সায়াহ্নের প্রেমছন্দ পর্ব-১৩+১৪

0
655

#সায়াহ্নের_প্রেমছন্দ
#পার্ট_১৩
জাওয়াদ জামী জামী

” এই সাত-সকালে কোথায় যাচ্ছ, ভাইয়া? ” রাজ্যকে ফিটফাট হয়ে বাহিরে যেতে দেখে জিজ্ঞেস করল কানন।

” একজনকে নিজের করে পেতেই বাহিরে যাচ্ছি। শোন, আমি ফোনে লোকেশন জানিয়ে রাখব, আমি ফোন করলেই তুই সেখানে চলে আসবি। ”

” আমার কোথাও যেতে হবেনা, ভাইয়া। ” কানন মুখ কালো করে বলল।

রাজ্য কাননের দিকে তাকিয়ে ওর শুকনো মুখটা দেখে ভ্রুঁ কোঁচকায়।

” কি হয়েছে তোর? মন খারাপ কেন? ”

রাজ্য’র কথা শুনে কানন হু হু করে কেঁদে উঠল। কাননের এহেন আচরণে চমকায় রাজ্য। ও কাননের কাঁধে হাত রাখল।

” কানন, কাঁদছিস কেন তুই? কি হয়েছে আমাকে বল? ” উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করল রাজ্য।

” পেখমের বিয়ে হয়ে গেছে, ভাইয়া। ” কান্না না থামিয়েই বলল কানন।

কাননের কথাটা রাজ্যের বুকে বিষ মাখানো তীরের মত বিঁধল। একটু বিরক্তই হলো কাননের ওপর। তীক্ষ্ণ স্বরে বলে উঠল,

” সব সময় মজা করবিনা, কানন। একটা ভালো কাজে যাচ্ছি, কিন্তু তুই শুরুতেই আনন্দ পণ্ড করে দিতে চাচ্ছিস? ”

” আমি মজা করছিনা, ভাইয়া। সত্যিই গতরাতে পেখমের বিয়ে হয়েছে। একটু আগেই ঋত আমাকে সেকথা জানালো। ”

কাননের মুখ দেখে কথার সত্যতা টের পেল রাজ্য। ধপ করে বসে পরল বিছানায়। শরীরে কাঁপুনি টের পাচ্ছে। প্রানশক্তি যেন কেউ ধীরে ধীরে শুষে নিচ্ছে। নিস্তেজ হয়ে পরছে ক্রমশ। কণ্ঠায় বুঝে ভারী পাথর চেপে বসেছে। তবুও অনেক কষ্টে জিজ্ঞেস করল,

” কে, সে? ”

” পরশ ভাইয়ার ফ্রেন্ডের ছোট ভাই। ডক্টর উনি। উনারা নাকি আগেই পেখমকে দেখেছিল। ”

” ঐ বাড়ির সবার মতেই হয়েছে বিয়েটা? ”

” হুম, সবাই জানত। কিন্তু কালকেই যে বিয়ে হবে এটা কেউ ভাবেনি। পরশ ভাইয়া দাদু, বড়মা আর পেখম আপুর মা’কে আসতে বলেছিল। তারা নাকি গতকাল বিকেলেই এসেছে। তারা কথাবার্তা বলার পর রাকিব আর রাশেদ চাচা এসেছে। তারপর রাতেই বিয়ে হয়েছে। ”

” পেখম রাজি ছিল? ”

” রাজি না থাকলে বিয়ে হল কিভাবে! ”

রাজ্যের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। হঠাৎই প্রচন্ড পিপাসা অনুভূত হচ্ছে। যেন বুকটা খাঁ খা মরুভূমি। এক সাগর পানিতেও এই তৃষ্ণা মিটবার নয়। দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরল রাজ্যের চোখের কোন বেয়ে। কতক্ষণ এভাবে বসে ছিল বলতে পারেনা। কাননও ওর ভাইয়ার পাশেই বসে আছে। কিন্তু তাকে শান্তনা দেয়ার ভাষা নেই ওর।

” আমি গ্রামে ফিরব। তুই কি যাবি আমার সাথে? ”

” গ্রামে যাবে! ”

” কার জন্য এখানে থাকব? যাকে পাওয়ার জন্য পুরো দুনিয়ার সাথে লড়াই করতে চেয়েছিলাম, সে-ই তো আমার হলোনা। আমার পুরো দুনিয়া আঁধার করে অন্যের ঘরে আলো জ্বালতে চায় সে। তবে সেটাই হোক। আমি আঁধারকেই আলো ভেবে বিনিদ্র রজনী কাটিয়ে দেব। গরলকে সুধা ভেবে পান করব আজীবন। ” ভেঙে আসল রাজ্যের গলা। কষ্টেরা বুকের পাঁজর ভাঙতে তৎপর।

” কখন যাবে? ”

” যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ”

***

নতুন বাড়ি, অপরিচিত মানুষজন আর নতুন পরিবেশ সবকিছু মিলিয়ে হাসফাস লাগছে পেখমের। একটু পরপর একেকজন এসে কথা বলছে। তবে গল্প কম প্রশ্ন করছে বেশি। একেকজনের প্রশ্নবাণে জর্জরিত পেখম। রাতে এই বাড়ির সৌন্দর্য, প্রাচুর্য ওর চোখে ধরা পরেনি। সকালে ড্রয়িংরুমে এসে বুঝল এরা কতটা সম্পদশালী। হুট করে বিয়ে হওয়ায় বেশ ভড়কে
গেছে মেয়েটা। এদিকে তার বর মহাশয়ের পাত্তাই নেই। রাতেই বেরিয়েছে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। ইমার্জেন্সি অপারেশন ছিল। মোটকথা, বরবিহীন বাসর রাত কেটেছে ওর ।

” বউমা, ইনি তোমার খালা শ্বাশুড়ি। আমার চাচাতো বোন। ”

পেখমের শ্বাশুড়ি আইডি রহমানের ডাকে তার দিকে তাকায় পেখম। মৃদু গলায় সালাম দেয় ভদ্র মহিলাকে।

” আপা, এটা আমাদের মৃদুলের বউ! বউয়ের গায়ের রংটা কেমন চাপা সেটা তোমরা আগে দেখনি? মৃদুলের মত সুদর্শন ছেলের সাথে চাপা রংয়ের বউ কি মানায়? ” হায় হায় করে উঠল ভদ্র মহিলাটি।

” কেন মানাবেনা? আমাদের তো বউমাকে বেশ পছন্দ হয়েছে। মৃদুলেরও পছন্দ বউমাকে। আর তাছাড়া বউমা’র রেজাল্ট সম্পর্কে ধারনা আছে তোর? ”

” রাখ তোমার রেজাল্ট। আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী। দাদী-নানীরাই তো বলতো। তোমার পছন্দ দেখে আমি অবাক হচ্ছি! তা মেয়ের বংশ পরিচয় জানোতো? নাকি না জেনেই ছেলের গলায় একে ঝুলিয়ে দিয়েছ? তুমি আর দুলাভাই কেউ হেসে কথা বললে সব ভুলে যাও। আর সেই সুযোগে মানুষ তোমাদের ঠকিয়ে দেয়। এর পরিবারের লোকজন তো আবার সেটা করেনি? দুটো ভালোমন্দ কথা বলে নিজের কালো মেয়েকে মৃদুলের দেয়নিতো? ”

খালা শ্বাশুড়ির কথায় বেশ কষ্ট পায় পেখম। না ওকে অসুন্দর বলেছে সেজন্য নয়। ও কষ্ট পায়, ওর পরিবার নিয়ে কথা বলায়। ঠোঁটে উত্তরও চলে এসেছিল। কিন্তু নতুন বউ জন্য চুপ মেরে গেল। সিদ্ধান্ত নিল, এরপর থেকে এ ধরনের কথা বললে কাউকেই ছাড় দেবেনা। নিজের পরিবারের অসম্মান ও কিছুতেই মানতে পারবেনা।

” নিতু, তুই এভাবে বলছিস কেন? আমরা কি খোঁজ খবর না নিয়েই ছেলের বিয়ে দিয়েছি! আরও তিনমাস আগে থেকেই আমরা পেখমের পুরো পরিবার সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছি, পেখমকে দেখেছি। এতদিন যাচাই-বাছাই করেই তবে ওকে সিলেক্ট করেছি। ”

শ্বাশুড়ির কথায় আপনা-আপনি কপাল কুঁচকে আসে পেখমের। ‘ যাচাই-বাছাই ‘ কথাটা ওর মস্তিষ্কে গেঁথে গেল।

***

” রাজ্য, এতদিন ঢাকায় তোর কি কাজ ছিল বলতো? তোর দাদু বারবার তোর কথা জিজ্ঞেস করছিলেন। চেহারার এ কি হাল করেছিস! ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করিসনি তাইনা? ” রাজিয়া পারভীন ছেলের মুখাবয়ব স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করলেন।

মা’য়ের স্নেহের পরশটুকু পেয়েই বিগলিত হল রাজ্যের মন। কষ্টেরা সব উছলে অশ্রু হয়ে ঝরল। হু হু করে কেঁদে উঠল।

আচানক ছেলেকে কাঁদতে দেখে চমকালেন রাজিয়া পারভীন। ব্যকুল হয়ে জানতে চাইলেন,

” কি হয়েছে তোর? কাঁদছিস কেন, বাপ? কোথায় কষ্ট হচ্ছে মা’কে বল? ”

মা’য়ের প্রশ্রয় পেয়ে অঝোরে নয়ন ঝরছে রাজ্যের। কি উত্তর দেবে তার প্রশ্নের?

রাজিয়া পারভীনের মনে হাজারো প্রশ্নেরা ভীড় করলেও ছেলেকে ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে দেখে বুকে জড়িয়ে নিলেন। তার চোখেও জমেছে অশ্রুকণা।

***

” বউমা, তৈরী হয়ে নাও, তোমাকে নিয়ে আমার ছোট বোনের বাসায় যাব। ”

” আমাকে দশ মিনিট সময় দিন, মা। ”

” এই যে শুনছ ? উঠোনা আর কত ঘুমাবে? ”

পেখম মৃদুলকে ডাকল। কিন্তু তার ওঠার কোন লক্ষ্মণই দেখলনা। বাধ্য হয়ে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল। ওর শ্বাশুড়ির সময়-জ্ঞান প্রখর। একটুও দেরি তিনি বরদাস্ত করেননা। সময়ের আগেই সবকিছু তার সামনে চাই।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েও দেখল মৃদুল ঘুমাচ্ছে। এইবার বেশ বিরক্ত হল পেখম। সাইড টেবিলে থাকা গ্লাসের পানিটুকু ঢেলে দিল মৃদুলের চোখেমুখে আর শরীরের কিছু অংশে । পানির ধারা চোখমুখে পরতেই লাফিয়ে উঠল মৃদুল। হতভম্ব হয়ে এদিকসেদিক চাইল। যখন বুঝতে পারল কাজটা পেখমের, তখন ওর হাত ধরে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে নিল।

” আমার বউটা এত দুষ্টু সেটাতো জানতামনা। যে কয়দিন তাকে দেখেছি, সব সময়ই মুখ গোমড়া করে থাকত। সেই গোমড়ামুখো মেয়েটা হঠা করেই এত দুষ্টু হলো কিভাবে? ”

” তোমার মত অলসদের বউদের মাঝেমধ্যে দুষ্টু হতেই হয়। এই দুষ্টুমিটুকু না করলে ঘুম থেকে উঠতে বুঝি? এদিকে তোমার চক্করে পরে আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। মা’য়ের বকাও আমাকেই শুনতে হবে। ”

” মা বকবে কেন! সে কি জানেনা, তার ছেলে নতুন বিয়ে করেছে, একটা মিষ্টি বউ আছে ঘরে। ”

” সবই জানেন মা। এবার তুমি ওঠো । তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও । আজকে আমরা ছোট খালামনির বাসায় যাব। ”

” কেন? ”

” মা বলেছে তাই। ”

” মা’কে যেতে বলে দেই, কি বল? তাহলে ফাঁকা বাসায় কিছুক্ষণ রোমান্স করা যাবে। ”

” কি বেশরমের মত কথা! সারভেন্ট দিয়ে বাসা ভর্তি, আর তুমি বলছ ফাঁকা বাসা! বুদ্ধি কি কিছুই নেই? সবই কি অপারেশন টেবিলে রেখে এসেছ ? এক মিনিটের মধ্যে বিছানা থেকে না নামলে আমি মা’য়ের সাথে খালামনির বাসায় চলে যাব। ”

” আনরোমান্টিক বউ একটা। ”

” পেখম, মৃদুল, তোমরা কি এখনো রেডি হওনি? আরও কতক্ষণ অপেক্ষা করব আমি? ”

” আর কয়েক মিনিট সময় দাও, মা। তুমি বাহিরে দাঁড়িয়ে কেন? ভেতরে এস। ”

আইভি রহমান রুমে ঢুকলেন। মৃদুলকে বিছানায় বসে থাকতে দেখে বিরক্তিতে মুখ বাঁকালেন। পরক্ষণেই তার চোখ গেল মৃদুলের ভেজা টি-শার্টে।

” তোমার টি-শার্ট ভেজা কেন? তুমি জানোনা, এতে তোমার এ্যাজমা বাড়তে পারে? তুমি নিজে ডক্টর হয়ে এমন ভুল কিভাবে কর! ”

আইভি রহমানের কথায় পেখম ভয়ে ভয়ে চাইল মৃদুলের দিকে। ইশারায় মৃদুলকে কিছু বলতে চাইল। ও জানতনা মৃদুলের এ্যাজমা আছে। কিন্তু মৃদুল ওর দিকে তাকালোনা। হাসিমুখে বলল,

” আর বলোনা মা, পেখমের কাজ এটা। আমার ঘুম ভাঙাতেই সে গ্লাসের পানির সদগতি করেছে। ”

” হোয়াট! তোমার ঘুম ভাঙাতে মানে? ঘুম ভাঙানোর জন্য গায়ে পানি ঢালতে হবে, এটা কোথায় লিখা আছে? বউমা, তোমার বয়স কিন্তু কম নয়। তোমার বয়সী মেয়েদের এধরণের আচরণ মোটেও মানায়না। বউকে বউয়ের মত থাকতে হয়, প্রেমিকা রূপে তারা বড়ই বেমানান। ”

” সরি, মা। আসলে আমি জানতামনা, আপনার ছেলের এ্যাজমা আছে। জানলে কখনোই এমনটা করতামনা। ”

” বিয়ের একমাস হয়ে গেছে, অথচ তুমি বলছ জানোনা! একজন স্ত্রী হিসেবে স্বামীর ভালোমন্দের খবর রাখার দ্বায়িত্ব তোমার। আমরা কি হাতে ধরে সব শিখিয়ে দেব? তোমার মা শেখায়নি এসব? নাকি নিজের সংসারের রাশ মজবুত নয় বলে, মেয়ের প্রতিও উদাসীন ছিল? ”

নিজেদের মাঝে মা’য়ের কথা উঠায় আজকেও পেখমের ভিষন রাগ হলো। তবে সেটা কাউকে বুঝতে দিলনা। হাসিমুখেই কথা বলল আইভি রহমানের সাথে।

” আমার মা আমাকে সবকিছুই শিখিয়েছে। ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাইকে সম্মান করতে শিখিয়েছে, সংসারে দ্বায়িত্ব পালন করতে শিখিয়েছে আরও অনেককিছুই শিখিয়েছে। কিন্তু কারও কাছ থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কথা বের করতে শেখায়নি। গত একমাসে আপনার ছেলে আমাকে একবারের জন্যও বলেনি, তার এ্যাজমা আছে। এমনকি সে আমার সামনে কোন প্রকার মেডিসিনও নেয়নি, যাতে করে আমি বুঝতে পারি তার এ্যাজমা আছে। ” স্বল্পভাষী পেখম এতটুকুই বলতে পারল। কিন্তু ও আরও অনেককিছুই বলতে চেয়েছিল। অথচ সেটা হয়ে উঠলনা। কান্না দলা পাকিয়েছে কণ্ঠায়। ওর এই এক সমস্যা, কষ্ট পেলে শুধু কান্না আসে।

” মৃদুল! তোমার বউ এসব কি বলছে? ও আমাকে কথা শোনাচ্ছে! তোমার মা’কে কথা শোনাচ্ছে? এই আমার ভাগ্যে ছিল! তাকে ছেলের বউয়ের নজরে দেখিনি কখনো। একটা মাস যাবৎ তাকে নিজের মেয়ে ভেবে এসেছি। আজ সে কিনা আমাকে কথা শোনায়! ”

আইভি রহমানের কথা শুনে পেখম অবাক হয়ে গেছে। ও ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে আছে মৃদুলের দিকে। এদিকে মৃদুল মা’য়ের চোখে পানি দেখে খেঁকিয়ে উঠল।

” পেখম, তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি। আমি সব সময় তোমাকে বুদ্ধিমতী মেয়ে ভেবে এসেছি। কিন্তু আজ তুমি আমার ধারনা ভুল প্রমান করে দিলে। নিজের ভুল স্বীকার করতে এত সংকোচ কেন? শোন, ভুল স্বীকার করলে সম্মান কখনোই কমেনা। ”

পেখম অবাক হয়ে দু’জনের মুখের দিকে তাকায়। ও বাক্যহারা হয়ে গেছে।

চলবে…

#সায়াহ্নের_প্রেমছন্দ
#পার্ট_১৪
জাওয়াদ জামী জামী

” তোর শ্বশুর বাড়ির লোকজন কেমন, পেখম? তোকে তারা ভালোবাসে তো? ”

পারভীন আক্তারের প্রশ্ন শুনে মলিন হাসল পেখম। পারভীন আক্তার ছেলেদের কাছে বেড়াতে এসেছেন। সেটা জানতে পেরে মৃদুল মা’য়ের সাথে পরামর্শ করে পারভীন আক্তারকে তাদের বাসায় ইনভাইট করেছে।

” খুব ভালোবাসে। আমাকে তারা চোখের মনি করে রেখেছে। আর তাছাড়া তোমরা আমাকে খারাপ থাকবার জন্য তো বিয়ে দাওনি। সব খোঁজখবর নিয়েই তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছ। আজ-অব্দি তোমাদের কোনও সিদ্ধান্ত ভুল হয়নি এটা তোমরা ভালো করেই জানো। ”

পেখমের কথার পিঠে আরও কিছু বলতে চাচ্ছিলেন পারভীন আক্তার। কিন্তু আইভি রহমান এসে পরায় সেটা আর বলা হলোনা।

আইভি রহমান এসে বসলেন পারভীন আক্তারের পাশের চেয়ারে।

” বেয়ান, আমার বাসায় এসে আপনার কেমন লাগছে? মেয়ের সুখ দেখে শান্তি লাগছেনা? কখনো ভেবেছিলেন, পেখমের এমন হাই সোসাইটিতে বিয়ে হবে? ওর এমন রাজ কপাল হবে? ”

আইভি রহমানের এমন ধারা প্রশ্নে পারভীন আক্তার বিস্মিত হলেন। কোন ভদ্র মহিলার প্রশ্নের ধরন এমন হতে পারেনা। তাছাড়া তাদের মেয়ে কি ফেলনা নাকি? তবে প্রশ্নটা তিনি মনের গভীরে গোপন করলেননা।

” আমার মেয়ে কি অযোগ্য যে ওকে কোনও অযোগ্য কারো হাতে তুলে দেব! ওর যা রেজাল্ট, তাতে সব হাই সোসাইটির মানুষই ওকে পুত্রবধূ করতে হুমড়ি খেয়ে পরবে। এমনকি পরেওছিল। আমার জানামতে, আপনার ছেলেমেয়েদের চাইতেও পেখমের রেজাল্ট ভালো। এছাড়াও ওর বাপ-দাদার বংশও কম নয়। ওর পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত। তারা ঢাকা শহরে এসে শুধু স্থায়ী হয়নি। নতুবা তাদের আশেপাশে দাঁড়ায় এমন যোগ্যতা কয়জনের আছে? ”

পারভীন আক্তারের উত্তর আইভি রহমানের গালে চপেটাঘাত করল। আইভি রহমান বুঝতে পারেননি পেখমের বড়মা নামক মা’টি কাউকে ছেড়ে দেয়ার পাত্রী নন। তিনি সব সময়ই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন এবং অদূর ভবিষ্যতেও করবেন। এদিকে আইভি রহমানও কারও অপমান মেনে নেয়ার মানুষ নন। তিনি একদিকে হারলে অন্যদিকে ঠিকই নিজের বাসনা পূর্ণ করতে তৎপর।

” খুব ভালো করেই জানি পেখম কতবড় বংশের মেয়ে। নয়তো আমি কি কোন যাচ্ছেতাই পরিবার থেকে মেয়ে পছন্দ করে আনি! হোকনা মেয়ের রূপ কম, তাতে কি? মেয়ের গুণ আছে এটাই অনেক। আজকাল রূপ কেউ দেখেনা। যদিও কথায় আছে, আগে দর্শনধারী, পরে গুণ বিচারী। কিন্তু আমরা ওর গুনটাই দেখেছি। আচ্ছা বেয়ান, পেখমের বাবা কোথায় আছে? তার সাথে আপনাদের যোগাযোগ আছে? তোমার সাথে তোমার বাবার যোগাযোগ আছে, পেখম? ”

পারভীন আক্তার পেখমের শ্বাশুড়ির মনোভাব ঠিকই বুঝলেন। সাথে সাথে তিনি বুঝে গেলেন, এই পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিয়ে কতবড় ভুল করেছেন। সেই সাথে রাগ হতে লাগল পরশসহ পরিবারের সকলের ওপর। তিনি বারবার সবাইকে বলেছিলেন, আরও কিছুদিন যাক। তারপর নাহয় মেয়ের বিয়ে দেয়া যাবে। কিন্তু পরশের মুখে মৃদুলের পরিবারের বর্ননা শুনে রাশেদ আর রাকিব কিছুতেই মানলনা। তারা এখানেই পেখমের বিয়ে দেবে। কিন্তু পারভীন আক্তার চেয়েছিলেন রাজ্যের সাথে পেখমের বিয়ে হোক। তিনি দুই পরিবারের সবাইকে মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা আর হলো কই? তিনি আইভি রহমানের প্রশ্নের উত্তর দিতে মুখ খুললেন,

” গায়ের রং একটু চাপা হলেই বুঝি রূপ কম হয়? তবে হোকনা আমার মেয়ে একটু কম রূপের। তবে আজকালকার মেয়েদের মত আমার মেয়ে সারাদিন পার্লারে গিয়ে বসে থাকেনা। চেহারা ঘষামাজা করে নিজেকে ফর্সা দেখানোর চেষ্টা করেনা। এখনতো দেখি গরীব থেকে ধনী সব ঘরের মেয়েরাই কৃত্রিম সুন্দরী। সেদিক দিয়ে আমাদের পেখম একদম পার্ফেক্ট। শুধু ওর বাবা কাছে থাকেনা এটাই ওর অপ্রাপ্তি। তবে বাবা’র থেকেও ওর চাচারা ওকে বেশি আদর দিয়েছে। তাই তারাই পেখমের আসল বাবা। ”

” এটা বললেতো হবেনা। সবাই জানতে চায় বউয়ের বাবা কোথায়, কি করে? আমরা কোন উত্তর দিতে পারিনা। লজ্জায় মাথা কাটা যায়। ”

” লজ্জায় যখন মাথাই কাটা যায়, তবে সব জেনেশুনে পেখমকেই কেন পছন্দ করেছিলেন? যাহোক এখন থেকে কেউ ওর বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবেন, ওর বাবা অস্ট্রেলিয়া থাকে। সেখানে তার আরেকটা সংসার আছে। দুইটা মেয়ে আছে। সে একজন আর্কিটেক্ট। রাবেয়াকে রেখে চলে যাওয়ায় তার পরিবার তাকে ত্যাজ্য করেছে। সত্য কথাটাই বলবেন। কারন মিথ্যার সুখ সাময়িক। কিন্তু অনেক সময় সত্য প্রথমে তিক্ত লাগলেও এটার ফল সর্বদাই মিষ্টিই হয়। ”

” জোর গলায় লজ্জার কথা আপনাদেরই বলতে শুনলাম। আপনারা পারেনও বটে। ”

” সত্য বলতে কোন লজ্জা নেই। সত্যের জোর সব সময়ই থাকে। এই বিষয়ে আর কিছুই বলতে চাচ্ছিনা। আমি আজকেই পরশের বাসায় যাব। গ্রামে গিয়েই আমি কাউকে পাঠিয়ে দেব। আপনি মৃদুল আর পেখমকে পাঠিয়ে দিয়েন। বিয়ের পর মেয়েটা বাড়িতে যায়নি। মৃদুলও ওর শ্বশুর বাড়িতে যায়নি। ”

” এখন মৃদুল কোথাও যেতে পারবেনা। হসপিটাল থেকেই ওকে ছাড়বেনা। আর এত তাড়া কিসের? বিয়ে হয়েছে তিনমাস, এরইমধ্যে পেখমকে গ্রামে যেতে হবে! এত বেশি বাবার বাড়িতে যেতে নেই। বউদের এত বেড়াতে হয়না। বেশি বেড়ালে সংসারের দিকে টান থাকেনা। ”

” আপনাদের পরিবারে বুঝি মেয়েদের মাসে পনেরদিন এসে বেড়ানোর নিয়ম? তারা পনের দিন শ্বশুর বাড়িতে থাকে, বাকি পনের দিন বাপের বাড়িতে? কিন্তু ছেলের বউয়ের বেলায় সেই নিয়ম উল্টো? আমরাদের পরিবারে কিন্তু সেটা নেই। আমরা ছেলের বউ আর মেয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য রাখিনা। আমরা যেহেতু ছেলের বউকে মেয়ের মত ভাবি সেহেতু চাইব আমাদের মেয়েও শ্বশুর বাড়িতে মেয়ের মর্যাদা পাক। ”

” আমার মেয়েরা এখানে এসে থাকে সেটা কে বলেছে আপনাকে? ও বুঝেছি, পেখম দিনরাত ফোনে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করে এসবই জানায় আপনাদের? এই মেয়েকে দেখলে বোঝার উপায় নেই, এর পেটে পেটে এত বুদ্ধি! আমার মেয়েরা আমার বাসায় আসে, তাতে আপনার মেয়ের কি? এখনতো দেখছি এর চেহারা যত কুৎসিত তার থেকেও বেশি কুৎসিত এর মন। ”

শ্বাশুড়ির মুখে এমন কুরুচিপূর্ণ কথা শুনে অবাক হয়ে গেছে পেখম। ও কখনোই কাউকে বলেনি ওর ননদরা মাসের অধিকাংশ সময়ই এখানে থাকে। কিন্তু বড়মা এটা জানল কিভাবে? নিজের অপমান, বড়মা’র অপমান ও মানতে পারছেনা।

” মা, আপনি বড়মার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন? বড়মা আপনার কথার উত্তর দিয়েছে শুধুমাত্র। আমি কাউকেই জানাইনি আপুদের বিষয়ে। আর আমি একা একা এই বাসায় আসিনি, আপনারাই আমাকে নিয়ে এসেছেন। সব দেখেশুনে আমাকে এনেও কেন এত কথা উঠছে? ”

” ওহ এখন সব দোষ আমার! তোমার বড়মা আমাকে সেই কখন থেকেই উল্টাপাল্টা কথা বলছে সেটা তোমার কানে যায়নি? তুমি তাকে না বললে সে কিভাবে জানল, মিমি, মারজান এই বাসায় ঘনঘন আসে? এখন ভালো সাজা হচ্ছে? ”

” পেখম আমাকে আপনার মেয়েদের বিষয়ে কিছুই বলেনি। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, দিনে তিন থেকে চারবার পেখমের সাথে আমাদের কথা হয়। বেশিরভাগ সময়ই কথা বলার সময় ওর আশেপাশে আপনার নাতি-নাতনীদের কথা শুনতে পাই। জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারি, আপনার মেয়েরা এসেছে। এখান থেকেই আন্দাজ করে নিয়েছি ওরা বেশিরভাগ সময়ই বাবার বাসায় এসে কাটায়। অযথা পেখমকে দোষী করবেননা। আপনি পুরোটা না শুনে আমার মেয়েটাকে যাচ্ছেতাই বলে অপমান করতে পারেননা। ওর মন কুৎসিত বলার আপনি কে? আপনি কতটুকু চিনেছেন ওকে? আপনার সম্পর্কে গক তিনমাসে পেখমের কাছ থেকে ভালো বৈ খারাপ কিছুই শুনিনি। কিন্তু আজ নিজের চোখে আপনার স্বরূপ দেখলাম। কথাগুলো আমি মৃদুলকে জানিয়েই তবে বাসায় যাব। তারও জানা উচিত, তার মা তার স্ত্রী’র সম্পর্কে কেমন ধারনা পোষণ করে। ”

” শুনুন, আমার ছেলে আপনার কথা বিশ্বাসই করবেনা। আমি আমার ছেলেকে কোন হীন শিক্ষা দিয়ে মানুষ করিনি। সে তার মা’কে সম্মান করতে জানে, সবার সামনে সম্মানিত করতেও জানে। ”

” মৃদুলকে বললেই বুঝতে পারব, সে শুধু মা’কেই সম্মান করে, নাকি বউয়ের জন্যও কিছু সম্মানও তার আছে। ”

পারভীন আক্তার আরও ঘন্টাখানেক পর তার প্রশ্নের উত্তর পাবেন। কিন্তু সেই উত্তরটা তার ধারনারও বাহিরে থাকবে, সেটা তার জানা ছিলনা। তিনি বুঝতেই পারেননি, না জেনে তারা কতবড় ভুল করেছেন। আদরের মেয়েকে হাত-পা বেঁধে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছেন। অথচ মেয়েটা এখনই বিয়ে করতে চায়নি। ও চেয়েছিল, পড়াশোনা শেষ করেই তবে বিয়ে করতে। কিন্তু ওর চাচারা সে কথা মানলোনা।

সেদিনই পারভীন আক্তার পরশের বাসায় গেলেন। পরশকে তিনি সবকিছু খুলে বললেন। ফোন করলেন রাশেদ আর রাকিবকে। তাদেরকে জানালেন সবকিছু। সব শুনে তাদের মাথায় হাত। তারা ভাবতেও পারেননি ভালো করতে গিয়ে তারা দূর্ভাগা মেয়েটার ভাগ্যে নতুনভাবে দুঃখ রোপণ করেছেন৷

***

” ভাবী, আপনি রাজ্যকে একটু বোঝান। ও কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছেনা। ওর বড় মামা একটা মেয়ের বায়োডাটা পাঠিয়েছে ওর বাবার কাছে। মেয়েটা নর্থসাউথের টিচার। পরিবারও ভালো। একটাবার মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করুক। ওর যদি পছন্দ না হয়, তবে সেটা ওদেরকে জানিয়ে দেব। ”

” আমিও রাজ্যকে বিয়ের কথা বলেছি। জিজ্ঞেস করেছি, ওর পছন্দের কেউ আছে কিনা। কিন্তু ও জানালো, বিয়ে করবেনা। কিছুতেই ওকে রাজি করাতে পারলামনা। ”

” ভাবি, আমার ছেলেটার কিছু একটা হয়েছে। ও আগের মত নেই। বদলে গেছে আমার ছেলে। আগের মত আর হাসেনা। ফোন করেনা। আমি ফোন করলে কয়েকটা কথা বলেই রেখে দেয়। সেদিন ভিডিও কলে কথা বললাম। ছেলেটা আমার শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়েছে। যেন কতকাল ঘুমায়না। কি হয়েছে আমার ছেলেটার? কেনইবা ও বিয়ে করতে চাইছেনা? আমাকেও সেদিন বলেছে, ও বিয়েই করবেনা। কেন, ভাবি? মিশুকে জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু ও কিছু বলতে পারলনা। রাজ্য নাকি বাসা পাল্টেছে। মিশুর বাসা থেকে অনেক দূরে বাসা নিয়েছে। আবার মিশুর সাথে আগের মত যোগাযোগও করেনা। ” ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন রাজিয়া পারভীন।

” কাঁদিসনা, রাজিয়া। আমি আজকে রাজ্যের সাথে কথা বলব। ওকে জিজ্ঞেস করব, কি হয়েছে ওর? মিশুর সাথেও কথা বলব। ওকে পাঠাব রাজ্যের কাছে। ”

বড় জা ‘ য়ের শান্তনার বানীও শান্ত করতে পারলনা রাজিয়া পারভীনের মন। ছেলের চিন্তায় উদগ্রীব হয়ে রইলেন তিনি।

***

” তোমার ক্লাস আছে আজকে? ” মৃদুল ঘুম জড়ানো গলায় জিজ্ঞেস করল।

” হুম। রেডি হচ্ছি, ভার্সিটি যাব। ”

” একটা দিন আমি বাসায় আছি, আজকেও তোমাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে? প্রতিদিনই তো ক্লাস কর, একটা দিন না গেলে কি হয়? আজকে নাহয় আমাকে সময় দিলে। ”

” ক্লাস মিস দিতে পারবনা। আর তুমিও জানো, একদিন ক্লাস মিস দিলে কত গ্যাপ পরে। ”

” তুমি আমাকে পড়াশোনা শেখাচ্ছ? ভুলে যেওনা, আমিও এমবিবিএস পাশ করেছি। ”

” ভুলে যাব কেন! খুব ভালো করেই জানি, তুমি খুব ভালো রেজাল্ট করেছিলে। মেডিকেলে পড়ার পুরোটা সময় দুই কি তিনদিন ক্লাস মিস দিয়েছিলে। তা-ও তোমার দাদু আর নানুর মৃত্যুর জন্য। এটা তোমার মা আমাকে বলেছে। আর তোমার মা কখনো মিথ্যা বলেনা এটা আমি তোমার মুখেই শুনেছি। সেই তুমি কেন আমাকে ক্লাস মিস দিতে বলছ, এটাই বোধগম্য হচ্ছেনা! ”

” এত কথা শুনতে চাইনা। তুমি আজ ক্লাসে যাবেনা। আমাকে সময় দেবে, ব্যাস। ”

” প্রতিমাসের প্রতিটা উইকেন্ডই যে তুমি স্ত্রী ছাড়াই বোনদের বাসায় কাটাও, তখন তোমার মনে হয়না আমারও সময় প্রয়োজন? আজ একদিন ছুটিতে আছ তাও আমাকে না জানিয়ে, সেই দোষ কি আমার? তুমি ভালো করেই জানো, আগামীকাল আমার ক্লাস নেই। কালকে তুমি ছুটিটা নিতে পারতে। কিন্তু সেটা না করে আজকে ছুটি কেন নিয়েছ? প্রতিটা সন্তানেরই উচিত বাবা-মা’র কথা শোনা, কিন্তু তাই বলে মা’য়ের কথা শুনে এভাবে হুটহাট ছুটি নিবে আর আমাকেও বাসায় থাকতে বলবে এটা কি করে হয়? ”

” তুমি কি বলতে চাইছ, মা আমাকে ছুটি নিতে উসকেছে? আর আমি তোমার থেকেও আপুদের বেশি প্রাধান্য দেই? ”

” উত্তরগুলো তোমার প্রশ্নের মধ্যেই আছে। ”

” তাহলে তুমি ক্লাসে যাবেই? ভুলে যেওনা তুমি বিবাহিত। আর তোমার সকল খরচ আমিই বহন করছি। তাই না চাইলেও আমার কথা তোমাকে শুনতেই হবে। ”

মৃদুলের কথায় ওর দিকে তাকায় পেখম। মেয়েটার ঠোঁটে ব্যাঙ্গের হাসি।

” ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন, তুমি খরচ না দিলেও আমার নিজের খরচ চালানোর যোগ্যতা আমার আছে। আমি কিন্তু তোমার কাছ থেকে কোন খরচ নিতে চাইনি। বরং তুমি জোর করেই আমাকে নিতে বাধ্য করেছ। ওকে, আজকের পর থেকে তোমার থেকে কোন খরচই নিবনা। বরং তুমি চাইলে, গত কয়েকমাসে যত টাকা আমাকে দিয়েছ সেগুলো ফেরৎ দেব। ”

” তোমার কি মনে হচ্ছেনা, আজকাল তুমি একটু বেশিই কথা বলছ? ”

” তোমরাই বাধ্য করেছ। নয়তো আমি পেখম কখনো কারো মুখে তর্ক করার মেয়ে ছিলামনা। বাই দ্য ওয়ে, তোমার কথা শেষ? তাহলে আমি বেরোতে পারব। ”

মৃদুল কোন কথা বললনা। দাঁত কিড়মিড়িয়ে, রাগী চোখে তাকিয়ে থাকল পেখমের দিকে। পেখম মৃদুলের অগ্নি দৃষ্টি তোয়াক্কা না করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আজকাল এসবে ওর কিছুই যায় আসেনা।

চলবে…