সাজিয়েছি এক ফালি সুখ পর্ব-১২

0
86

#সাজিয়েছি_এক_ফালি_সুখ
#লেখনীতে – #kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১২

একদিন রাতে আবরার টিভিতে সিরিজ দেখতে ব্যস্ত ছিলো তখন জারা ড্রয়ার থেকে সেই চুক্তির কাগজটা বের করে। বিভিন্ন কারণবশত এটা নিয়ে বিগত কিছুদিন যাবত আবরারের সঙ্গে কথাই বলা হয়ে উঠছে না কিন্তু এবার বলা দরকার!

‘ আবরার, একটু কথা আছে ‘

‘ হ্যাঁ বলো ‘

‘ এই কাগজটা পড়ে একটা সাইন করে দাও ‘

‘ কিসের কাগজ?’

আবরারের মনোযোগ টিভির দিকে থাকায় ও সেভাবে লক্ষ্য করেনি, পরে চেয়ে দেখলো এটা সেই চুক্তির কাগজ যেটা অনেক আগেই ও দেখে ফেলেছে। জারা ইতিমধ্যেই সই করে দিয়েছে, শুধু আবরারের সই বাকি।

‘ জারা, এখনও তো আমাদের হাতে অনেকটা সময় আছে তাইনা? এখনই এসবের কি প্রয়োজন?’

‘ এটাই প্রয়োজনীয় কাজ, ভুলে গেলে তোমার সঙ্গে বিয়ের আগে আমার কি কথা হয়েছিলো? এখানে সেগুলোই লিখা আছে। আর হ্যাঁ, আমি কিন্তু তোমার পক্ষ থেকে ডিভোর্সের সময় কোনো অর্থ গ্রহণ করবো না ‘

জারার কথা শুনে আবরার কাগজের দিকে চোখ বুলিয়ে বিড়বিড় করে বললো…

‘ তোমাকে ডিভোর্সটা দেবে কে!’

‘ কিছু বললে?’

‘ নাথিং! আমি ভেবেছিলাম সবটা শুধু মুখে মুখে থাকবে কিন্তু তুমি যে এগুলোর কাগজ বানিয়ে ফেলবে ভাবিনি ‘

‘ চাইলে পরেও করা যেতো, তবে এসব ঝামেলা আগেই গুছিয়ে রাখা ভালো। পরে ঝামেলা পোহাতে হবে না ‘

আবরার জানে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা বাড়িয়ে লাভ নেই, তাই ভদ্র ছেলের মতো সই করেই বলে উঠলো…

‘ বিয়ের কয়েকটা দিন হলো মাত্র, তাতেই আমার বউ আমাকে ত্যাজ্য করে দিলো। বাহ, কি কপাল আমার ‘

‘ তুমি আরো ভালো মেয়ে পাবে ‘

‘ তুমি যদি তোমার থেকেও ভালো মেয়ে খুঁজে দিতে পারো তাহলে আমার দ্বিতীয় বিয়ে করতে সমস্যা নেই। লাভ তো আমারই, গর্ব করে বলতে পারবো জীবনে দুটো বিয়ে করেছি কিন্তু তুমি বলতে পারবে না ‘

চোখ ছোটো ছোটো করে তাকালো জারা, ওর মনে হলো আবরার যেনো ওকে খোঁচা দিয়ে কথাটা বললো…

‘ উপহাস করছো?’

‘ মোটেই না, ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে কি উপহাস করেনা। আমি শুধু তোমায় বিষয়টা বিস্তারিত বোঝালাম ‘

‘ ভালোবাসা ‘ প্রসঙ্গটা উঠতেই জারা প্রশ্ন করলো…

‘ তা, তুমি ভালোবাসো আমায়?’

‘ তোমার কি মনে হয়?’

প্রশ্ন করেই উত্তরের অপেক্ষায় চেয়ে আছে আবরার, এদিকে প্রশ্নটা করে নিজেই যেনো ফেঁসে গেলো জারা। এবার কি উত্তর দেবে? কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে কাগজটা ড্রয়ারে রেখে বলে বসলো…

‘ আমার কিছুই মনে হয় না, তোমার কাজ হয়ে গেছে এবার তুমি আরাম করে সিরিজ দেখো আমি আম্মুর কাছে যাচ্ছি ‘

দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো জারা, আবরারের ভাষ্যমতে জারা উত্তর না দিয়ে পালালো। ইদানিং আবরার লক্ষ্য করছে এই ধরনের প্রশ্ন উঠলেই জারা কিছুটা বিচলিত বা চমকিত হয়ে ওঠে। বিষয়টা বুঝতে পারার পর থেকেই আবরার এখন সুযোগ পেয়ে বসেছে, হুটহাট এই ধরনের প্রশ্ন করে আর জারা থতমত খেয়ে যায়। আবরার বুঝেছে জারাকে এভাবেই একটু একটু করে প্রেমে ফেলতে হবে, সোজাভাবে এ মেয়ে প্রেমের জালে ধরা দেবে না!
______________________________

দিন কয়েক পর এক দুপুরে হঠাৎ জাফা ও রায়ান এসে হাজির, এই ভরদুপুরে দুজনকে দেখে খানিকটা অবাক হলো জারা। পরে জাফা জানালো আজ ও নিজের জন্মদিন উপলক্ষ্যে জারার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। ভাইবোনদের প্রতি পূর্বের তুলনায় যথেষ্ট মোহাব্বত বেড়েছে জারার তাই আর না করতে পারলো না। সারা দুপুর ও বিকেলে আজ তিন ভাইবোন মিলে ঘোরাঘুরি করেছে, লাঞ্চ করেছে, মুভি দেখেছে। প্রথমবারের মতো ভাইবোন হিসেবে সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটিয়েছে ওরা, জারার বেশ ভালো কাটলো দিনটা। ঘুরতে ঘুরতে রাত হয়ে গেছে, ডিনারের সময় হয়ে গেছে। জাফার কথামতো ওরা এক রেস্টুরেন্টে এসে বসলো, একটু পরেই আবরার সেখানে এসে হাজির!

‘ আমরা এখানে তুমি কিভাবে জানলে?’

‘ আপু, আসলে আমি ভাইয়াকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু ভাইয়া বলেছিলো দুপুরে সময় দিতে পারবে না, তাই এই রেস্টুরেন্টে ডিনারের জন্যে আসতে বলেছিলো’

‘ বাহ, তোমরা নিজেরা দেখছি সব ঠিকঠাক করে ফেলেছ আর মধ্যে থেকে আমি কিছুই জানিনা?’

‘ কেনো? হুট করে এসে সারপ্রাইজ দিলাম সেটা কি তোমার ভালো লাগেনি? নাকি সারাদিন ভাইবোনের সঙ্গে কাটিয়ে আমার কথা ভুলেই গেছিলে?’

‘ আমি সেটা কখন বললাম?’

‘ মনে তো হচ্ছে ইন্ডিরেক্টলি তাই বোঝাতে চাইছো ‘

চেয়ার টেনে বসলো আবরার, হাতে থাকা শপিং ব্যাগটা জাফার হাতে দিয়ে বললো…

‘ জাফা, তোমাকে জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা আর এই নাও তোমার গিফট ‘

‘ থ্যাংকস ভাইয়া, আমি ভেবেছিলাম আপনি আসবেন না ‘

‘ আমার একমাত্র শ্যালিকা প্রথমবার আমার কাছে কিছু আবদার করেছে, সেটা অবশ্যই পালন করবো আমি। রায়ান, দিস ইজ ফর ইউ ‘

আরেকটা শপিং ব্যাগ রায়ানের হাতে দিলো আবরার..

‘ থ্যাংক ইউ কিন্তু আমার জন্যে গিফট কেনো? জন্মদিন তো জাফার ‘

‘ আই নো, কিন্তু তোমাদের সঙ্গে আমার সেভাবে গল্প করার সুযোগ হয়নি। আজকেই প্রথম সুযোগ পেলাম, তাই আমার তরফ থেকে উপহার তোমাদের দুজনেরই প্রাপ্য ‘

প্রথমবারের মতো দুলাভাইয়ের কাছ থেকে উপহার পেয়ে দুজনেই বেশ খুশি হলো। আবরার যে শুধু নিজের স্ত্রী নয়, বরং স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের কথাও ভাবে তা দেখে জারার বেশ ভালো লাগলো। জারাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবরার বললো…

‘ তোমার জন্যে আজকে কোনো গিফট নেই, শুধু আমার শ্যালক আর শ্যালিকার জন্যেই ছিলো ‘

‘ আমি কখন গিফটের কথা বললাম?’

‘ তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?’

‘ তাকিয়ে থাকলেও দো’ষ?’

‘ নাহ, তবে তুমি সচারাচর এভাবে আমার দিকে তাকাও না। যেদিন একটু হ্যান্ডসাম লাগে সেদিনই তাকাও, তারমানে আজকে আমাকে হ্যান্ডসাম লাগছে?’

ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলো আবরার, তাজ্জব বনে গেলো জারা। চোখ ঘুরিয়ে দেখলো ওর দুই ভাইবোন মুখ টিপে হাসছে, সঙ্গে সঙ্গে আবরারের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো…

‘ ওদের সামনে অন্তত এরকম করো না ‘

‘ এখনকার বাচ্চারা আমাদের যুগের থেকেও ফাস্ট, সব আগেই বুঝে যায়। ঠিক বললাম তো গাইজ?’

সঙ্গে সঙ্গে আবরারের কথায় সম্মতি জানিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো রায়ান – জাফা দুজনেই, যাদের বাচ্চা ভেবে জারা আবরারকে শাসন করছে তারাই দুলাভাইয়ের সঙ্গে সায় দিচ্ছে। জারা বুঝলো এখানে আর কিছু বলে লাভ হবেনা, একটু পর ওয়েটার একটা কেক নিয়ে এলো, আবরার আগেই এটা অর্ডার রেখেছিলো। জাফা তো ভীষণ খুশি, কেক কেটে সবাইকে খাওয়ালো। এরপর ওয়েটার ডিনার দিয়ে গেলো, তখনই আবরারের ফোন বেজে উঠলো। সেক্রেটারির কল এসেছে। কল রিসিভ করতেই…

‘ স্যার, একটা জরুরী খবর পাওয়া গেছে ‘

‘ খোঁজ পেয়েছেন?’

‘ হ্যা স্যার, আমি আপনাকে ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি। ওখানেই চলে আসুন ‘

‘ পালিয়ে যাতে যেতে না পারে, নজর রাখো ‘

‘ পালানোর সুযোগ নেই স্যার, আপনি আসুন ‘

‘ ওকে, সেন্ড মি দ্যা লোকেশন ‘

ফোন কেটে দিয়েই এক গ্লাস পানি খেয়ে উঠে দাঁড়ালো আবরার…

‘ আই অ্যাম সরি গাইজ, জরুরি একটা কাজ এসে গেছে। আমার এখনই যেতে হবে, ইউ গাইজ ইঞ্জয়’

আবরারের হাত ধরে জারা প্রশ্ন করলো…

‘ এখন কোথায় যাচ্ছো?’

‘ ফিরে এসে বলবো, এখন বলতে গেলে দেরি হয়ে যাবে’

আবরার ওদের পুরো বিল পেমেন্ট করে দিয়ে বেরিয়ে গেলো, জারার খুব মন খারাপ হলো। ওর ইচ্ছে ছিলো আবরারের সঙ্গে আজ ডিনার করার কারণ বিগত কিছুদিন যাবত দুজনে একসঙ্গে বসে খাবার খেতে পারেনি, হয় আবরার রাতে দেরি করে বাড়ি ফিরেছে নয়তো জারা! ডিনারটা ভাইবোনদের সঙ্গে শেষ করে ওদের ট্যাক্সিতে উঠিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরলো জারা ওদিকে ঘণ্টাখানেক পর আবরার সেক্রেটারির দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী আসে। ফাঁকা রাস্তার একপাশে একটা পরিত্যক্ত বাড়ি, বাইরে আবরারের এক পরিচিত গার্ড দাড়িয়ে আছে। ভেতরে ঢুকতেই আবরার কাঙ্ক্ষিত সেই লোকটিকে হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসা অবস্থায় দেখলো,হাত দুটো তার পেছনে বাঁধা। কয়েক ঘা দেওয়া হয়েছে তা লোকটিকে দেখে ভালোই আন্দাজ করতে পারছে আবরার। আবরারকে দেখামাত্রই লোকটি যেনো আরো ভয় পেয়ে গেলো…

‘ শহর থেকে পালানোর ধান্ধা করছিলো, এতদিন গা ঢাকা দিয়েছিলো। অবশেষে ধরা পড়েছে ‘

‘ গুড জব ইমরান!’

কাঠের একটা চেয়ার টেনে লোকটির সামনে বসলো আবরার, লোকটি মাথা নিচু করে আছে। যার টাকায় খেয়েপড়ে এতদিন আয়েশ করেছে তাকেই ধোঁ’কা দেওয়ার মতো অপরাধ করার দরুন লজ্জায় আর মাথা তুলে তাকাতে পারছে না লোকটি। আবরার শান্ত কণ্ঠে প্রশ্নে করলো…

‘ আপনি ভালোভাবেই জানতেন যে আমার হাত থেকে আপনি নিস্তার পাবেন না, তাহলে বেকার পালানোর চেষ্টা কেনো করছিলেন?’

এবার চোখ তুলে তাকালো লোকটি, আবরারের ওই শীতল দেখে শরীর যেনো ঠাণ্ডা হয়ে এলো লোকটির…

‘ স..স্যার আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার ভুল হয়ে গেছে ‘

তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো আবরার, এই লোকটি আবরারের অফিসের প্রধান কম্পিউটার অপারেটর ছিলো। ওনার কম্পিউটারে আবরারের করা প্রতিটা ডিজাইনের একটা করে কপি থাকতো যাতে জরুরি প্রয়োজনে সেটা কাজে লাগানো যায়। কিন্তু গত মাসে যে জুয়েলারিটা লঞ্চ করার জন্যে আবরার তৈরি করেছিলো সেটার কপি বিরোধী পক্ষ অর্থাৎ মিস্টার রায়হানের কাছে টাকার বিনিময়ে পাচার করে দিয়ে নিজেও নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এ খবর পাওয়ার পরই আবরার ওর জুয়েলারি লঞ্চের অনুষ্ঠান প্রায় এক মাসের বেশি সময়ের জন্যে পিছিয়ে দিয়ে নতুন ডিজাইন তৈরি করে। দীর্ঘদিন তল্লাশি চালানোর পর অবশেষে নিজের কম্পিউটার অপারেটরকে হাতে নাতে ধরতে পেরেছে। আবরার আবারো প্রশ্ন করলো…

‘ মি. সুমন, আপনি আমার বিশ্বস্ত একজন কর্মচারী ছিলেন। শুরু থেকেই আপনি আমার সঙ্গে ছিলেন, সবরকম সাহায্যও করেছেন। কিন্তু আপনার থেকে এই ধরনের প্র’তা’র’ণা আশা করিনি ‘

ভয়ে তটস্থ হয়ে গেলো লোকটি, সেই শুরু থেকেই একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে আবরার সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত মিস্টার সুমন। উনি বুঝলেন এখন মিথ্যে বলে আর লাভ নেই…

‘ আমি টাকার লোভে পড়ে গেছিলাম স্যার, আমাকে অনেকগুলো টাকা দিয়েছিলো। সামান্য একটা ছবির বিনিময়ে অতোগুলো টাকার লোভ আমি সামলাতে পারিনি ‘

‘ সামান্য একটা ছবি? একটা ডিজাইন তৈরি করতে ঠিক কতটা পরিশ্রম ও মাথা খাটাতে হয় সেটা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়। এতো বছর আমার সঙ্গে কাজ করে এইটুকু তো জানা হয়েই গেছে আপনার ‘

‘ স্যার, আমাকে মাফ করে দিন! আমি জানি আমার ভুল হয়েছে ‘

‘ এসব বাদ দিন মিস্টার সুমন, কাজের কথায় আসুন। আমার ডিজাইন পা’চা’র করে লাভ কি হয়েছে? উদ্দেশ্য কি ছিলো?’

‘ আপনি জুয়েলারি লঞ্চ করার আগে সেটা অনলাইনে ভাইরাল করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিলো। যাতে সবাই ভাবে আপনার ডিজাইন আসল নয়, আপনি অন্য কারো থেকে কপি করেছেন ‘

কথাগুলো শুনে আবরারের শরীরে যেনো আগুন জ্ব’লে উঠলো, ওর ডিজাইন চু’রি করে ওকেও চো’র প্রমাণ করতে চাইছিলো? কতোটা মাথা খাটিয়ে শত্রুপক্ষ এমন নোংরা চাল চেলেছে ভেবেই অবাক হচ্ছে আবরার। রাগে রীতিমত ফুঁসছে আবরার, এ মুহূর্তে চাইলে সম্মুখে থাকা লোকটিকে তার কৃতকর্মের খুব কঠিন শাস্তি দিতে পারে আবরার কিন্তু সেটা সে করবে না। সবক্ষেত্রে হাত তোলা যে সমাধান নয়, নিজের রাগ যথেষ্ট ঠান্ডা করার চেষ্টা করলো আবরার…

‘ টাকার লোভে আপনি এতোটা অন্ধ হয়ে গেলেন যে এত বছর যেখানে নিজের শ্রম দিলেন সে জায়গাটার সঙ্গে বেইমানি করতেও বাঁধলো না আপনার? আপনি তো মানুষের কাতারেই পড়েন না দেখছি ‘

মাথা ঝুঁকিয়ে রইলো লোকটি, আবরার এবার শেষ প্রশ্নটি করলো…

‘ আমি জানি এই কাজটা করার জন্যে আপনাকে টাকা কে দিয়েছে, তবুও তার নামটা আপনার মুখ থেকেই শুনতে চাই ‘

‘ স্যার..’

‘ শুধু নামটা বলুন, এছাড়া আর একটা কথাও আপনার মুখ থেকে শুনতে ইচ্ছুক নই আমি ‘

লোকটি শুরুতে কিছুক্ষণ আমতা আমতা করেছে, ধরা পড়ে গেছে জেনেও নাম প্রকাশ করতে চায়নি। পরে আবরার আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, দু – চার ঘা নিজেও দিয়েছে। অবশেষে লোকটি প্রকাশ করেছে যে কে তাকে টাকা দিয়েছিলো। কে হতে পারে তা আবরার আগেই ধারণা করেছিলো, তবে এবার নিশ্চিত হলো! এখানকার কাজ শেষ, বেরিয়ে এলো আবরার। এ মুহূর্তে রাগে মাথা টনটন করছে ওর, সেক্রেটারি এক বোতল পানি এগিয়ে দিতেই আবরার ঢকঢক করে পুরোটাই খেয়ে নিলো…

‘ আই কান্ট বিলিভ দিস, জেতার জন্যে একটা মানুষ এতো অবসেড কিভাবে হতে পারে যে এইরকম একটা প্ল্যান করেছিলো। শেম অন হিম ‘

‘ স্যার, আপনি শান্ত হন। আমরা তো এই প্ল্যান সফল হতে দেইনি তাইনা? আর আপনার নতুন জুয়েলারি লঞ্চ অনুষ্ঠান ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে ‘

‘ আই নো, কিন্তু আমাদের যদি বিষয়টা টের পেতে আরেকটু দেরি হতো তাহলে কি অবস্থা হতো ভাবতে পারছেন? আমার ডিজাইন চু’রি’র দায় আমার ঘাড়েই আসতো! আমার এতদিনের কষ্ট করে তৈরি করা ইমেজ পুরো নষ্ট হয়ে যেতো!’

‘ আই নো স্যার, তবে আপনি চিন্তা করবেন না। আমি সব সামলে নেবো’

‘ শুনুন ইমরান, এবার থেকে সিকিউরিটি আরো বাড়িয়ে দিতে হবে আর এখন যে অপারেটর আছে তাকে ছাঁটাই করে নতুন অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। নতুন প্রার্থীর ইন্টারভিউ আমি নিজে নেবো ‘

‘ ওকে স্যার, কিন্তু এখন এই সুমনের কি করবো?’

‘ লেট হিম গো, এরপর এমন ব্যবস্থা করুন যাতে সে কোথাও কাজ না পায়। এই ধরনের লোক যেখানেই যাবে সেখানে গিয়েই বেইমানি করবে। আমি চাইনা অন্য কেউ আমার মত বেইমানি শিকার হোক ‘

‘ ঠিক আছে স্যার!’

আবরার এর ওখানে দাড়ালো না, বাড়ি ফিরে এলো। সেক্রেটারি ইমরান ওখানকার বাকি কাজ সামলে নিলো সঙ্গে আবরারের নির্দেশমতো ওই লোকটিরও ব্যবস্থা করলো। ঘরে ফিরেই চশমা খুলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো, জারা একটু পর রুমে এসে দেখলো আবরার শুয়ে আছে।

‘ তখন ঐভাবে হুট করে চলে গেলে যে, কিছু হয়েছে নাকি?’

‘ একটু মাথাটা টিপে দাও তো, যন্ত্রণা হচ্ছে ‘

পাশে গিয়ে বসলো জারা। আলতো ভাবে কপাল ম্যাসাজ করতে করতে লক্ষ্য করলো আবরারের চোখমুখে বিরক্তির ছাপ, যেনো কোনো একটা বিষয় নিয়ে বেশ বিরক্ত বা রেগে আছে। সবসময় যে মুখটায় হাসির ঝলক থাকে তা আজ রাশভারী হয়ে আছে। জারা দ্বিতীয়বার আর প্রশ্ন করার সাহস পেলো না! আজকেও আবরার না খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে, অবশ্য গরম মেজাজে ঘুমটা না হলে মাথা তো ঠান্ডা হবেনা। ও ঘুমানোর পর জারা লক্ষ্য করেছে আবরারের ডান হাতের পিঠে কিছুটা ছড়ে গেছে, আবরার চোট পেলো কোথায় গিয়ে? ভাবতে ভাবতেই ছড়ে যাওয়া জায়গাটায় একটু ওষুধ লাগিয়ে দিলো।

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]