#সাঝের_প্রণয়ডোর
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_০৯
আশিয়ান মা’কে শান্ত করার জন্য বলে–
—তুমি চিন্তা করো না আম্মু। দাড়াও আমি দেখছি।
আশিয়ান তড়িঘড়ি করে তার ড্রাইভারকে কল লাগায়। তার থেকে জানতে পারে হায়া গাড়িতে করে বাসায় আসে নি। রিকশা করে বাসায় আসার জন্য রওনা করেছিলো। এটা শুনে আশিয়ান আরো রেগে যায়। ড্রাইভার তাকে এই বিষয়ে কেন জানালো না তার বকাঝকা করে। তারপর ড্রাইভারের কল কেটে হায়া’কে কল লাগাবে তখনই একটা আননোন নাম্বার থেকে তার ফোনে কল আসে।
আশিয়ান কলটা রিসিভ করে যা শুনতে পায় তা শুনে তার হাত-পা কাঁপতে শুরু করে। আশিয়ান কাঁপা কাঁপা গলায় বলে–
—আমি আসছি।
কথাটা বলে আশিয়ান ফোনটা কেটে তড়িঘড়ি করে টি-শার্ট গায়ে দিয়ে বাহিরে যাওয়ার জন্য ছুট লাগায়। তখন স্পর্শ তার পেছন ডেকে জিজ্ঞেস করে–
—কি হয়েছো আশিয়ান? কে ফোন করেছিলো? আর কি বললো?
আশিয়ান তার প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়েই ওয়ালেট আর ফোন নিয়ে ছুট লাগায়। স্পর্শ তার পিছু ডাকলেও শুনে না।
________________
অন্যদিকে হানিয়া স্পর্শর থেকে মেয়ের বাড়ি না ফেরার কথা শুনে চিন্তায় পরে যায়। হানিয়া জাভিয়ানের কাছে এসে চিন্তিত হয়ে বলে–
—এই শুনছেন হায়া’র বাবা।
জাভিয়ান ল্যাপটপে আঙ্গুল চালাতে চালাতে বলে–
—হুম বলো শুনছি।
—হায়া নাকি এখনো বাসায় ফিরেনি।
—সে এখন একা নেই হানি। তার সাথে তার হাসবেন্ড আছে,, তুমি আশিয়ানের উপর ভরসা করতে পারছো না এখনো?
—আশিয়ান বাসায় একা এসেছে। আশিয়ান নাকি হায়া’কে বিকেলে হায়া’কে ড্রাইভারের সাথে বাসায় পাঠিয়ে দেয় আর ও ভাইয়ার অফিসে চলে যায়। কিন্তু বাসায় এসে দেখে হায়া আসেনি। আপু আমায় ফোন করেছিলো তালুকদার বাড়িতে হায়া এসেছে নাকি জানতে।
—কিহহহহহ?
—কি বললে আম্মু।
হানিয়া পেছন ঘুরে দেখে তার ছোট ছেলে জায়িন দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখ অস্বাভাবিক রকমের ভীত। জায়িন দ্রুত পদে বাবা-মায়ের রুমে ঢুকে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকে–
—আম্মু কি বললে? পুতুল এখনো বাসায় ফিরেনি মানে? কোথায় গেলো তাহলে?
—জানি না রে বাবা। তোর সোনা’মা ফোন দিয়ে আমায় এইটুকুই বললো।
জায়িন জাভিয়ানের কাছে এসেছিলো অফিসের একটা প্রজেক্টের বিষয়ে কথা বলতে। রুমে প্রবেশের আগে দরজায় দাঁড়িয়ে সে হানিয়ার কথাগুলো শুনে ফেলে। কথাটা শুনেই অস্থির হয়ে যায়। দুই ভাইয়ের কলিজার টুকরো হায়া। জায়িন দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে হায়া’কে কল লাগাতে থাকে। কিন্তু হায়া ফোন রিসিভ করে না। বাজতে বাজতে কেটে যাচ্ছে। হায়া’কে ফোনে না পেয়ে সে আশিয়ানের নাম্বারে কল লাগায়। আশিয়ানের ফোনে কল ঢোকার সাথে সাথে অপর পাশ থেকে এক নারীকণ্ঠ বলছে–
—আপনি যেই নাম্বারটিতে কল দিয়েছেন তার এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে। কিছুক্ষণ পর আবার করুন। ধন্যবাদ।
জায়িন লাগাতার কয়েকবার কল করে আশিয়ানের নাম্বারে কিন্তু প্রতিবারই তাকে ব্যস্ত দেখাচ্ছে। জায়িন পুনরায় বাবা-মায়ের রুমে এসে পরে। তারপর তাদের দু’জনকে বলে–
—বাবা, আম্মু পুতুলের নাম্বারে ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু পুতুল ফোন ধরছে না। আশিয়ান ভাইয়ের নাম্বারেও কল দিয়েছিলাম তার নাম্বারও ব্যস্ত বলছে।
হানিয়া এবার কেঁদে দেয় মেয়ের টেনশনে। এমনিতেই মেয়েকে আজ পর্যন্ত নিজের কাছ ছাড়া করেনি কখনো। এই এক সপ্তাহ তারা যে কিভাবে মেয়েকে ছাড়া থেকেছে সেটা শুধু তারাই জানে। জাভিয়ান তো প্রতিদিন রাতে মেয়ের ঘরে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে তারপর রুমে এসে শোয়।
জাভিয়ান হানিয়াকে বলে হায়া’র সব ফ্রেন্ডকে কল করতে। আর সে জায়িনের সাথে বের হয়ে যায় হায়া’কে খুঁজতে। হানিয়ার কান্নার আওয়াজ পেয়ে বৃদ্ধ রোজি বেগম নিজের রুম ছেড়ে বের হয়ে তাদের রুমে আসে বহু কষ্ট করে। বয়স হয়েছে তার অনেক,, এছাড়া বিভিন্ন রোগবালাইয়ের কারণে এখন তেমন হাঁটা চলা করতে পারেন না। আদিব মাহবুব মারা যাওয়ার পর ভদ্রমহিলা যেন একটু তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যাচ্ছেন।
রোজি বেগম এসে হানিয়ার পাশে বসে তাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলো হানিয়া তাকে হায়ার নিখোঁজের কথা জানান। এবং কান্না করতে থাকে। রোজি বেগম তাঁকে শান্ত করাতে থাকেন।
_______________
রাত বারোটার দিকে জাহান জাভিয়ান আর হানিয়াকে ফোন দিয়ে বলে মির্জা বাড়িতে যেতে, এবং হায়া তার সাথেই আছে।হায়া’কে পাওয়া গিয়েছে শুনে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তারপর জাভিয়ান হানিয়াকে বাসা থেকে পিক করে মির্জা বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়। রাত দশটা থেকে বারোটা পর্যন্ত জাভিয়ান আর জায়িন হায়া’কে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজছিলো।
________________
আশিয়ানরা বাসায় ফিরে রাত সাড়ে বারোটায়। আবরার-স্পর্শ,, জাভিয়ান-হানিয়া আর জায়িন দেখতে পেলো আশিয়ান কোলে করে হায়া’কে নিয়ে আসছে। হায়া’র ডান পায়ে আর মাথায় ব্যান্ডেজ করা। তারা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হায়া’র কাছে এসে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে–
—হায়া কি হয়েছে মা? এমন ব্যথা পেলি কিভাবে?
আশিয়ান ক্লান্ত গলায় বলে–
—একটু বসতে জায়গা দাও তারপর বলছি।
সকলে আশিয়ানের কথা শুনে সরে গিয়ে তাঁদের বসার জায়গা দেয়। আশিয়ান আস্তে করে হায়া’কে একটা সোফায় শুইয়ে দিয়ে তার ব্যান্ডেজ করা পায়ের নিচে একটা কুশন দেয়। এবং নিজে অন্য একটা সোফায় গিয়ে ধপ করে বসে পরে।
হানিয়া তাড়াতাড়ি করে হায়া’র কাছে এসে তার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়। আলতো হাতে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
জাভিয়ান মেয়ের এমন বেহাল অবস্থা দেখে কিছুটা রেগে যায়। হায়া’র সব দায়িত্ব এখন আশিয়ানের তাহলে আজ হায়া এতটা আঘাত পেলো কি করে? কই তার কাছে যতদিন ছিলো কখনো তো এমন চোট পায়নি তার মেয়ে। সে গম্ভীর গলায় আশিয়ানকে জিজ্ঞেস করে–
— আশিয়ান এখন কি বলবে হায়া এতটা চোট পেলো কি করে? যেখানে তার সব দায়িত্ব আমি তোমায় দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতাম আজ তুমি সেই দায়িত্বের অবহেলা করে আমার স্বস্তির নিঃশ্বাসে জায়গায় চিন্তা ও অস্থিরতা ঢেলে দিলে। তুমি তো এতটা দায়িত্বহীন ছেলে না আমার জানা মতে।
আশিয়ান শ্বশুরের এমন গম্ভীর গলায় শুনে বুঝতে পারে বেশ রেগে গেছে তার ফুফারূপী শ্বশুর। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করে–
—আজ ভার্সিটিতে ও আর ওর ফ্রেন্ড ক্লাসে মনোযোগ না দিয়ে গল্প করছিলো। পড়া ধরলে পারে নি এরজন্য বকা দিয়েছিলাম। তোমার আদরের দুলালি মেয়ের তো আবার বেশি অভিমান। ভার্সিটি ছুটি হওয়ার পর আমি আমার ড্রাইভার দিয়ে ওকে বাসায় পাঠিয়ে দেই। সে কিছুটা পথ অতিক্রম করে গাড়ি থেকে নেমে ওর ফ্রেন্ডকে নিয়ে রিকশা উঠে। টিএসসিতে আজ আন্দোলন ছিলো। সেখানের ঝামেলায় ওদের রিকশা আটকে পরে। কয়েকজন মারামারি করতে করতে ওদের রিকশায় এসে ধাক্কা দিলে রিকশা উল্টে পরে গিয়ে এই চোটগুলো পায়। ওর ফ্রেন্ড ওর থেকে বেশি ব্যথা পেয়েছে। সকালে ভার্সিটিতে যাওয়ার আগেও আমার সাথে যেতে বলেছিলাম ওকে,,কিন্তু তখনও আমার কথা না শুনে একা-একা চলে গিয়েছিলো। এখন বলো এসব আমার দায়িত্বহীনতার জন্য হয়েছে নাকি ওর অযাচিত অভিমানের কারণে?
সকলে একধ্যাণে আশিয়ানের কথা শুনে। তার সব কথা শুনে একটা বেকুবও বলে দিতে পারবে আজকের এতসব পেরেশানির কারণ হায়া নিজেই। এর জন্য আশিয়ানকে দোষ দিলে তার প্রতি অন্যায় করা হবে।
জাভিয়ানের এবার আশিয়ানের রাগটা সরে গিয়ে সেটা বর্তায় হায়া’র উপর। হায়া মায়ের কোলে মাথা দিয়ে চোরা চোখে সকলের মুখভঙ্গি দেখছে। সকলেই যে তার উপর অসন্তুষ্ট সেটা হায়া বেশ বুঝতে পারছে।
জাভিয়ান মেয়ের দিকে শান্ত চাহনি নিয়ে তাকায়। হায়া বাবার এমন চাহনি দেখে ভয়ে কয়েকটা শুঁকনো ঢোক গিলে। মিনমিনিয়ে বলে–
—আর কখনো এমনটা হবে না বাবা।
—যদি হয়ও সেদিন তাহলে আমার হাতও নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। বেশি বড় হয়ে যাওনি যে তোমাদের শাসন করতে পারবো না। আমি যাতে এমন অবাধ্যতার কথা আর কখনো না শুনি। মনে থাকবে?
শেষের কথাটা অনেকটা ধমকের সুরেই বলে জাভিয়ান। হায়া ভয়ে ভয়ে বলে–
—হ্যা থাকবে।
এদিকে হায়া’কে এমন বকাঝকা খেতে দেখে আশিয়ান মনে মনে হেঁসে খুন। হায়া অবশেষে কারো কাছে জব্দ হয়েছে দেখে তার এই খুশি। হায়া আড়চোখে আশিয়ানের দিকে তাকালে তার হাসি হাসি মুখটা দেখতে পেয়ে তেলেবেগুনে জ্বলে যায়। আশিয়ান তার তাকানো দেখে একটা চোখ টিপ দিয়ে আবারও মিটমিটিয়ে হাসতে থাকে।
হায়া-আশিয়ানের চোখে চোখে যুদ্ধের মাঝেই জাভিয়ানের একটা কথায় আশিয়ানের মাথায় বাজ পড়ে। আশিয়ান জাভিয়ানের কথায় ধ্যাণ দিলে শুনতে পায় জাভিয়ান আবরারকে বলছে–
—ভাই মেয়েটাকে কয়েকদিনের জন্য আমাদের সাথে নিয়ে যাই। ওকে এমন অবস্থায় রেখে আমরা দু’জন চিন্তায় পাগল হয়ে যাবো। জানেনই তো সব।
আবরার জানে জাভিয়ান হানিয়ার চেয়ে বেশি পাগল মেয়ের জন্য। তাই সে আর অমত করে না। সম্মতি দিয়ে দেয় হায়া’কে নিয়ে যাওয়ার। এদিকে বাবা আর শ্বশুড়ের আলোচনা শুনে আশিয়ানের অস্থির হয়ে যায়। নিয়ে যাবে মানে? তার বউকে নিয়ে কেন যাবে? আশিয়ান তাহলে বউ ছাড়া কাঙ্গাল হয়ে যাবে না? মেয়েটা এই কয়েকদিনে তার আসক্তি হয়ে উঠেছে।
আশিয়ান তড়াক করে বসা থেকে উঠে বলে–
—হায়া কোথাও যাবে না।
আবরার তাকে ধমকে বলে–
—কেনো যাবে না? আমি যাওয়ার পারমিশন দিয়ে দিয়েছি। তুমি আর ঝামেলা করো না।
—কেনো যাবে মানে? ও এখন বিবাহিত, আমার পারমিশন না নিয়ে আমার স্ত্রী কোথাও যাবে না।
আশিয়ানের অস্থিরতাই বলে দিচ্ছে সে হায়া’র প্রতি কতটা আসক্ত হয়ে পেরেছে। জাভিয়ান আশিয়ানের কাছে এসে বলে–
—কয়েকটা দিনেরই তো ব্যাপার। লাগলে তুমিও চলো আমাদের সাথে।
বিয়ের পরেরদিন নাইওরের জন্য তিনদিন থেকে এসেছে তারা ঐ বাড়িতে। একসময় নানাবাড়ি হলেও এখন তো শ্বশুর বাড়ি, আর কয়েকদিন পরপর শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে ঘাটি গাড়া আশিয়ানের ব্যক্তিত্বের বিরোধী।
আশিয়ান জাভিয়ানের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলে–
—আপাতত এই কথাটা রাখতে পারছি না বাবাই। এর চেয়ে এক কাজ করা যায়। তুমি আর মাম্মাম এখানে থেকো যাও কতদিন।
—এটা কি করে হয় আশু?
—কেন হয় না বাবাই। প্লিজ তোমরা থেকে যাও। হায়া’র ভালো লাগবে।
হানিয়া বলে উঠে–
—এটা হয় না বাবা। ওবাড়িতে তোমার নানাভাই আর ছোটনানু একা হয়ে যাবে যে। জাহান-জায়িন সারাদিন হসপিটাল আর অফিসে ব্যস্ত থাকে।
—তাহলে মাম্মাম তাদেরও এবাড়িতে নিয়ে আসি। অনেকদিন তো হলো নানা ভাই আর ছোটনানু আসে না।
সকলে আশিয়ানের এমন বাচ্চামো দেখে অবাকই হয়। বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই আশিয়ান হায়া’র জন্য এতটা পাগল হয়ে যাবে তারা ভাবতেও পারে নি। হায়াও কেন জানি আশিয়ানের কথায় তাল মেলায়। অনেক তর্কাতর্কি আর কথাবার্তা শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মির্জা বাড়ির সকলে আগামী কয়েকদিন এই বাড়িতে থাকছে। হায়া,, আবরার-স্পর্শ ভীষণ খুশি হয় এমন সিদ্ধান্তে।
আজ রাতের জন্য জায়িন চলে যায় নিজেদের বাসায়। কাল সকালে সে তার দাদাভাই আর ছোটদাদীকে নিয়ে এই বাসায় এসে পরবে। হায়া’কে রুমে যাওয়ার জন্য শোয়া থেকে উঠে বসলে আশিয়ান হুট করে তাকে কোলে নিয়ে হাঁটা শুরু করে।হায়া তার এমন কাজে থতমত খেয়ে যায়। ড্রয়িংরুমে তখনও তার মা আর শ্বাশুড়ি বসে আছে। তার বাবা আর শ্বশুরমশাই জায়িনকে বাহির পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গিয়েছে।
মা-শ্বাশুড়ির সামনে এমন করে কোলে তোলায় হায়া ভীষণ লজ্জা পায়। সে তার হালকা ধারালো নখ দিয়ে আশিয়ানের কাঁধ খামচে ধরে রাগে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে–
—নির্লজ্জ,, অসভ্য, বেহায়া লোক। মা-শ্বাশুড়ির সামনে এইভাবে কেউ কোলে তুলে? এই আপনি এত লজ্জাহীন হলেও কি করে? বিদেশে গিয়ে কি সব লজ্জা কেজি দরে বিক্রি করে দিয়েছেন?
এদিকে হায়া’র নখের আঘাতে আশিয়ানের কাঁধ জ্বলে উঠে। সে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে মুখ বন্ধ করে হেঁটে চলেছে। রুমে এসে আশিয়ান হায়া’কে বেডে না রেখে সোজা চলে যায় বেলকনিতে। আশিয়ানের রুমের বেলকনিতে কোন গ্রিল নেই।অর্ধেক রেলিং আর বাকি অর্ধেক খোলা। আশিয়ান হায়া’কে কোলে করে রেলিংয়ের বাহিরে নিয়ে যায়। তারপর হায়া’র দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বাঁকা হেঁসে বলে–
—আমায় যে এত জ্বালাও, একটা কথাও শুনো না এর শাস্তি হিসেবে এখন এখান থেকে ফেলে কোমড় ভেঙে দেই? তারপর সারাজীবন আমার কোলে চড়ে সব জায়গায় ঘুরতে হবে। ব্যাপার টা জোস না?
হায়া আশিয়ানের এমন কাণ্ড দেখে ভয়ে তার কাঁধ শক্ত করে চেপে ধরে সেখানে মুখ লুকিয়ে নিয়ে কাঁপতে থাকে। হায়া’র অ্যাক্রোফোবিয়া অর্থাৎ উচ্চতায় ভীতি আছে। আশিয়ান এটা জানে না। সে এমনিতেই মজা করার জন্য কাজটা করেছে যেমনটা সে আর হায়া প্রতিবার করে। সে হায়া’কে জ্বালানোর জন্য একটা খোঁচা দেয়, ব্যস হায়া তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে তাকে তিনটা খোঁচা,, দুইটা ঘুষি আর একটা জোরদার চিমটি কাটবে। এতে আশিয়ান ব্যথা পেলেও বিষয়টাকে ভীষণ ইনজয় করে।
আশিয়ান নিজের হাতের বাঁধন একটু হালকা করে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বলে–
—দেই ফেলে দেই?
হায়া আগের থেকেও শক্ত করে আশিয়ানের কাঁধ চেপে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে–
—এমনটা করবেন নাআআআ প্লিজ। আ..আমি আপনার সব কথা শুনবো। আমায় এখান থেকে নিয়ে যান, আমার ভয় করছে।
আশিয়ান অনুভব করে তার কাঁধ ভিজে উঠছে আর হায়া নিজেও কিছুটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। মেয়েটা কি বেশি ভয় পেয়ে গেলো যার কারণে কাঁদছে? আশিয়ান তার হাতের বাঁধন শক্ত করে হায়া’কে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে রুমে নিয়ে আসে। রুমে এসে বেডে শুইয়ে দিতে চাইলেও হায়া তার কাঁধ ছাড়ে না। শক্ত করে ধরে রাখে।
আশিয়ান বেডে বসে হায়া’কে নিজের কোলে বসিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। তারপর তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে–
—হায়া,, বউ কি হয়েছে? এত ভয় পাচ্ছো কেন? আমি কি তোমায় সত্যি সত্যি ফেলতাম নাকি? আমি তো মজা করছিলাম।
হায়া তখনও কাঁপতে কাঁপতে ফুপাচ্ছে। আশিয়ান কিছুক্ষণ সময় নিয়ে হায়া’র ভয় দূর করে। তারপর তাঁকে বেডের হার্ডবোর্ডের সাথে আধশোয়া করে শুইয়ে দিয়ে তার মাথার আধখোলা হিজাব খুলে দিতে থাকে। হায়া এক ধ্যাণে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা তার সাথে একদম বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করে আবার হায়া’র একটু কিছু হলে চিৎকার চেঁচামেচি করে সব মাথায় তুলে ফেলে।
হায়া’র মনে পরে যায় কয়েকঘন্টা আগে হসপিটালে আশিয়ানের করা পাগলামিগুলোর কথা। আশিয়ান হসপিটালে গিয়ে হায়া’কে আহত অবস্থায় দেখতে পেয়ে কেমন পাগলের মতো করছিলো। ডাক্তার-নার্স সকলকে ধমকের উপর রাখ ছিলো যাতে তারা হায়া’কে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দেয়। হায়া’র ব্যথায় রাতে জ্বর আসতে পারে বলে একজন নার্স ডাক্তারের নির্দেশ মোতাবেক তাকে ব্যথা উপশম ইনজেকশন দিতে আসলে তখনও তাঁকে একপ্রকার হুমকি দিয়ে আশিয়ান বলে–
—ও যাতে ব্যথা না পায় এমন ভাবে দিবেন। নাহলে আপনার নামে কমপ্লেইন করবো হসপিটাল অথোরিটির কাছে।
তারপর হায়া’র কাছে এসে তাঁকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে আদুরে গলায় বলে–
—অল্প একটু ব্যথা পাবে সোনা। একদম পিপড়া কামড়ানোর মতো। খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। ভয় পাবে না হ্যা। আর ব্যথা পেলে আমায় বলবে,, আমি উনার (নার্সকে দেখিয়ে বলে) নামে কমপ্লেইন করবো।
আশিয়ান এমনভাবে কথাগুলো বলে যেন হায়া পাঁচ বছরের ছোট বাচ্চা। নার্সটি আশিয়ানের এমন কাণ্ডে হেঁসে দেয়। নার্সের হাসি দেখে হায়া লজ্জায় পরে গিয়েছিলো তখন।
হায়া ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে দেখে আশিয়ান তার হিজাব খুলে দিয়ে তার মুখহাত ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিয়েছে। আশিয়ান কাবার্ড থেকে হায়া’র চেঞ্জ করার জন্য একটা লেডিস ফতুয়া আর ধুতি সালওয়ার নেয়। তারপর হায়া’র কাছে এসে বলে–
—একা চেঞ্জ করতে পারবে নাকি আম্মু বা মাম্মামকে ডেকে দিবো।
হায়া সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয়–
—একা পারবো।
—সিউর?
—হুম।
আশিয়ান জামাকাপড় গুলো ওয়াশরুমে রেখে আসে। তারপর হায়া’কে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে রেখে আসে।
শব্দসংখ্যা~২১২০
চলবে?
ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং মাই লাভিং রিডার্স ]