ধর আমার হচ্ছে না, তোকে ফিল করতে পারছি না।
ক্রীতিকের কথায় অরু লজ্জায় ঠোঁট কামড়ে ধরে, পরক্ষণেই মাথাটা এলিয়ে দেয় ক্রীতিকের কাঁধের উপর।
ক্রীতিক রাইড করতে করতেই মৃদু হেসে বললো,
—- নাও পার্ফেক্ট বেইবি।
ওদিকে রাস্তা ছেড়ে বে-রাস্তায় মোড় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে বসেই চেঁচিয়ে উঠলো সায়র,
—– আরে ওদিকে কই যাচ্ছিস তোরা? রাস্তা তো এদিকে।
ক্রীতিক জবাব দেয়না, সায়রের দিকে তাকিয়ে একটু ভাব নিয়ে হেলমেটের গ্লাসটা টান মে’রে নামিয়ে দিয়ে ওদের থেকে দিগুণ গতিতে বাইক নিয়ে হারিয়ে যায় রাস্তার অদূরে।
অরু যখন বাইক থেকে নামলো তখন দেখতে পেলো এটা এয়ারপোর্ট গেইট। ক্রীতিক অরুর হাত ধরে নিয়ে গিয়ে ওকে একটা সেফ যায়গায় দাড় করিয়ে দিয়ে বললো,
—– বেইবি, ওয়েট কর আমি আসছি।
অরু তৎক্ষনাৎ দু-হাতে ক্রীতিকের বলিষ্ঠ হাতটা টেনে ধরে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
—- এয়ারপোর্টের মধ্যে কোথায় যাচ্ছেন আপনি? আমায় রেখে কোথায় চলে যাবেন সত্যি করে বলুন?
ক্রীতিক মৃদু হেসে অরুর দিকে সামান্য ঝুঁকে হাস্কিটোনে বললো,
—- তোকে ছেড়ে কোথায় যাবো আমি?
—- এই যে যাচ্ছেন।
ক্রীতিক অরুকে আস্বস্ত করে বললো,
—- দু মিনিটে ফিরে আসছি।ওকে?
অরু হ্যা সূচক মাথা নাড়ালে, ওর হাতে হেলমেটটা ধরিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে যায় ক্রীতিক।
তারপর যখন ফিরে আসে তখন ক্রীতিককে দেখে উৎকন্ঠায় বড়বড় হয়ে যায় অরুর দু’চোখ, আপনা আপনি ফাঁকা হয়ে যায় ওষ্ঠাধর।
চোখ দুটোতে বারবার পলক ছেড়েও নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছে না অরু। তাই ক্রীতিকের হাতের দিকে তাকিয়ে অস্ফুটেই অরু বলে ওঠে ,
—- ডোরা?
ক্রীতিক ডোরার বাস্কেটটা অরুর হাতে তুলে দিলো। অরু সহসাই বাস্কেট খুলে ডোরাকে কোলে নিয়ে বললো,
—— আপনি সত্যিই ডোরাকে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন?
ক্রীতিক পুনরায় হেলমেট পরতে পরতে বলে,
—– ডোরা এডপ্টেড ছিল না, তাই ফর্মালিটিস পালন করতে করতে দেরি হয়ে গেলো, নয়তো আমার সাথেই নিয়ে আসতাম।
অরু ডোরার গলায় আদুরে আঙুল বোলাতে বোলাতে বললো,
—- কার নামে এডপ্ট করলেন?
ক্রীতিক অরুকে হেলমেট পরিয়ে দিয়ে বললো,
—– দুজনার, মহামান্য পিতা মি. জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী, আর মহোদয়া মাতা মিসেস অরোরা জায়ান।
ক্রীতিকের কথায় ফিক করে হেসে দিয়ে ডোরাকে নিয়েই বাইকে উঠে বসলো অরু।
*
কিছুদূর গিয়ে একটা ফাঁকা রাস্তায় ব্রেক কষলো ক্রীতিক। ঘড়ির কাটা তখন বারোটার ঘর ছুঁই ছুঁই, চারিদিক নিস্তব্ধ আর শুনশান, পুরো পুরি নিরবতার মাঝে কর্ণকূহরে এসে বাড়ি খাচ্ছে ঝিঁঝি পোকার অক্লান্ত আওয়াজ।
এমন একটা যায়গায়, এতো রাতে বাইক থামানোর দরুন, উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো অরু, বললো,
—– কিছু হয়েছে?
ক্রীতিক বাইক স্ট্যান্ড করিয়ে বললো,
—- কিছু হয়নি নাম এক্ষুনি।
অরু নেমে দাঁড়ালো, পুনরায় তৎপর হয়ে শুধালো,
—-কি হয়েছে, রাগ করেছেন?
ক্রীতিক জবাব না দিয়ে নিজে বাইকে হেলান দিয়ে অরুকে টান মে’রে নিজের কাছে নিয়ে এলো।
ক্রীতিকের কর্মকান্ডে অরু বিস্ময়ে হতবাক, ও আশ্চর্য বনে গিয়ে বললো্,
—– কি করছেন?
ক্রীতিক একটানে অরুর চুলের গার্টারটা খুলে, ওর চুল গুলো বাঁধন হারা করে দেয়, অতঃপর হিসহিসিয়ে বলে,
—- দেনা পাওনা শোধ করছি, যেটা এয়ারপোর্ট বসেই করতাম। তোর ডোরাকে এনে দিয়েছি, এবার আমি যা চাইবো, সেটা তুই আমাকে দিবি।
অরু ক্রীতিকের বাঁধনের মধ্যে থেকেই কাইকুই করে বলে ওঠে ,
—- ছাড়ুন এটা মাঝরাস্তা।
—— চুপচাপ আমার কাজ করতে দে, নয়তো সারারাতেও ছাড়া পাবিনা।
অরু গলা খাদে নামিয়ে বললো,
—- কি করবেন আপনি?
ক্রীতিক অরুকে আরও কিছুটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে এসে বললো,
—- আগে আমাকে তুমি করে বল তারপর করছি।
অরু চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
—-পারবো না।
—– জাস্ট সে, তুমি।
ক্রীতিকের কড়া আদেশ, তারউপর মাঝরাস্তায় এভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে, অগত্যাই উপয়ান্তর না পেয়ে অরু বলে ওঠে ,
—- তুমি।
ক্রীতিক পুনরায় বলে,
— আবার বল।
অরু কা্ঁপা স্বরে বললো,
—- তুমি।
ক্রীতিক অরুর গলায় নাক ঘষতে ঘষতে বললো,
—- বারবার বল হার্টবিট, তোর মুখে তুমি ডাক শুনলে পা’গল হয়ে যাই আমি। যখন আমি খুব রে’গে যাবো, তখন তুই এই ট্রিকস টা প্রয়োগ করতে পারিস। আমি শান্ত হয়ে যাবো, প্রমিস।
ক্রীতিকের ভালোবাসায় কাতর অরু, পা দুটো ভে’ঙে আসছে, কোনোমতে ক্রীতিকের উপর নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ও।
কিন্তু ক্রীতিকের বোধ হয় সেটাও সহ্য হলোনা, ও তৎক্ষনাৎ ঘুরে গিয়ে অরুকে তুলে বাইকের সিটে বসিয়ে দিয়ে,তরিৎ বেগে নিজের অধর ডুবিয়ে দিলো অরুর নরম তুলতুলে ওষ্ঠাধরের ফাঁকে।
ক্রীতিকের হঠাৎ পদক্ষেপে কেঁপে উঠল অরু, চুপসানো শরীরটাকে একটু সস্থি দিতে শক্ত হাতে খা’মচে ধরলো পুরুষালী চওড়া বুকে লেপ্টে থাকা টি -শার্ট খানা।
রাত বাড়ছে, সেই সাথে চু’ম্বনের গভীরতা ও। তীব্র আ’লিঙ্গনের সাথে তাল মিলিয়ে ক্রমশ দলিত মথিত হচ্ছে অষ্টাদশীর ফিনফিনে কোমল ওষ্ঠাধর। আবেশিত নয়নে নয়ন এঁটে রাখা, মাতাল করা এই নির্ভীক, বেপ’রোয়া পুরুষই কেবল জানে এই গভীরতার শেষ কোথায়।
চলবে…..