#সাঝের_প্রণয়ডোর
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_০২
আজ আশিয়ান হায়া’র অনাকাঙ্ক্ষিত বাসর রাত। একটু ভুল বললাম,,বাসর রাতটা হায়া’র জন্য কাঙ্ক্ষিত হলেও আশিয়ানের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত। একটু কনফিউজড হয়ে গেলেন তো দুইজনের এই কাঙ্ক্ষিত-অনাকাঙ্ক্ষিত কথা শুনে? আচ্ছা বিষয়টা ক্লিয়ার করছি।
আজ হায়া’র বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো তার বাবার বিজনেস পার্টনারের ছেলে ও তার বড় দা’ভাইয়ের বন্ধু ফারাবির সাথে। এক বছর আগে হায়া’কে একটি ফ্যামিলি পার্টিতে দেখে ফারাবি হায়া’র প্রেমে পরে যায়। তার বাবার সাথে জাভিয়ানের বিজনেস রিলেটেড সম্পর্ক থাকায় ফারাবি যখন তার বাবা-মা’কে নিয়ে হায়া’র জন্য বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে আসে,, তখন বিয়ের কথা এগোতে বেশি সময় লাগে না।
ছেলে হিসেবে ফারাবিকে চোখ বন্ধ করে দশে দশ দেওয়া যায়। সেই ফারাবিই আজ এতবড় একটা কাজ করলো। বিয়ে করতে আসলো না হায়া’কে। ভরা বিয়ের আসরে আবারো অপমানিত হতে হলো হায়া’কে। শুনতে হলো অপয়া,, চরিত্রহীন অপবাদ গুলো।
_______________
সুন্দর পরিপাটি একটা রুমের বেডে বসে আছে হায়া। রুমটা তার ভীষণ অপছন্দের ব্যক্তিটির। বর্তমানে আশিয়ানের রুমে অবস্থান করছে হায়া। পা দু’টো ভাজ করে তার উপর হাত রেখে বসে আছে এই অপরূপ নববধূটি। অপেক্ষা করছে তার অনাকাঙ্ক্ষিত বরটির।
হায়া’র অপেক্ষার পালা বাড়িয়ে দিয়ে রাত বারোটায়ও যখন আশিয়ান আসলো না তখন হায়া বসা থেকে ঘঠে দাঁড়ায়। পাক্কা দুই ঘন্টা একই ভাবে বসে থাকতে থাকতে কোমড় লেগে এসেছে। ভারী বিয়ের বেনারসিটা দুই হাত দিয়ে উচু করে ধরে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে চলে আসে আশিয়ানের রুমের লাগোয়া বেলকনিতে। সেখানে রাখা কাউচে বসে পরে।
বিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে আজ থেকে পাঁচ বছর আগের কথা,,যখন কিনা হায়া ছিলো আর পাঁচটা চঞ্চল হরিণীর মতো দুরন্ত। বরং তাঁদের থেকেও একটু বেশি দুষ্টু,,প্রাণবন্ত। পাঁচ বছর আগের কিছু ঘটনার কারণে আজ এই নিষ্প্রাণ,,নির্জীব,,শান্ত হায়া’র জন্ম। কি হয়েছিলো পাঁচ বছর আগে জানতে চান? তাহলে চলুন শুনে আসা যাক সেই ঘটনাগুলো।
________
~অতীত ~
তালুকদার বাড়ি আর মির্জা বাড়ির একমাত্র কন্যা ও সর্বকনিষ্ঠ সন্তান হলো হায়া। সেই হিসেবে জন্মের পর থেকেই তাকে এক প্রকার মাথায় রেখে বড় করা হয়েছে। কিছু চাওয়ার আগেই তার বাবা আর ভাইয়েরা তার সামনে এনে হাজির করেছে। নানা বাড়িরও আদরের দুলালি সে।
তার এত আদর যত্ন মেনে নিতে পারে নি এই দুই বংশের জৈষ্ঠ্য সন্তান আশিয়ান। সে ছোট থেকেই সকলের প্রায়োরিটি লিস্টের উপরে থেকেছে। যার কারণে হায়া হওয়ার পর আস্তে আস্তে যখন তার আদরের সামান্য ভাগ পরতে শুরু করলো তখন সে সেটা মেনে নিতে পারলো না। তার অপর দুই ভাই জাহান-জায়িন হওয়ার পরও তার আদর আগের মতোই ছিলো। কিন্তু হায়া যেহেতু দুই পরিবারের কনিষ্ট সন্তান ছিলো তাই সকলে তাকে একটু বেশিই ভালোবাসত আর আদর করত।
এছাড়া হায়া ছিলো চঞ্চল হরিণী,,একদম তার মায়ের মতো। যেই তাকে কোলে নেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দিতো হায়া তার কোলেই ঝাপ মেরে চলে যেতো। রূপেও মাশা আল্লাহ নজরকাড়া সুন্দরী সে।
সকলের আদরের হওয়ায় সে একটু বেশিই জেদি হিসেবে বড় হয়ে উঠেছিলো। যা তার চাই সেটা তার সামনে এনে যতক্ষণ না পর্যন্ত হাজির করা হয়েছে সে কিচ্ছুটি মুখে তুলতো না। এমনিতে হায়া অহেতুক জেদ না ধরলেও তার যখন সাত বছর,, তখন আশিয়ানের একটা প্রিয় জিনিস জেদের বশে নষ্ট করে ফেলায় আশিয়ানের চোখে সে আরো খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।
হায়া’র তখন সাত বছর আর আশিয়ান ষোলো বছরের কিশোর। একদিন হায়া’রা মির্জা বাড়িতে বেড়াতে গেলে,, হায়া তার ভাই জাহান-জায়িনের সাথে খেলতে খেলতে আশিয়ানের রুমে চলে আসে। হায়া’র তখন নজরে পরে আশিয়ানের পড়ার টেবিলের কলমদানীর মধ্যে রাখা সুন্দর একটা কলমের দিকে। সে কলমটা হাতে নিয়ে আশিয়ানের খাতায় দাগাদাগী শুরু করে দেয়। আশিয়ান কোচিং থেকে ফিরে এসে এটা দেখলে প্রচন্ড রেগে যায়। এমনিতেই সে হায়া’কে দেখতে পারে না তারউপর তার ফেভারিট কলম দিয়ে তার খাতাবই দাগিয়ে লন্ডভন্ড করে ফেলেছে। আশিয়ান রেগে তাঁকে বকাবকি করে।
ছোট্ট হায়া’রও এত বকা খেয়ে প্রচন্ড রাগ হয়। সে দৌড়ে আশিয়ানের রুমের বেলকনিতে গিয়ে হাতের কলমটা ছুঁড়ে মারে বাহিরে রাস্তায়। আশিয়ান নিচে গিয়ে কলমটা নেওয়ার আগেই একটা গাড়ি কলম টার উপর দিয়ে চলে যায়। ফলস্বরূপ কলমটা ভেঙে যায়।
আশিয়ান সেদিন ভীষণ কষ্ট পায়। কলমটা তার ফেভারিট টিচার তাদের স্কুল থেকে বিদায় নেওয়ার আগে স্পেশালি তাঁকে দিয়েছিলো। ঐ টিচারটার ক্যান্সার হওয়ায় তাদের স্কুল ছাড়ার কিছুদিন পরেই মারা যান। পছন্দের শিক্ষকের শেষ স্মৃতি হিসেবে আশিয়ান কলম টাকে বেশ যত্ন করেই রাখতো। সেটাই কিনা হায়া নষ্ট করে ফেলেছিলো।
প্রচন্ড রাগে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে আশিয়ান সেইদিন প্রথমবারের মতো তার ভাইবোনদের মধ্যে হায়া’র গায়ে হাত তুলেছিলো। বেশি না তার গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরেছিলো আশিয়ান। তারপর তাকে রুম থেকে বের করে দিয়েছিলো। হায়া কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির সকলকে জানায় আশিয়ান তাঁকে মেরেছে কিন্তু কেন মেরেছে সেটা আর বলে না। হায়া’কে মারার কথা শুনে আবরার আর স্পর্শ প্রচন্ড রেগে যায়।
ছোট বড় সকলের সামনে সেদিন আবরার আশিয়ানকে প্রচন্ড বকাঝকা করে। হায়া’র কাছে সরিও চাওয়ায়। আশিয়ান পুরোটা সময় একটা টু শব্দ করেনি। হানিয়া তো জানে তার কন্যা কি করতে পারে,,তাই সে আশিয়ানকে আলাদা করে হায়া’কে মারার কারণ জিজ্ঞেস করে। আশিয়ান তখনও কিছুই বলে না। তারপর বাসায় এসে হায়া’কে চেপে ধরলে হায়া সরল মনে মা’কে সব বলে দেয়।
ব্যস! এই দফা হানিয়াও রেগে হায়া’কে একটা থাপ্পড় মারে। জাভিয়ান কিছু বলতে আসলে তাঁকেও ধমকে বসিয়ে রাখে। সন্তানদের ভালোবাসা ভালো কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কিছুই ভালো না। হানিয়া সেদিন বলে ঘোষনা করে–
—যতদিন না হায়া বুঝদার হচ্ছে,,ততদিন পর্যন্ত সে আর মির্জা বাড়িতে যাবে না।
মির্জা বাড়ির লোকেরা হানিয়ার কথায় আপত্তি জানালেও হানিয়া তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলো। তার বেশ কয়েকবছর হায়া তার নানু বাড়িতে যায় নি। মির্জা বাড়ির লোকেরা এসে তার সাথে দেখা করে গেলেও,, প্রায় ৫/৬ বছর হায়া আশিয়ানের সামনে পর্যন্ত যায় নি কথা তো দূরের কথা।
হায়া’র যখন ষোলো বছর বয়স সে অনুমতি পায় নানু বাড়ি আসার। তখনও পেতো না যদি না শয্যাশায়ী মি.মির্জা নাতনিকে দেখার আবদার না করতেন। হায়া বাবা-মা আর ভাইদের সাথে দীর্ঘ নয় বছর পর নানু বাড়িতে পা দিয়ে শুরুতেই সম্মুখীন হতে হয়েছিলো আশিয়ানের সাথে।
ঘটনাটা এমন হয়েছিলো যে,, হায়া’দের গাড়ি মির্জা বাড়িতে এসে থামলে তারা চারজনই নেমে পরে গাড়ি থেকে। জাভিয়ান চলে যায় গাড়ি পার্ক করতে। তো হানিয়া ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার জন্য পা বাড়ালে হায়া বলে উঠে সে তার বাবার সাথে যাবে। হানিয়া মানা করে না। তাদের সকলেরই জানা হায়া তার বাবার জন্য কতটা পাগল।
হানিয়া ছেলেদের নিয়ে বাসার ভেতরে চলে যায় আর হায়া বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে তার বাবার ফেরার। জাভিয়ানের একটা কল আসায় সে গাড়িতে বসেই কথা বলতে থাকে আর হায়া বাবার জন্য অপেক্ষা করতে করতে বোর হয়ে হাঁটতে হাঁটতে আশিয়ানেরদের বাগানে এসে পরে। আশিয়ান তার রুমের বেলকনি থেকে দেখে একজন অপরিচিত মেয়ে তার বাগানে প্রবেশ করেছে ফুল গাছগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছে।
আশিয়ানের শখ হলো বাগান করা। রঙ বেরঙের ফুল দ্বারা যখন বাগানটা সুড়ভিত হয়ে থাকে তখন সেখান থেকে নজর সরানো দায় হয়ে পরে যে কারো। আমাদের শখের জিনিসে কেউ আঘাত করলে বা নষ্ট করে দিতে চাইলে আমাদের সকলেরই খারাপ লাগে। আশিয়ান আবার একটু বেশিই পসেসিভ তার শখের জিনিসের প্রতি।
আশিয়ান দেখতে পায় মেয়েটা আনমনে ফুল গাছগুলো দেখতে দেখতে নিচের কয়েকটা গাছ পাড়িয়ে হালুয়া বানিয়ে দিয়েছে। আশিয়ান রেগেমেগে হনহনিয়ে সেখানে এসে উপস্থিত হয়। হায়া তখন ফুল গুলো নিজের কোমল হাত দিয়ে ছুইয়ে দিতে ব্যস্ত। আশিয়ান এসেই গগনবিদারী এক ধমক দেয় হায়া’কে। হায়া ভয়ে কেঁপে উঠে তার এমন ধমকে।
—এই অভদ্র মেয়ে! কে তুমি? আর আমার বাগানে ঢোকার সাহস পেলে কীভাবে?
হায়া ভয়ে ভয়ে পেছন ফিরে আশিয়ানের দিকে তাকায়। সুদর্শন আশিয়ানকে দেখে হায়া কয়েক পলকের জন্য নিজের পলক ফেলতে ভুলে যায়। আশিয়ানেরও কি জানি হলো। হায়া’র ভীতু মুখটা দেখে তার বাড়ন্ত রাগটা কিছুটা পরে যায়। দুই একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
— চ্যাম্প! হায়া! তোমরা দু’জন এখানে কি করছো?
জাভিয়ানের কথায় তাদের দু’জনের ধ্যাণ ভঙ্গ হয়। আশিয়ান জাভিয়ানের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করে–
—বড় বাবাই দেখো,, এই মেয়েটা আমাদের বাড়িতে ঢুকে আমার বাগান নষ্ট করে দিচ্ছে।
জাভিয়ান মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে আসলেই তার মেয়ে আশিয়ানের কয়েকটা গাছ পাড়িয়ে নষ্ট করে দিয়েছে। জাভিয়ানের তো জিভে কামড়। এতগুলো বছর পর হায়া এবাড়িতে আসলো আর এসেই কিনা আশিয়ানের শখের জিনিস নষ্ট করে ফেললো।
জাভিয়ান হায়া’কে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে। মেয়ের একহাত ধরে রেখেই আশিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে–
—চ্যাম্প তুমি ওকে চিনতে পারো নি?
আশিয়ান হায়া’র দিকে আরেকবার তাকায়। কিছুটা চেনা চেনা লাগছে। হায়া’র থেকে চোখ সরিয়ে সে জাভিয়ানের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। জাভিয়ান তার তাকানোর মানে বুঝতে পেরে বলে–
—আরে চ্যাম্প ও আমাদের হায়া।
জাভিয়ানের মুখ থেকে হায়া’র নাম শুনে আশিয়ানের কপালে কয়েকটা ভাজ পরে। মেয়েটাকে সে চিন্তে পারে নি। কারণ হায়া’র সাথে তার বেশ কয়েক বছর পর দেখা হলো। মেয়েটা এসেই তার জিনিস নষ্ট করা শুরু করে দিয়েছে। অসহ্যকর একটা!
আশিয়ান ভাবলেশহীন ভাবে বলে–
—ওহহ্।
জাভিয়ান হায়া’কে বলে–
—আম্মাজান ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে তোমার? এসেই তো ভাইয়ার শখের জিনিস নষ্ট করে দিলে। সরি বলো।
হায়া মাথা নিচু করেই মিনমিনিয়ে বলে–
—সরি ভাইয়া।
আশিয়ান গম্ভীর গলায় বলে–
—ইটস ওকে।
তারপর জাভিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে–
—বাবাই তোমরা ভেতরে যাও। আমার ভার্সিটিতে কিছু কাজ এসে পরায় আমায় যেতে হচ্ছে। চেষ্টা করবো একসাথে লাঞ্চ করার। এখন আসছি।
—ওকে চ্যাম্প।
আশিয়ান আর জাভিয়ান একটা হাগ করে। আশিয়ান জাভিয়ানকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় আঁড়চোখে হায়া’র দিকে তাকায়। তারপর তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায় নিজের ভার্সিটির উদ্দেশ্য। আর জাভিয়ান-হায়া এসে পরে বাসায়।
____________
তার পরের দিনগুলো ভালোই কাটছিলো। হায়া তখন মাঝ মধ্যেই মির্জা বাড়িতে যায়। কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আবার এসে পরত। এভাবে কেটে যায় ছয়মাস।
হায়া সবসময় চেষ্টা করতো আশিয়ানের সামনে যাতে না পরা লাগে তার। কিন্তু ভাগ্য যে তার জন্য ভিন্ন কিছু নির্ধারণ করে রেখেছিলো।
একদিন মি.মির্জা তালুকদার বাড়ির সকলকে মির্জা বাড়িতে ডাকে। অসুস্থ মির্জা সাহেবের কথা কেউ অমান্য করতে পারে না। দুপুরে সকলে একসাথে লাঞ্চ করার পর সবাই যখন ড্রয়িংরুমে একত্র হয় মির্জা সাহেবের জরুরি তলব শোনার জন্য,, তখন সে এমন একটা কথা বলে যেটা শুনে উপস্থিত সকলের হুশ উড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়।
মি.মির্জ আর মিসেস মির্জা ঠিক করেছেন হায়া আর আশিয়ানের বিয়ে দিবে। এবং এটাই তাদের জীবদ্দশায় শেষ ইচ্ছা। সকলের মাথায় হাত। মির্জা দম্পতি সকলকে বেশ ভালো করেই বুঝায় এই বিয়ের ইতিবাচক দিক গুলো। সকলে ভেবে দেখে সম্পর্কেটা নিজেদের মধ্যে হলে ভালোই হয়। আদরের মেয়েকে পরের ঘরে পাঠানোর মতো দুঃখ সহ্য করা লাগলো না আবার এই বৃদ্ধ দম্পতির শেষ ইচ্ছেও পূরণ হলে।
জাভিয়ান তার এতটুকু মেয়েকে এখনি বিয়ে দিতে অসম্মতি জানালে মি.মির্জা বলেন–
—মেয়েকে আমরা এখনি তোমাদের থেকে আলাদা করবো না জাভিয়ান। আমরাও মেয়ের বাবা-মা ছিলাম। আমরা জানি কন্যা বিদায় কতটা কষ্টের। আর আশিয়ান নিজেও তো এখনো স্টুডেন্ট। কোন ইনকাম সোর্স নেই তার যেটা দিয়ে বউকে পালবে। আমরা না হয় এখন তাদের আকদটা করে রাখলাম। হায়া বড় হোক আরেকটু আর আশিয়ানও সাবলম্বী হোক তারপর না হয় বড় একটা অনুষ্ঠান করে মেয়ে আমাদের ঘরে নিয়ে আসলাম।
আবরার আর স্পর্শের কোন আপত্তি থাকে না এই বিয়েতে। তারা ভীষণ খুশির সহিত বিষয়টা মেনে নেয়। জাভিয়ান একটু দোনামোনা করলেও পরবর্তীতে তাকে আরেকটু বুঝানো হলে সেও মেনে যায়।
বড়রা সকলেই রাজি এই বিয়েতে। কিন্তু যাদের বিয়ে তাদের থেকেই কোন মতামত নেওয়া হয় না। সকলের সম্মতি দেখে আশিয়ান আর বসে থাকতে পারে না। তড়াক করে বসা থেকে দাড়িয়ে যায়। শান্ত অথচ কঠোর গলায় বলে–
—আমার পক্ষে এই বিয়ে করা সম্ভব নয়।
_____________________
বর্তমান~
আশিয়ান রুমে আসার সুযোগ পায় রাত একটায়। একটা জরুরি কাজ এসে পরায় বউকে বাসায় নামিয়ে দিয়েই তাকে বাহিরে ছুটতে হয়েছিলো। কাজটা শেষ করে মাত্রই বাসায় আসলো। রুমে ঢুকে বেড খালি দেখতে পেয়ে বুকটা ধুক করে উঠে। বেড থেকে চোখ সরিয়ে ওয়াশরুমের দিকে তাকালে দেখতে পায় ওয়াশরুমের লাইটও অফ। তাহলে তার ননীর পুতুল গেলো কোথায়? পালিয়ে যায় নি তো আবার?
শব্দসংখ্যা~১৭৭০
~চলবে?