সাঝের প্রণয়ডোর পর্ব-৬২

0
1

#সাঝের_প্রণয়ডোর
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_৬২

বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুধু ওপিঠ-এপিঠ করছে মেহরিমা। রাত বাজে প্রায় বারোটা। কিন্তু তার চোখে আজ ঘুম নেই। থাকবে কি করে যার বক্ষে মাথা রেখে অশেষ শান্তিতে চোখ মুদতো সেই পুরুষটিই তো তার পাশে নেই আজ।

সন্ধ্যার দিকে মি.মির্জার চাচাতো ভাই রহমত আলী হঠাৎই বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে নিয়েই জাহান ও রহমত আলীর ছেলে ও নাতি পাশের গ্রামে থাকা হসপিটালে গিয়েছে। অবস্থা বেশ সিরিয়াস, জাহান প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেছে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। সেই লক্ষ্মণ গুলোই রহমত আলীর মধ্যে ছিল।

আশিয়ান যেতে চেয়েও পারে নি, কারণ তার বউও যে অসুস্থ। তার শ্বশুর শ্বাশুড়ি রহমত আলীর বাড়িতে থাকবেন আজ। বলতে গেলে বাড়িতে বর্তমানে মেহরিমা, আশিয়ান ও হায়া আর মি. এন্ড মিসেস মির্জা। যে যার রুমে অবস্থান করছে বর্তমানে।

অনেকক্ষণ ওপিঠ এপিঠ করতে করতে শোয়া থেকে উঠে বসে মেহরিমা। ঘুম না আসলে শুয়ে থাকাটাও একপ্রকার শাস্তি যেনো। ফোনটা বালিশের পাশ থেকে নিয়ে আবারও সময় দেখে সে। বারোটা বেজে এক মিনিট, ঠিক তখনই দরজায় নক করে কে যেনো। হঠাৎ নক করায় মেহরিমা চমকে যায় বেশ আর এই কারণে তার হাতে থাকা ফোনটা ছিটকে খাটের উপর পরে যায়।

আবারও নক হয়। সেই সাথে কাঙ্ক্ষিত মানুষটির গলার আওয়াজও পাওয়া যায়।

—মেহু, দরজা খুলো। আমি এসেছি।

জাহানের গলার স্বর শুনে মেহরিমার সব বিষণ্নতা সেকেন্ডের ব্যবধানে গায়েব হয়ে যায়। তার চিত্ত চঞ্চল হয়ে উঠে। লাফ মেরে খাট থেকে নামে দরজার খোলার উদ্দেশ্য, আর ঝামেলাটা বাজে এখানেই। জাহানের কণ্ঠ শুনে মেহরিমার এতটাই হুশ হারিয়ে ফেলেছিল যে, শাড়ি সামলানোর কথা মাথাতেই ছিল না। যার কারণে শাড়ির কুচির সাথে পা বেঝে ধপাস করে নিচে পড়ে যায়। বলাবাহুল্য হাতে-পায়ে যথেষ্ট ব্যথাও পেয়েছে, সেই সাথে তার শাড়িও খুলে গিয়েছে। নিজের এই অবস্থা দেখে মেহরিমার হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে।

জাহান আবারও দরজায় নক করে বলে উঠে–

—মেহু! ও মেহু! ঘুমিয়ে পড়েছো?

এত আদর, এত ভালোবাসার ডাক শুনে মেহরিমার ইচ্ছে করে এক ছুটে জাহানের চওড়া বুকে নিজের মাথা এলিয়ে দিতে। কিন্তু শালার কপালই খারাপ! মেহরিমা সিক্ত গলায় বলে–

—ঘুমাইনি, দুই মিনিট দাঁড়ান খুলছি।

জাহান তার কথা শুনে একটু চিন্তিত বোধ করে। মেয়েটার গলা টাও কেমন আদ্র ঠেকল তার কাছে। আবার দুই মিনিট দাঁড়াতে বলছে। মেহরিমা তো কখনোই জাহানকে এমন অপেক্ষা করায় না, বরং জাহান আসার সময় হলেই দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। জাহান বাসায় এসে কলিংবেল দিতে দেরি কিন্তু মেহরিমার দরজা খুলতে দেরি হয় না।সেই মেয়ে কিনা আজ এমন অপেক্ষা করাচ্ছে তাকে? কোন কিছু কি হলো মেয়েটার? প্রশ্নটা মাথায় আসতেই বুকটা জোরে ধক করে উঠে।

জাহান অস্থির গলায় বলে–

—এই মেহরিমা? তোমার গলা এমন শোনালো কেন? কাঁদছ তুমি? আর দরজা খুলছো না কেন তুমি? কোন দুই মিনিট না, দশ সেকেন্ডের মাঝে যদি দরজা না খুলো তাহলে আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলবো।

জাহানের কথা শুনে মেহরিমার আক্কেলগুড়ুম। বলে কি এই ছেলে! এই অবস্থায় সে কিভাবে দরজা খুলবে! আজব তো! জাহান তার বক্তব্য দিয়েই শান্ত হয় না, বরং অনবরত দরজা নক করতেই থাকে। তার এমন কথা ও কাজে মেহরিমা হকচকিয়ে যায়। এমন করতে থাকলে তার তাদের বাড়ির লোকের পাশাপাশি পাড়াপ্রতিবেশিরাও এসে পরবে। না পারতে মেহরিমা সিদ্ধান্ত নিয়েই , সে বলে দিবে কেন সে জাহানকে অপেক্ষা করতে বলেছে।

যেই ভাবা সেই কাজ। মেহরিমা বলে–

—জাহান, আমার পায়ের সাথে বেঝে শাড়ির কুঁচি খুলে গিয়েছে, তাই আপনাকে একটু অপেক্ষা করে বলেছি। এখন একটু দাঁড়ান আমার দুই মিনিট লাগবে কুঁচিটা ঠিক করতে।

মেহরিমার কথা শুনে জাহান একটু শান্ত হয়। সে বলে–

—আচ্ছা ঠিক আছে।

ঠিক দুই মিনিট পরই মেহরিমা দরজা খুলে দেয়। জাহান ঘরে ঢুকে মেহরিমাকে ঝাপটে ধরে। তারপর তাকে প্রশ্ন করে–

—তখন তোমার গলাটা ওমন শোনাচ্ছিল কেনো? মনে হচ্ছিল কাঁদছিলে। কি হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে তোমায়? নাকি একা থাকতে ভয় পাচ্ছিলে?

জাহান বিরতিহীন ভাবে একের পর এক প্রশ্ন করেই চলেছে। নিজের প্রতি কাউকে এতটা বিচলিত ও দূর্বল হতে দেখে মেহরিমা মনে আনন্দ দোলা দেয়। জাহান আরো কয়েকবার একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। জাহানের এত অস্থিরতা কমাতে মেহরিমা তার বুকে মাথা রেখেই ক্ষীণ গলায় বলে–

—মিস করছিলাম আপনাকে, যেই আপনার কণ্ঠস্বর শুনলাম মন চাচ্ছিল চোখের পলকে আপনার সামনে গিয়ে উপস্থিত হই। পাগলের মতো তাই করতে গিয়েছিলাম, ফলস্বরূপ আপনাকে আলিঙ্গন করার আগেই ধপাশ করে মেঝের সাথে আলিঙ্গন করতে হলো।

কথাটা শেষ করেই মেহরিমা হেঁসে দেয়। মেহরিমার কথা শুনে জাহান বেআক্কল হয়ে যায়। বিষয়টা বুঝতে তার কিছুক্ষণ সময় লাগে, কিন্তু যখন বুঝতে পারে তখন সেও মেহরিমার মতোই হেঁসে দেয়। আগের থেকেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মেহরিমাকে নিজের বক্ষের সাথে। মেহরিমার চুলের উপর ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে বলে–

—আই জাস্ট লাভ ইউ মেহু। তুমি প্লিজ সারাজীবন এমনই থেকো, আমাকে ভালোবেসো এমনই ভাবে। আমার জন্য এমনই পাগলামি করো, কিন্তু কখনো বদলে যেও না। তোমার বদলে যাওয়া আমি সইতে পারব না মেহু।

মেহরিমা জাহানের পিঠ খামচে ধরে বিরবিরিয়ে বলে–

—বদলের ছোঁয়া লাগার আগে কবরের মাটির ছোঁয়া যেনো পাই।
__________________________

কেটে গিয়েছে আরো দু’টো দিন। আজ সন্ধ্যায় মেঘলার বিয়ে। তার মেঝো চাচা ও ছোট চাচা বেশ ভালোই বড়সড় করে তার বিয়ের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছে। তার ফুফুও নিজের সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে কয়েকদিন আগেই চলে এসেছে ভাগিনীর বিয়েতে। ভাবীদের সাথে হাতে হাতে কাজ করছে। কখনো আবার আড়ালে আবডালে গিয়ে ভাগিনীর জন্য চোখের পানি ফেলছেন। মেঘলার বাবা-মা মারা যাওয়ার সময় সে নয়মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। যার কারণে প্রিয় ভাই ও ভাবীকে শেষ দেখাটাও দেখতে পারে না। তার বাচ্চা হয়ে যাওয়ার পর সে চেয়েছিল মেঘলাকে নিজের শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যেতে, কিন্তু তার জল্লাদ শ্বাশুড়ির জন্য তাও হয়ে উঠেনি। এই দু’টো বিষয়ে সে নিজেই অনেকটা গিল্টি ফিল করতে থাকে, যার কারণে বাপের বাড়ির সাথে যোগাযোগও কমিয়ে দেয়।

নিজের ছোট ঘরে থাকা পড়ার টেবিলের সামনে বসে আছে কাল রাত থেকে মেঘলা। তার পড়ার টেবিলের সাথেই একটা জানালা আছে, যেটা দিয়ে তার বাবা-মায়ের কবর দেখা যায়। কাল সারারাত এখানে ঠিক এমনভাবেই বসে একধ্যানে তাকিয়ে থেকে দেখছে কবর দুটোকে। ফজরের নামাজ পড়ে আবারও বসেছে মেঘলা। আজ দুই রাত ধরে তার চোখের ঘুম হারিয়ে গিয়েছে। না ঘুমানোর কারণে তার চোখের নিচে কালো হয়ে গিয়েছে। মুখ দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে, সে এই বিয়েতে রাজি না। কিন্তু মেঘলার চাচী সবাইকে বুঝিয়েছে, বাপের বাড়ি ছেড়ে যাবে বলে তার চোখ মুখের এই অবস্থা।

হঠাৎ তার রুমের কয়েকজন মাঝ বয়সী মহিলা প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে মেঘলার চাচী ও ফুফুও রয়েছে। মেঘলার ফুফু এসে তার পাশে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে হাসি মুখে বলে–

—কি রে মা নাস্তা করবি না? চল নাস্তা করতে, একটু পরেই তোকে হলুদ ছুঁইয়ে গোসল করানো হবে। তারপর আবার সাজতে হবেন না। ছেলে পক্ষ বলেছে তার সন্ধ্যাট আগেই বউ নিয়ে বাড়ি ফিরতে চায়। চল উঠ দেখি, আজ আমি তোকে আমার হাতে খাইয়ে দিবো।

মেঘলা তার কথার উত্তরে একটা টু শব্দ অব্দি করে না। চুপচাপ তাদের সাথে চলে যায় নাস্তা করতে। নাস্তা শেষ করে দশটার দিকে কয়েকজন আত্নীয় স্বজন মিলে মেঘলাকে হলুদ দেয়, তারপর গোসল করিয়ে সাড়ে বারোটার দিকে সাজাতে বসানো হয়।

দুপুর দুইটায় তাদের সাজানো শেষ হয় মেঘলাকে। মেঘলার গায়ে তার মায়ের বিয়ের শাড়ি। মেরুন রঙের শাড়ি টার পাড়ে সোনালী সুতো দিয়ে হাতের কাজ করা। আঁচল টাও সোনালী সুতোয় রাঙানো। তার মেহেদীতে রাঙানো হাত দু’টিতে মোটা এক জোড়া স্বর্ণের বালার চিকন কয়েকটা চুড়ি দ্বারা আবৃত। মাথায় ছোট একটা টিকলি, গলায় মানানসই স্বর্ণের হার। সব মিলিয়ে এই চোখ ধাঁধানো সুন্দরী লাগছে মেঘলাকে। সবাই একটু পরপর করে এসে তাকে দেখে যাচ্ছে আর তার সৌন্দর্যের প্রশংসা করছে।

বরযাত্রী তিনটার মধ্যে মেঘলাদের বাড়ি আসার কথা থাকলেও হঠাৎ তুমুল ঝড় শুরু হয়। মেঘলাদের বাড়ি আসতে তন্ময়দের মাঝে একটা নদী পাড় হতে হয়। এই ঝড়বৃষ্টির জন্য নদী বর্তমানে অনেক উত্তাল হয়ে রয়েছে। যার কারণে তারা ঠিক করা সময়ে আসতে পারে না। আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায় তাদের।

ছোট বড় সকল রমণীরা চলে যায় গেট ধরতে। রুমে একমাত্র রয়ে যায় মেঘলা। সকলে বের হয়ে যেতেই মেঘলা খাট থেকে নেমে তার পড়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা কালো রঙের মোটাসোটা ডায়েরী বের করে। বছর তিনেক আগে স্কুলের এক বার্ষিক প্রতিযোগিতায় ডায়েরী ও কলম গিফট পেয়েছিল। তাদের হেড মিস মেঘলাকে অনেক ভালোবাসতেন ও স্নেহ। সে এই ডায়েরিটা মেঘলার হাতে তুলে দিয়ে বলেন–

—ডায়েরি হলো স্মৃতির নীরব আশ্রয়। এখানে জমে থাকে দিনের আলো, রাতের নিস্তব্ধতা, হাসি-আনন্দ আর অশ্রুর নীরব ছাপ। বহু যুগ পরে পাতাগুলো উল্টালে মনে হয়,সময়ের কত নদী বয়ে গেলেও, সেই মুহূর্তগুলো যেন ঠিক এখনো হৃদয়ে ধ্বনিত হচ্ছে। তোমার উচিত ডায়েরি লেখা মেঘলা।

সেই ম্যামের কথা মাথায় রেখেই ক্লাস এইট থেকে সে ডায়েরি লেখে। প্রতিদিন লেখা হয় না। স্মরণীয় কোন দিন বা ঘটনা সে এটাতে লিখে রাখে। মেঘলা ডায়েরিটা খুলে আজকের তারিখ দিয়ে লিখতে থাকে–

—চিরস্থায়ী কষ্টের আগুনে ঝাপ দিতে যাচ্ছি আজ। প্রতিদিন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে আমার শরীর প্রস্তুতি। রুহ তো অনেক আগেই মারা গিয়েছে, আজকের পর থেকে নিত্যনতুন দিন মরণ ঘটবে আমার ইচ্ছে গুলোর। এ জীবনে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো আমার। আলবিদা।

লেখাটা শেষ করে মেঘলা ডায়েরিটা বন্ধ করে সেখানেই বসে থাকে। ঘন্টা খানেক পর কেউ একজন হুড়মুড়িয়ে তাকে রুমে প্রবেশ করে। হঠাৎ কেউ আসায় মেঘলা ঘাবড়ে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালে দেখতে পায় তার দাদী এসেছে। বৃদ্ধার চোখে মুখে অজানা আতঙ্কের ছাপ। কাঁপছেও কিছুটা।

মেঘলার দাদী ঘরের দোর লাগিয়ে দিয়ে এসে মেঘলার সামনে এসে দাঁড়ায়। তাকে এমন ভাবে কাঁপতে দেখে মেঘলা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। সে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে দাদীকে ধরে নিজের জায়গায় বসিয়ে দেয়। তারপর জিজ্ঞেস করে–

—কি হয়েছে দাদী তোমার? এমন অস্থির হয়ে আছো কেনো?

বৃদ্ধা এত ভয় পেয়েছেন যে, মুখ দিয়ে কিছু বেরও হচ্ছে না। মেঘলা আরো কয়েকবার জিজ্ঞেস করে। হুট করে মেঘলার দাদী বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। মেঘলার গালে হাত রেখে বলে–

—বইন তুই পালায় যা। এখনই পালা। সবাই বরপক্ষরে খাওয়াইতাছে, তুই আমার লগে চল। পেছনে দিক দিয়া তুই মেইন রাস্তায় উঠে যাবি। তারপর একটা টেম্পু ভাড়া কইরা পাশের গ্রামে আমার বইন থাকে না তার বাড়ি যাবি গা। চল বইন চল।

একটু পর তার বিয়ে আর এখন দাদীর মুখে এসব শুনে মেঘলার আক্কেলগুড়ুম। বৃদ্ধার সব কথাই তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মেঘলার দাদী তার হাত ধরে টেনে দরজার কাছে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু মেঘলা তাকে থামিয়ে দেয়। চিন্তিত গলায় জিজ্ঞেস করে সে–

—কি বলছো দাদী এসব? পালিয়ে যাবো মানে? আমি যদি এখন পালিয়ে যাই তাহলে চাচাদের কত সম্মানহানি হবে তুমি জানো? আর পালাবোই বা কেনো?

—পালাবি কারণ তন্ময় ছেলেটা ভালো না। একটু আগে আমি তোর মেঝো চাচার রুমের পাশ দিয়া যাইতাছিলাম, ঐ রুমে তন্ময়দের বসানো হইছে। তখন আমি শুনি, তখন বলতাছে,

তন্ময়ের ভাষায়– আরে দোস্ত চিন্তা করিস না। তোরাও ভাগ পাবি কিন্তু কিছুদিন পরে। আমি কয়দিন এমন ঝাক্কাস মাল ভো*গ করি, তারপর তোদেরও দিবো। তোদের মন মতো ভো*গ করার পর পাচার করে দিবো। খাসা একটা মাল, নিশ্চয়ই অনেক টাকা পাবো এবার ওস্তাদের কাছ থেকে।

সবাই খাবারের ঐদিকে ব্যস্ত ছিল বলে তন্ময় ভাবো এখন এই রুমের আশেপাশে কেউ আসবে না। তাই দরজা খুলে রেখেই নিজের বন্ধুদের এসব বলে তন্ময়, কিন্তু মেঘলার দাদী এসব শুনে ফেলে। বৃদ্ধা যৌবন কালে ভালোই বুদ্ধিমতী ছিলেন, তিনি কোন প্রতিক্রিয়া না করে চুপচাপ সেখান থেকে চলে আসেন মেঘলার রুমে।

মেঘলা দাদীর কাছে এসব শুনে হতভম্ব হয়ে যায়। দাদীর কথা শুনে সে বুঝতে পারে, তন্ময় একজন নারী পাচারকারী। এমন নিকৃষ্ট একজন মানুষের সাথে তার বিয়ে হতে যাচ্ছিল জানতে পেরে মেঘলা কথা বলতেও ভুলে যায়।

মেঘলার দাদী মেঘলার গায়ের গহনা গুলো খুলে একটা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে ছোট আরেকটা ব্যাগে তার দুয়েক সুট জামাকাপড় ও সেই গহনার পোটলাটা দেয়। তারপর বলে–

—আর কিছু ভাবিস না বইন। তুই এখনই পালা। আমার কথা কেউ বিশ্বাস করব না। পালানো ছাড়া আর কোন রাস্তা নাই। তুই আমার বইনের বাড়ি চলে যায়। আর এই চিঠিটা (তিনি ইতিমধ্যে একটা চিঠিও লিখে ফেলেছেন, সেটা মেঘলার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেন কথাটা) আমার বোন নাজমারে (মিসেস মির্জা) দিস। আর শুন, তুই এই বাড়িতে আর আসিস না বইন। তোর মেঝো চাচী কেমন সেটা তো তুই জানসই।

মেঘলা তার দাদীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। মেঘলার দাদীও প্রিয় নাতনীকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুপাত করতে থাকে। তারপর সে মেঘলার হাত ধরে তাদের বাড়ির পেছনের রাস্তা যেটা একটু বেশি ঝোপঝাড় পূর্ণ সেখানে দিয়ে মেঘলাকে পালাতে সাহায্য করেন।

মেঘলা জামাকাপড়ের ব্যাগটা চেপে ধরে প্রাণপণে দৌড়াতে থাকে। একটু থেমে শেষবারের মতো নিজের পৈতৃক বাড়িটাকে দেখে নেয় মন ভরে। তারপর আবারও দৌড়াতে থাকে এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে।

শব্দসংখ্যা~১৮৬৬
~চলবে?