#সাজিয়েছি_এক_ফালি_সুখ
#লেখনীতে – #kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১১
কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে প্রশ্ন ভেসে এলো…
‘ তোমার কাজ শেষ হয়ে গেছে?’
‘ হ্যাঁ, একটু আগেই শেষ হয়েছে। একটু খাবার খাচ্ছিলাম এখন ‘
‘ গুড, আমি এটা জিজ্ঞাসা করতেই ফোন করলাম যে তুমি আবার খাবার কথা ভুলে গেলে কিনা। আচ্ছা শোনো, আমি বোধহয় আজ রাতে বাড়ি ফিরতে পারবো না। একটু ব্যস্ত আছি ‘
‘ ঠিক আছে, কিন্তু এটা আমাকে না বললেও হতো। এমন না যে তুমি রাতে বাড়ি না ফিরলে আমি তোমায় সন্দেহ করবো ‘
‘ রিয়েলি? আমি আরো ভাবলাম তুমি যদি আমায় সন্দেহ করে বসো! তাই তো ভয়ে তাড়াতাড়ি ফোন করলাম ‘
‘ সবসময় মজার মুড লেগেই থাকে তোমার তাইনা?’
‘ একটাই তো জীবন, তাই এই অমূল্য জীবনটাকে উপভোগ করেই কাটাতে হয় বুঝলে? তবে, তোমার কথায় একটা বিষয়ে আমি নিশ্চিত ‘
‘ কি?’
‘ আমার ওপর অনেক বিশ্বাস আছে তোমার’
‘ স্বামী স্ত্রী হিসেবে আমাদের একে অপরের প্রতি বিশ্বাস থাকাটা তো জরুরি তাইনা? নাহলে একসঙ্গে থাকতে যে সমস্যা হয়ে যাবে ‘
‘ আই নো, ঠিক আছে তোমার কাজ শেষ হলে সাবধানে বাড়ি চলে যেও। আর রুমে বসে যদি একা একা বোর লাগে আম্মুর কাছে গিয়ে গল্প করো ‘
‘ হুমমম! ‘
আবরারের কথায় কিছুটা ক্লান্তি মাখা ছিলো, বোঝাই যাচ্ছে অনেকটা টায়ার্ড। জারার একবার ইচ্ছে হচ্ছিলো জিজ্ঞাসা করতে যে ‘ তুমি কি ক্লান্ত হয়ে গেছো?’, কিন্তু কেনো যেনো জিজ্ঞাসা করতে পারলো না। বিয়ের পর থেকেই প্রতিবার আবরারকে কোনো প্রশ্ন করতে গেলেই থেমে যায় ও। এ এক চুক্তির সম্পর্ক। তাই কি আবরারের প্রতি টান সৃষ্টির থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে? প্রশ্নটা নিজেই নিজেকে করেছিলো জারা, কিন্তু উত্তর ভেবে পায়নি। আবরারের সঙ্গে ফোনালাপ শেষে আবারও খাওয়ায় মনোযোগ দিলো জারা, দ্রুত খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাড়ি ফিরে গেলো। বাসায় আসতেই আবরারের মা জারাকে দেখে বললো…
‘ ভালো সময়ে এসেছো জারা, দেখো আবরারের আব্বু চটপটি কিনে এনেছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো, তারপর আমরা একসঙ্গে খাবো ‘
শ্বশুর মশাই চটপটি কিনে এনেছে শুনে খানিকটা অবাক হলো জারা…
‘ আব্বু চটপটি খায়?’
‘ তোমার শ্বশুরের কথা আর বলো না, ওনার ভাজাপোড়া আর বাইরের এসব খাবারের প্রতি অনেক টান। চোখের সামনে পড়লেই কিনে নিয়ে আসে ‘
‘ বাহ, দারুন ব্যাপার তো!’
‘ হ্যাঁ, যাও হাত মুখ ধুয়ে এসো। আমি সব তৈরি করছি ‘
হাসিমুখে রুমে এসে ফ্রেশ হলো জারা, আবরারের বাড়িতে আসার পর ওর পরিবার দেখে জারার নিজের পরিবারের কথা ভেবে বেশ আফসোস হয়। মা বাবার সঙ্গে বসে ভালো সময় কাটানোর অধিকার তো ওরও ছিলো, কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। পূর্বে এমন ভাবনায় দীর্ঘশ্বাস ফেললেও এখন এই পরিবারের সদস্য হওয়ার পর জারার আফসোস অনেকটা কমেছে। সারাদিন কাজের পর পরিবারের সঙ্গে ভালো কিছু সময় কাটানোর সুযোগ তো মিলছে। কিছুক্ষন পর শ্বশুর শাশুড়ির সঙ্গে বসে চটপটি খেতে বসে জারা, নওয়াজ সাহেব খেতে খেতে বলে উঠলেন…
‘ এই দোকানের চটপটির সঙ্গে অন্য দোকানের তুলনাই হয় না, এরা অনেক ভালো বানায়। জারা, কেমন লাগলো বলো?’
‘ হ্যাঁ আব্বু, চটপটিটা অনেক মজা ‘
‘ ছেলেমেয়ের বিয়ে হয়ে গেলো, কিন্তু তোমার বাচ্চামো গেলো না। এখন কি এসব খাওয়ায় বয়স তোমার?’
‘ এগুলো খাওয়ার সঙ্গে বয়সের কি সম্পর্ক?’
‘ অবশ্যই সম্পর্ক আছে, বেশি বেশি সবজি খাবে এগুলো খাওয়া বাদ দিয়ে তাহলে অন্তত শরীরে কাজে দেবে ‘
‘ তুমি তো দেখছি পঞ্চান্নতেই একেবারে বুড়ো হয়ে গেছো!’
‘ আর তুমি? নিজেকে এখনো জোয়ান ভাবো নাকি?’
স্ত্রীর সঙ্গে একদফা ঝামেলা লেগেই গেলো নওয়াজ সাহেবের। শ্বশুর শাশুড়ির এই খুনশুটি দেখে মুখ টিপে হাসলো জারা, তবে বিষয়টা বেশ মুগ্ধ করেছে ওকে। এতো বছর পরও দুজনের কি সুন্দর মিল-মোহাব্বত। আবরার কেনো এতো অমায়িক স্বভাবের সেটা জারা এখন উপলব্ধি করতে পারছে। নিজের মা বাবাকে দেখেই শিখেছে সবটা। নিজেদের ঝামেলা শেষ করে নওয়াজ সাহেব জারাকে প্রশ্ন করলেন…
‘ জারা, তুমি একা কেনো? আবরার তোমার সঙ্গে আসেনি?’
‘ না, আব্বু। আমরা আলাদাভাবে নিজেদের কাজে বেরিয়েছিলাম। আর ও আমাকে জানিয়ে দিয়েছে আজকে রাতে বাড়ি ফিরতে পারবে না ‘
কিছুটা বিরক্ত হলেন নওয়াজ সাহেব…
‘ ভেবেছিলাম বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু না, এই ছেলের আক্কেল জ্ঞান আর হলো না। এখনো নাকি অফিসে রাত কাটাবে’
‘ ইটস ওকে আব্বু, আর দু তিনদিন পরেই ওর একটা বড় কাজ আছে। আমিও সেটার সঙ্গে কিছুটা যুক্ত আছি। ওর কাজের চাপ বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক ‘
‘ না জারা, কাজ কাজের জায়গায় থাকবে কিন্তু ওর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও সিরিয়াস হওয়া উচিত। এখন না হলে আর কখন হবে। তুমি ওর ওপর রাগ করো না জারা ‘
‘ না আব্বু, আমার ওর প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। আমি নিজেও অনেকসময় এতো ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে দিন দুনিয়া খেয়াল থাকে না। ওর ব্যস্ততাটা আমি বুঝি ‘
‘ যাক, তাও ভালো। তুমিও কাজের মাঝে থাকো বলেই আবরারের দিকটা বুঝছো, অন্য মেয়ে হলে নিশ্চিত সন্দেহ করতো ‘
‘ আপনি এসব নিয়ে ভাববেন না আব্বু, আবরার সম্পর্কে সবকিছুই আমি জানি আর ওকে আমি ভরসাও করি। আশা করি ভবিষ্যতে কখনও আমাদের মাঝে এমনকোনো পরিস্থিতি তৈরি হবেনা যাতে আমাদের একে অপরের প্রতি সন্দেহ তৈরি হবে ‘
________________________________
রাত প্রায় আড়াইটা বাজে, জারা ঘুমিয়েছিলো সময়মতোই কিন্তু ঘুমটা ভেঙে গেছে। এখন শত চেষ্টা করেও আর ঘুম আসছে না, উঠে বসলো জারা। আবরার ফেরেনি, কখন ফিরবে জানা নেই। জারা উঠে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো, ফোনটা একবার হাতে তুলেছিলো আবরারকে ফোন করার উদ্দেশ্যে, কিন্তু অনেক রাত ভেবে আর করলো না। যদি ও ঘুমিয়ে গিয়ে থাকে? ফোনটা বিছানার ওপর রেখে বারান্দায় এসে দাড়ালো ও, পুরো শহর এ মুহূর্তে ঘুমাচ্ছন। সামনের বিল্ডিংয়ের এক ফ্লোরে লাইট জ্বলছে, হয়তো কেউ রাত জেগে পড়াশুনা করছে। দূর থেকে ভেসে কুকুরের আওয়াজ, রেলিংয়ে হাত রেখে দাঁড়ালো জারা। একান্তে নিজেকে নিয়ে ভাবনায় কিছুটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো তখনই আচমকা পেছন থেকে এসে কেউ একজন শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, কেঁপে উঠলো জারা। পরে তাকিয়ে দেখলো আবরার এসেছে, রুমের দরজা খোলাই ছিলো, তাই ওর আগমন জারা টের পায়নি। জারার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে আহ্লাদী স্বরে আবরার বলে উঠলো…
‘ আমার বউটা মনে হয় আমাকে অনেক মিস করছিলো তাইনা? আমাকে ছাড়া ঘুম আসছিলো না?’
খানিকটা লজ্জা লাগলো জারার, সত্যিই কি এটাই কারণ? এজন্যেই এই মাঝরাতে হুট করে ঘুম ভেংগে গেলো? আবরারের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না বুঝে জারা উল্টে প্রশ্ন করে বসলো…
‘ তুমি না বললে আজ বাড়ি ফিরবে না?’
‘ হ্যাঁ, কিন্তু ফেরাটা দরকার মনে হলো ‘
‘ কাজ শেষ?’
‘ হুমম, মোটামুটি সবটা গোছানো হয়ে গেছে’
‘ তোমাকে দেখে তো অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছে। ফ্রেশ হয়ে এসো তুমি, আমি খাবার আনছি। খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো ‘
আবরারকে সরিয়ে জারা যেতে যাচ্ছিলো তখনই ওর হাত টেনে ধরে রুমে নিয়ে এলো, ওকে বিছানায় বসিয়ে বললো…
‘ আমি এখন খাবো না, ঘুম পাচ্ছে অনেক ‘
‘ না খেয়েই ঘুমাবে?’
‘ আমার এখন ঘুমটা দরকার, নাহলে অসুস্থ হয়ে যাবো। আজ সারাদিন একটুও বিশ্রাম নিতে পারিনি ‘
কথাগুলো বলতে বলতেই জারার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো আবরার…
‘ এভাবে ঘুমাবে নাকি? ঘাড়ে ব্যথা হবে তো, বালিশে শোও ‘
‘ তোমার কষ্ট হবে?’
‘ সেটা না, কিন্তু এভাবে ঘুম হবেনা ‘
‘ এভাবে আরো ভালো ঘুম হবে। তুমি কথা বলো না, গুড নাইট’
‘ আবরার, আমার কথা শোনো। উঠে বালিশে ঘুমাও ‘
আবরার কোনো উত্তর দিলো না, বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে। জারা একবার ভাবলো ডেকে ওঠানো দরকার, না খেয়ে রাত কাটাবে তাও আবার এভাবে? কিন্তু আবরারের পরিশ্রান্ত ও ঘুমন্ত ওই মুখপানে চেয়ে আর ডাকতে পারলো না। আস্তে করে ওর চোখ থেকে চশমাটা খুলে বিছানার একপাশে রেখে জারা নিজেও বিছানায় হেলান দিলো। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর জারার হাত আপনাআপনিই আবরারের মাথায় পৌঁছে গেলো, একটু একটু করে আবরারের চুলে বিলি কাটতে শুরু করলো। কি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে সে, মিনিট পাঁচেক আবরারের দিকে তাকিয়ে থাকার পর জারা নিজের হৃৎ গতির অস্থিরতা উপলব্ধি করলো। এ মুহূর্তে আবরারকে সরানো সম্ভব নয়, তাই নিজেকে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করলো জারা। ইদানিংকালে যা হচ্ছে সেটা কি ভবিষ্যতে আরো বাড়বে? তা ভেবে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লো জারা…
______________________________
ভোরবেলা ছেলেকে মর্নিং ওয়াক থেকে ফিরতে দেখে কিছুটা অবাক হলেন আবরারের মা, ডায়বেটিসের জন্যে ওনাকেও সকালে হাঁটতে বেরোতে হয়। মাকে দেখেই এগিয়ে এলো আবরার…
‘ গুড মর্নিং আম্মু ‘
‘ তুই বাসায় কখন এলি? জারার মুখে তো শুনলাম ফিরবি না’
‘ অনেক রাতে এসেছিলাম ‘
‘ তোর আব্বু কিন্তু কাল রাতে অনেক রাগারাগি করেছে আবরার, এখন অন্তত রাতে অফিসে থাকিস না। কাজ থাকলেও বাসায় এসে করবি ‘
‘ একটা জিনিস বুঝলাম না, আমার বৌয়ের সমস্যা নেই আমার বাইরে থাকা নিয়ে কিন্তু আব্বুর কিসের সমস্যা?’
‘ তোর ভালোর জন্যে বলে তোর আব্বু বুঝেছিস? যেটা বলেছি সেটাই করবি আর জারার খারাপ লাগলেও ও প্রকাশ করবে না, ও চাপা স্বভাবের মেয়ে। এটা তো আমাদের থেকে তোর ভালো জানার কথা ‘
মায়ের কথাটা যুক্তিসঙ্গত বটে, আবরার ভাবলো এ বিষয়টা সত্যিই ভবিষ্যতে মাথায় রাখতে হবে। ওদিকে, হাসনা বেগম চা বানিয়ে এনে আনোয়ার সাহেবকে দিলেন। তিনি তখন খবরের কাগজে ব্যস্ত, হুট করেই হাসনা বেগম বলে বসলেন…
‘ আমার মনে একটা বিষয় খচখচ করছে ‘
‘ কি হয়েছে?’
‘ আমার কেমন যেনো সন্দেহ হচ্ছে বুঝলে, ওদের বিয়েটা কেমন যেনো তাড়াহুড়ো করে হয়ে গেলো না? আরেকটু খোঁজ নেওয়া বোধহয় দরকার ছিলো ‘
‘ ওরা তো আর লুকিয়ে কিছু করেনি, পরিবারের সম্মতিতেই করেছে। এখানে সন্দেহের কিছুই নেই ‘
‘ সন্দেহ কেনো হবেনা বলো? এতগুলো বছরে কোনোদিন শুনেছো জারার কোনো প্রেমিক আছে? কলেজ, ইউনিভার্সিটি এমনকি এরপরও না। কিন্তু যেই তুমি তোমার উইল পড়িয়ে শোনালে অমনি ওর প্রেমিক এসে উদয় হলো?’
‘ তুমি বলতে চাইছো সম্পত্তির জন্যে জারা একটা ছেলেকে জুটিয়ে বিয়ে করেছে? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার?’
‘ আমার মাথা খারাপ হয়নি, আমি বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখেছি। কিন্তু তুমি এতো সহজেই সব কিভাবে মেনে নিলে বুঝলাম না ‘
‘ দেখো, মেয়ের এখন বিয়ে হয়ে গেছে। ওদের বিবাহিত জীবন নিয়ে উল্টোপাল্টা কথা বলো না ‘
‘ কিন্তু…’
‘ তোমাকে এসব নিয়ে এতো মাথা ঘামাতে হবেনা, তুমি তোমার ছেলেমেয়ের দিকে নজর দাও। ইদানিং জাফার নামে অনেক অভিযোগ আসছে’
হাসনা বেগম ভেবেছিলেন জারার বিয়ে প্রসঙ্গে কথা বলে আনোয়ার সাহেবের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করবেন, উল্টে আনোয়ার সাহেবের কথা শুনে নিজেই দমিয়ে যেতে বাধ্য হলো! তিনদিন পর…আজ আবরারের জুয়েলারি লঞ্চের অনুষ্ঠান হবে, সকালেই অনুষ্ঠানের জায়গায় পৌঁছে গেছে আবরার। সবকিছু দুবার করে চেক করে নিলো, কোনো ত্রুটি রাখা যাবে না। বিকেলে শো শুরু হবে, জারা দুপুরের কিছু সময় পর এসে হাজির ড্রেস নিয়ে। এসেই সেগুলো দিয়ে আবরারকে খুজতে বের হয়। সকাল থেকে আজ আবরারকে নজরে পড়েনি। আমন্ত্রিত গেস্টসহ আরো মিডিয়ার লোকেরা এসেছে। মোটামুটি ভিড়, কিছু সময় পর র্যাম্পের কাছে যেতেই দেখলো আবরার কারো সঙ্গে কথায় ব্যস্ত। ব্ল্যাক স্যুটে আবরারকে যেনো একটু বেশীই হ্যান্ডসাম লাগছে, জারা চোখ সরাতেই পারছে না।সেক্রেটারি নিশা তখন পাশ থেকে বলে উঠলো…
‘ স্যারকে কিন্তু দারুন লাগছে, পুরুষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনার পছন্দ বেশ ভালো বলতে হবে’
‘ নজর দিচ্ছেন নাকি?’
‘ না না ম্যাডাম, প্রশংসা করছি। ঠিক আছে , আপনি আপনার বরকে দেখুন আমি গিয়ে বসছি’
সেক্রেটারি নিশা গিয়ে একটা দর্শকের সিট দখল করে নিলো, জারা তখনও ওখানে দাড়িয়ে। এবার আবরারের নজর পড়েছে জারার দিকে, বউটাকে দেখেই ইশারায় প্রশংসা করতে এক সেকেন্ডও সময় নিলো না আবরার। ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা তা দেখে হাসলো, আবরারের কান্ড দেখে লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো জারা! ঘন্টাখানেক পর অনুষ্ঠান শুরু হয়, মডেলরা আবরারের কিছু নতুন কালেকশন পড়েছে, সঙ্গে জারার ড্রেস তো আছেই। সবশেষে মেইন মডেল উপস্থিত হয় নেকপিসটা পরে, যা আজকের শোয়ের মূল আকর্ষণ ছিলো। উপস্থিত সকলেই আবরারের ডিজাইনের প্রশংসা করেছে, সঙ্গে জারার ডিজাইন করা ড্রেসগুলোও বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। র্যাম্প ওয়াক শেষে আবরার ওর নিউ কালেকশন নিয়ে ছোটখাটো একটি স্পিস দেয়। সবমিলিয়ে জুয়েলারি লঞ্চের অনুষ্ঠান সফলভাবেই সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত অতিথিদের জন্যে সন্ধ্যাকালীন কিছু হালকা নাস্তার আয়োজন করা হয়েছিলো, আবরার ঘুরে দেখে নেয় অতিথিদের অ্যাপায়ন ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা। সবকিছু চেক করার পর অবশেষে জারার কাছে আসার সময় পেলো, ও দেখলো জারা কিছুই খাচ্ছে না।
‘ তুমি কিছু খাচ্ছো না?’
‘ আমার খেতে ইচ্ছে করছে না ‘
আবরার ওয়েটারের কাছ থেকে এক গ্লাস জুস নিয়ে জারার হাতে ধরিয়ে দিলো…
‘ এক গ্লাস জুস খেলে কিছুই হবেনা ‘
‘ আচ্ছা, খাচ্ছি! বাই দ্যা ওয়ে, তোমার এতদিনের পরিশ্রম সফল হয়েছে আজ। কংগ্রাচুলেশন’
‘ ইউ ঠু! তোমার ডিজাইন কিন্তু অনেকের পছন্দ হয়েছে, দেখবে তুমি শীঘ্রই অনেক অফার পাবে ‘
‘ তাহলে তো তোমার কাছে আমি আরো ঋণী হয়ে যাবো, এমনিতেই তুমি আমাকে এতো সাহায্য করছো ‘
‘ আমি তাই চাই ‘
‘ মানে?’
বাঁকা হাসলো আবরার, জারার কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো…
‘ আমি চাই আমার কাছে তোমার ঋনের বোঝা আরো বেড়ে যাক, এতোটা বেড়ে যাক যাতে তুমি সারাজীবনের জন্য আমার কাছে ঋণী হয়ে যাও ‘
কথাটা বলেই টুক করে জারার গালে চু’মু দিলো আবরার, এতো লোকের ভিড়ে ওর এই কান্ড দেখে থতমত খেয়ে গেলো জারা। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বলে উঠলো…
‘ মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি তোমার!’
জবাবে মুচকি হেসে চোখ টিপলো আবরার, চোখ গরম করে তাকালো জারা। আবরারের হাসিই স্পষ্ট বলে দিচ্ছে ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে এমন কান্ড দ্বিতীয়বার করতেও দ্বিধা করবে না সে!
চলবে…
[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]