সাজিয়েছি এক ফালি সুখ পর্ব-১৮

0
151

#সাজিয়েছি_এক_ফালি_সুখ
#লেখনীতে – #kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১৮

আজ খাওয়ার সময় একটাও কথা বলেনি আবরার, চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছিলো। অন্যান্য দিনের মতো হলে আবরার হয়তো খাবারের প্রশংসা করতো কিন্তু আজ কিছুই বলছেনা। ও নিজে আজ কিছু বলবে না তা জারার বেশ বোঝা হয়ে গেছে। এক পর্যায়ে ও নিজেই বললো…

‘ বিকেলে তোমার সময় হবে?’

‘ কেনো?’

‘ পাশের গ্রামে এই মাসে সপ্তাহব্যাপী একটা মেলা হয়, সেটা এখন চলছে। আমার ঐ মেলায় যাওয়া হয় না দু বছর হলো, ভাবছিলাম আজ বিকেলে যদি আমরা দুজনে…’

‘ তোমার ইচ্ছে হলে যেতে পারো, আমি যাবো না ‘

‘ কেনো?’

‘ দুদিন ধরে অফিসে কি চলছে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না, আমার সেক্রেটারি নিজেও কল করে কিছু জানাচ্ছে না। বিকেলে আমি আমার কাজের জায়গায় কি চলছে সেটা খোঁজ নেবো ‘

‘ তা তো তুমি পরেও ফোন করে খবর নিতে পারবে, বিকেলেই কেনো? আর আমাদের মেলায় কিন্তু বেশি দেরি হবেনা, আমরা একটু ঘুরে ফিরে কিছু খাবার খেয়ে চলে আসবো ‘

‘ সরি, আই অ্যাম নট ইন্টারেস্টেড! তোমার যদি যাওয়ার অনেক ইচ্ছে হয়ে থাকে তাহলে তুমি যেতে পারো। আমি আটকাবো না ‘

‘ এখানে আটকানোর কথা কোত্থেকে এলো? ঘুরে এলে ভালো লাগবে তাই ভাবলাম..’

‘ আমার মনে হয় তুমি একা গেলে আরো ভালোভাবে ইনজয় করতে পারবে, আমার যাওয়ার দরকার নেই ‘

খাওয়া শেষ করে উঠে গেলো আবরার, জারা ওকে রাজিই করাতে পারলো না। জারার জানা ছিলো না যে আবরার এইভাবেও রাগ দেখাতে পারে। ওর এই নতুন রূপ দেখে জারা অবাক হচ্ছে বটে! ওকে রাজি করানোর জন্য দুপুরেও কয়েকবার চেষ্টা করেছে জারা, কিন্তু আবরার বারবার ওকে এড়িয়ে যাচ্ছে। বিকেলে জারা মেলায় যাওয়ার জন্যে তৈরী হয়ে আবরারের কাছে আসে, ও তখন ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। জারা আবারও প্রশ্ন করলো…

‘ তুমি সত্যিই যাবে না?’

‘ না ‘

‘ শহরের মেলা আর গ্রামের মেলার মধ্যে কিন্তু বিস্তর ফারাক আছে বুঝলে, না গেলে অনেককিছু মিস করবে ‘

‘ ইনজয় ইউর টাইম ‘

জারা মুখ ফুলিয়ে চেয়ে রইলো, আবরার একবার তাকিয়েও দেখলো না ওর দিকে। আবরার যাবেনা নিশ্চিত হয়ে জারা আর দেরী না করে বেরিয়ে পড়লো। মেলা থেকে ওর ফার্ম হাউজের দূরত্ব প্রায় পনেরো – বিশ মিনিট মতো পায়ে হাঁটার রাস্তা। বিকেলে রোদ পড়ার পর বেরিয়েছে জারা, রাস্তা দিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে এই গোধূলি বিকেলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে মেলায় পৌঁছালো ও। বিকেলবেলা মেলা বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে, জারা ভেতরে ঢুকে প্রথমেই কি কি জিনিষ উঠেছে সেগুলো দেখে নিলো। ঘরের জন্যে প্রয়োজনীয় অনেককিছুই এখানে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু আপাতত এগুলো প্রয়োজন নেই বলে আর কিনলো না, ও চলে গেলো কি কি খাবার উঠেছে তাই দেখতে, হরেক রকমের খাবার আছে স্টলগুলোতে। জারা প্রথমে একটি পিঠার দোকান থেকে দু পদের পিঠা খেলো, এরপর হাঁটতে হাঁটতে এক চুড়ির দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো ও। নানান রঙের রেশমি চুড়ি নিয়ে বসেছে এক মহিলা, জারার যদিও চুড়ি তেমন পড়া হয় না তবে এই চুড়িগুলো দেখে কেনো যেনো কিনতে ইচ্ছে হলো! জারা চুড়ি দেখতে যাবে তখনই ভিড়ের মধ্যে কেউ একজন ওর হাত ধরলো। আচমকা হাত চেপে ধরায় চমকে উঠলো জারা, হাত ঝাড়া দিয়ে ঘুরে তাকাতেই দেখলো আবরারকে। জারা কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো…

‘ তুমি কিভাবে জানলে আমি এখানে?’

‘ কোথায় আসছো সেটা তো বলেই এসেছো ‘

‘ হ্যাঁ, কিন্তু এতো ভিড়ের মধ্যে আমাকে খুঁজে পেলে কিভাবে? আর তোমার না দরকারি কাজ আছে? সেগুলো ফেলে এখানে কি করতে এসেছো?’

‘ অফিসের খবর নেওয়া হয়ে গেছে ‘

‘ ওহ! যাক, এসে ভালোই করেছো। আমি আরো ভাবছিলাম একা ঘুরে মজা পাবো না তাই এই মেলা থেকে একজনকে পার্টনার হিসেবে খুঁজে নিতে, আজকের জন্যে আর কি’

জারার কথার মানে বুঝলো না আবরার…

‘ কিসের পার্টনার!’

‘ আরে, মেলায় একা ঘুরে কখনো মজা পাওয়া যায় না। আশেপাশে তাকিয়ে দেখো সবার সঙ্গেই কেউ না কেউ আছে, তুমি যদি না আসতে তাহলে আমি একা ঘুরতাম নাকি?’

‘ এখন পার্টনার তো অনলাইনে অর্ডার করলেই পাওয়া যায় না, এতো কম সময়ে কোথায় পেতে?’

‘ কি বলো? এখানে আসার সময়ই পথে একজনের সঙ্গে দেখা হয়েছিলো। তার সঙ্গেই তো হাঁটতে হাঁটতে এলাম মেলায়। অবশ্য ছেলেটা বয়সে আমার থেকে ছোটো হবে, তবে কথাবার্তায় বয়স এতো কম বোঝা যায় না ‘

‘ হোয়াট! তুমি একটা ছেলের সঙ্গে গল্প করতে করতে এখানে এসেছো?’

‘ হুমম! তোমাকে একটা উদাহরণ দিলাম আর কি, মেলায় ঘোরার জন্যে পার্টনার খোঁজা অতো কঠিন নয়। একটু চোখকান খোলা রাখলেই পাওয়া যায় ‘

চোখ গরম করে তাকালো আবরার…

‘ এইসব বলে আর আমার মেজাজ গরম করিও না প্লিজ, তোমার এখানে যা কাজ আছে সেগুলো জলদি শেষ করে চলো। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায় ‘

গত রাতে মুখটা যেমন গোমড়া করে রেখেছিলো, এখনও তেমনি আছে। প্রায় একদিন যাবত আবরারের মুখে হাসির লেশমাত্র দেখেনি জারা, শুধু গত রাতে ওর বলা কথাগুলো শুনে আবরার বিরক্ত হয়েছে বলে

‘ রাগ করলে?’

‘ আমার রাগে কার কি এসে যায়?’

‘ ওহ! অনেক রাগ হয়েছে। চলো, মিষ্টি কিছু খাই। দেখবে রাগ কোথায় উবে গেছে!’

‘ আমি মিষ্টি জিনিস পছন্দ করিনা!’

‘ ওহ হ্যাঁ, তুমি তো ঝাল পছন্দ করো। কিন্তু এখানে তো ঝাল কিছু দেখলাম না। খুঁজে দেখতে হবে। আচ্ছা, যাই হোক আমাকে চুড়ি কিনে দাও তো ‘

‘ তোমাকে তো কখনো চুড়ি পড়তে দেখলাম না, চুড়ি কিনে কি করবে?’

‘ শাড়ি পড়লে চুড়ির দরকার পড়ে! আমি কিনবো ‘

‘ ওকে! তোমার যা ইচ্ছে হয় কিনে দেবো ‘

‘ থ্যাংক ইউ!’

জারা প্রায় তিন রংয়ের দুই ডজন করে চুড়ি কিনলো, এরপর আরো কিছু জিনিস নিলো যা আবরার কিনে দিলো! একটি দোকানে সুতার কাজ করা রুমাল বিক্রি করছিলো, জারার ডিজাইনগুলো পছন্দ হওয়ায় একটা কিনবে ভাবলো। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কোনটা নেবে সেটা বাছাই করছিলো, আবরার পাশে দাড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ জারা লক্ষ্য করলো সামনে দাড়ানো দুই তিনজন মেয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে হাসছে আর কি যেনো বলছে। ভ্রু কুঁচকে নিলো জারা…

‘ ওই মেয়েগুলো ঐভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে কেনো?’

জারার কথা শুনে আবরারও মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলো, মিনিট দুয়েক ভালোভাবে লক্ষ্য করার পর আবরার বুঝলো মেয়েগুলো ওর দিকে তাকিয়ে আছে…

‘ আমাদের দিকে না, ওরা মনে হয় আমার দিকে তাকিয়ে আছে ‘

‘ কেনো?’

‘ মেয়েরা ছেলেদের যে কারণে দেখে ওরাও সেই কারণেই দেখছে ‘

‘ অদ্ভুত তো! আমি সঙ্গে আছি দেখেও মেয়েগুলো তোমার দিকে ঐভাবে তাকিয়ে আছে কেনো? বিবাহিত পুরুষের দিকে ওভাবে নজর দেওয়ার কি আছে?’

‘ বিবাহিত পুরুষ বুঝলে আলাপ করতো না, হয়তো আমাকে অবিবাহিত ভাবছে ‘

‘ তাহলে আমি কি? আমাকে ওদের নজরে পড়ছে না?’

‘ তোমাকে হয়তো আমার বউ মনে করছে না!’

‘ মানেটা কি! ওয়েট, এদের অবিবাহিত আর বিবাহিত পুরুষের পার্থক্য বোঝাচ্ছি ‘

জারা মেয়েগুলোর কাছে যাওয়ার জন্যে উদ্যত হতেই আবরার ওকে বাঁধা দিলো…

‘ হেই! কোথায় যাচ্ছো?’

‘ বললাম তো, মেয়ে তিনটির সাথে কথা বলতে যাচ্ছি ‘

‘ ওয়েট! ঝগড়া করবে নাকি ওদের সঙ্গে?

‘ মোটেই না, আমি ঝগড়া পছন্দ করিনা। শান্তভাবে বোঝাবো, বিলিভ মি!’

‘ কাউকে কিছু বোঝাতে হবে না, চলো আমরা ঐদিকে যাই। ওদিকে যাওয়া হয়নি, আর আমরা এখান থেকে সরে গেলে মেয়েগুলো আমাকে দেখবে না ‘

আবরারের কথায় শান্ত হলো জারা, ওখান থেকে সরে অন্যদিকে গেলো। সারা বিকেল ওরা ঘুরলো। সন্ধ্যাবেলা হুট করেই আকাশ জুড়ে সাজলো মেঘ, আর খানিক সময় বাদেই শুরু হলো মুশুল ধারে বৃষ্টি। প্রায় কাকভেজা হয়েই মেলা থেকে বাড়ি ফিরলো জারা ও আবরার, বৃষ্টির বেগটা বেশি ছিলো। দশ মিনিটের বৃষ্টিতেই একেবারে ভিজিয়ে দিয়ে গেছে। জারা দ্রুত ঘরে গিয়ে ব্যাগে থাকা জিনিসগুলো বের করে দেখে নিলো ভিজেছে কিনা। পলিব্যাগ থাকায় ভেজেনি দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলো, ওগুলো তুলে রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ইয়াররিং আর ব্রেসলেট খুললো। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় হঠাৎ আবরারকে দেখে চোখ আটকে গেলো জারার। চশমাটা মুছে রেখে হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ব্যস্ত সে, সাদা রংয়ের ভেজা শার্টে শ্যাম বর্ণের লম্বা – চওড়া পুরুষটিকে বেশ আকর্ষণীয় লাগছে। ওদিকে দেখতে দেখতে জারা অনুভব করলো ওর বুকের বাম পাশটায় যেনো কেউ হাতুড়ি পে’টা’চ্ছে। যেই আবরারও আয়নার দিকে তাকালো, দুজনেরই চোখে চোখ পড়লো। অপ্রস্তুত হয়ে চোখ সরিয়ে নিলো জারা।

‘ ফ্রেশ হয়ে নিতে হবে, এভাবে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে। তুমি আগে যাবে না আমি যাবো?’

‘ আ..আমি যাচ্ছি ‘

জারা তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতেই যাচ্ছিলো তখন আবরার ওর হাত টেনে দেওয়ালে ঠেসে ধরলো। সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে নিলো জারা, ওর মুখটা দেখে কিছুটা অদ্ভুত লাগলো আবরারের। যে মেয়েটা এতদিন সবসময় চোখে চোখ রেখে কথা বলে এসেছে সে আজ নজর লুকাচ্ছে কেনো?

‘ কি হয়েছে তোমার?’

‘ কি হবে? কিছুই না ‘

‘ তাহলে আমার দিকে তাকাচ্ছো না কেনো?’

জবাব দিলো না জারা, আবরার জারার থুতনি ধরে মুখটা ওর দিকে ফেরালো। মেয়েটার চোখমুখে আজ যেনো হরেক অনুভূতির ঘনঘটা। আবরার ঠিক বুঝতে পারছে না, কারণ জারাকে এভাবে দেখে ও অভ্যস্ত নয়। এরপর মিনিট দুয়েক দুজনের মাঝে পিনপতন নীরবতা, মেয়েটা চোখ নিচু করে তাকিয়ে আছে। আবরার জারার হৃদস্পন্দন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। মেয়েটা কি কোনো কারণে নার্ভাস? হঠাৎ আবরার লক্ষ্য করলো জারার গাল বেয়ে পানি পড়ছে, মেয়েটা হঠাৎ কাঁদছে কেনো? কিছুটা চিন্তিত হয়ে আবরার দু হাতে জারার গাল দুটো ধরলো…

‘ কি হয়েছে জারা?’

‘ আবরার, আমাদের সম্পর্কটা আর আড়াই মাস পর শেষ হয়ে যাবে জানো তো?’

‘ হুমম!’

‘ কিন্তু, আমি..আমি বোধহয় তোমাকে ভালোবেসে ফেলছি ‘

বিস্মিত হলো আবরার, ভেবে পাচ্ছে না কি করবে! অবাক হবে, আনন্দিত হবে? কোথায় ভেবেছিলো নিজেই একদিন গুছিয়ে জারাকে ভালোবাসার কথা বলবে, কিন্তু তার আগেই জারা বলে দিলো? মেয়েটার মুখ থেকে এমন কিছু শুনবে তা স্বপ্নেও কল্পনা করেনি আবরার। ঠোঁট চেপে কান্না থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে মেয়েটা, ওর কাঁপা কাঁপা ঠোঁট দুটো আবরারকে আকৃষ্ট করছে বটে তবুও নিজেকে সামলে ও প্রশ্ন করলো…

‘ যদি আমায় সত্যিই ভালোবেসে থাকো তাহলে আড়াই মাস সময়ের কথা ভুলে যাও ‘

‘ কিন্তু আমার মনে এতো ক্ষত আছে যে আমি তোমাকে সেভাবে ভালোবাসতে পারবো না যেভাবে তুমি চাও ‘

‘ তুমি না হয় আমাকে তোমার মতো করেই ভালোবেসো, আর আমি আমার মতো করে বাসবো। এটা জরুরি নয় দুজনকে সমানভাবে ভালোবাসতে হবে। তুমি আমায় ভালোবাসো এইটুকুই আমার জন্যে যথেষ্ট ‘

আবরারের কথা শুনে জারার কান্নার গতি যেনো আরো বাড়তে লাগলো, এ মুহূর্তে নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে ওর। একবার মনে হচ্ছে নিজের স্বার্থের জন্য আবরারের মতো একটা ছেলের জীবন নষ্ট করে দিলো আরেকবার মনে হচ্ছে এই পুরুষটির সঙ্গেই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারলেই বুঝি জীবনটা সুন্দর হতো। এসব ভাবনায় ওর মস্তিষ্ক যখন ডুবতে যাচ্ছিলো তখনই ঠোঁটে উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে ওর ভাবনায় ছেদ পড়লো। ধীরে ধীরে এ স্পর্শ আরো গভীর হতে শুরু করে। এ মুহূর্তটাকে অহেতুক ভাবনায় নষ্ট করতে চায়নি জারা, আবরার নিজে ওর দিকে এক পা এগিয়েছে। এবার জারাও আবরারকে হতাশ করেনি। ভয়, জড়তা কাটিয়ে উভয়ের সম্মতিতেই ঘটলো দুজনের মনের মিলন….
___________________________________

আবরার ও জারার সম্পর্ক বর্তমানে পূর্বের তুলনায় অনেকটা মজবুত হয়েছে, আবরারের মতো জারাও এখন এই সম্পর্ককে যথেষ্ট সম্মান করে। আবরারের প্রতি অনেক আগে থেকেই ওর মনে অনুভূতি তৈরি হচ্ছিলো, পূর্বে সেগুলো দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও এখন সুযোগ পেলেই তা প্রকাশ করার চেষ্টা করে জারা। যদিও আবরারের মতো এতো সহজে জারা অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না, তবে চেষ্টা করে। আজ সকাল থেকে জারা কয়েকটা ক্লায়েন্ট মিটিংয়ের জন্যে ব্যস্ত ছিলো, সারাদিন খাবারের সময়ও পায়নি। বিকেলে বেশিরভাগ কাজ শেষ করার পর জারা কিছু খাওয়ার জন্যে রেস্টুরেন্টে ঢুকে আবরারকে কল করলো, আবরার ল্যাপটপে জরুরি একটা রিপোর্ট চেক করতে ব্যস্ত ছিলো কিন্তু জারার ফোন দেখেই সব রেখে কল রিসিভ করলো। আদুরে কণ্ঠে বললো…

‘ ইয়েস, ম্যাডাম। অবশেষে আমার কথা মনে পড়লো আপনার?’

‘ সরি স্যার! আজকে আমি খাওয়ার সময়ও পাইনি, তোমাকে কিভাবে ফোন করবো বলো?’

‘ তাহলে আগে খেয়ে তারপর আমাকে কল করতে, তোমাকে না বলেছি লাঞ্চ স্কিপ করবে না?’

‘ আচ্ছা, খাচ্ছি। শোনো না, আমার গাড়ির টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে। তুমি আজকে ফেরার সময় আমাকে পিক করে নিতে পারবে?’

‘ কিন্তু আমার আজ ফিরতে একটু দেরী হতে পারে’

‘ সমস্যা নেই, আমি অপেক্ষা করবো ‘

‘ আচ্ছা শোনো, আজকে রাতে আমরা বাইরে ডিনার করবো ওকে?’

‘ ওকে! সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে ‘

আবরারের সঙ্গে কথা শেষ করতেই আবারো ফোনটা বেজে উঠলো, সেক্রেটারির কল এসেছে। কল রিসিভ করতেই….

‘ ম্যাডাম, আপনি কি ব্যস্ত আছেন?’

‘ কেনো?’

‘ আপনাকে এর আগে বলেছিলাম না এক ভদ্র মহিলা আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলো? উনি আজকেও এসেছেন। আপনি কি এসে দেখা করতে পারবেন না ওনাকে ফেরত পাঠিয়ে দেবো?’

‘ ফেরত পাঠানোর দরকার নেই, ওনাকে বসতে বলুন। আমি আসছি ‘

জারার এবারও খাওয়া হলো না, এক কাপ কফি খেয়ে ব্যাগ কাঁধে তুলে আবারো হাউজে ফিরলো। সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলে রেস্টরুমে যেতেই এক মধ্য বয়স্ক মহিলাকে দেখলো

‘ আই অ্যাম রিয়েলি সরি ম্যাডাম, আপনি এর আগেও আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন কিন্তু আমাদের তখন দেখা করার সুযোগ হয়নি ‘

মহিলাটি জারার কথাগুলো যেনো কর্ণপাত করলেন না, উনি অবাক দৃষ্টিতে জারাকে দেখতে ব্যস্ত। প্রথমে লক্ষ্য না করলেও পরে ভদ্র মহিলার চেহারার দিকে তাকিয়ে ভীষণ চেনা লাগলো জারার। কৌতুহল নিয়ে জারা প্রশ্ন করেই বসলো..

‘ আমাদের কি আগে কোথাও দেখা হয়েছে?’

মহিলাটি হাসিমুখে জবাব দিলেন…

‘ এইটুকু পুতুলের মতো মেয়েটা দেখছি এখন অনেক বড় হয়ে গেছে ‘

জারা তখনও চেনেনি, আরো কিছুক্ষণ ভাবার পর অবশেষে মহিলাটিকে চিনতে পারলো ও। সঙ্গে সঙ্গে চোখদুটো ছলছল করে উঠলো জারার…

‘ আম্মু?’

চলবে….