সাঝের প্রণয়ডোর পর্ব-২৩+২৪

0
3

#সাঝের_প্রণয়ডোর
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_২৩

[রোমান্টিক পর্ব এলার্ট⚠️]

বারান্দার নিঃশব্দ এক কোণে চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত দুইটি মন, একে অপরের স্পর্শে খুঁজে পায় নিঃশেষ প্রশান্তি। তারা বসে আছে জড়িয়ে—ভালোবাসার চুপচাপ এক আলিঙ্গনে, যেখানে শব্দের প্রয়োজন হয় না, চোখের একটুখানি চাহনিই সব বলে দেয়।

চারপাশে নিস্তব্ধতা, মাঝে মাঝে মৃদু হাওয়ার ছোঁয়া, আর দূর থেকে ভেসে আসা রাতজাগা পাখির ডাক—সব মিলিয়ে মুহূর্তটা হয়ে ওঠে কবিতার মতো। এ যেন পৃথিবীর সমস্ত কোলাহল পেরিয়ে এসে গড়ে ওঠা এক ক্ষণিকের স্বর্গ।

এমন ভালোবাসার আলিঙ্গনে নিজেকে সুখী ভাবতে আর কিছুর প্রয়োজন হয় কি? হয় না। ভালোবাসা যখন নিঃশব্দে কথা বলে, তখন বাকি সব কিছু মুছে যায়।

হায়া একটু নড়েচড়ে আবার ঘাপটি মেরে বসে থাকে আশিয়ানের বুকে মুখ গুঁজে। একটু আগে যেই অস্থিরতা কাজ করছিলো তার মধ্যে এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই। হায়া আশিয়ানের বুকে মাথা রেখেই তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে এক ধ্যাণে। পুরোনো ভালোবাসাটা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মন চাইছে একটু অবাধ্য করতে মস্তিষ্কের। একটু ভালোবাসা দিয়ে অনেকটা ভালোবাসা পেতে মন চাইছে বেহায়া মনটার।

আশিয়ান চাঁদের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আনে। চোখ রাখে নিজের বুকের উপর বসে থাকা মেয়েটার দিকে। তার পুতুপুতু বউটা ঠিক তার দিকেই তাকিয়ে আছে। একটুও লজ্জা নেই, চোখে শুধু একরাশ গভীরতা।

তাকে দেখে আশিয়ানের ঠোঁটের কোণে গোপন একটা হাসি খেলে যায়। তারপর ধীরে হাত বাড়িয়ে হায়ার কপালের উপর এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো আলতোভাবে সরিয়ে নেয়, কানের পাশে গুঁজে দেয় যত্নের পরশে। গলায় নেমে আসে একরাশ কোমলতা প্রশ্ন—

—কি দেখছো?

হায়া থেমে যায় একটু। চোখে এক ঝাপসা মায়া, মুখে ভাসে তা। ধীরে বলে ফেলা একটা সরল
স্বীকারোক্তি—

—আপনাকে।

এক মুহূর্তের জন্য আশিয়ান থমকে যায়। আশিয়ানের টানটান কপালে এক চিলতে ভাঁজ পড়ে। আবার প্রশ্ন করে, এবার যেন একটু নিচু স্বরে, একটু বেশি সজ্ঞান হয়ে—

—আমায় এত কি দেখো?

হায়া এবার আর জবাব দেয় না। শুধু তার চোখে চোখ রেখে বসে থাকে, যেন সেই দৃষ্টিতেই আছে হাজারটা অপ্রকাশিত কথা।

সময়ের চাকা এগোয়, কিন্তু ওদের মাঝখানে যেন একটা মুহূর্ত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।

অল্প পর হায়া তার বুক থেকে একটু সরে আসে, তবে আশিয়ানের কোল ছাড়ে না। সে তখন হাত বাড়িয়ে আলতোভাবে ছুঁয়ে দেয় তার কপালের ব্যান্ডেজ। খুব সাবধানে, মমতার পরশে হাত বুলিয়ে দেয় সেখানটায়—মনে হয়, ব্যথাটা যদি নিজের স্পর্শে টেনে নিতে পারতো!

তার চোখে তখন একরাশ কষ্ট। চাঁদের আলো সেখানে ধরা পড়ে হালকা জলচিহ্নে। না বলা, অথচ খুব স্পষ্ট ভালোবাসা ভেসে ওঠে হায়ার চোখে।

হায়া নিজের হাত আশিয়ানের কপালে রেখেই জিজ্ঞেস করে–

—ব্যথা করে?

আশিয়ান এতক্ষণ হায়া’র চোখের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। সে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছে হায়া’র চোখে তার জন্য হওয়ার কষ্টের অশ্রু। মনে মনে ভাবে–

—একটু পরীক্ষা করা যাক।

আশিয়ান বলে–

—হুম। চিনচিনিয়ে ব্যথা করে উঠে মাঝে মধ্যেই আবার মাঝে মধ্যে একটু বেশিই ব্যথা করে।

কথাগুলো শুনে হায়া’র বুকের পাঁজর ভেঙে আসতে চায় কষ্টে। তাকে রক্ষা করার জন্য লোকটা কতটা ব্যথার পেয়েছে। হায়া নিজের হাতটা আশিয়ানের কপাল থেকে সরিয়ে আনে।

চোখে অশ্রু জমেছে খানিক আগেই এখন গড়িয়ে পড়তে চাইছে। হায়া তার দৃষ্টি নিচু করে নেয়। সে তার অশ্রু কাউকে দেখাতে নারাজ, বিশেষ করে আশিয়ানকে তো নই-ই। ভাঙা ভাঙা গলায় বলে–

—রুমে চলুন। মেডিসিন নিয়ে ঘুমাবেন। সকালে ডাক্তারের কাছে গিয়ে তাড়াতাড়ি ঠিক হয় এমন ঔষধ নিয়ে আসবো নে।

আশিয়ান তার প্রেয়সীর সিক্ত গলার ঠিকই বুঝতে পারে। সেই সাথে তার নাক টানার হালকা আওয়াজে সহজেই বুঝে যায় অশ্রু জমেছে তার বউয়ের নয়নের কোলে। মনে মনে প্রসন্নের হাসি দেয়।

আশিয়ান বলে–

—একটা মেডিসিন আছে যেটায় নিলে এখনি ব্যথা কমে যাবে।

হায়া চট করে তার দৃষ্টি আশিয়ানের দিকে স্থাপন করে। হৃদয় ব্যাকুল হয়ে আছে তার আশিয়ানের ব্যথা কমানোর জন্য। সে খানিকটা অস্থির ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে–

—কি মেডিসিন? আপনি সেটা নিয়েছেন?

—নাহ। এখনো নেই নি।

—কেন? সেটা কি বাসায় নেই? কাউকে দিয়ে আনিয়ে দিবো?

—বাসাতেই আছে। আর তোমার কাছে আছে।

—আমার কাছে?

প্রচন্ড বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে হায়া। আশিয়ান বলে–

—হ্যা তোমার কাছে।

—কিন্তু আমার কাছে তো এমন কোন মেডিসিন নেই।

অসহায়ের মতো কথাটা বলে হায়া। আশিয়ান তার মুখভঙ্গি দেখে হেঁসে দেয়। ঠোঁটের কোণে ভালোলাগার সেই হাসিটুকু বজায় রেখে হঠাৎই হায়া’র কোমড় দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে তাকে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে। হায়া’র হাত দু’টো স্থান নেই আশিয়ানের চওড়া বুকে।

আশিয়ান হায়া’র কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে এসে খানিকটা ফিসফিসিয়ে বলে–

—প্রেয়সীদের ওষ্ঠের ভালোবাসাময় স্পর্শ, প্রেমিক পুরুষদের বড় মেডিসিন ম্যাম।

নিমিষেই হায়া’র চোখ বড়বড় হয়ে যায়। তার বুঝতে বাকি থাকে না আশিয়ান কি মিন করেছে। সে ছটফটিয়ে সরে আসতে চাইলে অনুভব করে তার কোমড়ে থাকা আশিয়ানের হাতের শক্ত বাঁধন। হায়া আবারও শুনত পায়, তার পাগল বর বলছে–

—দেও না একটা ভালোবাসার স্পর্শ। ভীষণ যন্ত্রণা করছে বুকটায় একটু আদর পাওয়ার জন্য।

আশিয়ানের কণ্ঠে মাত্রাতিরিক্ত মায়া, অনুনয় ছিলো। হায়া চাইলেও তাকে ফিরিয়ে দিতে পারছে না। তার প্রেমিকা সত্ত্বা তাকে ফিরিয়ে দিতে দিচ্ছে না। হায়া কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে। তারপর এক হাত দিয়ে আশিয়ানের কাঁধ চেপে ধরে ভালো করে বসে।

একদমই নিচু স্বরে বলে–

—একটু ঝুঁকুন।

আশিয়ানের ঠোটের কোণের হাসি আরো চওড়া হয়। ভালো লাগায় বুকটা ভরে উঠে। সে হায়া’র কথামতো নিজের মাথাটা আরেকটু নিচু করে আনে। দোনামোনা করতে করতে হায়া একসময় দিয়েই দেয় তার ভালোবাসার পুরুষ টিকে নিজের ওষ্ঠের স্পর্শ। প্রথমবার স্পর্শ করার পর হায়া’র কি যে হলো, সে নিজেই একের পর এক ওষ্ঠস্পর্শ দিতে থাকে আশিয়ানের কপালের সেই জায়গা টায়।

আশিয়ান চুপ করে সাদরে তা গ্রহণ করতে থাকে। একসময় হায়া নিজেই থেমে যায়। তার অন্তর আত্মা প্রচন্ড ভাবে কাঁপছে সেই সাথে তার শরীরও। আশিয়ান তার এই কাঁপুনি ঠিকই টের পায়। হায়া আশিয়ানের কপাল থেকে নিজের মুখ সরিয়ে এনে জিজ্ঞেস করে–

—ব্যথা কমেছে?

—একদম গায়েব হয়ে গিয়েছে।

দাঁত কেলিয়ে জবাব দেয় আশিয়ান। হায়া আশিয়ানের থেকে দূরত্ব বাড়াতে চাইলে আশিয়ান তা করতে দেয় না। আগের মতো শক্ত করে ধরে রাখে হায়া’র কোমড়। হায়া বলে–

—এবার তো ছাড়ুন। রুমে চলুন, ঘুমাবেন না?

—ব্যথা ভালোভাবে না সারলে ঘুম আসবে না।

হায়া অবাক হয়ে যায় তার কথা শুনে। মাত্র না বললো গায়েব হয়ে গিয়েছে? তাহলে মিনিট না পেরোতেই আবার বলছে ব্যথা না সারলে ঘুমাতে পারবে না। মানে কি ভাই?

হায়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে–

—মাত্র না বললেন একদম গায়েব হয়ে গিয়েছে? মিনিটের ব্যবধানে আবার ব্যথা শুরু হয়ে গেলো?

—মাথার ব্যথা তো চলে গিয়েছে।

—তাহলে আর কোথায় ব্যথা করছে?

—এখান টায়।

হায়া’র কোমড় থেকে এক হাত সরিয়ে এনে নিজের ঠোঁটের আহত জায়গাটায় ইশারা করে আশিয়ান। হায়া’র এবার চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসতে চায়। এখন কি তাকে এখানেও আদর দিতে হবে? কস্মিনকালেও সে এটা করতে পারবে না।

হায়া ছটফটিয়ে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে–

—থাকুক ব্যথা। ভেসলিন লাগিয়ে দিচ্ছি সেরে যাবে। ছাড়ুন আমায় আর রুমে চলুন। ঘুম পাচ্ছে আমার।

—প্লিজ একটা।

—একটা তো নাই, একটা অর্ধেকও না।

—প্লিইইইইইজ বউ…

—পারবো না।

আশিয়ান এবার হায়া’কে ছেড়ে দেয়। মুখটা তার নিমিষেই মলিন ও গম্ভীর হয়ে যায়। গমগমে সুরে বলে–

—যাও তুমি রুমে। গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমার কিছু কাজ আছে। আমি পরে ঘুমাবো।

হায়া কপালে কয়েকটা ভাজ পড়ে।মাত্রই তো কত সুন্দর করে কথা বলছিলো, সেকেন্ডের ব্যবধানে কি হলো আবার?

হায়া জিজ্ঞেস করে–

—এত রাতে কি মহান কাজটা আছে শুনি?

—আছে কিছু কাজ। সব কি তোমায় বলতে হবে? উঠো আমার উপর থেকে আর রুমে যাও।

রুক্ষ স্বরে কথাগুলো বলে আশিয়ান। কথা শেষ করে অন্যদিকে মুখ করে রাখে। একটা আদর দিলে কি এমন হতো? সে কি দেয় না হায়া’কে? তখন তো ঠিকই চুপ করে সেটা নেয়। তাহলে আজ যখন সে চাইলো তখন কেমন মুখের উপর মানা করে দিলো। কষ্ট পেয়েছে সে হায়া’র এহেন কাজে।

হায়া কোমড়ে একহাত রেখে আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে তার হাবভাব বুঝার চেষ্টা করছে। হায়া হাত বাড়িয়ে আশিয়ানের চোয়াল ধরে তার মুখটা নিজের দিকে ফেরানোর চেষ্টা করে।আশিয়ান শরীর শক্ত করে বসে থাকে আর হায়া’র হাতটা সরিয়ে দেয়। হায়া বুঝতে পারে আশিয়ান কষ্ট পেয়েছে তার রিজেকশনে।

হায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিদ্ধান্ত নেয় আশিয়ানের ইচ্ছে পূর্ণ করবে। সে তো তার মায়েরই মেয়ে, একটু বেশি দয়ালু তাই। তাদের স্বামীরা যত বড় অন্যায় করুক না কেনো তারা রাগ ধরে রাখতে পারে না নিজেদের ব্যক্তিগত পুরুষ টির সাথে।

হায়া আবারও চেষ্টা করে আশিয়ানের মুখটা নিজের দিকে ফেরাতে। আশিয়ান আগের বারের মতো এবারও শক্ত হয়ে থাকে আর হায়া’র হাতটা সরিয়ে দেয়। হায়া’র এবার রাগ হয়। সে দাত কিড়মিড়িয়ে বলে–

—আরেকবার এমন করবেন কাল একদম পাপার সাথে ঔবাড়ি চলে যাবো। দেখি এদিক ঘুরেন।

লাস্টের কথাটা ধমকের সুরে বলে। আশিয়ান চোখমুখ ভয়াবহ গম্ভীর করে হায়া’র দিকে তাকায়। হায়া আশিয়ানের চোয়ালে একহাত রেখে আরেক হাত আশিয়ানের ঘাড়ে রেখে তার মুখের দিকে ঝুঁকে এসে ঠাশ করে একটা চুমু দেয় আশিয়ানের ঠোঁটের কোণে আহত জায়গা টায়। তারপর সাথে সাথেই সরে আসে আশিয়ানের থেকে।

ব্যাপারটা এত তাড়াতাড়ি ঘটে যায় যে আশিয়ান সাথে সাথে বুঝে উঠতে পারে না। হায়া চুমু দিয়ে তাড়াতাড়ি করে আশিয়ানের কোল থেকে সরে রুমে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ায়,কিন্তু আশিয়ান তার হাত টেনে আবারও নিজের কোলে বসিয়ে দেয়। এবার সে নিজেই তাদের দু’জনের চার অধর এক করে দেয়। প্রথমবারের মতো তারা লিপ্ত হয় ওষ্ঠ চুম্বনে।

হায়া চোখ বড়বড় করে তার কাছ থেকে সরে আসার জন্য ছটফট করতে থাকে। কিন্তু হায়া যতই ছটফট করে আশিয়ান তার হাতের বাঁধন গুলো ততই শক্ত করে। হায়া’র ছটফটানিতে আশিয়ান বিরক্তবোধ করে। সে হায়া’র ঠোঁট খানিক সময়ের জন্য মুক্ত করে বলে–

—প্লিজ একবার জান। একটু রেসপন্স করো।

প্রেমিকের এত দরদ মেশানো অনুরোধ কি ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব কোন প্রেমিকার পক্ষে? তাও যদি হয় স্বামী রূপী হালাল প্রেমিক। আমার তো মনে হয় সম্ভব নয়।

আশিয়ান একহাত দিয়ে হায়া’র কোমড় চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে ঘাড় চেপে ধরে। পুনরায় মিলিয়ে দেয় তার পুরুষালি ওষ্ঠের সাথে হায়া’র কোমল ওষ্ঠ। হায়াও এবার তার সাথে তাল মেলাতে শুরু করে। আশিয়ানের দিকে আরেকটু এগিয়ে এসে তার বুকের সাথে লেপ্টে গিয়ে একে অপরের ভালোবাসা আদান-প্রদান করতে থাকে।

_________________________

মেহরিমার অনেক চেষ্টা করেও যখন গাড়ির ডোর খুলতে পারে না তখন না চাইতেও তার জাহানের সাথে কথা বলতে হয়। সে দৃষ্টি অন্যদিকে রেখেই জাহানকে বলে–

—লক খুলে দিন। আমার লেট হচ্ছে।

—এদিক ঘুরে কথা বলো।

কথাটা নরমালি বললেও শোনা যায় আদেশ করছে যেনো। মেহরিমা জাহানের কথা শুনে না। অন্যদিকেই মুখ করে রাখে। তার মনে অভিমান ও শঙ্কা জন্মেছে। বারবার চোখের পাতায় তখনকার সেই দৃশ্য ফুটে উঠছে। জাহানকে সে অন্যের সাথে কল্পনাও করতে পারে না সেখানে এমন একটা দৃশ্য নিশ্চয়ই তারজন্য পীড়াদায়ক বৈ আর কিছু নয়।

জাহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করে–

—তোমার এই অভিমান আমার পবিত্র ভালোবাসায় আঙুল তুলছে তুমি কি তা বুঝতে পারছো? আমার মা-বোনের পর তুমিই একমাত্র নারী যার জন্য আমি জাহান নিজের জীবন দিতেও দ্বিতীয় বার ভাববো না। সেখানে তুমি আজ একটা সিলি ইন্সিডেন্টকে কেন্দ্র করে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখছো?

মেহরিমা এবার মুখ না খুলে পারে না। সে জাহানের দিকে মুখ ফেরালেও দৃষ্টি তার নিচের দিলে বরাবরের মতো। সে বলে–

—কি করবো বলেন? আপনি ব্যতীত কে আছো আমায় এত ভালোবাসবে? যত্ন নিবে? আপনি আর হায়া ব্যতীত তো আমার কেউ নেই এই দুনিয়ায়। আজ যখন আপনাকে ঐ অবস্থায় দেখলাম আমি অনুভূতিশূন্য, বোধশূন্য হয়ে পরেছিলাম। আমি.. আ…

মেহরিমা আর কিছু বলতে পারে না। এতক্ষণ চেয়ে রাখা কষ্ট গুলো তার বাধ ভেঙে কান্নারূপে বের হয়ে আসে। দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে শব্দ করে কাঁদতে থাকে। জাহানের বুক জ্বলে উঠে মেহরিমাকে এমন ভাবে কাঁদতে দেখে।

ভুল ক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং মাই লাভিং রিডার্স ]

#সাঝের_প্রণয়ডোর
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_২৪

তিনটি হৃদয়, তিনটি গল্প—তবু এক সুতোয় বাঁধা প্রেমের রঙিন দিনগুলো। তাদের প্রতিটি সকাল শুরু হয় মিষ্টি এক হাসিতে, আর প্রতিটি রাত শেষ হয় ভালোবাসার মানুষটির নিরব চুম্বনে।

তবে সেই গল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলাদা, সবচেয়ে হৃদয়ছোঁয়া যদি কোনোটা হয়, সেটা নিঃসন্দেহে আশিয়ান ও হায়ার।

এক সময়ের ঠুনকো কথোপকথন এখন গভীর হয়ে উঠেছে। যাদের মাঝে একসময় নিঃশব্দ যুদ্ধ চলত চোখে চোখে, তাদের চোখেই আজ প্রেম খেলা করে। হায়ার হৃদয়ে আশিয়ানের জন্য যে ভালোবাসা জন্ম নিয়েছিলো পাঁচ বছর আগে, সেটি কখনোই ফুরিয়ে যায়নি। বরং অভিমানের আবরণে সে অনুভব চাপা পড়ে ছিলো, অপেক্ষায় ছিলো সঠিক মুহূর্তের—যখন কোনো আদুরে স্পর্শ, কোনো ভালোবাসাময় দৃষ্টিতে আবার জেগে উঠবে।

বিয়ের পর আশিয়ান সেই অপেক্ষার শেষ টেনে দেয়। তার নিঃশব্দ ভালোবাসা, নরম শাসন, এবং অসীম যত্ন হায়ার ভেতরের বরফ গলিয়ে দিয়েছে ধীরে ধীরে।
হায়া’র প্রতি ছোট্ট বিষয়ে খেয়াল রেখে সে নিজের বেখেয়ালিতে হায়া’র হৃদ কুঠুরিতে পুনরায় নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছে।

এখন তাদের সম্পর্ক আর কেবল দায়িত্ব বা সামাজিক পরিচয়ে আটকে নেই, বরং প্রতিটি দিন যেন এক নতুন প্রেমপত্র। হায়া জানে, আশিয়ান বদলে গেছে না, বরং সে ঠিক সেই মানুষ—যার মাঝে ভালোবাসার ভাষা শুধু প্রকাশ পেতে সময় নিয়েছে।

তারা প্রেমিক, তারা সঙ্গী। আর প্রেমের এই নতুন অধ্যায়ে, তারা প্রতিদিন একে অপরকে নতুন করে আবিষ্কার করে—আর প্রতিবারই আরও গভীরভাবে প্রেমে পড়ে যায়।

এখন তারা দু’জনই চায় তাদের সম্পর্কটাকে আর পাঁচটা স্বাভাবিক সম্পর্কের মতো রূপ দিতে। খুব কাছে এসে সীমাহীন ভালোবাসা দিয়ে একে অপরকে নিজের করে নিতে। একটা সঠিক সময়, আর তারা একে অপরের ভালোবাসা চিরকালের জন্য বিভোর হয়ে যাবে।

________________________

ফোনের ভাইব্রেশনের আওয়াজে আশিয়ানের ঘুমটা ভেঙে যায়। চোখ বন্ধ রেখেই হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে ফোনটা খুঁজে বের করে। এক চোখ খুলে দেখে ভার্সিটি থেকে কল এসেছে। আশিয়ান চোখ ভালো করে খুলে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে।

তার নড়াচড়ায় বুকের উপর শুয়ে থাকা হায়াও নড়েচড়ে উঠে, কিন্তু তার ঘুম ভাঙে না। ভাঙবে কি করে? কাল গভীররাত পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সারা বছর যায় হেলে ফেলে, পরীক্ষার আগের দিনে তার হুশ ফিরে এমন একটা অবস্থা হয়েছে হায়া’র। তার সাথে আশিয়ানও রাত জেগে বসেছিলো। হায়া কত করে বললো তাকে ঘুমিয়ে পড়তে কিন্তু আশিয়ান তার কথা শুনলে তো।

হায়া’র পড়া শেষ হয় ফজরের আজানের দিকে। আজান পরার আগেই আউয়াল ওয়াক্তেই নামাজ পড়ে দুই জামাই বউ ঘুমে ঢলে পড়েছে। সারা রাত না ঘুমানোর কারণে এখন ঘুমটা একটু গভীরই।

আশিয়ান হায়া’র খুলে রাখা কেশে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শুনতে পায়, ফোনের অপর পাশের ব্যক্তিটি তাকে বলছে–

—আশিয়ান স্যার, হিস্ট্রি সাবজেক্টের প্রফেসর আবদুস সাত্তার স্যার অসুস্থতার কারণে আজ তার ক্লাসটা নিতে পারবেন না। তিনি আপনার নাম রেফার করেছেন তার ক্লাসটা নেওয়ার জন্য। যদিও আজ আপনি ছুটিতে আছেন, তাও জিজ্ঞেস করছি আপনি কি তার ক্লাসটা নিতে পারবেন?

আশিয়ানের একজন পছন্দের মানুষ হলো তার কলিগ এই আবদুস সাত্তার। লোকটা তার বাবার বয়সী হলেও তার সাথে আশিয়ানের বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক। আশিয়ানকে বিভিন্ন বিষয়ে হেল্প ও পরামর্শ করে থাকেন উনি। সেই ব্যক্তি আজ নিজ থেকে তার নাম প্রেফার করেছে এটা তার জন্য অনেক বড় সম্মানের বিষয়। কিন্তু আজ হায়া’র প্রথম পরীক্ষা বলে সে ছুটি নিয়েছিলো। এখন যদি সে ক্লাস নিতে চলে যায় তাহলে হায়া’র সাথে যাওয়া হবে না তার।

আশিয়ান কলদাতাকে এক মিনিট হোল্ড করতে বলে ফোনটা মিউট করে হায়া’কে নিজের বুক থেকে সরিয়ে বালিশে শুইয়ে দেয়। হায়া ঘুমের ঘোরেই বলে উঠে–

—আমার ঘুম হয়নি। যেয়েন না প্লিজ আপনি।

আশিয়ান হায়া’র কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে সেখানে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বলে–

—যাচ্ছি না। একটা কল এসেছে, কথা বলে আবার আসছি। তুমি ঘুমাও।

হায়া ফিরতি কোন জবাব দেয় না। আশিয়ান বেড থেকে নেমে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় ফোন নিয়ে। জিজ্ঞেস করে–

—ক্লাস কয়টায় শুরু হবে?

—লাঞ্চের পর। দু’টো বাজে শুরু হবে।

টাইমিংটা একদম পারফেক্ট আশিয়ানের জন্য। হায়া তখন এক্সাম দিবে আর এই ফাঁকে তার ক্লাস টাও নেওয়া হয়ে যাবে। আশিয়ান ইতিবাচক উত্তর দিয়ে ফোনটা কেটে দেয়। কল রেখে ফোনটা সামনে আনতে একটা ইমেইল চোখে পড়ে। আবদুস সাত্তার স্যার তাকে বিষয়টা সম্পর্কে ভোরে ই-মেইল করেছেন। সে তার জবাব ফিরতি ইমেইলে জানিয়ে দেয়। আশিয়ান বেডে এসে শুবে তখনই দরজায় কে জানি নক করে।

বিরক্তিতে আশিয়ান “চ” জাতীয় শব্দ করে। মাথাটা টিসটিস করছে ব্যথায়। আশিয়ান পা চালিয়ে হেঁটে এসে দরজা খুললে দেখতে পায় তার প্রাণপ্রিয় জন্মদাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন।

স্পর্শ কোমল গলায় জিজ্ঞেস করে–

—আটটা বাজতে চললো আব্বু, নাস্তা করবে না তোমরা?

—এখন করবো না আম্মু। কাল হায়া রাত জেগে পড়েছিলো আর আমি ওকে বসে বসে পাহারা দিয়েছি। ঘুমিয়েছি ফজরের পর দিয়ে। ঘুম হয়নি আমাদের। আরেকটু ঘুমাই, দশটার দিকে উঠবো আমরা। তখন করবো।

—আচ্ছা।

স্পর্শ উত্তর শুনে চলে যায় নিজের কাজে। আশিয়ান দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে পুনরায় হায়া’কে কোলবালিশের মতো জাপ্টে ধরে চোখ বন্ধ করে।হায়াও আদুরে বিড়ালের মতো তার বুকে এসে মুখ গুঁজে।

_______________

গলির মুখে হোয়াইট কালারের দাঁড়ানো গাড়িটা মেহরিমা সহজেই চিনতে পেরে যায়। বিরক্তির মাঝেও একটা ভালো লাগা ঘিরে ধরে। হায়া আর জাহান তাকে প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশিই ভালোবাসে।

কাল হায়া’কে পইপই করে মানা করার পরও আজ সে গাড়ি নিয়ে মেহরিমার হোস্টেলের সামনে এসে হাজির। দু’জনের সিট একই জায়গায় পড়ায় হায়া বলেছে তাকে তার সাথে যেতে কিন্তু মেহরিমা তা নাকচ করে দেয়।

কিন্তু হায়া বরাবরের মতো বান্ধবী ও একমাত্র হবু ননদ হওয়ার অধিকারের পূর্ণ ফয়দা তুলে আজ এসে হাজির। মেহরিমা টুকটুক করে গাড়ির সামনে এসে হাজির হলে হায়া দরজা খুলে গাড়িতে তুলে নেয়। মেহরিমা আশিয়ানের সাথে কুশল বিনিময় শেষে হায়া’র দিকে তাকালে দেখতে পায় হায়া বইয়ে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে।

মেহরিমা এমন দৃশ্য দেখে অবাক হয় না। গতবারও এমনটাই করেছিলো এই মেয়ে। হায়া একবার এই পৃষ্ঠা থেকে পড়ছে তো আরেকবার ঐ পৃষ্ঠায় নজর বুলচ্ছে। মেহরিমা আস্তে করে বলে–

—এত টেনশন নিস না তো। তুই পারবি সব ইনশা আল্লাহ।

হায়া বই থেকে মুখ তুলে ভীত কণ্ঠে বলে–

—দোস্ত রে, মনে হচ্ছে সব ভুলে যাচ্ছি।

মেহরিমা কিছু বলার আগে সামনে থেকে আশিয়ান কড়া গলায় ধমক দিয়ে বলে–

—আরো পড়ো তাহলে ভুলবে না। কাল থেকে বলছি রিল্যাক্স থাকতে, এত টেনশন না করতে কিন্তু আমার একটা কথা শুনো না তুমি। এই বইটা দাও আমায়। আর একটা অক্ষরও পড়বে না তুমি। মাইন্ড টাকে একটু রেস্ট দাও।

আশিয়ান পেছন ঘুরে বইটা নিতে গেলে হায়া দূরে সরে গিয়ে বইটা বুকের সাথে চেপে ধরে। ভাঙা ভাঙা গলায় বলে–

—দিবো না। আরেকবার রিভিশন দিবো।

আশিয়ান চোখ গরম করে বলে–

—দাও বলছি। সারা বছর পড়ালেখার ধারে কাছে দেখা যায় না,পরীক্ষার আগে যতসব ঢং।

আশিয়ান জোর করে টেনে বইটা নিয়ে নেয় হায়া’র থেকে। হায়া ঠোঁট উল্টে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে। এমনিতেই তার ভয় লাগছে তার উপর আশিয়ানের এমন ধমকাধমকিতে তার খারাপ লাগছে।

হায়া মুখ গোমড়া করে জানালার বাহিরে তাকায়। মেহরিমা তার সাথে দুই একটা কথা জিজ্ঞেস করলে সে হ্যা না তে জবাব দেয়। আশিয়ান সবটা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। কাল থেকে অনেক আদুরে গলায় বুঝিয়েছে, কিন্তু এই বাদর আদর নেওয়ার মানুষ না। যদি এখন সে বইটা না নিতো তাহলে হায়া আরো পড়তো আর নার্ভাস হয়ে সব ভুলে গোঁজামিল করে দিতো।

__________________________

জাভিয়ান নতুন একটা ডিল সম্পর্কে ম্যানেজারের সাথে ছোট্ট একটা মিটিং শেষ করে মাত্রই রিল্যাক্স হয়ে বসেছিলো তখনই কেউ একজন দরজায় নক করে। জাভিয়ান পারমিশন দিলে লোকটি ভেতরে প্রবেশ করে।

জাভিয়ান আগত লোকটিকে দেখে খানিক অবাক হয়ে বলে উঠে–

—তুমি??

_______________

আফরা আদিবাকে সেই কখন থেকে বকেই যাচ্ছে। তাকে বকার কারণ হলো, আজ তারও পরীক্ষা ছিলো আর সে জাস্ট পাশ নাম্বার উঠিয়ে চলে এসেছে। এসো তো তার মধ্যে কোন অনুতাপের ছায়া টুকু নেই উল্টো শুয়ে শুয়ে কার্টুন দেখছে।

আফরা আদিবা’র পিঠে ঠাস করে একটা বসিয়ে দিয়ে রাগী গলায় বলে–

—এই নির্লজ্জ মেয়ে, একে তো পরীক্ষায় পাশ নাম্বার উঠিয়ে চলে এসেছিস তারউপর এখন শুয়ে শুয়ে কার্টুন দেখছিস আর দাত ক্যালাচ্ছিস। লজ্জা করে না এত বড় হয়ে কার্টুন দেখতে?

আদিবা নিজের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে–

—আম্মাজান, কার্টুনের শুরুতে তো বলে দেওয়া হয়নি যে কার্টুন শুধু ছোটরা দেখতে পারবে বড়রা না। তাই আমি দেখছি। আর পরীক্ষার কথা বললে, আচ্ছা তুমিই বলো দুনিয়ায় সবাইকে দিয়ে কি সবকিছু হয়? সবাই যদি সব বিষয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন হতো তাহলে দুনিয়ায় ডিপ্রেশন তথা হতাশা নামক কোন বস্তুই থাকত না আর নাই বা দিনকে দিন সুইসাইড নামক নির্মম কাণ্ড হতো।

ভীষণ জ্ঞানী ভাব ধরে কথাগুলো বলে আদিবা। আফরা চোখ গরম করে বলে–

—ওরে আমার ফিলোসফার আসছে রে!!! এমন পাকা পাকা কথা না বলে একটু বইয়ের পাতা উল্টে দেখলেও তো পারিস।

—পড়ালেখা আমার ভালো লাগে না আম্মু। বিয়ে দিয়ে দাও। বিয়ে করে গুছিয়ে সংসার করি।

—তবে রে!!! বিয়ের করাচ্ছি তোকে।।

আফরা স্কেল এনে আদিবাকে মারতে নিলে আদিবা চোখ বড় বড় করে চিৎকার করে বলে উঠে–

—ও আব্বু গোোোোোোোো

বলেই ফুরুৎ। আফরাও আদিবার পেছন পেছন ছুট লাগায় তাকে মা”রতে। আদিবা এক দৌড়ে নিচে বাবার কাছে ছুটে গিয়ে তার পেছনে লুকায়। আফরা আদিয়াতের পেছন থেকেই আদিবাকে মারতে গেলে আফরা আদিয়াতকে ধরে একবার এদিক যায় তো আরেকবার ঐদিক যায়। আদিয়াত এই মা-মেয়ে খুনসুটি পূর্ণ ঝগড়া দারুণ ভাবে উপভোগ করতে থাকে।

আফরা রাগী গলায় বলে–

—আফিফের বাবা, আপনি সামনে থেকে সরুন তো। এই মেয়েকে মুখের কথায় সোজা করা যাবে না। বলে কিনা পড়া লেখা ভালো লাগে না বিয়ে দিয়ে দাও। সে গুছিয়ে সংসার করতে চায়। এই মেয়ে (আদিবাকে ধমক দিয়ে) এখন বাপের পিছনে লুকিয়েছিস কেন? সামনে আয়।

—আহ আফরা! এমন করো না তো মেয়েটার সাথে। সবাই কি আর সব বিষয় পারদর্শী বলো? আমাদের আদিবাও তেমন। ও যতটুকু পারে ততটুকুই আলহামদুলিল্লাহ।

আফরা ছুটাছুটি বন্ধ করে এক হাত কোমড়ে রেখে রাগী গলায় বলে–

—আহা রে!! মেয়ের প্রতি ভালোবাসায় উতলে পড়ছে। আর বউয়ের বেলা কানাকড়িও ছিলো না। বিয়ের পর কত করে বললাম আমি পড়ালেখা করবো না, করবো না শুনে ছিলেন আমার কথা? আফিফকে ৮মাসের পেটে নিয়েও পরীক্ষা দিতে পাঠিয়েছিলেন। কি মনে করেছেন, ভুলে গিয়েছি আমি?

এই রে! একসময় বউয়ের উপর পড়ালেখা নামক অত্যাচার করলেও মেয়ের উপর এখন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না আদিয়াত।

এদিকে আদিবা বাবা-মায়ের ঝগড়ার ফয়দা নিয়ে আবারও ফুড়ুৎ করে উড়াল দেয়। আফরা আদিবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে–

—আমি আপনার উপর প্রচন্ড রেগে আছি আফিফের বাবা। আজ আমি আম্মার সাথে ঘুমাবো। আপনি একা ঘুমাবেন রাতে।

কথাটা বলে আফরা হনহনিয়ে চলে যায় কিচেনের দিকে। সন্ধ্যার নাস্তা বানাতে। আর এদিকে অবাকের সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে রেখে যায় আদিয়াতকে। কিছু না করেও আজ তাকে শাস্তি পেতে হবে।

~চলবে?

ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং পাই লাভিং রিডার্স ]