সমাপ্তিতে রুদ্ধশ্বাস পর্ব-০২

0
2

#সমাপ্তিতে_রুদ্ধশ্বাস🦋
#মিশকা_মুন {লেখনীতে}
|২|

|প্রাপ্ত বয়স্ক ও মনস্কদের জন্য উন্মুক্ত🚫|

০৩.
হারুনের সেন্স ফিরল রাত বারোটার পর। ক্লান্তি আর প্রচন্ড শরীর ব্যথা নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসলো। শরীর ঘেমে-নেয়ে একাকার। এক বিশ্রি গন্ধ ভেসে আসছে নাকে। চোখ মুখ কুঁচকে নাক চেপে ধরল। চারিদিকে অন্ধকারের আচ্ছন্ন দেখে লাইট দেওয়ার জন্য উঠতে চাইলো। তৎক্ষনাৎ তার সাথে কি হয়েছিল তা মনে পরতে একটু সময় লাগল। মনে পরতেই শরীরের প্রতিটা লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল। হঠাৎ প্রাণের ভয় মনে এসে হানা দিলো। শুকনো ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে চারিপাশ চোখ বুলালো। পুরো রুম অন্ধকার কেউ আছে কিনা বোঝার উপায় নেই। দ্রুত উঠার চেষ্টা করে পারল না। হাত কেমন অসার হয়ে আসছে। ধীরে ধীরে উঠে হাত দিয়ে খুঁজতে খুঁজতে সুইচড বোর্ডের কাছে গিয়ে লাইট জ্বালালো। ভয়ে ভয়ে ঘাড় কাত করে আরও একবার খুঁজলো এদিক-সেদিক কিন্তু না কেউ নেই। প্রতিটা জিনিস যেমন ছিল তেমনই আছে। হুট করে মনে পড়ল,

“আমি স্বপ্ন দেখিনি তো? তাই হবে হয়তো। নাহলে এটা সত্যি হওয়া অসম্ভব। ধূর খামোখা ভয় পাচ্ছিলাম। তুইও না হারুন দিনদিন পুতুলের মতো বাচ্চা হয়ে যাচ্ছিস। ভুলভাল স্বপ্ন দেখে বিশ্বাস করা শুরু করেছিস।”

কথাগুলো নিজে নিজেই বলছিল হারুন। হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠল। এগিয়ে গিয়ে দেখলো তার স্ত্রী বেলা। মুখে হাসি ফুটলো, সকল চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে কল ধরে স্বাভাবিক গলায় কথা বলল,

“কি গো বউরানী বাসায় ফিরবে না? তোমার বিরহ যে আর পরাণে সয়ে না। অন্তর যে শুধু তুমি তুমি করে তুমি কি বুঝোনা? আসছো না কেনো? তুমি জানো না তোমায় ছাড়া আমি থাকতে পারিনা? তোমার শরীরের স্মেল না পেলে আমার শরীর খারাপ হয়ে যায়? বলো জানো না?? ”

বেলা মুচকি হাসে। তার স্বামী যে বিয়ের পাঁচ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও এখনো তাকে এতো ভালোবাসে এটা নিয়ে তার গর্বের শেষ নেই। স্বামী ছাড়া থাকতে তারও যে ভালো লাগছে এমনটা নয়। মায়ের অসুস্থতার জন্য যেতে পারছে না। কিন্তু তারও বড্ড বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে। বিনয়ী সুরে বলল,

“আসলে মা অসুস্থ তাই যেতে পারছি না। কালকে যাওয়ার চেষ্টা করব। তুমি আজকের দিনটা কোনো ভাবে সামলে নেও। আর দেরি করব না মন খারাপ করো না প্লিজজজ।”

হারুন মনে মনে বিরক্ত হলেও মুখে প্রকাশ করল না। মনে মনে ভাবল, শা লার শ্বাশুড়ি দিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকছে তবুও ম’রে না কেন? তার জন্য দু’দিন পরপর বউটাকে ছেড়ে থাকতে হয়,ধুর ভাল্লাগে না। তবে মনের কথা মুখে আনলো না। হাসতে হাসতেই বলল,

“সমস্যা নেই মা সুস্থ হলে তবেই এসো। আমি সামলে নিব। আর টাকা পয়সা লাগলে অবশ্যই বলবে তোমার মা মানেই কিন্তু আমার মা। কোনো কিছু লুকাবে না খবরদার বলে দিলাম!”

বেলা আবেগে আপ্লূত হয়। চোখ দুটে খুশিতে চিকচিক করে উঠল। একটা মানুষ এতো ভালো কি করে হতে পারে? বলেই ফেলল,

“তুমি এতো ভালো কেনো বলোতো?”
“কারণ আমি তোমার স্বামী।”
“ভালোবাসি।”
“আমিও ভালোবাসি বউরানী।”

হুট করে তাদের সাড়ে তিন বছরের মেয়ে পুতুল ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,

“বাবা আমিও ভালোবাসি তোমায়।”
“আরেহ আমার প্রিন্সেস যে কি খবর তোমার? কেমন আছো? বাবাকে তো ভুলেই গেছো?”
“ভুলিনি বাবা। আমলা তালাতালি চলে আসব।”
“ঠিক আছে মা।”
“ওকে বাই বাবা।”
“বাই।”

হারুন কল কাটলো। যাক এখন অনেকটাই রিলাক্স লাগছে। ফোন রেখে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালল। মুখে দিতে যাবে এমন সময় ডান হাতের দিকে চোখ গেল। জ্বলজ্বল করতে থাকা একটা নাম দেখে চমকালো, থমকালো,ভড়কালো। গায়ের লোমকূপ গুলো দাঁড়িয়ে গেল। নজর সরিয়ে ক্লাসে তাকাতেই আরও চমকালো গ্লাসে থাকা পানির জায়গায় র ক্ত। একদম লাল টকটকে র ক্ত ভয়ে চিৎকার করে উঠল। গ্লাসটা হাত থেকে পরে গিয়ে বিকট একটা শব্দ হলো। তোড়ান মুখ চেপে ধরল। উঁকি চলে এসেছে। দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে ব’মি করার চেষ্টা করল। তারপর পানি দিয়ে ডলে ডলে হাতটা ধুলো। পুরো একটা সাবান শেষ করে ফেলেছে হাত ধুতে ধুতে কিন্তু হাত ফ্যাকাশে হয়ে আসলেও লেখাটা এখনো জ্বলজ্বল করছে। কিছুতেই লেখাটা উঠছে না। যদি কেউ এটা দেখে তার মান সম্মান সব শেষ। বিড়বিড় করে নিজেই উচ্চারণ করল,

“আমি হৈমন্তীর সাথে প’রকীয়ায় জড়িত।”

ছিহহ! কি বিশ্রী শোনাচ্ছে। এটা কে লিখলো?? তবে সে আসলে স্বপ্ন দেখেনি? সবটাই সত্যি ছিল??? এখন কি হবে??এই লেখা বেলা দেখলে কি হবে? ভাবতেই দৌড়ে রান্না ঘরে ঢুকল। সারারাত চেষ্টা করেও কোনো ভাবেই তুলতে পারল না। ভোর রাতে সিদ্ধান্ত নিলো হাতটাই সে কে টে ফেলবে। অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নইলে লোক সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না। হাতের বটি তুলে নিয়ে জোরে একটা কো প বসালো। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে একটি নাম ডেকে উঠল,

“অনিরুদ্ধ।”

০৪.

অনিরুদ্ধ পলিথিন থেকে খাবার বের করে কুকুরকে দিচ্ছিলো। কুকুর গুলো সেগুলো খাচ্ছিল আর ঘেউঘেউ করছিল। রাস্তায় আপাতত মানুষ জনের আনাগোনা খুব কম। যে দু একজন আছে তাও যে যার নিজের কাজে ব্যস্ত। কারো এতো সময় নেই সে কি করছে দেখার। সে একটু একটু করে খাবার দিচ্ছিলো আর বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছিল। কথাটা অস্পষ্ট। নিজে কি বলছে তার নিজের কানেও বোধহয় ঠিক মতো পৌঁছাচ্ছে না।

বেশ যত্ন সহকারে সে তাদের খাবার খাওয়াচ্ছিল একটু একটু করে। হঠাৎ একটা অল্প বয়সী মেয়ে কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে এলো। অনিরুদ্ধের পা থেকে মাথা অবধি চোখ বুলালো। অতঃপর বলল,

“হ্যালো!!”
অনিরুদ্ধ শুনেও শুনলো না। তাকানোর প্রয়োজন মনে করল না।

মেয়েটা আবার বলে উঠল,
“আমি দূর থেকে আপনাকে দেখে এগিয়ে আসলাম। আপনি কি কুকুর অনেক পছন্দ করেন? আমিও অনেক পছন্দ করি তা এগুলো কি খাওয়াচ্ছেন?মাংসের মতো লাগছে।”

অনিরুদ্ধ দৃষ্টি না ঘুরিয়ে আঁড়চোখে চায়। এক ঝলক মেয়েটাকে দেখে আবার নিজের কাজে মন দিলো। আপাতত তার কথা বলার কোনো ইচ্ছে নেই। তাও আবার মেয়ে জাতি? প্রশ্নই আসেনা।

“বললেন না কি খাওয়াচ্ছেন?”
মেয়েটা আবার জিজ্ঞেস করল। উত্তর না পেয়ে আরও দুইবার জিগাইলো।

অনিরুদ্ধ থমথমে গলায় উত্তর করে,
“ আমার ব’উয়ের মাংস।”

মেয়েটা বড়ো বড়ো করে তাকালো। হকচকিয়ে যাওয়া দৃষ্টি নিয়ে
মিনিটের মধ্যেই আবার জোরে জোরে হো হো করে হেসে উঠল, কোনো রকমে হাসি থামিয়ে বলল,

“মশকরা করছেন জনাব? আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে বিয়েই হয়নি। আবার বউ….!!”
বলে আবারও একগাল হাসলো।

অনিরুদ্ধর রাগ হচ্ছিল। কিন্তু কিছু বলল না। কিন্তু এভাবে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রও সে নয়। তাই সুযোগ বুঝে এক টুকরো মাংস মেয়েটার পায়ের কাছে ফেলল। একটা কুকুর ঘেউঘেউ করে তার পায়ের কাছে দৌড় দিলো। মেয়েটা ভয়ে দৌড়ে অনিরুদ্ধর পেছনে দাঁড়িয়ে শার্ট খামচে ধরল,

“আমাকে বাঁচান প্লিজজ।”

সে প্রচন্ড বিরক্ত হলো। কুকুর গুলো তাড়িয়ে দিয়ে থমথমে গলায় বলল,“ছাড়ুন চলে গেছে।”

মেয়েটা ছেড়ে দিলো। ভয়ে ভয়ে উঁকি দিয়ে দেখল তারা তাদের মতো খাওয়ায় ব্যস্ত। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। হাত বাড়িয়ে অনিরুদ্ধকে বলল,

“হাই আমি ঐশী আপনি?”

অনিরুদ্ধ হাত বাড়ায় না। গম্ভীর সুরে বলে,
“অনিরুদ্ধ।”
“বাহ বেশ সুন্দর নাম তো।”

খাওয়ানো শেষ হলে সে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু মেয়েটা নাছোড়বান্দা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। রাগ বাড়লো পিছু ঘুরে দাঁড়াল।

ঐশী হেসে বলল,”আপনার নাম্বারটা দিবেন?”

অনিরুদ্ধ ঐশীর মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়াল। মুখটা একদম কাছাকাছি নিয়ে গিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে ফিসফিস করে বলল,

“আমার সৌন্দর্য দেখে গলবেন না। যা আপনার ও আপনার জীবনের জন্য ঝুঁকি পূর্ণ।”

বলেই দ্রুত পা চালিয়ে চলে গেল। সে চলে যেতেই ঐশী চোখ খুলল। অনিরুদ্ধের নিঃশ্বাস যখন তার মুখে আঁচড়ে পরছিল তখন এক অদ্ভুত ভালো লাগার শিহরণ কাজ করছিল তার। জোরে জোরে শ্বাস টেনে সামনে তাকালো। অনিরুদ্ধ এখনো অদৃশ্য হয়নি, পিছু নিলো। অনিরুদ্ধ বিল্ডিংয়ের সামনে এসে শার্ট খুলে ডাস্টবিনে ফেলল। সাথে তার উপরে একবার থুথুও ফেলল। ফেলে ভেতরে ঢুকে গেল। যাওয়ার আগে গম্ভীর গলায় ঘৃণা ভরা কণ্ঠে আওড়ালো,

“মেয়ে জাতি মানেই ছুঁয়াচে রোগ,
যতদূর থাকবে ততই কম পোহাতে হবে ভোগ।”

ঐশী দূরে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখলো। প্রচণ্ড আত্মসম্মান লাগলো। দু’হাত ভাজ করে সেই ডাস্টবিনটার দিকে তাকিয়ে বলল,

“মিস্টার অনিরুদ্ধ আই লাভ ইউর অ্যাটিটিউট। আমি তোমাকে এতো সহজে ছাড়ছি না। তোমাকে আমি আমার মানিয়ে ছাড়ব নইলে আমার নামও ঐশী হাওলাদার নয়।”

#চলবে………