সাঁঝের প্রেম পর্ব-৫+৬

0
46

#সাঁঝের_প্রেম
#Part_5+6
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

নিশি বাসায় ফিরে আসার পর মাহবুবের সবকিছু অসহ্য লাগছে। মাহবুবের ছোট ভাই মাহবুবকে বারবার ফোন দিচ্ছে কিন্তু মাহবুব ফোন সাইলেন্ট করে দিয়েছে ফোন ধরবেনা বলে। মাহবুব ওর বেডরুমে গিয়ে আলমারি থেকে নিশির ওড়না বের করে। নিশির ওড়না বের করে মাহবুব খাটে ওড়নাটা বুকে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরলো। মাহবুবের চোখ থেকে দুফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।

-আজও তুমি পাল্টাওনি নিশি তাইনা? আজও আমাকে বুঝতে তোমার কষ্ট হয়? আজও বিশ্বাস করে নিলে মাহবুব নিশিকে ছাড়া ভালো আছে? মাহবুব নতুন সংসার পেতেছে? এতটা নির্দয় কেনো তুমি নিশি? একটাবার যদি বলতে মাহবুব আমি ফিরে আসতে চাই অতীত ভুলে, আমায় টেনে নাও তোমার কাছে। ঠিক নিতাম। যেদিন প্রথম তোমার কপালে চুমু দিয়েছিলাম সেদিন তোমার মুখের দিকে তাঁকিয়ে যেই নিশিকে আমি দেখেছিলাম আজ সেই নিশি তুমি নেই। অনেকটা পালটে গেছো।

“মাহবুব নিশিকে বাসস্ট্যান্ডে কপালে চুমু দিয়ে বলে,

-আজকে তোমার বাস আগে এসে গেছে যাও। রাতে কথা হবে।

নিশি আর কিছু না বলে দৌড়ে বাসে উঠে গেলো। জানালা দিয়ে মাহবুবকে হাত নাড়িয়ে বাই জানালো, মাহবুব ও বাই দিলো। এরপর মাহবুবের বাস আসার পর মাহবুব চলে যায়। ওইদিন নিশি ভার্সিটির প্রত্যেকটা ক্লাসে অন্যমনস্ক ছিলো। শুধু মুচকি মুচকি হাসছিলো। ওইদিন ভার্সটিতে নোটিশ দেয় স্টাডি টুরে চিটাগং যাবে দুইদিনের জন্য। নিশির মন খারাপ হয়ে যায় কারণ বাবা যেতে দিবেনা। তানিয়া ওরা সবাই যাবে। সন্ধ্যাবেলা নিশি ভার্সিটি থেকে ফেরার পর ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসে। তখন ও ফোনটা হাতে নিয়ে হাসিমুখে মাহবুবকে টেক্সট করে,

-অফিস থেকে এসেছেন ভাইয়া বর?

টেক্সট টা দেখে মাহবুব হাসতে হাসতে রিপ্লাই করে,

-না বোন বউ।
-আসবেন কখন?
-দশটায়। এসে কল করব নে।

এরপর আর নিশি কোনো রিপ্লাই করেনি। পড়াশোনা শেষ করে নিশি ডিনার করে। এরপর তুর্নাকে পড়তে বসিয়ে তুর্নার পড়া নিচ্ছিলো। ঠিক তখনি মাহবুব কল করে,

-কে আপনি? (ইচ্ছে করেই জিজ্ঞেস করলো নিশি)
-তোমার ভাইয়া বর।
-কোথায় আপনি?
-বাসায় যাচ্ছি।
-গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে নিবেন।
-অফকোর্স। আপনি করেছেন কি?
-হ্যা। আর আপনার সম্পর্কে আজ পর্যন্তও কিন্তু আমায় কিছু বলেন নি।
-কালকে পাবলিক হলিডে। ফ্রি আছো নিশ্চই?
-হ্যা।
-বের হতে পারবে?
-কেনো?
-আমার সম্পর্কে জানতে।
-নয়টায় তাহলে। তানিয়ার কথা বলে বের হব।
-ওকে আমি বাইক নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে থাকব।
-আচ্ছা।

পরেরদিন সকালে,,,,

-মা আমি আসছি। (জুতা পরতে পরতে নিশি)
-কোথায় যাচ্ছো তুমি? (নিশির বাবা)
-প্র‍্যাক্টিক্যালের জন্য ইন্সট্রুমেন্ট কালেক্ট করতে। তানিয়াও যাচ্ছে সাথে।
-ফিরবে কখন?
-রাস্তায় তো জ্যাম একটা, দুটো তো বাজবেই। (নিশি ভয়ে কাঁপছে)
-তারাতারি চলে এসো। সাবধানে যাও।
-আচ্ছা বাবা।

নিশি চুলে খোপা করে কাঠি গুজে দিয়েছে আর পরনে লং ড্রেস আর চুরিদার, মুখ হাল্কা মেকাপ আছে। আর কাঁধে ব্যাগ। নিশি বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখে মাহবুব ওয়েট করছে। মুখে ওড়না চেপে নিশি বাইকে বসলো মাহবুবের কাঁধে হাত রেখে। কিছুদূর যাওয়ার পর নিশি জিজ্ঞেস করলো,

-কোথায় যাচ্ছি?
-নদীর ধারে।
-কেনো?
-শান্ত জায়গা আমার অনেক পছন্দের তাই।
-বাইকের স্পিড কমান।
-কেনো?
-আমি ভয় পাচ্ছি।
-আচ্ছা কমিয়ে দিচ্ছি।
-আর কখনো আপনি এত স্পিডে বাইক চালাবেন না। এক্সিডেন্ট করলে পরে কি হবে?
-মরে যাব তাছাড়া আর কি হবে?
-বেশি কথা বলেন কেন আপনি? (মাহবুবের পিঠে ঘুষি দিয়ে নিশি)

মাহবুব একটা নদীর ধারে নিয়ে আসে নিশিকে। নদীর ধারে বিশাল একটা ঘাটলা আছে আর সেখানে বারোটার মতো সুন্দর সিঁড়ি আছে। জায়গাটা একদম শান্ত। মাহবুব নিশিকে নিয়ে এগারো নাম্বার সিঁড়িতে বসালো আর ও নিশির পায়ের উপর মাথা রেখে সিঁড়ির উপর শুয়ে পরলো আর হাত দিয়ে পানি ধরছিলো।

-পিচ্চি নাকি আপনি?
-প্রকৃতিকে ভালবাসি তাতে যদি আমায় পিচ্চি বলো তাহলে আই উইল নেভার মাইন্ড।
-জায়গাটা সত্যিই অনেক সুন্দর।
-ভীষণ সুন্দর। ফ্রেন্ডদের সাথে আসা হয় প্রায় প্রায়ই।
আপনার ভাই বোন নেই?
-আমার নিজের ভাইবোন তো নেই তবে স্টেপ ব্রাদার আছে, ও আমার ছোট।
-স্টেপ ব্রাদার মানে? (চোখ বড় বড় করে নিশি)
-হুম আমার নিজের মা নেই। যে আছে সে সৎ মা।
-কখনো বলেন নি কেনো আমায়?
-বললে কি হত? এতগুলা সিম্পেথি শো করতা আমায় তাইনা? বাট এগুলো আমি চাইনা। জানো নিশি আম্মুকে হারানোর পর বুঝেছি আম্মুর মর্মটা। প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পর আমি আমার ঘর বন্ধি হয়েই থাকি। আব্বু ও এসে জিজ্ঞেস করেনা কোনো খবর আর আম্মু ও না। আমি খেয়েছি কি না সেইটা শোনার বা দেখার সময় নেই তাদের। খেলে খেয়েছি না খেলে নাই বাট জিজ্ঞেস করার কেউ নাই। আজকে দশদিন আব্বুর সাথে কোনো কথা হয়না। ছোট মা যা বলে সেইটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই ওনার কাজ। এইজন্য আমার ইচ্ছা কি জানো?
-কি?
-বিয়ের পর ওদের কাছ থেকে সরে যাব। বউকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই।
-মানবে সেইটা তারা?
-জানিনা। বাট আই ডোন্ট কেয়ার, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সো ফুলফিল করবই।
-কখনো বলেন নি আমায় এসব! (মাহবুবের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে নিশি)
-হ্যা বলিনি কারণ আমি নিজের কথা মানুষকে খুব কম বলি।
-দেখেই বোঝা যায়। বাট আজ থেকে আমার সাথে কোনো কিছু হাইড যাতে না হয় মিস্টার মাহবুব।
-হবেনা। (নিশির হাত ধরে মাহবুব)
-এখন তো চিটাগং যেতে চাচ্ছি।
-কেনো?
-স্টাডি টুরে।
-কয়দিনের জন্য?
-দুইদিন।
-ছেলেরাও যাবে নিশ্চই।
-হ্যা।
-ক্যান্সেল।
-আরে ভাই প্লিজ আমি কখনো পাহাড়ে যাইনি। পাহাড় দেখতে কেমন সেইটাও জানিনা আমি।
-বিয়ের পরে যাইয়ো।
-আমি এখনি যাব।
-টুর কবে?
-তিনদিন পর।
-আংকেল যেতে দিবে?
-না। জোরাজুরি করলে দিতে পারে।
-চারদিনের কথা বলো আংকেল কে। আমিও যাব তোমার সাথে বাট নিজেদের মতো করে। ভার্সিটির টুরে না।
-কিহ? সত্যি? (চিৎকার দিয়ে নিশি)
-হ্যা তুমি আংকেল কে ম্যানেজ করে আমায় জানিয়ো। আংকেল কে বলবা ভার্সটির টুর, যাওয়া মাস্ট ফর ফোর ডেইজ। আজকে রাতেই জানিয়ো তাহলে আমি অফিস ছুটি নিব।
-কি ভালো আপনি! (মাহবুবের চুল টেনে)
-আহ আস্তে!

সারাদিন দুজন ঘুরে দুপুরে নিশিকে বাসায় ছেড়ে দিয়ে মাহবুব বাসায় আসে। নিশি রাতের বেলা বাবার সাথে অনেক তর্কাতর্কি করে আম্মুকে দিয়ে বাবাকে রাজি করায়। এরপর নিশি বাবাকে স্যরি বলে তর্ক করেছে বলে। নিশি সব ঠিকাঠাক করে মাহবুব কে ফোন দিয়ে বলে,

-আব্বু রাজিইইইই! (খুশিতে নিশি লাফাচ্ছে)
-তুমি কি লাফাচ্ছো নাকি? (উঠে বসে মাহবুব)
-হ্যা অনেক খুশি লাগছে। স্টাডি টুরে যাচ্ছি। (দাঁত বের করে কেলাচ্ছে নিশি)
-প্রেম টুরে যাচ্ছেন ম্যাডাম। মুখে কালি লাগিয়ে আসবেন প্লিজ। নয়ত নিজের প্রতি কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলব।
-হারাইয়েন পারলে। অনার্স শেষ করার আগে কিছুই হবেনা স্যার!
-হুহ! থাপ্পর মারব ধরে। আমি তো ভেবেছি দুই মাসের মধ্যে তোমার বাসায় প্রপোজাল পাঠাবো।
-ধুর! আগে প্রেমটা তো ঠিক করে করি। ফার্স্ট লাভ বলে কথা।
-আমারো ফার্স্ট লাভ।
-আপনি কিভাবে আমার প্রেমে পরলেন বলুন তো?
-তোমার চোখ, তোমার ঠোঁট, তোমার চুল, তোমার হাসি। এই চারটার জন্যই প্রেমে পরা।
-ও আর আমি বুঝি সুন্দর না!
-ছেহ! তুমি সুন্দরী মোটেও না। মারাত্মক সুন্দর তুমি।
-ফাইজলামো রাখেন। বি প্রিপেয়ারড ফর দ্যা জার্নি।
-আমি প্রিপেয়ার্ড ই আছি।

তিনদিন দুজন বাসস্ট্যান্ডে, ফোনে, ডেটিং এ এত কথা বলেছে যে নিশি রীতিমতো মাহবুব কে পাগল বলতে শুরু করেছে। মাহবুব নিশির জন্য একটা শাড়ি কিনে এনেছিলো তাও তাঁতের শাড়ি সাথে এটেলের (মাটির) গহনা। নিশিকে তা জানায় নি। তানিয়ার সব জানতো নিশি আর মাহবুবের ব্যাপারে। তাই তানিয়ার সাহায্য নিয়ে দুজন আসতে পেরেছে। টুরের দিন বিকেলে তুর্না, আম্মু আর আব্বু এসে নিশিকে বাসস্ট্যান্ডে ছেড়ে যায়। নিশি পরে জোর করে আব্বু আম্মুকে পাঠিয়ে দেয়। আব্বু আম্মু যাওয়ার পর মাহবুব নিশির সামনে আসে।

-চেনাই যাচ্ছে না তো। (অবাক হয়ে নিশি)
-কেন চেহারা কি পালটে গেছে নাকি? (নিজের মুখে হাত দিয়ে মাহবুব)
-এই টেরিফিক লুকে কেন?
-তো কি লুকে আসা উচিৎ ছিল?
-যাই বলুন খুব সুন্দর লাগছে কিন্তু আপনাকে।
-আমি এমনিতেই সুন্দর। (নিশির হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে মাহবুব)
-আমি পারব তো।
-তুমি পারলে আমি আছি কি করতে? টিকেট কাটা শেষ বাট সিট পেছনে।
-ডাজেন্ট ম্যাটার! বাস কোথায়?
-আসো সামনে! দিন দিন খাচ্ছো আর মোটা হচ্ছো। হাঁটতে চাও না একদমই।
-ধ্যাৎ! (মাহবুবকে মেরে নিশি)

বাসে উঠে মাহবুব ওর আর নিশির ব্যাগ কাঁধ থেকে খুলে বাসের উপরে রাখলো। নিশি জানালার পাশে বসলো আর মাহবুব নিশির পাশে। কিছুক্ষণ পর বাস ছাড়বে। মাহবুব নিশিকে বসিয়ে রেখে নিচে নামে শুকনো খাবার কেনার জন্য। খাবার কিনে তিনটা সিগারেট আর একটা ম্যাচবক্স কিনলো মাহবুব। সিগারেট মাহবুবের হাতে দেখে নিশি বলে,

-এসব কি?
-আমার ভালো থাকার মেডসিন।
-ছিহ!
-নিশি তোমার কাছে আমার রিকুয়েষ্ট একটাই আমার সিগারেট খাওয়া নিয়ে কোনো কথা বলো না। আদারওয়াইজ তুমি যা বলবা আমি করতে রাজি।
-রেগুলার খান?
-হ্যা।
-ঠিক আছে খান।

বাস ছেড়ে দিয়েছে। নিশি জানালা দিয়ে বাইরে তাঁকিয়ে আছে। কোনো কথা বলছেনা মাহবুবের সাথে। সিগারেটের ধোয়ায় নিশির প্রচন্ড কাশি উঠে যায়। মাহবুব দ্রুত সিগারেট টা ফেলে দিয়ে নিশিকে পানি খাওয়ায়। কাশি থামলে নিশি মাহবুবকে বলে,

-খাচ্ছেন না কেনো? খান সিগারেট!
-স্যরি। তোমার যেই কাজে কষ্ট হয় সেইটা করতে আমি রাজিনা।
-সিগারেট খেলে কি হয় আপনি জানেন না? আমি একদমই আপনাকে হারাতে চাইনা। একদম ই চাইনা। (মাহবুবকে জড়িয়ে ধরে নিশি)
-স্যরি। খাব না আর কখনো। প্রমিস ইউ।

রাতে নিশি ঘুমিয়ে যায়। তখন মাহবুব ওকে ওর কাঁধের উপর শোয়ায়। নিশির ঘুম ভাঙে রাত চারটায় মাহবুবের ডাকে।

-নিশি উঠো। আমরা এসে গেছি।
-এসে গেছি? (ঘুম ঘুম চোখে নিশি)
-হ্যা উঠো।

মাহবুব ওর ব্যাগ কাঁধে নিলো আর নিশির ব্যাগ সামনে নিলো। এরপর হাত ধরে নিশিকে নামালো। চারিদিকে তখন ঘোর অন্ধকার। নিশি শীতে কাঁপছে। মাহবুব ওর জ্যাকেটটা খুলে নিশিকে পরিয়ে দেয়। নিশিকে নিয়ে মাহবুব হোটেলের দিকে হাঁটা ধরলো। একটা সিএনজি পর্যন্ত নেই এই রাস্তায়। ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে আর নিশির হাত ধরে মাহবুব নিশিকে নিয়ে যাচ্ছে। হোটেলে গিয়ে মাহবুব দুইটা রুম বুক করতে চায় কিন্তু নিশি না করে ফাও খরচ করতে। তখন রিসিপশনে মাহবুব হাজবেন্ড ওয়াইফ বলে ফর্মালিটিস পূরন করে রুমে যায়।

-আপনি সোফায় ঘুমাবেন আর আমি খাটে।
-হ্যা বিয়ে না হলে তো আর একসাথে ঘুমাতে পারছিনা এন্ড দেট ইজ মাই ব্যাড লাক। (ব্যাগগুলো রেখে মাহবুব)
-আমার না প্রচন্ড ঘুম পেয়েছে।
-চেঞ্জ করে আসো আগে।
-আমার ব্যাগ থেকে টি শার্ট আর একটা প্লাজো দিন তো।
-হুম দিচ্ছি।

মাহবুব নিশিকে টি শার্ট দেওয়ার পির নিশি ওয়াশরুমে যায় চেঞ্জ করতে। বের হওয়ার আগে নিশি বলে,

-এই আমায় একটা ওড়না দিন।
-কেনো? আমি ছাড়া আর তো কেউ নেই।
-দিন তো।
-নাও।

নিশি এসে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে যায়। মাহবুব চেঞ্জ করে এসে গেঞ্জি আর থ্রি কোয়ার্টার পরে সোফার উপর শোয়। হঠাৎ মাহবুব দেখে নিশি কম্বল গায়ে দেয়নি। মাহবুব আবার উঠে নিশিকে কম্বল গায়ে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে নিজের জায়গায় চলে আসে।

চলবে

#সাঁঝের_প্রেম
#Part_6
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

মাহবুব সোফার উপর পা ছড়িয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে গেলো। নিশি খাটে আরাম করে ঘুমাচ্ছে। সকাল নয়টায়,

-এই আপনি উঠেন না কেনো? (দূর থেকে মাহবুবকে ডাকছে নিশি)
-কয়টা বাজে? (ঘুম ঘুম চোখে মাহবুব)
-নয়টা।
-আচ্ছা উঠছি।

মাহবুব উঠে ফ্রেশ হতে গেলো আর নিশি ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে রেডি হচ্ছে। মাহবুব ফ্রেশ হয়ে এসে নিশিকে বলে,

-নিশি একটা কথা বলব রাখবে?
-কি?
-শাড়ি পরবে? আমি তোমার জন্য একটা তাঁত এনেছি আর কিছু গহনা। প্লিজ পরো না। আমি শাড়িটার সাথে ম্যাচিং করে একটা পাঞ্জাবি কিনেছি।
-হাহাহা এত রোমান্টিক আপনি? জানতাম না তো (নিশি হাসছে) কই দেখান তো।

মাহবুব ব্যাগ থেকে শাড়িটা বের করে নিশিকে দিলো। নিশি শাড়িটা হাতে নিয়ে বলল,

-আপনি রেডি হয়ে বাইরে যান। আমি আসছি শাড়িটা পরে।
-থ্যাংক ইউ।

মাহবুব দ্রুত পাঞ্জাবিটা পরে বেরিয়ে গেলো। নিশি শাড়ি পরতে পারে তাই ও শাড়িটা পরে সুন্দর করে সেঁজে মাহবুব কে কল করে। মাহবুব রুমে এসে নিশিকে দেখে ওকে একবার ছুঁতে যায় কিন্তু নিশি বাঁধা দেয়। পরে আর মাহবুব নিশিকে ধরেনা।

-হুমায়ুন আহমেদ এর রুপা লাগছে কি না জানিনা কিন্তু মাহবুবের নিশি লাগছে। অপূর্ব লাগছে তোমায় নিশি। তবে কপালের টিপটা সরিয়ে ফেলো। টিপ ছাড়াই তোমায় ভালো লাগবে।
-সরালাম।
-চলো বের হই।

নিশি স্লিপার পরলো শাড়ির সাথে নয়ত হাঁটতে কষ্ট হবে পাহাড়ে। মাহবুব আগে আগে যাচ্ছে আর নিশি পিছু পিছু। চিটাগং সিটি এরিয়ার সব চিনালো মাহবুব নিশিকে। এরপর দুপুরে লাঞ্চ করে পাহাড়ে গেলো দুইজন। পাহাড়ে উঠার সময় নিশির একটা বাড়ি দেখে চোখ আটকে গেলো। মাহবুব ওর চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল,

-কি হলো তোমার?
-বাড়িটা দেখেন।
-এখানকার বাড়িগুলো এমনই হয়। পিউর কাঠের বাড়ি পুরোটা। সিমেন্ট আর ইটের ছিঁটেফোঁটা ও নেই এখানে। কালারফুল রঙ দিয়ে কাঠগুলো রঙ করে বাড়িটা সাজানো।
-অদ্ভূত সুন্দর। শহরের ১২ তলা দালান দেখতে দেখতে চোখ ধাদিয়ে গেছে। আমাদের বিয়ের পর আমরা এখানেই সেটেলড হয়ে যাব। ঠিক এইরকম একটা বাড়ি হবে আমাদের। (আবেগে নিশি)
-এজ ইউর উইশ ম্যাম। চলেন হাঁটি।

পাহাড়ের মাঝামাঝি উঠে নিশি দেখলো একটা বট গাছের নিচে কতগুলো নৃগোষ্ঠী নাচ করছে। তাদের মাথার উপর কাঁচের বোতল। নিশি মাহবুবের কথা না শুনেই সেখানে গেলো। মাহবুব ও গেলো নিশির পিছু পিছু।

-আমিও এভাবে নাচ করব। (মাহবুবের হাত ধরে বায়না করছে নিশি)
-নিশি তুমি পারবেনা। এইটা এতটাও ইজি না।
-আমি করবই। ওদের বলুন আমায় একটা বোতল দিতে।
-আরে আজব!
-হ্যা আজব৷ তারাতারি বলুন ওদের।

মাহবুব ওদের কে কোনোভাবে বুঝালো যাতে নিশিকে একটা বোতল দেয়। মাথার উপর বোতল টা সেট হওয়ার জন্য গামছার বিড়া পরায় নৃগোষ্ঠীরা নিশিকে। মাহবুব দেখে হাসতে হাসতে শেষ আর ও নিশির কতগুলো ছবি তুললো তখন। বোতল মাথায় নিয়ে স্টেপ দেওয়ার সাথে সাথে নিশির মাথা থেকে বোতল পরে ভেঙে গেলো। বোতলটা নিশির পায়ে গিয়ে পরলো। দুটো আঙুল কেটে গেছে। মাহবুব নিশিকে কোলে করে গাছের নিচে বসায় আর একটা মেয়ে দুর্বারস ধরে নিশির কাটা পায়ে।

-বলেছিলাম তো তুমি পারবেনা। কথা কেনো শুনো না? (রেগে গিয়ে মাহবুব)
-আমি কি বুঝেছি যে পরে যাবে? (কুঁকড়িয়ে নিশি)
-শাট আপ! (নিশিকে ধমক দিয়ে মাহবুব নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে একটু ছিঁড়লো। এরপর নিশির আঙুলে বেঁধে দেয়।) হাঁটতে তো পারবেনা। কোলে করেই নিতে হবে।
-তো নিবেন।

মাহবুব সবাইকে বাই বলে নিশিকে কোলে নিয়ে নামে নিচে। এরপর হোটেলে ফিরে এসে নিশির পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। নিশি কোনোরকম চেঞ্জ করে বসে পরে। মাহবুব তখন নিশির সামনে বসে জিজ্ঞেস করে,

-ব্যাথা কি খুব বেশি করছে?
-না।
-না করেছিলাম করনা তারপরেও করলে। এখন কি অবস্থা হলো নিজের দেখেছো।
-হ্যা স্যরি।
-এত সুন্দর নখগুলো ভেঙে গেলো। (নিশির পায়ে হাত দিয়ে মাহবুব)
-আপনি আমার পায়ে কেনো হাত দিচ্ছেন?
-তো কি হয়েছে? ”

কলিং বেলের আওয়াজে মাহবুব কল্পনা থেকে বেরিয়ে আসে। মাহবুব হাত থেকে ওড়নাটা রেখে, চোখ মুছে দরজা খুলতে যায়। দরজা খুলে দেখে ওর বন্ধু আরাফ।

-দোস্ত তুই? (আরাফকে হাগ করে মাহবুব)
-দেখতে চলে এলাম তোকে। এত রোগা হয়েছিস কেনো? (আরাফ)
-আগে ভেতরে আয়।

আরাফ মাহবুবের কলেজ আর ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড। খুব ভালো ফ্রেন্ড ওরা দুইজন। মাহবুব আরাফকে জিজ্ঞেস করলো,

-হঠাৎ চিটাগং কি মনে করে?
-ঢাকা ফিরবিনা তুই? (আরাফ)
-কার জন্য ফিরব ঢাকায়? কে আছে আমার সেখানে?
-এইজন্য এখানে একা একা থাকবি?
-হুম একাই ভালো।
-শুনলাম নিশি নাকি এখানেই চাকরি করে?
-হুম।
-জানিস তুই?
-হ্যা জানি। ঘণ্টাখানেক আগেও দেখা হয়েছে ওর সাথে।
-কিছু বলেনি ও?
-আমার বউ দেখতে চেয়েছে। (মুচকি হেসে মাহবুব)
-আচ্ছা মাহবুব একটা কথা বলতো আমায়।
-কি?
-তুই নিজেও জানিস নিশি এখন আর তোকে ভালবাসেনা আর ও তোকে চায় ও না। তাহলে কেনো তুই ওর জন্য এখনো অপেক্ষা করে বসে আছিস?
-কারণটা জানিস না তুই? এতটা নির্বোধ কেনো তুই?
-ও মেয়ে হয়ে সেইটা ভাবছেনা আর তুই ছেলে হয়ে ভাবছিস? আর কত বছর তুই এভাবে কষ্টে থাকবি ভাই? সেই সন্ধ্যার প্রেম না ভুলতে পারলে তোর বাকিটা জীবন অন্ধকার ই থেকে যাবে। বিয়ে করে ফেল ভাই। আর নিজেকে কষ্ট দিস না প্লিজ।
-আরাফ আমার বিয়ে হয়ে গেছে আরো পাঁচ বছর আগে। শুধু কি কবুল বললেই বিয়ে হয়? মনের মিলটাই তো বড় রে৷
-নিশিকে কি আর একবার বোঝাবি? কালকে সন্ধায় নিশির বাসায় যাই আমরা?
-আমি হাঁপিয়ে গেছি ওকে বুঝাতে বুঝাতে। ওর ইগো, ওর পরিবার, ওর সমাজ আমার থেকে অনেক বড় রে।
-আজ এই মিনতিগুলো করা উচিৎ কার আর করছে কে! হায় প্রেম! ভাগ্যিস প্রেম করিনাই। ভাই বয়স তো কম হয়নাই। এইবার তোর উচিৎ সত্যি সত্যি বিয়ে করা আর নিশিকে দেখিয়ে দেওয়া যে তুই ভালো আছিস।
-আমি তাহলে অপরাধবোধে নিজেই শেষ হয়ে যাব। বউ আমার একটাই আর সেইটা হচ্ছে নিশি, ভালোবাসা একটাই সেইটাও নিশি। ফার্দার আমাকে এই কথা বলবিনা। নিশি ছাড়া আমার জীবনে কেউ ছিলো ও না আর আসবেও না।
-আমি কালকে নিশির বাসায় যাব। তোর হয়ে সাফাই গাইতে নয় জাস্ট জানতে চাইবো তোকে কেনো এভাবে কষ্ট দিচ্ছে।
-না তার দরকার নেই। নিশি জানে মাহবুব ভালো আছে।
-আর মাহবুব জানে নিশি ভাল আছে। আসলে তোরা কেউই ভালো নেই রে। তুই কড়া গলায় নিশির সাথে কথা বলিস আর নিশিও সেইটাই করে। কিন্তু তোদের মনে শান্তি আছে তো? (আরাফ)
-জানিনা আমি।

আরাফ ওর কথামতো নিশির সাথে দেখা করতে যায়। নিশি আরাফকে দেখে খুশি হয়। আরাফকে কফি খেতে দেয় নিশি এরপর নিজে এক মগ কফি হাতে নিয়ে সোফার উপর বসে।

-কেমন আছেন আরাফ ভাই? (নিশি)
-ভালো আছি। তুমি?
-এইত আছি। ভাবি ভালো আছে?
-হ্যা ভালো আছে।
-তা আপনি হঠাৎ চিটাগং?
-মাহবুবকে দেখতে এসেছি।
-ওহ!
-তোমার চাকরির কি অবস্থা?
-ভালো।
-আর তোমার ফেমিলি?
-সেইটাও ভালো। আপনার বন্ধুর বউকে দেখেছেন?
-কার মাহবুবের?
-হুম।
-ও কি বিয়ে করেছে নাকি?
-বলল তো করেছে। জানেন না আপনি?
-মাহবুব ঠিকই বলে জানো তো তুমি ওরে কখনো বুঝো নাই। একদম সত্যি কথাই বলেছে ও। তুমি ভাবলে কি করে মাহবুব বিয়ে করেছে? সব সম্পর্ক তোমার সাথে ওর আর তুমি কি ওকে এতটুকুও চিনো নাই এই পাঁচ বছরে?
-সেইটাই কথা। চিনিনাই আমি ওরে। (কফিতে চুমুক দিয়ে নিশি)
-একটাবার কি পারো না আবার এক হয়ে যেতে দুজন?
-না পারিনা। আমি আমার বাবাকে কথা দিয়েছি ওর থেকে দূরে থাকব যত কষ্টই হোক। তাছাড়া ভাই এখন আমার পরিবারকে আমার দেখতে হয়। তাই নিজের কথা একদম ভুলে গেছি। ভাববো না আর নিজের কথা।
-সেই সন্ধ্যার কথা কি একটুও মনে পরেনা নিশি? স্যরি টু সে নিশি বাট আসলেই মনে পরেনা? মনে হয়না যে আমার সর্বস্ব যার কাছে লুটে দিয়েছি সে ই আমার স্বামী হওয়ার যোগ্য। ঠিক এই কথাগুলো তোমার ভাবা উচিৎ কিন্তু ভাবছে মাহবুব। কেনো সেইটা? ও তো ছেলে। ও চাইলেই তোমাকে ব্যবহার করে ফেলে দিতে পারতো কিন্তু তা তো দেয়নি। বরং এতগুলো বছর অপেক্ষা করছে তুমি ফিরবে বলে। আর সেখানে তুমি জেদ নিয়ে বসে আছো। আচ্ছা মাহবুবের কি তোমার ফেমিলি দেখার মতো ক্ষমতা নেই? ও কি তোমায় এই প্রতিশ্রুতি দেয়নি যে ও দেখবে তোমার পরিবারকে?
-হ্যা দিয়েছে। কিছুই ভুলিনি আমি ভাইয়া। সব মনে আছে। আজকে আমার সর্বস্ব ওর কাছে বলেই আমি এখনো ওকে ভালবাসি। নতুন করে সংসার বাঁধিনি। এতে নিজেই অপরাধবোধে শেষ হয়ে যেতাম।
-ঠিক এই কথাটা কাল মাহবুব আমায় বলেছে। দুজন দুজনকে এখনো এত ভালোবাসো তাহলে কাছে আসতে সমস্যা কোথায় নিশি? (আরাফ দাঁড়িয়ে যায় রাগে)
-কোনো সমস্যা নেই। আমি হারানো জিনিস আর ফিরে পেতে চাইনা। হতে পারে সেইটা হাত বদলিয়ে আমি পেয়েছি।
-নিশি! কি বলছো তুমি এসব? নিশি ছাড়া মাহবুব এই পাঁচ বছরে আর কিছুই জপ করেনি আর তুমি বলছো এ কথা?
-আরাফ ভাই সেসব কথা বাদ দেন। আপনার বন্ধুকে বলবেন যাতে বিয়ে করে ফেলে। সুখি হবে তাহলে। (চোখের পানি মুছে নিশি)
-মাহবুব বিয়ে করবেনা। ও এখনো তোমাকেই চায়।
-এতটাই ভালবাসা যদি ওর থাকে তাহলে কেনো বলতে পারছেনা আমায়? কেনো বলছেনা নিশি ফিরে এসো।
-তুমি বলেছো? এতটা ইগো দেখালে তো হবেনা নিশি। যেকোনো একজনকে তো নত হতেই হবে। তাছাড়া মাহবুব তোমায় বলেছে ওর কাছে যাওয়ার জন্য কিন্তু তুমিই যাও নি। এক্সকিউজ দিয়েছো ফেমিলির আর বাবার দেওয়া কথার। আচ্ছা নিশি একজন মৃত মানুষকে দেওয়া কথার জন্য তো একটা জীবিত মানুষকে কষ্ট দিয়ে তুমি মেরে ফেলতে পারো না তাইনা?
-আরাফ ভাই পাঁচ বছর আগে আমি ওকে যতটা ভালবেসেছি এখন তার থেকেও বেশি ভালবাসি। আচ্ছা আমার কি ইচ্ছে করেনা ওর মতো স্বামী পেতে? সংসার করতে? তাহলে কেনো আমি পারিনা সেইটা ও কি একবারো জানতে চেয়েছে সেইটা?
-নিশি বোন আমার তোমার পায়ে ধরার হলে আমি ধরতে রাজি কিন্তু প্লিজ তুমি সব ভুলে যাও। তোমার বাবার কথা যে ভুল সেইটার প্রমাণ কি তুমি নিজে না বলো তো? তাহলে কেনো সেই কথা মেনে আছো তুমি নিশি? প্লিজ মাহবুব কে বিয়ে কর। আগের মতো হয়ে যাও দুজন। ছেলেটা এসব আসলেই আর নিতে পারছেনা। শরীরের অবস্থা দেখেছো ওর? ওর চোখের দিকে তাঁকানো যায়না।
-নিশি চুপচাপ বসে আছে।

রাত দশটা….

নিশি তখনো চুপচাপ বসে আছে। আরাফ ও চুপ করে বসে আছে। আরাফ জানে নিশির মা আর তুর্না আজ চিটাগং আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা বাসায় ঢুকবে। সাড়ে এগারোটায় মা আর তুর্না নিশির ফ্ল্যাটে ঢুকে। নিশি ওদেরকে দেখে অবাক হয়ে যায়।

-তোমরা এখানে?
-আরাফ জানে আমরা কেন এখানে। (মা)
-ভাইয়া আপনি জানতেন মা আসবে? (নিশি)
-হ্যা জানতাম।
-এতক্ষণ বলেন নি কেন?
-ইচ্ছে করেই বলিনি। তোমার আর মাহবুবের জন্যই আমার চিটাগং আসা। আজ তোমায় ফাইনাল ডিসিশনে আসতে হবে নিশি।
-আরাফ ভাই বাদ দেন এসব। (চোখ মুছে নিশি) ডিনার করে যাবেন। মা যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
-না। অনেক সহ্য করেছি নিশি, অনেক। এতদিন কিছু বলিনি কারণ আমার জোর ছিলো না। আজকে আরাফ আমায় সেই জোর দিয়েছে। বল তুই কি চাস? (আম্মু) মাহবুবকে বিয়ে করবিনা তাই তো?
-না করব না। আমি যাকে বুঝিই না তাকে কেন আমি বিয়ে করতে যাব?
-আম্মু মাহবুব ভাইয়াকে আমি ফোন দিয়েছিলাম বাসায় আসার জন্য। এখন এগারোটা বেজে গেছে এত রাতে কি ভাইয়া আসবে? (তুর্না)
-হোয়াট? আমার অনুমতি না নিয়ে তুই ওকে কেন ফোন দিয়েছিস? (নিশি রেগে যায়)
-চুপ একদম। তুর্না তুই মাহবুবকে আবার কল করে আসতে বল। এর শেষ আমি দেখতে চাই আজ। (আম্মু)

তুর্না মাহবুবকে কল করে আম্মুর কাছে দেয়। আম্মু মাহবুবকে বলার পর মাহবুব নিশির ফ্ল্যাটে আসে। মাহবুব আসার পর নিশি বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। আবারো নিশির বুক কাঁপছে। মাহবুব আন্টিকে সালাম দিয়ে আরাফকে জিজ্ঞেস করে,

-এখনো কেনো বাসায় গেলি না? সাড়ে এগারোটা বাজে এখন। (মাহবুব নিশির দিকে তাঁকায়নি একবারো)
-বস তুই। (আরাফ)
-আমি বসতে আসিনাই আরাফ। আন্টি আসতে বলেছে তাই এসেছি। চল আয় এখন। (মাহবুব হাঁটতে শুরু করে)
-দাঁড়াও জামাই। (আম্মু মাহবুবকে থামিয়ে)

জামাই ডাক শুনে নিশি আর মাহবুব দুজনেই মর্মাহত। কারণ এইটা সম্ভব নয়।

চলবে