সাজিয়েছি এক ফালি সুখ পর্ব-০৯

0
101

#সাজিয়েছি_এক_ফালি_সুখ
#লেখনীতে – #kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ০৯

আজ আবরার জারার রিসিপশনের অনুষ্ঠান, গেস্ট আসতে শুরু করেছে। জারা পার্লারে গেছে, আবরারও তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে ওর সেক্রেটারি এসে গেছে, ব্ল্যাক স্যুটে বসকে দেখেই সে বলে উঠলো…

‘ স্যার, আপনাকে হ্যান্ডসাম লাগছে ‘

‘ হঠাৎ প্রশংসা করছেন যে ইমরান সাহেব? বোনাস টোনাস কিছু লাগবে নাকি?’

‘ আরে নাহ স্যার, আমি আমার বেতনেই সন্তুষ্ট। আপনাকে সত্যিই হ্যান্ডসাম লাগছে, আমি প্রশংসা না করলেও কেউ না কেউ অবশ্যই করতো। আপনার তো এখন প্রশংসা করার ব্যক্তিগত মানুষও আছে ‘

‘ আপনার ম্যাডাম প্রশংসা করার পাত্রী নয়!’

‘ আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাবে! ওহ হ্যাঁ, আপনার কয়েকটা সাইন দরকার ছিলো স্যার। এখন একটু সময় হবে নাকি ফাইল রেখে যাবো?’

‘ না, আমি সাইন করে দিচ্ছি। যাওয়ার সময় মনে করে নিয়ে যাবেন। আর হ্যাঁ, আমাদের যে শো পোস্টপোন্ড হয়েছিলো সেটা শীঘ্রই অর্গানাইজ করতে হবে ‘

‘ জ্বি স্যার, আপনি বললেই আমরা আয়োজন শুরু করবো। কিন্তু আপনি এক সপ্তাহ ছুটিতে থাকবেন না?’

‘ এখন ছুটি কাটানোর সময় নয়, কাজটা আগে করতে হবে। ছুটি চাইলে পরেও কাটাতে পারবো। আপনিও জানেন একটা নতুন জুয়েলারি লঞ্চ করা কতো প্রেসারের ব্যাপার। দ্রুত ব্যাপারটা শেষ হয়ে যাওয়াই ভালো ‘

‘ ইয়েস স্যার!’

তৈরি হওয়ার ফাঁকে সেক্রেটারির সঙ্গে কাজ সম্পর্কেও কিছু কথা বলে নিলো আবরার, বিয়ের জন্যে কিছুদিন যাবত অফিসে যেতে পারছে না বলে সব খোঁজ খবর নিয়ে নিলো। ঘণ্টাখানেক পর জারাকে নিয়ে পার্লার থেকে ফিরলো আয়েশা, জারাকে সোজা স্টেজেই নিয়ে গেছে। জারার পরিবারও এসেছে একটু আগে। আবরার ও জারা তাদের সঙ্গেও কথা বলে নিলেন। মিডিয়ার লোকেরা ইতিমধ্যে উপস্থিত, তারা এসেই নব দম্পতির কিছু ছবি তুলে নিলো। আবরারের অনেক সিনিয়র বিজনেস পার্টনার ও সহকারী উপস্থিত ছিলো অনুষ্ঠানে, তাদের সঙ্গে জারাকে পরিচয় করিয়ে দিলো আবরার। সকলেই জারার সঙ্গে বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলো। সবমিলিয়ে রিসিপশনের আনুষ্ঠানিকতা ভালোভাবে সম্পন্ন হলো! রিসিপশন শেষে জারাকে ওর পরিবার বাড়ি নিয়ে গেলো, সম্ভবত দু – একদিন বাবার বাড়ি থেকে তারপর এ বাড়িতে ফিরবে জারা। আবরারের সঙ্গে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু কালকে সকালে অফিসে কাজ আছে ভেবে ও যায়নি। বাসায় ফিরেই সোজা নিজের রুমে গিয়ে বসলো জারা, ওর পিছু পিছু জাফাও এলো…

‘ মাত্র দুদিন দূরে ছিলাম, তাই যেনো মনে হচ্ছে কতবছর পর এই রুমে এলাম ‘

যদিও আবরারের রুম এর থেকেও বড় ও সুন্দর কিন্তু নিজের ঘর ছোটো হলেও তাতে থাকার শান্তিই আলাদা। জাফা হঠাৎ বললো…

‘ আপু, একটা কথা বলবো?’

‘ কি হয়েছে? দেখো, আমি এই বাড়িতে না থাকলেও এই ঘরের দাবি করতে সেটা আমি দিতে পারবো না ‘

‘ দেখো আপু, তোমার রুম দখলের ইচ্ছা আমার অবশ্যই আছে! আমার রুম কতো ছোটো আর তোমার রুম দেখো, এতো বড়। আবার মাস্টার সাইজের বেডও আছে তোমার ‘

‘ বাবাকে বলে মাস্টার সাইজের বেড তুমিও কিনে নাও, মানা করলো কে?’

‘ বাবাকে বলেছিলাম, সে বলেছে আমার এখনও মাস্টার বেডে ঘুমানোর মতো বয়স হয়নি। যাই হোক, আপু আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি ‘

জাফার কথায় জারা অবাক হলো বটে, আগে কখনো এরকম কথা শোনেনি। পূর্বে প্রায়ই হাসনা বেগমের জন্যে ওদের মধ্যে মনোমালিন্য হতো, তাছাড়া জারা জাফাকে তেমন পছন্দও করতো না কিন্তু আজ হঠাৎ ছোটো বোনের মুখে এমন কথা শুনে জারার ভালোই লাগলো। কৌতূহলবশত জারা প্রশ্ন করলো…

‘ কেনো মিস করেছো?’

‘ জানিনা! তবে তুমি যাওয়ার পর এই দুদিন তোমার রুমের বন্ধ দরজার দিকে যতবার নজর পড়েছে ততবারই তোমার কথা ভীষণ মনে পড়েছে। এতদিন শুধু শুনেছি যে বড় বোন বাড়ীতে উপস্থিত থাকা অবস্থায় নাকি তার কদর বোঝা যায় না, কিন্তু একবার বিয়ে করে চলে গেলে খারাপ লাগে। এই বিষয়টা এখন বুঝতে পারছি। রায়ানও অনেক মিস করেছে তোমাকে ‘

এতোগুলো বছর শুধু সৎ ভাইবোন বলে জাফা ও রায়ানকে জারা মানতে পারেনি, অবশ্য এর পেছনে হাসনা বেগমের উস্কানিও ছিলো। উনি কখনোই চাননি ওদের তিনজনের মধ্যে ভাইবোন হিসেবে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হোক। নিজের ছেলেমেয়েকে উনি সবসময় জারার নামে নেগেটিভ কথা বলেছে আর জারাকে তার ছেলেমেয়ের থেকে দূরে থাকতে বলেছে। এসব কারণে এতো বছর তিন ভাইবোনের মধ্যকার সম্পর্কে ভাটা পড়েছিলো কিন্তু সময়ের সঙ্গে যেনো হাসনা বেগমের সব দুষ্টু পরিকল্পনা বিফলে যাচ্ছে। তার ছেলেমেয়ে জারাকে বড় বোন হিসেবে কদর করতে শুরু করেছে। আর এই বিষয়টাই জাফা আজ জারার সামনে স্বীকার করলো। জীবনে প্রথমবার জারার মনে হচ্ছে হ্যাঁ, ওর জন্যে ভাবার ও মন খারাপ করার জন্যে বাবার বাড়িতে কেউ একজন আছে। ওদিকে… আয়েশা মেয়ে নিয়ে ওর হাসবেন্ডের সঙ্গে রিসিপশনের ভেন্যু থেকেই বাড়ি ফিরে গেছে। সব অতিথিদের বিদায় দিয়ে আবরারের ওর মা বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়েছে। ফ্রেশ হওয়ার পর তিনজনই বসার ঘরে বসেছে, আবরার কফি খেতে খেতে জারার সঙ্গে ম্যাসেজিং করছিলো তখন নওয়াজ সাহেব বললেন…

‘ তুই জারার সঙ্গে গেলি না কেনো?’

‘ কালকে সকালে অফিসে যেতে হবে আব্বু ‘

‘ এখনই কিসের অফিস? কদিন বৌমার সঙ্গে সময় কাটানো উচিত তোর, মাত্র বিয়ে করলি ‘

‘ হ্যা, আবরার। সাতটা দিন ছুটি নিলেই তো হতো। এখন জারাকে তোর বেশি সময় দেওয়া উচিত ‘

‘ আমি জানি আম্মু, কিন্তু কাজটাও জরুরি। এমনিতেই একবার পিছিয়েছে আর পেছানো উচিত হবে না। তাছাড়া জারা নিজেও কর্মব্যস্ত মানুষ, আমার দিকটা ঠিকই বুঝবে ‘

‘ বেশ, তোরা যা ভালো বুঝিস কর। তবে হ্যাঁ, তোদের এই কাজের চক্করে যেনো সংসার জীবনে সমস্যা সৃষ্টি না হয়। কাজ কাজের জায়গায় রাখবি আর ব্যক্তিগত জীবন আলাদা, বুঝেছিস?’

‘ অবশ্যই আব্বু। আমার কাছে ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার কাজের আগে! আমাদের সংসার জীবনে এসবের ইফেক্ট পড়বে না, চিন্তা করো না ‘

নিজের সংসার জীবন নিয়ে আবরার যথেষ্ট মনোযোগী হতে চায়, সংসার ও বিবাহিত জীবন সম্পর্কে জারার ক্ষোভ ও নেতিবাচক ধারণা আছে বোঝার পর থেকেই আবরার ভাবছে কীভাবে ওর এই ভুল ধারণা দূর করা যাবে। গতকাল জারার কথা শোনার পর আবরার কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিলো বটে, তবে নিজের ওপর বিশ্বাস আছে বলেই সেই হতাশা অল্পসময়েই কাটিয়ে উঠে ঠিক করেছে জারাকে প্রথমে ইমোশনালি নিজের প্রতি, ওদের এই সম্পর্কের প্রতি দুর্বল করতে হবে। একটা মেয়ে যখন নিজের স্বামী ও সংসারের মায়ায় পড়ে সে সহজে সে মায়া কাটাতে চায় না। ভালোবাসা দিয়ে আবরার জারাকে নিজের কাছে বন্দী করার বদ্ধপরিকল্পনা করে ফেলেছে!
__________________________________

সকালে উঠতে জারার আজ একটু দেরি হয়েছে, সকালের নাস্তা করে কাজে বেরোবে বলে ঠিক করলো। ওর বাবা সকালেই কাজে বেরিয়ে গেছে, রায়ান – জাফা ও নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেছে। জারা একেবারে রেডি হয়ে এসে নিজেই খাবার বেড়ে খেয়ে নেয়, খাওয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে তখন হাসনা বেগমের আগমন। একগাল হেসে জারাকে প্রশ্ন করলেন….

‘ কি ব্যাপার জারা? কাল এসেই ঘরে চলে গেলে, আর বের হলে না যে? দুদিনেই দেখছি আমাদের পর করে দিয়েছো ‘

হাসনা বেগমের কথায় পাত্তা না দিয়ে জারা চুপচাপ পানি খেয়ে নিলো, জারার উত্তর না পেয়ে উনি আবারো প্রশ্ন করলেন….

‘ তা শ্বশুরবাড়িতে দিনকাল কেমন কাটছে? ভালোই নাকি সেখানেও গিয়ে মেজাজ দেখাচ্ছো যেমন এ বাড়িতে দেখাও?’

‘ আমার শাশুড়ি আপনার মতো নয়!’

‘ নতুন নতুন ছেলের বউয়ের সঙ্গে শাশুড়ি মিষ্টি ব্যবহার করবে এটাই স্বাভাবিক, দিন তো আরো পরেই আছে ‘

‘ তাও বটে, তবে সেটা আমার ভাবনার বিষয় আপনার নয়। আমার বিয়ে, সংসার আর শ্বশুর বাড়ি এসব নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে ‘

‘ আমাদেরই তো ভাবতে হবে। বলা তো যায়না, যদি তোমার সংসার না টেকে তখন তো আমাদের ঘাড়ে এসেই পড়বে তাইনা?’

‘ চিন্তা করবেন না, সংসার ভাঙলেও আপনাদের বাড়িতে ফিরবো না। উপার্জন ক্ষমতা আছে আমার, ইনশা আল্লাহ তাতেই নিজেকে চালাতে পারবো ‘

যতোই চেষ্টা করুক, কিন্তু হাসনা বেগম জারাকে কখনো কথায় দমাতে পারেনি। মেয়েটার নিজের প্রতি মা’রা’ত্ম’ক বিশ্বাস আছে, যা ওকে নিজের আশেপাশে থাকা সব খারাপ মানুষগুলোকে দমন করার সাহস দেয়। হাসনা বেগমের সঙ্গে অযথা তর্কে না জড়িয়ে জারা নিজ কাজের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো। হাউজে পৌঁছাতেই সেক্রেটারি নিশা নানানভাবে জারাকে টি’জ করতে শুরু করলো, জারাও হাসিমুখে নিশার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। আজ এখানে তেমন কাজ নেই, নিশা অনেকটা কাজ গুছিয়ে রেখেছে। দুপুরে জারার দরকারি একটা কাজের কথা মনে পড়লো, দেরি না করে ও একটা ট্যাক্সি ডেকে নিলো। যাওয়ার পথে বান্ধবী এলিনার ফোন এলো, ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে উচ্ছাসিত কণ্ঠে এলিনা বলে উঠলো…

‘ জারা, আই অ্যাম প্রেগন্যান্ট ‘

‘ সত্যিই? খালামণি হচ্ছি আমি! অভিনন্দন বান্ধবী’

‘ থ্যাংকস রে, কালকে ডাক্তারের কাছে গেছিলাম।এইজন্যেই যেতে পারিনি তোর রিসিপশনে আর তুই ব্যস্ত আছিস ভেবে ফোনও করা হয়নি ‘

‘ তোর সুস্থতা আগে এলিনা, অনুষ্ঠান তো আসবে যাবে ‘

‘ হুমম!! আচ্ছা তুই তো বাসায় এসেছিস তাইনা? আমার দুলাভাইকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে আয় ‘

‘ আবরার আমার সঙ্গে আসেনি রে, ওর জরুরি কিছু কাজ ছিলো ‘

‘ ওহ আচ্ছা। তাহলে তুই কি ব্যস্ত আছিস এখন? নাহলে বাসায় চলে আয়, এমনিতেই মিষ্টি পাওনা আছে তোর ‘

‘ এখন সময় হবে না রে, আমার উকিলের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে দুপুরে। কিছু পেপার্স রেডি করতে দিয়েছি, সেগুলো আনতে যাবো ‘

‘ কিসের পেপার্স?’

‘ ছয়মাসের জন্যে বিয়ে করেছি ভুলে গেছিস? আইনত সেটার জন্য একটা পদক্ষেপ তো নিয়ে রাখতে হবে ‘

‘ কি বলছিস? এখনই কেনো? সবে না বিয়ে হলো? কয়েকটা দিন যেতে দে, এতো তাড়াহুড়োর কি আছে?’

‘ তাড়াহুড়ো কোথায়? এটাই তো উপযুক্ত সময়। তাছাড়া আমরা একটা ডিল হিসেবেই বিয়েটা করেছি তার জন্যে আইনি কাগজ তো রাখতেই হবে ‘

‘ তুই আবরারের সঙ্গে কথা বলেছিস এই ব্যাপারে?’

‘ না, তবে আবরার যেহেতু সব মেনেই আমাকে বিয়ে করেছে। আমার মনে হয় না এই বিষয়ে ও অমত করবে’

জারা বিয়ের পূর্বেই উকিলের সঙ্গে কথা বলে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলো, সেই হিসেবে ওর উকিল পেপার্স তৈরিও করে ফেলেছে। জারার দৃঢ় পরিকল্প সিদ্ধান্ত, সংসার জীবনের সময়সীমা ছয়মাসের বেশি হবেনা। ওদিকে… সেক্রেটারি ইমরান জরুরি কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলো, প্রায় মিনিট দশেক পর সে লক্ষ্য করলো অন্যমনস্ক হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে আবরার। তার বলা একটা কথাও আবরারের কানে পৌঁছায়নি, নাহলে এতক্ষণে আবরার ভালো মন্দ কিছু একটা বলতো। হঠাৎ কি ভেবে বিড়বিড়য়ে আবরার বলে উঠলো….

‘ সি ইজ ভেরি ক্রুয়েল ‘

‘ কিছু বললেন, স্যার?’

এবার সেক্রেটারির কথা কানে পৌঁছালো, ঘুরে তাকালো আবরার…

‘ আচ্ছা মিস্টার ইমরান, অতীতের কোনো একটা ঘটনা বা খারাপ অভিজ্ঞতা একটা মানুষের জীবনে ঠিক কতোটা প্রভাব ফেলতে পারে? সেই ঘটনার রেশ কি সারাজীবন থাকার সম্ভাবনা রয়ে যায়?’

‘ সেটা তো ঘটনাটা কেমন তার ওপর নির্ভর করছে স্যার। যদি গুরুতর কিছু হয় তাহলে অনেকসময় পূর্ব ঘটনার রেশ সারাজীবন রয়ে যায় ‘

সেক্রেটারির কথা শুনে আবারো আবরার কোনো এক ভাবনার সাগরে ডুব দিলো, কিছু একটা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত সে তা বেশ বুঝতে পারলো ইমরান কিন্তু বসকে পাল্টা কোনো প্রশ্ন করলো না। সন্ধ্যায়, আবরার হুট করেই জারার বাসায় এসে হাজির হলো। ও এসে কলিং দিতেই দরজা জারাই খুলেছে, আবরারকে দেখে অবাকও হয়েছে বটে। আবরারের উত্তরটা ছিলো ‘তোমাকে নিতে এসেছি ‘। আবরারের মৃদু হাসিটা আজকাল জারার অদ্ভুতভাবে অনেক ভালো লাগে, কিন্তু তার কারণটা কি সেটা ভেবে পায়না। নতুন জামাই প্রথমবার বাড়ি এসেছে, আনোয়ার সাহেব ওর খাতির যত্নের কমতি রাখলেন না। হাসনা বেগমও স্বামীর কথামতো আবরারের খাতির করতে বাধ্য হলেন। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে জারার রুমে এলো আবরার, জারা যদিও বিয়ের আগে আবরারের রুমে গেছিলো কিন্তু আবরার জারার রুমে আসেনি। এটাই প্রথমবার!

‘ সারাদিন অফিস করে তোমার এখানে আসার দরকার ছিলো না, আমি কালকে নিজেই যেতে পারতাম ‘

‘ তোমার সঙ্গে গতকালই আমার আসার কথা ছিলো, এমনিতেই তোমায় একা পাঠিয়েছি বলে আব্বু রেগে আছে আমার ওপর। এরপর তুমি একা বাড়ি ফিরলে আব্বু আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে ‘

হাসলো জারা, আলমারি থেকে নতুন একটা তোয়ালে বের করে আবরারের হাতে দিতেই আবরার প্রশ্ন করলো…

‘ আমাকে আলাদা তোয়ালে দিচ্ছো কেনো? তোমার তোয়ালেই তো আমি ইউজ করতে পারি’

‘ তুমি আমার তোয়ালে কেনো ব্যবহার করবে?’

‘ শেয়ারিং ইজ কেয়ারিং, জানো না?’

‘ ওসব কথার কথা, সকলের উচিত আলাদা জিনিস ব্যবহার করা ‘

‘ নাহ, তুমি আমার মন ভেঙে দিলে জারা! কোথায় ভেবেছিলাম বিয়ের পর এক বালিশে ঘুমাবো, দুজনে একই তোয়ালে ব্যবহার করবো। রোমান্টিক একটা ব্যাপার হবে ‘

‘ হয়ে গেছে তোমার? তাহলে বিছানা গুছিয়ে দেই?’

‘ এখন নাহ! আমার তোমার বাবার সঙ্গে কিছু কথা আছে, আসার পর ওনার সঙ্গে বসে একটু কথা বলতে পারলাম না ‘

‘ বাবা বাগানে আছে বোধহয়, ঘুমানোর আগে উনি একটু হাঁটাহাঁটি করেন ‘

‘ ওকে!’

তোয়ালেটা জারার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আবরার বাগানে এলো, আনোয়ার সাহেব ওখানেই ছিলেন। আবরার এগিয়ে এসে নিজেই কথা শুরু করলো, আনোয়ার সাহেবও মেয়ের জামাইর সঙ্গে কথা বলতে পেরে খুশি হলো। কথার এক পর্যায়ে আবরার হুট করে বলে বসলো…

‘ আব্বু, আপনি যদি কিছু মনে না করেন তবে একটা কথা বলবো?’

‘ হ্যা বলো ‘

‘ আপনার আর আমার প্রাক্তন শাশুড়ি আম্মুর জন্যে আপনার মেয়ের সঙ্গে আমার সংসার শুরু হওয়ার আগেই মনে হচ্ছে শেষ হয়ে যাবে ‘

‘ একি কথা বলছো? জারার সঙ্গে কিছু হয়েছে?’

‘ না আঙ্কেল, তবে কিছু বিষয় মনে হয় আমার জানা দরকার। জারার হাসবেন্ড হিসেবে ওর ছোটবেলা সম্পর্কে জানা আমার উচিত, আপনিও নিশ্চয়ই জানেন বিয়ে নিয়ে ওর আগ্রহ ছিলো না আর তার কারণ কি ছিলো। আপনার সঙ্গে আন্টির ডিভোর্সের বিষয়টা জারা এখনও মানতে পারে না ‘

আবরারের কেনো এসব জানতে চাইছে তা আনোয়ার সাহেব কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছেন বটে…

‘ আবরার, আমার মেয়ে আমাদের বিচ্ছেদের পেছনে পুরো সত্যিটা জানেনা। আমি জানিনা ওকে কে কি বলেছে কিন্তু ও যেটা জানে সেটা সত্যি নয় ‘

‘ মানে?’

‘ ওর মায়ের সঙ্গে আমার ডিভোর্স ওই মুহূর্তে প্রয়োজন ছিলো, নাহলে ওই বয়সটায় আমার মেয়েটা আরো বেশি কষ্ট পেতো ‘

প্রথমে আনোয়ার সাহেবের কথা বুঝতে পারেনি আবরার, কিন্তু পরে বিস্তারিত শোনার পর ও বুঝলো জারা যা এতদিন জেনে এসেছে সেটা সত্যি নয়। জারার ওর বাবার প্রতি যে ক্ষোভ আছে সেটাও সঠিক নয়! সবটা জানার পর আবরার বুঝলো জারাকে আগে মানসিকভাবে স্বাভাবিক করতে হবে, জারার মনে ভালোবাসা জাগাতে হবে কারণ জীবনের এই মুহূর্তে দুটো জিনিসই প্রয়োজন। এমন একজন যাকে জারা ভালোবাসতে পারবে আর যে জারাকে ভালোবেসে ওর মনের সব অন্ধকার দূর করে দেবে

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]