#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:২১
#Mishmi_myntaha_moon
পুরো শহরজুড়ে গেঞ্জাম,আন্দোলন চলছে।নির্বাচন সামনে সেই কারনে।উপমা তার রুমের জানালার সাথে হেলান দিয়ে চেয়ে বসে আছে।বিকেল ৩টা বাজে।আজকে চোখ দেরি করে খুলেছে।সকালের খাবারও দেরি করে খাওয়া পরেছে তাই দুপুরের খাবার খায় নি।
রাস্তার সাথে বাড়ি থাকায় রাস্তার কি হচ্ছে সব দেখা যায় আর এই রাস্তা দিয়েই সেহরিশের বাড়ি থাকায় আরও বেশি জ্যাম, মানুষের ভীড়।
আজ অনেক দিন পর উপমার সব চাচারা এসেছে।লিমনের বাবার লিমনের বিয়ের পর এই প্রথম পা রাখলেম জাফর সাহেবের বাড়িতে।
বাহিরে কথার প্রবল আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।লিমনেরও কন্ঠ শুনতে পেলো । উপমার মধ্যে কোনো ভাবাবেগ দেখা গেলো না।রাস্তায় হাজারো ভীড়ে কাউকে দেখে উপমার চোখজোড়া জ্বলজ্বল করে ওঠলো।ওইযে সেই পুরনো রূপে পাঞ্জাবি পরিহিত চোখে গ্লাস।
উপমা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।কেনো যোগাযোগ করছে সেহরিশ তার সাথে। উপমার অভিমান বারে সেও কোনো ভাবে যোগাযোগ করবে না।
সেহরিশের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার মাঝেই মাথায় কারো স্পর্শে মাথা তুলে তাকালো।উপমার বড় চাচা দাঁড়িয়ে।
উপমা হাসি ছাড়া মুখেই দাঁড়িয়ে চাচাকে সালাম দিলো।
‘এভাবে রুমে একা বসে আছিস কেনো।বাহিরে আয় তোর ছোট চাচা আমি কতোক্ষন হলো আসলাম।’
চাচার কথা শুনে উপমা বলল
‘হুম আমি আসছিলাম।’
উপমার কথা শুনে তার বড় চাচা তাকিয়ে রইলেন উপমার দিকে করুন চোখে। উপমা একপলক তার বড় চাচার দিকে বাহিরে যেতে যেতে বলল
‘আমি বাহিরে যাচ্ছি আপনিও আসেন।’
উপমা বাহিরে গিয়ে এক কোনায় দাঁড়িয়ে রইলো।আনমনে দাঁড়িয়ে থাকার মাঝেই লিমনের সাথের এক ভদ্রসদ্র এক ছেলে। উপমাকে দেখে হেসে বলল
‘জাফর আংকেল এইটাই কি আপনার মেয়ে উপমা?’
জাফর সাহেব মাথা ঘুরিয়ে পিছে তাকালো।উপমাকে এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে বলল
‘ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো। আমার পাশে এসে বসো।’
উপমা মাথা নাড়িয়ে তার বাবার পাশে গিয়ে বসলো।জাফর সাহেব ওই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল
‘হুম এইটাই আমার মেয়ে উপমা।’
ছেলেটা হাসলো।মাথা নিচু করে কিছু বিরবির করলো।উপমা ছেলেটার অদ্ভুত আচরন দেখে ভ্রু কুচকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।তারপর আরও অনেক কথা চলল সবার মধ্যে উপমা আলোচনার মধ্যে থেকেও নেই যেনো।
সকল শেষে তার চাচারা চলে যাবে বলল।উপমাও হেসে দুই চাচাকে বিদায় দিলো।লিমনের সাথেও কিছু কথা হলো তার অধিকাংশই রিমুকে নিয়ে আর কিই বা বিষয় বলার আছে উপমার লিমনের সাথে।
উপমার দুই চাচার সাথে তার বাবাও চলল।এখন তারা উপমার বড় চাচার বাড়ি যাবে।সেখানেই তার ছোট চাচা আজকে থেকে কাল চলে যাবে।তাই জাফরও গেলো ভাইদের সাথে।লিমনও তার সাথের ছেলেটা থেকে বিদায় নিয়ে বাপ চাচার সাথে গেলো।
উপমা সবাইকে বিদায় দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে তাকালো।ভ্রু কুচকে বলল
‘আপনি কি আজ যাবে না নাকি? ‘
ছেলেটা হাসলো।আশেপাশে দেখে নিয়ে উপমাকে ধীর কন্ঠে বলল কিছুটা কাছে এসে
‘আপনি আমায় চিনেন না নিশ্চয়।আপনার বাবা আমার সাথে আপনার বিয়ের দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার আগেতো আপনার বিয়েটাই হয়ে গেলো।আপনাকে দেখে আজ আমার আফসোস হচ্ছে।হাহা।’
‘তো? এখন তো বিবাহিত আমি ওই আগের ঘটনা জানার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।’
‘আপনার স্বামী কি আমার থেকেও বেশি হ্যান্ডসাম নাকি।’
উপমা অবাক হলো।কিসব আজব কথাবার্তা বলছে।ছেলেটার মাথায় নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে।মাঝেই মিছিলের তীব্র আওয়াজে উপমা ভ্রু কুচকেই মিছিলের দিকে তাকায়।সকলের মুখে সেহরিশের নাম প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
অনেক বড় মিছিল শেষ হতেই পিছন দিয়ে গাড়ি এলো।উপমা আর ছেলেটার সামনে থামতেই গাড়ির কাচ নামিয়ে সেহরিশের মুখ দেখা গেলো।চোখের গ্লাস টা খুলে উপমার দিকে নজর দিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো রুষ্টতা নিয়ে।বাকা হেসে বলল
‘হোয়াটস আপ ব্রো।’
সেহরিশের কথায় ছেলেটা বিশাল হাসি দিয়ে বলল
‘জ্বী ভাই ভালো আছি।আপনার খবর কি?’
‘দেখতেই তো পাচ্ছেন।তা যাই হোক আপনি কোন দলের সাপর্টার? ‘
ছেলেটা আরেকদফা দাত বের করে হাসলো।উপমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভাব নিয়ে বলল
‘আমি তো এমনিতে রাজনীতি টা এতো পছন্দ করি না সো কারও দলেই না।কিন্তু আপনি টেনশন করবেন না আপনার সাথেই আছি অন্য সবার মধ্যে।হাহা।’
ছেলেটার হাসির সাথে সেহরিশও যোগ দিলো।ঠাট্টা করে বলল
‘ধন্যবাদ। কিন্তু আপনার সাহায্য আমার আসলে প্রয়োজন নেই কিন্তু আপনি সাহায্য করতে চাইলে আমার আপত্তিও নেই।চলি তাহলে।’
সেহরিশের গাড়ি আগে বাড়লো।উপমার রাগ লাগছে সেহরিশকে দেখে আর তার কথা শুনে। উপমা ছেলেটাকে রেখেই মুখ ফিরিয়ে চলে গেলো।
___
রেজাল্ট পেয়ে মন টা খারাপ হলো উপমার। ততোটা ভালো আসে নি।আরেকটু চেষ্টা করলেই হয়তো ভালো আসতো।কিন্তু এখন কি করার।
উপমার মনটা বিষিয়ে আছে।একের পর এক খারাপ হচ্ছে কেনো উপমার সাথেই।
উপমা তার বিছানায় বসে বসে এই কথাগুলোই ভাবছিলো তার মাঝেই জাফর সাহেব এলেন।উপমা তার বাবাকে দেখে নড়েচড়ে বসলো।
‘বসো আব্বু।’
জাফর সাহেব মেয়ের সামনে আসলেন কিন্তু বসলেন না।তারও মনটা খারাপ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।কিন্তু নিজেকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক রেখে বলল
‘উপমা আমি তোমাকে ছোট বেলা থেকেই বলেছি মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া এই পড়ালেখা।পড়ালেখা মানূষের মূল্য বাড়ায় সাথে কনফিডেন্সও।যাক এই রেজাল্ট যেমনই হয়েছে সামনে ফাইনাল এক্সাম সেইটা আশা করি মন মতো হবে’
জাফর সাহেবের কথায় উপমা মাথা নিচু করে মাথা নাড়লো।মুখে বলল
‘জ্বী আব্বু।’
‘সেহরিশের মা কল করেছিলো।উনার সাথে গিয়ে দেখা করে এসো সময় বের করে।’
জাফর সাহেব চলে গেলো।উপমার কেমন যেনো পর পর লাগে এখন তার বাবা মার বাড়ি।কিন্তু সেহরিশের এই আচরন গুলো ঠিক মেনে নিতে পারছে না।তার উপর আরিয়াকে কতশত বার কল করলো কলই তুলছেনা।মনে শান্তি পাচ্ছে না বড় বোনের সাথে এই সম্পর্কের ফাটল।
_
বিকেল হতেই জুইয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হলো উপমা। ভেবে নিলো সেইখান থেকে রাবেয়ার সাথেও দেখা করে আসবে।
কিছুদিনের সব ঝামেলা আন্দোলন সকল কিছুর শেষে এখন পুরো এলাকা শান্ত। এইটাতো ঝড় আসার পূর্বের শান্তি। শান্ত নির্বাচনের ফল বের হওয়ার পর আবার শুরু হবে নির্দ্বিধায় বলা যায়।
জুইয়ের বাড়ির সামনে এসে পরেছে উপমা।রিকশা থেকে নেমে বাড়ির দিকে হাটতেই ইউসুফ কে দেখতে পেলো।রাস্তার দিকে হাটা ধরেছে। উপমাকে একনজর দেখে আবার চোখ নিচু করে ফেলে।ইউসুফের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাটার মাঝেই একটা ছেলে গভীরভাবে ধাক্কা দিয়ে গেলো উপমাকে।সাথেই সাথে পড়তে নিতে নিজেকে সামলে নিলো উপমা।রেগে গিয়ে ছেলেটার উদ্দেশ্য বলল
‘এই অসভ্য ছেলে, চোখে কি দেখতে পান না নাকি।’
উপমার চেচিয়ে বলার আওয়াজে ইউসুফও ফিরে তাকায়।সাথে যেই ছেলেটা ধাক্কা দিয়েছিলো সেই ছেলেটাও। ছেলেটাকে দেখে সাথে সাথেই চিনে ফেললো উপমা।সেহরিশ যাকে মেরে মেরে প্রায় আহত করে ফেলেছিলো।
ছেলেটা কিছু বলল না বাকা হেসে অদ্ভুত চোখে তাকালো।উপমা আবারও দাতে দাত চেপে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ইউসুফ এসে ছেলেটার কাধে হাত রেখে সাথে নিয়ে যায়।এই ইতর ছেলের সাথে ইউসুফ গেলো দেখে রাগ লাগলো।সব কিছুকে সাইডে ফেলে জুইয়ের বাড়িতে গেলাম।
জুইয়ের রুমে যেতেই তার থমথমে মুখ নজরে এলো।উপমা হাফ ছেড়ে ব্যাগ বিছানায় ফেলে গা এলিয়ে দিলো।কিছু বলল না।জুই উপমার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গিয়ে বলল
‘তুই এলি ভালো হয়েছে।আমি যেতাম তোদের বাড়ি। তো কি খবর তোর। কন্টেক্ট তো করিসই না।’
উপমা বিছানা থেকে উঠে বসে ঠোঁট উলটে বলল
‘আছে আলহামদুলিল্লাহ। তোর বল। নিচে দেখলাম ওকে।’
‘কাকে?’
জিজ্ঞেস করে মুহূর্তেই মুখটাকে আমার সিরিয়াস রূপে নিয়ে বলল
‘ওহ আচ্ছা ওই শয়তান টার কথা বলছিস।সেহরিশ ভাইয়ার সাথে যা করেছে তার পরেও তুই ভাবছিস আমি রিলেশনশিপ চালিয়ে যাবো। ইম্পসিবল। ‘
বলে ধাপ করে বিছানায় বসে পড়লো।উপমার নিজের মন খারাপ কখনো কাউকে দেখায় না অথবা বলা যায় দেখাতে পারে না।এই কথার রেশ ধরে না রেখে বলল
‘আমার রেজাল্টে আব্বু অনেক নিরাশ হয়েছে।সামনে আরও সিরিয়াসনেস নিয়ে পরতে হবে।’
উপমা আর জুইয়ের কথার মাঝেই এলো ইশফা আর মারজিয়া।লাবিবা আসে নি।এখন থেকেই ওর প্রিপারেশন শুরু।সবথেকে বেশি সিরিয়াস পড়ায় এই লাবিবা।
ইশফা এসে প্রথম উপমাকে দেখে বলল
‘সেহরিশ ভাইয়ার কি খবর।’
উপমা সেহরিশের নাম শুনে নিরাশ হলো। কিছুটা রাগ নিয়ে ঠোট বাকিয়ে বলল
‘আমি কি করে বলবো উনার কি খবর।আমার খবর রাখছে না। তো আমি কেনো উনার খবর রাখবো?’
‘শুনলাম আজ অনেক মারামারি হয়েছে বিপরীত দলের সাথে সেহরিশ ভাইদের।’
মারজিয়ার কথা শুনে উপমার বুক ধুক করে উঠলো।ভয় লাগতে শুরু করলো এই ভেবে সেহরিশের কিছু হলো কি না।উপমা ঢোক গিলে ধীর কন্ঠেই বলল
‘কিন্তু আমি তো আশেপাশে সব শান্তই দেখলাম।’
‘হুম শান্তই তো থাকবে আশেপাশে। গেঞ্জাম তো লেগেছিলো ওই দূর পল্টনে।’
মারজিয়ের আরজদফা কথা শুনে উপমার গলা শুকিয়ে গেলো।চিন্তায় কথা আটকে গেলো।পাশের টেবিল থেকে গ্লাসে পানি নিয়ে ঢকঢক করে পান করে।উপমাকে জোরে জোরে শ্বাস নিতে দেখে ইশফা পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
‘তুই টেনশন নিস না সেহরিশ ভাইয়া ঠিকই আছে নিশ্চয়ই। উনার সাথে কেউ পেরে উঠবে নাকি।’
বলে সামান্য হাসলো। ইশফার সামান্য শান্তনায় উপমা একটুও শান্ত হলো না তবুও নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো।
‘আমার দুঃখের কথা কিভাবে বলবো তোদের।আমার রেজাল্ট দেখে আমার মা তো পারে না জুতো খুলে মারে।’
হতাশ হয়ে বলল ইশফা।ইশফার কথায় জুই ঠোঁট উল্টিয়ে কিছুক্ষন বসে থেকে বলল
‘আর আমার কথা শুনলে কি বলবি।আমার রেজাল্ট দেখে তো আমার মা পাত্র দেখা শুরু করেছে।আমার কি করনীয় তোরা একটু বুদ্ধি দে।’
একের পর এক কথা চলল ইশফা জুই আর মারজিয়ার মধ্যে।কিন্তু উপমা আর কিছু বলল না মনমরা হয়ে বসে রইলো।
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই)