সাঝের প্রণয়ডোর পর্ব-১৯+২০

0
3

#সাঝের_প্রণয়ডোর
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_১৯

—এখানে কি হচ্ছে?

পেছন থেকে একটা পুরুষালী গলার প্রশ্ন শুনে হায়া’কে পাহারা দেওয়া লোকটা সেদিকে তাকায়। লোকটির পেছন ফেরার সুযোগ নিয়ে হায়া তাড়াতাড়ি করে কলটি কেটে দিয়ে ফোনটা পুনরায় পকেটে পুড়ে নেয়। বুকটা তার এখনও ধুকপুক করছে। একটুর জন্য ধরা পরে যায় নি।

লোকটি শরীফকে দেখতে পেয়ে বলে–

—ওস্তাদ হেয় বাথরুমে আইছিলো, মুখহাত ধুইতে দেরি হওয়ায় আমি তার ডাকতাছিলাম।

শরীফ লোকটির ঘাড়ের উপর দিয়ে উকি দিয়ে হায়া’র দিকে তাকায়। প্রথম দেখাতেই তার হায়া’কে মনে ধরে গিয়েছিলো। তাকে হয়ত শরীফ নিজের বিছানাতেও নিয়ে নিতো এতক্ষণে যদি না আশিয়ান হায়া’র মিথ্যে প্রেগন্যান্সির কথা বলতো। তাদের লিডার শুরু থেকে বলে দিয়েছে, কোন গর্ভবতী নারী আর শিশুর গায়ে কখনো নোংরা হাত যাতে তাদের দলের কেউ না দেয়। শরীফ সবসময় তার লিডারের অনুগত্য হলেও আজ হায়া’র চোখ ধাঁধানো রূপ দেখে তার শয়তান মন তাদেট লিডারের কথা অমান্য করতে চাইছে।

শরীফ লোকটিকে বলে–

—তুই যা আমি দেখছি।

—কিন্তু ওস্তাদ…….

শরীফ চোখ গরম করে জঘন্য একটা গালি দিয়ে বলে–

—আমার কথার উপর কথা বললে জানিস না আমি কি করতে পারি? মজনু’র কথা ভুলে গেছোস?

মজনু তাদের দলেরই একজন ছিলো। কয়েকদিন আগে শরীফের কথা না শোনায় সে চাল খাটিয়ে লোকটিকে মেরে ফেলেছে। মজনু’র পরিণতির কথা মনে করে হায়া’কে পাহারা দেওয়া লোকটি ভয় পেয়ে যায়। সে ভয়ে ভয়ে সেখান থেকে চলে যায় আশিয়ানকে যেই রুমে রাখা হয়েছিলো সেটায়।

আশিয়ান দূর থেকে সবটাই খেয়াল করে। হায়া’কে পাহারা দেওয়া লোকটা তাকে রেখে একাই চলে এসেছে দেখে আশিয়ান লোকটিকে প্রশ্ন করে–

—আপনি ওকে রেখে চলে আসলেন কেনো?

লোকটি ভীষণ রুক্ষ ও রাগান্বিত গলায় বলে–

—আপনারে কওয়া লাগবো ক্যা রাইখা আইছি। আপনার বউ কি ছোড খুকি। আইয়া পরবো ঠিক সময়ে। যান নিজের জায়গায় গিয়া বহেন।

—জায়গায় গিয়ে বসবো মানে? আমার ওয়াইফ যে অসুস্থ দেখেন নি আপনি? আপনার যদি দাঁড়িয়ে থাকতে এতই সমস্যা হচ্ছিল তাহলে আমায় যেতে দিতেন, আপনি আমার বউকে অন্য একজনের কাছে রেখে আসলেন কেনো?

আশিয়ানও পাল্টা রাগ দেখিয়ে হালকা চিল্লিয়ে কথাগুলো বলে লোকটিকে। লোকটি আশিয়ানের কলার চেপে ধরে বলে–

—ঐ শালা গলার উঁচা কইরা কথা কস কার লগে? বেশি লটরপটর করলে গলার আওয়াজ জনমের লেগা বন্ধ কইরা দিমু।

আশিয়ান একবার লোকটির হাতের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার লোকটির মুখের দিকে তাকাচ্ছে। মনে মনে ভাবছে–

—হায়া যদি আজ না থাকতো একে দেখিয়ে দিতাম কার কলারে হাত দিয়েছে সে।

তাদের বাকবিতন্ডার মাঝেই দূর থেকে মেয়েলি চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পায় আশিয়ান। মেয়েটি আর কেউ না বরং তার আদরের পুতুলবউয়ের গলা।

—আশিয়ানননননননননন।

সে চিৎকারে মিশে ছিল এক অসহনীয় যন্ত্রণা, এক অনির্বচনীয় আর্তনাদ। করুণ এই চিৎকার যেন নিস্তব্ধ আকাশ কাঁপিয়ে তুলেছিল, বাতাস থমকে দাঁড়িয়েছিল তার বেদনার ভারে।

_________________________

মেয়ের অশ্রুসিক্ত গলা শুনে জাভিয়ান বিচলিত হয়ে পড়ে। কি রেখে কি করবে সে বুঝে উঠতে পারে না তাই সে একহাত দিয়ে চুল খামচে ধরে বেডে বসে পড়ে। হানিয়া ওয়াশরুম থেকে অজু করে বের হয়ে দেখে জাভিয়ান মাথার চুল খামচে ধরে বসে আছে। সে তটস্থ পায়ে তার কাছে এসে অস্থির কণ্ঠে সুধায়–

—এই আপনার কি হলো আবার? এমন করে চুল খামচে ধরেছেন কেনো?

হানিয়া কথা বলতে বলতে নিজেই জাভিয়ানের মাথা থেকে তার হাতটি ছাড়িয়ে নেয়। জাভিয়ান নিজেকে সামলাতে না পেরে হানিয়াকে ঝাপটে ধরে তার পেটে মুখ গুঁজে নিজের অশ্রু ছেড়ে দেয়। মিসেস তালুকদার মারা গিয়েছেন বছর চারেক আগে, সেবারই জাভিয়ান লাস্ট কেঁদেছিলো তারপর আজ কাঁদছে।

হানিয়া প্রথমে ভাবে হয়ত মেয়ের টেনশনে কাঁদছে, তাই হানিয়া তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে–

—কাঁদবেন না হায়া’র পাপা। জাহান কি বললো শুনলেন না? আমাদের মেয়েকে সহিসালামত ফিরিয়ে আনবে আমাদের ছেলেরা। আপনি শান্ত হোন প্লিজ। এভাবে করলে তো আপনার শরীর খারাপ করবে আবারও।

জাভিয়ান সেই অবস্থাতেই বলে–

—হানি আমার মেয়ে কষ্টে আছে। তা…তাকে নাকি বাজে কথা বলা হয়েছে…. আম…আমার মেয়ে কাঁদছিলো হানিয়া।

জাভিয়ানের কাছে এহেন কথা শুনে হানিয়া বেশ অবাক হয়ে যায়। সে জাভিয়ানকে জিজ্ঞেস করে–

—আপনি কিভাবে জানলেন এসব?

—আমায় ফোন দিয়েছিলো হায়া।

তারপর জাভিয়ান হানিয়াকে সবটা খুলে বলে। হানিয়া হায়া’র কথা শুনে নিজেও বিচলিত হয়ে পরতে নিয়েও হয় না। কারণ সে নিজেও যদি জাভিয়ানের সাথে বিচলিত হয়ে পড়ে তাহলে ব্যাপারটা গোঁজামিল হয়ে যাবে। তাছাড়া সেও যদি ভেঙে পড়ে তাহলে জাভিয়ানকে সামলাবে কে?

হানিয়া জাভিয়ানকে বলে–

—এজন্য আপনি কাঁদছেন? আরে বোকা লোক, আপনি কান্না না করে হায়া’র যেই নাম্বার থেকে আপনাকে কল দিয়েছে সেটা পুলিশকে দিলে তারা এতক্ষণে হায়া’দের লোকেশন ট্রেস করে ফেলতো। তখন শুনেন নি, পুলিশ’রা আশিয়ানের নাম্বার বন্ধ থাকার কারণে ওদের লাস্ট লোকেশন ট্রেস করতে পারলেও, এক্স্যাক্ট লোকেশন ট্রেস করতে পারছিলো না। এখন যেহেতু আরেক নাম্বার খোলা আছে সেটা দিয়ে ওদের এক্স্যাক্ট লোকেশন ট্রেস করা কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার হবে।

জাভিয়ান নিজের কান্না থামিয়ে হানিয়া’র কথাগুলো শুনে। আসলেই তো। হানিয়া যা বলেছে তা ১০০% সত্য। জাভিয়ান নিজের চোখের পানি মুছে নেয় ঝটপট করে। তারপর ফোনটা নিয়ে তাড়াতাড়ি করে জাহানকে ফোন লাগায়। সে জাহানকে হায়া’র কল করার বিষয় জানায়। জাহান তার পুলিশ বন্ধুকে তৎক্ষনাৎ বিষয়টা সম্পর্কে অবগত করে।

জাভিয়ান কথা বলা শেষ করে চলে যায় অজু করতে। ওয়াক্ত প্রায় শেষের পথে। জাভিয়ান অজু করে এসে দেখে হানিয়া তার জন্য জায়নামাজ বিছিয়ে অপেক্ষা করছে। জাভিয়ান আসতেই হানিয়া তার হাত-মুখ মুছিয়ে দিয়ে দু’জনে নামাজে দাঁড়ায়। মোনাজাতে তারা নিজেদের সন্তানের সুস্থতা আর নিরাপত্তার জন্য অশ্রু ঝরাতে ভুলে না।

______________________

হায়া দাঁত দিয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তা তো হয়ই না বরং কান্নারা যেন আরো কঠোর ভাবে বের হয়ে আসতে চায়। হায়া হাত বাড়িয়ে আশিয়ানের ঠোঁটের কাছের রক্ত মুছিয়ে দেয়। চোখ আবার ভরে উঠে তার।

রক্ত মুছানো শেষ হলে হায়া দু’হাত দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে আশিয়ানকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মুখ গুঁজে ফুপাতে থাকে। আশিয়ান তার মাথায় আর পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত করতে থাকে। আশিয়ানের উপরে শান্ত দেখা গেলেও ভেতরে ভেতরে সে বিধ্বংসী রাগে ফেটে পরছে। কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পরতেই তার ভেতরটা আবারো কেঁপে উঠে ক্রোধে।

__________________

কিছুসময় পূর্বে~

আশিয়ান হায়া’র এমন রুহ কাঁপানো চিৎকার শুনে নিজেকে আটকে রাখতে পারে না। সে দৌড়ে কলপাড়ের দিকে যেতে চাইলে একটা গুণ্ডা তাকে আঁটকে দেয়। আশিয়ান তাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে কলাপাড়ের দিকে ছুট লাগায়।

কলপাড়ে ঢোকার আগেই একটা নারী কায়া’র সাথে তার ধাক্কা লাগে। আশিয়ান বুঝতে পারে এটা তার ব্যক্তিগত নারীটি ছাড়া আর কেউ না। হায়া আশিয়ানের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নিলে আশিয়ান হাত বাড়িয়ে তাকে নিজের বুকে নিয়ে আসে। তারপর চোখ উঠিয়ে সামনে দিকে তাকালে দেখতে পায় শরীফের গলায় হায়া’র ওড়না।

আশিয়ানের বুঝতে বাকি থাকে না কেন হায়া’র ওড়না শরীফের গলায়। সে হায়া’কে একপাশে দাঁড় করিয়ে শরীফের কাছে গিয়ে তাঁকে উড়াধুড়া পিটাতে শুরু করে। ততক্ষণে আগের দু’টো লোকও এসে আশিয়ানকে আটকানোর চেষ্টা করে। যখন তারা দেখে তারা আশিয়ানকে আটকাতে পারছে না তখন তারা দু’জন আরো দু’জনকে ডেকে নিয়ে এসে মারতে থাকে।

একজন লোক পেছন থেকে আশিয়ানের কাঁধে আঘাত করায় সে নিজের খেই হারিয়ে ফেলে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে নিচে। এরই মধ্যে শরীফ উঠে সেও লোকগুলোর সাথে আশিয়ানকে মারতে শুরু করে। শরীফ আশিয়ানকে মারতে মারতে বলে–

—কুত্তার বা** আমার গায়ে হাত দিলি তুই! আজই তোর শেষদিন। এই বল্টু যা তো রাম দা ডা নিয়া আয়। শালারে এহনি জবো দিমু।

বল্টু নামের লোকটি শরীফের কথা শুনে কাজে লেগে পরে। অন্যদিকে হায়া শরিফের মুখে এমন কথা শুনে আরো ভয় পেয়ে যায়। সে ছুটে গিয়ে শরীফের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে–

—প্লিজ উনাকে এবারের মতো মাফ করে দেন। কিছু করবেন না উনাকে। আমি আপনার পায়ে পরছি, প্লিজ ছেড়ে দেন উনাকে।

শরীফ হায়া’র চুলের মুঠি ধরে টেনে তাঁকে দাঁড় করায়। তারপর রাগে হিসহিসিয়ে বলে–

—তোর ওড়নায় হাত দিছিলাম বলে তোর সোয়ামি আমার গায়ে হাত দিছে না। এখন ওর সামনেই তোরে আমি আদর করমু দেখি শালায় কি করতে পারে।

হায়া একহাত দিয়ে নিজের মাথায় থালা শরীফের হাত চেপে ধরে। শরীফ এত জোরে তার চুলের মুঠি ধরেছে মনে হচ্ছে সেই জায়গাটা খুবলে উঠে আসবো।

আশিয়ান শরীফের এমন কথা শুনে বলে–

—ওরে ছাড় কুত্তারবা** তোর কলিজা আমি রাস্তার কুত্তাকে দিয়ে খাওয়াবো। তোর সাহস কি করে হয় আমার বউয়ের গায়ে হাত দেওয়ার। ছাড় আমায়য়য়য়য়!!!

আশিয়ান ক্ষ্যাপা বাঘের মতো করছে। তাকে তিনজন লোক চেপে ধরে আছে তাও পারছে না। লোক গুলোর জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে আশিয়ানকে ধরে রাখতে। এদিকে তাদের এত চিল্লাচিল্লি শুনে ডাকাত দলের লিডার বের হয়ে আসে নিজের রুম থেকে। ফজরের নামাক পড়ছিল সে।

সে এসে এমন কুরুক্ষেত্র দেখে সকলকে ধমকে উঠে। সে শরীফকে উদ্দেশ্য করে বলে–

—শরীফ তুই মেয়েটাকে এমনে ধরে রেখেছিস কেন? আর ওর স্বামীকেই বা ওরা এভাবে ধরে রেখে কেন?

শরীফ নিজেকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যে বলে–

—ওস্তাদ ওরা পালাতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি দেখে ফেলি। শালায় আমারে মাইরা ভাগতে চাইলে ওরা আইসা ধইরা ফেলে।

শরীফ কথা শেষ করার সাথে সাথে হায়া বলে–

—উনি মিথ্যে বলছেন। উনি আমার সাথে নোংরামি করার চেষ্টা করে তাই আমার হাসবেন্ড উনাকে মেরেছে। বিশ্বাস করুন আমার কথা।

—ঐ শালি চুপ কর। আরেকটা মিথ্যা কথা কইলে জিহ্বা ছিড়া ফেলমু টাইনা।

ডাকাতদের লিডার চিৎকার করে বলে উঠে–

—চুপপপপপপপপপপ!!!!!

সকলে তার চিৎকার শুনে শান্ত হয়ে যায়। তার সে শরীফের সামনে এসে বলে–

—ওরে ছাড় শরীফ।

শরীফ হায়া’কে ছেড়ে দিলে সে দৌড়ে গিয়ে আশিয়ানকে জড়িয়ে ধরে। আশিয়ানকে ধরে রাখা তিনজনকেও সে একই নির্দেশ দেয়। তারা আশিয়ানকে ছেড়ে দেয়। লিডার এবার সবার উদ্দেশ্য বলে–

—এখানে কি হইছে এহন খুইলা ক। যারই দোষ থাকুক তারে এহনি শাস্তি দিমু আমি।

শরীফ ও আশিয়ানকে মারা লোকগুলো শরীফের কথায় হ্যা হ্যা করতে থাকে। লিডার এবার আশিয়ানকে জিজ্ঞেস করলে আশিয়ান বলা শুরু করে–

—আমার স্ত্রীর শরীর খারাপ লাগায় অনেক বলে কয়ে তাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করি এই লোকটির মাধ্যমে। (হায়া’কে পাহারা দেওয়া লোকটিকে দেখিয়ে বলে আশিয়ান) আমি ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। আমার স্ত্রী ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কলপাড়ে আসে মুখে পানি দেওয়ার জন্য তখনই শরীফ এসে উনাকে পাঠিয়ে দিয়ে কলপাড়ে ঢুকে পরে। একটু পরই আমি আমার বউয়ের চিৎকার শুনি। এসে দেখি আমার বউয়েট ওড়না তার গলায়। এটা দেখে কার বুঝতে বাকি থাকে যে আমার বউয়ের গায়ে নোংরা হাত দেওয়া হয়ে? আমি রাগের মাথায় তাকে মারা শুরু করলে অন্যরা এসে আমায় মারতে শুরু করে। উনি একজনকে পাঠিয়েছে আমাকে জবাই করার জন্য রামদা আনতে। আর এ-ও বলেছে আমার চোখের সামনেই আমার বউকে ধ*** করবে।

আশিয়ান এক নিঃশ্বাসে সবগুলো কথা বলে। তার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই শরীফ অস্থির হয়ে চিৎকার করে বলা শুরু করে–

—ওস্তাদ এই শালায় মিথ্যা কথা কইতাছে। সব ওগো বানানো নাটক। মিথ্যা না হইলে সবুজ রে জিগান।

সবুজ সেই লোকটি যাকে হায়া ওয়াশরুমের বাহিরে পাহারা দিচ্ছিলো। সবুজ শরীফের চোখ রাঙানিতে আমতা আমতা করে বলে–

—হ ওস্তাদ। শরীফ ভাই সইত্য কথা কইতাছে। এই শালারা পালাইতে চাই ছিলো।

আশিয়ান এবার আর মাথা গরম করে না আর না বিচলিত হয়। সে ডাকাত দলের লিডারকে বলে–

—আমার ওয়াইফ কে ওয়াশরুমের নিয়ে যাওয়াটা বদলে তাকে আমি আমার প্ল্যাটিনামের ব্রেসলেট দিয়েছিলাম। আপনি উনার পকেট চেক করেন তাহলেই পেয়ে যাবেন।

সবুজের পকেট চেক করা হলে সত্যি সত্যি আশিয়ানের কথা অনুযায়ী ব্রেসলেট পাওয়া যায়। শরীফ নিজের পক্ষে আবারো সাফাই দিতে গেলে তাদের লিডার কষে একটা থাপ্পড় মারে শরীফকে। শরীফ ছিটকে নিচে গিয়ে পড়ে। ডাকাতদের লিডার বয়স্ক হলে কি হবে শক্তি ও বুদ্ধির দিক দিয়ে বেশ বিচক্ষণ।

লিডার শরীফের কলার ধরে নিচ থেকে উঠিয়ে বলে–

—তোর কলিজা দেহি বেশি বড় হইয়া গেছে রে শরীফ। তুই আমার কথা অমান্য করার সাহস দেখাস। তোরে কইছিলাম না পোয়াতি মাইয়া গো গায়ে হাত দিবি না? এ শুয়ো**রের বাচ্চা তোর বউরে যদি এমন অবস্থা ***** করতো তোর কেমন লাগতো? নাকি তুই এমনই কোন ঘটনার মাধ্যমে দুনিয়ায় আইছোস?

লিডারটি শরীফকে আরো অনেক আজেবাজে কথা শুনায় আর প্রহার করে। বেশ কিছুক্ষণ মারার পর তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানে ফেলে রেখে সকলে চলে আসে।

________________

বর্তমান~

অতিরিক্ত ক্লান্তি আর টেনশনে কখন যে আশিয়ানের চোখ লেগে এসেছে তার খেয়াল নেই। হঠাৎই অনেক চিৎকার চেচামেচি আর গুলির শব্দে তার ঘুমটা ভেঙে যায়। তাঁদেরকে আগের রুমটায় আটকে রেখে বাহির থেকে ছিটকানি লাগিয়ে লোকগুলো নাস্তা করতে গিয়েছে।

হায়াও ঘুমিয়ে পরেছিলো কাঁদতে কাঁদতে। তার ঘুমটাও গোলাগুলির শব্দে ভেঙে যায়। দু’জন দু’জনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে ঘরের এককোনায়। কিছুক্ষণ পরই কতগুলো পায়ের শব্দ শোনা যায় তাদের রুমের বাহিরে। মিনিটের ব্যবধানে কেউ একজন দরজা খুলে দিলে সূর্যের আলো অন্ধকার রুম টিকে আলোকিত করে তুলে।

—পুতুল…..

—বনু…..

অতিপরিচিত দু’টো গলা থেকে পরিচিত ডাক শুনে হায়া-আশিয়ান সহজেই তাদের চিনে ফেলে। হায়া আশিয়ানের বুক থেকে মুখ তুলে দেখে তার ভাইয়েরা এসেছে পুলিশসহ।

জায়িন আর জাহান হাঁটু গেড়ে বোনের সামনে বসে পড়ে। হায়া আশিয়ানকে ছেড়ে ভাইদের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে হুহু করে কাঁদতে শুরু করে।

—বড় দা’ভাই…

জাহান-জায়িন তাদের আদরের বোনকে জড়িয়ে ধরে। তাদের দু’জনের চোখেও পানি ছলছল করছে। হায়া কাঁদতে কাঁদতে ভাইদের বুকেই অজ্ঞান হয়ে যায়। অতিরিক্ত কান্না, ভয়, দুঃশ্চিন্তায় অনেক দূর্বল হয়ে পরেছে।

হায়া কোন শব্দ করছে না দেখে জাহান হায়া’র মুখ তুলে দেখে সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। মুহূর্তেই তিনজন পুরুষ বিচলিত হয়ে পরে তাঁকে নিয়ে। আশিয়ান হায়া’কে নিজের কাছে নিয়ে এসে তার গালে কয়েক বার চাপড় মেরে ডাকতে থাকে–

—বউ, এই বউ। উঠো, কি হয়েছে তোমার?

জাহান হায়া’র পালস রেট ও চোখ পরীক্ষা করে বলে–

—অতিরিক্ত ভয় ও দুঃশ্চিন্তায় এমনটা হয়েছে। ওকে আমার কাছে দাও ভাই। আমি নিয়ে যাচ্ছি কোলে করে, তুমি জায়িনের সাহায্যে আসো।

—না আমি পারবো ওকে নিতে।

কথাটা বলে আশিয়ান বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হায়া’কে কোলে তুলে বাহিরের দিকে হাঁটা দেয়। রুমটা থেকে বের হয়ে দেখে বাহিরের পরিবেশ বেশ ভয়াবহ। পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন হলো ডাকাতদের লিডার।

আশিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেই জায়গা ত্যাগ করার জন্য পা বাড়ালে তার নজরে আসে শরীফ ও সবুজের দিকে।তারাও আহত হয়ে কাতরাচ্ছে। আশিয়ান ওদের দিলে এগিয়ে গিয়ে পুলিশকে বলে–

—এই দু’জনের গায়ে কেউ হাত দেবেন না। এদেরকে সুস্থ করে আমার হাতে তুলে দিবেন। বিনিময়ে যত টাকা লাগে আমি দিবো।

জাহানের পুলিশ বন্ধু ইন্সপেক্টর শওকত হোসেন বলে–

—এমনটা করা করা যাবে না ভাইয়া। একবার এদের নাম তালিকা হয়ে গেলে তখন আর তাদের বের করা সম্ভব নয়। এটা করতে গেলে আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি হবে।

—তাহলে এদের নাম তালিকা করবে না। কিন্তু এদের আমার যেকোন ভাবে চাইই চাই।

আশিয়নাপর চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে কিন্তু কণ্ঠ নদীর ন্যায় শান্ত।

শব্দসংখ্যা~২১৩৬
চলবে?

#সাঝের_প্রণয়ডোর
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_২০

পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় হায়া। হঠাৎই আলো চোখে এসে পরায় ভালো করে তাকাতে পারে না। আস্তে ধীরে সময় নিয়ে সে ভালো করে তাকাতে পারে। প্রথমেই সে আশেপাশের জায়গা চিনে উঠতে পারে না।

একটু সময় নিয়ে তাকিয়ে দেখলে বুঝতে পারে সে তার ও আশিয়ানের রুমে আছে। আস্তে আস্তে তার সব কথা মনে পরতে শুরু করে। কিভাবে তাদের কিডন্যাপ করা হয়েছিলো, কিভাবে তার শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করা হয়েছিলো সবশেষে কিভাবেই তাদের উদ্ধার করা হয়েছিলো সবগুলো ঘটনাই মনে পরে তার।

ভয় হায়া’র আত্মা আবারও কেঁপে উঠে। কিন্তু সেই ভয় বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। কারণ কিছু পল পরেই সে নিজের আত্মার মানুষগুলোর কণ্ঠ পায়। হায়া খেয়াল করে দেখে তাদের রুমে তার ফ্যামিলির প্রায় সবাই উপস্থিত। নিজের মাথায় কারো হাতের উপস্থিতি অনুভব করতে পেরে হায়া চোখ উঁচিয়ে তাকালে দেখতে পায় নিজের জন্মদাতাকে।

জাভিয়ান মেয়ের মাথায় শিয়রে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হায়া তার দিকে তাকালে জাভিয়ান বলে–

—এখন কেমন লাগছে মা? শরীর খারাপ লাগছে কি?

পিতার স্নিগ্ধ কণ্ঠে আদরের পরশমাখা প্রশ্নটি শুনে হায়া যেন ফিরে গেল শৈশবের সেই সহজ-সরল সময়ে। অশ্রু আটকে রাখতে পারল না সে—ঠোঁট কাঁপতে কাঁপতে শিশুর মতো কেঁদে ফেলল। তার মনে হয়েছিল, আর হয়তো কখনো দেখা হবে না এই মানুষটির সঙ্গে, যিনি শুধু পিতা নন, তার জীবনের প্রথম ভালোবাসাও বটে।

প্রতিটি নারীর জীবনের প্রথম প্রেম পুরুষটি হয় তার পিতা—যিনি শত ব্যস্ততার মধ্যেও কন্যার হাত ধরে পথ চলেন, যিনি প্রতিটি কান্নার আগে বুঝে ফেলেন তার মেয়েটির না বলা ব্যথা। যে স্নেহের ছায়ায় এক কন্যা শিশু বেড়ে ওঠে, সেই স্নেহ, সেই ভালোবাসা—সমগ্র জীবনে আর কোনো পুরুষের কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব হয় না অনেক সময়েই।

পিতার ভালোবাসা নিঃশর্ত, নিঃস্বার্থ, অথচ নিঃশব্দ। আর ঠিক সেই নিঃশব্দ ভালোবাসার উপস্থিতি টের পেয়ে হায়ার চোখ ভেসে গেল আবেগের জলে।

জাভিয়ান মেয়ের কান্না দেখে বিচলিত হয়ে পড়ে। সেই সাথে সেখানে উপস্থিত সকলেও। জাভিয়ান অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে–

—কি হয়েছে মা? খারাপ লাগছে বেশি? জায়িন যাও গাড়ি বের করো। আমি বলেছিলাম তোমাদের ওকে ডাইরেক্ট হসপিটালে নিয়ে যেতে কিন্তু তোমরা শুনলে না আমার কথা।

প্রথম দুটো প্রশ্ন হায়া’কে করে বাকি কথাগুলো জায়িন-জাহানকে উদ্দেশ্য করে বলে। জাভিয়ান হায়া’কে আস্তে করে বসিয়ে দিয়ে বেড থেকে নামাতে গেলে হায়া বলে–

—পাপা আমার খারাপ লাগছে না।

—তাহলে কাঁদছো কেনো মা?

—তোমায় দেখে কান্না পাচ্ছে তাই।

—আমায় দেখে? কিন্তু কেনো?

প্রচন্ড বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে জাভিয়ান। হায়া ছলছল চোখে বলে–

—আমি ভেবেছিলাম তোমার সাথে আর দেখা হবে না আমার। আমি হয়ত তার আগেই…..

জাভিয়ান মেয়ের মুখ চেপে ধরে। হায়া’কে বাকি কথাটা বলতে দেয় না। জাভিয়ান ধরা গলায় বলে–

—বাজে কথা বলবে না আর কখনো। তোমার পাপা যতদিন নিঃশ্বাস নিবে এই পৃথিবীর বুকে ততদিন তোমাকে প্রটেক্ট করে যাবে।

হায়া জাভিয়ানের বুকে মাথা রাখে। জাভিয়ান আস্তে আস্তে তার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। বাকিরা কালকের ওমন ঘটনা সম্পর্কে টুকটাক প্রশ্ন করতে থাকে। হায়া তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে খেয়াল করে এখানে সবাই উপস্থিত থাকলেও তার বরসাহেব নেই।

হায়া’র চিত্ত চঞ্চল হয়ে উঠে। লোকটাকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করতে থাকে। তার ছটফটানি কয়েক মিনিটের মধ্যেই হাওয়া হয়ে যায় যখন সে দেখে আশিয়ান ফোন কথা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করছে।

হায়া ভালো করে খেয়াল করে দেখে আশিয়ানের কপালের একপাশে দুটো ব্যান্ডের ক্রশ আকারে দেওয়া। ঠোঁটের এক কোণেও কালচে হয়ে আছে। বিষয়টা দেখে তার একটু বেশিই খারাপ লাগে। সে ঐ রুক্ষ পুরুষালী ওষ্ঠ ছোঁয়ার আগেই অন্যকেউ সেটাকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিয়েছে।

আশিয়ান ফোন কেটে হায়া’র দিকে তাকালে দেখতে পায় তার পুতুলবউ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মেয়েটার গোলুমোলু মুখটা কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে শুঁকিয়ে এইটুকু হয়ে গিয়েছে। সেও এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে ঐ আদুরে মুখ টার দিকে।

সকলে কালকের ঘটনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বললেও হায়া ও আশিয়ান একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে। চোখে চোখে অনেক অনুভূতি, কথা প্রকাশ করলেও তার কণ্ঠ নিশ্চুপ।

তাদের এউ নিরবতা আর কারো চোখে ধরা না পরলেও হানিয়া’র চোখে ধরা পড়ে যায়। হানিয়া খেয়াল করে সবাই কথা বললেও তার মেয়ে ও জামাতা চুপ করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহূর্তেই বুঝে যায় কিছু বিষয়।

হানিয়া সকলের উদ্দেশ্য বলে–

—আমাদের এখন যাওয়া উচিত। কারণ হায়া আর আশিয়ানের রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন। কাল থেকে তো ওদের উপর কম ধকল গেলো না সেই সাথে আমাদের সকলেরও।

সকলে ভেবে দেখে হানিয়া’র কথাটা ঠিক। কাল সারারাত তারা সকলে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে ছেলেমেয়েদের চিন্তায়। সেই সাথে হায়া-আশিয়ানকে দেখেও ক্লান্ত লাগছে। সকলে এক এক করে রুম থেকে বের হয়ে আসে।

হানিয়া যাওয়ার আগে হায়া’কে বলে–

—আসো তোমায় ফ্রেশ করিয়ে দিয়ে যাই।

হায়া কিছু বলার আগেই আশিয়ান গম্ভীর গলায় বলে–

—আমি ওকে হেল্প করে দিবো মাম্মা ফ্রেশ হতে। তুমি আমাদের দু’জনের জন্য খাবারের কিছু পাঠিয়ে দিও কাউকে দিয়ে।

হানিয়া মনে মনে হেঁসে উঠে। সে জানত তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে এমন কিছুই বাক্য শুনতে চলেছে সে। আর হলোও তাই।

হানিয়া মেয়েকে আদর করে আশিয়ানের কাছে আসে। আশিয়ানের কপালের উপর পড়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলোকে গুছিয়ে দিয়ে বলে–

—এভাবেই একে অপরের ঢাল হয়ে থেকো সারাটা জীবন। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা-সম্মান দিয়ে গড়ে নিও একটা সুখের নীড়। যেটা তোমাদের দুনিয়াতেই জান্নাতের অনুভূতি দিবে।

আশিয়ান স্মিত হেসে মাথা নাড়ায়। হানিয়াও চলে যায় নিচে। আশিয়ান দরজা লক করে নিজের শার্ট খুলতে খুলতে কাবার্ডের কাছে চলে যায়। সেখান থেকে হায়া’র একসুট ড্রেস বের করে সেটা ওয়াশরুমে রেখে আসে৷ তারপর আসে হায়া’র কাছে । তার কাছে এসে আস্তে করে হায়া’কে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা দেয় ওয়াশরুমের দিকে।

হায়া একহাত দিয়ে আশিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে একধ্যানে তাকিয়ে থাকে তার বরের দিকে। লোকটাকে সে এখনো প্রচন্ড ভালোবাসে। কিন্তু প্রকাশ করতে এক আকাশ সমান দ্বিধা, অস্বস্তি ও অভিমান।
পূর্ব প্রথমে অনুভূতি প্রকাশ করে বাজে ভাবে প্রত্যাখ্যান পেয়েছিলো।

তার ভাবনা চিন্তার মাঝেই আশিয়ান তাকে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে বাথটবে বসিয়ে দিয়ে নিজে দাড়িয়ে থাকে। ঠাণ্ডা পানির স্পর্শে হায়ার ধ্যাণ ভঙ্গ হয়। সে নিজেকে বাথটবে পেয়ে কিছুটা চমকে গেলেও মুখে কিছু বলে না।

হায়া দেখে আশিয়ান এখনো দাড়িয়ে আছে বাহিরে না গিয়ে। তাই সে স্মিত স্বরে বলে–

—যাচ্ছেন না কেনো বাহিরে? বাহিরে যান।

আশিয়ান গাছাড়া ভাব নিয়ে বলে–

— আমি যাবো না। এখানে দাড়িয়েই তোমায় পাহারা দিবো। এমনিতেই তোমার পায়ে ব্যথা তার উপর শরীর দুর্বল। বাথটাব থেকে উঠতে গিয়ে যদি পড়ে যাও? এসব কথা চিন্তা করেই আমি ভেবেছি যাবো না বাহিরে।

হায়া আশিয়ানের কথা শুনে বড়বড় চোখ করে তাকায়। আশিয়ান যদি এখানে দাড়িয়ে থাকে তাকে সে শাওয়ার নিবে কিভাবে? চেঞ্জই বা করবে কিভাবে? লজ্জা না হার্ট অ্যাটাক করে বসে।

হায়া তড়িঘড়ি করে বলে–

—আমার পায়ে তেমন ব্যথা নেই। আপনি বের হন তাড়াতাড়ি করে।

আশিয়ান বুকে হাত গুঁজে বলে–

—নো ওয়ে। আমি যাচ্ছি না কোথাও।

হায়া করুণ স্বরে বলে–

—প্লিজ আশিয়ান ভাই।

—ভাই বলে ডাকলে তো আরো আগে যাবো না। বরং বাথটাবে আমিও আসছি তোমাকে কোম্পানি দিতে। লজ্জা করে না বরকে ভাই বলে ডাকতে। কাল আমাদের বাবু হলে সে তো আমায় মামা বলে ডাকবে তোমার জন্য।

আশিয়ান ভর্ৎসনা করে কথাগুলো বলে হায়া’কে। হায়া’র একটু রাগ হয় তার ভর্ৎসনা শুনে। সে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে–

—ভালোবাসাবাসির খবর নেই সে চলে গিয়েছে বাবু তে। আপনার কথা শুনলে মনে হয় এই বাথটবের পানিতেই চুবনি দিয়ে নিজেকে শহীদ করে দেই।

আশিয়ানের কুঁচকানো ভ্রূদ্বয় সোজা হয়ে যায়। হালকা পাতলা রাগের দেখা পাওয়া চোখজোড়াতও অদ্ভুত এক শীতলতা নেমে আসে। পুরুষালী ঠোঁটের কোণে দেখা দেয় এক ভালোলাগার ছোঁয়া।

আশিয়ান হায়া’র কথা শুনে নিজের একটা হাত বাথটবের উপর রেখে হায়া’র মুখের উপর ঝুঁকে আসে। নিজের মুখটা হায়া’র কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে হাস্কি টোনে বলে–

—❝আমি তো সদাই প্রস্তুত—তোমাকে আমার ভালোবাসায় নিঃশেষ করতে,
শুধু চেয়ে আছি তোমার একটিমাত্র সম্মতির দিকে।
তারপর এমনভাবে আবৃত করব তোমায় ভালোবাসার মায়াজালে,
তুমি নিজেই আমাতে হারিয়ে যেতে চাইবে বারবারে ❞

আশিয়ানের এমন নেশাক্ত গলায় লাগামহীন কথা শুনে হায়া’র লজ্জায় জান যায় যায় অবস্থা। সে ঝট করে নিজেকে বাথটবের পানিতে ডুবিয়ে দেয়। আশিয়ানের তার লজ্জা বুঝতে পেরে উচ্চস্বরে হাহা করে হেসে দেয়।

তারপর ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে বলে–

—তাড়াতাড়ি শাওয়ার নাও। ঠাণ্ডা লাগালে তার প্রতিষেধক হিসেবে আমাকেই গ্রহণ করতে হবে কিন্তু।

~চলবে?

#সাঝের_প্রণয়ডোর
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_২০(বর্ধিতাংশ)

দরজা খোলার শব্দ আশিয়ান সেদিকে তাকায়। দরজা ধরে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসছে। আশিয়ান চপল পায়ে সেদিকে এগিয়ে যায়। হায়া’র একদম কাছে গিয়ে তাঁকে আস্তে করে কোলে তুলে বেডে এনে বসিয়ে দেয়।

হায়া’র মাথা থেকে টাওয়ালটা খুলে নিয়ে মাথা মুছিয়ে দেয় ভালো করে। তারপর চুল আঁচড়ে দিয়ে খাবারের প্লেট সামনে এনে দিয়ে ব’লে–

—তুমি খাওয়া শুরু করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

হায়া প্লেট টা হাতে তুলে নিলে আশিয়ান নিজের জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। অল্প কিছুক্ষণ পরেই বের হয়ে আসে মাথা মুছতে মুছতে। গায়ে কাপড় বলতে একটা ট্রাউজার আর গলায় টাওয়াল ঝুলানো। আশিয়ান হায়া’র দিকে তাকিয়ে দেখে হায়া না খেয়ে আধশোয়া হয়ে ফোন টিপছে।

আশিয়ানের কপালে কয়েকটা ভাজ পড়ে। সে হায়া’র সমানে এসে দাড়ায়। হায়া’র হাত থেকে ফোনটা টান দিয়ে নিয়ে গমগমে গলায় বলে–

—না খেয়ে ফোন টিপছো কেনো স্টুপিড??

হঠাৎ করে এমন ধমক খেয়ে হায়া তব্দা মেরে বসে থাকে। সে চোখ পিটপিট করে আশিয়ানের দিকে তাকায়। আশিয়ানের চিনচিন কররে জ্বলতে থাকা রাগটা ধুপ করে পড়ে গিয়ে সেখানে দেখা মিলে একরাশ মুগ্ধতার। হায়া’র এই পিটপিটিয়ে তাকানোটা আশিয়ানের ভীষণ পছন্দের।

হায়া আমতা আমতা করে বলে–

—একা খেতে ভালো লাগে না আমার তাই আপনার জন্য ওয়েট করছিলাম।

আশিয়ান আর কোন কথা বলে না। টাওয়ালটা বেলকনিতে মেলে দিয়ে এসে হায়া’র সামনে এসে বসে তার খাবারের প্লেটটা হাতে নেয়। হায়া’র প্লেটে লোকমা মাখতে দেখে হায়া ফট করে বলে–

—আরে বাবা আমি তো নিজের হাতেই খেতাম। একা খেতে ভালো লাগছিলো না দেখে খায়নি। আপনি আপনার খাবারটা খান, আমি আমারটা খা…

হায়া নিজের কথা শেষ করার আগেই আশিয়ান তার মুখে খাবার পুড়ে দেয়। হায়া হতভম্ব হয়ে মুখ নাড়াতে ভুলে যায়। আশিয়ান তাঁকে চোখ গরম করে বলে–

—মুখ নাড়াও।

হায়া এবার বাধ্য বালিকার মতো মুখ নাড়িয়ে খেতে থাকে। মুখের খাবার শেষ হওয়ার সাথে সাথে আরেক লোকমা হাজির হয় হায়া’র সামনে। হায়া চুপচাপ সেটা মুখে তুলে নেয়। এভাবে কয়েক লোকমা খাওয়ার পর হায়া নিজের মুখের সামনে একটা হাত এনে বলে–

—আমাকে খাওয়াচ্ছেন তো খাওয়াচ্ছেনই। নিজে খান এবার, এই ফাঁকে আমি একটু শ্বাস নিয়ে নেই।

ফুস করে একটা শ্বাস ফেলে কথাটা বলে। ভাবখানা এমন তাকে নিয়ে গাধারখাটুনি খাটাচ্ছে আশিয়ান। আশিয়ান হায়া’র এমন নাটক দেখে একটু বিরক্ত হয়। মেয়েটা বড্ড বেশি নাটকবাজ! বাপ-ভাই আর বর্তমানে তার আদর-আহ্লাদে এমন নাটক বাজে পরিণত হচ্ছে।

আশিয়ান নিজে মুখে খাবার দেওয়ার আগে অল্প আওয়াজে বলে–

—নাটকবাজ কোথাকার!

হায়া যেহেতু আশিয়ানের একদম সামনে বসে আছে তাই সে সহজেই আশিয়ানের কথাটা শুনতে পায়। কথাটা শুনে হায়া’র রাগ হলেও সে আপাতত কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে ইচ্ছুক নয়। সময় বুঝে ঝাস উঠাবে এই কথার বলে ঠিক করে হায়া।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে আশিয়ান এঁটো প্লেটগুলো নিচে রেখে আসে আর তার মা ও শ্বাশুড়িকে বলে আসে আপাতত তারা একটু ঘুমাবে বিকেলের দিকে তাদের ডাক দিয়ে দিতে। ঘরে এসে দেখে হায়া ঘুমে ঢুলুঢুলু করতে করতে কার সাথে যেনো কথা বলছে। সে শুনতে পায় হায়া বলছে–

—বিকেলে এসে পড়বি এই বাড়িতে। ভাইয়াকে পাঠাবো তোকে আনতে?

অপর পাশের ব্যক্তিটি কি বলে সেটা আশিয়ান শুনতে পায় না কিন্তু হায়া যেটা বলে সেটা শুনতে পায়। হায়া আবারও বলে–

—আচ্ছা সাবধানে আসবি। আমি ভাইয়াকে মেসেজ করে বলে দিচ্ছি তোর কথা। এখন রাখছি আমার ঘুম পাচ্ছে ভীষণ। আল্লাহ হাফেজ।

হায়া বিদায় নিয়ে কলটা কেটে কিছুক্ষণ ফোন টিপাটিপি করে।তারওর ফোনটা বেড সাইড টেবিলে রেখে ধপ করে শুয়ে পড়ে। আশিয়ান দরজা লাগিয়ে টি-শার্ট খুলে সেও বেডে এসে হায়া’র পাশে শুয়ে পড়ে। আস্তে ধীরে হায়া’র ডান হাতের বাহু ধরে তাকে নিজের কাছে আনতে চাইলে হায়া নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় ঝটকা দিয়ে। আশিয়ান আরো কয়েকবার চেষ্টা করে হায়া’কে নিজের কাছে আনার কিন্তু হায়া প্রতিবারই একই কাজটা করে।

শেষে আশিয়ান না পারতে ধমক দিয়ে বলেই দেয়–

—আজব তো এমন করছো কেনো? কাছে আসো।

হায়াও তাকে পাল্টা রাগ দেখিয়ে বলে–

—নাটকবাজ না তাই নাটক করছি, হয়েছে? আর নাটকবাজের কাছে কি? যান না কোন ড্রামাবাজকে খুঁজে তাঁকে কাছে টানেন গিয়ে। আমার সাথে আপনার কোন লেনাদেনা নেই।

আশিয়ান হায়া’র কথা শুনে বুঝতে পারে তখনকার কথাটা হয়ত হায়া শুনে ফেলেছে যার কারণে এমন রাগ দেখাচ্ছে। আশিয়ানের ঠোঁটের কোণে হাসির দেখা মিলে কিন্তু হাসিটা ছিলো শব্দহীন। আশিয়ান নিজেই এগিয়ে আসে হায়া’র দিকে। হায়া আশিয়ানের দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে থাকায় সে তার আগমন সম্পর্কে টের পায় না।

আশিয়ান কোনো পূর্ব সংকেত ছাড়াই, আশিয়ান হায়া’র একেবারে কাছে এসে মুখটা তার কাঁধে গুঁজে দেয়। সেই মুহূর্তে তার ঠোঁটের ছোঁয়া, নিঃশ্বাসের গতি—সবকিছু যেন হায়ার স্নায়ুতে আগুন ছড়িয়ে দেয়। ছোট ছোট চুমু আর আদরের পরশে আশিয়ান তার কাঁধ জুড়ে যে আবেগের ঢেউ তুলছে, তাতে হায়ার দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে।

হায়া চোখ শক্ত করে বন্ধ করে নেয়। একহাতে চাদর খামচে ধরে মটকা মেরে পড়ে থাকে, যেন নিজের ভেতরের আলোড়নটুকু চাপা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু আশিয়ানের স্পর্শ যত গভীর হচ্ছে, সে নিজেকেও ততটাই হারিয়ে ফেলছে।

আশিয়ান ধীরে ধীরে মুখটা কাঁধ থেকে সরিয়ে হায়া’র কানের কাছে নিয়ে আসে। তার গাঢ় নিঃশ্বাসে হায়ার কানের পরতেই হায়া কিছুটা কেঁপে ওঠে। আশিয়ানের যেনো নিঃশ্বাস দিয়ে বলে দিচ্ছে—”তোমায় আমি চাই, পুরোপুরি চাই।”

হঠাৎই হায়া অনুভব করে কানের লতিতে একরকম চিনচিনে ব্যথা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে তা কল্পনার ভুল ভেবেছিল, কিন্তু পরমুহূর্তেই স্পষ্ট হয়ে যায়—এটা তার কল্পনা নয় বরং আশিয়ানের অস্থির, অধিকারভরা দন্তাঘাতই সেই ব্যথার উৎস।

হায়া’র সমস্ত স্নায়ু যেন মুহূর্তেই থমকে যায়। শিরদাঁড়া বেয়ে বয়ে যায় এক অদ্ভুত শিহরণ। ব্যথাটা ছিল তীক্ষ্ণ, তবুও হায়া কিছু বলে না। বলার প্রয়োজনও যেন অনুভব করেনা। কণ্ঠনালি রোধ হয়ে রয়েছে এক অজানা কারণে।

চোখজোড়া নিঃশব্দে বন্ধ করে, ঠোঁট কামড়ে সে সেই ব্যথার সাথে মানিয়ে নিতে চায়—বুঝাতে চায় আশিয়ানের স্পর্শে মিশে থাকা মালিকানার দাবিটুকু সে নিরবে মেনে নিচ্ছে।

কান্না নয়, অভিযোগ নয়—বরং সেই ব্যথার মাঝেই হায়া অনুভব করে এক গভীর টান, এক অপ্রতিরোধ্য ঝড়, যা তাকে ধীরে ধীরে আশিয়ানের অধিকারে নিঃশর্ত করে দিচ্ছে।

কিন্তু একসময় সেই সহ্যশক্তির সীমা অতিক্রম করে যায়। হায়ার বন্ধ চোখের কোণ বেয়ে নীরব অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ে—জল নয়, যেন এক নিঃশব্দ আত্মসমর্পণ।

নিজেও বুঝে ওঠার আগেই তার ভেজা কণ্ঠে বলে—
—”ব্যথা পাচ্ছি, আশিয়ান…”

তার কণ্ঠে ছিল না কোনো রাগ, অভিমান বা অভিযোগ—শুধু ছিল এক নির্মল, নিস্তরঙ্গ আকুতি, যেন নিজেকে রক্ষা করতে গিয়েও নিজেকে তুলে দিচ্ছে।

আশিয়ান থেমে যায়। যেন এমনই কোনো স্বীকারোক্তির জন্য সে অপেক্ষা করছিল চুপিচুপি। সে ধীরে ধীরে দন্ত সরিয়ে নেয় হায়ার কানের থেকে, তারপর সেই জায়গাটা কেই ঠোঁটের কোমল স্পর্শে ঢেকে দেয়। যেখানে কিছুক্ষণ আগেও ছিল তীব্রতা, সেখানেই এখন ভালবাসার আশ্রয়।

এক মুহূর্তে যেন বদলে যায় আবহ—যন্ত্রণার উপরে পরশ বুলিয়ে দেয় নরম ভালোবাসা। প্রথমে যে স্পর্শ ছুঁয়ে দিয়েছিল তার ব্যথার প্রান্তর, এখন তা ছড়িয়ে দেয় হৃদয়ে এক অজানা কাঁপুনি।

হায়া বোঝে না সে যাবে কোথায়, লুকাবে কোথায়—এই লোকটার এমন অপ্রত্যাশিত, অদম্য আগ্রাসনে তার সমস্ত দিশা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

হায়া নিজের অবাধ্য অনুভূতিগুলোকে দমিত করার জন্য আশ্রয় নিলো তাকে আঘাত দেওয়া ব্যক্তিটির নিকটই। সে ঝট করে আশিয়ানের দিকে ঘুরে তার বুকে মুখ লুকিয়ে নেয়। খামচে ধরে আশিয়ানের উন্মুক্ত পুরুষালী পিঠ। বিধিয়ে দেয় নিজের নখ সেখানটায়। এক প্রকার আত্মসমর্পণ করে আশিয়ানের কাছে সে।

আশিয়ানের ঠোঁটে বিজয়ীর হাসি ফুটে। সে হায়া’কে নিজের বাম হাতের বাহুতে শুইয়ে দিয়ে একহাত দিয়ে হায়া’র কোমড় ও অপর হাত দিয়ে হায়া’র মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে।

সে হায়া’র কানের কাছে নিজের মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে–

—যতবারই আমার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করবে ততবারই নিজেকে আমার আরো বহু কাছে পাবে। আমি তোমায় বাধ্য করবো, নিজেকে পরাস্ত সৈনিকের ন্যায় আত্নসমর্পণ করতে আমার বুকে আশ্রয় নেওয়ার জন্য। ঠিক আজকের মতো।

হায়া প্রতিত্তোরে কিছুই বলে না। আশিয়ানের বুকে নাক-মুখ ডুবিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।

________________________________

—তুমি কে মা? তোমায় তো ঠিক চিনতে পারলাম না।

নরম গলায় প্রশ্ন করে স্পর্শ তার সামনে দাঁড়ানো সুশ্রী মেয়েটিকে। মেয়েটি ইতস্তত করে বলে–

—আসসালামু আলাইকুম আন্টি। আমি মেহরিমা, হায়া’র ফ্রেন্ড।

সোফায় এলোমেলো হয়ে শুয়ে থাকা জাহানের কানে কথাটি পৌঁছাতেই সে তড়িঘড়ি করে রোজি বেগমের কোল থেকে উঠতে গিয়ে ধপ করে নিচে পড়ে যায়। হাঁটুতে হালকা ব্যথা পেলেও সে ব্যথাটাকে ততটা পাত্তা দেয় না, বরং দৌড় দেয় সদর দরজার সামনে। যেতে যেতে কুঁচকে যাওয়া টি-শার্টটাকে টেনে সোজা করে নেয় কিন্তু এলোমেলো চুলগুলো গুছাতে ভুলে যায়।

জোড়ে দৌড় দেওয়ার ফলে টাইলসের ফ্লোরে স্লিপ কেটে পরে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। পড়তে পড়তে সে উপস্থিত হয় মেহরিমা ও স্পর্শ’র সমানে। এই প্রথমবার মেহরিমা তার নানু বাড়ি আসলো, একটু বেশিই খুশি সে ব্যাপারটায়। অতিরিক্ত উত্তেজনা ও খুশিতে জাহান কেমন বাচ্চাদের মতো করছে।

হায়া’র ফ্রেন্ড শুনে স্পর্শ মেহরিমাকে সাদরে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়। তারা কথা বলতে বলতে ভেতরে প্রবেশ করছিলো তখনই জাহান ঝড়ের মতো এসে তাদের আগমনে উপস্থিত হয়। স্পর্শ ও মেহরিমা দু’জনই চমকে যায়।

স্পর্শ অবাক হয়ে জাহানকে প্রশ্ন করে–

—আব্বা, এমন দৌড়াচ্ছিস কেনো? স্লিপ কেটে পড়ে গেলে ব্যথা পাবি তো…

জাহান এবার বুঝতে পারে সে এক্সসাইটমেন্টে কেমন বেকুবের মতো কাজ করে ফেলেছে। সে বাম হাত দিয়ে নিজের মাথার পেছনে চুলকাতে চুলকাতে বলে–

—সরি ভালো মা। আমার একজন আসার কথা তো সে নাকি এসে পরেছে তাই তাকে পিক করার জন্য ছুটছিলাম।

—তোরও ফ্রেন্ড আসবে? দেখ হায়া’র ফ্রেন্ড এসেছে।

মেহরিমাকে দেখিয়ে বলে স্পর্শ। মেহরিমা ভদ্রতা বজায় রেখে জাহানকে বলে–

—আসসালামু আলাইকুম ভাইয়াআআ।

লাস্টের ভাইয়া ডাকটা একটু টেনে টেনে দেয়। নেহাৎই দুষ্টুমি করার ইচ্ছেতে এমনভাবে ডাকা। এদিকে ভাইয়া ডাকে জাহানের বুকটা ফালাফালা হয়ে যায়। সে মেহরিমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে ভাবতে থাকে–

—কাল যাকে ডাকবি ছাইয়া বলে, আজ তাকে ডাকিস ভাইয়া? ষিহ্ নিষ্ঠুর রমণী ষিহ্।

~চলবে?

ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং মাই লাভিং রিডার্স 🖤]