সাঁঝের প্রেম পর্ব-১১+১২

0
38

#সাঁঝের_প্রেম
#Part_11-12
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

সায়েম বাসায় এসেই ছবিগুলো ঘাটছে চেঞ্জ না করেই। মাহবুব চেঞ্জ করে এসে টিভির রিমোট হাতে নিয়ে বলে,

-চেঞ্জ করতে যা।
-ভাইয়া দেখো তোমাদের এই পিকটা দারুণ হয়েছে। বাঁধাই করে রাখতে পারো৷
-দেখি।

মাহবুব ক্যামেরা নিয়ে সব ছবিগুলো দেখছে আর তখন নিশির ডাক পরলো।

-সায়েম?
-জ্বি ভাবি
-তোমার ভাইয়া কোথায়?
-আমার সামনেই।
-আসতে বলো তো।
-পারব না আমি আসতে। (মাহবুব)
-তাহলে সায়েম তুমি আসো একটু।

সায়েম উঠতে যাবে তখন সায়েমের হাত ধরে সায়েমকে বসায় মাহবুব কারণ ও জানে নিশি ওকে কেনো ডাকছে। শাড়ির সেফটিপিন খুলতে পারেনা নিশি।

-বস তুই। আমিই যাচ্ছি। (মাহবুব)
-পানি ঘোলা করে না খেয়ে পরিষ্কার থাকতেই তো খেতে পারো। (ক্যামেরা হাতে নিয়ে সায়েম)
-ফাজিল!

সায়েমকে বকে মাহবুব ঘরে গেলো। গিয়ে দেখে নিশি সব উলটা পালটা করে রেখেছে। চুলের মধ্যে ক্লিপ ঝুলছে, শাড়ির কোনো আগামাথা নেই।

-কি সমস্যা তোমার? শাড়ির সেফটিপিন খুলতে পারো না তো শাড়ি পর কেনো? (মাহবুব)
-চুলের ক্লিপগুলো একটু খুলে দাও তো আগে এরপর শাড়ির সেফটিপিন গুলো খুলে দাও। অসহ্য লাগছে আমার এখন।
-পারবনা। নিজেরটা নিজে খুলে নাও। (মাহবুব)
-তুমি তো পারবাই সাথে তোমার ঘাড় ও পারবে। জলদি খুলো। (চিরুনি হাতে নিয়ে নিশি)
-তুমি কি আমায় মারবা নাকি?
-মারতেও পারি সো হারি আপ। খুলো সব।
-এই কি খুলব? (চোখ বড় বড় করে মাহবুব)
-গাধা আমার ক্লিপগুলো খুলো।

নিশি ড্রেসিংটেবিল এর সামনে বসেছে আর মাহবুব একটা একটা করে চুলের ক্লিপ খুলছে। চুলের ক্লিপ খোলা হয়ে গেলে শাড়ির পিন খুলেদিলো। এরপর মাহবুব বের হয়ে যাওয়ার পর নিশি চেঞ্জ করে ডিনার রেডি করলো। নিশি রান্না করছে আর মাহবুব বাইরে সায়েমের সাথে ব্যাডমিন্টন খেলছিলো আর ক্যামেলিয়া জানালা থেকে দেখছিলো। সায়েম খেলবে বলে ব্যাডমিন্টন আর ফেদার নিয়ে এসেছিলো ঢাকা থেকে। নিশি রান্না করে বাইরে আসে ওদের ডাক দিতে। চারদিকে জোনাকিপোকার সবুজ আলো আর ঝিঁঝি পোকার ডাক। নিশি একটু দূর থেকে বলে,

-ওই খেতে আসো। এই ঠান্ডার মধ্যে বাইরে খেলছে।
-তো কি করব? ব্যাডমিন্টন খেললে শরীর এমনেই গরম হয়ে যায় ভাবি। তুমি খেলবা? (সায়েম)
-জ্বি না আমার এত শরীর গরম করার ইচ্ছা নাই। তারাতারি খেতে আসো দুইজনেই। আমি ওয়েট করছি।
-আসছি। (সায়েম)

নিশি বাসায় চলে আসে আর আঙিনায় থাকা গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছে। মাহবুব আর সায়েম তখন বাসায় ঢুকলো। নিশি খাবার সার্ভ করলো আর ওরা খেতে বসলো।

-ভাইয়া কালকে তো তুই অফিসে যাবি না?
-হ্যা।
-কালকে তাইলে আমার একাই ঘুরতে হবে।
-দূরে কোথাও যাবি না আর জঙ্গলে তো ভুলেও না।
-হ্যা জানি।

তিনজন ডিনার শেষ করে টিভি দেখতে বসলো। নিশি অবশ্য অন্য কাজ ও করছিলো। সায়েম একটা সোফা দখল করে শুয়ে হরর ফিল্ম দেখছে আর মাহবুব বসে আছে। সাড়ে দশটা বাজার পর মাহবুব হাই তুলছে।

-এই তুই মুভি শেষ করে ঘুমিয়ে যাবি। রাত জাগবি না। আর শোন জানালা বন্ধ করে দে সব। আমি ঘুমাতে যাই।
-আচ্ছা যাও। গুড নাইট।

মাহবুব গিয়ে শুয়ে পরে আর নিশি ওর কাজ শেষ করে আধা ঘণ্টা পর ঘুমাতে যায়। যাওয়ার আগে সায়েমকে চানাচুরের প্যাকেট আর কফি বানিয়ে দিয়ে যায়।

-আমি তো বলিনি এসব দিতে। তুমি বুঝলা কিভাবে যে আমার কফি খেতে ইচ্ছে করছিলো? (খুশি হয়ে সায়েম)
-ব্যাপার নাহ এসব বোঝা। তোমার ভাইয়া বলেছিলো তুমি চানাচুর বেশি খাও। আচ্ছা বেশি রাত জেগো না। গুড নাইট।
-গুড নাইট সুইট ভাবি।
-তোমার ভাইয়া শুনলে তোমায় বাসা থেকে বের করে দিবে। (হেসে নিশি)
-পারবেনা। (সায়েম ও হাসছে)
-আচ্ছা গুড নাইট।

নিশি ঘরে এসে দেখে মাহবুবের ফোনে কল এসেছে কিন্তু ফোনটা সাইলেন্ট আর মাহবুব পাশ ফিরে ঘুমাচ্ছে। নিশি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে তৃশা নামে কেউ। নিশি অনেক অবাক হয়ে যায়৷ ফোনটা রিসিভ করে নিশি।

-হ্যালো। (নিশি)
-মাহবুব কোথায়? (তৃশা)
-ও ঘুমাচ্ছে কিন্তু আপনি কে?
-আমি তৃশা মাহবুবের বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু আপনি কে?
-বেস্ট ফ্রেন্ড ও আপনার আর এইটা জানেন না আমি কে? (নিশির অনেক কষ্ট লাগছে)
-না জানিনা। কে আপনি?
-আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড কেই জিজ্ঞেস করবেন কে আমি। আর এত রাতে ফোন দিয়েছিলেন কেনো?
-দরকার ছিল তাই৷ আচ্ছা রাখছি। কাল মাহবুবের সাথেই কথা বলব।

তৃশা ফোন কেটে দিলো আর নিশি ফোনটা খাটের উপর ছুঁড়ে মারলো। তখন ওর মনে হলো মাহবুবের ফোনটা দেখা উচিৎ। নিশি মাহবুবের ফোন ধরে কিন্তু ফোন লক করা। ফোনে পাসওয়ার্ড লক। নিশি মাহবুবের নামে ট্রাই করলো, তৃশার নামে ট্রাই করলো কিন্তু হলো না। তখন ওর মনে পরে মাহবুব নিশির নাম দিয়েই ফোন লক করে রাখতো। নিশি তখন ওর নামে ট্রাই করার পর ফোনের লক খুলল। নিশি আগে কল লিস্টে যায় কিন্তু কিছুই নেই। ফোন মেসেজে গিয়েও কিছু পায়নি। এরপর গ্যালারিতে যাওয়ার পর নিশির চোখ বড় বড় হয়ে যায়। মাহবুবকে জড়িয়ে ধরে একটা মেয়ের ছবি! মাহবুব ও মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরেছিলো একহাতে। শুধুমাত্র ওই মেয়ের সাথেই মাহবুবের ছবি। বেশ কয়েকবার ওরা ডেটেও গিয়েছিলো। নিশি মাহবুবের হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপি সব চেক করলো। হোয়াটসঅ্যাপ এর প্রোফাইলে ওই মেয়েটার ছবি দেওয়া আর স্কাইপিতে ওই মেয়েটার সাথে ভিডিও চ্যাট। নিশি আর কিছু দেখলো না। নিশি ফোনটা রেখে দিলো আর ও খাটে বসলো। মাহবুব তখন উঠে যায়। নিশিকে ঘুমানোর জায়গা দেয়। কিন্তু নিশিকে শুতে না দেখে ও পিছু ফিরে তাঁকায় আর দেখে নিশি নিঃশব্দে কাঁদছে।

-কি হয়েছে? (উঠে বসে মাহবুব)
-তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ফোন দিয়েছিলো। (চোখ মুছে নিশি)
-হ্যা দিতেই পারে। তুমি কি রিসিভ করেছো?
-হ্যা করেছিলাম রিসিভ।
-আমার পার্মিশন ছাড়া?
-সেইজন্য স্যরি। পার্মিশন নেইনি বলেই তো আজ এত কিছু দেখলাম নিজের চোখে।
-কি দেখছো?
-তোমার গার্লফ্রেন্ড কে। সুন্দর মানিয়েছে তো তোমাদের। ওই তাহলে আছে আমার কাজ করার জন্য! জানতাম না তো তাই কাল এই কথাটা জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আমার কাজ করার জন্য কেউ আছে কি না! আমায় বিয়ে করে দায় না সাড়লেও হতো। (নিশি কেঁদে কেঁদে কথা বলছে) এই জন্য আমায় ছোঁয়ার দরকার হয়না তাইনা? বাইরে তো ও আছেই।
-নিশি মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ। আমার ফোন ধরেছো তুমি?
-হ্যা ধরেছি।
-কি এমন দেখেছো যে এসব বলছো? (মাহবুব এখন সিরিয়াস)
-তোমার ফোন তুমি জানো না? আচ্ছা দাঁড়াও আমি দেখাচ্ছি। (চোখ মুছে নিশি)

সব দেখার পর মাহবুব বলল,

-তৃশা আরাফের বউ হয় আর ও তোমার সাথে মজা করেছে হয়ত। তৃশা জানে আমি সাড়ে দশটার পর ঘুমিয়ে যাই তাই তোমার সাথে মজা করেছে। আর এই মেয়েটা আরাফের ছোট শালিকা। কোনো এক পার্টিতে দেখা হয়েছিলো ওর সাথে। ভাইয়া বলেই ডাকে আমাকে। আর স্কাইপিতেই মাঝে মাঝে কথা হয় ওর সাথে। আর আমাকে জড়িয়ে ধরে ও একদিন পিক তুলতে চেয়েছিলো। ছোট বলে অনুমতি দিয়েছিলাম। আর হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টল করে ও অপেন করে দেয় তাই ও নিজের পিক ই দিয়েছে। আমিও আর চেঞ্জ করিনি। ক্ল্যারিফিকেশন পেয়েছো তুমি?
-এতবার ডেটে যাওয়া এত ক্লোজনেস এইসব কোনো ভাইবোনের হয়? তুমি কি আমায় বোকা পেয়েছো?
-বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার আর ডেটে যাইনাই। আরাফ আর তৃশা আমায় ওদের সাথে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলো আনফরচুনেটলি সেখানে ইকরা (মেয়েটির নাম) ও ছিল।
-মিথ্যেবাদী কোথাকার! কেনো বিয়ে করেছিলি আমায়? কেনো এই এতগুলো বছর আমায় কষ্ট দিয়েছিলি? (নিশি ডিরেক্ট মাহবুবের টি শার্টের নেক ধরে)
-দেখো নিশি আমি মিথ্যে বলতে শিখিনাই আর এসব বিষয়ে তো না ই। ইকরা তৃশার ছোট বোন। ইকরা মাত্র এলিভেনে পড়ে। আমার থেকে কতটা ছোট ও! এসব চিন্তা মাথায় আসে কেন তোমার?
-চুপ কোনো কথা বলবিনা তুই!

নিশি খাট থেকে উঠে যেতে নেয় তখন মাহবুব নিশির হাত ধরে আর ফোন হাতে নিয়ে আরাফকে কল করে।

-কিরে এত রাতে? (ঘুম ঘুম চোখে আরাফ)
-তোর বউ কই রে? ও তো আমার সংসারে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। (দাঁড়িয়ে মাহবুব)
-কেন তৃশা আবার কি করেছে?

এরপর মাহবুব নিশির সামনেই আরাফকে সব বলছে। নিশি জানত না আরাফের বউয়ের নাম তৃশা। আরাফ সব শুনে হাসছে আর নিশি কাঁদছে।

-দেখ ভাই হাসিস না। তোর শালিকাকে বলিস আমাকে যেন ভাইয়া না ডাকে।
-নিশিকে ফোনটা দে।
-কথা বলবেনা। লাউড দিচ্ছি যা বলার বল।

মাহবুব নিশির একহাত ধরে রেখেছে আর আরাফ নিশিকে বলছে,

-এই যে ভাবি শুনেন আমার বন্ধু ক্যারেক্টারলেস নয়। ইকরা আমার শালিকা আর মাহবুবকে ভাইয়া বলেই জানে। আর আমার বউ তোমার সাথে মজা করেছে। এইভাবে কান্নাকাটির কিছু নাই। একমাত্র তোমাকেই ভালবাসে ও। এইসব নিয়ে মাহবুবকে ডাউট করনা অন্তত।
-এখন ফোন রাখ। আর তৃশাকে বলিস ওর কান যদি আমি না ছিঁড়ছি! বউকে রেখে আমি ওকে বেস্ট ফ্রেন্ড বানাতে যাব? (আরাফকে ঝারি দিয়ে মাহবুব)
-তৃশাকে ঝারি দে! আমায় দিচ্ছিস কেনো? (আরাফ হাসছে)
-কালকে দিব। এখন রাখছি বাই।
-অল দ্যা বেস্ট দোস্ত! বউয়ের রাগ ভাঙ্গা এখন।

মাহবুব ফোন বিছানায় ফেলে দেয় আর নিশি সব শোনার পরেও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। মাহবুব নিশিকে ওর দিকে ঘুরায়। নিশির চোখ মুছতে মুছতে বলে,

-দেখো নিশি তুমি আমার প্রথম ভালবাসা আর তুমিই শেষ। তোমার জায়গায় অন্য কেউ কখনো ঢুকতে পারবেনা। শুধু শুধু কেঁদো না। (নিশিকে জড়িয়ে ধরে মাহবুব)
-স্যরি তুই তুকারি করেছি তোমার সাথে।
-ইটস ওকে। (নিশিকে ছেড়ে দিয়ে মাহবুব)
-ছেড়ো না প্লিজ। (মাহবুবকে জোর করে জড়িয়ে ধরে নিশি)

মাহবুব আর কিছু বলেনি কারণ কয়দিন নিজের ভালবাসাকে সরিয়ে রাখবে? এমন তো না যে এরেঞ্জ মেরেজ যার জন্য নিজেকে তৈরি করতে সময় লাগবে! মাহবুব ও নিশিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু দিলো। একটা সময় মাহবুব ও কেঁদে দিলো নিজের ভুলের জন্য।

চলবে

#সাঁঝের_প্রেম
#Part_12
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

মাহবুব নিশিকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো। নিশি বলল,

-কোনো ছেলে আমাকে কিছু বললে তো তোমার সহ্য হয়না। আর তোমার ফোনে এসব ছবি দেখার পর আমার নিজের কিভাবে সহ্য হতো?
-হুম সেইটাই তো কিভাবে সহ্য হতো! ডিলিট করে দিচ্ছি সব। এক মিনিট!

মাহবুব ফোনটা হাতে নিয়ে সব ছবি ডিলিট করে হোয়াটসঅ্যাপ আনইন্সটল করে দিলো নিশির সামনেই।

-এখন থেকে আমায় ভালবাসবে তো? (নিশি)
-না।
-না মানে? (মাহবুবকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিশি)
-না মানে না।
-মাফ করবানা আমায়? (নিশি)
-করেছি তো। (নিশিকে ধুম করেই কোলে নিয়ে মাহবুব)
-কোলে নিয়েছো কেনো?
-মন চেয়েছে তাই।
-কতদিন পর তোমার কোলে উঠলাম! (মাহবুবের গলা জড়িয়ে ধরে নিশি)
-অবশ্য তোমার জায়গায় ইকরাকে দুইবার কোলে নিতে হয়েছে। (নিশিকে রাগানোর জন্য মাহবুব)
-আবার তুমি ইকরা ইকরা করছো?
-আচ্ছা করছি না। এখন থেকে নিশি নিশি করব ঠিক আছে? (নিশিকে খাটে বসিয়ে দিয়ে)
-নিশি মাথা নিচু করে বসে আছে।

মাহবুব টি শার্ট ঠিক করে বাইরে আসে। এসে দেখে সায়েম টিভি অন করেই ড্রইংরুমে ঘুমিয়ে গেছে। মাহবুব টিভি অফ করে সায়েমকে ঘরে দিয়ে আসলো ধরে ধরে। এরপর বাড়ির আঙিনা থেকে কালো গোলাপ আর একটা লাল গোলাপ ছিঁড়লো। এরপর ঘরের দরজা বন্ধ করে নিশিকে দাঁড় করালো। নিশির চুলের খোপা খুলে গেছে অনেক আগেই। লম্বা চুলগুলো উড়ে এসে মাহবুবের মুখে পড়ছে। মাহবুব নিশির চুল সরিয়ে ট্রাউজার টান দিয়ে এক হাঁটু গেড়ে নিশির দুইহাত সামনে বসলো। নিশি চুলগুলো হাত দিয়ে সরালো আর হাসছে।

-দেখো মেয়ে কিভাবে প্রপোজ করতে হয় আমি জানিনা! বিয়ের আগে মটরফুল দিয়ে প্রপোজ করেছিলাম। এখন তো বিয়ে হয়ে গেছে এখনকার প্রপোজ স্টাইলটা একটু ভিন্নই হবে। বিয়ে তো করে ফেলেছি তাই বলতে পারবনা উইল ইউ মেরি মি! বলছি “উইল ইউ বি দা মাদার অফ মাই ডটার?”
-ইফ ইউ ওয়ান্ট টু বি দা ফাদার অফ ইউর ডটার দেন আই হ্যাভ নো প্রবলেম টু বিকাম দা মাদার অফ ইউর ডটার।
-আই এগ্রি।
-আই অলসো। (ফুলটা হাতে নিয়ে নিশি)

নিশি ফুলগুলো খাটের পাশের ফ্লাওয়ার ভাসে রেখে দিলো। নিশি মাহবুবকে বলল,

-ওয়েট তোমার জন্য ও একটা সারপ্রাইজ আছে। ভেবেছিলাম বাসররাতে দিব।
-কি?
-চোখ বন্ধ কর।

মাহবুব চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে আর নিশি ড্রয়ার খুলে একটা বিশাল ডায়েরি বের করলো। মাহবুবের হাতে দিলো ডায়েরিটা। এরপর মাহবুব চোখ খুললো। ডায়েরির কভার পেইজে নিশি আর মাহবুবের ডুয়েট ছবি সুন্দর করে এঁকে বসানো। ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠায় ওদের রিলেশনের প্রথম দিন থেকে বিয়ের আগের দিনের হিসাব লিখা আছে আর ওদের ছবি দিয়ে ভরা পুরো ডায়েরিটা। মাহবুব নিশিকে কখন কি বলেছিলো সব নিশি লিখে রেখেছিলো। মাহবুব ডায়েরিটা উল্টাচ্ছে আর পড়ছে আর নিশি মাহবুবের কাঁধ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

-বেস্ট গিফট অফ মাই লাইফ। থ্যাংক ইউ।
-ওয়েলকাম।

ডায়েরির শেষে নিশির কিছু মনের কথাও লিখা ছিলো কিন্তু ওইসব এখন মাহবুব পড়বেনা। ফাইনালি ও নিশিকে কাছে পেয়েছে। আজকে রাত যতটা বাকি ওতটা জুড়েই নিশি বিচরণ করবে মাহবুবের মনে। মাহবুব ডায়েরিটা ওর ড্রয়ারে রেখে দিলো। এরপর নিশির গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

-পাঁচ বছর আগের কাছে আসা আর আজকের কাছে আসা এক হবে?
-না।
-কেনো?
-তখন ছিলাম আনমেরিড। ভয় কাজ করছিলো পরবর্তী একমাস। এখন আর সেইটা করবেনা।
-বিয়ের শক্তিটা আসলেই বেশি।
-হুম।
-তুমি পাল্টাওনি নিশি। আগের মতই আছো। চেহারায় কালো দাগ দেখেছিলাম বিয়ের আগে কিন্তু এখন কমেছে সেইটা।
-পাল্টে তো তুমি গেছো।
-নাহ। (নিশিকে ঘুরিয়ে ওর ওড়না সরিয়ে দেয় মাহবুব)
-না পাল্টালে আমাকে এতদিন কষ্ট দিতে না, দূরে সরিয়ে রাখতে না আমাকে। (মাহবুবের কাছে এসে)
-সেইম কথা তো আমিও বলতে পারি!
-ছেড়েও তো দাও নি।
-হইছে এখন চুপ! আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু গো এনি আর্গুমেন্ট রাইট নাও।
-হ্যা সত্যিটা বললে তর্ক ই হয়।
-এই মেয়ে এখনো থামছে না!

(থাক আর না বলি🙊)

সকালবেলা,

মাহবুব ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে এসে দেখে নিশি রান্নাঘরে। সায়েম এখনো ঘুমাচ্ছে। নিশির চুলে টাওয়েল প্যাচানো আর নিশি কফি বানাচ্ছিলো। মাহবুব নিশিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,

-শেষ কফি বানানো?
-হ্যা। তুমি কখন আসলা?
-জাস্ট।
-সায়েম এক্ষুনি উঠবে। ছাড়ো।
-সাড়ে ছয়টা বাজে। এত তারাতারি ও উঠেনা।
-তুমি ছাড়বা?
-হ্যা ছাড়লাম। আমার কফি মগটা দাও।
-এই যে। এইটা সায়েমকে দিয়ে আসি।
-যাও।

নিশি সায়েমকে ডেকে তুলে কফি মগ হাতে ধরিয়ে চলে আসে। সায়েম ঘুমে কিছু দেখছেনা। ও কফি খাওয়ার বদলে নিজের পায়ে ঢালছে ঘুম ঘুম চোখে। পায়ে গরম লাগার পর জোরে চিৎকার করে সায়েম দাঁড়িয়ে যায়। পায়ের পশমগুলো সব পুড়ে গেলো। মাহবুব নিশি চিৎকার শুনে দৌড়ে সায়েমের ঘরে যায়। গিয়ে দেখে এই অবস্থা। নিশি সায়েমের পায়ে বরফ ধরে আর মাহবুব হাসছে।

-ভাইয়া তুমি হাসছো? (কাঁদো কাঁদো অবস্থা সায়েমের)
-তো কি করব? একটা মানুষ এতটা হোয়াটলেস কিভাবে হয়? কফি খাওয়ার বদলে পায়ে ঢালে!
-আমি তো ঘুমে টাল ছিলাম তখন আর ভাবি এসে আমার হাতে কফি ধরিয়ে দিয়ে গেলো। খেতে গিয়ে পায়ে ঢেলে দিয়েছি। ও মা কি জ্বলছে! (সায়েম)
-দাঁড়া মলম আনছি।
-ইশ চামড়া উঠে গেছে। (নিশি)
-সব তোমার দোষ ভাবি।
-হ্যা এখন তো সব দোষ নন্দঘোষ। সকাল সকাল কফি তো আমি খাই নাকি?
-আমিই খাই কিন্তু আজকে কি হলো এইটা!
-আচ্ছা সেড়ে যাবে। আমি মলম লাগিয়ে দেই দাঁড়াও।

নিশি সায়েমের পায়ে মলম লাগিয়ে দিয়ে বিছানার চাদর চেঞ্জ করে সায়েমকে বসিয়ে দিয়ে যায়। আবার সায়েমকে কফি করে এনে দেয়। কফি খেয়ে, ফ্রেশ হয়ে সায়েম দেখে সাড়ে সাতটা বাজে। মাহবুব কিছুক্ষণের মধ্যেই বেরিয়ে যাবে। মাহবুব রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে আসে আর নিশি মাহবুবকে ব্রেকফাস্ট সার্ভ করছে। মাহবুব পাশেই বসে আছে।

-এখন কি অবস্থা?
-এখন ভালো। ভাবি আমার খাবারটাও দাও। আমিও বের হব। (সায়েম)
-এই অবস্থায় তুমি কোথায় যাবা? (নিশি)
-ঘুরতে।
-চুপচাপ বাসায় বসে থাক। আজকে বের হওয়া লাগবেনা। (ধমক দিয়ে মাহবুব)
-আচ্ছা গেলাম না।

মাহবুব ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে গেলো। মাহবুব বের হওয়ার আগে নিশি ঘড়ি পরিয়ে দিলো আর শার্টের কলার ঠিক করে দিলো।

-আচ্ছা আসছি আমি।
-যাও। আমি পেপারস গুলো এনে দিচ্ছি। তুমি জুতা পরো।
-আচ্ছা।

মাহবুব বাইরে জুতা পরছিলো তখন নিশি পেপারস গুলো দিয়ে মাহবুবকে বাই দেয়। মাহবুব যাওয়ার সময় নিশির হাতে কিস করে যায়।

-কি ভালবাসা রে! (নিশিকে পিঞ্চ করে সায়েম)
-পাকামো কম কর। খাওয়া হইছে? (সায়েমের সামনে এসে নিশি)
-মোস্ট অফ। শুনো ভাবি আমি এখন বের হব কিন্তু তুমি ভাইয়াকে বলবানা।
-না তোমার ভাইয়া নিষেধ করেছে সো তুমি বের হবেনা। বাসায় বসে থাকো আজকে।
-বাসায় বসে থেকে আমি কি করব বলো?
-কম্পিউটার আছে, ল্যাপটপ আছে, ফোন আছে, ইন্টারনেট আছে। এখন যা খুশি কর। বাট বের হবেনা। আর একান্তই এইসবে রাজি না হলে আমায় সবজি কেটে দাও বসে বসে।
-এই কথাও শুনা লাগলো? ইয়া আল্লাহ তুইল্লা নাও উপরে, আমি থাকতে চাইনা এই মাটিতে।
-এই ঢং কম কর ভাই। চপিং বোর্ড দিচ্ছি, চাকু দিচ্ছি আর সবজি দিচ্ছি এখানে বসে বসে কাটো। আমি তোমার কফি ফালানো চাদর ধুয়ে দিয়ে আসছি।
-আচ্ছা দাও দেখি কাটি।

নিশি সায়েমকে সবজি দিয়ে গেলো। সায়েম গাজর কাটছে আর নিজেই খাচ্ছে। গাজর খাওয়া শেষ হলে সায়েম ফোন হাতে নেয় আর টেবিলের উপরে রেখে গুগলে লিখে হাউ টু কাট আলু। সায়েম সার্চ দেওয়ার পর বলছে,

-ভাগ্যিস গুগল হাহা রিয়েক্ট দেয়নি।

কোনোমতে সায়েম সবজি কাটছে যদিও নিশি দেখিয়ে দিয়ে গেছে কিভাবে কি কাটতে হয়। নিশি আসার পর দেখে সায়েম সবজি কাটছে গুগলে সার্চ করে করে।

-সায়েম!
-কি ভাবি? (টমেটো কাটতে কাটতে সায়েম)
-আইডিয়াটা জোস!
-আসলেই জোস কিন্তু ভাবি তুমি হাসছো কেনো?
-না মানে তোমার আইডিয়াটা জোস। তুমি কর আমি একটা ভিডিও করি। তোমার ভাইয়া আসলে দেখাতে হবে তো।
-এই ভাবি চাকু দিয়া টোকা দিব কিন্তু! ভাইয়া আমায় আবারো হোয়াটলেস বলবে দেখো তুমি! সোনা ভাবি এইসব করনা।
-চুপচাপ কাটো বাকিটা আমি দেখছি।

নিশি বেডরুম থেকে ওর ফোন এনে সায়েমের ফোন ভিডিও করলো এরপর সায়েমের কাটাকুটি ভিডিও করলো। সায়েম তো মাথা ই তুলেনা। মাথা নিচু করে কাটছে। সায়েমের কাটাকুটি শেষ হওয়ার পর নিশি রান্না বসায় আর সায়েম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গাজর খাচ্ছে আর রান্না দেখছে।

-ভাবি কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
-হ্যা বলো।
-পাঁচবছর আগে তোমরা চিটাগং হিল ট্রাকে এসেছিলে।বোতল পরে তোমার পা কাটলো। এরপর কি হয়েছিলো তোমাদের?
-তুমি কিভাবে জানো?
-ভাইয়ার মুখ থেকে এইটুকুই শুনেছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত শোনার ইচ্ছা প্রবল। প্লিজ ভাবি বলো।
-ইচ্ছে যে করেনা এখন এসব বলতে।
-একমাত্র দেবরকে বলতেই হবে। বলো।
-রান্নাটা শেষ করি আগে?
-না। রান্না করতে করতেই বলো।
-আচ্ছা বলছি। ওইদিন পাহাড় থেকে তোমার ভাইয়া আমায় কোলে করে হোটেলে নিয়ে আসে। সেইদিন আমি শাড়ি পরেছিলাম তোমার ভাইয়ার অনুরোধে। যেহেতু পা কেটে গেছে তাই কোনোমতে চেঞ্জ করার পর তোমার ভাইয়া পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেয় এরপর আমাকে বেশ কিছুক্ষণ বকাবকি করে। এরপর রাতে আমাকে খাইয়ে তোমার ভাইয়া আমায় ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজে সোফার উপর ঘুমায়। সকালে উঠে দেখি পায়ের ব্যাথাটা কমে গিয়েছে। তোমার ভাইয়াও খুশি হয় এজন্য। সেইদিন আর আমরা কোথাও যাইনি। রাতে আমার খুব ইচ্ছে করছিলো শাড়ি পরব। তোমার ভাইয়াকে বললাম,

-শুনেন আমি শাড়ি পরব।
-এখন? কেনো?
-জানিনা ভীষন ইচ্ছে করছে।
-তো পর। আমি বাইরে থেকে ঘুরে আসছি।
-আচ্ছা।

এরপর তোমার ভাইয়া বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি শাড়িটা পরলাম। সময় নিয়ে পরছিলাম। কিন্তু ওইদিন যে কি হলো আমি শাড়িটা কিছুতেই আটকে রাখতে পারছিলাম না তাই যথেষ্ট পরিমাণে সেফটিপিন লাগিয়েছিলাম। অবশেষে শাড়িটা পরেছি আর একটু সেজেছি। তখনি তোমার ভাইয়া হোটেলে ঢুকে হাতে একটা ফুলের মালা নিয়ে।

চলবে