#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি 🍁🍁
#পর্বঃ১১
#লেখনীতেঃsuraiya_rafa
প্রাপ্ত মনস্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।
সকল দৃশ্যপট কাল্পনিক।
মেঘ আর কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে ধরনী।উদীয়মান সূর্যের নিয়ন আলোয় চারিপাশ একটু হলেও পরিষ্কার দেখাচ্ছে। নয়তো আজ মোটেই রোদ্রজ্জল কোন দিন নয়।
সাভাবিক হাইওয়ে রাস্তার থেকেও কয়েকগুণ প্রসস্থ পিচ ঢালা কুচকুচে কালো রাস্তার মাঝ বরাবর এক নাগারে সাদা রঙের ব্রোকেন লাইন রোড মার্কিং টানা।ঠিক তার দুইপাশে পাহারাদারের মতো মাথা উঁচিয়ে দাড়িয়ে আছে ছোট বড় সারিসারি ম্যাপল গাছ।ম্যাপল গাছের ছোট ছোট বিশেষ আকারের রঙিন পাতাগুলি যেন একেক’টা শিল্পের নান্দনিক কারুকাজ। দেখলে মনে হবে রোদহীন মেঘে ঢাকা দিনে রাস্তার পাশের এই লাল কমলা ম্যাপল লিফ গুলোই আলো ছড়াচ্ছে পুরো রাস্তা জুড়ে,ইভেন উইথ আউট এনি সিঙ্গেল প্যানি…
পথচারীদের যাতায়াত সুবিধার্থে সুন্দর আকর্ষনীয় ম্যাপল গাছের অন্যপাশ দিয়ে চলে গিয়েছে আরও একখানা তকতকে সরু রাস্তা।
সেই রাস্তা ধরেই পায়ে পায়ে এগুচ্ছে সায়নী আর অরু। চাশমিশ আর এক্সট্রোভার্ট সায়নী বরাবরের মতোই এক মনে কথার দোকান খুলে বসেছে, ওদিকে ওর একটা কথাও অরু ভালোমতো মন দিয়ে শুনছে কিনা সেটা বোধ করা দুষ্কর। সায়নীর কথা মন দিয়ে না শোনার অবশ্য যথাযথ কারন আছে বৈকি।
ধবধবে শুভ্র রঙা চিকনকারী চুড়িদার সেই সাথে গ্রে রঙের উলের পাতলা সোয়েটার পরে পুরোদমে বাঙালি সেজেই ঘুরে বেরাচ্ছে অরু। ওদিকে সায়নীর পরনে স্কিনি জিন্সের সাথে ভারী কালো কোর্ট।
আজ রবিবার, মানে উইকএন্ড। এই মেঘলা শীতল উইকএন্ডের সকাল বেলা কম্ফোর্টার মুড়ি দিয়ে কেবলই এপাশ থেকে ওপাশ ঘুরে শুয়েছিল অরু। তখনই শুরু হয় সায়নীর একের পর এক কল। যেহেতু অরুর মোবাইলটা ক্রীতিক ভে’ঙে ফেলেছে তাই অনুর নাম্বারেই আপাতত কলের ঝড় তুলে ফেলেছে সায়নী।
শেষ মেশ না পেরে বিদেশী আদলের একমাত্র বাঙালী বান্ধবীর কথা রাখতেই সকাল সকাল ক্যাম্পাসে চলে এসেছে অরু। সায়নীর আর্জি একটাই আজ বাইক রেসিং ক্লাবে রাইডিং কম্পিটিশন আছে, জেকে ও থাকবে সেখানে। আর সায়নী অরুকে সাথে করে সেখানে নিয়ে তবেই যাবে।
প্রথমে একটু গাইগুই করলেও পরক্ষণে ক্যাম্পাসে এসে সায়নীর কথা রক্ষার সার্থকতাটা ধরতে পেরেছে অরু। মনে মনে অনেকটা খুশিও হয়েছে সায়নীর প্রতি, তার কারণ সকাল সকাল ক্যাম্পাসের গেইটেই দর্শন মিলেছে পছন্দের শ্যাম পুরুষের।অরুই নিখিল কে আগে দেখেছে, তবে কথা বলার সাহস পায়নি, কিন্তু নিখিল যখন অরুকে দেখলো, তৎক্ষনাৎ হাক পেরে নাম ধরে ডেকে উঠল সে,
— এই যে, অরোরা?
অরুকে আর পায় কে,দ্রুত পেছন ঘুরে সামনে গিয়ে দাড়ালো নিখিল ভাইয়ের,
অরু কাছে আসতেই নিখিল শুধালো,
— অরোরা তুমি ঠিক আছো? না মানে কালকে ওভাবে।
কালকের কথা মনে পরতেই,ওর দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে নিখিল ভাই আর সেই বিদেশিনীর একান্ত ব্যাক্তিগত উপচে পড়া হাসিখুশি মূর্হুতের ঘটনা। কেন এতো হাসছিল ওরা দুজন?আর মেয়েটাই বা কে? নিখিল ভাইয়ের বন্ধু? শুধুই কি বন্ধু?
অপার্থিব কিছু অপরিপক্ক প্রশ্ন আর কিছু অনাকাঙ্খিত মূহুর্তের কথা মাথায় কড়া নাড়ছে বারংবার। যার দরুন অরুর হাস্যোজ্জল মুখটা চুপসে এইটুকুনি হয়ে গেলো মূহুর্তেই।নিখিল ভাইয়ের এতোটা আগ্রহী প্রশ্নের জবাবটাও আর মুখ ফুটে দেওয়ার ইচ্ছে জাগলো না মনে।
কিন্তু নিখিলের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তখন একটুও প্রস্তুত ছিলোনা অরু। ও ভাবেনি,এরপর নিখিল যেটা বলবে তাতে ওর এসব অযাচিত ছেলেমানুষী দুশ্চিন্তা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে ক্ষনিকের মাঝে। তবে কথায় আছেনা বাস্তবের চেয়ে ভাবনারা একধাপ পিছিয়ে থাকে, সেসময় তাই হলো,
অরু কথার কোনো জবাব দিচ্ছে না দেখে নিখিল আগ বাড়িয়েই বললো,
—নেক্সট উইকএন্ডে আমাদের ব্যাচের একটা ছোটখাটো রিচার্জ টীম যাবে পাহাড়ে। বেশি দূরে নয় কাছেই এক দিনের ট্যুর। ফ্রিতে এডভেঞ্চার আর ঘোরাঘুরির সুযোগটা কেউ মিস করতে চাচ্ছে না তাই অনেক জুনিয়ররাও যাবে। তুমিও চাইলে যেতে পারো। আমি ব্যাবস্থা করে দেবো।
লাজুক অরু ঠাস করে বলে দিতে পারলো না যে হ্যা হ্যা নিখিল ভাই, আমিও যেতে চাই আপনার সাথে। তার বদলে ছোট্ট করে হুম শব্দটা উচ্চারন করে শুধু একপাশে মাথা কাত করে সম্মতি জানালো ও ।
অরুর সম্মতি জানাতে যতক্ষণ, তারপর আর এক দন্ডও দাঁড়ালো নিখিল। প্রচন্ড বেগে একপ্রকার তাড়া দেখিয়ে তৎক্ষনাৎ যায়গা ত্যাগ করলো সে।
*****************************************
সেই তখন থেকে জেকে স্যারের গুনগান করে যাচ্ছে সায়নী, মাঝেমধ্যে নিজের কথার সামিল করতে দুএকবার অরুকেও বলছে,
—তাই না বলো?
অরু সায়নীর কথা মতো হুম, হা করছে ঠিকই তবে ওর মনে চলছে অন্যকিছু। সেটাও অন্যকাউকে নয় সয়ং ক্রীতিককে নিয়েই। ও ভাবছে ট্যুরের কথাটা আপা জানলে যেমন তেমন, বকা ঝকা করে হলেও শেষমেশ যেতে দিতে রাজি হবে। কিন্তু ক্রীতিক? এই ঘার ত্যারা লোকতো জীবনেও রাজি হবেনা। উল্টে এমন ভাবে চোখ রাঙাবে,যে ভ’য়ে অরুর ছোট্ট হৃদপিন্ডটা ওখানেই কাজ করা বন্ধ করে দেবে। তাহলে সাধ করে নিখিল ভাই কে যে আশ্বাস দিয়ে এলো তার কি হবে??
—এ্যাই অরু, শুনতে পাচ্ছো আমার কথা??
হুট করে সায়নীর কনুইয়ের গুঁতোয় সম্বিত ফিরে পেলো অরু, ও কাঠেল পুতুলের ন্যায় উপর নিচ হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে বললো,
— হ্যা হ্যা, শুনছি বলো বলো,তারপর?
সায়নী ভ্রু কুচঁকে বিরক্তি ভাব প্রকাশ করে বলে,
—কিসের তারপর?? দেখো আমরা চলে এসেছি, অলরেডি রেসিং শুরু হয়ে গিয়েছে তাড়াতাড়ি এসো।
রাস্তার দু’ধারে থ্রি’লিং প্রিয় মানুষদের শ’য়ে শ’য়ে ভীর। সেই গাদাগাদি আর ভীরের ফাঁক গলিয়ে ওরা দুজনও যায়গা করে নিলো রাস্তার এক কোনে। ওরা যতক্ষণে এসেছে ততক্ষণে বাইকার’রা ইতিমধ্যে প্রতিযোগিতায় ব্যাস্ত।
অডিয়েন্সদের পাশে এসে দাড়াতে দাড়াতে অরু শুনতে পেলো জেকে নামের উচ্ছ্বাস। তারমানে সায়নী শুধু একা নয় এরাও রাইডার জেকের ভক্ত।
আচ্ছা এরা কেন এতো পাগল ক্রীতিকের জন্য? এরা কি আদৌও জানে ক্রীতিক কতোটা নির্দ’য়? ক্রীতিক মোটেই এই জনপ্রিয়তা ডিজার্ভ করেনা, চারিদিকে জেকের জয়জয়কার শুনে এসব উল্টোপাল্টা কথায়ই ভাবছিল অরু। তখনই সায়নী আবারও অরুকে ডেকে বলে,
— ওমাই গড, ওমাই গড দেখো দেখো এ্যাগেইন চ্যাম্পিয়ন।
অরুও এবার সচকিত হয়ে বাইক গুলোর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। সকালের উরন্ত পেজা তুলোর মতো শুভ্র মেঘ এতোক্ষনে কালো মেঘে পরিনত হয়েছে।চারিদিকে মেঘ ভেজা দমকা হাওয়া আর ঝিরঝিরি বৃষ্টিতেই বাইক রাইডিং এর শেষ রাউন্ড শেষ হয়েছে মাত্র।রেচিংএর মেইন পয়েন্ট ওদের থেকে খানিকটা দুরে হবার কারণে চোখ উঁচিয়ে দেখতে হয় সেখানটা। তবে এতোটা দূর থেকেও স্ট্যান্ড করানো বাইক গুলোর মধ্যে সারির প্রথম বাইকটাতে বসা ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট আর ব্ল্যাক হেলমেট পরিহিত বাইকার টাই যে ক্রীতিক সেটা বুঝতে বাকি নেই অরুর।
কারণ জেকের বডি স্ট্রাকচার সবার থেকে আলাদা। কাল্পনিক গ্রীক গডের বাস্তব চিত্র বলা চলে। এক ঝলকে দেখলে মনে হবে উপরওয়ালার শখের কারুকাজ এই জায়ান ক্রীতিক নামক সুদর্শন পুরুষটা। তবে ক্রীতিকের সৌন্দর্য নিয়ে অরুর এসব অগভীর ভাবনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলোনা, তার আগেই চোখের সামনে দৃশ্যমান হলো এক অপ্রীতিকর নি’ন্দনীয় ঘটনা। অরুদের থেকে বেশ অনেকটা দুরে রাস্তার ঠিক মাঝখানে ফেলে অন্য এক প্রতিযোগিকে হ’কিস্টিক দিয়ে ইচ্ছে মতো মার’ছে ক্রীতিক। ওর মা’রে’র গতিবেগ এতোটাই বেশি যে লোকটা উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ টুকু পর্যন্ত পাচ্ছে না। কিন্তু এভাবে মা’রা’র কারন কি??
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ইতিমধ্যে মুশল বারিধারায় রূপ নিয়েছে । আশেপাশের জটলা পাকানো ভীর ছাড়িয়ে অনেকেই যায়গা করে নিয়েছে কোনো না কোন শুকনো ছাউনি অথবা ছাতার নিচে। তবে অরুর আপাতত বৃষ্টিতে খেয়াল নেই আর না আছে ক্রীতিকের ।
ঝুম বৃষ্টিতে কথা শোনার যো নেই মোটে,তবুও অরুকে উদ্দেশ্য করে সায়নী চেঁচিয়ে বললো,
— অরু, দ্রুত চলো, ভিজে যাচ্ছি। কোন একটা ছাউনি খুজে তার নিচে গিয়ে দাঁড়াই।
অরুর কান অবধি সে কথা পৌঁছালো কি না সন্দেহ, আর না’তো ও কোন ছাউনির নিচে গিয়ে আশ্রয় নিলো। বরং ঝুম বৃষ্টির মাঝেই দ্রুত এগিয়ে গেলো সামনের প্রসস্থ রাস্তার দিকে। এগিয়ে যেতে শুনতে পেলো, অনেকেই বলাবলি করছে,
জ্যাকসন নামক বাইকারটা জেকের মায়ের নাম করে কিছু একটা বাজে গা’লি দিয়েছে, আর তাই লোকটা সেই ছোট্ট একটা গা’লি দেওয়ার মাশুল চোকাচ্ছে গত আধঘন্টা যাবত এক নাগাড়ে হ’কিস্টিকের মা’র খেয়ে। আশ্চর্যের বিষয় হলো কেউ ক্রীতিককে থামাচ্ছে না পর্যন্ত। এইসব দৃশ্য কি এদেশের মানুষের কাছে এতোটাই সাভাবিক আর উপভোগ্য?
— দয়ামায়’হীন নি’র্দয় আমেরিকান।
নিজের আ’ক্রোশ দমিয়ে রেখে মনে মনে কথাটা ছাড়লো অরু।
.
.ওদিকে নিজের সর্ব সর্বশক্তি প্রয়োগ করে জ্যাকসনের শরীরে একের পর এক হ’কিস্টিক ভা’ঙছে ক্রীতিক।মা’রতে মা’রতে ওর নিজ হাতের অবস্থাও বেগতিক, কিন্তু সেইসবে বিন্দুমাত্র নজর নেই ওর। আপাতত নিজের দমিয়ে রাখা জি’দ আর তপ্ত মস্তিষ্কের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে ব্যাস্ত ও। কেন যেন মনে হচ্ছে এই মা’রটা জ্যাকসনের বহু দিনের পাওনা। রেসিং ক্লাবে ক্রীতিককে টেক্কা দেবার মতো রাইডার যদি কেউ থেকে থাকে সেটা জ্যাকসন। রাইডিং-স্ট্যান্ডিং সব কিছুতেই বেশ পারদর্শী জ্যাকসন। তবে এ যাবত কোন ম্যাচেই জেকে কে হারাতে না পারার জি’দটা ভেতরে ভেতরে ওর রয়েই গিয়েছে বরাবর । সামনা সামনি বুঝতে না দিলেওও,নিজ দেশের রেচিং ক্লাবে ফরেইনার একটা ছেলের এতোটা জনপ্রিয়তা জ্যাকসন মোটেই সহ্য করতে পারতো না, সেই যের ধরেই পেছনে পেছনে নানা কৌশলে বিভিন্ন ভাবে ক্রীতিকের ক্ষ’তি করার ফন্দি এঁটেছে বহুবার। তবে একটা স্ট্রং বন্ধু মহল আর ক্রীতিকের সুকৌশলী বুদ্ধিদীপ্ত মস্তিষ্কের কাছে সেগুলো বরাবরই ফে’ইল করে গেছে। ক্রীতিক ভালোভাবেই জানতো কাজ গুলো কে করছে, বা কার দ্বারা ঘটছে। তবে এসব খুব একটা গায়ে লাগাতো না ও। বরং পিঠ পিছনেই দিয়ে যেতো একের পর কৌশলী দাবার চাল।কারণ ক্রীতিকের কাছে ওর করা ফন্দি গুলো হাস্যকর ঠেকতো বরাবরই।সেইসাথে মা’রাত্নক ইনটারেস্টিং ও মনে হতো। কারন ক্রীতিক,অর্নব,এলিসা,আর সায়র এর থেকেও বড়বড় দাবার চাল চেলে অভ্যস্ত।
তবে আজ এই মূহুর্তে জ্যাকসন অস্ফুটে যেই শব্দটা উচ্চারণ করেছে তার মূল্য তো ক্রীতিক ওকে হাড়েহাড়ে বুঝিয়েই ছাড়বে।
আজ মনটা বেশ ফুরফুরে ছিল ক্রীতিকের, ওই জন্যইতো ক্লাবের কল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে এসেছিল জোস একটা রাইড করতে। সবার উচ্ছ্বাসে জোয়ার দিতে বাইক রাইডও করেছিল প্রায় দু’শো কিলোমিটারের আঁকাবাকা অমসৃণ রাস্তা এবং শেষমেশ প্রতিবারের মতো আজও চ্যাম্পিয়ন তকমাটাও ওর গায়েই লেগেছিল। সব কিছু সাভাবিক,ক্রীতিকের মুড ও ঠিকঠাক । তখনই ব্যাথর্তা হটাতে জ্যাকসনের মুখ ফুটে বেরিয়ে আসে অনাকাঙ্ক্ষিত দুটো শব্দ।
— মা*** ফা’কিং বা’স্টা’র্ড।
জ্যাকসন নিজেও বুঝতে পারেনি যে ক্রীতিক কথাটা শুনে ফেলবে।
তবে ওর ব্যাড লাক, ক্রীতিক কথাটা স্পষ্ট ভাবে শুনতে পায়,
ব্যাস, তৎক্ষনাৎ ক্লাবের মধ্যে থেকে হ’কিস্টিক এনে উইথ আউট এনি ওয়া’র্নিং ওকে ইচ্ছে মতো মা’রতে শুরু করে ক্রীতিক। না নিজে মুখ দিয়ে কোন একটা শব্দ করেছে আর না জ্যাকসনকে করতে দিয়েছে। একেএকে ওর পি’ঠে ভে’ঙে’ছে চারখানা সরু ধাঁচের মজবুত কাঠের হ’কিস্টিক। তবুও যেন মস্তিষ্কটা শান্ত হবার নাম নিচ্ছে মোটেই। তবে ওর অ’শান্ত মস্তিষ্ক খুব বেশিক্ষন আর অ’শান্ত রইলো না। বেশ খানিকটা পরেই চলমান উত্ত’প্ত রা’গের বহিঃপ্রকাশে খুব বড়সড় একটা বাঁধা প্রাপ্ত হলো ক্রীতিক।
খুব পরিচিত আর আপন একটা রিনরিনে মায়াভরা কন্ঠস্বর ভেসে এলো ক্রীতিকের দুই’কর্ণকূহরে।
ওর আ’ক্রম’নাত্তক পেশিবহুল বাহুটা দুইহাত দিয়ে আগলে ধরে উদ্বিগ্ন হয়ে অরু বললো,
— কি করছেন,মে’রে ফেলবেন নাকি লোকটাকে?
ক্রীতিক তরিৎ গতিতে ঘুরে তাকালো। কেবল পরিচিত নয়, শুধু আপনও নয়, বক্ষপিঞ্জনের গহীনে লুকিয়ে রাখা আকাশসম অনুভূতির ছড়াছড়ি, আর অজনা বেসামাল উন্মাদনা যে মেয়েটাকে নিয়ে, বয়স,সম্পর্ক সব কিছুর মাথা খেয়ে বছর ত্রিশের হৃদয়টা যার অনুপস্থিতিতে আনচান করে,যাকে দেখলে সবার অগোচরে অবাধ্য, অপ্রতিরদ্ধ ইচ্ছেরা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে বারংবার এখন এই মূহুর্তে সেই পিচ্চি অষ্টাদশীকে দেখেই, মস্তিষ্কে হলহলিয়ে বইতে থাকা জল’ন্ত আ’গ্নেয়গি’রির লাভাটা মূহুর্তেই দপ করে নিভে গেলো জায়ান ক্রীতিকের।
ধরনীতে ঝুম বৃষ্টি তখনও একই গতিতে বহমান। অরুর চোখ,নাক, ঠোঁট সব কিছু চুইয়ে চুইয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি কনারা। সফেদ রঙা চুড়িদারটা ভিজে একাকার। ঠান্ডার তোপে তিরতির করে কাঁপছে সরু চিবুক আর গোলাপি রঙা ওষ্ঠাধর। বৃষ্টি ভেজা অরুকে দেখে কয়েকমূহুর্তের জন্য থমকে গেলো ক্রীতিক। সব ছেড়ে ছু’ড়ে হুট করেই রা’গ হতে লাগলো বহমান বৃষ্টি কনাদের উপর। যেগুলো ও আজ পর্যন্ত ছুয়ে দেখতে পারলো না।সেগুলো কিনা বৃষ্টি কনারা এতো সহজে ছুঁয়ে দিচ্ছে? আশ্চর্য ।
বৃষ্টির সাথে ক্রীতিকের ক্রো’ধ বেশিক্ষণ টিকলো না বৈকি। কারন তার আগেই অরু আবারও কথা ছু’ড়লো ওর পানে।
— কেন এভাবে মা’রছেন ওনাকে? আপনার দয়ামায়া নেই?
অরুর কথায় ক্রীতিক পেছনে ঘুরলো, দেখলো একটা বি’শ্রী কপট হাসি ঝুলিয়ে অরুর দিকে তাকিয়ে আছে জ্যাকসন। জ্যাকসনের হাসিটা চোখে পরতেই এতোক্ষণের ভ্রম ছুটে গেলো ক্রীতিকের। ও তৎক্ষনাৎ ক্ষী’প্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো অরুর দিকে। যেন চোখ দিয়েই ঝ’লসে দেবে অরুকে। ক্রীতিকের অ’গ্নিমূর্তি দেখে অরু আড়ালে শুষ্ক ঢোক গিলে থেমে গেলো।
ক্রীতিক চোয়াল শক্ত করে বললো,
— তুই এখানে কি করছিস? কে নিয়ে এসেছে তোকে?? ক্রীতিকের কপাল জুড়ে হাজারো চিন্তার ভাঁজ।
অরু এবার পুরোপুরি নিশ্চুপ, মানবতা দেখাতে গিয়ে যে নিজেই ফেঁ’সে গিয়েছে এতোক্ষণে তা বোধগম্য হলো ওর।
ক্রীতিক কিছু একটা ভেবে ক্লাবের একজন কে দিয়ে একটা হেলমেট আনালো, তারপর ওটা অরুকে পরিয়ে বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বললো,
—দ্রুত বাইকে ওঠ।
অরু করুন দৃষ্টিতে জ্যাকসনের দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বললো,
— ওনাকে এভাবে, ফেলে রেখে, না মানে যদি কিছু হয়ে যায়।
— ওর ব্যাবস্থা প্রত্যয় করবে, আমি বলে দেবো, তুই ওঠ।
বৃষ্টির মাঝেই চারদিকে তাকিয়ে সবাইকে একবার পর্যবেক্ষন করে নিলো অরু। আশেপাশে যত মানুষ, যে যেখান থেকে পারছে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই নিশ্চয়ই অরুর উপর বেজায় চটে গিয়েছে, কিন্তু এই মূহুর্তে ওর হাতে কিছুই নেই, এখন কথা না শুনলে নির্ঘাত এখানে দাঁড়িয়েই ক্রীতিকের হাতে মা’র খেতে হবে, তাই অপারগ অরু, চুপচাপ উঠে পরে বাইকের ব্যাক সিটে। মেয়েদের মতো করেই কাঁচুমাচু হয়ে বসেছে ও। তখনই নিজে হেলমেট পরতে পরতে ক্রীতিক বলে,
—ধরে বস।
অরু, খুব সংকোচে ক্রীতিকের জ্যাকেটটা একটু খা’মচে ধরে।
কিন্তু বাইক তার যায়গা পরিবর্তন করতেই ও এক প্রকার হুমড়ি খেয়ে পরলো ক্রীতিকের পিঠের উপর।
— ধরে বসতে বলেছিনা?
ক্রীতিকের ধম’ক খেয়ে এবার সত্যিই ওর কাঁধে হাত রাখলো অরু। অরুর হাতের আর কানের ছোট্ট অলংকার গুলো থেকে রিনঝিন আওয়াজ হচ্ছে। খুব কাছাকাছি বসাতে সেই আওয়াজ সোজা গিয়ে ক্রীতিকের হৃদয়ে লাগছে, সেই সাথে অরুর বৃষ্টি ভেজা চুল আর শরীর থেকে ভেসে আসা মেয়েলী সুঘ্রানে কেন যেন ওর দমব’ন্ধ হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে অরুকে একান্তে কাছে পেতে খুব কাছে।যতটা কাছাকাছি এলে অরুর আর ক্রীতিকের মাঝে সেন্টিমিটার দূরত্ব ও ঘুচে যাবে, ঠিক ততটা। কিন্তু এই মূহুর্তে সেটা সম্ভব নয়, আর না অরুকে এতো কাছে বসিয়ে চুপচাপ বসে থাকা সম্ভব।তাই মনের মধ্যে একান্ত গোপনে বেড়ে ওঠা অবাধ্য বাসনা গুলোকে দূর করার উদ্দেশ্যে, রাইড করতে করতেই নিরবতা ভা’ঙে ক্রীতিক,একটু আগের সেই গমগমে রা’গি আওয়াজের পরিবর্তে নরম আওয়াজে অরুকে শুধায়,
— আচ্ছা অরু, আমি যে এতোগুলা বছর দুরে ছিলাম তোর আমাকে মনে পরেনি কখনো?
ক্রীতিকের কথার পিঠে অরু কি উত্তর দেবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না, কারন ক্রীতিক যখন দেশ ছাড়ে তখন অরু নিতান্তই বাচ্চা মেয়ে, কতইবা বয়স হবে দশ কি এগারো।
অরু নিশ্চুপ দেখে ক্রীতিক আবারও শুধায়,
— বাবার মৃ’ত্যুতে যখন গিয়েছিলাম, তুই আমাকে দেখেছিলি?
এবার অরু সময় নষ্ট না করেই উত্তর দিলো।
—কি করে দেখবো, আপনিতো বাড়িতে যাননি।
ক্রীতিক জবাবে একটু বাঁকা হেসে বললো,
— আমি কিন্তু তোকে দেখেছি, ঠিক আজকের মতোই একটা সাদা ড্রেস পরেছিলি। তোর মা আমার বাবার জন্য কাঁ’দছিল খুব।তুই আর অনু তার পাশেই দাড়িয়ে ছিলি।
ক্রীতিকের কথায় অরু চমকালো, কারন ওর দেওয়া একটা বর্ননা ও ভুল নয়। অরুর জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো,
—আপনি কি করে দেখলেন?
কিন্তু ও জিজ্ঞেস করতে ভ’য় পাচ্ছে, পাছে না আবার ক্রীতিক রে’গে গিয়ে এই বৃষ্টির মাঝেই ওকে বাইক থেকে নামিয়ে দেয়।ওদিকে অন্তহীন কৌতুহল গুলো মাথার মধ্যে কিলবিল করছে অযথাই । তবুও জিজ্ঞেস করার সাহস নেই।কি বলতে কি বলবে আবার রেগে মেগে আ’গুন হয়ে যাবে।তার থেকে চুপচাপ থাকাই শ্রেয়।
অরুর কূলহীন ভাবনার মাঝেই মাঝ রাস্তায় বাইকের ব্রেক কষলো ক্রীতিক। ক্রীতিকের এহেন কান্ডে অরুর আত্মা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো। মনে মনে ভাবছে,
— এই রে চুপ থেকেও ভুল করলাম নাকি? এই ঝুম বৃষ্টিতে মাঝরাস্তায় গেট আউট বলে নামিয়ে দিলে , কোথায় যাবো আমি?
—কি হলো নাম! কাঁধ হালকা পেছনে ঘুরিয়ে বলে ওঠে ক্রীতিক।
জবাবে অরু মুখ চোখ কালো করে বললো,
— না মানে এই বৃষ্টির মাঝে…
অরু কথা শেষ করার আগেই ক্রীতিক বলে,
— হ্যা বৃষ্টির জন্যই তো, সামনে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না, তারউপর এতো ভিজলে জ্বর চলে আসবে নিশ্চিত।
— না না আমি ঠিক আছি।
— আমি তোর কথা বলিনি, আমার কথা বলেছি।
এই বলে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে একটা ক্যাফের করিডোরে গিয়ে আশ্রয় নিলো ক্রীতিক। অরু পেছন পেছন যেতে যেতে ঠোঁট উল্টে মিনমিনিয়ে বললো,
— আমার কথা কেনইবা বলবেন? নিজেকে ছাড়া আর কিছু বোঝেন নাকি আপনি? সা’র্থপর লোক।
অরু এগিয়ে গিয়ে ক্রীতিকের পাশেই দাঁড়ালো। বৃষ্টি আর বাতাসের গতিবেগ এতোই বেশি দেখলে মনে হবে দিন দুপুরে রীতিমতো ঝড় শুরু হয়ে গিয়েছে।
কাচেঁর দরজার ভেতরে ঝিঁমুতে থাকা স্টাফ ছাড়া পুরো এরিয়াটাই ফাঁকা পরে আছে। চারিদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে অরুর চোখ পড়লো ক্রীতিকের হাতের দিকে,বৃষ্টি আর র’ক্ত একাকার হয়ে টুপটুপ করে হাত দিয়ে ঝরে পরছে র’ক্ত ভেজা পানি।
অরু সেদিকে তাকিয়ে ভ্রুকুটি করে মনেমনে বললো,
— আশ্চর্য এই লোকের অনুভূতি শক্তি নেই নাকি? কতক্ষণ ধরে এভাবে র’ক্ত ঝরছে কে জানে??
কিছু একটা ভেবে ব্যাগ থেকে নিজ হাতের নকঁশি কাজ করা শুকনো রুমালটা বের করে একটু সাহস করেই ক্রীতিকের র’ক্তা’ক্ত হাতে বেধে দিলো অরু। ব্যাথা যায়গাতে একটু আরাম অনুভব হতেই নিজ হাতের দিকে চোখ দিলো ক্রীতিক। দেখলো সুতোয় কাজ করা একটা মেয়েলি রুমাল ওর ক্ষ’তস্থানে খুব সাবধানে বেধে দিচ্ছে অরু।
ক্রীতিক বাধা দিলোনা, এমনকি টু শব্দ ও উচ্চারণ করলো না, বরং অরু নিজের কাজ শেষ করে উপরে মাথা তুলতেই চোখ রাখলো অরুর মায়াবী চোখ জোড়ায়।
ক্রীতিকের চোখের ভাষা আপাতত পড়তে পারছে না অরু, ক্রীতিক রে’গে গেলো কিনা সেটাই আপাতত ভাবছে ও। ক্রীতিক ধীর গতিতে নিজের মাথাটা অরুর মুখের সামনে নিয়ে এলো। অনেকটা কাছে, যতটা কাছে এলে অরুর শরীরের মিষ্টি সুঘ্রানটা ক্রীতিক খুব সহজে অনুভব করতে পারে।
অরু ভ’য় পেয়ে একটু অস্পষ্ট সুরে বললো,
—রর..র’ক্ত ঝরছিল তাই ভাবলাম। আপনার আনইজি লাগলে খুলে ফেলতে পারেন, ক..কোন সমস্যা নেই।
অরুর কথায় পাত্তা না দিয়ে চোখে একরাশ মাদকতা নিয়ে অরুর দু’চোখে চোখ রেখে, নিজের মুখটা অরুর কানের খুব কাছে নিয়ে ক্রীতিক হাস্কি স্বরে বললো,
— এতো বেশি দূর্বল করে দিসনা অরু।নয়তো ক্ষ’তিটা তোরই হবে। আমার হাত থেকে নিজেকে বাঁচা’তে পারবি না। বিশ্বাস কর, আমি খুব করে চাইছি, আজকে অন্তত আমার হাত থেকে বেঁচে যা তুই।
ক্রীতিকের নেশা ধরা কন্ঠস্বর আর তপ্ত শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে কাঁপছে অরু। কনকনে ঠান্ডার মাঝে হুট করেই কেমন গড়ম হয়ে উঠলো শরীরটা । জীবনে প্রথম কোনো ছেলে এভাবে এতোটা কাছাকাছি এসেছে অরুর যার দরুন ভেতরে তোলপার হয়ে যাচ্ছে অজানা অনুভূতির দল।এই মূহুর্তে অরুর জন্য মেয়েলী অনুভূতি গুলো সামলানো বেশ মুশকিল। এককথায় দূর্বিসহ।একটা নরম ভেজা অনুভূতি হৃদয় ছুয়ে যাচ্ছে বারংবার , এমন অনুভূতি গুলো আগে কখনোই হৃদয়ে অনুভব করেনি অরু। হুট করেই ক্রীতিকের কাছ থেকেই কেন? কই নিখিল ভাই সামনে এলেতো এমনটা হয়না। তলপেটে হুটহাট প্রজাপতি উড়াউড়ি করেনা। তাহলে জায়ান ক্রীতিকের মতো অপছন্দের লোকটার সান্নিধ্যেই কেন এমন হয়? এটাতো ঠিক নয়, মোটেই ঠিক নয়। ও এই নিস্তব্ধতা আর বেসামাল অনূভুতি গুলোকে মাথা থেকে ঠেলে সরিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
— আপনি কেন আমাকে মা’রতে যাবেন, কি করেছি আমি??
— কখন বললাম আমি তোকে মা’রবো?
— এই যে বললেন, আপনার হাত থেকে নিজেকে বাঁ’চাতে পারবো না।
অরুর কথায় ক্রীতিকের ঠোঁটে খেলে গেলো একটা চমৎকার বাঁকা হাসি। ও অরুর থেকে নিজের দূরত্ব খানিকটা বারিয়ে হট করেই অরুকে হ্যাচকা টানে পেছনে ঘুরিয়ে দিলো, তারপর একটানে ওর লম্বা চুল থেকে গার্ডারটা খুলে নিলো নিজ হাতে। সঙ্গে সঙ্গে অরুর দীঘল কালো একঝাঁক ভেজা চুল আঁচড়ে পরলো সমস্ত পিঠ জুড়ে।
অরু সাবধানে পেছনে ঘুরে বললো,
— চুল কেন খুললেন??
ক্রীতিক ভাবলেশহীন কন্ঠে জবাব দিলো,
—বৃষ্টির দিনে সাদা কেন পরেছিস??
ক্রীতিকের কথার মানে বুঝতে পেরে প্রচন্ড লজ্জায় নিজের দু-হাত ভাঁজ করে নিলো অরু। তারপর বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
— আর অপেক্ষা করতে হবে না, চলুন বাসায় যাবো।
ক্রীতিক আর কিইবা করবে,মনে মনে ভাবলো, অরুকে এভাবে সরাসরি লজ্জা দেওয়াটা তার উচিৎ হয়নি, যতই হোক অরু ওর থেকে বয়সে অনেক বেশি ছোট।যা বলেছে বলেছে এখন আর করার কিছুই নেই, ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ও নিজেও এগিয়ে গিয়ে বাইকে বসে পরলো।
*****************************************
বাড়িতে আসতেই অরু সোজা চলে গেলো নিজের রুমে। রুমে ঢুকতেই দেখতে পেলো অনু ব্যালকনিতে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে আর মুঠো ফোনে কারও সাথে কথা বলছে। অরু সেদিকে খুব একটা নজর দিলোনা, কারণ অরু জানে ফোনের ওপাশের লোকটা কে।তাই সোজা চলে গেলো ওয়াশরুমে।
একটা আরামদায়ক হট বাথ শেষে চুল মুছতে, মুছতে বের হয়ে দেখলো, মাত্রই কথা শেষ করে রুমে এসেছে অনু। আজ রবিবার তাই ওর পার্টটাইম নেই, তারউপর আবহাওয়ার জন্য হসপিটালেও যেতে পারেনি সকালে। তাইতো আজ অসময়ে বাসায় আছে অনু।
অরু বেরুতেই অনু শুধায়,
— এভাবে ভিজেছিস কিকরে?
অরু খাটে বসতে বসতে বললো,
— সে অনেক কথা পরে বলবো। তার আগে তুই বলতো আপা, ক্রীতিক ভাইয়ার মা কোথায়??
অরুর অযাচিত প্রশ্নে অনুর চোখ বড়বড় হয়ে গেলো, ও সচকিত হয়ে অরুকে বললো,
—- তুই হঠাৎ এসব কথা নিয়ে কেন পরলি, তারউপর ক্রীতিক ভাইয়া এখন বাড়িতেই আছেন, উনি ওনার মায়ের নামটাও শুনতেও পারেননা।
অরু মনে মনে বললো, সত্যিই কি শুনতে পারেননা না? তাহলে মাকে নিয়ে কথা বলায় আজ লোকটাকে ওভাবে মা’রলো কেন?
— কিরে কি ভাবছিস?
— আপা, বলনা ওনার মা কোথায়?
অনু একটু ভাবুক হয়ে বললো,
—- আমি খুব বেশি কিছু জানিনারে অরু, মায়ের কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি, ওনার মা বাঙালি নন, আমেরিকান বংশভূত কোন বিদেশিনী। শুধু বিদেশিনীই নন শোবিজ জগতের কোন নামকরা তারকা।যৌ’বন কালে ক্রীতিক ভাইয়ার বাবা যখন বিদেশে পড়াশোনা করতে আসেন তখনই নাকি ভালোবেসে বিয়ে করেন তারা।
অরু কৌতূহল নিয়ে শুধালো,
— তাহলে উনি চলে গেলেন কেন??
অনু দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
— উনি ভালোবেসে বিয়ে সংসার করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু নিজের ক্যারিয়ার কিংবা ফ্যান্সি লাইফস্টাইল কোনোটারই মায়া ছাড়তে পারেননি পরবর্তীতে, তাই খুব ছোট বেলাতেই ক্রীতিক ভাইয়াকে রেখে আবারও নিজ গন্তব্যে পারি জমান তিনি।
অরু, জ্ঞানীদের মতো মাথা দুলিয়ে বললো,
— ওই জন্যই ক্রীতিক ভাইয়া দেখতে পুরোপুরি বাঙালিদের মতো না।মনে হয় নানা বাড়ির চেহারা পেয়েছে ।
অনু ঠোঁট উল্টে বললো,
— হবে হয়তো, কিন্তু তুই হঠাৎ এসব নিয়ে পরলি কেন??
ততক্ষনে বিড়াল ছানা ডোরা এসে অরুর পায়ের কাছে লেজ নারছে।
অরু ডোরাকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,
— তুই থাক আমি একটু আসছি।
— আরে কোথায় যাচ্ছিস? চুল থেকে পানি ঝরছে তো, আয় মুছিয়ে দিই। ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
পেছন থেকে হাক পেরে যাচ্ছে অনু। তবে অরু আর তাতে কান দিলো না। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।
****************************************
ডোরাকে কোলে নিয়েই হল রুমে এলো অরু। কিন্তু যখন দেখলো হল রুমে কাউচের উপর ক্রীতিক বসে আছে,তৎক্ষনাৎ ডোরাকে কোল থেকে নামিয়ে অন্যদিকে ভাগিয়ে দিলো ও। ডোরাকে বিদেয় করতে করতে অরু খেয়াল করলো ফাস্টএইড বক্স নিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছে ক্রীতিক।
দেখে মনে হচ্ছে একটু আগেই শাওয়ার নিয়েছে, পরনে ব্লু হোয়াইট কম্বিনেশনে টিশার্ট আর থ্রী কোয়ার্টার। মাথার স্টাইলিস্ট চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে লেপ্টে আছে। একটু আগে আপার বলা কাহিনি আর ক্রীতিকের ক্ষ’তযুক্ত হাত দেখে কোথায় যেন বড্ড মায়া হলো অরুর। কেন যেন হুট করেই মনে হলো ক্রীতিকের এমন বেপরোয়া, র’গচটা, আর খামখেয়ালি সভাব গুলো নিতান্তই সাভাবিক।
অনেকক্ষণ ধরে অরুকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজের গলায় ঝোলানো তোয়ালেটা ওর মুখের উপর ছু’রে মা’রলো ক্রীতিক, ভ্রকুঞ্চিত করে প্রশ্ন করলো,
—- এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন, আমার কি রূপ বেরিয়েছে?
অরু মুখের উপর থেকে তোয়ালেটা সরিয়ে কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে ক্রীতিকের পাশে বসে হাত বাড়িয়ে বললো,
—-দিন আমি অসুধ লাগিয়ে ব্যা’ন্ডেজ করে দিচ্ছি।
— তোর অনেক সা’হস বেড়ে গিয়েছে অরু। আজকাল আমাকে ভ’য় পাসনা দেখছি।
— তা বলতে পারেন।
ক্রীতিকের যা বলার ইচ্ছে হয় তাই বলতে দিয়ে, নিজের ছোট ছোট হাত দিয়ে ওর পুরুষালী হাতটাকে ধীরে ধীরে সফেদ রঙের ব্যা’ন্ডেজে মুড়িয়ে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো অরু।
চলবে………
#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি 🍁🍁
#পর্বঃ১২
#লেখনীতে_suraiya_rafa
[কপি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[প্রাপ্তমনস্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]
পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যাচ্ছে ধীরে ধীরে। গোধূলির আকাশ সিদূর রাঙা হয়ে আছে। গর্জে ওঠা সাগরের উত্তাল ঢেউ আর শঙ্খচিলের চিউ চিউ গলা ফাটানো আওয়াজ ভেসে আসছে ক্ষনে ক্ষনে। খানিক বাদে বাদে এলোমেলো বাতাসে বালু আস্তরিত সাগর কোল ভিজে যাচ্ছে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের পানিতে। মাঝে মধ্যে সেই পানি পার ছাপিয়ে এসে আঁচড়ে পরছে মোমের মতো ফর্সা দু’পায়ে। পায়ের সাথে সাথে চিকচিকে বালুতে ভরে যাচ্ছে সুন্দর কারুকাজ করা রুপোলী নুপুর জোড়া। অনু সাগরের কোল ঘেষে নরম বালুতে , “দ” আকারে বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে হাত দিয়ে ভেজা নুপুরটা নাড়াচাড়া করছে সেই কখন থেকে। এতোক্ষণ একাই বসেছিল। তবে একটু আগেই ওর পাশ ঘেঁষে বসে পরে প্রত্যয়। হাতে দুটো বাবল টি এর জার।
একটা বাবল টি’তে স্ট্র ঢুকিয়ে অনুর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে প্রত্যয় বলে,
— এখানকার বাবল টি অনেক ফ্যামাস,টেস্ট ইট।
অনু হাত বাড়িয়ে সেটা গ্রহন করে নিঃশব্দে একটা সিপ নেয়, আসলেই মজার চা টা।কিন্তু এতো বড় জারে চা কে খায়? ভাবছে অরু।
নিস্তব্ধতা কাটিয়ে প্রত্যয় বললো,
— এবার বলুন, হঠাৎ করে এই অধমের তলব কেন করলেন?
—- তার আগে আপনি বলুন, এতদূরে কেন নিয়ে এলেন? আমিতো স্রেফ হসপিটালের সামনে ওয়েট করতে বলেছিলাম।
অনুর জবাবে প্রত্যয় হেসে বলে,
— আপনি কি করে ভাবলেন যে, শুধু মাত্র দেখা করেই আমি ক্ষান্ত হবো?
প্রত্যয়ের কথার জবাবে, অনু একটু ব্যাথাতুর হেসে বললো,
— আমার জীবনটা সামনে থেকে দেখতে যতটা সহজ আর সাবলীল মনে হয় ততটাও সহজ নয়,প্রত্যয় সাহেব। হুটহাট ডেটে যাওয়া, ঘুরে বেড়ানো, দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে একাকী সময় কাটানো কোনোটাই আমার দ্বারা সম্ভব নয়।
আপনি হয়তো আরও একটা জিনিস জানেন’না আমি আন্ডার গ্রাজুয়েট। ইন্টারমিডিয়েটের পর আর পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি আমার।
— এগুলো আমাকে কেন বলছেন?
অনু রোবটের মতো জবাব দেয়,
— আমি নিজেও জানিনা আপনাকে কেন এসব বললাম, শুধু মনে হলো বলা উচিৎ।
প্রত্যয় সাগরের দিকে দৃষ্টিপাত করে বললো,
— তারমানে আপনি বুঝতে পারেন আমি আপনার জন্য কি ফিল করি তাইতো?
অনু জবাব দিলো না, বরং আগের ন্যায় মাথাটা এলিয়ে দিলো দু’হাটুর উপর, অহেতুক তাকিয়ে রইলো অন্যদিকে।তখনই কানে এসে পৌঁছালো প্রত্যয়ের ডিপ ভয়েস।
—- আমাকে সময় দিতে হবেনা, আমার সাথে সারাদিন কথা বলতে হবে না,আমাকে প্রেমিক ভাবতে হবেনা, প্রেমিকার মতো আবদারও মেটাতে হবেনা, আমার খোঁজও নিতে হবে না, শুধু একটা শর্ত।
প্রত্যয়ের কথায় বেশ কৌতুহল বোধ করলো অনু, তাই এবার ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো প্রত্যয়ের পানে।
প্রত্যয় আগের মতোই সাগরের পানে চেয়ে বললো,
—- একজীবনে আমি ছাড়া দ্বিতীয় পুরুষের কথা কল্পনাতেও ভাবা যাবেনা।
— ব্যাস এইটুকুই?
প্রত্যয়, অনুর হাটুতে এলিয়ে দেওয়া মুখের পানে চাইলো, সূর্যের নিংড়ানো শেষ আলোটুকু ধ’নুকের ন্যায় তীর্যক হয়ে আঁচড়ে পরছে অনুর চোখে মুখে। ঘন পল্লব বিশিষ্ট আঁখি দু’টো টল-টল করছে অশ্রু জলে। সোনালী আলোর ছটা আঁচড়ে পরে ছলছলে চোখ দুটো ঝিলিক দিচ্ছে বারবার, কয়েক সেকেন্ডের জন্য প্রত্যয়ের মনে হলো, এগুলো কোন চোখ নয়, বরং গহীন অভ্যায়রন্যের মাঝে দুটো জংলা দিঘী, কাঁচের মতোই স্বচ্ছ সেই দিঘীর মায়াবী জল।এই দিঘীর মায়াতে হারিয়ে যাওয়া যায় অনায়সে অকপটে। প্রত্যয়ও নিজেকে হারিয়ে ফেললো অনুর দীঘির মতো টলটলে চোখে, অতঃপর অনুর প্রশ্নে আস্তে করে জবাব দিলো,
— ব্যাস এটুকুই।
অনু এবার সার্থপরের মতো বললো,
— বিপরীতে আমি কি পাবো??
— যা চাইবেন তাই।
অনু আড়ালে চাপা নিঃশ্বাস ছেড়ে বুক ভরে সাগর পারের স্নিগ্ধ বাতাস ভেতরে টেনে নিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। তারপর জিভ দিয়ে নিজের শুকনো অধর ভিজিয়ে বললো,
— আমি আপনার শর্তে রাজি আছি প্রত্যয় সাহেব। বিনিময়ে আমারও যে কিছু চাই।
—কি চাই?
—- আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবেন?এখন এই মূহুর্তে?
অনুর মুখশ্রী জুড়ে অসহায়ত্বের ছাপ সুস্পষ্ট।খুব অল্প বয়সে অনেক বেশি ভারী দায়িত্ব বহন করতে করতে ক্লান্ত মেয়েটা। অথচ এতো কিছুর পরেও দিনশেষে নিেজর ছেলেমানুষী, নিজের আবদার কোনোটাই তুলে ধরার যায়গা ওর নেই। মা বোন থেকেও পৃথিবীর বুকে বড্ড একা এই অনু। ওর স্নেহের প্রয়োজন, দিন শেষে ক্লান্ত শরীরটাকে আগলে রাখার জন্য দুটো বাহুর প্রয়োজন।আর এই মূহুর্তে ও সেটাই চায়। অন্য কিছুই নয়, না কোনো শারীরিক চাহিদা, না কোনো কমিটমেন্ট, না সারপ্রাইজ, না কোন আয়োজন। কিচ্ছু না, ওর শুধু একটা বাহুডোর আর একটুখানি স্নেহের পরশ প্রয়োজন।
আশ্চর্যজনক হলেও প্রত্যয় অকপটে তা দিতে সায় জানালো, তৎক্ষনাৎ উপর নিচ মাথা দুলিয়ে অনুকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো সে,পরম আবেশে একহাত বুলিয়ে দিলো অনুর মাথায়, আর তারপর আরো খানিক টা গভীর ভাবে ছুয়ে দিলো ওর ছোট্ট কপালটাকে। কপালের মাঝ বরাবর একটা উষ্ণ আর গভীর চুমু এঁকে দিয়ে তবেই ক্ষান্ত হলো প্রত্যয়।
তখনও সাগরের ঢেউয়ের তালেতাল মিলিয়ে বাড়ছিল অনুর কা’ন্নার গতিবেগ ।
*****************************************
ড্রেসিং টেবিলের সামনে মুখ কালো করে অসহায়ের মতো বসে আছে অরু। ওর ঠিক সামনে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে দক্ষ হাতে, সুন্দর ফর্সা গালে একে একে প্রাইমার,ফাউন্ডেশন, কনসিলার,ব্ল্যাশ আর হাইলাইটারের আস্তরণ লাগিয়ে যাচ্ছে এলিসা।
অরু মেকআপ বলতে ওই সান্সক্রীন আর লিপস্টিক ছাড়া তেমন কিছু ব্যাবহার করেনি কখনো। করতে যে খুব ভালো লাগে তেমনটাও নয়। ওর কাছে সাজুগুজুর চেয়ে স্কিন কেয়ার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাইতো এতো ক্যা’মিক্যাল মিশ্রিত মেকআপ লাগানো হয়না কোনো কালেই।তবে আজ যখন এলিসা নিজে থেকে এসে বললো সাজিয়ে দিবে, তখন আর না করতে পারেনি অরু। চুপচাপ ভদ্রমেয়ের মতো গিয়ে বসেছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে।
মনেমনে ভাবছে ক্রীতিক আদৌও জানেতো যে ও এলিসার বার্থডে পার্টিতে যাচ্ছে।
এই খানিকক্ষণ আগের কথা। ভার্সিটি থেকে ফিরে মাত্রই ফ্রেস হয়ে বেরিয়েছিল অরু। বাড়িতে আপাতত ক্রীতিক, অনু কেউই নেই।
অনু আজকাল দেরি করে ফিরলে অরু তেমন একটা ভাবেনা, কারন ওর দৃঢ় বিশ্বাস প্রত্যয় ভাইয়া অনুকে ঠিক দেখে রাখবে,কোনো অযাচিত বিপদে পরতেই দেবেনা। আর ক্রীতিকের চিন্তা করে লাভ নেই, সে তো কখন ফেরে আবার কখন বেরিয়ে যায় তার কোন হদিসই জানেনা অরু।
কেউ নেই দেখে অরু একাই কিছু একটা সহজে বানিয়ে খাবে বলে কিচেনে পা বাড়িয়েছিলো কেবল। ঠিক তখনই আগমন ঘটে এলিসার। ভেতরে এসে এলিসা জানায়, আজ তার জন্মদিন। অরু সম্মোহনী হাসি দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালে,এলিসা বলে ও অরুকেই নিতে এসেছে। অর্নব নাকি এলিসার জন্য ছোটখাটো একটা পার্টির এ্যারেঞ্জ করেছে।
অর্নব পার্টি এ্যারেঞ্জ করেছে কথাটা মাথায় আসতেই খানিকক্ষন আগের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে, চট করে এলিসাকে প্রশ্ন করে বসে অরু,
—- অর্নব ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করে তাইনা আপু?
অরুকে খুব যত্ন করে আই শ্যাডো লাগিয়ে দিতে দিতে এলিসা বলে,
— পছন্দ টছন্দ কিছুইনা, পাগলটা হুদাই আমার পেছনে পরে আছে।
—- পছন্দ করে দেখেই পিছনে পরে আছে আপু,আর তাছাড়া তোমার মতো সুন্দরী মেয়েকে কে না পছন্দ করে?
— তুমি আমার থেকে কোনো অংশে কম নও অরু, বরং অনেকটা বেশি।তুমি ন্যাচারাল বিউটি, আর আমিতো সবসময় মেকআপে ঢেকে থাকি।তাছাড়া তোমার চুল দেখেই তোমার স্বামী তোমার প্রেমে পরে যাবে, আ’ম ড্যাম সিওর।
অরু লাজুক হেসে বলে,
—আপসোস কেউ পরলো না।
—-পরবে পরবে, আর একটু বড় হও ঠিক পরবে, তখন ক্রীতিকের নিজের বোনকে পাহারা দেওয়ার জন্য পেছনে হাজারটা বডিগার্ড লাগিয়ে রাখতে হবে।
— উনি আমাকে বোন হিসেবে পরিচয় দিতে চায়না আপু, তাই আমিও চাইনা যেচে পরে কারও বোন হতে।
নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব আসে অরুর দিক থেকে।
— ওর কথা বাদ দাও, জেকে সব সময়ই এমন করে,বেশি ভাব দেখায়। আসো তোমার চুল গুলো ঠিক করে দিই।
অরু বুঝলো ক্রীতিকের কোনো খারাপ অভ্যাসই, এদের কাছে দোষের নয়। তাই আড়ালে ফোঁস করে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে আয়নায় দেখতে লাগলে ও।
নিজের পরিপাটি চেহারাটা আয়নায় দেখে, অরু বলে,
— অর্নব ভাইয়া তো ভালো মানুষ, তাহলে তাকে কেন ক’ষ্ট দিচ্ছো আপু।
অরুর চুলে হেয়ারব্রাশ চালাতে চালাতে এলিসা বলে,
— আমারও এই একটাই আপসোস জানোতো। অর্নবের মতো ছেলে আমার মতো একটা মেয়েকেই কেন পাগ’লের মতো ভালোবাসে দুনিয়াতে কি ভালো মেয়ের অভাব ছিল?
অরু চকিতে পেছনে ঘুরে শুধালো,
— মানে?
— তুমি প’কার প্লেয়ার মানে বোঝো?
অরু অজ্ঞাতদের মতো এদিক ওদিক মাথা নাড়ালো।
— জু’য়া চেনো নিশ্চয়ই ? কার্ড দিয়ে যে খেলে?
একটা শুষ্ক ঢোক গিলে, অরু এবার হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে,
— হ্যা!টট…টিভিতে দেখেছি।
আমি ওটাই খেলতাম অরু। ইভেন যেমন তেমন নয়,আজ পর্যন্ত প’কার খেলে আমাকে কেউ বিট করতে পারেনি। প’কার প্লেয়ারদের কাছে আমি সেলিব্রিটিদের মতোই। ওরা আমার একটা অটোগ্রাফের জন্য তৃষ্ণার্থ চাতকের মতোই অপেক্ষা করে থাকে। আর যে সেটা একবার পেয়ে যায়, তার ডিমান্ডও বেড়ে যায়।
অরু পেছনে ঘুরে এলিসার হাত ধরে বললো,
— আপু এটাতো খা’রাপ কাজ তাহলে বেরিয়ে কেন আসছো না??
এলিসা জোরপূর্বক হেসে জবাব দেয়,
— আমি ছাড়তে চাইলেও এই বিভীষিকা ময় খেলার জগত আমার পিছু ছারছে না অরু।
*****************************************
স্ফটিকের লাল,নীল, সবুজ আলোয় ঝিকমিক করছে পুরো হল রুমটা। কিছু কিছু নজর কাড়া লাইট সফ্ট মিউজিকের তালেতালে জ্বলছে আবার নিভছে। আর্টিফিশিয়াল বেবি পিংক কালারের থীমটা ভালোই মানিয়েছে লাইটিং এর সাথে। এককথায় চোখ ধাদানো ব্যাপার স্যাপার। হলরুমটা মানুষদ্বারা পরিপূর্ণ , বেশিরভাগই জোড়ায় জোড়ায়। তবে এতো এতো চিকচিক আলোয় কারোরই মুখ দেখে চেনার জো নেই। না এই মূহুর্তে অরু কারো মুখ দেখার মতো অবস্থায় আছে, এর কারন, ওর দৃষ্টি আড়াল করে শক্ত চোয়াল আর অ’গ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপন করে তাকিয়ে আছে ক্রীতিক।
দেখে মনে হচ্ছে পাবলিক প্লেস না হলে এই মূহুর্তে খুব বড়সড় সিনক্রিয়েট করতো সে।
অরু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, এলিসা ওকে রেখে কই যে উধাও হয়ে গেলো সেটাই ভাবছে আপাতত।
— চুপ করে থাকিস না অরু, কথা বল ? আমাকে না জানিয়ে এখানে কোন সাহসে এলি তুই?
ক্রীতিকের আকস্মিক ধ’মকে অরু, মাথা তুললো,
একটা ব্ল্যাক ভেলভেট পার্টি জ্যাকেট পরে আছে ক্রীতিক। ঘার অবধি চুল গুলো জ্যাকেটের সাথে ম্যাচিং করেই সেট করা। মনে হচ্ছে কোন হেয়ারস্টাইলিস্ট এর সূক্ষ হাতের কাজ এটা।
তবে ক্রীতিককে দেখতে যতটা ড্যাশিং লাগছে, ওর সুন্দর হ্যান্ডসাম রাগী চেহারাটা দেখতে ততটাই ভ’য়ানক লাগছে। সুন্দর বড়বড় ছোট দুটি যেন জ’লন্ত অ’ঙ্গার।
অরু ভেবে পায়না ও করেছেটা কি? এলিসা নিতে গিয়েছে দেখেই তো এলো। তাহলে এতো রাগের কি আছে, আর সব ব্যাপারেই কেন ক্রীতিককে জানাতে হবে? কি হয় ক্রীতিক ওর? এইরকম শাসন করার মতো এতোটাও তো ক্লোজ ওরা নয়, তাহলে?? মনে মনে ক্রীতিকের উপর খুব বি’রক্ত হলো অরু। অজানা কারনে জিভটা নিম পাতার মতোই তেঁতো ঠেকলো ওর। তাই ইচ্ছে করেই মৌনতা পালন করলো ক্রীতিকের হাজারটা প্রশ্নের জবাবে।
— অরু আমাকে রাগাস না, তুই এখানে কি করছিস? এভাবে আমাকে না জানিয়ে আর কোথায় কোথায় যাস তুই ?কি হলো জবাব দে?
অরু চুপ রইলো এবারও। কিন্তু ক্রীতিক আর নিজের রা’গ সংবরণ করে রাখতে পারলো না, পকেট থেকে হাত বের করে চেপে ধরলো অরুর নরম চিকন হাতটা। তৎক্ষনাৎ পেছন থেকে কথা ছুড়লো এলিসা,
—- কি করছিস জেকে।
ক্রীতিক অরু সমেত এলিসার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁতেদাঁত চেপে বললো,
— ওকে এখানে নিয়ে এসে কাজটা তুই একদম ঠিক করিস নি এলিসা? তুই ভালো করেই জানিস আজকে পার্টির পেছনে আমাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে, আর সেখানে তুই আমার দূর্বলতা টেনে নিয়ে এলি? হোয়াই?
এলিসা লম্বা একটা শ্বাস টেনে অরুকে ক্রীতিকের থেকে ছাড়িয়ে বললো,
— যদি কিছু হয়, সেটা আমার সাথে হবে, অরুর সাথে নয়,তাছাড়া, কিছু যে হবে তাও তো সিওর না, তাহলে আমার বার্থডে টাকে নরমাল বার্থডে পার্টি কেন ভাবতে পারছিস না? আর সবচেয়ে বড় কথা অরু ছোট বাচ্চা নয়, তুই সবসময় ওকে এভাবে ডমিনেট করিস কেন বলতো?
ক্রীতিক তীক্ষ্ণ কন্ঠে জবাব দিলো,
— কারণ ও আমার।
— বলা হয়েছে? এবার আমরা আসছি।
এলিসা কিংবা অরু কেউই ক্রীতিকের কথায় খুব একটা গুরুত্ব না দিয়েই ওখান থেকে চলে গেলো।
দু’হাত মুঠি বদ্ধ করে রেখে পেছন থেকে বিড়িবিড়িয়ে ক্রীতিক বললো,
— সাবধানে এলিসা, সি ইজ মাই হার্টবিট।
*****************************************
পার্টিতে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছুই ঘটেনি, বরং সবাই জমিয়ে আনন্দ করেছে, কেক কে’টেছে খাওয়া দাওয়া হৈ-হুল্লোড় করে অনেকটা সময় অতিবাহিত করেছে। পুরোটা সময়ই অরুকে সাথে সাথে রেখেছে এলিসা, সেই সাথে চোখে চোখে রেখেছে অন্য আরেকজন।
আজ প্রথমবার ক্রীতিক বোধ করলো ও খুব দূর্বল হৃদয়ের, অন্তত অরুর ক্ষেত্রে তো তাই। পুরো পার্টিতে ঘুরে ফিরে ওর দুচোখ অরুতেই নিবদ্ধ ছিল । কয়েক সেকেন্ডের জন্যেও যদি অরু চোখের আড়াল হয়েছে তো ক্রীতিকের মনে হচ্ছিলো এই বুঝি দুশ্চিন্তায় ব্যাকুল হৃদয়টা এক্ষুনি ব্লা’স্ট করবে।
কিন্তু এখন এই মূহুর্তে ক্রীতিক নিশ্চিন্তে ডিভানে গা এলিয়ে দিয়ে ড্রিংক করছে, কারন অরু ওর চোখের সামনেই বসে আছে, যদিও ওদের মাঝে দূরত্ব বেশ অনেকটা, তবুও চোখের সামনে তো আছে। ক্রীতিক যখন নির্বিগ্ন বসে বসে এসব ভাবছিল,তখনই বল ড্যান্সের ঘোষনা করা হয়।
পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বল নাচ খুবই জনপ্রিয়। আজকাল বাংলাদেশেও বিভিন্ন পার্টি কিংবা অনুষ্ঠানে কপোত-কপোতীদের বল নাচের আয়োজন করা হয়। কিন্তু অরু কিভাবে নাচবে? একেতো পার্টনার নেই তার উপর বোকার মতো জরজেট শাড়ি পরে এসেছে। তাই বসে বসেই সবার পারফরম্যান্স দেখতে লাগলো ও।
ঠিক তখনই ক্রীতিকের দৃষ্টি আড়াল করে অরুর সামনে এসে দাঁড়ালো সায়র। রাজকুমার দের মতো করে মাথাটা হালকা নুইয়ে ডানহাত বাড়িয়ে দিয়ে অরুকে শুধালো,
— লেটস হ্যাভ আ ডান্স।
অরু না করতে চাইলো, কিন্তু না করাটা মূর্খতার লক্ষন, সবার সামনে না করে দিলে সবাই ওকেই আনস্মার্ট ভাববে, তাছাড়া সায়র ও অনেকটা লজ্জিত হবে। সেই ভেবে ও নিজেও হাত বাড়ালো বল নাচের উদ্দেশ্যে। তবে সায়রের হাতের মাঝে আর হাত রাখা হলোনা ওর, তার আগেই মসৃণ হাতটা ঈগলের মতো ছোঁ মে’রে নিজের হাতে নিয়ে এলো ক্রীতিক। সায়রকে ইচ্ছা করেই ধা’ক্কা মে’রে দাড়িয়ে পরলো অরুর সামনে।
হুট করে একদম হুট করে, চোখের পলকে ঘটনাটি ঘটায়, কিছুই ঠাহর করতে পারলো না অরু, শুধু দেখতে পেলো ওর হাতটা সায়র নয় ক্রীতিক ধরে আছে।
অরু সচকিত হয়ে কিছু বলতে চাইলো, তবে তার ফুরসত দিলোনা ক্রীতিক। টেনে নিয়ে গেলো বল নাচের স্টেজে।
অরুর এক হাত নিজের কাধে রেখে, নিজের শক্ত হাতটা ছোঁয়ালো অরুর লতানো কোমড়ে। অন্যহাত ঢুকিয়ে দিলো অরুর পাঁচ আঙুলের ভাঁজে। বল নাচের মঞ্চটা ছিল পুরো পুরি অন্ধকার। ফেইরী লাইটের ম্যাজিকাল আলো ছায়ায় কোন কিছুই খুব ভালো করে দেখা যাচ্ছেনা। অরুও দেখতে পেলো না, ক্রীতিকের আ’গুন ঝরা চোখ জোড়া ওর শরীরের স্পর্শ পেয়ে মূহুর্তেই কতোটা কামুকতায় ডুবে গিয়েছে।
ব্যাকরাউন্ডে তখন সবার প্রিয় বাংলা গানের দুটো লাইন বাজছিল,
“হালকা হাওয়ার মতোন চাইছি এসো এখন..
করছে তোমায় দেখে.. অল্প বে’ঈমানী মন
বাঁধবো তোমার সাথে… আমি আমার জীবন। ”
ওরা দুজনও তখন সফ্ট মিউজিকের তালে তালে পা মেলাচ্ছে নির্দ্বিধায় । কি জানি হুট করে কোথায় হারিয়ে গেলো দুজন। এতো জড়তা, এতো দূরত্ব, এতো প্রতিকূলতা সব কেমন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। পাছে শুধু পরে রইলো দু’টো অশান্ত মন।
ক্রীতিক নাচের তালে তালে অরুকে ঘুরিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
—তুই সত্যিই অসাধ্য সাধন করতে পারিস অরু, আমাকে দিয়ে কেমন ডান্স করিয়ে ছাড়লি।
অরু নাচের মুদ্রা অনুসরন করতে করতে ক্রীতিকের পেশিবহুল ঢেউ খেলানো বুকে দুহাত রেখে বললো,
— কেন এলেন? আপনার সাথে নাচতে আমার ভ’য় করছে বড্ড ।
ক্রীতিক এবার অরুকে নিজ বাহুতে ছেড়ে দিয়ে, আবারও কাছে টেনে নিয়ে এলো, খুব কাছে । হুট করে টান দেওয়াতে অরুর রেশমের মতো লম্বা খোলা চুল গুলো আঁচড়ে পরলো ক্রীতিকের চোখে মুখে। অরুর মাতাল করা চুলের সুবাস ছড়িয়ে পরলো ক্রীতিকের শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
ক্ষনিকের নিরবতা ভে’ঙে ক্রীতিক অরুকে আঙুলের মাথায় ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,
— আজকের পার্টিতে না এলে হতোনা? তুই কি ঠিক করেই নিয়েছিস?আমাকে এ জীবনে টেনশন ফ্রী থাকতে দিবিনা?
অরু দু’হাতে ক্রীতিকের গলা জড়িয়ে নাচের তালে তালে বললো,
— আমি আপনাকে একদম বুঝতে পারিনা।আপনি কি আসলেই জায়ান ক্রীতিক?
ক্রীতিক এবার অরুকে টেনে একটু খানি আলোতে নিয়ে এসে ওর চোখে চোখ রেখে বললো,
— কি করে পারবি, বুঝতে চেয়েছিস কখনো আমায়?
—কি’করে বুজবো? আপনি যে রহস্যময় মানব।
অরুর কথা বিপরীতে কোনো জবাব দিলোনা ক্রীতিক। তার বদলে নিজ হাতে অরুর গাড়ো নীল জরজেট শাড়িতে লাগানো ব্রোঞ্জটা খুলে দিলো একটানে, সঙ্গে সঙ্গে পাতলা আঁচলটা কোমর ছাড়িয়ে নিচে পরে গেলো।
ক্রীতিক ওর আঁচল গলিয়ে উন্মুক্ত কোমরে আলতো হাত ছুয়িয়ে বললো,
— আমার জিনিস অন্য কাউকে দেখানোর কোন অধিকার তোর নেই।
অরু সেই কখন থেকেই ক্রীতিকের নেশালো চোখে তাকিয়ে আছে। হয়তো ওর চোখের ভাষা পড়তে চাইছে। কিন্তু জায়ান ক্রীতিক চৌধুরীর চোখের ভাষা পড়া কি এতোটাই সহজ?
অরু পড়তে পারলো না, উল্টে হুট করেই মনে পরে গেলো সেদিন বৃষ্টি ভেজা দুপুর বেলার কথা। সেই একই চোখ, একই হাস্কি কন্ঠস্বর, একই ভেজা অনুভূতি। অরুর হৃদমাঝারে আবারও তোলপাড় শুরু হয়েছে খুব। পেটের ইতিউতি উড়ছে অবাধ্য প্রজাপতির দল।
ক্রীতিক ওর সাথে কি করেছে,কি বলেছে কিছুই মস্তিষ্ক অবধি পৌঁছায়নি অরুর। ও তো ক্রীতিকের চোখেই ডুবে ছিল। ডুবে থাকতে থাকতেই উপলব্ধি করলো ক্রীতিকের চোখ দুটো বড্ড নে’শা ধরানো আর কাতরতা জড়ানো। কোন এক অজানা চৌম্বকীয় শক্তির দ্বারা ক্রীতিকের চোখ দুটো ওকেখুব করে টানে,হৃদয়টা বেসামাল করে তোলে বারবার। কিন্তু কি এমন আছে ওই ভাসমান গোলগোল চোখে? ভেবে পায়না অরু।
—- অরু?
ক্রীতিকের হঠাৎ ডাকে কম্পিত হয়ে উঠলো অরুর শরীর,নিজের হুশ খেয়াল ফিরে পেয়ে কোথায় যাবে কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারলো না খানিকক্ষণ । এখনো ক্রীতিকের বাহুতেই সিটিয়ে আছে অচল শরীরটা। চোখ মুখ লজ্জায় র’ক্তবর্ণ ধারন করেছে। কপালে বসানো স্টোনের বিন্দির আশেপাশে বিন্দু বিন্দু ঘামের ছড়াছড়ি। কার চোখের দিকে এতোক্ষণ তাকিয়ে ছিল ও? ক্রীতিকের? যে কিনা সম্পর্কে ওর মায়ের সৎ ছেলে ছি ছি।
ক্রীতিক নিজেও এই মূহুর্তে কৌতুহলী আর প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে ওর পানে।
অরু একঝলক ক্রীতিকের ফর্সা ড্যাসিং চেহারার দিকে তাকিয়ে শুষ্ক ঢোক গিলে বিড়বিড়িয়ে বললো,
— দয়া করে এভাবে তাকাবেন না, আমার কেমন যেন লাগে, আপনি যতই সুদর্শন হোননা কেন এটা কখনোই সম্ভব নয়।
নিজের মনে কিছু একটা বলে, ক্রীতিকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে ওই স্থান ত্যাগ করে চলে গেলো অরু।
পেছনে ক্রীতিকের জন্য শুধু খুলে পরে রইলো অরুর এক পায়ের চিকন রুপোলী নুপুর।
চলবে…..