সাঝের প্রণয়ডোর পর্ব-২৯+৩০

0
1

#সাঝের_প্রণয়ডোর
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_২৯

[১৮+ এলার্ট। পর্বটি প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত]

—রাহা সেকেন্ড ইয়ার তো শেষ হলো। এখন ভাবছি ওর বিয়েটা দিয়ে দিবো। ভালো একটা সমন্ধও পেয়েছি। কথা অনেকটাই পাকা হয়ে গিয়েছে। হয়ত এই মাসের শেষের দিকে বিয়েটার ডেট ঠিক করা হবে।

শুতে যাওয়ার সময় রাহাত উক্ত কথাগুলো নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে বলে। মুনতাহা স্বামীর কথা শুনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। তার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো অথচ সে মা হয়ে কিছুই জানল না। বিষয়টা কষ্টদা একজন মায়ের কাছে।

মুনতাহা মনে মনে ভাবে,” আমি কি এতটাই ফেলনা যে আমার মেয়ের বিয়ে পাকা হয়ে গেলো আর আমায় একটু জানানোর প্রয়োজন বোধটুকুও করলেন না রাহাত? নাকি সে আমায় তেমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিই হিসেবে মনে করে না? এই সংসারে আমার পরিচয়টা কি? রাহাতের স্ত্রী আর তার সন্তানদের মা? এইটুকু? আমার নিজের কোন পরিচয় নেই? কোন মতামত দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কি আমি নই?”

—কি হলো কিছু বলছি তোমায় আমি। তুমি কোন খেয়ালে ডুবে আছো?

বিরক্ত হয়ে কথাগুলো বলে রাহাত। মুনতাহার ধ্যাণ ভঙ্গ হয়। সে উদাসীন ও নির্লিপ্ত গলায় বলে–

—ওহ্হ আচ্ছা। ভালো তো।

মুনতাহার এমন নির্লিপ্ততা দেখে রাহাত একটু অবাকই হয়। তাদের মেয়ের বিয়ে আর মা হিসেবে মুনতাহা কতটা উদাসীন।

সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে–

—ওহহ আচ্ছা মানে? আমাদের মেয়ে, এই চৌধুরী বংশের বড় সন্তানের বিয়ে হবে, সেখানে মা হিসেবে তুমি এতটা নির্লিপ্ত আচরণ কিভাবে করছো? কোন এক্সাইটমেন্ট বা কোন উৎসাহ নেই কেন তোমার মাঝে মুন?

—আমাকে না জানিয়েই সব ঠিক করে ফেললেন। ছেলে কে? কি করে? কিছুই জানলাম না আমি মা হিসেবে। তাহলে সেখানে আমার আগ্রহ দেখানো কোন মানে আছে কি? বরাবরের মতো এবারও মেয়ের জন্য কোন সিদ্ধান্ত আপনি একা নিলেন। আমার থেকে মতামত নিবেন তো দূরের কথা আমায় জানাচ্ছেন এসব অলরেডি ঠিক হয়ে যাওয়ার পর। সেখানে আমার থেকে আর কতই বা উৎসাহ আশা করতে পারেন? বিশ্বাস করুন, আপনি যদি বিয়ের আগের দিনও এই কথাটা বলতেন আমি বেশি একটা অবাক হতাম না। কারণ আমি বুঝে গিয়েছি আপনাদের জীবনে আমার উপস্থিতি, আমার মতামতের গুরুত্ব কতটুকু।

মুনতাহা একটু থামে, শ্বাস নিয়ে আবারও বলা শুরু করে–

—কাকে কাকে ইনভাইট করতে হবে আর কেনাকাটার বিষয়টা কি আপনি দেখবেন নাকি আমি দেখবো সেটাও জানিয়ে দিয়েন। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। ঘুমিয়ে পরুন। কাল এটা নিয়ে কথা হবে। শুভ রাত্রি।

নিজের মতো কথাগুলো বলে মুনতাহা শুয়ে পড়ে নিজের জায়গায় রাতুলের দিকে পিঠ দিয়ে। রাতুল নিস্প্রভ চোখে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। কথাগুলো তার বুকের কোথাও একটা গিয়ে বাজে ভাবে আঘাত করেছে।

তারপর সেও শুয়ে পড়ে। কপালে হাত রেখে ভাবতে থাকে অনেক কিছুই। সেই সাথে জ্বলতে থাকে বুকের গহীনে।

____________________________

খানিকটা ভয়ে ভয়েই আশিয়ান রুমের দিকে এগোচ্ছে। সাড়ে নয়টায় বাসা থেকে বের হয়েছিলো ডিনার করে এখন বারোটা বাজতে চলেছে। হায়া নিশ্চয়ই রেগেমেগে ঘুমিয়ে পড়েছে। আশিয়ান বিড়বিড়িয়ে বলে–

—আল্লাহ এবারের মতো বউটার রাগ কমিয়ে দাও।

আশিয়ান দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দরজাটা পুনরায় লাগিয়ে দেয়। পিছনের দিকে ঘুরে সে চমকে যায়। নিজের রুমটাকেই সে চিনতে পারছে না। হায়া রুমের পুরো লুকই চেঞ্জ করে দিয়েছে।

লাল ও কালো থিমে ঘরটা সাজিয়েছে হায়া। সাথে ক্যান্ডেলসও রয়েছে। আশিয়ান হা করে তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঘরটা দেখতে থাকে। মেঝেতে লাল কালো হার্টশেপ বেলুন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আশিয়ানের নজরে আসে টি-টেবিলের উপর মাঝারি সাইজের একটা রেড ভেলভেট কেকের উপর। আশিয়ান সেদিকে এগিয়ে যায়।

টেবিলের কাছে এসে দেখতে পায় কেকটার উপর “হ্যাপি বার্থডে বরসাহেব” লেখা সুন্দর করে। পাশেই একটা কার্ড দেখতে পায়। আশিয়ান কৌতূহল বসত কার্ডটা হাতে তুলে নিয়ে খুলে পড়তে শুরু করে। সেখানেও গুটি গুটি অক্ষরে লেখা রয়েছে–

—মনে হচ্ছে, এই অবাধ্য মনটা আবারো কারো প্রেমে মজেছে। তার গভীর স্পর্শ পাওয়ার জন্য রাতগুলো নিজের স্থায়ীত্ব বাড়াচ্ছে। এবার কি আগলে নিবে সে নাকি অবহেলা করবে পূর্বের মতো?

~হায়া

একবার, দুই বার, বারবার পড়তে থাকে কথাগুলো আশিয়ান। যতই পড়ছে ততই অদ্ভুত ভালোলাগা, প্রশান্তি তাকে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে। ঠোঁটের কোণে থাকা হাসিটাও চওড়া হচ্ছে বারেবার।

হঠাৎই আশিয়ানের মাথায় একটা প্রশ্নের আগমন ঘটে। হায়া কোথায়? যে এত কিছু করলো, এত সুন্দর ভাবে তাকে সারপ্রাইজড করলো সেই ব্যক্তিটি কোথায়?

ভাগ্য বোধহয় তার আশিয়ানের প্রতি আজ একটু বেশিই সুপ্রসন্ন। তাই তো তার প্রশ্নের উত্তরগুলো সাথে সাথেই পেয়ে গেলো। খট করে একটা আওয়াজে আশিয়ান পেছন ফিরে তাকালে মুগ্ধতায় সে স্থির হয়ে যায়।

পাতলা ফিনফিনে কালো শাড়ি গায়ে জড়িয়ে সেটার আঁচল ঠিক করতে করতে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে হায়া। শর্ট হাতার ব্লাউজে তার ফর্সা বাহুদ্বয় চক্ষুগোচর হতেই আশিয়ানের গলা শুঁকিয়ে কাঠকাঠ হয়ে যায়।

হায়া কোন দিকে নজর না দিয়ে আপন মনে ড্রেসিংটেবিলের সমানে গিয়ে দাড়ায়। কাজল তুলে নিয়ে চোখে লাগাতে শুরু করে। ঘরটা আবছা অন্ধকার হয়ে থাকায় আশিয়ানের উপস্থিতি সে এখনো টের পায় নি।

কাজল লাগানো শেষ করে ডার্ক রেড লিপস্টিক দিয়ে নিজের গোলাপের ন্যায় ওষ্ঠ যুগল সুন্দর করে একে নেয়। লিপস্টিক লাগানো শেষ করে ঠোঁটগুলো উঁচু করে পাউট করে চুমুর মতো। দৃশ্যটা দেখে আশিয়ান অনুভব করে তার ভীষণ তেষ্টা পেয়েছে। সেটা কিসের আশা করি বলা লাগবে না।

ব্যস তার সাজ কমপ্লিট। আয়নায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজেকে দেখতে থাকে হায়া, তখনই তার নজরে আসে নিজের পেছনে থাকা একটা ছায়ামূর্তিকে। হায়া ঝট করে পেছন ফিরে দেখে এ আর কেউ না তার বরসাহেব। পরপর কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে নেয় সে। এতক্ষণ কোন অস্বস্তি বা ভয় না লাগলেও আশিয়ানকে দেখার পর থেকে এক অজানা ভীতি তাঁকে আঁকড়ে ধরেছে।

হায়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বারোটা বেজে গিয়েছে। সে এক পা এক পা করে হেটে আশিয়ানের সামনে এসে উপস্থিত হয়। একটা লম্বা শ্বাস নিজের ভেতর টেনে নিয়ে সেটা আবার সাথে সাথেই ত্যাগ করে দেয়। নিজেকে ধাতস্থ করে বলে উঠে–

—শুভ জন্মদিন বরসাহেব।

আশিয়ানের মনটা খুশিতে ভরে উঠে। সে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি নিয়ে বলে–

—ধন্যবাদ তোমায়।

হায়া আশিয়ানের হাত ধরে তাকে টেবিলের সামনে নিয়ে আসে। ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে একটা ছুড়ি আশিয়ানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে–

—নিন কাটুন।

আশিয়ান ক্যান্ডেলস নিভিয়ে কিছুটা কেক হায়া’কে খাইয়ে দেয়। হায়াও তাকে কিছুটা খাইয়ে দেয় সেই সাথে আশিয়ানের উঁচু নাক টায় ক্রিম লাগিয়ে দিয়ে খিলখিলিয়ে হেঁসে দেয়। আশিয়ান রাগ করতে গিয়েও হায়া’র হাসি দেখে আর করতে পারে না।

হায়া টেবিলের উপর থেকে একটা বক্স উঠিয়ে সেটা থেকে তার কেনা ঘড়িটা বের করে। তারপর সেটা আশিয়ানের হাতে পরিয়ে দেয়। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে–

—পছন্দ হয়েছে?

আশিয়ান ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে তার ফেভারিট ব্র্যান্ড থেকে ঘড়িটা নেওয়া হয়েছে। অপছন্দ হওয়ার কারণই নেই। আশিয়ান হায়া’র ডান হাতটা টেনে নিয়ে সেটায় নিজের ওষ্ঠের ছোয়া দেয়। সেই হাতটা নিজের গালের আলতো করে স্লাইড করতে করতে হাস্কি গলায় বলে–

—ভীষণ সুন্দর হয়েছে সবকিছু। বেস্ট বার্থডে অফ মাই লাইফ।

আশিয়ান মুখে দুই লাইন বললেও তার চোখ বলছে অনেক কথাই। অনুমতি চাইছে কিছু একটার। হায়া সবটাই দেখে, বুঝে। হাসফাস করে উঠে সে। আশিয়ানের থেকে চোখ সরিয়ে নেয় তৎক্ষনাৎ। হঠাৎই তার মনে পরে নিজের ফিলিংস গুলো নিয়ে লেখা কার্ডটা আশিয়ানকে দেওয়া হয়নি তার। সে টেবিলের দিকে তাকালে জায়গাটা খালি দেখতে পায়।

হায়া আশিয়ানের থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে–

—এক মিনিট, আমি আসছি।

আশিয়ান তাঁকে সম্মতি দেয় যাওয়ার। হায়া আশেপাশে সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজতে থাকে কার্ডটা। কিন্তু পায় না। আসলে আশিয়ানই কার্ডটা সোফায় বসার সময় নিজের পেছনে লুকিয়ে নিয়েছিল যেটা হায়া খেয়াল করেনি। আশিয়ান হায়া’র মুখ থেকে থ্রি ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ডস শুনতে চায় বলে এমনটা করেছে।

হায়া চিন্তিত হয়ে যায় কার্ডটা না পেয়ে। আজই তো বেস্ট একটা দিন আশিয়ানকে নিজের মনের কথা জানানোর, তাকে আপন করার।

কোন এক জড়তার কারণে সে মুখে বলতে পারছে না বলেই কার্ডটায় লিখেছিল, কিন্তু সেটা না পাওয়ায় তার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। কাজল কালো চোখজোড়ায় অশ্রুরা এসে ভীর করতে থাকে। ক্ষণে ক্ষণে অনুমতি চাইতে থাকে গড়িয়ে পড়ার। একসময় হায়া’র অনুমতি ছাড়াই তার তুলতুলে গাল জোড়া বেয়ে গড়িয়ে পড়তে শুরু করে অবাধ্য অশ্রু কণা।

—কি খুঁজছো এমন পাগলের মতো?

—একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।

খুঁজতে খুঁজতেই জবাব দেয় হায়া। গলাটা তার ভাঙা ভাঙা। আশিয়ানের বুকটা কেমন করে উঠলো। মেয়েটা এত সুন্দর করে সেজেগুজে তাকে এমন চমৎকার ভাবে সারপ্রাইজ দিলো আর সে কিনা নিজের স্বস্তির জন্য তাকে কাঁদালো?

হায়া তার কার্ডটা তখন ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ারগুলোয় খুঁজতে ব্যস্ত, আশিয়ান বিড়াল পায়ে হেঁটে তার পেছনে উপস্থিত হয়। একটু ঝুঁকে হায়া’র কানের কাছে নিজের মুখটা এনে ফিসফিসে বলতে শুরু করে–

—”মনে হচ্ছে, এই অবাধ্য মনটা আবারো কারো প্রেমে মজেছে। তার গভীর স্পর্শ পাওয়ার জন্য রাতগুলো নিজের স্থায়ীত্ব বাড়াচ্ছে। এবার কি আগলে নিবে সে নাকি অবহেলা করবে পূর্বের মতো?” এমন কিছু কি লেখা ছিলো কার্ডটায়?

হায়া চমকে আশিয়ানের দিকে ফিরে। আশিয়ানের ঠোঁটের কোণে তখন দুষ্টু হাসি ঝুলে রয়েছে, চোখও ইশারায় লজ্জা দিতে ব্যস্ত। হায়া আশিয়ানের এমন হাসি দেখে লজ্জা পেয়ে যায়। সে মাথা নিচু করে ফেলে তৎক্ষনাৎ।

আশিয়ান এক পা এক পা করে হায়া’র দিকে আগাতে থাকে, আর হায়া এক পা এক পা করে পেছাতে থাকে। যেতে যেতে একদম ড্রেসিংটেবিলের সাথে লেগে যায় হায়া। আর কোন যাওয়ার জায়গা নেই তার। মূলত সেও যেতে চাইছে না।

আশিয়ান দুই আঙ্গুল দিয়ে হায়া’র থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করলে হায়া সাথে সাথে চোখজোড়া খিঁচে বন্ধ করে নেয়। আশিয়ান সেটা দেখে নিঃশব্দে হাসে। বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে হায়া’র ঠোঁটের পাশে স্লাইড করতে করতে বলে–

—অনুমতি পাচ্ছি তাহলে গভীরভাবে স্পর্শ করা? পুরো তোমায় টাকে নিজের ভেতরে আগলে নেওয়ার? (হায়া’র কানের কাছে আরেকটু ঝুকে এসে বলে) আদরে আদরে পাগল করে দেওয়ার?

আশিয়ানের এমন নেশালো কণ্ঠের বাণীতে হায়া নেতিয়ে পড়ে। শিরদাঁড়া বেয়ে ভালোলাগার শিহরণ বয়ে যায়। থরথরিয়ে কেঁপে উঠে হায়া’র মেয়েলি কায়া।

আশিয়ান আবারও বলে–

—অনুমতি পাচ্ছি কি?

হায়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলে–

—আমি তো আপনারই। আমার উপর পূর্ণ অধিকার আছে আপনার, সেখানে অনুমতির প্রশ্ন আসছে কেনো?

আশিয়ানের হাসি আরো চওড়া হয়। বুকে প্রশান্তির বাতাস বয়ে যায়। সে হায়া’র মাথার পেছনের চুল আলতো হাতে আঁকড়ে ধরে তার ললাটে প্রগাঢ় এক চুম্বন করে। হায়া আশিয়ানের বুকের কাছের টি-শার্ট খামচে ধরে শক্ত করে।

ললটাে চুম্বন দেওয়া শেষ হলে আশিয়ানের ঠোঁট নেমে আসে হায়া’র চোখে। সেখানেও সময় নিয়ে ভালোবাসার স্পর্শ দেয়। আশিয়ানের প্রতিটা স্পর্শের হায়া কেঁপে কেঁপে উঠে। সবশেষে বাকি রয় হায়া’র রেড লিপস্টিকে আচ্ছাদিত ওষ্ঠদ্বয়। সেদিকে তাকিয়ে আশিয়ানের নেশা চড়ে যায়।

আশিয়ান হায়া’র কানের পেছনে চার আঙুল দিয়ে চেপে ধরে হায়া’র মাথাটা নিজের মুখের আরো কাছে নিয়ে আসে। অস্থির ভাবে নিঃশ্বাস ফেলে হায়া’কে বুঝাতে চায় সে কতটা চাইছে হায়া’কে। হায়া হয়ত বুঝে যায় স্বামীর অস্থিরতা। তাই সে নিজেও কিছুটা এগিয়ে এসে এক হাত দিয়ে আশিয়ানের ঘাড়ের পেছনে রাখে আরেক হাত আগের থেকে শক্ত করে নিজের হাতের মুঠি। আশিয়ান বুঝে যায় হায়া’র সম্মতি। সে আর কাল বিলম্ব না করে নিজের পুরুষালি ওষ্ঠ দ্বারা আঁকড়ে ধরে হায়া’র গোলাপের ন্যায় ওষ্ঠ যুগল। উন্মাদের ন্যায় আদর দিতে থাকে হায়া’কে।

সময় পেরিয়ে যায় কিন্তু আশিয়ান ছাড়ে না হায়া’কে। বরং ক্ষণে ক্ষণে তার স্পর্শ আরো প্রগাঢ় হয়। হায়া’র নিঃশ্বাস নিতে সামান্য সমস্যা হলেও সে সেটাকে পাত্তা দেয় না। সেও তাল মেলাতে থাকে স্বামীর সাথে।

আশিয়ান চুম্বনরত অবস্থায় হায়া’কে কোলে তুলে বেডের দিকে পা বাড়ায়। হায়া’কে আলতো করে বেডে শুইয়ে দিয়ে অস্থির ভাবে নিজের টি-শার্ট খুলে ছুঁড়ে ফেলে অজানায়, তারপর আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়ে হায়া’কে আদর করতে। বেশ কিছুক্ষণ পর ওষ্ঠ ভালোবাসার সমাপ্তি দেয় সে। মূলত হায়া শ্বাস নেওয়ার জন্য হাসফাস করায় তাকে সমাপ্তি দিতে হয়।

সে হায়া’র কাঁধ থেকে আচল সরিয়ে সেখানে মুখ ডুবিয়ে বেশ জোরে এক কামড় লাগায়। হায়া ব্যথা তো পাই ঠিকই কিন্তু সেই ব্যথাতেও আলাদা একটা ফিলিংস ছিলো। সে আশিয়ানের উন্মুক্ত পিঠে নিজের নখ দাবিয়ে খামচে ধরে। ক্ষতবিক্ষত করে দিতে থাকে নজরকাড়া সেই পিঠটা। আশিয়ান তার হাতের স্বাধীনতা দেয় ঠিকই কিন্তু তার অন্যান্য সব স্বাধীনতা হরণ করে নেয়।

আশিয়ান তার হায়া’র কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে–

—আই সোয়্যার আই’ম ট্রাইং টু বি এ জেন্টলম্যান.. বাট মাই মাইন্ড কিপস হুইসপারিং উইকিড থিংস। অ্যান্ড দ্য ওয়ার্স্ট পার্ট? আই ইউজুয়ালি লিসেন টু ইট মোর দ্যান মাই হার্ট।

কথাটা বলে আবারও এক প্রগাঢ় কামড় বসিয়ে দেয় হায়া’র কাঁধে। সময় তার আপন নিয়মে বইতে থাকে। রাত যত গভীর হয় আশিয়ানের ভালোবাসা, তার স্পর্শ ততই গভীর হয়। অসহ্য রকমে বেদনাদায়ক সুখে ভাসিয়ে দিতে থাকে তার ননীর পুতুলটাকে।

হায়া তার এমন উন্মাদনাময় ভালোবাসা দেখে একটাই প্রশ্ন করে–

—ভালোবাসেন আমায়?

আশিয়ান অস্থির ভাবে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলে–

—ভালোবাসি কিনা জানি না, কিন্তু তোকে ছাড়া আমি ভেঙে পড়ি… নিজেকেই চিনতে পারি না। তুই না থাকলে মনে হয় আশিয়ানটা কোথাও হারিয়ে গেছে… শুধু এক খোলা শূন্যতা বাকি থাকে। তুইই আমার পাগলামি, তুইই শান্তি।

হায়া’র হাতের বাঁধন আরো শক্ত হয়। সে আশিয়ানের পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তাকে শান্ত করতে চায়। সে পেয়েছে তার ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে। পূর্বের মতো এবার সে খালি হাতে ফিরে নি। তাকে সম্পূর্ণ করে দিয়েছে উপরওয়ালা। কথাটা ভেবেই হায়া’র চোখের কোণ বেয়ে সুখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সে ভাঙা ভাঙা গলায় বলে–

—একবার বলো না ভালোবাসো।

আশিয়ান তার গলা ও বুকের মাঝামাঝি জায়গায় ঠোঁটের স্পর্শ দিতে দিতে বলে–

—মুখে বলাটাই কি সব? যদি মুখে বলি তাহলে স্পর্শ পাবি না , আর স্পর্শ পেতে চাইলে মুখে শুনতে পারবি না।

হায়া আর কিছু বলে না, বলার মতে পরিস্থিতিতে থাকে না মূলত সে। সে আশিয়ানের ভালোবাসায় ভেসে যেতে থাকে ভালোবাসার রঙিন দুনিয়ায়। তাকে কিছু বলতে হয় না, কারণ ভাষা সেখানে পেছনে পড়ে গেছে। আশিয়ানের ভালোবাসা তাকে এক এমন জগতে টেনে নেয়, যেখানে শব্দ নেই—আছে শুধু অনুভব। হায়া চোখ বন্ধ করে দেয়, আর তাতে আশিয়ানই হয়ে ওঠে তার একমাত্র সত্যি।

_____________________________

এক প্রেমিক যুগল যখন নিজেদের আপন করে নেওয়ায় ব্যস্ত সেখানে আরেক যুগল বিচ্ছেদের অপেক্ষায় প্রহররত। ভাগ্য যে তাদের উপরও নির্মম হতে চলেছে তারা হয়ত জানে অথবা জানে না।

চলবে।

#সাঝের_প্রণয়ডোর
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_৩০

[গল্পের শেষে কথা গুলো পড়ার অনুরোধ রইলো]

সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে খেতে বসেছে তালুকদার পরিবার। হানিয়া সকলকে ব্রেকফাস্ট দিয়ে নিজেও বসে পড়ে স্বামীর পাশে। খেতে খেতে হঠাৎই জাভিয়ান তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে–

—আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাবা।

বৃদ্ধ মি.তালুকদার প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকান। কথাবার্তা তেমন একটা বলতে পারেন না বয়সের ভাড়ে। রুম থেকে বেরও হন খুবই কম। শুধু ব্রেকফাস্ট আর ডিনার করেন পরিবারের সাথে। এছাড়া সারাক্ষণ রুমেই থাকেন।

জাভিয়ান বলে–

—জাহান-জায়িনের তো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ, এখন ভাবছি ওদের বিয়ে দিয়ে আমরা আমাদের ফরজ কাজটা সেরে ফেলবো। এবিষয়ে তুমি কি বলো বাবা? মাম্মাম তোমার মতামত কি?

রোজিকেও জিজ্ঞেস করে জাভিয়ান। তারা দু’জনই জাভিয়ানের কথা শুনে খুশি হয়। রোজি বেগম কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন–

—ভালো ভেবেছিস বাবা। আমরাও আমাদের পুতি দেখে মরতে পারবো। কি বলো ভাই?

মি.তালুকদারও বোনের কথায় মাথা দুলিয়ে সম্মতি দেয়। জায়িন হইহই করে বলে উঠে–

—এই ছোট দাদী তুমি কিন্তু এসব বলবে না। আমার ভালো লাগে না এসব শুনে।

কথাটা বলে মন খারাপ করে বসে থাকে সে। রোজি বেগম হেঁসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মি.তালুকদার জাভিয়ানকে বলে–

—মেয়ে দেখা শুরু করো তাহলে। শুভ কাজে দেরি কেনো।

—মেয়ে আমাদের দেখা শেষ। আমি আর হানিয়া আমাদের পুত্রবধুদের পছন্দ করে ফেলেছি। এখন শুধু বিয়ের ডেট কনফার্ম করার পালা। ভাবছি এই মাসের শেষ শুক্রবার মানে চারদিন পর জাহান-জায়িনের বিয়ের ডেট রাখবো।

এত তাড়াতাড়ি মেয়ে পছন্দ করে আবার বিয়ের ডেটও কনফার্ম করে ফেলবে তাদের বাবা মা এটা জায়িন কল্পনাও করতে পারেনি। সে ভেবেছিলো বিয়ের কথা উঠলে সে আস্তে ধীরে বলবে, এখন দেখে তার না হওয়া সংসার টা আগেই ভেঙে যাচ্ছে তাও তার নিজেরই বাবা-মা’ বদৌলতে।

জায়িন বসা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বলে–

—এটা হতে পারে না। আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।

হানিয়া-জাভিয়ান এই কথাটা শোনারই অপেক্ষা করছিলো, তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেঁসে দেয়। জাভিয়ান নিজের হাসি গিলে নিয়ে গম্ভীর গলায় বলে–

—মেয়ের পরিবারকে কথা দিয়ে ফেলেছি আমরা। তারা বিয়ের তোরজোড় শুরুও করে দিয়েছে অলরেডি। আজ ডেটও কনফার্ম হয়ে গিয়েছে। আমি আর তোমাদের আম্মু আত্মীয়দের দাওয়াত দিতে বের হবো একটু পর। এর মধ্যে তুমি যদি বলো বিয়ে করতে পারবে না, তাহলে বুঝতে পারছো তোমার হবু বউয়ের পরিবারকে কতটা অপমানিত হতে হবে? বাচ্চাদের মতো কথা বলো না জায়িন, তোমার ভাইও রাজি এই বিয়েতে আশা করি তুমিও আমাদের সিদ্ধান্তে রাজি থাকবে। আমরা তোমার বাবা-মা, তোমাদের খারাপ চাওয়ার আগে আমরা যেনো দুনিয়া থেকে নিঃশেষ হয়ে যাই। এখন চুপচাপ খাওয়া শুরু করো।

জায়িন তার বাবার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে কথাগুলো শুনে। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না এটা তার বাবা। যেই বাবা তাদের জীবনের ছোট বড় সব সিদ্ধান্তে তাদের স্বাধীনতা দিয়েছে। সেই বাবা আজ তাদের জীবনের এত বড় সিদ্ধান্ত নিজে একা-একা নিয়ে নিলো? একবার তাদের জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধটাও করলো না?

জায়িন হতভম্ব হয়ে নিজের জায়গায় বসে পড়ে। মাথার মধ্যে একটা কথাই ঘুরপাক করছে, সে আদিবাকে কোন মুখে তার বিয়ের কথাটা জানাবে? মেয়েটা যে ছোট থেকে তার বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখে আসছে, এছাড়া সে নিজেও তো তাঁকে কত কত স্বপ্ন দেখিয়েছে। সে বর সাজবে আর আদিবা তার বউ সাজবে। বিয়ের পর তাদের খুনসুটি পূর্ণ ছোট একটা সংসার হবে। তারা কথায় কথায় ঝগড়া করবে, কিন্তু দিন শেষে একে অপরের সাথে লেপে ঘুমাবে। সেই স্বপ্ন যে আজ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো তার বাবা-মায়ের একটা হটকারি সিদ্ধান্ত। নাহ! সে আর ভাবতে পারছে না।

জায়িন হাত ধুয়ে টেবিল ছাড়তে ছাড়তে বলে–

—অফিসের জন্য লেট হচ্ছে, আসছি।

কথাটা বলে চেয়ারে ঝুলানো কোর্টটা ও ব্যাগটা নিয়ে হনহনিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ছেলেকে এমন বিবস মুখে না খেয়ে চলে যেতে দেখে হানিয়ার খারাপ লাগে। সে রাগী গলায় জাভিয়ানকে বলে–

—দেখলেন ছেলেটা না খেয়েই চলে গেলো। সব আপনার জন্য। বলে দিলে কি হতো ওদের বিয়েটা ওদের পছন্দের মানুষগুলোর সাথেই ঠিক করা হয়েছে?

জাভিয়ান হাসতে হাসতে বলে–

—আরে টেনশেন নিও না। একটু পরীক্ষা করা যাক না। দেখি ছেলে আমাদের উপর কতটা ভরসা করে। বিয়ের দিন যখন আদিবা মামুনিকে বউয়ের জায়গায় দেখবে তখন ওর এক্সপ্রেসনটা কেমন হবে সেটা একবার ভাবো। তুমি চিন্তা না করে কাদের কাদের দাওয়াত দিবে সেটার একটা লিস্ট রেডি করে ফেলো। আর হ্যাঁ, হায়া’কে ঐবাড়ির লোক সহ আজ-কালের মধ্যে জানি এসে পরে সকলে। আমি আমার বিজনেস পার্টনারদের ইনভাইট করতে একটু পরই বের হবো।

মি.তালুকদার আর রোজি বেগম জাভিয়ান-হানিয়ার কথা কিছুই বুঝে না। তারা প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। হানিয়া তাদের উৎকণ্ঠ বুঝতে পেরে নিজে থেকেই বলে–

—আপনাদের নাতিরা প্রেম করছে কয়েক বছর ধরে। কিন্তু ভয়ে বলেনি। উনি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন এসম্পর্কে। তাই আমরা ভাবলাম ছেলেদের একটু সারপ্রাইজ দেওয়া যাক, এর মধ্যে আজ উনি এমন উল্টাপাল্টা বলে ছেলেটার মাথা খারাপ করে দিলো।

হানিয়া তাদের দু’জনকে সবটা খুলে বললেও তারা হেঁসে দেয়।

_______________________

আজ অফিসে জায়িন সকলের সাথে মেজাজ খারাপ করছে। ভুল হলেও বকছে আবার ভুল না হলেও বকছে। সকলে তার এমন ব্যবহারে অবাক। কারণ জায়িন চঞ্চল, ছটফটে আর মিষ্টিভাষী একটা ছেলে। সকলের সাথে হেঁসেখেলে, মজামাস্তি করে চলে। কারো মন খারাপ থাকলে তাকে হাসানো দায়িত্ব তুলে নেয় নিজের কাঁধে। সেই ছেলের এমন ব্যবহার অবাক করারই বিষয়।

নিজের ছঠফটানি না দমিয়ে রাখতে পেরে জায়িন অফিস থেকে বের হয় যায়। উদ্ভ্রান্তের ন্যায় কতক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায় গাড়ি নিয়ে। সবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় আদিবার সাথে এবিষয়ে সোজাসুজি কথা বলবে। আদিবাকে মুক্ত করে দিবে তার বাঁধন থেকে। যেই ভাবা সেই কাজ। সে গাড়ি নিয়ে চলে যায় আদিবার বাসায়। তাদের বাসার সামনে গাড়ি থামিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে দারোয়ান জানায়, আদিবা ও তার পুরো পরিবার আজ সকালের ট্রেনে বাড়ি গিয়েছে। জায়িনের তো মাথায় হাত।

কারণ আদিবাদের গ্রামের বাড়ি একটুও নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না ফোনে। সে যে ফোনেও জানাবে সেটাও করতে পারবে না। সে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে–

—তারা কবে আসবে সে সম্পর্কে কিছু জানিয়েছে?

—সপ্তাহ এক থাকবে মনে হয়।

—আচ্ছা।

জায়িন মন খারাপ করে গাড়িতে উঠে বসে।

,________________________

বিরতিহীনভাবে একের পর এক কল দিয়েই চলেছে জাহান মেহরিমাকে। আজ সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেহরিমার এমন আচরন সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলবে। সামনে তারা নতুন জীবন শুরু করতে চলেছে তার আগে এমন অবস্থা হলে ভবিষ্যতের পরিণতি নিয়ে সে একটু শঙ্কিত।

এবারও মেহরিমার ফোন বিজি বলছে। জাহান ভাবে–

—বিগত এক ঘণ্টা ধরে মেহু কার সাথে কথা বলছে? হায়া’র সাথে?

সে মেহরিমাকে কল লাগানো বাদ দিয়ে কি মনে করে হায়া’কে কল লাগায়। হায়া’র ফোন রিং হচ্ছে দেখে সে একটু অবাকই হয়। হায়া’র সাথে কথা বলছে না তাহলে কার সাথে এক ঘণ্টা ধরে কথা বলছে? হায়া তখন ঘুমে থাকায় কলটা রিসিভ করতে পারে না।

জাহান হায়া’কে রেখে আবারও মেহরিমার নাম্বারে কল লাগায়। এবার মেহরিমা কল রিসিভ করে। আগের দিনের মতো আজও কোন সালাম বিনিময় ব্যতীত মেহরিমা রুক্ষ গলায় বলে–

—কি ব্যাপার? সাতসকালে এত ফোন দিচ্ছেন কেন?

জাহান গম্ভীর গলায় বলে–

—আজকাল দেখছি সালাম দেওয়াও ভুলে গিয়েছো। বেশ ভালোই পরিবর্তন হয়েছে তোমার দেখা যাচ্ছে।

মেহরিমা তার এমন কথায় কিছুটা দমে যায় তাই চুপ করে থাকে। জাহান পুনরায় বলে–

—বিগত এক ঘণ্টা ধরে তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?

মেহরিমা তার এমন প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে যায়। সে আমতা আমতা করতে থাকলে জাহান ধমক দিয়ে বলে–

—কি হলো বলছো না কেনো? কার সাথে এক ঘণ্টা ধরে কথা বলছিলে?

মেহরিমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে–

—সব কথার কৈফিয়ত কি আপনাকে দিতে হবে?

জাহান তার এমন কথায় স্তব্ধ হয়ে যায়। সে কৈফিয়ত চাইলো কই? ভালোবাসার মানুষটিকে কি সে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারবে না? জাহান নিস্তেজ গলায় বলে–

—আমি কিছু জিজ্ঞেস করা তোমার কাছে কৈফিয়ত লাগে মেহু?

“মেহু” এই ডাক টায় যে কতটা ভালোবাসা মিশে থাকে সেটা মেহরিমা খুব ভালো করে জানে। কিন্তু আজ মেহরিমা সব জেনেও অজানা হওয়ার ভান করে। সে ককর্শ গলায় বলে–

—আপনি যেভাবে জিজ্ঞেস করেছেন সেটাকে কৈফিয়ত ছাড়া অন্য কিছু বলে ভাবা যায় না। শুনেন, ভালোবাসেন ভালো কথা, তাই বলে আমার পারসোনাল লাইফেও দখলদারি করবেন এটা আমি মেনে নিবো না। আমি কি করছি, কার সাথে কথা বলছি এতকিছুর জবাবদিহি আপনাকে করতে পারবো না। আমার কিছু কাজ আছে আমি রাখছি।

কথাটা বলে জাহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কলটা কেটে দেয় মেহরিমা। কল কেটে যাওয়ার পরও জাহান ফোনটা কানে ধরে বসে থাকে। মিষ্টি, কোমলভাষী মেহরিমার থেকে এমন ব্যবহার তার বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।

______________________

হায়া ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আশিয়ান ফোন করেছে। সে খুশি মনে ফোনটা রিসিভ করে কানে লাগালে অপর পাশ থেকে একটা অপরিচিত কণ্ঠ শুনতে পায়। একজন ব্যক্তি হুড়মুড়িয়ে বলে–

—এই ফোনের মালিকের একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে, তাকে সিটি হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি আমরা। আপনি তার পরিবারের লোক হলে তাড়াতাড়ি সেখানে চলে আসুন।

হায়া’র হাত থেকে ফোনটা নিচে পরে গিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। তার কানে শুধু একটা কথাই বাজছে,”এই ফোনের মালিকের একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। ”

এরপর হায়া’র আর কিছু মনে নেই। সে শকটা নিতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায়। কিছু একটা পরে যাওয়ার আওয়াজে স্পর্শ কিচেন থেকে বাহিরে আসলে হায়া’কে অজ্ঞানরত অবস্থা পায়।

~চলবে?

ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং মাই লাভিং রিডার্স 🖤]