সাদা মন পর্ব-০২

0
16

সাদা_মন
পর্বঃ২

ভাবি বলতে শুরু করলেন–“আমার বড় বোন তো বিধবা!”

বিধবা শব্দটা শুনে আমার ঠিক ভালো লাগলো নাকি খা’রাপ লাগলো নিজেই বুঝতে পারলাম না। তবে বুঝলাম মনের ভেতর কিছু একটা লেগেছে; বেশ তীব্রভাবে। আর কিছু জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে ছিলো না। ভাবি নিজেই বললেন–“আমার বড় বোন বিয়ের সাতাশ দিন পরেই বিধবা হয়েছে।”

মনটা ভারী হয়ে উঠলো আমার। আর শুনতে পারলাম না কিছুই। শুধু ভাইয়াকে বললাম, ‘আমি রুমে যাচ্ছি। তোমাদের বাসর ঘরের দরজাটা লাগিয়ে দাও!’

নিজে এসে গা এলিয়ে দিলাম বিছানায়। রাতভর ঐ বিধবা মেয়েটার কথাই মনে পড়ল। অনুভূতিগুলো এমন যে মেয়েটাকে আমি চাই’ই চাই। কোন কিছুতে ভনিতা কিংবা বাহানা করতে আমি একদমই পছন্দ করিনা। সকালবেলা উঠেই আমি অপেক্ষা করছিলাম। ভাবির সাথে কথা বলবো। ভাবি যখন নাস্তার টেবিলে এলো আমি তখন কয়েকবার চক্কর দিলাম টেবিলের পাশে।নাস্তা শেষে ভাবি ফিরে যাচ্ছিল কক্ষে। আমি পিছু নিলাম। খানিক এগিয়ে গিয়ে একটু কেশে মনোযোগ আকর্ষণ করলাম। তারপর ধীর কণ্ঠে বললাম, ‘ ভাবি আজতো আপনাদের বাড়ির সবাই বৌভাতে আসবে আমাদের এখানে!”

“হ্যাঁ, প্রায় সবাই আসবে।”– ভাবি জবাব দিলেন।

“আপনার ভাই-বোন সবার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিবেন ভালো করে। পরিচয় যদিও হয়েছে তবুও আরেকবার পরিচিত হতে চাই।”

“ঠিক আছে।”

ভাবি তার কক্ষে চলে গেলো।
……….

দুপুরে আমাদের বাড়িতে বৌভাতে প্রোগ্রাম শুরু হলো। ভাবিদের বাড়ি থেকে প্রায় সবাই এসেছে। শু এলো না সে যাকে আমি চেয়েছি। আমি আর গেলাম না ওনাদের কাছে, দ্বিতীয়বার পরিচিত হতে। বিকেলে ঐ পক্ষের লোকেরা ভাইয়া,ভাবীকে সাথে নিয়ে ফিরে যাবে তাদের বাড়ি। যখন ভাইয়া বাসা থেকে বের হলো তখন আমি সামনে গিয়ে বললাম, ‘ ভাইয়া, একাই যাচ্ছ শ্বশুরবাড়ঔ? আমাকে তো একটু সাধলাও না। এমনটা তুমি করতে পারলা?’

‘তুইও বেড়াতে গেলে বাড়ির এদিকটা দেখবে কে? ‘

ভাইয়া যৌক্তিক জবাব শুনে আমি বললাম–” আমি সব গুছিয়েই আসবো। তুমি একবার বলে দেখো না!”
“ঠিক আছে, সব গুছিয়ে চলে আসিস!”

ভাইয়া তখনই চলে যায় শ্বশুরবাড়ি। রাত দশটা নাগাদ বাড়ির সব কাজ মিটিয়ে নিলাম। ইভেন্ট ম্যানেজ,ডেকরেটর,বাবুর্চিসহ যারা সহযোগিতা করেছে, সবার পাওনাই মিটিয়ে দিলাম। বাড়ির মেহমানদের রাতে খাওয়া-দাওয়াসহ সবকিছুই তদারকি করলাম। রাত সাড়ে দশটায় রওনা দিলাম ভাবিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। গিয়ে পৌঁছলাম রাত সাড়ে এগারোটায়। সে বাড়ির লোকজন ঘুমন্ত। ভাবীর রুমে ভাইয়া চুপিচুপি অপেক্ষা করছিলো আমার জন্য। জানতো আমি যাবো। বাড়ির সামনে বাইক থামতেই ভাইয়া এগিয়ে এলো। ভাবী দৌড়ে গিয়ে মা আর বোনকে ঘুম থেকে জাগিয়েছে। ভাবীর মা ছুটে এলেন প্রথমেই।ভাইয়াকে রুমে যাবার আদেশ করে বললেন, ‘নতুন মেহমানকে আমরা দেখছি। তুমি যাও,রুমে গিয়ে ঘুমাও!’

আমিও ভাইয়াকে বললাম–“ভাইয়া, তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো!”

“তোর মুখটা এমন শুকনা দেখাচ্ছে কেন? কিছু খেয়ে আসিস নি?”

“খেয়েছি সামান্য! তুমি যাও, ঘুমাও তো!”

ভাবীর মা ফিরতি ধ’মক দিলো ভাইয়াকে, ‘জামাই, তোমার ভাইকে কি আমরা ফেলে দেবো নাকি! তোমার মনে হচ্ছে খুব চিন্তা! যাও তো, তুমি ঘুমাতে যাও!’

ভাইয়া রুমে চলে গেছে। আমাকে ডাকা হলো ডাইনিং টেবিলে। ভাবির মায়ের সাথে আমাকে ভাত দিতে এলেন বেয়াইন। ভাবির মা’কে আমি খালাম্মা ডাকি। খালাম্মার দিকে চেয়ে বললাম –“আর একটু শসা লাগবে!”

খালাম্ম চলে গেলেন কিচেনে, শসা আনতে। বেয়াইনও কিছু একটা আনার জন্য চলে যাচ্ছিলো। আমি অনুরোধ করে বললাম–“বেয়াইন, আপনে এখানেই থাকেন। আমি আবার নতুন জায়গায় ভূতের ভয় পাই।”

পুরুষ মানুষ হয়ে ভূতকে ভয় পাই; এমন অদ্ভুত কথা শুনে বেয়াইন মনে হয় লজ্জা পেলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম–‘ আপনি এত লাজুক কেন বেয়াইন? প্রেম-ট্রেম আছে নাকি?”

বেয়াইন আরো বেশি লজ্জা পেলো। জবাব দিলো না কিছুই। আমি শুধু জানতে পারলাম বেয়াইনের নাম লিসা।

পরদিন সেই বাড়ির বিভিন্ন লোকের মারফতে জানতে পারলাম ; নাহ্ প্রেম ট্রেম নেই। বেয়াইন আমার কমপ্লিট সিঙ্গেল।

দুপুরেই আমি ফিরে এলাম বাড়িতে। এসে আম্মাকে জানালাম ভাবির বিধবা বোন লিসাকে বিয়ে করতে চাই। আম্মা প্রথমেই কষিয়ে এক চ’ড় মা’রল গালে। আমি বললাম –“চ’ড় মে’রে লাভ নেই; যা বলেছি তাই। বিয়ে আমি লিসাকেই করবো!”

বিষয়টা নিয়ে মামা,খালাদের সাথে আলোচনা করলেন আম্মা। সবাই আম্মাকে বুদ্ধি দিল–” নতুন বউয়ের ফ্যামিলি ভালো না। ওরাই কোনোভাবে ফাঁ’দে ফেলছে মনে হয় রিহানকে!”

নানা বাড়ির লোকদের বুদ্ধিতে আমার বিরুদ্ধে আম্মা বেশ শক্ত অবস্থান নিলেন। আম্মা সব ব্যাপারেই আমার নানাবাড়ি থেকে বুদ্ধি ধার আনেন। আমার ঘটনায় তো দাদবাড়ির লোকেরাও আমার বিরুদ্ধে। আমিও নাছোড়বান্দা। সবাইকে বলে দিয়েছি –“বিয়ে করলে লিসা বেয়াইনকেই করবো।”

আমি ফিরে আসি জেলা শহরে, আমার ব্যবসার ওখানে। ভাইয়া শ্বশুরবাড়ি থেকে ভাবীকে নিয়ে ফিরে আসে বাড়িতে। প্রথমেই সবাই ভীষণ বিরূপ আচরণ করতে শুরু করে ভাবীর সাথে। ব্যাপারটা এমন যেন আমার ভাবীই দোষী। বেচারী কিছুই বুঝতে পারে নি। দুই-একদিনের মধ্যে ভাবীও জানতে পারে আমার আসল ঘটনা। আমার ফে’সবুক পে’ই’জের নাম ‘লেখক রিহান’। এই ‘লেখক রিহান’ লিখে সার্চ দিলেই আমাকে পেয়ে যাবেন।

ঘটনা শুনে আমি শহর থেকে ফিরে আসি বাড়িতে। সবাইকে বোঝাই এই ঘটনায় ভাবির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। ভাবির ফ্যামিলিরও না। আমি নিজেই ঐ বিধবা মেয়ের প্রেমে পড়েছি। কিন্তু কে বিশ্বাস করবে আমার কথা! সব দোষই নাকি ভাবির আর তার ফ্যামিলির। আমি সবাইকে ওয়ার্নিং দিয়ে যাই ভাবির সাথে যেন কোনো খা’রাপ ব্যবহার না করা হয়। সেই সাথে পুনরায় আমার সিদ্ধান্তও জানিয়ে দেই; আমি বিধবাকেই বিয়ে করবো।

মাঝখানে রাগ করে পনেরো দিন আমি বাড়ি আসি নি। পনেরো দিন পরে আম্মা আমাকে খবর দিয়ে নিয়ে আসেন বাড়িতে। আমি বাড়ি আসি। আমার নানা বাড়ি,দাদা বাড়ির সবার সাথে আলাপ করে আম্মা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন; আমি যদি বিধবা বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না আসি তবে ভাইয়ার সংসারটা ভে’ঙে দেবে। ঐ ফ্যামিলির সাথে কোনো সম্পর্কই রাখবে না। তাহলে নাকি আমি এমনি এমনিই ফিরে আসবো।

ভাবির বাবার বাড়ির লোকেরাও জেনে গেছিলো আমি বিধবা মেয়েটিকে পছন্দ করেছি। তাদেরকেও ওয়ার্নিং দিয়েছে। যদি কোনোভাবে আমি সেই বিধবার সাথে যোগাযোগ করি তাহলে ভাইয়ার সংসারটা ভেঙ্গে দেবে। তারা যেন আমাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় না দেয়! আমার জন্য ভাইয়ার সংসার ভেঙে যাবে ;এটাতো হতে পারে না। আমি সাময়িকভাবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম।

এদিকে খুব দ্রুত আমার জন্য পাত্রী দেখা শুরু হলো। কোন এক পাত্রীকে পছন্দ করলেই নাকি বিয়ে করিয়ে দেবে। আমি প্রথমে কোনো পাত্রী দেখতে রাজি হলাম না। সবার বুদ্ধিতে আম্মা বিভিন্ন রোগের বাহানা শুরু করলো। আম্মার পছন্দসই কোনো এক মেয়েকে বিয়ে করার অনুরোধ করলো। আমার মনের ভেতরে ছিলো সেই বিধবার নাম। সাতাশ দিনে বিধবা হয়েছিল মেয়েটি। এই সাতাশ দিনের বিয়েতে কি এমন সমস্যা? সমাজ কেন মেনে নিতে পারে না?

এরমধ্যে আম্মা বোঝাতে শুরু করলো আমি যেন তার ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করি! এখনই বিয়ে না করলে আমার ভাইয়াকে বউসহ বাড়ি থেকে বের করে দেবে। ভাইয়া,ভাবীই নাকি সব নষ্টের গোড়া। অবাক ব্যাপার হচ্ছে আত্মীয়-স্বজন সবাই আম্মার পক্ষে। আমি পড়ে গেলাম মহাবিপদে।

চলবে