সাঁঝের প্রেম পর্ব-১৫+১৬

0
30

#সাঁঝের_প্রেম
#Part_15+16
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

মাহবুব নিশিকে ঘুম থেকে তুলে কোলে নেয়। নিশি টের ও পায়নি। মাহবুব নিশিকে কোলে নিয়ে বলছে,

-কেমন ঘুম ঘুমায় চিন্তা করা যায়? সেই কখন থেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু ম্যাডামের ঘুম ভাঙার কোনো বালাই নেই।

মাহবুব এইবার নিশির কানের কাছে মুখ নিয়ে নিশিকে ডাকে। নিশি হালকা নড়ে উঠে। মাহবুব আবার নিশিকে ডেকে তুলে। ঘুম থেকে উঠার পর নিশি মাহবুবের কোলে থাকতে দেখে অবাক হলো তার চেয়েও বেশি অবাক হলো পুরো ঘর অন্ধকার আর মোমবাতি জ্বলছে শুধু। নিশি মাহবুবের কোল থেকে নামে আর মাহবুব নিশির জামা ঠিক করে দেয়। নিশি চুলে হাতখোপা করতে করতে মাহবুবকে জিজ্ঞেস করে,

-এসব কি? কখন করলে এসব? (মাহবুবের মুখের দিকে তাঁকিয়ে নিশি)
-এইভাবে ঘুমালে দেখবা কি করে? (হাত মুছে মাহবুব)
-কিন্তু এই সারপ্রাইজ কেনো হঠাৎ? (হাসি দিয়ে নিশি)
-আমার নিশি সারপ্রাইজ পেতে ভালবাসে তাই। চুটিয়ে প্রেম করব আজকে দুজন। (নিশিকে মোম বাতি দিয়ে শেইপ করা হার্টের ভেতর দাঁড় করিয়ে) তুমি আমার ঠিক এইখানে আছো। (ডান হাত দিয়ে নিজের বুকে আঘাত করে মাহবুব) কেউ আমার এতটা কাছে আসতে পারেনি কখনো কিন্তু তুমি পৌঁছে গেছো৷ ভালবাসি তোমায় পাগলের মতো, যতটা ভালবাসলে তোমার স্মৃতি নিয়ে মরা যায় ঠিক ততটাই ভালবাসি। এখন তুমি আগুনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নেই, দাঁড়িয়ে আছো আমার বুকে। এতদিনকার হাহাকার, এতদিনকার তীব্র যন্ত্রণা সব আমি নিভিয়ে ফেলতে চাই। রঙিন করতে চাই আমার সাদাকালো দুনিয়াটাকে। সেই রঙ তুলি কি তুমি ছোঁয়াবে নিশি? আঁকবে তোমার বুকের ক্যানভাসে আমার ছবি? (মাহবুব কথা বলতে বলতে চশমা খুলে বসে আছে হাঁটু গেড়ে)

নিশি মাহবুবের কথাগুলো শুনছে হাত ভাঁজ করে। মাহবুব বসে পরলে নিশি মাহবুবের কাছে যায়। মাহবুবের বরাবর নিশিও হাঁটু গেড়ে বসে। মাহবুবের ডানহাত নিশি নিজের দুইহাত দিয়ে মুঠোবন্দি করে নিজের কপালে ছোয়ায়।

-এঁকেছি তো পাঁচ বছর আগেই। মোছার হলে অনেক আগেই মুছে দিতাম। কই মুছতে তো পারিনি। আমি তো আমার মিস্টার পার্ফেক্ট কে হারাতে চাইনি কোনোদিন। কথা দিচ্ছি যত বাজে পরিস্থিতিই আসুক না কেনো আর কোনোদিন তোমার হাত ছাড়বো না, কোনোদিন তোমায় ছেড়ে যাব না। (মাহবুবকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে নিশি)
-আই লাভ ইউ সো মাচ, আই রিয়েলি লাভ ইউ নিশি, রিয়েলি লাভ ইউ! (নিশির মাথায় এলোপাতাড়ি চুমু খেয়ে মাহবুব)
-আই লাভ ইউ ঠু মিস্টার পার্ফেক্ট!
-কোনোদিন আমায় ছেড়ে যাবেনা তো আর?
-কোনোদিন না। একদম না। (নিশি কেঁদে দিচ্ছে)
-একটা রিকুয়েষ্ট আছে।
-কিসের?
-আমার ঘরে মশাড়ি টানানো যাবে না। আমি মশাড়ি ফেলে দিয়েছি।
-হাহাহা আমি কি মশার কামড় খাব?
-না। যত রকমের এরোসল আছে মশা মারার সব নিয়ে আসব বাট মশাড়ি না।
-আচ্ছা আচ্ছা। (নিশি হাসছে)

নিশি হাসছে আর মাহবুব পেছনে গিয়ে নিশির ঘাড়ে চকলেট ফেলে দেয়। চকলেট মাহবুবের খুব পছন্দের। ঘর থেকে চাল শেষ হতে পারে কিন্তু চকলেট না। নিশি চকলেট টা সরাতে গেলো তখন মাহবুব নিশির হাত ধরে। নিশির হাত ধরে পেছন থেকেই মাহবুব নিশির ঘাড় থেকে চকলেট টা খায়। নিশি মাহবুবের হাত খামচে ধরে। মাহবুব নিশিকে ঘুরিয়ে আলমারির সাথে মিশিয়ে দাঁড় করায়। নিশি মাহবুবের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। মাহবুব আস্তে আস্তে নিশির পায়ের সামনে বসে। নিশির পা মাহবুব নিজের উরুর উপর রাখে। নিশির প্লাজো উপরে তুলে মাহবুব পকেট থেকে গোল্ডেন একটা পায়েল বের করলো। নিশি পায়েল পরতে ভালবাসে কিন্তু পায়েলের টুংটাং আওয়াজ পছন্দ করেনা। তাই মাহবুব আওয়াজ ছাড়াই পায়েলটা কিনে এনেছে। নিশির ফর্সা পায়ে পায়েলটা ম্যাচ করেছে। এরপর মাহবুব নিশির প্লাজো নামিয়ে দেয় আর নিজে উঠে যায়। নিশির কান বরাবর নিজের হাত রেখে মাহবুব নিশিকে বলে,

-সেই বিশ বছরের নিশিই আছো তুমি যাকে আমি ভালবেসেছিলাম। যেই চুল, চোখ, আর ঠোঁট আমাকে পাগল করেছিলো সেসব সেই আগের মতই আছে। তোমার চুল দিয়ে আমায় বাঁধতে পারবেনা নিশি?
-বলো যে ছুটাতে পারব কি না? (মাহবুবের বুকে হাত দিয়ে নিশি)

এই সময় সায়েম মাহবুবকে কল করে। মাহবুব দূর থেকে ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে দেখে সায়েম। মাহবুব ফোন রিসিভ করে।

-এত রাতে জ্বালাচ্ছিস কেনো? (মাহবুব)
-জানি আমি তুই রোমান্স করছিস নয়ত এত তারাতারি ফোন ধরতি না। (সায়েম হাসছে)
-জানস যখন তাহলে রং টাইমে ফোন কেন দিয়েছিস আবাল? (মাহবুব এইবার বিরক্ত)
-ভাবিকে ফোনটা দাও তো।
-কেন? ভাবিকে দেওয়া যাবেনা। আমাকে বল।
-ভাবিকে জিজ্ঞেস কর কফি কই?
-এখন কেমনটা লাগে! ওই হারামজাদা এইজন্য তুই কল দিয়েছিস? কিচেনে আছে জানিস না? (মাহবুব)
-ও ভাইয়া রিলাক্স। আমি খুঁজছি কিন্তু পাইনি।
-কি লাগবে? (নিশি)
-কফি খুঁজে পাচ্ছে না।
-আচ্ছা আমি বানিয়ে দিয়ে আসছি। (নিশি হাসছে)
-না একদম। জাস্ট ওরে কফির বয়াম দিয়ে আসো। ও নিজে বানাবে। (ফোন কেটে মাহবুব)
-আচ্ছা আসতেছি আমি।

নিশি বিছানা থেকে ওড়না নিয়ে দরজা একটু খুলে বাইরে যায়। বাইরে গিয়ে দেখে সায়েম কিচেনে চোখ বুলাচ্ছে আর পা নাচাচ্ছে।

-এখনো পাও নি? (নিশি)
-ভাবি স্যরি তোমাদের বিরক্ত করলাম বলে। আমার আসলে ঘুম আসছিলো না তাই কফি বানাবো ভেবেছি।
-এই যে বয়াম। (সায়েমের হাতে দিয়ে নিশি)
-ও গড!
-বাকিটা পারবে?
-অফকোর্স। তুমি তারাতারি যাও নয়ত ভাইয়া বের হয়ে এসে আমাকে মারতে শুরু করবে। আজ বউ নেই বলে আমিও রাত বিরেতে ফোন পেয়ে চেততে পারিনা। (গরম পানিতে কফি মিশিয়ে সায়েম)
-চুপ চাপ কফি খেয়ে ঘুমাও। রাত জাগবানা একদম। (নিশি লজ্জা পেলো)
-যাও গুড নাইট!
-গুড নাইট!

নিশি ঘরে চলে আসে আর দরজা বন্ধ করে দেয়। মাহবুব তখন আলমারির সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে ছিলো। মাহবুব থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে ছিলো। মাহবুবের পায়ের পশমগুলো নিশিকে আকর্ষণ করছে। নিশিকে দেখে মাহবুব বলে,

-দেবরের সেবা করা শেষ? (মাহবুব বিরক্ত)
-আরে রাগ করছো কেনো? তোমারই তো ভাই। (নিশি আবার হাসছে)
-দাঁত কম ক্যালাও। ওরে কালকে সকালে আমি গুড়া গুড়া করে ফেলব। নিজে তো সিঙ্গেল তার উপর রাত বিরেতে কাপলদের ডিস্টার্ব করে।
-হইছে! এখন কি ঘুমাতে যাবা না?
-মাথা খারাপ নাকি! এখন ঘুমাবো কি করে? (নিশির হাত টান দিয়ে মাহবুব)
-কেনো অন্যদিন যেভাবে ঘুমাও সেইভাবে। (নিশি বুঝেও হাসছে)
-মাথা আমার!!
-মাথা তো তোমারই, আমার তো না। (মোমগুলো নিভাচ্ছে নিশি)
-না আর নিভিও না। (নিশির চুল খুলে দিয়ে মাহবুব)
-কেনো?
-অন্ধকার হয়ে গেলে তো তোমায় দেখতে পারব না। (নিশির চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে)
-আমায় দেখতে বলেছে কে?
-কেউ বলবে এরপর আমি দেখব?
-না।

এরপর মাহবুব নিশিকে উঠতে বলে। নিশি উঠে দাঁড়ায়। মাহবুব তখন একহাত দিয়ে নিশির দুই হাত পেছনে নিয়ে ধরে আর অন্যহাত দিয়ে নিশির মুখে আলতো ছোঁয়। নিশি চোখ বন্ধ করে ফেলে। এমনিতেই ঠান্ডা লাগছে তার উপর মাহবুবের এমন হৃদয় ভেজানো পরশ সব যেন মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। নিশির চুলগুলো সামনে এনে মাহবুব নিশির পিঠে হাত বুলায় আর কিস করে। নিশি কিচ্ছু বলছেনা শুধু চোখ বন্ধ করে আছে। মাহবুব নিশির হাত ছাড়ার পর নিশি মাহবুবের টি শার্ট ধরে। মাহবুব নিজের মুখ নিশির সামনে নিয়ে নিশিকে বলে,

-একদিন বলেছিলাম থ্রি পিসের নেক ছোট করতে। এই ড্রেসটা পরে বাইরে যাবানা ইভেন সায়েমের সামনেও না। শুধু আমার সামনেই পরতে পারবা।
-আচ্ছা।
-নাকফুলটা কি কালো হয়ে গেছে?
-না। অন্ধকার তো তাই এমন লাগছে।
-তাঁকাও আমার দিকে। (নিশির হাত দেয়ালে ঠেকিয়ে মাহবুব)
-পারবনা।
-তাঁকাও নয়ত আরেক হাত উঠাবো এখন।
-আচ্ছা তাঁকালাম।

দুজন দুজনের দিকে তাঁকিয়ে আছে আর মাহবুব হঠাৎ করেই নিশির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। নিশি মাহবুবের টি শার্ট আরো শক্ত করে খামচে ধরলো। মাহবুব নিশির হাত ধরে রেখেছে। কিছুক্ষণ পর মাহবুব নিশির মুখের দিকে তাঁকায় আর নিশি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

-এই? (মাহবুব)
-হুম।
-মাথা নিচু কেনো?
-তো কি করব? আমার লজ্জা নাই নাকি?
-এর আগে দুইদিন লজ্জা কই ছিলো?
-এর আগের দুইদিন তো প্ল্যান করে কিছু হয়নি তাই লজ্জা পাইনি কিন্তু সকালে পেয়েছি অনেক।
-হাহাহাহা। আজব মেয়ে! (নিশিকে বুকে জড়িয়ে মাহবুব)
-তুমিও তো আজব ই। ধুমধাম ঘুম থেকে তুলে এসব করে কেউ?
-থাক কিছু বললাম না। বললে আবারো লজ্জা পাবা।
-হ্যা কিছু বইলো ও না।
-অনেক কিছু এখনো বলার বাকি।

এরপর নিশিকে কোলে নিয়ে মাহবুব ফ্লোরে পা উঁচু করে বসে। নিশিকে বলে,

-মোমবাতিগুলো নেভাও।

নিশি ফু দিয়ে সবগুলো মোমবাতি নিভিয়ে দিলো। ঘর পুরো অন্ধকার। বাইরে থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ আসছে। খাটের পাশের মোমবাতিগুলো মাহবুব নেভায়। নিশি খাটে শুয়ে আছে। আজকে কেনো যেন নিজেকে নতুন বউ লাগছে নিশির। নিশি কম্বল গায়ে দিতে যাবে তখন মাহবুব ওর হাত ধরে ওকে আটকায়।

-কি হলো আবার?
-যা হলো না এখন সেইটা হবে। (কম্বল ফেলে মাহবুব)
-এই যে আবার? না এখন কিচ্ছু না। ঘুমাবো আমি।
-ঘর অন্ধকার, তোমার লজ্জা লাগবেনা আর। সো আজকে ঘুমানো একেবারে নিষেধ।
-আম্মু বাঁচাও। (মাহবুবের হাত ধরে নিশি)
-চুপ।

সকালবেলা,,

নিশি রান্নাঘরে আর মাহবুব ঘুমাচ্ছে। সায়েম ও পরে পরেই ঘুমাচ্ছে। ঘড়িতে সাড়ে আটটা বাজে কিন্তু এতে নিশি বা মাহবুবের কারোরই মাথা ব্যথা নেই। কারণ মাহবুব সকালে অফিসে ফোন করে ছুটি নিয়ে নিয়েছে। নয়টায় নিশি মাহবুবকে ডাকতে আসে।

-এই যে! উঠবা না? (মাহবুবের পিঠ ঠেলে নিশি)
-কি হচ্ছে বউ? ঘুমাচ্ছি তো। কালকে রাতে একটুও ঘুম হয়নি আমার। (ঘুম জড়ানো কণ্ঠে মাহবুব)
-হবে কি করে? ঘুমালে অকাজ গুলো কে করত?
-হ্যা সেইটাই। ( মাহবুব ঘুরে নিশির হাত টান দিয়ে নিশির ভেজা চুল থেকে টাওয়েল খুলে ফেলল)
-এই যে আবার শুরু করছে! উঠো তারাতারি, নয়টা বাজে৷ বাজারে যাবা আবার!
-ধুর! (নিশির কোলে শুয়ে মাহবুব নিশির কোমড় জড়িয়ে ধরে)
-উঠো রে! (মাহবুবের চুলে হাত বোলাতে বোলাতে নিশি)
-না রে! (চোখ বন্ধ করে মাহবুব)
-হ্যা রে! ছাড়ো এখন। উঠো।
-না গো যেয়ো না।
-দেখতো কেমন ঢঙ শুরু করছে।

নিশি মাহবুবের শরীরে ভাল করে কম্বল জড়িয়ে দিলো। আর মাহবুব নিশির কোলে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে আর নিশি বসে বসে মাহবুবের মাথায় হাত বোলাচ্ছে। ঘুম ঘুম চোখে সায়েম ওদের ঘরে ঢুকলো কোনো নক ছাড়াই। সায়েম মাহবুবকে আর নিশিকে এভাবে থাকতে দেখে বলে,

-আল্লাহ আমার জন্য একটা বউ পাঠাও। আর স্যরি ভাবি। আমি আসলে ভাইয়াকে গুড মর্নিং বলতে এসেছিলাম।
-ইটস ওকে। বস তুমি। কাকে গুড মর্নিং বলবা তুমি? তোমার ভাইয়া এখনো ঘুমায়। (মাহবুবের মাথা বালিশে রেখে নিশি উঠে দাঁড়ায়)
-আর একটু ঘুমাই এরপর উঠছি। (মাহবুব)
-বাজারে যেতে হবে শুধু এইটুকু মনে রাইখো। সায়েম ব্রেকফাস্ট করবানা? আসো।
-ভাইয়া উঠুক এরপর। আমিও গিয়ে ঘুমাই আবার।

সায়েম ও চলে যায়। নিশি হাতের কাজ গোছাতে গোছাতে মাহবুব উঠে যায়। মাহবুবকে উঠতে দেখে নিশি বলে,

-গরম পানি করতে দিয়েছি। ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করবানা।
-গরম পানি আমার পোষায় না। ঠান্ডা পানি দিয়েই করতে হবে।
-আবার কাশবা তাই তো? আমি গরম পানি দিয়ে যাচ্ছি। না পোষাইলেও গরম পানি দিয়েই করতে হবে।
-আচ্ছা দিয়ে যাও।

মাহবুব দাঁত ব্রাশ করছে আর ঝিমাচ্ছে। নিশি মাহবুবকে গোসল করার পানি দিয়ে যায়।

-তারাতারি হ্যা? (নিশি)
-আচ্ছা গো!
-এখনো কিভাবে ঝিমাচ্ছে! (মাহবুবের চোখের দিকে তাঁকিয়ে নিশি) ঘুমে ঘুমে আবার সাবানের বদলে হারপিক গায়ে মেখো না।
-হপ! আমি কি অন্ধ?
-অন্ধ ই তো। আসো তারাতারি।
-ওকে রে জান!

মাহবুব গোসল করে ব্রেকফাস্ট করতে বসে। মাহবুব সায়েমকে ডাক দিয়ে টেবিলে বসায়। সায়েমকে রেডি দেখে মাহবুব বলে,

-কিরে কই যাবি?
-তোমার সাথে বাজারে যাব।
-এত ভাল তুই? বাজারেও যাস?
-যাওয়া লাগবে। বউ তো হবে নাকি? বউ তো সকালে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলবে সায়েম বাজারে যাও। তখন কি আমি না বলতে পারব? তাই শিখব এখন।
-কপাল! তোর বউ কি আর আমার বউয়ের মতো হবে যে মাথায় হাত বুলিয়ে বলবে? তোকে ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে না বলে দেখ! (খাবার মুখে দিয়ে মাহবুব)
-এই ভাইয়া সাঝ সকালে এসব কি বলছিস? তোর মনে কি মায়া দয়া নাই?
-খা এখন। আর যদি রাত্রে ফোন দিছিস তাইলে তোর ফোন ভাঙবো আগে এরপর তোকে।
-ও হো আমি না ভুলে গিয়েছিলাম তখন রাত ছিলো। (পিঞ্চ করে সায়েম)
-অসভ্য! খা তারাতারি।

নিশি ওদের কথা শুনে হাসছে।

চলবে

#সাঁঝের_প্রেম
#Part_16
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

সায়েম আর মাহবুব ব্রেকফাস্ট করে বাজারে যায়। নিশি ঘরে এসে বিছানায় বসে। বিছানার চাদরে হাত বুলায় নিশি আর মনে মনে হাসে। মাহবুবের মতো স্বামী পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। নিশি আজীবন মাহবুবের দাসী হয়ে থাকতে প্রস্তুত যদি মাহবুব নিশিকে এইভাবে ভালবাসে। নিশি নাস্তা করে টিভি অন করে বসে। মাহবুব না আসা পর্যন্ত বসে বসে সময় কাটায় নিশি। কিছুতেই একা ভাল লাগছেনা। তখনি ক্যামেলিয়া আসে। ক্যামেলিয়ার সাথে নিশি গল্প করা শুরু করে। তার কিছুক্ষণ পরেই দুইভাই ফিরে আসে। মাহবুব নিশিকে বলছে,

-নিশি কি রান্না করবা করে ফেলো। সব বাজারই আছে এখানে।
-আচ্ছা তুমি গিয়ে ঘুমাও।
-যাচ্ছি।

মাহবুব খাটে শুয়েই ঘুমিয়ে যায় আর সায়েম নিজের কাজে ব্যস্ত। আগামীকাল সায়েম চলে যাবে কারণ ওর ছুটি শেষ। নিশি সায়েমের জন্য ভারী খাবার বানালো আর মাহবুবের জন্য সাদা ভাত করলো। দুপুরের রান্না শেষ করে নিশি ঘর মুছে ফেলে। সব কাজ একা হাতে শেষ করতে করতে দুপুর আড়াইটা বেজে গেছে। নিশি তখন ওদেরকে খেতে দিয়ে দেয়। ওদের খেতে দিয়ে নিশিও খাওয়া শেষ করে। মাহবুব আবার খেয়ে দেয়ে শুয়ে পরে। নিশি সব গুছিয়ে এসে মাহবুবের পাশে বসে। মাহবুব তখন ঘুমে ঝিমাচ্ছে।

-একরাত না ঘুমালে তার রেশ এমনই হয়। (মাহবুবের মাথায় হাত দিয়ে নিশি)
-একদম অসহ্য লাগছে জানো না! এত ঘুম আমি এর আগে কখনো ঘুমাইনি। একটু কাছে আসবা আমার?
-কেন? কাছে নেই নাকি?
-না নেই তুমি কাছে। আসো৷
-আচ্ছা।

নিশি দরজা বন্ধ করে দিয়ে মাহবুবের কাছে বসে। মাহবুব নিশির কোলে মাথা রেখে বলে,

-আচ্ছা যদি আমি মরে যাই তুমি কি আবার সংসার করবা?
-এইটা কি ধরনের কথা? তুমি মরবা মানে?
-যদি মরে যাই তাহলে?
-কিচ্ছু হবেনা তোমার। তোমার কিছু হওয়ার আগে আল্লাহ যেন আমায় তুলে নেয়।
-পরে আমি কাকে নিয়ে থাকব?
-তাহলে তোমার কিছু হলে আমি কিভাবে বাঁচব? কি নিয়ে থাকব আমি? কোনোদিন এইসব কথা বলবানা তুমি। কোনোদিন না।
-আচ্ছা বলব না। ঘুম পাড়িয়ে দাও আমায়।
-এখন কি ঘুম পাড়ানি গান গাইবো?
-হ্যা গাও।

মাহবুবকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে নিশি নিজে ঘুমিয়ে যায়। নিশির ঘুমিয়ে যাওয়া দেখে মাহবুবের খুব আনন্দ হয়। মাহবুব নিশির মুখে হাত বোলায় আর নিশিকে বলে,

-আমি যে সত্যিই আর বাঁচবো না নিশি। এই কথাটা যদি আর পনেরোদিন আগে জানতাম তাহলে তোমায় বিয়ে করে তোমার জীবনটা নষ্ট করতাম না আমি। এই পাঁচবছর আমার বাঁচতে ইচ্ছে করেনি কিন্তু এখন বাঁচতে চাই তোমার সাথে কিন্তু সেইটা ও যে পারছিনা আমি। কিভাবে তোমার এই চাঁদমুখখানি না দেখে থাকব আমি? আল্লাহ এতটা নিষ্ঠুর কেন নিশি? আমার যে কলিজা চিঁড়ে টুকরা টুকরা হয়ে যাচ্ছে নিশি। আমি যে বাঁচতে চাই নিশি,বাঁচতে চাই আমি। (মনে মনে মাহবুব)

দুই মাস পর…..

মাহবুব এখন প্রায়ই অসুস্থ থাকে কিন্তু নিশিকে বুঝতে দেয় না। নিশিও হাল্কা বমির জন্য মাহবুবকে ওষুধ দেয় কিন্তু মাহবুব সেগুলো না খেয়ে ফেলে দেয়। কি হবে ওষুধ খেয়ে? যার দুইটা কিডনিই নষ্ট সেই মানুষ কিভাবে বাঁচবে? এইদিকে নিশি সম্প্রতি জেনেছে যে ও মা হতে যাচ্ছে। মাহবুব যে কি পরিমাণ খুশি এইজন্য যা বলার মতো না! নিশিও ভীষণ খুশি। ও মা হবে আর মাহবুব বাবা! ভাবতেই নিজের কাছে অষ্টমাশ্চর্য লাগছে আর খুশিতে মনটা ভরে যাচ্ছে। নিশি তখনো জানেনা মাহবুবের অসুখের কথা। নিশি মাহবুবের সেবা করে যাচ্ছে আর মাহবুব নিশির।

-আচ্ছা তুমি এত শুকিয়ে যাচ্ছো কেন? (নিশি)
-বাবা হচ্ছি সো হতেই পারি। বাট তুমি সুন্দরি হয়ে যাচ্ছো কিন্তু নিশি।
-এহ! আই লাভ ইউ।
-আই লাভ ইউ ঠু! আমার কি প্রিন্স হবে নাকি প্রিন্সেস হবে?
-একটা হলেই আমি খুশি। যে আসছে সে যাতে সুস্থ হয়ে দুনিয়াতে আসে।
-হ্যা এইটাই তো। দুইমাস আগে এইদিনে আমরা নিজেদের মতো করে সময় কাটিয়েছি, নিজেদেরকে ভালবেসেছি।
-হ্যা। আমি খুব খুশি ওইদিনটার জন্য। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ওই রাতটার জন্য।
-হ্যা আসলেই।

নিশির গর্ভে বেড়ে উঠছে মাহবুবের অনাগত সন্তান কিন্তু মাহবুবের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। মাহবুব এখন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটা সেকেন্ড মাহবুব ভাবে এই বুঝি তার শেষ নিঃশ্বাস পড়লো। মাহবুব রাতে কেঁদে বালিশ ভেজায় কারণ ওর সন্তানের মুখ দেখার আগেই ওর এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। মাহবুবের অবস্থা দেখে নিশি মাহবুবকে জোর করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করায়। ডক্টর জানে মাহবুবের কি সমস্যা। ডক্টর চুপ করেছিলো। নিশি ডক্টরের চুপ থাকার অর্থ বুঝলো না। নিশি বারবার বলছে,

-কেনো ওকে চেক করছেন না? (রেগে গিয়ে নিশি)
-তুমি শান্ত হও নিশি। তোমার শরীরে এখন অন্য কেউ আছে কিন্তু। (মাহবুব)
-ডক্টর আপনি বলুন ওর কি হয়েছে?
-দেখুন ম্যাডাম আপনার স্বামীর আয়ু আর মাত্র কয়েকদিন ই আছে৷ ওনার দুইটা কিডনিই ড্যামেজ আর সেইটা একদম শেষ মুহুর্তে ধরা পরেছে। আমরা কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট করতে চেয়েছিলাম কিন্তু এইটা অনেক এক্সপেন্সিভ হওয়ায় আপনার স্বামী রাজি হয়নি।

কথাগুলো জাস্ট নিশি শুনলো কিন্তু মুখে কিছু বলল না। দু পা সরে এসে নিশি সেন্সলেস হয়ে যায়। ডক্টরের উপর ভীষণ ক্ষেপে যায় মাহবুব। মাহবুব বারবার না করেছিল যাতে নিশিকে কিছু না বলে ডক্টর। নিশি নিজেই অসুস্থ এই অবস্থায় এত বড় আঘাত সহ্য করতে পারেনি। মাহবুব উঠে যেতে পারছেনা বেড থেকে। কয়েকজন নার্স এসে নিশিকে তুলে এরপর নিশির জ্ঞান ফেরায়। জ্ঞান ফেরার পরেই নিশি চিৎকার করে কান্না শুরু করে। মাহবুব তখন ইঞ্জেকশন দেওয়া অবস্থায় বেডে ছিল৷ যতক্ষণ মাহবুবকে বাঁচানো যায় ওতটুকুই সাফল্য৷ নিশিকে কিছুতেই আর আইসিউতে ঢুকতে দেয়নি ডক্টর। নিশির পেটে প্রচন্ড পেইন হচ্ছে কিন্তু মনের ভেতর যেই যন্ত্রণা হচ্ছে এইটা তো নিশি বুঝছে৷ নিশি ওর আম্মুকে ফোন দিয়ে আসতে বলে। পাগলপ্রায় হয়ে গেছে নিশি ডক্টরের কয়েক মিনিটের কিছু কথায়৷ নার্সরা নিশিকে সামলাচ্ছে আর নিশি হাত পা ছুড়ে কাঁদছে। মাহবুবের কান পর্যন্ত এ কান্না পৌছাচ্ছেনা।

সায়েম, তুর্না, মা, মাহবুবের বাবা-ছোট মা সবাই রাতে হসপিটালে এসে পৌঁছায়। নিশির অবস্থা দেখে তুর্না আর আম্মু কেঁদে দেয়। নিশি পেটের ব্যাথায় দাঁড়াতে পারছেনা৷ সায়েম ও সাইডে দাঁড়িয়ে কাঁদছে৷ কি থেকে কি হয়ে গেলো এইটা? ছোট মায়ের চোখেও পানি। ছোট মা কোনোদিন মাহবুবকে আদর বা ভালবাসা কিছুই দেইনি আজ সে ও কাঁদছে কারণ আর যাইহোক তিনি চান না মাহবুব মরে যাক। নিশিকে কেউ সামলাতে পারছেনা৷ হঠাৎ করে নিশি এমন সিদ্ধান্ত নিলো যা কোনো সুস্থ ব্যাক্তি মেনে নিবেনা৷

চলবে