#সায়াহ্নের_প্রেমছন্দ
#পার্ট_২১
জাওয়াদ জামী জামী
” কি বললে তুমি, ঐ মেয়ের এতবড় সাহস, তোমাকে ইনসাল্ট করেছে! সব হয়েছে তোমার আব্বুর জন্য। তার আস্কারা পেয়েই পেখমের এত বাড় বেড়েছে। নইলে ঐ মেয়ের এত সাহস হয় কিভাবে তোমাকে ইনসাল্ট করার? বিয়ের পর যে মাথা তুলে কথা বলতনা, সে আজ তোমাকে যা নয় তাই বলে গালি দিচ্ছে! আসতে দাও তাকে। ”
” তুমি বিশ্বাস করবেনা, আম্মু, সে আমাকে জুতো দিয়ে মারতে চেয়েছে। তোমাকে নিয়েও কটুকথা বলেছে। ”
” ওর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। কে, কাকে জুতো মারে সেটা একটু পরই দেখতে পাবে। তোমাকে সহজ-সরল মানুষ পেয়ে ও যাচ্ছেতাই বলছে? বলাচ্ছি ওকে। ”
” আব্বুর কথা রাখতে গিয়ে আমার এই হাল হয়েছে, আম্মু। সে যদি মিমোকে পছন্দ করত, তবে ঐ ব্যাকডেটেড মেয়েকে আমার বিয়ে করতে হয়! মিমোকে আমি কিভাবে সামলাচ্ছি সেটা শুধু আমিই জানি। মেয়েটা কত কষ্ট পাচ্ছে সে সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই তোমাদের। শুধুমাত্র আব্বুর জিদের কারনে আজ আমরা দু’জন পৃথিবীর দু-প্রান্তে থাকছি। আমি একটা কথাই ভেবে পাইনা, আব্বু না-হয় জিদ করেছিল, কিন্তু তুমি? তুমি কেন আব্বুর কথায় নাচতে বলেছিলে আমাকে? তুমি না বললে, আমি কিছুতেই ঐ কালো মেয়েকে বিয়ে করতামনা। ”
” আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্যই করেছি, বেটা। তোমার আব্বুর কথায় রাজি না হলে, সে তোমাকে ত্যাজ্যপুত্র করত। তুমি তার বিশাল প্রপার্টির কিছুই পেতেনা। তোমার পক্ষ নেয়ায় আমাকেও বঞ্চিত করত সে। আমি ভেবেছিলাম বিয়ের পর তোমার বউকে সব আত্নীয় স্বজনদের সামনে নানান উছিলায় ছোট করব, তাকে তোমার আব্বুর চোখে খারাপ বানাব। কিন্তু তার আগেই মেয়েটা কিভাবে যেন তোমার আব্বুকে হাতের মুঠোয় নিয়েছে। তার কোন দোষই তোমার আব্বুর চোখে ধরা পরেনা। তবে আজ আমি একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়ব। ”
” মা-ছেলে মিলে কি গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছ? আমাকেও তোমাদের আলোচনায় সামিল কর, আমিও শুনি তোমাদের আলোচনা। ”
হঠাৎই ড্রইংরুমে আসলেন মিনহাজ রহমান। তাকে আসতে দেখে মা-ছেলে দু’জনই চমকে উঠল। মৃদুল মা’য়ের দিকে তাকিয়ে ইশারায় কিছু একটা বলল।
” গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছিনা। আমরা তোমার আদরের বউমাকে নিয়ে কথা বলছি। কিভাবে সে আমার ছেলের জীবন তেজপাতা বানাচ্ছে সেই কথাই শুনছি। ”
” কাজ না থাকলে এসবইতো করবে। তোমার হাতে অফুরন্ত সময়। কিছুনা কিছু করে সেই সময়ের ব্যয় তো করতেই হবে। আর আমার আদরের বউমা অন্যের জীবনকে সুবাসিত করতে পারে, তেজপাতা নয়। যে ব্যক্তি নিজেই শুকনো তেজপাতা, তার জীবনকে আর নতুনকরে কিভাবে তেজপাতা করে সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছেনা। তোমার ছেলের সৌভাগ্য তার মত বানরের গলায় মুক্তোর মালা জুটেছে। বউমার জায়গায় অন্য কোন মেয়ে থাকলে, তোমার সুপুত্রকে হাতে হাতকড়া পরিয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করত। আগে নিজের ঘর সামলাও, নিজের ছেলেকে সঠিক পথে নিয়ে এস, পরে অন্যের মেয়ের ব্যাপারে কথা বল। ”
মিনহাজ রহমানের কথায় মা-ছেলে দু’জনই চুপ মেরে গেল। মৃদুল ভয় পেয়েছে বাবা’র কথার ধরনে। ওর ধারনা বাবা কিছু বুঝতে পেরেছে। নয়তো এমন কথা বলতনা।
” বাবা, আজ এত তাড়াতাড়ি নিচে এসেছেন যে! রাতে ঘুম হয়েছিল ঠিকঠাক? ” পেখম নিচে এসে শ্বশুরকে দেখে জিজ্ঞেস করল।
” ঘুমও হয়েছে আবার জগিংও করে এসেছি। এখন থেকে আর ফজরের নামাজের পর ঘুমাবনা। আধাঘন্টা-একঘন্টা হাঁটব। বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দেব। এরপর বাসায় আসব। তুমি নাস্তা রেডি করে রাখবে, আমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে সোজা অফিসে দৌড় দেব। রুটিনটা কেমন হবে বল? ”
” খুব ভালো হবে। ” পেখম কথার মাঝেই লক্ষ্য করল মৃদুল আর ওর মা মুখ কালো করে বসে আছে। ওর বুঝতে বাকি রইলনা কিছু। তবে পেখম সেসবে মাথা ঘামালনা। ওর আর কোন পিছুটান নেই, নেই আপনজনরূপী বেইমানদের জন্য মনের কোনে কোন ভালোবাসা। ও ভিষণভাবে ঠকেছে। জীবন প্রতিটি পদক্ষেপে ওকে বাঁধা দিচ্ছে সামনে এগোতে। কিন্তু পেখম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কোন বাঁধাই ওকে আটকে রাখতে পারবেনা।
সবাই ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলে পেখম একে একে সবাইকে খাবার পরিবেশন করতে যায়। মিনহাজ রহমানের প্লেটে খাবার দিয়ে, আইভি রহমানের প্লেটে খাবার দিতে গেলেই তিনি প্লেট সরিয়ে নিলেন। পেখম কিছু না বলে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
” অনেক দয়া করেছ, আর করতে হবেনা। আড়ালে আমাদের অপমান করে, এখন শ্বশুরের সামনে সাধু সাজতে এসেছ ? বহুরূপী মেয়ে। ”
” সাধু সাজার ইচ্ছে আমার মোটেও নেই। আর কাউকে আমি অপমানও করিনি। যেটা সত্যি সেটাই বলেছি। আপনার ছেলে দিনের পর দিন আমাকে ঠকিয়ে যাচ্ছে, আমি তার প্রতিবাদ করেছি মাত্র। আর তাতেই আমি বহুরূপী হয়ে গেলাম? আমি এতদিন চুপচাপ সহ্য করেছি, আপনি আমার জায়গায় থাকলে কি করতেন ভেবে দেখেছেন? ”
” খবরদার আমার ছেলের নামে মিথ্যা অপবাদ দেবেনা। কি করেছে আমার ছেলে? নিজেকে আমার ছেলের যোগ্য করতে পারনি বলে তোমার আক্ষেপ হয় সেটা আমি জানি। নেহাৎ মৃদুল ভদ্র ছেলে তাই তোমার অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করছে। নইলে তুমি ওকে জুতা মারতে চাওয়ার পরও, ও কিভাবে চুপ থাকে সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছেনা। তবে ও চুপ থাকলে কি হবে, আমি কিন্তু ঠিকই তোমাকে শাস্তি দেব। ”
” এ কি শুনছি আমি, বউমা! তুমি তোমার শ্বাশুড়ির ছেলেকে জুতা মারতে চেয়েছ! আর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার গোপন সেই কথাটা মাম্মাস বয় আবার পাব্লিক করে দিয়েছে! তুমি স্বার্থক, আইভি। সত্যিকার অর্থেই তোমার ডক্টর ছোট ছেলে মাম্মাস বয়। ছোটবেলা থেকেই তাকে তুমি মেরুদণ্ডহীন করে গড়ে তুলেছ। আমার ভয় হয় এই মেরুদণ্ডহীন ছেলেটাই না একদিন তোমার ঘাড়ে চেপে বসে। আমার বিশ্বাস একে নিয়ে ভবিষ্যতে তোমাকে ভুগতে হবে। ”
” সাট-আপ, মিনহাজ। বাহিরের একটা মেয়ের সামনে এভাবে আমাদের ইনসাল্ট করতে পারোনা। এখন আমাদের থেকে এই দুইদিনের মেয়েই তোমার আপন হয়ে গেল? মনে রেখ, পরিবারের লোকজনের মত আপন দুনিয়ায় কেউ নেই। ”
” যাকে তুমি বাহিরের মেয়ে বলছ, সে তোমার ছোট ছেলের স্ত্রী। তোমরা মানো আর না মানো সে-ও এই পরিবারেরই একজন। আমার মনে হয় এই পরিবারের মধ্যে এই মেয়েটাই আমাকে বেশি সম্মান করে, বেশি ভালোবাসে। তাই এই মেয়েটাই আমার একমাত্র আপনজন বলে আমি মনে করি। তাই যেকোন পরিস্থিতিতে আমি এই মেয়েটাকেই সাপোর্ট দেব। ”
পেখম চুপচাপ শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কথা শুনছে। মৃদুলের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখল, সে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তবে পেখম সেই দৃষ্টিকে পাত্তা দিলনা। কথা যখন উঠেছে, আজ এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে।
” আমার ভাবতেই অবাক লাগছে, একজন বাবা হয়ে তুমি কিভাবে এমন কথা বলতে পারলে! আমি প্রথম থেকেই এই বিয়েতে খুশি হতে পারিনি। কিন্তু তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে, তোমার সম্মানের কথা চিন্তা করে হাসিমুখে সবকিছু মেনে নিয়েছি। আজ সেই তুমি এই অযোগ্য মেয়ের জন্য আমাদের কথা শোনাচ্ছ? ”
” তুমি আমার জন্য হাসিমুখে সবটা মেনে নাওনি। যা করেছ নিজের স্বার্থের জন্য করেছ। আমাকে মুখ খুলিওনা। তাহলে এমন সব তিক্ত কথা বেরিয়ে আসবে, যেটা তোমার অপছন্দ হবে এটা আমি নিশ্চিত। ”
এবার আর পেখম চুপ থাকতে পারলনা। বড়দের কথার মাঝে কথা বলল। যেটা ওর ধাতে নেই। ও নিজের পরিবার থেকে এই শিক্ষা পায়নি। তবে আজ ও নিরুপায়।
” বাবা, প্লিজ আমার জন্য নিজেদের মধ্যে অশান্তি করবেননা। আমার নিজের লড়াই আমাকে লড়তে দিন। আমি যেহেতু ইনাদের কাছে বাহিরের একজন মেয়ে, সেহেতু আমিও ইনাদের বাহিরের আত্নীয়-স্বজনদের মতই ট্রিট করব। ইনারা যেটা চান, সেটাই আমি দেয়ার চেষ্টা করব। একজন মা হয়ে যদি তিনি তার দুশ্চরিত্র ছেলের পক্ষে কথা বলেন, তবে আমিও তার যথোপযুক্ত জবাব দেব। প্রয়োজনে যথাযথ পদক্ষেপও নিব। ”
” এই মেয়ে, বড় বড় কথা বলোনা। থাপ্পড় মেরে তোমার দাঁত ফেলে দেব। আমার ছেলেকে দুশ্চরিত্র বলছ কোন সাহসে? গতরাতে যে অপরাধ করেছ, তারপরও তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছ, এটা তোমার সাত পুরুষের ভাগ্য। নয়তো তোমার মত মেয়েকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে আমার দুই মিনিটও লাগবেনা। ”
” আমাকে এতটাও অবলা ভাববেননা। কিংবা আমার পরিবারকে সামান্যতম অবহেলাও করবেননা। তারা আপনার কি করতে পারে, সেই সম্পর্কে কোন ধারনাও নেই আপনার। তাই যা করার ভেবেচিন্তে করবেন। গতরাতে আপনার ছেলেকে কথাগুলো বলার পর আমার একটু খারাপ লাগছিল। তবে এই মুহূর্তে আপনার কথাগুলো শুনে, সেই খারাপ লাগাটা উবে গেছে। এখন আফসোস হচ্ছে, কেন রাতে আপনার ছেলের গালে জুতোর বারিটা কেন দিলামনা। এরপর থেকে সেই ভুলটা আর করবনা। আপনার ছেলের কোন অন্যায় দেখলে, কষে থাপ্পড় মারব। কথাটা আপনার ছেলেকে ভালো করে মনে রাখতে বলবেন। ”
” শুনলে তুমি, তোমার সামনে তোমার ছেলেকে জুতো মারতে চাইছে? এবার এই অসভ্য মেয়েকে তুমি কি বলবে? এখনও তুমি একে সুশীলা, সভ্য বলতে চাও? ”
” অবশ্যই বউমাকে আমি এখনো সভ্য, সুশীলা বলতে চাই। সে তো ভুল কিছু বলেনি। একজন দুশ্চরিত্র ছেলেকে মে দুশ্চরিত্র বলার সাহস করেছে। আর সেই ছেলেটা তার হাজবেন্ড। আর একজন স্ত্রী’ই ভালো জানে তার হাজবেন্ডের স্বভাবচরিত্র সম্পর্কে। তুমি মা হয়ে দু’জনের মাঝে কথা বলতে এসোনা। এটা তোমার জন্যই মঙ্গলজনক। বউমা, এদের বোধহয় আজ খাওয়া হবেনা। তুমি আমার সাথে বসে খেয়ে নাও। ”
” বাহ্ আব্বু, বাহ্। নিজের ছেলের অপমান তুমি এত সহজে মেনে নিলে! প্রতিবাদ না করে উল্টো ওর পক্ষে সাফাই গাইছ! আমি না তোমার ছেলে? তোমার এই পক্ষপাতি মনোভাব আমাকে হতাশ করেছে। ”
” সাট-আপ, স্টুপিড ছেলে। তুমি ছেলে জন্যই আমার এত দুশ্চিন্তা। মাথায় সামান্য ঘিলু থাকলে কথাগুলো বলতে পারতেনা। তোমার বোঝা উচিত একজন বাবা কখন তার সন্তানের বিপক্ষে যায়। মা’য়ের আঁচলের তলায় থেকে বড় হয়েছ, এসব আর বুঝবে কিভাবে! তার আঁচলের তলা থেকে বেরিয়ে এসে দেখ, তার শিক্ষায় কত গলদ আছে। সে তোমাকে পুঁথিগত বিদ্যা গিলিয়েছে। সামাজিক মূল্যবোধ শেখায়নি। শেখায়নি মানুষকে কিভাবে মূল্যায়ন করতে হয়, কিভাবে অন্যকে সম্মান করতে হয়। দুনিয়ায় অর্থ-বিত্তই মানুষকে মূল্যায়নের মাপকাঠি নয়, এটা আগে তোমাকে বুঝতে হবে। তবেই তুমি যেমন অন্যকে সম্মান করতে পারবে, তেমনি অন্যরাও তোমাকে সম্মান করবে। ”
” এখন আমিই খারাপ? তোমরা সবাই ধোয়া তুলসীপাতা? আমিই আমার ছেলেকে খারাপ বানিয়েছি, এই অপবাদও আমাকে শুনতে হচ্ছে! সব হয়েছে এই মেয়ের জন্য। এই…. ” কথা শেষ করতে পারলেননা গর্জে উঠলেন মিনহাজ রহমান।
” তুমি যদি এই মুহূর্তে চুপ না কর, তবে ঠাঁটিয়ে থাপ্পড় মারব তোমাকে। তুমি নিজেও যেমন বেয়াদব, ছেলেকেও বানিয়েছ তেমন বেয়াদব। পেখমের দোষে নাহয় তোমাকে কথা শোনাচ্ছি, তোমার ছোট ছেলেকে শাসন করছি। কিন্তু তোমার বড় ছেলের বেলায় কি বলবে? সে তো বিয়ের আগেই এই বাড়ি ছেড়েছে। কাকে দোষারোপ করবে তুমি? চিরটাকাল নিজের বাবা-মা, ভাইবোন বলতে পাগল ছিলে, এখনো আছ। আমার পরিবারের কাউকেই মানুষ বলে গন্য করোনি। তোমার সেই আচরণই মিথুনকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছিল। যেই বয়সে একটা ছেলের তার পরিবারকে প্রয়োজন, সেই বয়সে আমার ছেলে একা একা হোস্টেলে থেকেছে। আজও সে এই বাড়িতে এসে একটা রাত কাটায়না। তোমার লজ্জা লাগেনা? মিথুনের জন্য একটুও মায়া হয়না? কেমন মা তুমি? আজ থেকে পেখম-মৃদুলের বিষয়ে নাক গলাবেনা। এরপরও যদি তোমাকে ওদের বিষয়ে কথা বলতে শুনি, তবে সেদিনই হবে এই বাড়িতে তোমার শেষ দিন। আর মৃদুল, তুমিও কান খুলে শুনে রাখ, পেখম তোমার স্ত্রী। তার কোন অসম্মান আমি মেনে নেবনা। আমি নিজে তাকে পছন্দ করে এই বাড়িতে এনেছি। তাই তার প্রতি আলাদা দ্বায়িত্ব আমার থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সময় থাকতে নিজের চরিত্র ঠিক কর। নয়তো ভবিষ্যতে বউমা তোমার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিলে, আমি তার পক্ষেই কথা বলব। ”
মিনহাজ রহমানের প্রচ্ছন্ন হুমকিতে একটু ভয়ই পায় মৃদুল। সবকিছু যে ওর হাত থেকে বেরিয়ে গেছে, এটা বুঝতে ওর বাকি নেই।
পেখম শ্বশুরের দিকে শ্রদ্ধাভরে তাকিয়ে আছে। ছোটবেলা থেকেই বাবাকে কাছে পায়নি। চাচারাই ওকে বাবার আদর দিয়ে এসেছেন এতটা কাল। এই মানুষটিও গত কয়েক মাসে একবারের জন্যও বুঝতে দেননি তিনি পেখমের শ্বশুর। তিনি পেখমের মাথার ওপর বটগাছের ন্যায় ছায়া দিচ্ছেন। বাবার ভালোবাসা দিচ্ছেন অবিরত। মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় আরেকবার সিক্ত হল পেখমের হিয়া। অশ্রুসিক্ত হল দু নয়ন।
চলবে…
#সায়াহ্নের_প্রেমছন্দ
#পার্ট_২২
জাওয়াদ জামী জামী
” রাজ্য, তুই এসেছিস বাপ! তোর মুখটা এমন শুকিয়ে গেছে কেন? তুই সুস্থ আছিসতো, বাবা? ” রাজিয়া পারভীন ছেলেকে দেখে অবাক হয়ে গেলেন। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে তিনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।
মা’কে কাঁদতে দেখে রাজ্যের চোখেও পানি আসল। সে-ও দু’হাতে জড়িয়ে ধরল মা’কে।
” আমি ভালো আছি, মা। অনেকদিন পর দেখছ জন্য তোমার মনে হচ্ছে আমি শুকিয়ে গেছি। চোখ মোছ, দেখ কাকে এনেছি। ”
ছেলের কথায় চোখ মুছলেন রাজিয়া পারভীন। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন ছেলের দিকে। রাজ্য ঈশারায় তাকে পেছনে দেখাল। রাজ্যের পেছনে লম্বাচওড়া, সুঠাম দেহী রাজ্যেরই বয়সী একটা ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কোঁচকালেন তিনি। একে তিনি রাজ্যের সাথে কয়েকটা ছবিতে দেখেছেন। তবে এই মুহূর্তে তিনি তার নাম মনে করতে পারলেননা। তিনি রাজ্যকে ছেড়ে এগিয়ে গেলেন ছেলটার দিকে। ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে আছে। তবে তার দাঁড়ানোর মধ্যে জড়তা স্পষ্ট।
” তোমাকে আমি চিনেছি। কিন্তু এই মুহূর্তে নাম মনে করতে পারছিনা। ” রাজিয়া পারভীন হাত রাখলেন ছেলেটার গালে।
” আমি অরবিন্দ। ” অনেক বছর পর মাতৃসমা কারো স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠল অরবিন্দ। কতদিন সে মা’য়ের স্নেহের পরশ থেকে বঞ্চিত।
” তুমি আমার ছেলের, অরু? রাজ্য, তুই আমার ছেলেকে আনবি, আমাকে আগে জানাবিনা? ”
অরবিন্দ অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকল রাজিয়া পারভীনের দিকে। ও এই মমতাময়ীকে দেখে অবাক হয়েছে বেশ। যাকে প্রথমবার দেখেই তিনি ছেলের আসলে বসালেন! এক অত্যাশ্চর্য রমনীকে দেখে অভিভূত হলো অরবিন্দ। এ-ও কি সম্ভব!
” কি রে অরু, তুই আমার মা’কে প্রনাম করলিনা যে? বেয়াদব পোলা, আমার সম্মান খেয়ে দিলি তুই। ”
রাজ্যের কথায় একটু লজ্জা পায় অরবিন্দ। ও লাজুক হেসে নিচু হয়ে প্রনাম করতে গেল রাজিয়া পারভীনকে। কিন্তু তার আগেই রাজিয়া পারভীন তাকে থামিয়ে দিলেন।
” তুমিও ওর কথায় নাচছ! ও একটা পাজি ছেলে তুমি জানোনা? ”
” গুরুজনকে আমরা প্রনাম করি, মাসিমা। আপনিও আমার গুরুজন। ”
” আমাদের ধর্মে প্রনাম করতে নেই, বাবা। আর তুমি আমাকে মাসিমা বলছ কেন? আমি তোমার মা, বুঝলে? মা বলে ডেক আমাকে। ”
অরবিন্দ এবার সত্যি কেঁদে ফেলল। এই মমতাময়ীকে মা ডাকতে তার কোন আপত্তি নেই।
অরবিন্দকে কাঁদতে দেখে রাজিয়া পারভীন তড়িঘড়ি করে ওর চোখ মুছিয়ে দিলেন।
” একি রে অরু, তুই মেয়েদের মত কাঁদছিস কেন! মা, তুমি একে ভেতরে নিয়ে যাও। ওর নাকি ক্ষুধা লেগেছে। পুরো রাস্তায় ক্ষুধা লেগেছে, ক্ষুধা লেগেছে করে আমার মাথা খেয়েছে। কি রান্না করেছ আজ? ” রাজ্য অরবিন্দকে স্বাভাবিক করতে কথাগুলো বলল।
” তুই আমার ছেলেটাকে রাস্তায় কিছু খাওয়াসনি? তুই যা এখান থেকে। এস, বাবা। আজকে হাঁসের মাংস, রুই মাছ আর পাবদামাছ রান্না করেছি। তুমি এগুলো খাওতো? ”
” আমি সব খাই, মা। ”
অরবিন্দের মুখে ‘ মা ‘ ডাক শুনে খুব খুশি হলেন রাজিয়া পারভীন।
রাজ্য বাড়িতে ঢুকেই দাদিমার রুমে গেল। দাদুর মৃত্যুর পর দাদিমা বেশ অসুস্থ হয়ে গেছেন। তিনি বেশিরভাগ সময়ই বিছানায় শুয়ে কাটান। রাজ্যকে দেখে বৃদ্ধা উঠে বসার বৃথা চেষ্টা করলেন। রাজ্য দাদিমাকে সযতনে তুলে বসাল। বৃদ্ধা নাতিকে কাছে পেয়েই হু হু করে কেঁদে উঠলেন। দাদিমাকে কাঁদতে দেখে রাজ্যও কেঁদে ফেলল। পাশে দাঁড়িয়ে অরবিন্দ মলিন চোখে দেখছে আপনজনদের মিলন।
***
” বড় বউমা, দাদাবাবু বাড়িতে আছে? ” প্রতিবেশি নিতাই রায় এসে দাঁড়িয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের বাড়ির দরজায়।
পারভীন আক্তার নিতাই রায়কে দেখে এগিয়ে আসলেন।
” ভেতরে আসুন, কাকা বাবু। আপনি বসুন, আমি আব্বাকে ডেকে আনছি। ” বৈঠকখানায় চেয়ার দেখিয়ে, পারভীন আক্তার শ্বশুরকে ডাকতে গেলেন।
কিছুক্ষণ পর সৈয়দ শামসুল হক আসলেন বৈঠকখানায়।
” নিতাই, কি মনে করে এসেছিস? তুই তো আজকাল এদিকে আসিসনা। ”
” আমার কোথাও যাওয়ার সময় আছে, দাদাবাবু? দিনরাত হাড়ভাঙা খাটুনির পর বাড়িতে আসলে আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করেনা। ”
” তোর বাড়ির লোকজন কেমন আছে? প্রনবের মা ভালো আছে? তোর নাতিনাতনিরা কেমন আছে? ”
” আজ্ঞে দাদাবাবু, সবাই ভালো আছে। তবে প্রনবের মা মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে যায়। বাতের ব্যথায় দুনিয়া অন্ধকার দেখে। কম খাটুনি তো খাটেনি জীবনে। পরিশ্রম অনুযায়ী ঠিকমত খাবার জোটেনি ভাগ্যে। সবই তো আপনি জানেন। আপনারা না থাকলে কবেই সব ছেড়ে ছুড়ে এদেশের পাততাড়ি গোটাতে হত। ”
” প্রনব এখন কি করছে? সে-ও তো এদিকে আসেনা। সংসার কিভাবে চলছে ওর? প্রনয়া কি করছে আজকাল? মা হারা মেয়েটাকে দেখলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। ”
প্রনব নিতাই রায়ের বড় ছেলে। প্রনবের মেয়ে প্রনয়া। প্রনয়াকে এ বাড়ির সবাই খুব ভালোবাসে। মেয়েটা ছোটবেলায় মা’কে হারিয়েছে। সেজন্যই তার আলাদা আদর রয়েছে এ বাড়িতে।
” প্রনব শহরের একটা দোকানে কাজ করছে। যা পায় তাতেই কোনমতে দিনকাল চলছে। আমি আজকে প্রনয়াকে নিয়ে কথা কইতেই এসেছি, দাদাবাবু। ওর বিয়ে ঠিক হইছে। বয়সতো কম হইলনা। আর কতদিন ঘরে রাখব ওরে। ”
” তাই নাকি! খুবই ভালো করেছিস। কোথায় ঠিক করেছিস? জামাই কি করে? বিয়ে কবে? ”
” কার্তিক মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার। ফুলবাড়ির মধুকর বিশ্বাসের ছেলে বিধান বিশ্বাস। ছেলে গ্রামের প্রাইমারী ইস্কুলে মাস্টার। ”
” তারা কিছু চেয়েছে? ”
” হুম, দাদাবাবু। দশ লাখ টাকা আর চার ভরি সোনা দিতে হবে। বরযাত্রী আসব আশি জন। ”
” কত টাকা জোগাড় করতে পেরেছিস? ”
” সব মিলিয়ে সাত লাখ হইছে। প্রনবের মা’য়ের কিছু গয়না আছে, প্রনয়ার মা’য়ের কিছু গয়না আছে। সব মিলায় চার ভরি হবে। ”
” তারমানে যৌতুকের তিন লক্ষ টাকা এখনো জোগাড় হয়নি? আবার বরযাত্রীদেরও আপ্যায়ন করতে হবে, এছাড়াও তোদের আত্নীয় স্বজনরাও আছে। এসবেও প্রায় লাখখানেক টাকা লাগবে? ”
” বিয়ের আগেই সব টাকার জোগাড় করব, দাদাবাবু। আমি আইছি আপনাদের দাওয়াত করতে। আপনি বাড়ির সবাইকে নিয়া যাবেন৷ প্রনয়ারে আশির্বাদ করে আসবেন। হতভাগীডা জীবনেতো সুখ পাইলনা। আশির্বাদ কইরেন, এইবার যেন সুখী হইতে পারে। ”
” তুই না বললেও প্রনয়াকে আমরা সবাই দোয়া করব। শোন নিতাই, আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেব, তুই বরযাত্রীদের আপ্যায়নের জন্য বাজার করিস। এখনতো বাড়িতে রাকিব, রাশেদ কেউই নেই। ওদের সাথে কথা বলি। আমার বিশ্বাস ওরা শুনলেই টাকা পাঠাবে। তুই চিন্তা করিসনা, দেখবি প্রনয়ার বিয়ে খুব ভালোভাবেই হবে। ”
সৈয়দ শামসুল হকের কথা শুনে কেঁদে উঠল নিতাই রায়। সে জানত তার দাদাবাবু তাকে খালি হাতে ফেরাবেনা।
” সবই ভগবানের কৃপা। নইলে আমার মত গরীব চাষাকে আপনার মত মানুষ নিজের বাড়িতে পা রাখতে দেন। বিপদেআপদে আমাদের সাহায্য করেন। আমি যাই প্রনবের মা’কে খুশির খবর দিয়া আসি। সে কয়দিন ধইরা চিন্তায় খাওয়াদাওয়া ছাইড়া দিছে। ”
” এভাবে বলিসনা। তুই একটু বোস, আমি বড় বউমাকে খাবার দিতে বলি। আর কখন কি লাগবে আমাকে বলবি। লজ্জা করবিনা। ”
***
সেদিন রাতেই কানন রাজ্যের দেশে আসার খবর শুনে গ্রামে আসল। আর কানন গ্রামে এসেছে শুনে ঋতও বাবার কাছে বায়না ধরল গ্রামে যাওয়ার। ঋতের সাথে সুর মেলাল রাত। কিন্তু মেহনাজ কিছুতেই গ্রামে যাবেনা। তবে তার জিদ রাকিব আহমেদের জিদের কাছে কিছুই নয়। একগুঁয়ে রাকিব আহমেদ সাফ জানিয়ে দিলেন, তারা গ্রামে যাচ্ছেন। আগামীকাল সকালেই তারা গ্রামে যাবেন।
***
” ভাইয়া, কেমন আছ তুমি? আগের মত আর ফোন দাওনা, আমরা ফোন দিলে রিসিভ করোনা। তোমার জন্য খুব চিন্তা হয় জানো? ” কানন উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইল।
” ব্যস্ত থাকি তাই কারও সাথে কথা বলতে পারিনা। তুই কেমন আছিস বল? তোর সেই পাকনা প্রেমিকার খবর কি? ”
” তুমি বদলে গেছ, ভাইয়া। অথচ আমি সেই আহের ভাইয়াকেই ফিরে পেতে চাই। ”
” এসব কথা বাদ দে। অরবিন্দের সাথে পরিচিত হয়েছিস? না হয়ে থাকলে চল, ওর সাথে পরিচিত হবি। ”
” হুম চল। ” কানন আর কিছুই বললনা। তবে ও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল রাজ্যকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনবে।
***
ভাইয়া দেশে এসেছে জন্য নাবিলা ভিষণ খুশি। ও রাজ্যের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। ওর সাথে খুনসুটি করছে। রাজ্য ওর জন্য আলাদাভাবে ন্যাপসাক এনেছে। সেটা পেয়ে সে আহ্লাদে আটখানা হয়েছে। তবে অরবিন্দের আশেপাশে খুব একটা ঘেঁষছেনা। একটু লজ্জা পাচ্ছে। যদিও অরবিন্দ ওরও শপিং করেছে এবং সেটা নাবিলাকে দিয়েছে। এটা নিয়ে কানন নাবিলাকে খোঁচাচ্ছে। এসব দেখে অরবিন্দ হাসছে। এদের বন্ধন খুব দৃঢ় এটাও বুঝে গেছে এরইমধ্যে। অনেকদিন পর এমন একটা পরিবার দেখে অরবিন্দের বেশ ভালো লাগছে।
” ভাইয়া, আজ রাতে পিকনিক করলে কেমন হয় বলতো? ” নাবিলা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাজ্যের দিকে।
একটামাত্র বোনের অনুরোধ ফেলার সাধ্য নেই রাজ্যের।
” মন্দ হয়না। তুই লিষ্ট কর কি কি আইটেম থাকবে। আমরা গিয়ে বাজার করব। ”
” ডুড, তোর বোন কিভাবে তোকে রিকুয়েষ্ট করল, ওর চোখেই পরছেনা আমি আরেকটা ভাইও এখানে আছি। মনে হয় ও আমাকে নিজের ভাই মনেই করেনা। ” মন খারাপ করে বলল অরবিন্দ।
অরবিন্দের অভিযোগ শুনে মাথা নিচু করল নাবিলা। সত্যিই কিন্তু ও অরবিন্দের সাথে কোন কথাই বলছেনা।
” কি রে নাবিলা, এসব কি শুনছি? তুই কি জানিস অরবিন্দের মান্থলি ইনকাম কত? জানলে আমার মত ফকিরের পিকনিক করার প্রস্তাব দিতিনা। ওকেও নিজের ভাই ভেবে বাজারের ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দে। এবং সেটা মন থেকে করবি, বুঝলি? বেশি বেশি করে ওর পকেট ফাঁকা করার উপায় বের কর। আমি চাইলে ও একটা টাকাও বের করবেনা। কিন্তু ছোট বোন মানে তুই চাইলে বেটা না করবেনা। তোর এই ভাইটি চরম সেয়ানা বুঝেছিস? ”
নাবিলা রাজ্যের কথা শুনে বুঝল ভাইয়াও চায় অরবিন্দকে ভাইয়া বলে ডাকুক। ওর সাথে কথা বলুক। ভাইয়া পাগলী মেয়েটা ভাইয়ার খুশির জন্য সবকিছুই করতে পারে।
” তুমিও যাবে দাদা ভাই, বাজার করতে? রাজ্য ভাইয়া কিন্তু সবজি চেনেনা, মাছ কিনলে পঁচা মাছ বৈ ভালো কিছুই আসবেনা। আর কানন ভাইয়ার কথা না-ই বলি। তার শুধু চাপার জোর আছে। ”
” ঐ বুঁচি, আমার নামে দূর্নাম করবিনা বলে দিলাম। আমি আজ নিজের হাতে সব বাজার করে তোকে দেখিয়ে দেব, এই কানন কি পারে। ”
” থাক ভাই, তোর আর কিছুই করতে হবেনা। আমার বোন আমাকে বলেছে, তাই আমিই সব বাজার করব। বলতো বুনু তুই কি খাবি? আজ তোর পছন্দের সব বাজার করব। রাজ্য তুই আর কানন শুধু দেখবি, আমি কেমন বাজার করি। ”
” তুমি দাঁড়াও, দাদা ভাই, আমি লিষ্ট করে আনছি। ” নাবিলা দৌড়ে রুমে যায় লিষ্ট করতে।
” কানন, কে এসেছিল বড় চাচার সাথে দেখা করতে? একটু আগে দেখলাম বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে। ”
” ঐ পাড়ার নিতাই দাদু। তার নাতনীর বিয়েতে আমাদের ইনভাইট করতে এসেছিল। প্রনয়া দি’র বিয়ে। তার মা নেই। সৎমা ভিষণ অত্যাচার করে দি’কে। দি মাস্টার্স শেষ করে গ্রামের একটা কিন্ডারগার্টেনে পড়ায়। দি ভিষণ ভালো। ”
” যাবি নাকি বিয়েতে? ”
” সেটা দাদিমা জানে। ”
” আচ্ছা আমি দাদিমার সাথে কথা বলব। ”
” নাবিলা লিষ্ট করুক, ততক্ষণ চল আমরা বাহিরে গিয়ে বসি। গ্রামটা আজকেই ঘুরে দেখাবি আমাকে। ”
” চল, যাই। ”
তিনজনই বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে।
চলবে…