সমাপ্তিতে রুদ্ধশ্বাস পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0
1

#সমাপ্তিতে_রুদ্ধশ্বাস🖤🦋
#মিশকা_মুন{লেখনীতে}
|৫|

১০.
সন্ধ্যার আড়ালে শহর আরও জাঁকজমকপূর্ণ। চারিদিকে রঙ বেরঙের আলো জলছে কিন্তু একজন মনে গহীনে ভয়ংকর অন্ধকার। ইদানীং আলো দেখলে তার অসহ্য লাগা শুরু করেছে। জীবন থেকে সব আলো যেন ফিকে হয়ে গেছে। কোনও কিছুর মুখোমুখি হওয়ার পূর্বাভাস আসছে তার মনে। অনিরুদ্ধের হাবভাব সুবিধার ঠেকছে না। প্রতিটি দিনে প্রতিটি স্মৃতি তার ওপর কড়া হয়ে চেপে আসে। হৈমন্তীর ছবিগুলো, তার মায়া ভরা চাহনি, টোল পরা হাসি সব কিছু মস্তিষ্কে একদম জটলা হয়ে গেঁথে আছে। নিঃস্ব নিঃসঙ্গতা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

হৈমন্তী আর অনিরুদ্ধের প্রেমের বিয়ে। একটা কাজে নারিকেলবাড়িয়ায় নামক এক এলাকায় গিয়েছিল সে। সেখানে গিয়েই হৈমন্তীর সাথে তার পরিচয়। বাবা মা নেই চাচার বাসায় থাকতো। সে বাড়িতেই মেহমান হয়েছিল সে তিনদিন। তখনই কিশোরী মেয়েটাকে ভালো লাগে তার। মাত্র তিনদিনের পরিচয়ে একটা ছেলে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও আপত্তি করেন না হাশিম মিয়া। আর আপত্তি করবেনই বা কেনো? এই আপদ তাকে বের বিদায় করতে পারলে তো তারই লাভ।

অনিরুদ্ধ সুন্দর। ভালো চাকরি করে। শহরে থাকে। হৈমন্তীর আর কি লাগে? তারও মন মতো হওয়াতে রাজি হয়ে যায়।

বিয়ের পরেরদিনই তারা শহরে চলে আসে। হৈমন্তী ভালো স্টুডেন্ট ছিল কিন্তু চাচায় এইচএসসির পড়ে আর পড়তে দেয়নি। অনিরুদ্ধ তাকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করায়। পড়াশোনা করতে উৎসাহ জোগায়। সে তো মহা খুশি। সুখ আর সুখ দিয়ে যেন তার জীবন পরিপূর্ণ হয়ে যায়।

এভাবে তাদের সুখের সংসার বেশ ভালোই চলছিল। বছর দুয়েক পড়ে হৈমন্তীর পেটে একটা বাচ্চা আসে। কিন্তু সে কিছুতেই এখন বাচ্চা নিতে রাজি হয়না। ন’ষ্ট করতে চায়। কিন্তু অনিরুদ্ধ কিছুতেই রাজি হয়না। পরে একটা ডক্টর কে টাকা দিয়ে অনিরুদ্ধের কাছে মিথ্যা বলায়, এখন বাচ্চা নিলে তার জীবনের ঝুঁকি আছে। এবার সে চুপ হয়ে যায়। হৈমন্তীকে সে অনেক ভালোবাসে কোনো কিছুর বিনিময়ে তাকে হারাতে চায়না।

তবে বাচ্চা ফে লে দেওয়ার পরে তাদের আর বাচ্চা হয়না। তবে অনিরুদ্ধ কষ্ট পেলেও তার কোনো যায় আসতো না। তার কাছে সবার আগে নিজের সৌন্দর্য। বাচ্চা নিলে নাকি তার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে এমনই কু ধারণা ছিল তার অন্তরে।

হৈমন্তী অনার্স শেষ করে একটা কোম্পানিতে জয়েন করে। অনিরুদ্ধও তাকে বাঁধা দেয়না। সব কিছুর আগে সে তাকে খুশি দেখতে চায়।

সেখানে জয়েন করার কিছুদিন পরেই সে তার এক কলিগের সাথে প’রকীয়ায় জড়িয়ে পরে। বেচারা কোনো ভাবেই বুঝতে পারেনি। একদিন হুট করে রাস্তায় তাদের একটা হোটলে ঢুকতে দেখে। মাথায় যেন বাজ ভেঙে পরে। অফিসে না গিয়ে সোজা বাসায় যায়। রাতে হৈমন্তী ফিরে হারুনের গাড়িতে সে ব্যালকনি থেকে পুরোটাই দেখে।

কলিং বেল বাজাতেই অনিরুদ্ধ খুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে তার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

“আজ এতো আগেই চলে এসেছো যে?”

অনিরুদ্ধের অসহ্য লাগলেও শান্ত কণ্ঠে উত্তর করে,
“কাজ ছিল না।”
“ওহ। ফ্রেশ হয়ে আসি।”
“হুম।”

সে ওয়াশরুমে ঢুকতেই তার ফোন চেক করে সে। তাদের কনভারসন দেখে চোখ ভিজে উঠে তার। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। বাসা থেকে চলে যায় কোথাও একটা।

বাসায় ফিরে দু’দিন পরে। হৈমন্তী ছোট্ট একটা মেসেজ করে রেখেছিল। জাস্ট এতটুকু,,,,”ফিরতে দেরি হবে।”

সে প্রস্তুত হয়ে এসেছিল। পরিকল্পনা সে ঠান্ডা মাথাতেই করেছে।
প’রকীয়ার একমাত্র শাস্তি মৃ ত্যু। আইনের হাতে তুলে দেওয়া ভরসা সে করতে পারেনি। কারণ কিছু দিন আগে তার এক ফ্রেন্ডের বউ প’রকীয়া করার সে থানা গিয়ে কেইস করে। মেয়েটা উল্টো তাকে অত্যাচার করার কেইস দিয়ে পাশা ঘুরিয়ে দেয়। দুজনের এরকম সমস্যা দেখে আদালত তাদের বিচ্ছেদের ব্যবস্থা করে। তারপর আর কি? মেয়েটা সেই ছেলেকে বিয়ে করে দিব্যি আছে। আর তার বন্ধু দেবদাসের মতো জীবন কাটাচ্ছে। সেদিন তার বন্ধু আলিফ সতর্ক করে বলেছিল। কিন্তু সে গর্ব করে বলেছিল,

“দুনিয়া উল্টে গেলেও তার হৈমন্তী কখনোই এমন করবে না।”

আলিফ সেদিন কিছু না বলে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। সেও মন থেকে খুব করে চেয়েছিল তার বন্ধুর সাথে কখনো এমন না হোক।

কিন্তু কি হলো? কোথায় গেল তার সেই গর্ব?

সেদিন সেসব দেখার পরে সবার আগে সে আলিফের কাছেই গিয়েছিল। বেচারা আরও একবার বন্ধুর জন্য আহাজারি করে কেঁদেছিল। দুই বন্ধুর জীবন নষ্ট করেছে তাদের দুই শখের নারী কথা বিশ্বাস করে উঠাও তাদের কাছে ম রণ যন্ত্রণার মতো লেগেছিল। কিন্তু তারা সেদিন সকল দুঃখ কষ্ট ভালোবাসা সব সেখানেই শেষ করে ফেলেছিল। সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা শাস্তি দিবে।

আলিফ দূর্বল আর সাদাসিধা ছেলে তাই তাকে নিয়ে মিশনে যেত না অনিরুদ্ধ। কিন্তু সকল খবরাখবর সেই জোগাড় করে এনে দিত।

হারুনকে সেদিন তাদের কৌশলে ফাঁদ পেতে ধরে নিয়ে গেছিলো। কেউ তৎক্ষণাৎ তাকে বাধা দিতে পারে আসেনি। বাঁধা দিবেই বা কে? কেউ তো সেখানে ছিলই না। বিনাবাধায় সে তাকে তোলে এনে নিজের কাছে রেখেছে। না আর দেরি করলে চলবে না। নিশ্চয়ই সেও ঐশীর কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে? তাকেও সেখানে পাঠাতে হবে।

পরদিন সকালে,
ঐশীর কাছে একটি কল আসে, অচেনা নাম্বার ধরতেই
অনিরুদ্ধের স্বর। সে বলল,

“দেখা করতে পারবে?”

ঐশী অবাক হয়। বলে,”তুমি বলছ?”
“হুম আমি বলছি।”
“আসবে? ”

ঐশী লাফিয়ে উঠে বলে, “অবশ্যই। কেনো আসব না। তুমি বলো কোথায় যেতে হবে?”
“ঠিকানা পাঠাচ্ছি।”

বিকেলে অনিরুদ্ধ ঐশীকে নিয়ে যায় এক কাদামাটি-ঘেরা পুরনো বাড়ির চত্বরে। এখানে দিনের আলো কম, রাতের মতো অন্ধকার আচ্ছন্ন বেশি। ঐশীর মনে সন্দেহ ভর করে, কিছু ক্লিষ্ট অনুভব করে, কিন্তু অনিরুদ্ধ তার হাতে হাত রাখে, আদর-ভঙ্গিতে বলে,

“আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।”
ঐশীর চোখে ভর করে সেই পুরোনো দুর্বলতা; সে বিশ্বাস করতে চায়। চায় কি? সে সত্যি সত্যি বিশ্বাস করে নেয় অনিরুদ্ধ তাকে ভালোবাসে। আর তাকে ভালোবেসে যাবেই বা কোথায়?

একটা বাসার মধ্যে ঢুকে পরে। অনিরুদ্ধ দরজা খুলে বলে, “ভেতরে আসো।”
ঐশী অনুশোচনায় থরথরে কাঁপছে। দরজা খুলতেই রবার মফস্বল ঘরের কোণে কিছু ছোপ-ছোপ চিহ্ন। মনের মধ্যে ভয় দানা বাঁধে।

“আমরা এখানে কেনো এসেছি?”

অনিরুদ্ধ হাসে ধীরে ধীরে ঐশীর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“এই শহরে যারা পরকীয়ার কোনো শাস্তি নেই, তাই আমি ভাবলাম আমিই শাস্তির ব্যবস্থা করি।”

তার কণ্ঠে ভয়ংকর কিছুর আভ্যাস পাওয়া যায়।

ঐশী মাথা নত করে চায়, আমতা আমতা করে বলল,
“আমি তো বিবাহিত না?”

“তাই?”
ঐশীর চুলগুলো কানে গুঁজে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে সে।”

সে ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। অনিরুদ্ধ আবার হেসে বলে,”তাহলে ভয় কেনো পাচ্ছো?”

“কই পাচ্ছি না তো।”
জোরপূর্বক হেসে বলল।

অনিরুদ্ধ তাকে দেখাতে এনেছে সে নিজের হাতে যে কাজ করেছে, তার প্রতিফলন। সে ঐশীর সামনে দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয়। অনিরুদ্ধ ঐশীর সামনে হারুনের সমাপ্তিতে ঘটাতে চায়।

ঐশী ভয় পেয়ে পালাতে চায় তার আগেই তাকে ধরে চেয়ারের সাথে বেঁধে ফেলে। অতঃপর পাশের রুম থেকে হারুনের আধো আধো প্রাণে বেঁচে থাকা হারুন কে নিয়ে আসে।

তার সামনে রেখে তাকে পিস পিস করে কা’টতে থাকে। মুখ বাঁধা থাকায় চিৎকারই করতে পারে না। ভয়ে এক সময় সে সেন্সই হারিয়ে ফেলে।

অনিরুদ্ধ হারুনকে প্যাকেটে ভরে। ঐশীর কাছে যায়। তার মুখে এক গ্লাস পানি ঢেলে তাকে তোলে। চোখে মুখে ম’রণের ভয়। কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়িয়ে আকুতি মিনতি করতে থাকে।

কিন্তু সেই আকুতি অনিরুদ্ধের অন্তর গলাতে পারে না। সে হাসে। ভয়ংকর রকমের হাসি। হাসতে হাসতে বড়ো রাম দাটা তার দিকে তাক করে। ভয়ে তার চোখ মুখ বের হয়ে আসার জোগাড়। আর কোনো সাউন্ড করতে সময় দিল না। সঙ্গে সঙ্গে এক কো পে দু খন্ড করে ফেলল।

তড়িৎ বেগে র ক্ত এসে মাখামাখি হয়ে গেল পুরো শরীর। ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখটা সযত্নে মুছে নিলো। অতঃপর তারও হারুনের মতো অবস্থান হলো।

অতঃপর গিয়ে সুন্দর করে গোসল সেড়ে এলো। শরীর থেকে সকল সকল নোংরা পরিষ্কার করে গুনগুন করতে করতে প্যাকেটগুলো হাতে নিলো। একবার নেওয়া সম্ভব নয় তাই বারে বারে গিয়ে ভাড়া করে আনা এক কালো গাড়ি ডিঁকিতে তুলল।
সব তোলা হয়ে যাওয়ার পরে জায়গায়টা সুন্দর করে পাইপে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলল।

কাজ শেষ করে গাড়ি স্টার্ট দিলো। কিছু কিছু পলিথিন গিয়ে ফেলল মাগুর মাছের পুকুরের। এক এক করে পলি ফেলছিল আর চারদিকে মাছের মেলা লেগে যাচ্ছিল। কিলবিল করে উঠছিল পুরো জায়গায়।

যতক্ষণ তাদের খাদ্য শেষ না হয় ততক্ষণ সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো। শেষ হতেই বিড়বিড়িয়ে কিছু একটা বলে আবার গাড়িতে উঠে বসলো। এবার গেল তার চিরচেনা কুকুর গুলোর কাছে। তাকে দেখেই কুকুর গুলো ঘেউঘেউ করে উঠল। সে হাসলো। হেসে পলি নিয়ে এসে তাদের খেতে দিল।

কুকুর গুলো খাচ্ছিল আর উদ্ভূত ভঙ্গিতে ডাকছিল। ধীরে ধীরে বেশ অনেকটা সময় ধরে তারা খাবার শেষ করল। অনিরুদ্ধ সে দিকে তাকিয়ে হাসতে শুরু করল। হাসতে হাসতে চোখ চিকচিক করছে। এক সময় চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো। তবুও তার হাসি শেষ হলো না। কুকুর গুলো খাওয়া শেষ করে এবার তার দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে সে থামলো। কপালের রগ গুলো ফুটে উঠেছে। সেও তাদের দিকে লো’মহর্ষক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল,

“দুনিয়ায় সব কিছুর উর্ধ্বে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা। সেই ভালোবাসে যে এক নিমেষে শেষ করে ফেলতে পরপুরুষ বা পর নারীর জন্য তার জন্য কু’রবানী ফরজ হয়ে যায়। এই দুনিয়ায় তাদের মতো পাপীদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।”

কুকুর গুলো কি বুঝলো কে জানে! সে থামতেই সবাই ঘেউঘেউ করে উঠল। সে আবার হাসে, বলে,

” এ শহরে যতবার প’রকীয়া সূচনা হবে ততবার তার সমাপ্তি ঘটাতে অনিরুদ্ধ আসবে।”

১১.

থানায় আজ প্রচন্ড ভীড়। ইদানীং চু’রি একটু বেশিই হচ্ছে। বিকাল থেকে এই নিয়ে বিশটা চু রির কেইস আসলো। সানজানার এখন বিরক্ত লাগছে। সারাদিন এতো ব্যস্ত ছিল ঠিক মতো খাওয়া দাওয়াও হয়নি। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে এখন। ক্লান্ত শরীর নিয়ে সবেই চোখটা বন্ধ করেছিল তখনই কেউ এসে কেঁশে উঠল।

সানজানা চোখ খুলে তাকালো। প্রথমে চিনতে পারল না। জিজ্ঞেস করল,

“কে আপনি?”

“অনিরুদ্ধ, হৈমন্তী, হারুন আর ঐশীর বিচারক।”

সানজানা চমকে উঠল, তার ধারণাই সঠিক। অনিরুদ্ধ তার সকল অপরাধ স্বীকার করে নিতেই তাকে লোকাবে দেওয়া হলো। রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গেল নিউজ।

হারুনের বউ, ঐশীর জামাই, আলিফ সবাই টিভি স্কিনে একধ্যানে তাকিয়ে সেই নিউজ গুলো দেখলো। কারো কারো চোখ ভিজে উঠল। বিশ্বাসঘতকার কারণে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো তাদের।

যেহেতু অপরাধী দোষ স্বীকার করে নিয়েছে তাই বেশি সময় লাগলো না আদালতে বিচার হতে। তাকে ফাঁ সির সাজা দিয়েছে আদালত।

হঠাৎ রাত তিনটায় সানজানার ফোনটা বিকট শব্দে বেজে উঠল।
ফোন কানে ধরতেই কেউ একজন বলে উঠল,

” ম্যাম অনিরুদ্ধ একজনের সাথে পালিয়েছে।”

সানজানার ঘুম শেষ। ভীতিকর গলায় জানতে চাইল,
“কাকে?”

“আনসার খান নামের এক লোকের সঙ্গে।”

“কোন আনসার?”
“ওই যে ম্যাম আলিফ নামের এক লোক তার বিবাহিত স্ত্রীর সাথে আনসারের সম্পর্ক থাকায় থানায় জিডি করতে এসেছিলেন? উনি সেই আসামি। কিছুদিন আগে একটা চিটিং কেইসে তাকে ধরা হয়েছে।”

সানজানা তড়িঘড়ি কল কেটে অনিরুদ্ধের অফিসে কল দিয়ে জানতে চাইল,

” অনিরুদ্ধের কে হয় আলিফ?”

ওপাশ থেকে উত্তর আসে, “বন্ধু, প্রাণ প্রিয় বন্ধু।”

কল কেটে যায় সমাপ্তিতে রুদ্ধশ্বাস ফেলে। সানজানা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে। বাকহারা সে কিছু করার নেই। তবুও এখন যেতে হবে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পরে।

সেদিন রাতে আর তাদের ঘুম হয়না। উপর মহল থেকে লাগাতার কল আসতে থাকে। মিডিয়া থানার বাহিরে ভিড় জমিয়ে আছে।

সানজানা কোনো উত্তর না নিয়ে তার টিম নেই সকাল সকাল বেরিয়ে পরে অনিরুদ্ধদের খোঁজে…

অনিরুদ্ধ আর আলিফ একসাথে আজকে কুকুর কে খাওয়াচ্ছে। তারা খাচ্ছে আর ঘেউঘেউ করছে তা তৃপ্তি সহকারে দেখছে দুই বন্ধু। আর গুনগুন করে গান গাইছে।

সেই দৃশ্য রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে দেখে সানজানা। চোখ মুখের ভাবভঙ্গি অতি স্বাভাবিক।

হঠাৎ অনিরুদ্ধের সাথে চোখে চোখ পরে। মুচকি হাসে অনিরুদ্ধ প্রতিত্তোরে সানজানাও মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে বসে। থানা থেকে কাউকে নিয়ে পালানো মুখের কথা নয়। আনসারকে পালানোর প্রলোভন দেখিয়ে পালাতে রাজি করা সহজ কিন্তু জেল থেকে পালানো সহজ নয়।

আসলে ইদানিং প’রকীয়া এতো পরিমাণ এতো বেড়েছে যে সানজানাও বিরক্ত। অথচ তার মা প্রতিদিন বিয়ের জন্য ঘ্যানঘ্যান করে কিন্তু সে কাউকে বিশ্বাসই করে উঠতে পারে না। তাহলে বিয়ে করবে কেমনে?

শেষ মুহূর্তে সেও অনিরুদ্ধের সাহায্য করে। পালানোর সুযোগ করে দেয়। তারও মনেহয় এমন পাপের একমাত্র শাস্তি ভয়াবহ মৃ ত্যু।

পুলিশের গাড়ি চলে যেতেই আলিফের কাঁধে অনিরুদ্ধ হাত রেখে জোর গলায় বলে,

“এই শহরের সকল প’রকীয়া শেষ করতে আমরা আবার ফিরব, ফিরব আবার সমাপ্তিতে রুদ্ধশ্বাস নিয়ে……!!”

—সমাপ্তি—-