#সমাপ্তিতে_রুদ্ধশ্বাস🦋
#মিশকা_মুন {লেখনীতে}
|৪|
০৮.
ভোরের আলো তখনো পুরোপুরি ফোটেনি। ঐশীর বুকের ভেতর এখনো ধকধক করছে। কে তাকে “বেবি” বলে পেছন থেকে ধরল এটা বুঝতে বাকি নেই। ধীরে ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। অকিল দাঁড়িয়ে আছে তার কাঁধে থুতনি রেখে। ভয়টা কিছুটা কমলো, সঙ্গে সঙ্গে কিছু একটা মনে হতেই চিরকুটটা লুকিয়ে ফেলল। ভুলেও তাকে বুঝতে না দিয়ে বলল,
“কিছু না জান। তুমি উঠে পরলে যে?”
“তোমাকে এখানে দেখে এলাম।”
“আচ্ছা চলো শুয়ে পরি।”
“চলো।”
দুজনেই গিয়ে শুয়ে পড়ল। অকিল তাকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে শুলো। ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি তার তাই অল্প কিছুক্ষণেই ঘুমিয়ে গেল।
সে ঘুমাতেই ঐশী তাকে সরিয়ে দিল ঠেলে। অতঃপর পাশ ফিরে শুলো। অকিলের সাথে বিয়ে হয়েছে আজ দুই বছর। তার আগে একবছর তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। যদিও অকিল বিবাহিত থাকায় প্রথম প্রথম তাকে পাত্তা দিত না পরে তার রুপের প্রেমে পরে নিজের বিবাহিতা স্ত্রীকে ছেড়ে তাকে বিয়ে করে।
অকিলের প্রথম বউ মায়া। কি যে মিষ্টি মেয়ে। গায়ের রঙটা একটু চাপা হলেও যেমন গুনী মানুষ সে তেমনই অমায়িক ব্যবহার ছিল তার। কিন্তু ঐশীর সাথে প’রকীয়ায় জড়ানোর পরে মায়াকে অনেক অত্যাচার করত। চাইত মায়া অতিষ্ঠ হয়ে চলে যাক। কিন্তু না সে স্বামীকে ভীষণ ভালোবাসত এতো কিছুর পরেও যেতে চাইতো না। শেষমেষ তাকে নানান অজুহাত দেখিয়ে ডির্ভোস দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মেয়েটা বাড়ি ছাড়ার আগেও কত করে হাত পা ধরেছিল। কান্না করতে করতে বলেছিল,
“আমাকে তাড়িয়ে দিও না, কোথায় যাব আমি? এই দুনিয়ায় তো আমার কেউ নেই। ঘরে এককোণে পরে থাকব তোমার বউয়ের সব কাজ করে দেব তবুও বের করে দিও না।”
অকিল শুনেনি ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছিল। তারপর আর তার কোনো হদিস মিলেনি। কোথায় গেছে। বেঁচে আছে না ম রে গেছে তারও খোঁজ খবর নেয়নি সে।
মায়ার সাথে যেদিন তার বিচ্ছেদ হয় সেদিনই সে ঐশীকে বিয়ে করে বাড়িতে তোলে।
প্রথম প্রথম ভালো থাকলেও ঐশী বিয়ের ছয় মাস পরেই তার প্রতি সকল আগ্রহ হারায়। তাকে আর তার ভালো লাগে না। অন্য পুরুষের দিকে নজর যায়। ধীরে ধীরে এটা বাড়তে থাকে। অকিলের অগোচরে সে অসংখ্য প্রেমে লি’প্ত হয়।
চাকরির সুত্রে মাঝে মাঝে তাকে বাহিরে যেতে হয়। সেই সুযোগই নেয় ঐশী। ছেলে নিয়ে আসে বাসায়। বাড়ির আশেপাশে মানুষ বিষয়টা খেয়াল করে অকিলকে জানালেও আজ পর্যন্ত সে কারোর কথা বিশ্বাস করেনি। উল্টো আশেপাশে মানুষের সাথে ঝামেলা করে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের বা এতো কিসের ঠেকা বারবার বলতে যাবে? তাই তারাও এখন এসব দেখেও না দেখার ভান ধরে থাকে।
জানালার পর্দা হাওয়ায় দুলছে। সে সেদিকে তাকিয়ে ভাবছে, লেখাটা কার ছিল? আর এমন হুমকিই বা কে দিতে পারে? এসব কি হচ্ছে? কল্পনা? নাকি বাস্তব?
উঠে বসলো, বালিশের নিচ থেকে খামটা বের করল। হাতে চেপে ধরা খামটা যেন তার আঙুল ফুঁড়ে র’ক্ত বের করে আনতে চাইছে।
কে হতে পারে? এমনই অনিরুদ্ধকে না পেয়ে বুকের ভেতর জ্বালা ধরছে। এভাবে আর পারা যাচ্ছে না। কিছু একটা করতেই হবে। যে করেই হোক তাকে তো তার চাই। দরকার হলে অকিলকে ছেড়ে দিবে তবুও তার অনিরুদ্ধকে চাই।
ঠিক তখনই তার ফোনে মেসেজ এলো। নাম্বারটা সেভ করা।
“কালকে দেখা করো জান। মনে রেখো না আসলে কিন্তু আমি অনিরুদ্ধকে বলে দেব তুমি বিবাহিত।”
মেসেজ পড়েই বুক কেঁপে উঠল। হারুনের নাম! এক সপ্তাহ আগে যার সঙ্গে কথা হয়েছিল ঐশীর। হঠাৎ মনে পড়ল হারুন তাকে আগেই সতর্ক করেছিল নিজে থেকে কল মেসেজ করতে। তাদের মধ্যে দেনাপাওনার সম্পর্ক।
কোনো দেরি না করে ঐশী উঠে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে ফোন করল হারুনকে। কিন্তু ওপাশ থেকে বারবার রোবটিক ভয়েস,
“The number is currently switched off.”
কল না যাওয়াতে এবার গিয়ে শুয়ে পড়ল। প্রচন্ড ঘুম পেয়েছে এখন। আর জেগে থাকা যাচ্ছে না।
বেলা ৮টায় দরজায় তীব্র ধাক্কা! টকটকটক…
ঐশী চমকে উঠে কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল,
“কে… কে বাহিরে?”
ওপাশ থেকে নারীকণ্ঠ ভেসে এলো, দৃঢ় অথচ শান্ত,
“পুলিশ। দরজা খুলুন।”
অকিলেরও ঘুম ভেঙে গেছে দুজনে একসাথে গিয়ে দরজা খুলল। দরজা খুলতেই দাঁড়িয়ে আছে এক মহিলা পুলিশ অফিসার। কড়া চোখ, চেহারা দেখেও মনে হচ্ছে প্রচন্ড রাগী। নাম লেখা ইনস্পেক্টর সানজানা রহমান। হাতে ব্যাজ তুলে দেখালেন।
“মিস ঐশী হাওলাদার।”
“জি আপনারা এখানে কেনো?
“আমরা একটি মামলা তদন্ত করছি। হারুন নামের একজন হঠাৎ নিখোঁজ হয়েছেন। তার মোবাইলের শেষ কল আপনার নাম্বার থেকে। আপনি কিছু জানেন? আপনাকে জিগাসা বাদের জন্য থানায় নিয়ে যেতে হবে।”
ঐশীর মাথা ঝিমঝিম করে উঠল। ভয় আর আতঙ্ক একসাথে গ্রাস করছে। তবুও সাহস করে অকিলকে বলল,
“কে হারুন? আমি এই নামে কাউকে চিনি না।”
অকিলও তার সঙ্গে তা মিলিয়ে বলল,
“সত্যি তো এই নামের কাউকে আমি বা আমরা চিনি না। আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে।”
“আপনি চেনেন না ঠিক কিন্তু আপনার বউ ঠিকই চিনেন।”
“আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।”
“সেটা নাহয় থানায় গেলেই বোঝা যাবে।”
আর কোনো কথা নূ শুনেই বেলা নয়টায় থানা নিয়ে আসা হয় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। সে চিনে কিনা? কীভাবে চিনে! মিথ্যা না বলে সত্যি বলতে।
ঐশী এবার গল্প সাজায়,বলে,
“হারুন তাকে বিরক্ত করত, একাদা রাস্তায় সে অকিল মনে করে জড়িয়ে ধরেছিল সে তখন ছবি উঠছিল। তৎক্ষনাৎ ক্যাপচার হয়ে যায় তাদের জড়িয়ে ধরার ছবি। সেদিন থেকে সেই ছবি দেখিয়ে তাকে ভয় দেখাত। সেও ভয় পেয়ে গেছিল যদি অকিল ভুল বুঝে? তাই না চাইতেও তার সঙ্গে কথা বলতে হতো।
কাঁদতে কাঁদতে বলল।
সানজান মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তার ঠোঁটের কোণে কৌতূহলী হাসি। সে বলল,
” অনিরুদ্ধকে চিনেন?”
ঐশী চমকালো। চমকে উঠা কণ্ঠে বলল,”না তবে নামটা চেনাচেনা লাগছে। ঠিক মনে করতে পারছি তবে হারুনের মুখেই শুনেছিলাম মনেহয়।”
“মজার ব্যাপার হলো, মিসেস ঐশী আপনার ধারণা ভুল নয়। আমরা অনেক দিন ধরেই অনিরুদ্ধ নামের এই লোকটাকে ট্র্যাক করছি। তার স্ত্রীর সাথে আপনার পরিচিত হারুনের প’রকীয়া ছিল। অনিরুদ্ধ সেটা জেনে গেছিল। তারপর থেকে হারুনের আর খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের ধারণা সেই কিছু করতে পারে।
ঐশী হকচকিয়ে গেল।
“মানে হারুন আর অনিরুদ্ধের বউ?
ঐশী হতভম্ব হয়ে যায়। এই কয়েকদিন সে এতোটুকু বুঝে অনিরুদ্ধ তার বউকে ভীষণ ভালোবাসে। আর সেই বউ এই কাজ করত? ছিহহ। মনে মনে বিশ্রী দুটো গালি বেরিয়ে এল।
তার সাথে কথাবার্তা বলে ছেড়ে দেওয়া হলো। অকিল বাহিরে অপেক্ষা করছিল সে বের হতেই একশো একটা প্রশ্ন করতে করতে থানা ছাড়ল….
০৯.
সকাল হয়ে গেল দরজা জানালা বন্ধ করে অন্ধকার করে রেখেছে অনিরুদ্ধ। অন্ধকার ঘরে খাতা উল্টাচ্ছে। বুকের ভেতর আগুন দাউদাউ করছে। হারুনের নামের পাশে দেওয়া ঠিক চিহ্ন দেখে সে হাহাহা করে উঠল। টেবিলের উপর ফেলে রাখা একটি ছবির দিকে তাকালো ছবিতে তার মৃ ত্যু স্ত্রী হৈমন্তী, আর পাশে হারুন। তারা দু’জন কোনো বাগানে বসে হাসছে।
“বেশি হাসছিস তাই না? এখন হাসবি কোথায়? জাহান্নামে গিয়ে?”
ছবিটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলল। তারপর চিৎকার করে উঠল, ‘ তোদের মতো লোকদের আমি দুনিয়ায় থাকতে দেব না।”
তার চোখে তখন ভয়ংকর আগুন জ্বলছে।
ঘড়িতে তখন সকাল আটটা বাজে। সূর্যের আলো জানালার ফাঁক গলে ঘরে ঢুকছে। কিন্তু তার সঙ্গে অদৃশ্য এক কালো ছায়া ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে।
অনিরুদ্ধ সুন্দর করে রেডি হলো। সাদা শার্টের সাথে কালো প্যান্ট, কালো ঘড়ি পরেছে। হাতা গোটানো। চুলগুলো ঠিক করে এবার কড়া সুগন্ধের একটি পারফিউম নিলো। তার উপরের পরে নিল একটা কালো রঙের হুডি।
ফেলা রাখা কাজটা আজকে শেষ করতে যাচ্ছে সে। তার প্রিয় কুকুরদের খাবার দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। আজকে তাদের পেটপুরে খাওয়ার দিন।
#চলবে…