#সায়রে_গর্জন
#নীতি_জাহিদ
৪১.
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)
ক্লান্তি নিয়েই ঘুমাতে আসে দিয়া। ছোট্ট শেহজা বাবাকে ডাকতে ডাকতেই ভুলে যায় বাবা ডাক। তমার কোলে,কল্পনার কোলেই ঘুমিয়ে পড়ে। মাথা ব্যাথায় অস্থির হয়ে পড়ে দিয়া। অতিচিন্তাই একমাত্র কারণ এই ব্যাথার।
ঘুমানোকে আপাতত একমাত্র সমাধান মনে করছে। সব ভুলে থাকতে চায় আপাতত। মজুমদার বাড়ি যেন প্রাণ ফিরে পেলো দিয়ার আগমনে। মঈন লাগিয়ে দিয়েছে হুলস্থুল কারবার। সেই সাথে তমা রান্নার এলাহি আয়োজন। মজুমদার বাড়ির রানীর পদধূলিতে মুখরিত আজ মহল।
___
গুটগুটে অন্ধকার কামরায় নিজেকে পেয়ে ছটফট করছে মোহনা। গোঙ্গানোর আওয়াজ। তখনি দরজা খুলে রুমে ঢুকলো ‘সিক্স স্পাইডার’ এর তিন সদস্য এবং সাথে একজন নারী সদস্য। এদের হাঁটার গতি দেখলেই বুঝা যায় বাতাসের সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা। মোহনা এদের চেনে না। নারী সদস্য পাভেলের নির্দেশে মুখ খুলে দিলো। তানভীর প্রশ্ন করলো,
– লিমনকে মা*রতে চেয়েছিলেন কেনো?
মোহনা হেসে বললো,
– বলবো না।
ইয়াজ প্রশ্ন করলো,
– লিমনকে মা*রতে চাওয়ার কারণ কি?
এবারো মোহনা বিচ্ছিরি হাসি দিয়ে বললো,
– বলবো না বলবোনা।
মোহনার সামনে বরাবর একটা চেয়ার এনে দিলো তানভীর, পাভেল আয়েশী ভঙ্গিতে বসে বললো,
– মিসেস মোহনা, ইউ আর ঠু স্মার্ট উই নো। প্লিজ কো-অপারেট। লিমনকে কেন মা*রতে চেয়েছেন? এতে আপনারই ভালো।
গত দুবারের চেয়ে উঁচু আওয়াজে চেঁচিয়ে বললো,
– বলবোনা শা*লা কি করবি? বা** ও ছিড়তে পারবি না। উলটা নিজের কথা ভাব। তোর শিফা পাখি…
পাভেল এক লা*থিতে চেয়ার ফেলে দিয়ে মোহনার চুলের মুঠি ধরে কষে এক থাপ্পড় দিয়ে বলে,
– হা*রা***জা/দী তোকে আমি এখানেই গেঁড়ে ফেলে। তোর বা*ল তোর হাতে ছি*ড়াবো। ব**মা*শ। শান্ত ছিলাম ভদ্র ছিলাম ভালো লাগেনি। তোর মতো বে*** র বাঁচারই অধিকার নেই।
তানভীর, ইয়াজ ভয় পেয়ে গিয়েছে পাভেলের রূপ দেখে। জোর করে পাভেলকে টেনে নিয়ে আসলো। পাভেল নিজেকে শান্ত করার চেষ্টায় আছে। তখনই ইয়াজের ফোন বেজে উঠলো, ফোনের নির্দেশনা পেয়ে পুনরায় বেঁধে বের হয়ে গেলো।
___
লিমনের বুকের কাছটায় সেলাই বেশি পড়েছে। এক মুহুর্তের জন্য ছেড়ে যায় নি। জানানো হয়নি লিমনের মাকে। এখন অবধি জ্ঞান ফিরেনি এই ছেলের। দুই দুইটা রাত কেটে গেলো। এই লিমনকে তো চায় নি। দুষ্টু লিমনকে চোখে চোখে রাখতো। কখন আবার ভুল করে ফেলে। এত বড় যৌথ পরিবার খুব কম মানুষ ই মেইনটেইন করে। অথচ দাদাজান সব গুছিয়ে রেখেছিলেন। অবাধ্য চাচা রেদোয়ানকে গুছিয়ে রেখেছিলেন যতদিন জীবিত ছিলেন। দুটো সকাল, বিকেল, দুপুর গড়িয়ে রাত। বাসায় জানিয়েছে কাজে ব্যস্ত। লিমনের বাসায় জানে শাহাদের কাজে ঢাকার বাইরে আছে লিমন। এত বড় ঘটনা লুকানো চাট্টিখানি কথা নয়। রত্নাকে শাহাদ সুলতানা মঞ্জিলে এনে রেখেছে। শেফালী,শিফা চাচীকে ব্যস্ত রাখে শাহাদের কথায়। ওরাও জানেনা প্রকৃত কারণ।
দুদিন থেকেই খোঁজ নেয়া সম্ভব হয়নি এমপি পত্নী ও কন্যার। ফোন বের করে কল দিবে ঠিক তখনই দেখলো লিমন নড়ে উঠেছে। ফোনটা পুনরায় পকেটে রেখে লিমনের পাশে এসে বসলো। হাত বাড়িয়ে ধরলো লিমনের একটা হাত। রক্তাক্ত কা*টা ঠোঁট দুটোতে একটাই শব্দ উচ্চারণ করলো,
– ভা ই জা ন।
এত শব্দ থাকতে কেনোই বা এই ছেলে ভাইজান উচ্চারণ করলো। মনে এত প্রবল বিশ্বাস পেলো কি করে! চোখ খুলে নি অথচ বিশ্বাসের জোরে তাকেই ডাকলো। লিমনের সুস্থ হাতটা আলতো করে ধরলো। লিমন হাতে কারো ছোঁয়া পেয়ে চোখ খোলার চেষ্টা করলো। খুলতেই দেখলো যা চেয়েছিলো তাই। হালকা হাসলো। পুনরায় ধীরে বলার চেষ্টা করলো,
– ভা ই জা ন, ওরা একা না জেঠু ম নি…
শাহাদ থামিয়ে দিয়ে বললো,
– আমি সব জানি। আর বলতে হবে না। তুই সুস্থ হয়ে যা। এরপর দুজন মিলে ওদের শাস্তি দিব কেমন। ঘুমা এখন।
লিমনের চোখে ভয় দেখলো শাহাদ। লিমন আবার বললো,
– ভা ই জা ন, ওরা ভাবী মা কে
থামলো লিমন। শাহাদের চোখে বিস্ময়। দিয়ার কথা আসলো কেনো? শাহাদ লিমনের দিকে তাকিয়ে বললো,
– আস্তে বল। ভাবীমা কে কী?
– খুঁজছে।
– কেনো?
– প্রতিশোধ আপ না র উপর। মনি আপাকে কে বি য়ে…
শাহাদ মুচকি হাসলো। আর কত! নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছে। সামান্য হেসে বললো,
– আল্লাহ ভরসা। তুই সুস্থ হ। আমি দেখছি।
তাহি রুমে ঢুকতেই দুজন চুপ। আরেকজন নার্স এসেছে। লিমনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কেমন আছো?
লিমন ইচ্ছে করেই চোখ বন্ধ করলো। তাহি স্পষ্ট বুঝলো তাহিকে উপেক্ষা করছে এই ছেলে। লিমনের শারীরিক অবস্থা দেখে যে কারো মনে মায়া জাগবে। ভাইজানের সামনে বেশি কিছু আর জিজ্ঞেস করেনি। এর মাঝে লিমনের ডাক্তার চলে এসেছেন। শাহাদের সাথে করমর্দন করে লিমনকে দেখে চলে গেলেন। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করা হলো হাসপাতালে। তবে সকলের অগোচরে। শাহাদের খুব চিন্তা হয়, কয়টা অন্যায় এভাবে দমন করা যাবে? এই জীবনটাই অসহ্য কর। রাশেদের অমীমাংসিত কেইস থেকে যে অন্যায় শুরু হয়েছে তার কোনো ইতি ঘটছেনা। একদিকে লিমন অন্য দিকে স্ত্রী-সন্তান। হামজা, তুহিনকে ফোন দিয়ে হাসপাতালে থাকতে বললো। নিরাপত্তার জন্য ছদ্মবেশে লোকজন তো আছেই। বেরিয়ে এলো হাসপাতাল থেকে। উদ্দেশ্য এখন নতুন চাচী। তার গজানো পাখনা যে কর্তন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
___
দুদিন হলো কোনো খোঁজ নেই। ফোন দিতেও কার্পন্য। খুব তো বড় বড় কথা বলেছিলো। মেয়ের খবর ও একবার নিলো না। দিয়া সারা ঘর মেয়েকে কোলে নিয়ে হাঁটছে। মেয়ে এই বাড়ি আসার পর থেকে কাঁদছে কম। যখনই কাঁদে চাচাজান বাইরে থেকে ঘুরিয়ে আনে। এখানে চাচাজান আছেন বলেই মনে সাহস আছে। কল্পনা এসে যোগ দিলো তাদের মাঝে। অনেক বছর পর নাচের ঘর খুললো দিয়া। কাজের লোকদের দিয়ে ঝাড় দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে নিলো। এই ঘরেই পড়ে আছে সেই দিয়া, যার মনে ছিলো অদম্য সাহস, নিজেকে ভালো রাখার, আনন্দে রাখার দক্ষতা। অথচ সময় মানুষ ঝিমিয়ে দেয়। দিয়ার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। আজ স্বামী সন্তান সব নিয়ে থাকলে ও ভেতরের দিয়া ঘুমন্ত।
এ বাড়ির দেখাশোনা করে রাখি। মেয়েটা খুব চটপটে। ছুটে এলো দিয়া আপার ফোন নিয়ে। দিয়া ফোন রিসিভ করলো। সালাম দিয়ে চুপ করে আছে। গম্ভীর স্বরটা ভেসে এলো,
– শেহজা কেমন আছে?
– আলহামদুলিল্লাহ।
– কি করছে?
– আছে কোলে। ঘুমিয়ে গিয়েছে।
– খেয়েছে?
– জ্বি।
দু পাশ শান্ত। দিয়া শেহজাকে কোলে নিয়ে স্ব কামরার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শাহাদ প্রশ্ন খুঁজতে ব্যস্ত। নিরাশ হয়ে শুধালো,
– পড়াশোনা কেমন যাচ্ছে?
– চেষ্টা করছি।
– খেয়েছো?
– জ্বি।
– ওকে ঘুমিয়ে পড়ো।
– ঠিক আছে।
– আল্লাহ হাফেজ
– জ্বি আল্লাহ হাফেজ।
ফোন কে*টে যাওয়ার পর ফোনটা বুকে চেপে ধরলো। প্রয়োজন ও বলা চলেনা এই কথোপকথনকে। কথা বাড়াতে ইচ্ছে করেনি দিয়ার। দুদিন পর এসেছে খবর নিতে! কোথায় ছিলো দুদিন? ভাবতেই পুনরায় ফোন বেজে উঠলো। দিয়া যেন এই কলের আশায় ছিলো। রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে ভেসে এলো স্বর,
– ফারাহ্
– জ্বি।
– একবার কেমন আছি জিজ্ঞেস করলে না? খেলাম কিনা তাও জিজ্ঞেস করলে না? কিভাবে আছি জানতে চাইলে না? এতটা নিষ্ঠুরতম আচরণ কি উচিত?
দিয়া নিশ্চুপ। দীর্ঘশ্বাস ও পাশ থেকে। নিজ থেকেই বললো,
– তুমি জানতে না চাইলেও বলছি শুনো। গত দুদিন আমি এক ফোঁটা ঘুমাই নি। হাসপাতাল আর অফিস। আজ বাসায় এলাম কিছুক্ষণ আগে। লিমনের এক্সিডেন্ট হয়েছে। বাসায় কেউ জানেনা। চাচী আম্মুকে বাসায় এনে রেখেছি। সারাদিন ভালোই ছিলাম ব্যস্ততায়। রুমে ঢোকার পর আমার সব অন্ধকার লাগছে।
লিমনের এক্সিডেন্ট হয়েছে শুনেই মাথা এলোমেলো লাগছে। দিয়া নিজেকে সামলে বললো,
– লিমন ভাইয়া কেমন আছে?
– ট্রিটমেন্ট চলছে।
– ফারাহ্
– জ্বি
– ভিডিও কল দিই?
নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে দু বাড়ির দুই কামরায়। একজন সম্মতি দেয়ার, অন্যজন পাওয়ার অপেক্ষায়। দিয়া স্পষ্ট বুঝতে পারছে শাহাদের চিন্তার পরিধি। কিছুক্ষন অপেক্ষা করে শাহাদ নিজ থেকেই বললো,
– ঘুমিয়ে পড়ো। অনেক রাত হয়েছে। রাখছি।
নিজ থেকে লাইন বিচ্ছিন্ন করে ভিডিও কল করলো দিয়া। সাথে সাথে রিসিভ হয়ে গেলো। বিধ্বস্ত শাহাদকে দেখে ভেতরটা আঁৎকে উঠলো। মুখের ভাবটা স্বাভাবিক রেখে বললো,
– এভাবে শুয়ে পড়েছেন কেনো বাইরের পোশাক না পালটে?
– শক্তি নেই।
– মেয়েটাকে একবার দেখাও।
– ঘুমাচ্ছে।
– মেয়ের মুখের কাছে ফোনটা নাও। আমি দেখি।
দিয়া মেয়ের মুখের সামনে ফোন নিতেই শাহাদ ফোনে আলতো চুমু খেলো। দিয়াকে বললো,
– ঠিক আছে ঘুমিয়ে পড়ো। সুস্থ থেকো।
– খাবেন না?
কপালের কাছে হাত দিয়ে চোখ ঢেকে কথা বলছে। এত স্ট্রেস নেয়াতো ঠিক নয়। হাত না সরিয়ে উত্তর দিলো,
– এনার্জি নেই। রাখছি।
টুট টুট করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। না খেয়েই ঘুমিয়ে যাবে। এত আশা করে কেনো লোকটা? দিয়ার মাঝে মাঝে মনে হয় বুকের উপর মস্ত বড় পাহাড়। সবাই বলে মানুষটা ভুলে ভরা। সে তো জানে, মানুষটা মানুষই বটে, কোনো সুপার ন্যাচরাল বিং নয়। অবান্তর চাওয়া পাওয়া নেই তার। দিয়াও ঘাটাবেনা এসব। পরীক্ষা দেয়া জরুরি।
___
চট করে শোয়া থেকে উঠে আলমারির চতুর্থ তাকে হাত দিয়ে সব ধরনের ফাইল নামিয়ে নেয়। ঘাটাঘাটির এক পর্যায়ে কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়ে মন কিছুটা ভালো হয়ে গেলো। এইতো রেদোয়ানের দ্বিতীয় বিয়ের কাগজপত্রের কপি। সাথে সব ইনফরমেশন। ঘুমানো তো এখন হারাম হয়ে গিয়েছে। গায়ে টি-শার্ট চাপিয়ে মাথায় ক্যাপ পরে ঠোঁটের কোনায় কুটিল হাসি দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
পড়ার টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়ে দিয়া। রুমে বাতি জ্বলছে। হঠাৎ বাইরে ধুপ করে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ পেলো। কান সজাগ উঠে পড়লো। জানালা খুলে আশপাশ টা দেখলো কিছু দেখা যায় কিনা। দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ পেয়ে সাবধানে খুলেই দেখে চাচা।
– চাচা জান, ঘুমান নি?
– না মা, আপনি আর আমার নাতনী ঠিক আছেন?
– হ্যাঁ কেনো?
– একটা ছিঁচকে চোর এসেছিলো। তাড়িয়েছে জমির আর কাদের মিলে। রুমে ঢুকেছিলো?
– না না। কিছু একটা ধুপ করে পড়ার শব্দ কানে বাজলো।
– আচ্ছা ঘুমান, চোর নেই। কোনো সমস্যা হলে ফোন দিয়ে জানাবেন।
বেরিয়ে গেলো মঈন৷ দিয়া দরজা আটকে দিলো। পকেট থেকে ফোন বের করে কানে দিলো মঈন।
– হ্যালো জামাই।
– জ্বি চাচাজান, ঠিক আছে ওরা?
– হ্যাঁ ঠিক আছে। রুম পর্যন্ত যেতে পারেনি।
– ঠিক আছে, আপনার ভরসায় ওদের পাঠিয়েছি চাচাজান।
– ফি আমানিল্লাহ। চিন্তা করবেন না জামাই। আমি যতক্ষন আছি আমার মেয়ে নাতনীর কিছু হতে দিবোনা।
কথা বলতে বলতে নিচে গেটের সামনে এসে দাঁড়ায় মঈন। ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে গাট্টাগোট্টা লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে জানান দে যেন আর দ্বিতীয় ভুল না হয়। ছদ্মবেশে কেউ যেনো বাড়িতে প্রবেশ না করে। কল্পনা বেরিয়ে এলো বাবাকে দেখে। বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
– বাবা নিরাপত্তা জোরদার করুন। দিয়ার যেন কোনো অসুবিধা না হয়। কিছু হলে দুলাভাইকে মুখ দেখাতে পারবেন না।
– ভেতরটা আপনি দেখেন আম্মা। আপনার আম্মাজান যেনো বুঝতে না পারে। এমনিতে বুকে সমস্যা টা বেড়েছে। দূর্বল হয়ে পড়বে।
– চিন্তা করবেন না আব্বা। ভেতরে আমি এবং রাখি আছি।
মঈন হাসি দিলো মেয়ের সাহস দেখে। এই বাড়ির মেয়ে গুলো সব কিছুতেই পারদর্শী। দেখলে মনে হয় কিছুই জানেনা। আত্মসম্মান এবং পরিবার রক্ষার্থে সব সময় প্রস্তুত। কল্পনা অন্দরে ঢুকে দেখলো রাখি নিচে বসে কি বানাচ্ছে। এগিয়ে এসে প্রশ্ন শুধালো,
– কি করছিস?
রাখি মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
– আপু এই তিনটা দা* ধার দিলাম। আসলেই কোপ। আর এখানে ব্লেড, অজ্ঞান করার ওষুধ।
– কে দিলো এসব তোকে? দুলাভাই ?
রাখি হাসে। আজকে অনেক বছর এই বাড়িতে কাজ করছে। শাহাদের আদেশেই এই বাড়িতে কাজ শুরু করেছিলো। এরপর মা মা*রা যাওয়ায় আর বাড়ির মায়া ছাড়িনি তাই যায় ও নি। কল্পনার কথা শুনে হেসে বললো,
– স্যার আমাকে সব শিখিয়ে দিয়েছে আপু। প্রথমে বুঝিনাই অফিসের সামান্য বুয়ার মেয়েকে কেনো এত ট্রেইনিং দিয়ে মার* কাট* শেখাচ্ছে। আবার নিজ থেকে বেতন দিয়ে আমার পড়াশোনার দায়ভার নিলো। এখানে আসার পর দিয়া আপুকে দেখেই বুঝেছিলাম হীরা সামলানোর দায়িত্ব দিয়ে উনি আমার পড়ার দায়িত্ব, খাওয়ানোর দায়িত্ব নিলেন। আমি কি করে তার হীরার গায়ে আঁচড় লাগতে দিবো। আমাদের ভরসায় আবারো পাঠিয়েছে।
কল্পনা হাসে। রাখির মাথায় গাট্টা মে*রে বলে,
– দুলাভাই একেক টা যোদ্ধা বানিয়েছে সবাইকে। অথচ নিজে থেকেছে আড়ালে।
রাখি দাঁত দেখিয়ে খিলখিল করে হাসে। শাহাদ ইমরোজ সব জায়গায় সৈন্য নিয়োগ করে রেখেছে।
___
শাহীন ভিডিও কল দিয়েছে। ভাইজানের স্টাডিরুমে পাঠিয়েছে বোনকে। শিফা একা যেতে ভয় পায় দেখে শেফালীকে নিয়ে গেলো। এই রুমের একটা কর্ণার শাহীনকে দিয়েছে শাহাদ। শাহীনের নির্দেশ অনুযায়ী সেই ডাইরি খুঁজে বের করে একটা কোড বললো। এর মাঝে শেফালী বললো,
– ভাইয়া, বড় ভাইজানের এই রুমে কি আমি পড়ার মত বই পাবো?
শাহীন কিছুটা ভেবে বললো,
– পেতে পারিস কিন্তু ভাইজানকে না জানিয়ে ধরিস না। কোথায় কি আছে বলা যায়না। প্রয়োজনীয় কাগজ থাকতে পারে।
দুই ভাইবোন কথা বলছে। এর মাঝে শিফা রুমের কর্ণারে পর্দা সরিয়ে চকচক করা কাচের দরজা মত জিনিসটা দেখতে চাইলো। পর্দা সরাতেই একটা কাচের ডোর দেখলো। আগে তো কখনো ওভাবে খেয়াল করেনি। শেফালীকে ডাকলো,
– আপা দেখো?
ডাকতে ডাকতেই নব ঘুরালো ডোরের। আচমকা খুলে গেলো দরজা আর কর্ণারের প্রতিটি বাতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে উঠলো। শেফালী, শিফা আঁৎকে উঠলো। শিফা কাঁপতে কাঁপতে শেফালীকে আগলে ধরে বললো,
– আপা বাঁচাও। এগুলা কি?
শাহীন চেঁচাচ্ছে ও পাশ থেকে,
– কি ধরেছিস তোরা?
শেফালী ব্যাক ক্যামেরা ঘুরাতেই শাহীন হতচকিত হয়েও নিজেকে সামলে বললো,
– সর এখান থেকে,ভাইজান দেখলে তুলে আছাড় দিবে। এটা সমুদ্রের একটা প্রজেক্টের ব্যাকগ্রাউন্ড ছিলো। দেখিসনা পুরোনো হয়েছে।
শিফা জিজ্ঞেস করলো,
– এত ভয়ংকর! ভাইয়া আগে দেখিনি কেনো?
– স্টাডি রুমে ঢুকার পারমিশন আছে তোদের? আর এই ডোর লক থাকতো। আজ হয়তো ভাইজান কোনো কাজে খুলেছিলো। খবরদার বের হ। ভাইজান আমার উপর রাগ করবে। দরজা লাগিয়ে দেয় আগের মত।
শেফালী কম্পনরত গলায় বললো,
– ভাইয়া কেমন যেন ওয়ালের ব্যাকগ্রাউন্ডটা মনে হচ্ছে প্রতিটা অক্টোপাস জীবন্ত। চোখের মাঝে লাইট জ্বলছে ওদের। আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।
– ধুর পাগলী। বের হয়ে যা বোন। ভাইজান জানলে আমাকে শেষ করে দিবে।
ওরা দুজন বেরিয়ে যাওয়ার পরই কল কেটে শাহীন ভাইজানকে কল করার চেষ্টা করছে। এ যেন মারাত্মক অপরাধ। সব দেখবে ক্যামেরায়। দুই বলদকে পাঠানোই ভুল হয়েছে। দোয়া দরুদ পড়ছে। বোনদের সাবধান করেছে এই কথা যেন বাইরে না বলে। একবার কথা বের হলে তিল তাল হয়ে যাবে। শাহাদ কল রিসিভ করেনি। কিন্তু ফোনে মেসেজ এলো,
– শাহীন ব্যস্ত আছি। কাজটা ঠিক হয়নি।
ব্যস এটুকুই শেষ। হানিমুনে পাঠিয়েছিলো শাহীনকে এসব থেকে দূরে থাকতে ওখানে গিয়ে ও গোয়েন্দা গিরি বন্ধ না করার কি শাস্তি হবে ভেবেই শাহীনের ঘাম ছুটে গিয়েছে । রুলস ব্রেক করা শাহাদ পছন্দ করেনা আর আজ তাই হলো। শনি ঘুরছে মাথায়। এই বিপদ থেকে রক্ষার জন্য সেজদায় দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলো।
চলবে…
#সায়রে_গর্জন
#নীতি_জাহিদ
#সারপ্রাইজ ( ভালোবাসাময় পর্ব)
৪২.
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)
ভোরের আলো ফুটেছে। শেহজাকে খাইয়ে নামাজ পড়ে কিছুক্ষন ঘুমানোর জন্য খাটে গা এলিয়ে দিলো। সারা রাত চিন্তায় কে*টেছে। দরজা টা খোলা রেখেছে। কিছুটা আতঙ্ক মনের মাঝে বিরাজ করছে। পেটের উপর ভারী কিছুর উপস্থিতি বুঝে অতি সত্তর চোখ খুলে পেটের দিকে তাকায়। একটা বড় পুরুষালী হাত থেকে দেখে হতচকিত হয়ে চিৎকার দিতে ভুলে গিয়েছে। স্পন্দন এতটাই বেড়ে গিয়েছে মনে হচ্ছ এই বুঝি প্রাণভোমরা বেরিয়ে এলো। তোষকের নিচ থেকে ধা*রালো, সুক্ষ্ম ছাঁচ কা*টা ছু/রিটা বের করে ঘাড় ঘুরিয়ে উপস্থিত মানবের বুকে বসাতে যাবে এমন সময় ধপ করে চোখ খুলে ফেললো সামনের মানব। পুরোপুরি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললো মেয়েটা। ডান হাত চেপে ধরেছে মানুষটা। নিজেকে রক্ষা করলো উপস্থিত আক্রমণ থেকে এই মানব। থতমত খেয়ে মারাত্মক ভয় পেয়ে গেলো রমনী। সেই হ্যাজেল আই, অমসৃণ হাত। এক্ষুনি একটা অনর্থ হয়ে যেত। এই সুবিশাল দাদা সাহেবের গড়ে দেয়া খাটের একপাশে শেহজা ঘুমাচ্ছে অন্যপাশে ছোট্ট ছানার বাবা তার মাকে আগলে ধরে ঘুমুচ্ছিলো। অথচ মা বাবার উপর আক্রমণ করতে গিয়ে ধ*রা পড়ে যাবে এমন ঘটনা ভীষণ আশ্চর্যজনক । কি বি*ধ্বং*স অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে যেত! শাহাদ পত্নীর অশ্রু নিয়ন্ত্রণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা বিফলে গেলো। গড়িয়ে পড়া অশ্রু শাহাদের গালে পড়ছে টুপ টুপ করে। হেচকা টানে অর্ধাঙ্গীকে নিচে এনে উপরে উঠে গেলো শাহাদ ইমরোজ। ধীরে হাত থেকে ছু*রিটা সাবধানে সরিয়ে খাটের পাশের সাইড টেবিলে রেখে কপালে কপাল মিশিয়ে জোরে শ্বাস টানছে। রমনীর অক্ষিদ্বয় অস্তমিত। কি করতে যাচ্ছিলো!
– শান্ত হও শাহাদ বধূ।
স্বরটা কানে আসতেই ভেতর থেকে জোর বেগে কান্না পাচ্ছে। দমিয়ে রাখা কান্না চোখ বেয়ে পড়ছে বিগলিত অশ্রু সাজে। অন্যদিকে সর্দিতে নাক প্যাচ প্যাচ করছে। শাহাদ মুচকি হেসে খাটের বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে বউয়ের নাক চেপে ধরলো। শেহজার জন্য মাথার কাছে সবসময় টিস্যু রাখতে হয়৷ এভাবে নাক চেপে ধরাতে চোখ খুলে ললনা। বুঝতে চেষ্টা করে কি করছে লোকটা। আশ্চর্য! এমন অদ্ভুত কাজ কেউ করেছে কখনো? একটা টিস্যু ফেলে পুনরায় আরেকটা টিস্যু দিয়ে শাহাদ দিয়ার নাক মুছে বলে,
– যাচ্ছিলো তো প্রাণটা। সাদা থানে কেমন দেখাতো আমার হুরপরীকে?
আবার কেঁদে উঠলে শাহাদ বুকে চেপে ধরে। ধীরে বলে,
– আস্তে সোনা, মেয়ে উঠবে। ঠিক আছি তো আমি।
প্রায় মিনিট দশেক অতিক্রম হওয়ার পর বললো,
– বিশ্বাস করো তোমাদের ছাড়া ঘুমানো অসম্ভব। একটু তোমার বুকে ঘুমিয়ে চলে যাব। স্রেফ দুটো ঘন্টা। বড্ড প্রয়োজন ঘুমটা। এন্ড ইটস এনাফ ফর মি।
নিশ্চুপ দিয়া। শাহাদ বিনা বাক্য ব্যয়ে দিয়ার বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে। দিয়া এখনো আতঙ্ক কা*টাতে পারছেনা। নিজের হাতে কত বড় পাপ করতে যাচ্ছিলো! আচমকা নাকের গোড়ায় ব্যাথা অনুভব করে শাহাদের দিকে চাইলো। শাহাদ নাকের গোড়ায় চুমু দিয়ে বললো,
– স্যরি বউ, আস্তে কা*মড় দিয়েছি। অন্যমনস্ক ছিলে তাই। চুলে বিলি কে*টে দাও না। একটু ঘুমিয়ে চলে যাব। অনেক কাজ বাকি।
দিয়া চুলে বিলি কা*টতে কা*টতে ভাবে মানুষটার ভেতরটা এখনো বাচ্চাদের মতো। সবার যত্ন করতে করতে নিজের যত্ন করাই ভুলে বসেছে। অথচ কেমন বাচ্চামি করছে এখন একটু আদর পেতে। অল্পতেই ঘুমিয়ে পড়লো মানুষটা। এলো কখন? রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে দরজা বন্ধ। নিজেও নিশ্চিন্তে চোখ বুজলো।
__
ঘড়িতে সাড়ে দশটা। শাহাদের ঘুম এখনো ভাঙেনি। দু ঘন্টা বলে চারঘন্টা একই জায়গায়। দিয়ার শরীর অবশ প্রায়। এত বড় ষন্ডাগন্ডা একটা মানুষ এই পাখির মত দিয়ার বুকে শুয়ে শরীরে ভর দিয়ে আছে। আচমকা দিয়া শেহজার দিকে চোখ যেতেই দেখে মেয়েটা উঠে হামাগুড়ি দিয়ে বাবার কাছে এলো। পিঠে আলতো থাবা দিচ্ছে, আদো আদো বুলি,
– বা বা। বাবা।
মেয়ের ডাক কানে বাজতেই শাহাদ ইমরোজের ঘুম ছুটে গেলো। মিষ্টি হেসে মেয়েকে এক হাতে আগলে নিয়ে জড়িয়ে ধরল। দিয়ার জান যায় যায় অবস্থা। বাপ- মেয়ের সব ভর তার শরীরে। অনেক কষ্টে বললো,
– কষ্ট হচ্ছে আমার…
চোখ ছোট করে শাহাদ সেদিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে গড়িয়ে নেমে পড়লো বালিশে। শেহজাকে বুকের উপর বসিয়ে অভিযোগ করে বললো,
– দেখছো আম্মা,কিভাবে কথা বলে? এই টুকু তোমার মা।
আঙুলের একটু খানি মেয়েকে দেখিয়ে পুনরায় বলে,
– একদম এইটুকুন তোমার মা,আমাকে ধমক দেয় কিভাবে? যাবোনা আর তোমার ওই পঁচা মায়ের বুকে আমরা বাপ মেয়ে কেমন? চলো জঙ্গলে যেয়ে তুমি আমি বাস করবো। গাছের উপর একটা দোতলা বাড়ি বানাবো।
দিয়া ভেবে পায়না, কি সাংঘাতিক! জঙ্গলে যাবে মানে?
মাথা চুলকে এমপি আবার বলে,
– উঁহু… না না দোতলা বানানো কঠিন হবে জঙ্গলে। এক তলাই এনাফ। এক তলা বানিয়ে তুমি আমি থাকবো। মাঝে মাঝে জঙ্গলের নদী থেকে মাছ ধরবো, ফলমূল তুলব কেমন। চাইলে আমরা হরিণ ও খেতে পারবো। এরপর বাবা মেয়ের সুখের পরিবার। ঠিক আছে বাবা?
মেয়েটা কি বুঝলো আল্লাহ জানে, বাবার কথায় সায় দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলে,
– বাবা বাবা।
– এইতো সায় দিয়েছে আমার আদর,মিনি মিনি কুচি মুচি বারবি সিন্ড্রেলা জান বাচ্চা। উম্মাহ।
দিয়া চোখ বড় করে সব দেখে যাচ্ছে। মাথাটা মনে হয় গিয়েছে এই লোকের। কিসব আবোল তাবোল বকছে! উঠে গেলো শোয়া থেকে। প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে কি করে এলো? তবে এখন না পরে। পা বাড়ালো বাইরে যাবার উদ্দেশ্যে। চলে যাবে এমন সময় গান ধরলো শাহাদ,
– সুন্দরী চলেছে একা পথে,সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে।
ইয়া আল্লাহ! কি সব বখাটে গান। কে বলবে এই লোক এমপি শাহাদ ইমরোজ, এক্স কামান্ডার। এমন চরিত্র গত কয়েক বছর ও দেখেনি। কিছুটা রেগে বললো,
– বখাটেপনা করছেন কেনো?
শাহাদ অবাক হওয়ার ভাণ করে বলে,
– আমি তো বখাটেই।
– কিহ!
– নাহলে ভোরে এসে এক আবেদনময়ী ললনার ব্যক্তিগত কামরায় ঢুকে তার উষ্ণ, মোলায়েম, কামুকতা পূর্ণ উদরে হাত রেখে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর সাহস করতাম না।
– এমপি সাহেব?
– জ্বি ম্যাডাম
– কথার এমন ছি রি কেনো? আমি আপনার বিবাহিতা স্ত্রী। অপরিচিত নারী নই।
– এক্সেক্টলি বেগম শাহাদ। এটাই বুঝাতে চাইলাম। আপনি মানেন তা? যদি মানেন তবে এমন দুচ্ছাই ব্যবহার কেনো এই অবলার প্রতি। একটু খানি আদরই তো চেয়েছিলাম। চলেই তো যাবো এখন। যান নাস্তার ব্যবস্থা করুন। আমাদের বাবা মেয়েকে খাইয়ে দিন।
– আপনার মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
– আমারো তাই মনে হয়। তবে শান্তি পাই এই ভেবে যে সমস্যাটা আমার একান্ত নারীটার জন্যই। কথা বাড়াবেন না। গো ফাস্ট।
আবার মেয়েকে নিয়ে খেলা শুরু করে দিয়েছে। মেয়েকে কাতুকুতু দিয়ে হাসাচ্ছে। দিয়া স্তব্ধ হয়ে দেখছে এই কোন শাহাদ। মাঝে মাঝে ওর নিজেকে পাগল লাগে। অপরিচিত পুরুষ স্বামী হলো, ভালোবাসা দেয়া স্বামী টা ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিলো, অসুস্থতা কা*টিয়ে আসা মানুষটা ভালোবেসে বুকে আগলে নিলো, এখনের আচরণ সম্পূর্ণ নতুন। দুষ্টু বাচ্চামিতে মেতে উঠা প্রেমিক পুরুষ ।
মানুষটার আকস্মিক কথাগুলো দিয়ার ভাবনাচ্ছেদ ঘটায়,
– আমি খুব সুন্দর, জানি আমি; আমার হ্যাজেল আইয়ের প্রেমে অন্ধ নারী জাতি, শরীর থেকে মন মাতানো পারফিউমের ফ্র্যাগরেন্সে আমাকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে তাও বুঝি? হয়তো এলোমেলো চুমু খেতে ইচ্ছে করছে আপনার। থাক লজ্জ্বা পেতে হবেনা। দূর থেকে এভাবে না দেখে বললেই তো পারেন, শাহাদ আই নিড ইউ। ব্যস এতটুকুই এনাফ। বলতে দেরি শাহাদ ঝাঁপিয়ে পড়তে সেকেন্ড সময় নিবে না। আচ্ছা আচ্ছা বুঝতে পেরেছি- আকালমান্দ কি লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যেয়। নো প্রবলেম আসছি…
বলেই খাট থেকে নেমে যাবে এমন সময় দিয়া দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। পাগলটা আবার নতুন কি পাগলামী করবে আল্লাহই জানে। দরজা থেকে বের হয়েই দিয়া হাসির শব্দ শুনতে পেলো ভেতরে। নিশ্চিত ভেতরে মেয়ের সাথে তাকে নিয়ে তামাশা করছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো তার।
___
মঈনের সাথে কথা বলছে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে। শাহাদের এ স্বাভাবিকতা মঈনকে ভাবাচ্ছে। গত রাতে বাইক চালিয়ে উড়ে এসেছে, যখন শুনেছে বাড়িতে সন্দেহজনক গুপ্তচর ধরা পড়েছে। এভাবে এসে পড়বে মঈন ভাবতে পারেনি। স্ত্রী সন্তানের প্রতি তৎপরতা দেখে মঈন মন থেকে দোয়া দিচ্ছে, আজ ভাই বেঁচে থাকলে মেয়ের সুখে থাকার চিত্র দেখলে খুব খুশি হতেন। তাকিয়ে দেখছে কিভাবে এত যত্ন করে একজন বাবা মেয়েকে কোলে নিয়ে রুটি খাচ্ছে। বাবারা যেমনই হোক, যত দায়িত্বই থাকুক সন্তানের মায়া পৃথিবীর সব কিছুর কাছে তুচ্ছ। শেহজা হাত বাড়াচ্ছে বাবার টা খাবে। মধুতে চুবিয়ে হালকা মেয়েকে দিচ্ছে মেয়ে তা খাবেনা। মেয়ের জন্য করা সুজির পায়েস ও মুখ দিতেই ভুশ করে ফেলে দিচ্ছে। মাংসের ঝোল চুবানো রুটি তো এই মেয়ে খেতে পারবেনা,তবুও আগ্রহ! শাহাদ মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আম্মা, এভাবে সব ফেলছেন কেনো? এটা আপনি খেতে পারবেন না।
দিয়া আড়াল থেকে দেখছে। পর্দা সরিয়ে খাবার ঘরে ঢুকে শাহাদের মাংসের বাটিতে একটু খানি রুটি চুবিয়ে শেহজার মুখে ঢুকিয়ে দিলো। শাহাদ হন্তদন্ত করে শেহজাকে সরানোর আগেই কাজটা হয়ে গেলো। যেই না মুখে রুটি দিলো, মেয়েটা ঝালে চোখ মুখ কুচকে ফেললো। ক্রোধান্বিত চক্ষে দিয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো শাহাদ,
– এমন কেনো করলে?
সাথে সাথে মেয়েটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। পানি খাওয়াতে ব্যস্ত সবাই। মধু লাগিয়ে দিচ্ছে। শাহাদ কোলে নিয়ে হাঁটছে। মঈনও একটু রাগ করলো। কল্পনা,তমা ছুটে এলো। তমা শাহাদের কোল থেকে নাত্নীকে নিয়ে দিয়াকে বকা শুরু করলো,
– এটা কি করলি মেয়ে, আমার বোনটারে কাঁদায় দিলি। পাজি মেয়ে। আহারে বাচ্চাটা। এভাবে ঝাল লাগালি। তুই কেমন মা?
শাহাদ দিয়ার দিকে তাকিয়ে তমার দিকে লক্ষ্য করলো। তমা তখন থেকে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। শেহজার কান্না থামছেই না। শাহাদ কোলে নিলো পুনরায় মেয়েকে। নিজের রাগটা বাচ্চাটার উপরই উঠিয়ে নিলো এই মেয়ে। খাবার নষ্ট করা অত্যন্ত অপছন্দের কাজ। বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে মেয়েটা হেচকি তুলছে। খাবার শেষ করে মেয়েকে নিয়ে রুমের দিকে যাওয়ার আগে দিয়াকে ডেকে নিলো। মঈন তমাকে চোখ দিয়ে আশ্বাস দিলো, শাহাদ সব গুছিয়ে নিবে। দিয়া পিছু পিছু এলো। রাখি আরেক প্লেট খাবার রেখে গেলো রুমে দিয়ার জন্য, শাহাদের নির্দেশ। খাটের উপর মেয়েকে বসিয়ে দিলো খেলনা দিয়ে। দিয়ার দিকে তাকিয়ে বজ্রনজর ছুড়লো।
দু কাঁধ ধরে জোরে ঝাঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কি সমস্যা তোমার এমন করছো কেনো? আমার আসাটাই কি এমন আচরণের কারণ?
দিয়া চেঁচিয়ে উঠলো,
– কেনো আসবেন আপনি? একদম কাছে আসবেন না আমার আর আমার মেয়ে। আলগা পিরিত দেখান।
শাহাদ স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইলো?
– আলগা পিরিত? এ্যই মেয়ে কিসের আলগা পিরিত। আমি আমার মেয়েকে নিজের প্রান ভাবি এটা আলগা পিরিত? সহধর্মিণীকে নিজের অর্ধেক ভাবি এটা আলগা পিরিত? কোন সাহসে তুমি আমার ভালোবাসাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করো?
– একশ বার করবো। হাজার বার করবো। যে মানুষটা আমাকে কষ্ট দেয় তাকে আমি নিজের মেনে নিতে পারিনা।
– আগের কষ্টের জন্য পা জড়িয়ে ধরে মাফ চেয়েছি। স্বামী হিসেবে নত হয়েছি আর কি করবো?
– আপনি কেনো জেনেও আমাকে বলেন নি, আম্মিজান, বাবাজানের হ/ত্যাকারী আপনার চাচা?
চমকে উঠলো শাহাদ। অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। এই সংবাদ জানা মোটেও উচিত হয়নি এই মেয়ের। দিয়া ক্ষেপে শাহাদকে দু হাতে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো পুনরায় চেঁচালো,
– দেখিয়ে দিলেন তো আসল রূপ। প্রশ্নটা যখন চাচাকে নিয়ে তখন উত্তর নেই। আপনারা সবাই এক গোয়ালের গরু…
– এক চ*ড় দিব বেয়াদপ। যা নয় তা বলে যাচ্ছো। আদর করে কি মাথায় তুলে ফেলেছি? যা জানো না তা নিয়ে কথা বলবেনা। তোমার জন্য আদর আসেনি।
রাগে গজ গজ করতে করতে বের হয়ে গেলো বাড়ি থেকে। বাড়ির সবাই উৎকন্ঠিত শাহাদকে এভাবে বের হতে দেখে। কেউ প্রশ্ন করেনি ভীতিতে।
__
শাহাদের নির্দেশে আজ পাভেল এবং তানভীর সুলতানা মঞ্জিলে পা দিয়েছে। শিফা কোচিং থেকে এসে পাভেলকে দেখে মহা খুশি। পাভেল সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সুলতানা কবির এবং রায়হান সাহেবের সাথে কথা বলছে। সুলতানা কবির রাগ করেছেন পাভেলের উপর। এভাবে না জানিয়ে চিলেকোঠা ছেড়ে দেয়াটা উনার পছন্দ হয়নি। কখনোই শাহীন, শাহাদের মত ছেলে ব্যতীত অন্য কিছু ভাবেন নি। আজ তাই খাবার টেবিলে সকলের সামনেই বললেন,
– জানি তো কাজে এসেছো। যাওয়ার পর থেকে এই বাড়িতে একটা মা আছে ভুলেই গেছো।
পাভেল মৃদু হেসে বললো,
– ও খালামনি, এমন রাগ করবেন না। আসলে কাজটা এত জরুরি যে আমাকে ফ্ল্যাটে শিফট করতে হয়েছে বসের আদেশে।
– তোমাদের ওই বস তোমাদের জীবনটা ঝালাপালা করে দিলো। একটুকু শান্তি পায়না ছেলেগুলো। আজকে তুমি একটু কিছু বলবে বাবুর বাবা। বাবুকে বলবে আমার কষ্ট হয়। এতটা বছর ছেলেটা আমার আঁচলের ছায়ায় ছিলো অথচ এখন হুট করে চলে গেলো। কি খায় না খায়।
পাভেল নিরব। এই খালামনিটা আগলে রেখেছে আজ প্রায় অনেক বছর। রক্তের সম্পর্কের কিছুই না। অথচ মা মারা যাওয়ার পর সুরাইয়াকে নিয়ে এতিম খানায় থাকতে হয়েছিলো। বাবার দ্বিতীয় বিয়ে ছিলো এর কারণ। শাহীন,নোমান বন্ধু হলো। এই বাড়িতে আসা যাওয়া হলো, ভাইজানের শাসনে বড় হলো এরপর বসের ভূমিকায় সকল রকমের দায়িত্ব কাঁধে নেয়া মানুষটার হুকুম অগ্রাহ্য করতে পারেনি পাভেল। অন্যমনস্ক পাভেলকে শিফা ডেকে বললো,
– আরেকটু ভাত দি?
পাভেল খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে উঠে যাবে তখনই শিফার এমন প্রস্তাব। উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
– না আমার খাওয়া শেষ।
তানভীর সহ বেরিয়ে গেলো কাজ শেষ করে। প্রচন্ডভাবে মন খারাপ নিয়ে মেয়েটা নিজেই খেলো না। আড়ালে সব খেয়াল রাখলো একজন। তানভীর পুরো সময়টা স্তব্ধ ছিলো। বাইকে চেপে বসলো পাভেলের পেছনে। একটাই কথা বললো,
– পাভেল ভাই, শাহাদ স্যার ডেঞ্জারাস।
পাভেল বাইক স্টার্ট দিয়ে বললো,
– প্রতিটি মানুষ ই ডেঞ্জারাস। কারোটা বেরিয়ে আসে কারো টা লুকানো থাকে। স্যারের রূপ টা ভয়াবহ। তবে সেটা বিলুপ্ত। রাশেদ স্যারকে কথা দিয়েছিলো তাই ছেড়ে দিয়েছে এসব।
– রাশেদ স্যার জানতো?
– হুম সব। অক্টোপাসের আন্ডারেই ‘সিক্স স্পাইডার’ কাজ করতো। আমি, শাহীন এবং নোমান ‘সিক্স স্পাইডার’ এর সর্ব কনিষ্ট সদস্য ছিলাম। হারিয়ে ফেলেছি আমাদের চিফদের। মেজর মাহফুজ আলম, কমান্ডার দূর্জয় শফিক এবং কমান্ডার রাশেদ আবেদীন। তিনজনই আগে পরে হারিয়ে যায়। যেদিন মাহফুজ স্যার মা/রা যায় সেদিন ও অক্টোপাস প্রতিজ্ঞা করেছিলো এই খুনের প্রতিশোধ নেয়া হবে। কিন্তু দূর্নীতির জন্য পারেনি, আমাদের পুরো সেক্টর করাপ্টেড। এরপর হা/রালাম দূর্জয় স্যারকে। শেষ বার হামলা হয় শাহাদ স্যারের উপর। সেবারই রাশেদ স্যার থামিয়ে দেয় অক্টোপাস সহ পুরো টিমকে।
– কে করেছিলো এসব।
কিছুটা থেমে নিশ্চুপ হয়ে রইলো পাভেল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
– এক্স প্রাইম মিনিষ্টার নিজেই। ফরিদ রেজার উপর স্যারের এত ক্ষোভের একটাই কারণ ফরিদ রেজা জানতো অনেক সিক্রেট। সেই আঘাত হে*নেছিলো অফিসারদের উপর। শাহাদ স্যারকে সেদিন ফাঁসাতে চেয়েছিলো সেদিন রাশেদ স্যার ফেঁসে যায়। পরিস্থিতি নিজেদের মত সাজিয়ে কেড়ে নেয় রাশেদ স্যারের মত মানুষটাকে। বাধ্য করে তাকে এমনভাবে জীবন শেষ করতে।
তানভীর মুচকি হেসে বলে,
– সব ছারখার করে দিলো এই শ/য়তান।
– আরো অনেক কাহিনী সে নাহয় পরে বলব। আপাতত এই শান্তি যে অক্টোপাসের সিক্রেট মিটিয়ে দিয়েছি।
– ফরিদ রেজা যদি ফাঁস করে।
হো হো করে হেসে উঠলো পাভেল। হাসি থামিয়ে বলে,
– ও তো পাগল এখন। জেলে বসে নিজের এইডস এর টেস্ট করায় নাকি সপ্তাহে তিনদিন। সে নাকি জানে তার অন্য রোগ হয়েছে। এইডস বলে ভয় লাগাচ্ছে সবাই। আরেকটা কথা সে নিজেই জানেনা অক্টোপাস কে? কিছু সিক্রেট জানতো। আর এসব বললে কোন পাগল বিশ্বাস করবে? বস এতো বোকা নয়। যা ভুল করার প্রথমে করেছিলো পরে সাবধান হয়ে যায়। চিফদের মে*রেছে কারণ অনেক রাষ্ট্রীয় তথ্য চিফদের কাছে ছিলো। এখনো সেসব তথ্য বসের কাছে আছে। তবে সময় মত রিভিল করবে হয়তো। এখন অক্টোপাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অনেক আগেই মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে।
বাইক স্টার্ট হলো। শাহাদের রুম থেকে নিশ্চিহ্ন হলো অক্টোপাস। এই ব্যাপারে সব রকমের কৌতুহলের ইতি এখানে টানা হলো।
চলবে…
#সায়রে_গর্জন
#নীতি_জাহিদ
৪৩.
(অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)
মনোহর পুরের রাস্তা মাটি দিয়ে বাঁধানো। রাগে তখন মজুমদার বাড়ি থেকে বের হলেও এখন আর হাত চলছেনা। বাইক থামিয়ে ধান ক্ষেতের আইলের পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরিয়েছে। মাথা ব্যাথা বাড়ছে। এত প্রেশার নিতে ইচ্ছে করছেনা। একটার পর একটা। কখন সব সমস্যা দূর হবে? সাধারণ জীবন যাপন কি তার প্রাপ্য নয়? হাতের সিগারেট টাও আজ বিষ লাগছে। ছুঁড়ে নিচে ফেলে পায়ে পিষে ফেললো। বাইকে চেপে পুনরায় রওয়ানা দিলো।
দিয়া মেয়েকে কোলে নিয়ে বারান্দায় দোলনায় বসে আছে। মেয়েটা একবার খাচ্ছে আবার মায়ের ওড়না তুলে মাকে দেখছে। এই দুধের বাচ্চাটার মুখে এভাবে ঝাল লাগানো একদম অনুচিত হয়েছে। রাগটা সংযত হলো না দিয়ার। ছাড় পেয়ে যাবে এমপির চাচা বলে রেদোয়ান? এই জিনিসটা মাথায় আসছেনা। হাম্মাদ ইরান ফিরে গিয়েছে শাহাদের ভরসায় দিয়াকে রেখে। দিয়াকে ফোনে সব জানিয়ে দিয়েছে যেন শাহাদের উপর বিশ্বাস রাখে। সব ব্যাপারে বিশ্বাস রাখলে ও বাবা মায়ের ব্যাপারে বিশ্বাস রাখতে পারলোনা দিয়া আজ। পরিবারের খেয়াল রাখা মানুষটা কি করে চাচাকে শাস্তি দিবে! হয়তো দুটো কথা শোনাবে নয়তো জেলে দিবে। এতে কি দিয়ার কষ্ট কমবে? নিজেকে প্রশ্ন করলো দিয়া, কি চাস তুই দিয়া? খুন করবি মানুষ টাকে? উত্তর খুঁজে পায়না৷ শেহজা খাওয়া শেষ করে দুষ্টুমি করছে। গায়ের ওড়না ঠিক করে দিয়া উঠে দাঁড়ায় রুমের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তখনই রুমে প্রবেশ করলো এমপি সাহেব। বিনা বাক্য ব্যয়ে জড়িয়ে ধরলো দিয়াকে। মাথার অগ্রভাগে অসংখ্য উষ্ণতা ছুঁয়ে দিলো। এক হাতে মেয়েকে নিজের কোলে নিয়ে দিয়াকে বুকে চেপে বললো,
– যদি আমার রানীকে খুশি করার জন্য রেদোয়ানের লা/শ ফেলতে হয় তবে তাই হবে।
অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো দিয়ার। কি বললো? লা/শ! না দিয়া চায় না হ/ত্যা। শাহাদ যত্নশীল, ঝামেলা এড়িয়ে চলা মানুষ। আইনের সহায়তায় শাস্তি দিয়ে আসছে সকল অপরাধীকে সেই মানুষ কি করে নিজের হাতে আইন তুলে নেবে বলে? দিয়া কি তবে ব্যর্থ স্ত্রী? তার জন্য স্বামী অ/স্ত্র হাতে নিতে দ্বিধা বোধ করছেনা আজ। বাঁধন হালকা ঢিল দিতেই দিয়া স্বামীর মুখে চেয়ে বললো,
– আমি কখনোই চাই না এসব এমপি সাহেব।
– কিন্তু আমি চাই। তুমি যেই পীড়ায় আছো আমার শেহজা সেই পীড়ায় থাকবে আমি মেনে নিতে পারবোনা। তুমি হয়তো কম সয়েছো, নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছো বাবা – মা দুনিয়াতে নেই। আজ যদি আমি রেদোয়ানকে শাস্তি না দি আমার মেয়েটা তার বাবা-মা বেঁচে থাকতেই কুঁকড়ে যাবে। শেষ হয়ে যাবে। ওর মা কখনো বাবাকে মাফ করবেনা। আমি এসব মেনে নিতেই পারবোনা।
– কেনো এসব হবে?
– হবেনা কেনো? নিজেকে প্রশ্ন করো। সকালে কেমন আচরণটা করেছো? কি করে বুঝাই যে একটু সময় লাগবে আমার। সুস্থতা প্রয়োজন। ভুল বোঝাবুঝি এবার শেষ করো বউ। আর কত?
শাহাদ চেপে গেলো নিজের করা প্রতিজ্ঞা। মনে পড়ে গেলো সেই প্রতিজ্ঞার কথা, “এমন ভুল করলে বউ যার কলঙ্ক মেটাতে অগ্নি পরীক্ষা তোমার স্বামীকে দিতে হচ্ছে। না পারছি কাছে টানতে,না পারছি দূরে ঠেলতে। একবার, শুধু একবার হাতের নাগালে পাই ওকে। কথা দিলাম তোমাকে করা প্রতিটি আঘাত নিজেকে করবো আর দ্বিগুনের বেশি ফিরিয়ে দিব ওদের। সম্পর্ক ভুলে যাব। ” নিশাদের হলুদ সন্ধ্যায় দিয়ার কোমড়ে ব্যান্ডেজ করতে করতে করেছিলো। সম্পর্কে ভুলে যাবে সেই প্রতিজ্ঞাবাক্য অনেক আগেই উন্মোচিত হয়েছে অন্তরে। অপ্রকাশিত ছিলো এতটা সময়। চক্রটা আজ এখান অবধি থেমেছে। রেদোয়ান-মনি -ফরিদ-খালেদ- শেফালী- নোমান- দিয়ার বাবা-মা, রাশেদ,হামজা, দিয়া এবং সর্বশেষ লিমন। এদের মধ্যে শেফালী এবং নোমান কাঠের পুতুল। বাধ্য হয়ে করেছে। আর ভুক্তভোগী দিয়া, রাশেদ, হামজা এবং লিমন। রাশেদের শাস্তির সকল ব্যবস্থা মেহেরজান আম্মাই করেছে তার সহায়তায়। শাহাদের ক্রোধের থেকে ফরিদকে বাঁচিয়ে মেহেরজান আম্মা নরকতুল্য যন্ত্রণা দিয়েছে। এক নিমেষে মে*রে ফেলতে চেয়েছিলো শাহাদ। পরে মনে হলো একমাত্র মেহেরজান আম্মার ই অধিকার আছে এই পা*পীষ্ঠকে মা*রার।
___
সামনে সমুদ্রের স্রোতের জোয়ার। সী বিচের পাশেই কটেজ। পরিবেশটা বেশ গুমোট। কপোত-কপোতী কিছুক্ষন আগেই সমুদ্র থেকে দাপিয়ে এসেছে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শুনছে সমুদ্রের গর্জন।প্রেয়সীর পেট জড়িয়ে কাঁধে থুতনি রেখে পরম উষ্ণতায় আলিঙ্গন করছে। সুখানুভূতি গ্রহন করছে মেজর পত্নী। কিভাবে যেন সময়রা পেরিয়ে গেলো। প্রথম দিকে বেশ রাগ হয়েছিলো এখানে আসার পর ও কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকাতে। তবে সেসব কাটিয়ে উঠেছে কয়েকদিন। মনে হয় যেন চট করে জাদুর চেরাগে উইশ বলেছে, সে পূর্ণ করছে। ব্যস্ত স্বামীর কাছে সময় পাওয়া আর আকাশের চাঁদটা হাতে পাওয়া একই রকম। বেলকনি থেকে কোলে তুলে নিয়ে শোবার ঘরে রওয়ানা হলো স্বীয়পত্নী নিয়ে। নিজেদের মধ্যে উষ্ণ, আবেগঘন ব্যক্তিগত সময় কা/টালো প্রেমময় যুগল। নওরীনের অধরে অধর ছুঁয়ে বললো,
– তোমাকে না পেলে আমার কি হতো নিরা?
নওরীন মৃদু হেসে বলে,
– অন্য কেউ থাকতো তোমার বুকে।
– আমার যে শুধু তোমাকেই প্রয়োজন।
– তাই তো আমিই আছি। তবে এখন উঠুন। বেলা গড়ালো। এতদিন ফিরেও তাকায় নি, এখন ঢং করছে। এখানে ও সব কাজ নিয়ে এসেছে মশাই।
– বুঝতে হবে তোমার স্বামী একজন দেশ সেবক। আমাকে নিয়ে গর্ব করা উচিত।
নওরীন শাহীনের ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে বললো,
– আমি করি।
বেশ কিছুক্ষন পর ফোন আসাতে শাহীন চলে যায় বেলকনিতে৷ নওরীন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ওয়েটারের আনা নাস্তা সাজাচ্ছে। অন্যদিকে শাহীন ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। নওরীনের ফোন বেজে উঠলো। কল লিস্টে নামটা দেখেই ভীতি জাগলো অন্তরে। মনে মনে দোয়া পড়লো। কেনো ফোন দিয়েছে। রিসিভ করে সালাম দিলো। ও পাশ থেকে গমগমে স্বর,
– কেমন আছো নওরীন?
– জ্বি ভাইজান আলহামদুলিল্লাহ। বাসার সবাই কেমন আছেন? ভাবীজান, শেহজা,আম্মু,আব্বু,আপুরা।
– আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো। শাহীন কোথায়?
– ভাইজান, ও ওয়াশরুমে।
– আচ্ছা। ওকে কোনো প্রয়োজন নেই আমার। কথাটা তোমার সাথে। নিজেদের মতো করে সময় কাটানোর জন্য পাঠিয়েছি তোমাদের, সময়ের সদ্ব্যবহার কিভাবে করে তা কি বুঝতে পারছোনা তোমরা? ওই গর্দভটা তোমাকে ফেলে কাজ নিয়ে পড়ে থাকে কি করে?
নওরীন কি বলবে বুঝতে পারছেনা। চুপ থাকাটাও অসভ্যতা। আমতা আমতা করে বললো,
– ভাইজান.. আসলে ও বললো গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাই।
– দেশে ফিরলেই কোয়ার্টারে চলে যাবে সে। তখন খুঁজলেই পাবেনা। যতটুকু সময় প্রয়োজন বুঝে নাও। নিজেদের মতো এঞ্জয় করো আনন্দক্ষনটাকে।
এর মাঝে শাহীন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে পাশে দাঁড়ালো। নওরীন ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দিলো কে। শাহীন স্পিকারে রাখলো ফোন। শাহাদ ও পাশ থেকে বলছে,
– তোমাকে এসব বলার প্রয়োজন পড়বে কখনো ভাবিনি। শাহীন কাজ পাগল। বয়স তো কম হলো না শাহীনের৷ তবে অতিরিক্ত কিছুই ভালোনা। যাই হোক সংসার সাজাও। শেহজার জন্য ছোট ভাই- বোনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সুখবর সবাই চায়…
কথা শেষ হলো না শাহাদের, তৎক্ষনাৎ কথার মাঝখানে বেফাঁসের মত শাহীন না বুঝেই বলে ফেললো,
– জ্বি ভাইজান আমরাও চাই শেহজার ভাই বা বোন আসুক। আলহামদুলিল্লাহ। ভাবীমা কি রাজি ভাইজান? তাহলে আরেকজন নিয়ে আসুন।
নওরীনের সাথে সাথে মুখে হাত। ফোনের অপর পাশ নিরব। নওরীন ভয়ে কাঁদো কাঁদো অবস্থা। শাহীন না বুঝেই বড় ভাইকে কি বলে ফেললো। প্রায় মিনিট তিনেক পর শাহাদ একটাই শব্দ উচ্চারণ করলো,
– বেয়াদপ।
সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলো। নওরীন শব্দ করে কেঁদে দিলো। শাহীনকে কি*ল ঘুষি মা*রতে মা*রতে বললো,
– কি করলে তুমি। আমার মান সম্মান শেষ করলে। ভাইজান আমাকে ফোন দিয়েছিলো। তুমি কতটা অসভ্য, ফোন স্পিকারে দিয়েছো ভাইজান কি জানে? এর মাঝে বেহায়া বেলাজার মতো বড় ভাইকে বললে ভাবীমা রাজি? আরেহ মূর্খ ভাইজান আমাদের দুজনকে বলেছে সন্তানের সুসংবাদ দিতে।
পুনরায় নওরীন কেঁদে দিলো। ভাইজান কি ভাবলো? এই মেয়ের কোনো প্রাইভেসি নেই। শাহীন নিজের ভুল বুঝতে পেরে জিহবায় কামড় দিয়ে ধপ করে বিছানায় বসলো। মালয়েশিয়া আসার পর থেকে শুধু ভুল করছে। ভাইজান কি ভাবলো?ফোন দিতেও ভয় করছে যদি স্টাডি রুমের কথা জিজ্ঞেস করে।
___
ডিউটি ডাক্তার ড্রেসিং করছে লিমনের আঘাতের স্থান। তাহি পাশে দাঁড়িয়ে আছে পরিবারের সদস্য হিসেবে। লিমন এখন সজ্ঞানে আছে। ব্যাথার জায়গায় এন্টিসেপটিক লাগতেই জ্বলে উঠছে। তাহি একটু দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষন চোখ বুজে থাকলেও এখন চোখ মেললো ছেলেটা। ভাইজান কাজে বের হয়েছে লিমন জানে, মাকে জানানো যাবেনা তাও লিমন জানে। বাকিরাও মায়ের মতই অজানা। আজ কেমন যেন বাবাকে খুব মনে পড়ছে লিমনের৷ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি চাইলেই লিমনের হাত ধরতে পারতো এখন। কিন্তু সে বড্ড কঠিন মানব। মনে পড়ে গেলো এক্সিডেন্টের আগের মুহুর্তের কথা। পেছনের লোক গুলো যখন দেশীয় অস্ত্র সমেত তার পিছু নিলো তখনও ভয় পায়নি। সামনের ট্রাকটা যখন এসে পড়লো তখন মনে হলো এই শেষ। ট্রাকের সাথে বাড়ি খেয়ে ছিটকে পড়ার পর ও মনে হলো যাক বেঁচে তো যাবে। লিমন ভাবতেও পারেনি সেই ধারালো দেশীয় অস্ত্রের কোপটা তার বুকে পড়বে। ভেতর থেকে হাহাকার বেরিয়ে আসছে। মনের ভেতর দমিয়ে রাখা ভালোবাসাটা আজ মনে হলো যেন মিথ্যা প্রচেষ্টা। তাচ্ছিল্যের হাসি আসছে। তাহির মনে এতটুকু পরিমাণ টান ও গত কয়েকমাসে লিমনের জন্য জন্মায়নি লিমনের কাছে স্পষ্ট। লিমনের চোখ তাহিতে নিবদ্ধ। আর তাহির চোখ দেয়ালে। লিমন বুঝতে পেরেছে তার এভাবে তাকানো তাহিকে অস্বস্তিতে ফেলছে। ডাক্তার হঠাৎ লিমনকে বললো,
– আপনি জানেন আপনার বুকে কয়টা স্টিচ?
লিমন হালকা মাথা নাড়ালো ‘জানেনা’,
– বারোটা স্টিচ। আড়া আড়ি ভাবে টান দিয়েছে বুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে।
লিমন ধীরে বললো,
– ডাক্তার সাহেব বেঁচে আছি এটাই অনেক। আল্লাহর অশেষ রহমত। আমি কালিমা পড়েই নিয়েছিলাম যখন ওরা বুকে কোপ দিয়েছিলো।
ডাক্তার সালিফ, তাহি এবং নার্স তিনজনই তাকিয়ে লিমনকে দেখছে। ড্রেসিং শেষে তাহি ছাড়া বাকিরা বের হয়ে যায়। তাহি টুল টেনে বসে। লিমনের হাত ধরে বললো,
– রাগ অভিমান হওয়াটা স্বাভাবিক লিমন। আমি নিজের হয়ে সাফাই গাইবোনা৷ কিন্তু তুমি যেটা চাইছো…
– আমি কিছুই চাইছি না আর আপনার কাছে। আমার সব পাওয়া হয়েছে।
লিমন নিজ থেকেই হাতটা সরিয়ে নিলো। লিমনের আজ ভেতরটা জ্বলছে। ঠোঁট চেপে কান্না পাচ্ছে। পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই। সব রকমের চেষ্টা করেছে। আজ তাহির সাথে কথা বলতে ভালো লাগছেনা। চোখ বুঁজে ফেললো। মনে হলো যেন চোখের সামনে ভাসছে তাহিকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন। তাহির হাত ধরে হাঁটা,ওর কোলে মাথা রাখা এসব তার জন্য দুঃস্বপ্ন। ভাইজান শুনলেও রাগ করবে। লিমনের বুক জুড়ে ব্যান্ডেজে মোড়ানো। লিমন অনেকক্ষন পর বললো,
– আমি কি হাঁটতে পারবো ডাক্তার তাহি?
তাহি ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো। পা ভেঙ্গেছে হাঁটতে না পারার তো কথা নয়। হঠাৎ তাহি প্রশ্ন করলো,
– এ কথা কেনো বলছো? ডাক্তার কি কিছু বলেছে?
– জানিনা৷ মনে হলো। ওরা খুব জোরে ধারালো কিছু দিয়ে পায়ে আঘাত করেছে।
তাহি বেরিয়ে যাবে রুম থেকে তখন লিমন বললো,
– আমি দুঃখিত আপনাকে এতদিন বিরক্ত করেছি তাই। যদি পারেন ক্ষমা করে দিবেন। আপনার জীবনে আর কোনো ঝামেলার কারণ হতে চাইছিনা। আপনার মনের ধারণা ছিলো, আমি নিজেকে হয়তো রাশেদ ভাইয়ের সমতুল্য ভাববো। সোজা কথা আমি উনার নখের যোগ্য ও নই। আপনি যেতে পারেন।
তাহি কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো। লিমন নিজেকে আশ্বস্ত করে সান্ত্বনা দিলো, যা পাগলামি করেছিস, আগে করেছিস। তোর শরীরের যা কন্ডিশন সুস্থভাবে বাঁচবি কিনা তারই তো নিশ্চয়তা নেই আবার আরেকজনই জুড়াবি জীবনে। কোনো মেয়েই এমন মানুষকে জীবন সঙ্গী হিসেবে চাইবেনা।
__
গোমট পরিবেশ৷ শেহজার উ আ ছাড়া অন্য শব্দ আসা আপাতত গর্হিত অপরাধ। ফোনের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে এমপি। এই মানুষ টা চুপ করে আছে এর মানে মনে মনে শাহীনের ঠিকুজি গুষ্টি উদ্ধারসহ আত্নশুদ্ধি চলছে। দিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
– কি যেন বলেছিলেন ম্যাডাম? আপনার জা কে ফোনে বুঝিয়ে বলতে শাহীনের উদাসীনতার ব্যাপারটা তাই না?
দিয়া শুকনো ঢোক গিলছে। দিয়া নিজ থেকে বলেছিলো নওরীনকে জানাতে। কিছুক্ষন আগে ফোন নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনায় দুজনই অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। দিয়া আমতা আমতা করে বললো,
– আমি কি জানতাম…
কথা পুরো শেষ করেনি এমপি সাহেবের অভিব্যক্তি দেখে। ওখানেই ফুল স্টপ। জেদে ফোঁস ফোঁস করছে মানুষটা। কেমন একটা কথা বলে ফেললো শাহীন! আচমকা কামরা কাঁপিয়ে দিয়া হা হা করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে খাট থেকে মেঝেতে বসে পড়লো। আচমকা হাসিতে এমপি মাত্রাতিরিক্ত লজ্জ্বা পেয়ে গেলো। মেয়েটা পেট ধরে হাসছে। শাহাদ মুখ ঘুরিয়ে ঠোঁট চেপে নিজেও হেসে দিলো। তবুও হাসি নিয়ন্ত্রণ করে বললো,
– হাসবেনা মেয়ে। ভাইবোন গুলো বড় অসভ্য হচ্ছে। কখন কি বলবে কোনো ধারনা নেই। কি জবাবটা দিলো আমাকে? ভাবীমা কি রাজি? কত্ত বড় বেয়াদপ ভাবা যায়। আমি কি ওর বন্ধু লাগি?
দিয়া হাসি থামিয়ে বলে,
– দোষ আপনার,আপনি কি বলেছেন একবারো উনাদের বেবি নেয়ার কথা। যেভাবে আধ খানা কথা মুখ দিয়ে বের করেন মানুষ তো ভুল বুঝবেই। এত রয়ে সয়ে কথা বলেন কেনো? কথা বলতে কি ট্যাক্স লাগে?
– আশ্চর্য মেয়ে তো তুমি। কোথায় আধ খানা কথা বললাম। পুরো বাক্য শুদ্ধ উচ্চারণ করে ভেঙ্গে বললাম। উলটো মনে হয়েছে বেশি বলেছি।
– ইশ রে! অন্নেক কথা বলেছেন তাই তো পুনরায় বাপ হওয়ার পরামর্শ দিলো ছোট ভাই।
গাল ফুলিয়ে রাখা শাহাদকে দেখে দিয়ার নিয়ন্ত্রণহীন হাসি ফুটতে চাইলো ঠোঁটের কোণে পুনরায়। তবে এবার হাসলে আ/ছাড় খেতে পারে সেই ভয়ে গিলে নিলো। আকস্মিক ভাবে শাহাদ খাট থেকে নেমে টি-শার্টের সামনের দুটো বোতাম খুলতে খুলতে দিয়ার পাশে বসে গেলো মেঝেতে। দিয়ার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ তুলে বলে,
– নট ব্যাড আইডিয়া। লেটস মেক এনাদার প্ল্যান ফর শেহজা’স বেবি ব্রাদার। আমার আপত্তি নেই।
দূরে ছিটকে হাত ঝামটা মে*রে এই প্রথম দিয়া ফেলে দিলো। আঙুল দেখিয়ে বলে,
– দূরে যান। দুষ্ট লোক।
মেঝেতে বসে খাটের পেছনে দু হাত মেলে হেলান দিয়ে ঠোঁটের কোণে একপেশে দুষ্টু হাসি দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,
– ইশ! ফারাহ্; যদি জনসাধারণ জানতে পারে গোমরা মুখো, জটিল ভাষ্য, কাঠখোট্টা এমপি শাহাদ ইমরোজ কতটা বেহায়া, নির্লজ্জ, বেপরোয়া, বেসামাল তার রমনীর নিকট ; ভাবতে পারো কি হবে?
চলবে…