সমাপ্তিতে রুদ্ধশ্বাস পর্ব-০১

0
1

#সমাপ্তিতে_রুদ্ধশ্বাস🖤🦋
#মিশকা_মুন {লেখনীতে}
#সূচনা_পর্ব

🚫সহিংসতা থাকবে,
প্রাপ্ত বয়স্ক ও মনস্কদের জন্য উন্মুক্ত|

০১.
“বিশ্বাস করো মাই লাভ তোমার একটুও কষ্ট হবে না আমি তোমাকে খুব যত্নসহকারে মা’রব। নিজে হাতে গোসল করিয়ে তবেই পিসপিস করে কা টব, লাইক চিকেন। ইউ লাইক ইট না?উঁহু একদম ছটফট করবে না মাথা গরম হয়ে গেলে কিন্তু শরীরে গরম পানি ঢালব। তখন অনেক কষ্ট হবে তো আমার। তুমি বুঝোনা? আফটার অল আমি তোমায় ভালোবাসি জান। তুমি কেনো বলোতো পরপুরুষের দিকে চাইতে গেলে? না চাইলে তো আজ তোমার সুন্দর চোখ দুটো সুন্দরই থাকতো। অকালে হারাতে হতো না। আমার তোমাকে আদর করা বাদ দিয়ে এভাবে কা টতে হতো না।

হৈমন্তী সদ্য চোখ হারানোর যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে সেন্স হারিয়ে ছিল। সেন্স পাবার সঙ্গে সঙ্গে যে আবার এমন কথা শুনতে হবে ভাবতে পারেনি। ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠল। অনেক কাকুতি মিনতি করেও চোখটা বাঁচাত পারেনি। এবার কি জানটাও বাঁচাতে পারবে না?ডুকরে কেঁদে উঠল। হাউমাউ করতে করতে আওড়ালো,

“তুমি না আমায় ভালোবাসো?নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজ হাতে এতো নি’ষ্ঠুর ভাবে কীভাবে মারবে? তুমি এমনটা করতে পারোনা। ছেড়ে দাও আমাকে প্লিজ।”

ব্যক্তিটি ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে হৈমন্তীর র ক্তে রঞ্জিত গালটাতে দুটো চুমু খেলো। কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিস করে বলল,

“উফস আগে বলবে তো তোমাকে কীভাবে মা রি দেখতে চাও, তবে আগেই চোখ দুটো তুলতাম না রেখে দিতাম। তোমাকে দেখার সুযোগ করে দিতাম। উফস লস হয়ে গেল।”

হৈমন্তী আবার ডুকরে উঠল। ভালোবাসার মানুষের এমন রুপ সে বিশ্বাস করতে পারছে না। যার গায়ে ফুলের টুকা পরলেও সে সহ্য করতে পারত না। তাকে আজ নিজ হাতে শেষ করতে চাইছে? সে নাহয় আবেগের ঠেলায় একটা ভুল করে ফেলেছে তাই বলে এতো বড় শাস্তি? তাকে কি একবার মাফ করা যেত না? অতিরিক্ত কান্নার ফলে কথা জড়িয়ে যাচ্ছিলো। তবুও বাঁচার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়ে গেল। দু’হাত একসাথে জড়ো করে বলল,

“আমাকে ছেড়ে দাও অনি…..!!”

হৈমন্তীর মুখ চেপে ধরল।
রাগে ফুসফুস করতে করতে বলল,

“খবরদার তোর এই অপবিত্র মুখে আমার নাম নিয়ে মাথা গরম করাবি না। তাহলে কিন্তু এর ফল আরও ভয়ংকর হবে প্রিয়তমা।”

একটা সময় তার মুখে এই নামগুলো শুনতে অনেক পছন্দ করত হৈমন্তী কিন্তু এখন তার কাছে এই নামগুলো বি ষের মতো লাগছে। আর কিছু না বলে কাঁদতে লাগল। এখন আর বাঁচার উপায় নেই। বুঝে ফেলল যতোটা ভালোবাসা তাকে দিয়েছে ঠিক ততোটাই কষ্টদায়ক ভাবে তাকে
মা’রবে।

“দেখ কাঁদবি না। কাঁদলে আমার মাথার র ক্ত টগবগ করে। অসহ্য যন্ত্রণা করে মস্তিষ্কে। খবরদার টু শব্দ অবধি করবি না। তোর পাপের শাস্তি শুধুই মৃ ত্যু মৃ ত্যু আর মৃ ত্যু।”

হৈমন্তী অনেক চেষ্টা করেও কান্না আটকাতে পারল না। আবার ডুকরে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে এক কো পে দু খন্ড করে ফেলল তাকে। নিজের ইচ্ছে মতো পিসপিস করে কা টলো। একটুখানি মাংস আলাদা করে রাখলো। চারটে আলাদা পলিথিনে খন্ড অংশ গুলো তুলল আর আলাদা করে রাখা মাংস টুকু আর চোখ দুটো নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকল।

সচ্ছ পানি দিয়ে সুন্দর মতো মাংসটুকু ধুয়ে রান্না বসালো। আগে গরম পানি দিয়ে সিদ্ধ করে তারপরে মশলার মধ্যে ছাড়ল। রান্না শেষে ঢাকনা তুলে প্রাণ ভরে শ্বাস টানল। অতঃপর একটা টিফিনবাক্সে তুলে গোসল করতে গেল। গোসল শেষে সুন্দর করে শার্ট প্যান্ট পরে টাই বাঁধতে বাঁধতে বেরিয়ে এলো। টিফিন বক্সটা হাতে তুলে একটা চুমু দিয়ে বলে উঠল,

“লেটস গো মাই জান।”

০২.
পরপর চার বার কলিং বেল বাজায় ঘুম ভাঙলো হারুনের। ইচ্ছে না থাকার পরেও উঠে বসলো। গোমড়া মুখ করে বিরক্তি নিয়ে গিয়ে দরজা খুলল। চোখ মুখ কুঁচকে মুখে রাগ রাগ ভাব নিয়ে থমথমে মুখে শুধালো,

“কি চাই?”

আগন্তুক উল্টো দিকে মুখ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলো। দরজা খোলার শব্দে সামনে ফিরল। তাকে দেখে হারুন কিছুটা চমকালো, থমকালো তাকে এই সময় আশা করেনি সে। হঠাৎ তার আগমনের কারণ বুঝে উঠতে পারল না। তবে যতদূর সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে জোরপূর্বক মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,

“আরে তুমি এই সময় যে। কোনো সমস্যা টমস্যা নাকি? সব ঠিক আছে তো? হৈমন্তী ঠিক আছে?”

সে হাসে। উত্তর না দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে ফের প্রশ্ন করে,
“ভেতরে আসতে বলবে না?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ এসো এসো। অবশ্যই কেনো বলব না!!”

আলগোছে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে। অতঃপর জিগায়, “বিরক্ত করলাম?”

“না না, এসো বসো। তোমাকে দেখে অনেক খুশি হলাম। একাই এসেছ নাকি…!!”

“কাউকে আনা উচিত ছিল নাকি?”
“না মানে।”

সে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগল। ড্রয়িং রুমটা বেশ অগোছালো। দেখে বোঝা যাচ্ছে কয়েকদিন যাবত পরিষ্কার হয়নি। ফার্নিচার আর ফুলদানি গুলোতে ময়লা জমে গেছে। তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হারুন তার পেছনে এসে দাঁড়াল। এবার আর কৌতূহল জমিয়ে রাখল না, জানতে চাইল,

“হঠাৎ এই সময়ে কি মনে করে?”

“তোমার ওয়াইফ বাসায় নেই? চারপাশের এমন অগোছালো কেনো?”

হারুন একটু কাঁচুমাঁচু করতে করতে বলল,”আসলে একটু বাবার বাড়ি গেছে। আর আমি ব্যস্ত মানুষ ঠিকঠাক করে রাখার মতো সময় পাইনা।”

সে অদ্ভুত ভাবে হাসে। একথা তার জানা তোড়ান কথা পাল্টে ফেলল। মাথা ঘুরিয়ে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বক্সটা এগিয়ে দিয়ে বলে, “হৈমন্তী রান্না করে পাঠিয়েছে।”

হারুন আবারও অবাক হয়। হৈমন্তী তাকে দিয়ে খাবার পাঠিয়েছে? এটাও সম্ভব? অবিশ্বাসের নজরে তাকাল। বুঝতে মা দিয়ে হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিল। হঠাৎ বাড়ি বয়ে খাবার নিয়ে আসার কারণ? বুঝল না। আজ কেমন অদ্ভুত লাগছিল তাকে। তাই তাড়া দেখিয়ে বলল,

“ওহ রেখে যাও আমি খেয়ে নিব।”

সে মাথা নাড়ায় শক্ত গলায় বলে,
“না এখন খাবে আর আমার সামনে খাবে। না মানে তার হুকুম তোমাকে খাওয়ানোর পরেই যেন যাই তার আগে নয়। নইলে আমার খবর আছে বলেছে।”

“সত্যি বলেছে?!”
“বিশ্বাস হচ্ছে না?কল দেব?”
“না না ঠিক আছে।”

হারুনের অস্বাভাবিক লাগছিল তার কথাবার্তা। দোটানায় ভুগতে থাকা মনের কথা মুখে চলেই এলো তাই জানতে চায়, “তুমি ঠিক আছো তো? চোখ মুখ কেমন যেনো লাগছে? রাতে ঘুম হয়নি?”

“হুম ঠিক আছি। আসলে হৈমন্তীকে আমি কথা দিয়ে এসেছি তোমাকে খাইয়ে বক্স নিয়ে তবেই যাব। আর তুমি তো জানো আমি কথা দিলে সেই কথা কখনো ফেলতেই পারিনা। অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করি।”

হারুন এবার স্বস্তি পেলো। বলল,
“সে আর আমার থেকে বেশি কে জানে। আচ্ছা চলো একসাথে খাই।”

“না আমি খেয়ে এসেছি, তুমি গিয়ে খাও আমি চারপাশটা একটু ঘুরে দেখি।”

“কিন্তু ঘরের যে অবস্থা অনেক নোংরা হয়ে আছে।”
“সমস্যা নেই এর থেকেও নোংরা জিনিস দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে।”

তার পেঁচানো কথা হারুন বুঝল না তাই তাকিয়ে রইল। তাকে ভ্রু কুঁচকাতে দেখে সে হাসলো। হেসে তার কাঁধ চাপড়ে বলল,”আই মিন হোস্টেল লাইফের কথা বলছিলাম।”

“আচ্ছা আচ্ছা।”

হারুন আর সময় নষ্ট করল না। প্রচন্ড ক্ষুধাও লেগেছে। এদিকে বউ আজ পাঁচ দিন ধরে বাপের বাড়ি গেছে আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। নিজে রান্না করে খাওয়া অনেক ঝামেলা লাগে তার। এদিকে বাহিরের খাবারও মুখে রুচে না। খাবার নিয়ে টেবিলে বসে ভাতের সাথে মিশিয়ে দুই তিনবার মুখে দিলো। কিন্তু স্বাদটা কেমন যেনো অন্য দিনের মতো নয় তিতা তিতা লাগছিল। তাই জিজ্ঞেস করল,

“তিতা তিতা লাগছে কেনো?”

সে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তার কথা শুনেও সেই দৃষ্টি সরালো না ওভাবেই গলা খাদে নামিয়ে বলল,
“আসলে মশলা বেশি পরেছে।”

হারুন ওহ বলে আবার খেতে শুরু করল। সবটা চেটেপুটে খেয়ে ঢেকুর তুলল। হাত দিয়ে টিস্যু দিতে হাত মুছতে মুছতে এসে তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

“হৈমন্তী থুক্কু ভাবি কে বইলো খাবারটা অনেক মজা হয়েছিল। সময় পেলে আমিই গিয়ে আবার খেয়ে আসব। আর তাকে আমার ধন্যবাদ জানিয়ো।”

“হৈমন্তী নেই।”
“কেনো কোথায় গেছে?”

ব্যক্তিটি আঙুল তাক করে তার পেট বরাবর রাখল। হারুন হাসতে হাসতে বলল,
“কি মজা করছ?”
“না।”

“আমি জানি মজা করছ হা হা অনেক ফানি ছিল জোকসটা আরেকটা বলো।”

শান্ত ভঙ্গিতে থাকায়। মুচকি হেসে বলে,
“আজকে তোমার জীবনের শেষ দিন। তোমার কোনো শেষ ইচ্ছে থাকলে বলো?”

হারুন আবার হাসতে শুরু করল। হঠাৎ পকেট থেকে সে কিছু একটা বের করে হারুনের হাতে দিলো। হারুন প্যাকেট টা খুলতেই চমকে উঠল। হাত থেকে ফেলে দিয়ে ভয়ার্থ দৃষ্টিতে তাকালো। প্যাকেট থেকে বেরিয়ে এলো দুটো চোখ। মেঝেতে লুটিয়ে পরে যেন হারুনের দিকেই তাকিয়ে আছে। ভয়ে ভয়ে অস্পষ্ট সুরে বলল,

“অনিরুদ্ধ।”

অনিরুদ্ধ হাসে। তার পাশে বসতে মুখ কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

“রান্না কেমন হয়েছে তা হৈমন্তীকে গিয়েই বইলো। অনেক খুশি হবে। ডিয়ার কলিগ।”

#চলবে………