সায়রে গর্জন পর্ব-২৪+২৫

0
1

#সায়রে_গর্জন
#নীতি_জাহিদ
২৪. ( মেজরের বিবাহ পার্ট ১)

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)

অতিথির ডিমান্ড চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে শাহীনের বিয়েতে। রায়হান সাহেব চিন্তিত। শাহাদ বার বার বলেছে নিকট আত্নীয়ের বাইরে কাউকে যেন দাওয়াত দেয়া না হয়। অতিথির আয়োজন ছিলো একশ এখন তা ছাড়িয়ে যাচ্ছে দু’শ। এত কমে হবে নাকি মেজরের বিয়ে! বাবা হয়ে এই প্রথম ছেলেকে ভয় পাচ্ছে। ভয় পাওয়ার ও যথেষ্ট কারণ আছে। শাহাদ,শাহীন এবং রায়হান সাহেব তিনজনের প্রফেশনটাই এমন যে শত্রুর অভাব নেই। শাহীনের বিয়েতে কোনো ঝামেলা চাইছেনা শাহাদ। প্রথমে তো ঘরোয়া আয়োজনের কথাই হয়েছিলো পরে নিজেই মত বদলে বললো,একমাত্র ভাই তার জীবনে কিছু স্মৃতি থাকা প্রয়োজন। নওরীনের ও কেউ নেই। ওদের বিয়েটা নিজেরদের মধ্যেই একটু ভিন্ন ধারায় হোক। বাড়িতে এখনই ভিড় করেছে সকল নিকট আত্নীয়। ছাদে শাহীনের ঘরোয়া গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শাহাদ আজ সম্পূর্ণ ফোর্স, নিরাপত্তা নিয়ে বাসায় থাকবে। বাড়িতে সিকিউরিটি আরো জোরদার করেছে। নওরীনকে এই বাড়িতেই আনা হয়েছে। নিচ তলাতে গোসল করানো হয়েছে।হালকা হলুদ লাগিয়েছে বাড়ির সবাই। ঘরোয়া হলুদ শেষ করেই রওয়ানা হবে রিসোর্টের উদ্দেশ্যে।

__

অফিস রুমে চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে। তাহি ফোন দিয়েছে বেশ কয়েকবার। ফোন রিসিভ করলেই মেয়েটা কান্নাকাটি শুরু করবে। জেনে গিয়েছে রিপোর্টের কথা। দিয়ার বন্ধু আশিক ছেলেটা শাহাদের সামনে। পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষন করে শাহাদ বলে উঠলো,

– মি. আশিক বলুন আপনি কি শাস্তি পাওয়ার যোগ্য?

আশিক হেসে বললো,

– আপনি যে শাস্তি স্যুটেবল ভাবেন।

– দরকার ছিলো কি এই ঝামেলায় জড়ানো?

– দিয়া আমার ছোটবেলার খেলার সাথী।মুরাদ চাচা চলে যাওয়ার পর কখনো ওর সাথে তেমন দেখা হয়নি। গত বছর কলেজে দেখেছিলাম।আমি সার্টিফিকেট উঠাতে গিয়েছিলাম,আর ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা। টুকটাক কথা হয়েছিলো।জেনেছিলো আমি মেডিকেলে পড়াশোনা করছি। ফোন নাম্বারটা কিভাবে সংগ্রহ করলো জানিনা। হঠাৎ একদিন ফোন দিয়ে রিপোর্ট পাঠায় আমার ফোনে।অনুরোধ করে বললো রিপোর্টগুলো দেখে জানাতে। রিপোর্ট যখন স্যারদের দেখালাম উনারা কন্ডিশন জানালেন। সৌভাগ্যক্রমে আপনি যার ট্রিটমেন্ট নিচ্ছেন আমি উনার স্টুডেন্ট। আপনার ফাইলটা সেদিন নিজ থেকে ডেকে এনে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো আপনি আমার কি হন। আজ তাই নতুন রিপোর্ট আমাকে দিয়েই পাঠালো।

দীর্ঘ শ্বাস শাহাদের। এ আর নতুন কি! দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে শারীরিক কন্ডিশন সেটা তো জানা কথা।

– ঠিক আছে। কষ্ট করে এসেছেন অসংখ্য ধন্যবাদ। আজ কফি ছাড়া বেশি কিছু খাওয়াতে পারলাম না তার জন্য খুবই দুঃখিত। একদিন ইনশাআল্লাহ দেখা হবে। আপনার ছোটবেলার বান্ধবী ও থাকবে সেদিন।

আশিক মৃদু হেসে বললো,

– যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করে ফেলুন অপারেশন। সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন।

– আর যদি না ফিরি?

হাসি হাসি মুখটা ধপ করে নিভে গেলো আশিকের। শাহাদ উঠে দাঁড়ায়। আশিকের বিমর্ষ মুখ দেখে হেসে বলে,

– ইনশাআল্লাহ দেখা হচ্ছে। আমাকে একটু বের হতে হবে। নতুবা এভাবে বিদায় নিতে হতনা।

দুজনই হাত মিলিয়ে বিদায় জানালো একে অপরকে। আশিক বের হতেই শাহাদ পাভেলকে নিয়ে রওয়ানা দিলো রহস্য উদঘাটনে। গেটের সামনে আসতেই দারোয়ান গেট খুলে দিলো। গাড়ি পার্ক করে নিয়ে গেলো কেয়ারটেকার। ভেতরেই ঢুকতেই অভ্যর্থনা জানালো হোম মিনিষ্টার ফরিদ রশীদ। লিভিং রুমে বসলো।

– কি অবস্থা শাহাদ? কেমন চলছে হুকুমাত?

– আপনাদের কৃপায় ভালো।

– শুনে ভালো লাগলো। রাশেদের কেসের কি খবর?

– ফাইলটা পাচ্ছিনা পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের?

চমকে উঠলো ফরিদ। উচ্চ স্বরে বললো,

– মানে কি? কত বড় একটা প্রমান। কিভাবে পাচ্ছোনা?

– বুঝতে পারছিনা,বাড়ি থেকেই হারিয়ে গিয়েছে।

– দায়িত্বজ্ঞানহীনের মত কাজ করলে। একদম ঠিক করোনি।

শাহাদ মাথা নত করে রেখেছে। সবার জানা কথা ফাইলটা অনেক বড় একটা প্রমান ছিলো কেসের জন্য।

– স্যার আপনার দেয়াল ঘড়িটা সুন্দর কোথায় থেকে নিয়েছেন?

ফরিদ শাহাদের দিকে তাকিয়ে অবাক হলো। এই চিন্তার মাঝেও এই ছেলে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো কেনো? তবুও ভদ্রতার খাতিরে বলে উঠলো,

– গত শীতে দিল্লী গিয়েছিলাম।ওখানে এন্টিক জিনিসের শপ আছে।ওখান থেকে অনেক কমেই নিয়ে। মাত্র সতেরো হাজার পড়েছে। ঘড়ির সিস্টেম ভালো।

শাহাদ মাথা নেড়ে সম্মতি জানাচ্ছে। মানুষ দু বেলা খেতে পায় না,আর সে সরকারের কর্মচারী হয়ে মানুষের টাকায় দেয়াল ঘড়ি কিনে বলে মাত্র সতেরো হাজার। নিজের আয় করা টাকায় কিনলেও হতো। টাকা মেরে খেতে খেতে অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। কাজের মেয়েটা চা নাস্তা এনে দিলো। শাহাদ চা হাতে নিয়ে চুমুক দিলো। মুখে বিরক্তিকর শব্দ করে বললো,

– চায়ে এত চিনি কেউ দেয়?

কাজের মেয়ের মাথ নত। কেমন যেন আড়চোখে তাকালো শাহাদ। সেই চোখে বিরক্ত ক্ষোভ ছিলো।মনে হলো যেন সাধারণ চা বানানোর কাজটাও মেয়েটা পারে না। ঘাড় ঘুরিয়ে পাভেলের দিকে তাকাতেই দেখলো পাভেলের ভ্রু কুচকে আছে। পাভেলকে অনুসরণ করে দেখলো, ফরিদ ফোনে কিছু একটা দেখে বিচলিত। কাজের মেয়েটা তখনো পাশে দাঁড়িয়ে আছে। চেহারায় ভীতি। ফরিদের চেহারা দেখে শাহাদ প্রশ্ন করলো,

– স্যার সব ঠিক আছে? কেনো ডেকেছেন?

ফরিদ অতি মাত্রায় চিন্তিত গলায় বললো,

– ঠিক আছে। শাহাদ বাসায় ভালো করে খুঁজে দেখেছো রাশেদের পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট টা আছে কিনা?

– জ্বি স্যার। কেনো খুঁজবোনা। আমি তো অনেক চিন্তিত।… কিছু কি হয়েছে?

আমতা আমতা করে বললো ফরিদ,

– না তো.. ঠিক আছে।

হঠাৎ কাজের মেয়েকে ফরিদ ধমকে উঠলো,

– তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? যা এই চা টা ফেলে ভালো চা করে নিয়ে আয়।

চা নিয়ে কাজের মেয়ে ভেতরে চলে গেলো। ফরিদ শাহাদকে বলে উঠে গেলো। কিছুক্ষন পর রুম থেকে বেরিয়ে এলো ঠিকই কিন্তু মুখে আগের মত খুশি খুশি ভাবটা নেই। এসির নিচে ঘামছে। কপালে চিন্তার ভাব। পাভেল বললো,

– স্যার আপনার কি কিছু হয়েছে?

পাভেলের দিকে তাকিয়ে কেমন অন্য মনস্ক হয়ে গেলো। কাজের মেয়েটা আরেক কাপ চা এনে শাহাদকে দিলো। এবার চায়ে চুমুক দিয়ে শাহাদ বলে উঠলো,

– ওয়েল ডান, এবার হয়েছে।

মেয়েটার চোখে মুখে খুশি উতলে উঠলো।

ফরিদ শাহাদকে ভাঙা গলায় বললো,

– শাহাদ শরীরটা খারাপ লাগছে। আজ থাক।পরে একদিন বসবো নাহয়?

– আচ্ছা স্যার আজ আসি তাহলে।

উঠে দাঁড়ায় শাহাদ, পাভেলকে নিয়ে বের হয়ে যায়। দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় পাঞ্জাবির কলারটা পেছন দিকে ঠেলে বুকের উপর থেকে সানগ্লাসটা বের করে চোখে লাগায়। পাভেল শাহাদের এই রূপ দেখে বোকা বনে যায়। এই রূপ সাদা মাটা শাহাদের রূপ নয়, এ যেন সাক্ষাৎ মারপিটে, গুন্ডা শাহাদ। পকেট থেকে সিগারেট বের করে লাইটার দিয়ে সিগারেট জ্বালায় হাঁটতে হাঁটতে। পার্কিং এরিয়াতে গাড়ি নিয়ে আসে কেয়ারটেকার। দু আঙ্গুলে অভিনব স্টাইলে সিগারেট টানা দেখে পাভেল রীতিমতো থতমত খেয়ে বসে আছে। ধোঁয়া ছাড়ছে কায়দা করে। গাড়িতে ড্রাইভিং সিটে পাভেল বসে পড়ে। ডোর খুলে শাহাদ বসেই পকেট থেকে ফোন বের করে মেসেজ লিখে,

– Well done Tamanna. Keep it up. Will be rewarded very soon.

পাভেল গাড়ি চালাতে চালাতে রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে বলে,

– স্যার মিনিষ্টারের বাসায় কাজের মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগছিলোনা না?

– খেয়াল করিনি।

– মিনিষ্টার এমন ঘাবড়ে গেলো কেনো?

– আমাকে বলে ঘাবড়েছে?

অকস্মাৎ শাহাদ হেসে উঠলো। তাচ্ছিল্যভরা বিদঘুটে সেই হাসি। পাভেলের দুই অধর ‘হা’ সদৃশ হয়ে গেলো। শাহাদ চোখে তুলে পাভেলের দিকে তাকিয়ে সিগারেটের শেষ ফিল্টার টুকু ফেলে ধোঁয়া ছেড়ে বলে,

– The Game will start from now…

শাহাদের বাঁকা হাসি বলে দিচ্ছে বড় গেমটা শাহাদ খেলেছে। কি হতে পারে সেই গেম!

– স্যার একটা প্রশ্ন করি?

– কর

– আপনি তো রাশেদ স্যারের পোস্টমর্টেম করাতে রাজি ছিলেন না পরে কেনো করালেন?

– তুই দেখেছিস করাতে?

– মানে? করান নি??? তাহলে মনির কাছে কিসের রিপোর্ট ওটা?

– কথা কম বল গাড়ি চালা…

___

খুশিতে চেঁচিয়ে উঠলো তুহিন। হামজাকে ডেকে বললো,

– পেয়ে গিয়েছি। বস ফোন দিয়ে জানিয়েছে। তামান্নাকে বের করে আনতে বলেছে।

– কোথায় পেয়েছিস?

– এখন আপাতত ক্যাপ্টেন তানভীর ওটা হেফাজতে রেখেছে। বসের কাছে পৌঁছে দিবে।

হামজা,তুহিন এবং লাবিবের স্বস্থির নিঃশ্বাস। অহনার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ছিলো মিনিষ্টার ফরিদের কাছে। এই একটা রিপোর্টের জন্য এত চাল চেলেছে শাহাদ। গোয়েন্দা অফিসার তামান্নাকে ও কাজে লাগিয়েছে দিয়েছিলো সেই রিপোর্ট উদ্ধারের জন্য। এন্টিকের সেই ঘড়িতে লাগানো ছিলো হিডেন ক্যামেরা। সব প্রমান আছে কোন কোন অফিসার,এমপি মন্ত্রীর হাত আছে রাশেদের কেসের পেছনে। খেলা এখনো বহুদূর। অহনার পোস্টমর্টেম রিপোর্টই বলে দেয় অহনা রাশেদ দ্বারা রেইপড ছিলো না। রহস্য হলো সেদিন কেনো অহনা রাশেদের রুমে গিয়েছিলো! আর মনির চুরি করা রিপোর্ট ই বা কিসের রিপোর্ট!

____

শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গাজীপুরের মির্জাপুর ইউনিয়নে এই রিসোর্ট। ৩৫ একর জমির উপর অবস্থিত এই সুবিশাল রিসোর্ট বেছে নেয়ার একটাই কারণ সকলের মন খুলে আনন্দ করা। সাথে সুইমিংপুল তো আছেই। সবুজে ঘেরা অনাবিল সৌন্দর্য্যের আঁধার এই রিসোর্ট। এখানে পৌঁছেই সকলের মন ভালো হয়ে গেলো। রিসোর্ট কতৃপক্ষ সকল আয়োজন করে রেখেছে। গায়ে হলুদ এবং বিয়ে দুটিই এখানে হবে। যে যার যার ভিলা বুঝে নিলো। শাহাদকে ঘুরিয়ে পুরো রিসোর্টের নিরাপত্তা দেখাচ্ছে ম্যানেজার। অন্যদিকে পুলিশ সিকিউরিটি তো আছেই।

দরজায় কড়া নড়তেই সুলতানা কবির দরজা খুলে দিলেন। ছেলেকে দেখে হেসে ভেতরে আসার অনুমতি দিলেন। রায়হান সাহেব ফ্রেশ হয়ে এক কাপ চা হাতে টিভিতে চ্যানেল ঘুরাচ্ছে। হেসে বললেন,

– বসো শাহাদ।

– আব্বু বেশিক্ষন বসবোনা। আমি সিকিউরিটি সিস্টেমটা দেখলাম সব ঠিক আছে। আপনারা এদিকটা সামলে নিবেন। পাভেল, হামজা,লাবিব এখানেই থাকবে। অনুষ্ঠানের দিকটা কাব্য,নিশাদ,রজত সামলে নিবে। যদি প্রয়োজন হয় জানাবেন।

– তুমি কোথায় যাচ্ছো?

– আম্মু ভুলে গেলে চলবেনা, বাসায় আরেকজনকে রেখে এসেছি। যতই ওকে নিরাপত্তার বেষ্টনী দিয়ে রেখে আসি না কেনো, চিন্তা থাকবে। আমার মতো কেউ নিরাপত্তা দিতে পারবেনা। কিছুক্ষন পর চলে যাব। কাল আসবো আবার।

রায়হান সাহেব হেসে বললেন,

– শাহাদ তুমি তোমার বাবাকে কি ভাবো?

– অবশ্যই আমার জন্য সুপার হিরো। আপনার হাত ধরেই তো সব শেখা।

– তাহলে কেনো ভাবলে না যে তোমাদের ছায়া এখনো বেঁচে আছে। আমি আর তোমার আম্মু দশটায় চলে যাব। তোমাকে এখানে দরকার সুলতানা মঞ্জিলে নয়।

সুলতানা কবির ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলে,

– বাবু, এখানে আমার ছেলে,মেয়ে, নাতি-নাতনী এবং বৌমাদের পাহারায় তোমাকে রেখে যাচ্ছি। ওখানে আমি আর তোমার বাবা না হয় উচ্ছলে যাওয়া মেয়েটাকে দেখে রাখবো। চিন্তা করতে হবে না। ও হ্যাঁ, এত আবেগী হয়ে পড়ো না। আমরা এখানকার অনুষ্ঠান শেষ করে এরপর যাব। এমনিতেও তোমার আব্বুর ঘুম হবেনা নিজের বিছানা ছাড়া।

বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে শাহাদ বলে,

– পৃথিবীতে অনেক সন্তানের জন্ম হবে,অনেক বাবা মা আসবে কিন্তু রায়হান মাহবুব আর সুলতানা কবিরের মতো বাবা মা যুগে যুগে গুটি কয়েক বার আসবে। আমি ধন্য।

সুলতানা কবির ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

– পৃথিবীতে অনেক সন্তান আসবে,তবে আমার বাবুর মতো একটিও আসবেনা হয়তো,আসলেও তারা শাহাদ ইমরোজ হতে পারবেনা। আমি ধন্য তোমায় গর্ভে ধরে।

___

মরিচ বাতির ঝিলমিল আলো, স্লো মিউজিকে গান বাজছে। শাহাদের নির্দেশ প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার আগে যেন লাউড মিউজিক বাজানো যাবেনা। সন্ধ্যার পরিবেশ মনোমুগ্ধকর। সবার হলুদের শাড়ি এক রকম, দিয়া এবং নওরীন ব্যাতীত। তাহির ইচ্ছেতেই এমনটা হয়েছে। তাহি দুই ভাবীকে দুই রূপে দেখতে চেয়েছে। খোঁপায় হলুদ গাঁদা, হাতের রেশমি চূড়ি হলদে এক প্যাচী বাঙালী ধাঁচের শাড়িতে তাহিকে দেখলে যে কেউ বলবে এই মেয়ের বয়স বড়জোর চব্বিশ কি পঁচিশ। ছেলেরা সব সাদা পাঞ্জাবী পরেছে। হলুদের স্টেজ সাজিয়েছে। পুরো রিসোর্ট আজ আলোকিত। তাহি হলুদের ডালা গুলো নিয়ে স্টেজে রেখে আসলো। শিফা, বিদিপ্তা সবার হাতে কাজ। স্টেজ থেকে নামতেই ধাক্কা খেলো লিমনের সাথে। আজ রাগ না করে সোজা নেমে পড়ে। মনে মনে ভাবছে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়েছে এই ছেলে। উপেক্ষা করে চলে আসে। থমকে গিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো লিমন সাউন্ডবক্সের লোকজনের সাথে কথা বলছে। আজ তাহিকে একটুও জ্বালাতন করছেনা। তাহি বিস্মিত হলো। মনে মনে খুশি হয়ে রিসোর্টের ভেতর চলে গেলো। নওরীনকে বিউটিশিয়ান এনে সাজানো হয়েছে। দিয়া এক পাশে বসে দেখছে। সাজানো শেষে বিউটিশিয়ান দিয়াকে বললো,

– ম্যাডাম সব কি ঠিক আছে?

দিয়া এগিয়ে এসে বললো,

– মাশা আল্লাহ সব ঠিক আছে। কারো নজর না লাগুক।

নওরীন হেসে বলে,

– ভাবীমা আপনি যেখানে আছেন সব ঠিক থাকতেই হবে।

শিফা,বিদিপ্তা,তাহি, নিশি,নিশাদের বউ সবার সাজগোছ সব শেষ হলো। দিয়া নিজের মত সাজতে বসেছে। শাড়ি পরেছে কুচি দিয়ে। ব্লাউজের হাঁতা হাতের কবজি অবধি ঢাকা। কলাপাতা রঙের রাজশাহী মসলিন শাড়ি। গলায় মাল্টিকালার এন্টিক সেট। মাথায় হলুদ,কলাপাতা শেডেড হিজাব। সব মিলিয়ে অনবদ্য লাগছে। লেন্স পরতে বলেছিলো বিদিপ্তা। ঘন কালো কুচকুচে চোখে লেন্স পরলে মনে হলো ভালো লাগবেনা।তাই আর পরা হয়নি। এক প্যাচে শাড়ি পরলে শেহজাকে সামলাতে পারবেনা। শাড়ির আঁচল ও ছাড়েনি।একেবারে সেফটিপিন দিয়ে সেট করে ফেলেছে।দু হাতে গাঁদা ফুলের বালা পরেছে। এখানে আসার পর থেকে শাহাদের সাথে আর দেখা হয়নি।

স্টেজের বসে আছে শাহীন। শাহীনের কয়েক জন বেস্ট ফ্রেন্ড এসেছে। শাহাদের বন্ধুদের মধ্যে চারজন এসেছে। সকলে স্টেজে বসে আছে। অকস্মাৎ প্ল্যান চেঞ্জ করে ফেলেছে শাহাদ। নওরীনকে ভেতর থেকে বের না করার নির্দেশ দিয়েছে। হঠাৎ এমন চেঞ্জে বিচলিত সবাই। পাভেল কাজী নিয়ে এসেছে। রায়হান সাহেবসহ চাচা ফুফুরা সবাই প্রশ্ন করছে শাহাদকে। আলাদা রুমে বৈঠক বসেছে। শাহাদ কেন্দ্রবিন্দু। শাহীনকে ডেকে নিয়ে এসেছে আলোচনায়। শাহাদ সবার সামনে দৃঢ় আওয়াজে বলে উঠলো,

– এমন একসাথে হলুদের জায়েজ সাধারণত নেই। বিয়ে তো হবেই ইনশাআল্লাহ কালকে।আজকে হলে সমস্যা কি? কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর পর একসাথে হলুদ করুক আর যাই করুক তাতে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। স্টেজে উঠানোর আগেই বিয়ে পড়ানো হোক।

সম্মতি দিয়ে রায়হান সাহেব বলে উঠলেন,

– পড়ান তবে বিয়ে কাজী সাহেব। আমার আপত্তি নেই।

শাহীন স্তব্ধ। বুঝতেই পারেনি ভাইজান এতটা করবে তার জন্য। একটা সম্পর্কে হালাল সম্পর্কে রূপ দিতে এই মানুষটা তার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছে। শাহীনের কাছ থেকে কবুল পড়িয়ে স্বাক্ষর নিয়ে নওরীনের কাছে আসে। শাহাদ এই প্রথম চেয়ার টেনে নওরীনের পাশে বসলো। কবুল বলার আগে নওরীনের চোখে পানি দেখে মাথায় হাত রাখলো। দিয়াকে ইশারা দিয়ে পাশে বসালো। সুলতানা কবির, মঞ্জিলা,সাবিনা,ইফাত সবাই বসলো। শাহাদ মাথায় হাত রাখতেই নওরীনের কান্নার জোর বেড়ে গেলো। ওর একজন চাচা,মামাও আসেনি আজ। হয়তো এমপির ভাই শুনলে আসতো। সে কথা গোপন রেখেছিলো শাহাদের আদেশে। ভেবেছে তাদের অমতে নিজের পছন্দে বিয়ে করছে কেনো আসবে এই বিয়েতে! নওরীনের কান্না থামাতে শাহাদ বলে উঠলো,

– দেশ রক্ষাকারী সেনাকর্মকর্তা তোমার স্বামী। স্বামীর অনুপস্থিতিতে সংসার,দায়িত্ব, সুখ-দুঃখ সব সামলে যখন ক্লান্ত হয়ে উঠবে তখন ভাববে তোমার একজন শাহীন ইমরোজ আছে। যদি সেখান থেকেও আঘাত প্রাপ্ত হয়ে যাওয়ার জায়গা না পাও তখন ভাববে তোমার মাথার উপর একজন বড় ভাইজান আছে যার দরজা তোমার জন্য চিরকালের মত খোলা। সবার বাবার বাড়ি থাকলেও তোমার ভাইজানের বাড়ি আছে। সেখানে তুমি একমাত্র একচ্ছত্র অধিকারী। তুমি বাকিদের চেয়ে স্পেশাল ভাইজানের কাছে। ভাইজান ছাড়াও সেখানে মমতাময়ী ভাবীমাকে পাবে। আর কিছু কি লাগবে?

নওরীন কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠিয়ে ফেলেছে। দিয়া একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে।সুলতানা কবির দুজনকে আগলে ধরে। কবুল বলে নিজের নাম লিখে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে শাহীন ইমরোজের হৃদয়ে রাজ করা বৈধ রাজরানী রূপে। কাজীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শাহাদ। নওরীনকে স্টেজে নিয়ে আসার নির্দেশ দেয় সকলকে।

..

শাহীন সদ্য বিয়ে হওয়া সহধর্মিণীকে দেখে মন ভুলানো হাসি দিলো। কলাপাতা ও গোলাপী রংয়ের জামদানীতে মনে হচ্ছে সদ্য ফোটা পদ্মফুল। শাহীনের হাসি যেন মনের মাঝে ঝড় তুলেছে নববধূর। সদ্য স্বামী হওয়া পুরুষকে উপহার দিলো প্রাণ ভরিয়ে তোলা মিষ্টি হাসি। দুজনকে একসাথে বসানো হলো। স্লো মিউজিকে গান বাজছে। শাহাদ রজতকে ডেকে বললো গানের সাউন্ড বাড়িয়ে এঞ্জয় করতে। নিজে একটু দূরে সরে আসলো।এই আওয়াজ মাথায় লাগে। একপাশে বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলো। শাহাদের চারজন বন্ধু এসেছে। ডাক্তার মল্লিকা রহমান, পাইলট কানিজ রোকসানা, পুলিশ কমিশনার রকিব হালদার ও ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান। কেউই স্কুল কলেজের বন্ধু নয়।সকলে কর্মসূত্রে পরিচিত আজ পনেরো বছর ধরে। সকলেই সংসার, পরিবার, কাজ নিয়ে ব্যস্ত।শাহাদ আজকের এই আনন্দের সন্ধিক্ষণ বন্ধুদের সাথে কাটাতে চেয়েছে।যারা সবসময় বিপদে- আপদে পাশে ছিলো। আলাপের মাঝে রোকসানা বলে উঠলো,

– ভাবীর সাথে পরিচয় করাবিনা? মেয়েটাকে ও তো দেখলাম না।

– কল করেছি আসছে।

দূর থেকে দেখতে পাচ্ছে গুটি পায়ে মেয়ে কোলে নিয়ে এগিয়ে আসছে রমনী। শাহাদ প্রায় অবাক হয় এই নারীর রূপে।একেক সাজে একেক রকম। এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে রাণী। মনের মাঝে ঝড় তুলেছে এই রমনী। সামনে এসেই দিয়া সালাম দিলো। শাহাদ কানিজের দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করলো মেয়েটা হা করে তাকিয়ে আছে। কানিজের মনে কি চলছে শাহাদ বুঝতে পেরেছে। শেহজাকে কোলে নিয়ে বললো,

– এই হচ্ছে আমার রাজকন্যা। ইনি তার মা,আমি তার অপ্রিয় স্বামী।

রকিব হালদার সালাম দিলেন। শেহজাকে কোলে নিয়ে বললো,

– মা শা আল্লাহ সত্যই রাজকন্যা।

শাহাদ দিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিলো সকলের সাথে। কানিজ রোকসানা বললো,

– এই শাহাদ, তোর বউ যে আমার বিশ্বাস হচ্ছে। উনি তো অনেক ছোট। বাল্য বিবাহ করলি?

সকলে হেসে উঠলো। দিয়া লজ্জা পেলো। শাহাদ মৃদু হেসে বলে,

– পাওয়ার অফ শাহাদ ইমরোজ বুঝলি।

মনিরুজ্জামান হেসে বলে,

– ভাবী আপনাকে কি জাদু করেছে এই শা*লা! যে আপনি সহজে বিয়ে করে নিলেন?

দিয়া তখনো হাসছে। কানিজ হেসে বলে,

– আমি শিউর শাহাদ কিডন্যাপ করে বিয়েটা করেছে।

ডাক্তার মল্লিকা দিয়াকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

– ওরা মজা করছে আপনি কিছু মনে করেন নি তো ভাবী? আসলে আমরা অনেক ক্লোজ শাহাদের।

– না আপু। উনি তো কথাই কম বলে। আপনাদের সাথেই দেখলাম একটু হাসি খুশি আছে।

কিছুক্ষন সকলে আড্ডা দিয়ে স্টেজের দিকে চলে গেলো। শাহাদ স্টেজের সামনে চেয়ারে বসেছে বন্ধুদের নিয়ে। হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো। খুব তাড়াতাড়ি হলুদ লাগানোর পর্ব শেষ করেছে। এখন কালচারাল পার্টে চলে গেলো। সবাই গান-বাজনা নিয়ে রেডি। স্টেজ বিশ মিনিটের মধ্যে রেডি করেই যে যার যার পজিশন নিলো। অন্ধকারে নিমজ্জিত স্টেজে হঠাৎ আলো জ্বলে উঠলো। লিমন প্রথম গানের সুর ধরলো,

মা লো মা, ঝি লো ঝি
বইন লো বইন, করলাম কী?
রঙ্গে ভাঙ্গা নৌকা
বাইতে আইলাম গাঙ্গে।

একসাথে কাব্য, রজত,নিশাদ কোরাস করে গেয়ে উঠলো,

কালীর নয়নজলে
জলে বুক ভেসে যায়
কী সাপে কামড়াইলো আমার
দুর্লভ লকাইর গায়
কালীর নয়নজলে
জলে বুক ভেসে যায়
কী সাপে কামড়াইলো আমার
দুর্লভ লকাইর গায়
আর কোথায় রে মা মনসা
তোমায় প্রণাম জানাই
কালীর নয়নজলে।

শাহীন গাইলো,

ছিলাম শিশু, ছিলাম ভালা
না ছিলো সংসারের জ্বালা
সদাই থাকিতাম মায়ের সঙ্গে
ছিলাম শিশু, ছিলাম ভালা
না ছিলো সংসারের জ্বালা
সদাই থাকিতাম মায়ের সঙ্গে
আমার দেহেতে আইলো জুয়ানি
উজান বহে গাঙ্গের পানি
কামিনী বসিলো ভাব অঙ্গে
ভাঙ্গা নৌকা বাইতে
আইলাম গাঙ্গে।

পুরো গান শেষে রকিব হালদার মাইক টা হাতে নিয়ে বলে,

– বিয়ের দিনই তুমি সংসারের জ্বালার কথা চিন্তা করো। আহারে নতুন ভাবী আপনার কপাল পুড়ছে।

নওরীন হেসে উঠলো। শাহীন স্টেজ থেকে নেমে সবার সামনে বললো,

– তুমি কি রাগ করেছো? আমি কিন্তু এত কিছু ভেবে গাই নি।

নওরীন হেসে বলে,

– আজকে কিছুতে রাগ করবোনা। এঞ্জয় করো।আমার ভালো লেগেছে তোমার বেসুরে কন্ঠের গান। ধন্যবাদ জনাব।

শাহাদ হাসছে ওদের দেখে। পাশে বাবা মাকে ও দেখলো তারাও হাসছে। আড়চোখে দিয়াকে দেখলো হাত তালি দিয়ে গানের বিটের সাথে। লিমনকে নামতে বললো ইশারাতে। কিছু একটা বলাতে লিমনের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। লিমন নিজের জায়গায় গিয়ে নতুন মিউজিক ধরলো। মাইক হাতে নিয়ে সকলকে চমকে দিয়ে কাটখোট্টা, নিরস শাহাদ গেয়ে উঠলো,

আমার সকল অভিযোগে তুমি
তোমার মিষ্টি হাসিটা কি আমি?
আমার না বলা কথার ভাঁজে
তোমার গানের কত সুর ভাসে

তোমায় নিয়ে আমার লেখা গানে
অযথা কত স্বপ্ন বোনা আছে
আমার হাতের আঙুলের ভাঁজে
তোমাকে নিয়ে কত কাব্য রটে

ভুলিনি তো আমি তোমার মুখে হাসি
আমার গাওয়া গানে তোমাকে ভালোবাসি
আসো আবারও কাছে, হাতটা ধরে পাশে
তোমায় নিয়ে যাব আমার পৃথিবীতে
এই পৃথিবীতে।

প্রতিটি বাক্য যেন শাহাদের না বলা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। মুগ্ধ নয়নে স্তব্ধ হয়ে দেখলো অনুষ্ঠান জুড়ে সকলে। এই কটা লাইন যেন যথেষ্ট ছিলো রমনীর হৃদয়ে ঝড় তোমার জন্য। অনেকেই অবাক।শাহাদ গান এত ভালো গাইতে জানে এই কথা তাহি ছাড়া কেউ জানতোনা। রাশেদের গানের পার্টনার ছিলো শাহাদ। সে কথা রাশেদের সাথেই নিরবে গোপনে সমাহিত হয়েছিলো সেদিন। আজ শাহাদকে গাইতে দেখে তাহির চোখে পানি। রিপোর্ট নিয়ে কথা বলতে চাইলেও শাহাদ জানিয়েছে পরে বলবে। তবে ভাইজানকে এভাবে দেখে আজ নিজের কাছেও শান্তি লাগছে। মানুষটা গোমট খুলে বেরিয়ে আসুক।সবাই তাকে চায়। সে সুস্থ হয়ে সকলকে ভালো রাখুক এটাই যেন সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা।

চলবে…

#সায়রে_গর্জন
#নীতি_জাহিদ
২৫.( মেজরের বিবাহ পার্ট ২)

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)

জোরে করতালিতে মুখর আজ চারপাশ। বেসুরে গান তো সবাই গায়। শাহাদকে গান গাইতে এযাবৎকালে কেউ দেখেছে কিনা সন্দেহ। পারফেক্ট সিংগার টোন না হলেও খুব সুন্দর মিউজিক্যাল ভয়েস ক্রিয়েট করে ফেলেছে, সকলের উৎসাহে বুঝা যাচ্ছে। গান শেষ করে চোখ মেলে তাকালো দিয়ার দিকে। পুরোটা গান চোখ বুজেই গেয়েছে। তাকাতেই শুভদৃষ্টি হলো। লিমন সকলের সামনে বলে উঠলো,

– ভাইজান ওয়ান্স মোর।

শাহাদ দাঁড়িয়ে পড়ে। মৃদু হেসে বলে,

– ইট ওয়াজ আ সারপ্রাইজ। সারপ্রাইজ হ্যাপেন্স ওয়ান্স। নো মোর ঠুডে।

হাতের ফোন নিয়ে উঠে গেলো সকলের সামনে থেকে। দিয়া উঠে দাঁড়াতেই তাহি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুষ্টুমি করে ধাক্কা দিয়ে বললো,

– ইশ আমার ভাইজান কত রোমান্টিক দেখেছো।

– বলছে তোমাকে!

– শেহজা কিভাবে এলো?

– তখন ছিলো।

তাহি অট্টহাসি দিলো। দিয়া লজ্জ্বা পেয়ে গেলো। নিশাদের স্ত্রীর এই বাড়িতে মোটামুটি সবাইকেই পছন্দ তবে দিয়াকে একটু বেশি। কাছে এসে বললো,

– ভাবীজান ভাইজানকে বশ করার মন্ত্রটা আমাকে বলবেন? আমি আপনার দেবরকে করবো।

সেই মুহুর্তে নিশি, শিফা আর বিদিপ্তা ও চলে এলো। শিফা হেসে বললো,

– ভাইজানকে কি বশ করা যায়!

দিয়ার হাতের ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো,

– তোমাদের ভাইজান আশপাশটাকে চুম্বকের মত বশ করে রাখে। তাকে বশ করার সাধ্য আমার নেই। আমি একটু আসি?

দ্রুত পা ফেলে রুমে আসলো দিয়া। কথা বলতে বলতে দেরি করে ফেললো। রুমে ঢুকেই দেখলো শাহাদ পায়ের উপর পা তুলে চোখ বন্ধ করে বসে আছে সোফায় হেলান দিয়ে । দিয়া হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

– আমি খুবই দুঃখিত। প্রথমে মেসেজ দেখিনি।

– ইটস ওকে। এখানে আসো।

দিয়া সামনে যেয়ে দাঁড়ালে শাহাদ হাত ধরে পাশে বসায়। খুব মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে সহধর্মিণীর পানে। দিয়া বুঝতে চেষ্টা করছে শাহাদের কার্যকলাপ। দিয়ার বাঁ পাশের গালে ডান হাত রাখলো। মায়াময় আঁখিতে তাকিয়ে বললো,

– ভীষণ সুন্দর লাগছে।

এতটুকুই! ব্যস এতটুকুই কি যথেষ্ট ছিলোনা মন হরনের জন্য! তবে এমন দৃষ্টি কেনো। এখনো তাকিয়ে আছে দিয়ার মুখ চেয়ে। কিছুতেই লোকটার ঘোর ভাঙানো যাচ্ছেনা। লজ্জা পেয়ে মুখ আনত করলো দিয়া। পুনরায় নিজের শক্তপোক্ত হাত দিয়ে সহধর্মিণীর থুতনী ধরে মুখ তুলে বললো,

– দেখতে দাও, মুখ নামালে কেনো!

দু গাল আজ লালিমা আভায় রাঙানো। কি দেখছে মানুষটা। একটু নাহয় সাজ গোজ করেছে আর কি, এভাবে দেখা লাগবে! শাহাদের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো সেই বিখ্যাত হাসি। ঠোঁট কামড়ে হাসছে। দিয়া নিজের অজান্তে চাপানো হাসি বের করে বলেই ফেললো,

– আমার লজ্জা লাগছে এভাবে হাসবেন না। আপনাকে পুরোপুরো নতুন প্রেমিক লাগছে।

– আমি তো নতুনই…

– এক বাচ্চার বাপ নতুন কি করে হয়!

– দেখাচ্ছি।

আকস্মাৎ উঠে দাঁড়িয়ে দিয়াকে কোলে তুলে নিলো। চোখ বড় বড় হয়ে গেলো দিয়ার বিস্ময়ে। টুপ করে নিজের ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে দিলো অর্ধাঙ্গীর ঠোঁট। নিজের বুকে ধুকধুক করা প্রতিটি স্পন্দন দিয়ার কানে আসছে। খাটে শুইয়ে দিয়ার উপর ভর দিয়ে ললাটে ললাট রেখে বললো,

– আমাকে কি খুব সভ্য পুরুষ মনে হয়?

দিয়া নিশ্চুপ, হতবাক,নির্বাক। এই মুহুর্তে এমন প্রশ্নের মানে কি! শাহাদ পুনরায় বললো,

– বিয়ে বাড়ির পরিবেশ, সবাই বউ নিয়ে থাকবে। অথচ হতভাগা আমি থাকি খাটে,বউ থাকে কাউচে। আজকে আমি ছাড়বোনা।

দম আটকে আসছে দিয়ার। শাহাদের এলোমেলো আচরন ভাবিয়ে তুলছে। মানুষটা এমন খোলামেলা কথা তো কখনো বলে! দিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

– এমপি সা হেব, কি হ য়ে ছে আপনার?

– কি হবে আবার! বউ লাগবে,আদর লাগবে। বিবাহিত ব্যাচেলর হয়ে থাকতে পারবোনা। অনেক হয়েছে শাস্তি।

– আল্লাহ আল্লাহ, আপনার কি হয়েছে! এত খোলামেলা তো ছিলেন না?

– তাই তো সহজ সরল পেয়ে বঞ্চিত করছো। মাফ করবেনা আল্লাহ। কিছু বলিনি এতদিন আর পারছিনা। নাও কিস মি…

অধর ‘হা’ সদৃশ হয়ে গেলো। দু বার চোখের পলক ঝাপটে জোরে জোরে বিড়বিড় করে বললো,

– হে আল্লাহ আমার স্বামীর কি হয়েছে। তাকে সুস্থ স্বাভাবিক করে দাও। আবোল তাবোল বকছে।

চোখ খুলে সুরা ফাতিহা,নাস,ইকলাস পড়ে ফুঁ দিচ্ছে শাহাদের চোখে মুখে। দিয়ার অদ্ভুত সব কান্ড দেখে শাহাদ উঠে বসে হো হো করে হেসে উঠলো। চোখ থেকে চশমা খুলে চোখ কচলে বললো,

– ফারাহ…

– জ্বি

– আমি কি সত্যি এতটাই আন রোমান্টিক, তুমি বিশ্বাস করতে চাইছোনা।

দিয়া উঠে বসে বুকে থু থু করে বললো,

– বিশ্বাস করেন এম পি সাহেব আমার কলিজা এখনো কাঁপছে। আপনার ওই আচরণ স্বাভাবিক ছিলোনা একদমই। রাত বিরাতে চলাফেরা করেন।হয়তো কোনো জ্বীনের আছর হয়েছে।

– হ্যাঁ শাহাদ জ্বীনের আছর হবে ফারাহ পরীর উপর। সাবধানে থাইকো।

উঠে দাঁড়ায় মানুষটা। হেসে পাঞ্জাবি ঠিক করে, আয়নার সামনে গিয়ে চুল সেট করে বললো,

– শেহজাকে খাইয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। মেয়েটা সারাদিন ঘুমায় নি।

– আপনি আসবেন না?

– কাছে আসলে তো ধুর ধুর করো।

– ছিঃ ছিঃ কি বলেন এসব।

শাহাদ কিঞ্চিৎ হেসে উত্তর দিলো,

– আর একদিন আগামীকাল রাত হবে তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত। বি রেডি।

___

নওরীনকে সবাই রুমে নিয়ে এসেছে। শাহীন দুবার এসে ঘুরে গিয়েছে। তাহি ঢুকতে দেয় নি। দরজা ভেতর থেকে লক করে বসে আছে মেয়েরা। শাহীন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলছে,

– তাহি, বোন না। একটু কথা বলে চলে যাব। তোদের কি এই গরীবের জন্য দয়া মায়া হয়না।

ভেতর থেকে শিফার জোর আওয়াজ আসছে,

– কাল থেকে হবে ছোট ভাইজান। আজকে যাও।

– এ্যাই পুচকি বের হ, তুই ভেতরে কি করিস।

– পুচকি বলার শাস্তি দিব কিন্তু, বউকে এক মাস দেখতে পাবে না।

শেষমেষ নিরাশ হয়ে চলে এলো শাহীন। নিজের কামরায় মনমরা হয়ে বসে আছে, দরজায় ধপাধপ আওয়াজ শুনে এগিয়ে দরজা খুললো।সামনে সদ্য হওয়া স্ত্রী। চুপি চুপি ঢুকে বললো,

– পালিয়ে এসেছি।

– এই না হলে আমার বউ।

– আরেহ এডভেঞ্চার প্রয়োজন আছে জীবনে।ওদের পটিয়ে বেরিয়ে এসেছি। শাহীন আমি অনেক খুশি।

শাহীন অকস্মাৎ জড়িয়ে ধরলো নওরীনকে। দুহাতে আকড়ে ধরলো স্বামীকে। শান্ত কণ্ঠে শাহীন বলে উঠলো,

– ভাইজান প্রতিবার ঋণী করেছে আমাদের।

– আমার মনে হয় মানুষটার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আমরা শেষ করতে পারবোনা।

বুক থেকে সরিয়ে অর্ধাঙ্গিনীর চোখে চোখ রেখে মৃদু হেসে ললাটে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো। হেসে বললো,

– আমার বউ।

– আমার স্বামী।

নিরব মোহাচ্ছন্ন দৃষ্টিতে দুচোখ আজ নিবদ্ধ প্রেয়সীতে। গোলাপী অধর আজ বড্ড টানছে। পুরুষ সত্তা জেগে উঠেছে। আনত বদনে আরো মায়াময় লাগছে কনেকে। হেচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে অধরে অধরে মেশালো মেজর শাহীন ইমরোজ। পাশের রুম থেকে ভেসে আসছে স্লো মিউজিক, তেরে ইশক নে সাথিয়া,মেরা হাল ক্যায়া কার দিয়া…

কপোত-কপোতীর ভালোবাসা স্বার্থক। হয়তো বড় ঝড়ের পূর্বাভাস আজ শাহাদ পেয়েছিলো। নতুবা এত দ্রুত বিয়ের আয়োজন কখনোই করতোনা।ঠোঁটে লেগে আছে মুচকি হাসি। নওরীন আজ থেকে তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী। যে সম্পর্ক গড়তে কত ধকল,ঝড় – ঝাপটা পোহাতে হতো তা এক নিমিষের সমাধান দিয়ে দিলো ভাইজান। এই মানুষটাকে ঘিরে সবার এত আশা ভরসা।

নওরীন চলে যেতেই পরনের পোশাক পালটে পুল সাইডে এসে বসলো। পানির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেই পানির উপর কারো স্পষ্ট প্রতিবিম্ব ভেসে উঠলো। ঘাড় ঘুরিয়ে ভাইকে দেখে মিষ্টি হাসি দিলো। ট্রাউজার গুটিয়ে পানিতে পা ভিজিয়ে পাশে বসলো। প্রগাঢ়তা নিয়ে বললো,

– কতদিন লাগবে জানি না, এই প্রথম বাঁচার ইচ্ছে জাগলো মন থেকে। এত বড় পদক্ষেপ নিতাম না। নিরুপায়, অপারগ আমি। যদি দূর্ঘটনা ঘটে যায় সামলে নিও।

শাহীন কম্পিত গলায় বলে উঠলো,

– ভাইজান আমি ক্লান্ত। আজকে পুরোটা দিন অভিনয় করেছি। চোখে জল আসছে, লুকিয়ে রাখছি। গলা ধরে আসছে,কথা বলা বন্ধ করেছি।

– মেজর এটা ও তোমার গুরু দায়িত্বের মাঝে পড়ে। যদি কিছু হয় তবে আমাকে রাশেদের পাশে শায়িত করবে।

উঠে গেলো শাহাদ। রেখে গেলো এক পাহাড়সম দায়িত্বের ভার প্রদান করা ছোট ভাইকে।

___

শুক্রবার অনুষ্ঠানের সম্পূর্ণ কাজ সম্পাদন করে রিসোর্ট ছেড়ে রওয়ানা হলো সুলতানা মঞ্জিলে। নওরীনের মাথা ঘুরছে। টানা এভাবে জার্নি,রাতের ঘুম নষ্ট সব মিলিয়ে ক্লান্ত। শাহাদের মেরুন রঙ্গা রেঞ্জ রোভারে উঠতে বললো সবাই। দূরে শাহাদ দাঁড়িয়ে। শাহীন তাহিকে ধমক দিয়ে বললো,

– ওটাতে কেনো উঠতে হবে। ভাইজান ভাবীমাকে নিয়ে ওটা করে যাবে। পাভেল আজ তুমি আসো আমাদের সাথে।

শাহাদ এসে দাঁড়ায়। শান্ত, ধারালো গলায় বলো,

– শাহীন, বৌমাকে নিয়ে উঠো। ফারাহ ফ্রন্ট সিটে বসো। পাভেল আম্মুদের গাড়ি নিয়ে রওয়ানা হও।

পাভেল বলে উঠলো,

– বস, আপনি কোথায় উঠবেন?

– আমি ড্রাইভ করবো।

– এই অবস্থায়! এই শরীরে..

– কথা কম বলো।

ভয় পেয়ে শাহীনের দিকে তাকাতেই, শাহীন চোখ দিয়ে আশ্বাস দিলো। যে যার যার মতো তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লো। চলছে গাড়ি গাছ পালা পেরিয়ে ধূলো উড়িয়ে। ঘড়িতে বিকাল সাড়ে পাঁচটা, আজকের মত এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন বিরহে কাটবে ভেবেই শাহীনের মাঝে ভীত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নিজেকে বার বার সামলাচ্ছে। হঠাৎ করে চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। নিজের অজান্তে বুকে টেনে নিলো নওরীনকে। চুপচাপ গুটিশুটি মেরে শাহীনের বুকে মাথা রেখেছে। মেয়েটা ।স্বামীর ভেতরের মন বুঝতে পারলে হয়তো দু একটা শান্তনা বানী আওড়ে দিত। শান্তভাবে, ধীর স্থির ড্রাইভিং করছে এমপি। শেহজা মায়ের বুকে। দিয়ার অক্ষি সম্মুখে স্থির।ক্লান্ত শরীর। আকাশী নেটের শাড়িতে অনবদ্য লাগছে নারীকে। কোলে তার ছোট্ট রাজকন্যা। অকস্মাৎ জোরে ব্রেক কষলো। সকলের সামনের দিকে ঝুঁকে গেলো। দিয়ার মাথায় লেগেছে তবে গাড়ির শক্ত কিছু নয়, তাকিয়ে দেখে কমান্ডারের শক্ত হাত।

– ব্যাথা লেগেছে?

দিয়া দু পাশে মাথা নেড়ে বললো,

– না আপনি ঠিক আছেন?

শেহজা আকস্মিক ঘটনায় ঘুম থেকে উঠে কান্না জুড়ে দিলো ঠোঁট উলটে। মেয়েকে দিয়ার কাছ থেকে নিয়ে বুকে চেপে ধরলো। পেছন ফিরে শাহীনকে প্রশ্ন করলো,

– তোমরা ঠিক আছো?

ঘুম কেটে গেলো নওরীনের। প্রশ্ন করলো,

– ভাইজান আপনার কি শরীর খারাপ?

– না ঠিক আছি। হয়তো অন্য মনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম।

শাহীন নিরব চাহনীতে ভাইয়ের দিকে তাকালো। আজ কতটা অগোছালো লাগছে ভাইকে। মনের মধ্যে যুদ্ধ করছে চিন্তাদের সাথে। যদি এটা ভাইয়ের সাথে শেষ যাত্রা হয়? শাহীনের আত্মা কেঁপে উঠলো। শরীর খারাপ লাগছেনা ভাইয়ের। আৎকে উঠে বললো,

– ভাইজান আমি ড্রাইভ করি। আপনি ভাবীমাকে নিয়ে পেছনে আসুন।

– ঠিক আছি আমি। তোমরা ঘুমাও। আর হবে না এমন।

সহজ স্বীকারোক্তি! মনে হয় যেন অনেক বড় ভুল করেছে! মেয়েকে বুকে জড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। ইশারায় দিয়াকে কাছে ডাকলো। মেয়েকে দিয়ার হাতে শাহাদের বুকে চেপে ধরতে বললো। ডান হাতে স্টিয়ারিং ঘুরাচ্ছে। বাম হাতে দিয়াকে আগলে ধরেছে। লক্ষ্য সামনে স্থির। দিয়ার মাথার উপরিভাগে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে বললো,

– ঠিক আছি আমি।

___

বাসায় পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা সাতটা। শিফা ফ্রেশ হয়ে চলে গেলো চিলেকোঠায়। আজ হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে। এত এত উপেক্ষা কেনো। বিয়ের অনুষ্ঠানে একবারো তাকায়নি। চিলেকোঠার দরজা ধাক্কাতেই খুলে গেলো। উঁকি দিয়ে দেখলো ভেতরে কেউ নেই। ধীরে সুস্থে পা টিপে ঢুকলো। টুংটাং আওয়াজ আসছে ছোট্ট লাগোয়া পাক ঘর থেকে। ঘাড় কাত করে দেখে গলায় তোয়ালে ঝুলানো, পরনে শুধু প্যান্ট। উদাম শরীরে চুলায় কি যেন কাজে ব্যস্ত। শিফা চোখ পাকিয়ে দেখছে। এক কাপ চা হাতে ফুঁ দিতে দিতে পাভেল এগিয়ে আসছিলো,আচমকা শিফাকে দেখে লাফিয়ে উঠলো। গরম চা এসে পড়লো হাতে। এক পাশে কাপ রেখে শিফাকে জোরে এক রাম ধমক দিয়ে বললো,

– এ্যাই মেয়ে মাথা ঠিক আছে তোমার,এখানে কি করছো?

দু পাশে বেণী করা চুলে। হাটু সম ফতুয়া,প্লাজো পরনে। গলায় ওড়না প্যাঁচানো। ঠোঁট উলটে বললো,

– চা হাতে পড়েছে আপনার। হাত জ্বলছে না।

পাভেল ভয়ে ভুলেই গিয়েছিলো হাতে চা পড়েছে। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো লাল হয়ে আছে। সেদিকটা উপেক্ষা করে চেঁচিয়ে বললো,

– তুমি এসেছো না! বিপদ তো হবেই। আবার জিজ্ঞেস করছো জ্বলছে কিনা? অলরেডি সব ভস্ম বানানো পরিকল্পনা নিয়ে এসেছো। কেনো এসেছো?

– আমি বিপদ!!!

– অবশ্যই।

– একদিন এই বিপদকেই সংসারের সুখ মেনে সকাল বিকাল নমঃ নমঃ করবেন। হুহ।

বেণী নাচিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। বেসিন ট্যাপের নিচে হাত ধরলো পাভেল। বিড়বিড় করে বকেই যাচ্ছে। উঁকি দিয়ে দেখলো শিফা। দরজা ফাঁকে পুনরায় মাথা ঢুকিয়ে বললো,

– মনে রাইখেন, বিপদ বলেছেন না নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবো।

– শিফা…..

দরজা থেকে সরে ভোঁ দৌড়। খিলখিল করে হাসতে হাসতেই সিড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে। তৎক্ষনাৎ ধাক্কা খেলো। ধাক্কা খেয়ে তাল সামলে বললো,

– উফ ব্যাথা পাই না…

সামনে বড় ভাইজানকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। ভীতিসঞ্চার হলো মনে, ভাইজান কি দেখে ফেলেছে?

শাহাদের গলার স্বর গাঢ়,

– কি হলো এভাবে ছুটছো কেনো?

– না মানে..

– ছাদে কি এই ভর সন্ধ্যায় !

– গা গাছে। মানে গা গাছে পা নি দিতে এসেছি।

– খালি হাতে?

– ভাইজান পাভেল ভাইয়া থেকে বালতি নিয়ে পানি দিয়েছি।

শাহাদের চক্ষু স্থির শিফাতে। মুখাবয়ব স্বাভাবিক করে বললো,

– এভাবে ছুটবেনা, নিচে যাও। আম্মু ডাকছে নাস্তা করতে।

– জ্বি ভাইজান।

..

এক হাতে বার্নল ক্রিম অন্যদিকে কাঁধে তোয়ালে ঝুলিয়ে লাগানোর চেষ্টা করছে। ফুটন্ত চা পড়া চাট্টিখানি কথা নয়। জ্বলছে।

– হাতে কি হয়েছে?

গমগমে আওয়াজে চমকে উঠলো পাভেল। দরজায় শাহাদকে দেখে হৃদ কম্পন বেড়ে গিয়েছে। শাহাদ এগিয়ে এসে ক্রিমটা হাতে নিয়ে পাভেলের হাতে লাগিয়ে দিলো। শাহাদের হাতের মুঠোতে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আড়চোখে পাভেলের দিকে তাকিয়ে বললো,

– বাঙালির চিরচেনা সত্য সম্পর্কে জানো না নাকি! পুরুষ মানুষ কাঁদতে নেই।

ডান হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুছে পাভেল বলে উঠলো,

– সবার সামনে কাঁদতে নেই, তবে ভাইজানের সামনে কাঁদা যায়।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাহাদ বললো,

– উঠার সময় দেখলাম ছাদের গাছগুলো শুকিয়ে গিয়েছে, কেউ কি পানি দেয় না?

পাভেল চেয়ার টেনে বসে বললো,

– আফিয়া খালা দেয়, আমি দিয়েছিলাম রিসোর্টে যাওয়ার আগে। এরপর আর কেউ দেয়নি মনে হয়।

শাহাদের ঠোঁটের কোণে ক্রদ্ধ হাসি। মনে হলো যেনো সমাধান পেয়ে গিয়েছে। পাভেলের দিকে না তাকিয়ে জানালায় চোখ রেখে বললো,

– পাভেল জানো তো ছোট গাছের যত্ন বেশি করতে হয়! অতিবৃষ্টি, মাটির অযত্ন এসবে গাছ মরে যায়। এরচেয়ে বড় কথা মালী যদি গাছের যত্নের ব্যাপারে উদাসীন হয় এতেও কিন্তু গাছ বিনষ্ট হয়। গাছ পরিচর্যায় সঠিক মালীর প্রয়োজন। যোগ্যতার ভিত্তিতে মালী অনেক ধরনের হয়। তবে অবশ্যই বাগানের মালিকই নির্ধারন করবে কাকে মালী হিসেবে রাখবে তাই নয় কি?

পাভেলের মাথার উপর দিয়ে গেলো প্রতিটি কথা। বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে শাহাদ পুনরায় বললো,

– আমি না আসা অবধি বাড়ির খেয়াল রাখবে। শিফাকে দেখে রাখবে। ছোট মানুষ, আবেগী। এই বয়সে অনেক ভুল করবে। শাহীনের দায়িত্ব অনেক।হয়তো এত দিকে খেয়াল রাখার সময় পাবেনা। শিফাকে নিজের বোনের মত টেক কেয়ার করবে।

কিছুটা থেমে বললো,

– রেডি হয়ে নিচে আসো। ডিনার করে বেরিয়ে পড়বো।

– জ্বি বস।

শাহাদ বেরিয়ে যেতেই পাভেলের মাথায় হাত। এ যেন নিরব হুমকি। তবে কি শিফাকে দেখেছে পাভেলের রুম থেকে বের হতে!

___

ঘড়িতে ঠিক ঠিক আটটা। ষাট মিনিটের মধ্যে বের হতে হবে। মেয়েকে কোলে নিয়ে হাঁটছে। কাঁধেই মেয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে। দিয়া ফ্রেশরুমে। শাহাদ মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ট্রলিতে সব কাপড় গুলো তুলে নিলো। রুম থেকে বের হয়ে শাহীনের রুমের দিকে গেলো। ভাইকে দেখে বেরিয়ে এলো। থমথমে মুখ। শাহাদ মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

– অনেক বড় দায়িত্ব চাপিয়ে যাচ্ছি তোমার কাঁধে। সব সামলে নিও।

বিষন্ন মনে মাথা ঝাকালো শাহীন। শাহাদ পুনরায় নিজের কামরায় ঢুকে মিষ্টি হাসি দিলো সহধর্মিণীর দিকে তাকিয়ে। দিয়া কাছে এসে বললো,

– আপনি একটু রেস্ট নিন। দুদিন ধরে তো বেশ ধকল গেলো।

শাহাদ খানিকটা হেসে বললো,

– নিব, আসো তুমিও নিবে।

রুমের বাতি নিবিয়ে দিয়াকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো। নিরব আদেশ,

– ঘুমাও চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি।

দিয়া প্রকৃতপক্ষে আজ ভীষণ ক্লান্ত। মাইগ্রেনের মেডিসিন নিয়েছে। নিজেকে শাহাদের বুকে পেয়ে আজ ভীষণ খুশি। ঝগড়া করতে ইচ্ছে হলোনা আজ। দিয়ার কোমড় আকড়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো শাহাদ। বুকে চেপে ধরে আলতো হাতে চুলে বিলি কেটে দিতে থাকলো। মিনিট বিশেকের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লো দিয়া।কপালে আদুরে পরশ দিয়ে উঠে বসলো। নিজেকে তৈরি করে ঘুমের মধ্যে মেয়েকে কোলে তুলে নিলো। নিরবে বুকে চেপে ধরলো মেয়ে এবং মা দুজনকে। বিড়বিড় করে বললো,

– আমার সম্পদদের তোমার আমানতে রেখে যাচ্ছি আল্লাহ। দেখে রেখো। সুস্থভাবে ওদের কাছে আমাকে পুনরায় ফিরিয়ে দিও।

ঘুমন্ত স্ত্রী কন্যাকে রেখে দরজার খুলে বেরিয়ে গেলো। ডাইনিং এ দাঁড়িয়ে আছে সুলতানা কবির, রায়হান সাহেব, শাহীন,লিমন,তাহি,শিফা এবং পাভেল। মাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

– আম্মু মাত্র তো কটা দিন। এভাবে ভেঙে পড়ছেন কেনো? আমি কি এর আগে ঢাকার বাইরে যাইনি?

থমথমে মুখে সুলতানা কবির বললো,

– বাবু আমার আগে কখনো এত দুশ্চিন্তা হয়নি তবে আজ কেনো হচ্ছে?

– শুধু শুধু করছেন। রেস্ট নিন। কাজটা সেরে আবার ফিরে আসবো।

সকলের থেকে বিদায় নিয়ে গেটের কাছে আসলো। হামজা গাড়িতে। হামজা যাবে সিঙ্গাপুর শাহাদের সাথে। পাভেল ড্রাইভিং সিটে। শাহীন ভাইজানকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।

– স্যার, আই উইল বি ওয়েটিং।

ইষৎ হাসলো শাহাদ। ভাইয়ের কাঁধ চেপে বললো,

– ইনশাআল্লাহ। সব ইনফো সেন্ড করেছি মেইল এ। হাম্মাদকে রিসিভ করে নিও। কোনো সমস্যা হলে হাম্মাদকে ইনফর্ম করবে। শেহজা- দিয়াকে ও নিয়ে যাবে।

– আই আই স্যার।

– ভালো থেকো। আব্বু- আম্মুকে দেখে রেখো।

ছুটে চলেছে গাড়ি ঢাকার রাস্তায়। গন্তব্য এয়ারপোর্ট। দিয়ার ভিসা হয়নি। হঠাৎ মনে হলো অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। সিঙ্গাপুর রিপোর্ট পাঠানোর পর ডাক্তার বলেছে এমার্জেন্সী অপারেশন করতে হবে। তাই সব ফেলে ছুটে যাওয়া। মনি জেগে উঠার আগেই শেষ করতে হবে সব। দিয়ার সিকিউরিটি ব্যবস্থা করে এসেছে। হাম্মাদ বিন ফারহাদ, দিয়ার ছোট মামা। আজই ইরান থেকে ল্যান্ড করেছে। শাহাদের এত দিনের অপেক্ষা ছিলো হাম্মাদের জন্য।

___

পিট পিট চোখ মেলে দেখে রুম অন্ধকার। শেহজা কাঁদছে। মেয়েকে খাইয়ে আবার ঘুম পাড়িয়ে উঠে বসলো। এমপি সাহেব কোথায়! এখানেই তো ছিলেন। রুমের বাতি জ্বালিয়ে ফোনের দিকে তাকালো। এমপি সাহেবের মেসেজ ভেসে উঠেছে। ভ্রু কুচকে মেসেঞ্জার ওপেন করতেই দেখতে পেলো,

– Valo thakben MP bodhu. Apni jokhn jege uthben apnar MP shaheb tokhn akashe. Doa korben jeno sustho vabe apnar jnno fire aste pare.

~ Shahad Imroz.

বুকটা ধক করে উঠলো। ঘড়িতে সাড়ে এগারোটা। অগোছালো শাড়ি কোনো রকম ঠিক করে উঠে দাঁড়ায়, চুল খোলা দেখে মনে হচ্ছে কোনো গল্পের বিরহীনি চরিত্র। সেন্টার টেবিলের চিরকুটটা খুললো। পড়ে চোখ বড় বড় করে ছুটে চললো দরজার দিকে। দরজা খুলে ডাইনিং এ এসে চিৎকার দিয়ে বললো,

– আম্মু…

সুলতানা কবির সাথে বাকিরা বেরিয়ে এলো। ছেলের বউকে কাছে এসে আগলে ধরলো। মেয়েটাকে কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে।

– কি হয়েছে বৌমা?

– আম্মু আমার শাহাদ…

– বাবু তো কাজে ঢাকার বাইরে গিয়েছে?

– নাহ সিঙ্গাপুর।

– কে বলেছে তোমাকে?

শাহীনের দিকে তাকিয়ে বললো,

– ভাইয়া আপনার ভাইজান কোথায়?

শাহীনের মাথা নত। রায়হান সাহেব শাহীনের কাছে এসে প্রশ্ন করলো,

– শাহীন শাহাদ কোথায়?

বাবার দিকে তাকিয়ে মনে হলো আর মিথ্যা বলা ঠিক হবেনা। বলেই ফেললো সত্যি টা,

– আব্বু, ভাইজান ট্রিটমেন্টের জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছে। আজ কয়েকদিন আগে রিপোর্ট এসেছে হাতে। সিচুয়েশন খারাপের দিকে। সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছিলো রিপোর্ট ।ওখানকার ডাক্তাররা সাজেস্ট করেছে চলে যেতে। ভাবীর ভিসা হয়নি। তাই জোর করে আমি আর তাহি টিকিট কেটে দিয়েছি। আজ দুপুরেও সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো। এরপরো যথেষ্ট চেষ্টা করেছে নিজেকে সুস্থ রাখার।

তাহির মাথা নত। নওরীন শাহীনের হাত চেপে ধরেছে। দিয়া কেমন যেন অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। সুলতানা কবির আঁচলে মুখ ঢেকে কেঁদে দিলো। রায়হান সাহেব কম্পিত গলায় বললো,

– শেষ দেখা ছিলো আমাদের সাথে?

দিকবিদিকশুন্য হয়ে ডাইনিং পেরিয়ে ছুটলো দিয়া। শাড়ির বড় আঁচল মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ছুটে চলছে পাগলের মত। ওর পেছন পেছন ছুটছে বাড়ির মেয়েরা শিফা,তাহি, নওরীন। লিমন – শাহীন ঢোক গিলে ছুটলো। গেটের কাছে এসে পাগলামি শুরু করে দিয়েছে।

– গেট খোলো, আমার এমপি সাহেব চলে গিয়েছে আমাকে ছেড়ে। যেতে দাও আমাকে।

বুকে জড়িয়ে নিলো তাহি,নওরীন। তাহি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নিজেই কেঁদে কেঁদে বলছে,

– ও ভাবীজান পাগলামি করছো কেনো? ভাইজান আসবে তো…

– ও তাহি আপা, তুমি কেনো মিথ্যা শান্তনা দিচ্ছো। রাশেদ ভাইয়ের যন্ত্রনা তো বুঝো তুমি, আমি তো তোমার মত নিজেকে সামলাতে পারবোনা। আমাকে উনার কাছে নিয়ে চলো। কেনো রেখে গেলো… আমার তো কেউ রইলো না! আমার মেয়েটার কি হবে! আমি কার কাছে যাব! একটু ও বুঝতে দিলোনা আমাকে নিজের পরিস্থিতি। আমার বাবাজান,আম্মিজান ও তো এভাবে বলেছিলো ফিরে আসবে। কই আর তো এলোনা। সবাই কেনো একা ফেলে যায় আমাকে!

জানালা দিয়ে এই চিত্র দেখছে বন্দিনী। বুঝতে পারছেনা বাসার চিত্র। আবিরকে আজ মায়ের কাছে আসতে দিয়েছে শাহীন। এই কয়েকদিনে বাকি সব বই পড়ে নিয়েছে। একা বসে থাকতে থাকতে মনে জং ধরেছে। আবির ও মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

– মাম্মা জানো, আজ বড় মামা বিদেশ চলে গিয়েছে?

শেফালী অবাক হয়েছে ছেলের দিকে তাকালো। প্রশ্ন করলো,

– কেনো বাবা? মামা কেনো গেলো?

– আমি শুনেছি ছোট মামা লিমু মামাকে বলতে, বড় মামা বেশিদিন বাঁচবে না। হয়তো বিদেশে ম*রে যাবে।

ছেলের মুখে এমন কথা শুনে হঠাৎ করে বুকটা কেমন করে উঠলো। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেলো। মানস পটে ভেসে উঠলো ভাইজানের সাথে কাটানো ছোটবেলা। কি বললো ছেলে! ভাইজান ম*রে যাবে! অথচ কেউ একবার আমাকে জানালো না! ছেলের হাত ধরে গুটি পায়ে দরজা খুলে বের হয়ে এক পাশে দাঁড়ালো। দিয়াকে সবাই ড্রইং রুমে এনে বসিয়েছে। বাড়ির পরিবেশ ঠিক কতটা অস্বাভাবিক কখনো টের পায়নি শেফালী। শিফা আচমকা শেফালীকে দেখে চেঁচিয়ে উঠলো,

– এবার খুশি হয়েছো তুমি! আমার বড় ভাইজান চলে গেছে আমাদের ছেড়ে। যত খুশি বদদোয়া দাও। আব্বুর পর আমাদের ছাদ, আমাদের বড় ভাইজান। তোমার জন্য আফসোস আপা। ভাইজান দেখা করে গেলো না তোমার সাথে। আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছে, আমার ছোট্ট ফুলটা ভালো থাকিস। আমার দোয়া তোর জন্য। কিন্তু তুমি কিচ্ছু পাও নি। মায়া হচ্ছে তোমার জন্য।

দেয়াল ধরে বসে পড়লো শেফালী।শরীরে মা*রের দাগ এখনো শুকায় নি। অথচ ভাইজান না বলে চলে গেলো। আজ কেনো যেন প্রতিটি মা*রের দাগ ভাইজানের আশীর্বাদ মনে হচ্ছে। মানুষটা বদলে দিয়ে গেলো উগ্র শেফালীকে। এই কয়েকটা দিন নামায, বই আর নিজের করা ভুল গুলো নিয়ে পড়েছিলো। ভেবেছিলো মাফ চেয়ে নিবে ভাইজানের কাছে। মানুষটা সেই সুযোগটাও দিলোনা। শিফার দিকে রক্ত চক্ষু নিয়ে বললো,

– দেখিস তুই আমার ভাইজান ফিরে আসবে। তখন আমিও তোকে বলবো, আমার ভাইজান আমার জন্য ফিরে এসেছে।

চলবে…