সায়াহ্নের প্রেমছন্দ পর্ব-০৩

0
1238

#সায়াহ্নের_প্রেমছন্দ
#পার্ট_৩
জাওয়াদ জামী জামী

” আসব, দাদু? ”

নাতনীর গলা পেয়ে সৈয়দ শামসুল হক মুখ তুলে চাইলেন। তিনি বিছানায় শুয়ে অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন। মীর রেজাউল করিমের পরিবারের সাথে তার পরিবারের সম্পর্ক চিরতরে ঘুচেছে, এটা তাকে পোড়াচ্ছে।

” এস, পরী বুবু। ”

সৈয়দ শামসুল হক পেখমকে ছোটবেলা থেকেই পরী বুবু ডাকেন। তার সব নাতি-নাতনিদের মধ্যে এই মেয়েটার গায়ের রং বেশ চাপা। কিন্তু ওর চেহারার মায়াবীভাব সকলেরই নজর কাড়ে। ছোটবেলায় অনেকেই পেখমকে কালো বলে খেপাত। তাই নাতনী যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য সৈয়দ শামসুল হক পেখমকে ‘ পরী ‘ নামে ডাকতেন। তিনি সব সময়ই পেখমকে বুঝিয়েছেন, গায়ের রং মানুষের জন্য সবকিছু নয়। একজন মানুষ তার আচার-আচরণ, বিচার-বিবেচনা আর ক্ষুরধার বুদ্ধির দ্বারা নিজেকে মেলে ধরতে পারে। নিজেকে সাফল্যের সর্ব্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে যেতে পারে। পেখমও দাদুর উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করে।

পেখম গুটি গুটি পায়ে দাদুর কাছে এসে বসল৷ হাত রাখল দাদুর মাথায়। এ কয়দিনে দাদু বেশ রোগা হয়ে গেছে। সারাক্ষণ নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখছেন।

” তোমার শরীর ঠিক আছে, দাদু? ভোরে নাকি হাঁটতে যাচ্ছনা? ”

সৈয়দ শামসুল হক অশ্রুসিক্ত নয়নে চাইলেন নাতনীর দিকে। তিনি নাতনীর প্রশ্নের উত্তরের ধারেকাছেও গেলেননা। পাল্টা প্রশ্ন করলেন,

” তুমি কি আমার ওপর রেগে আছ, পরী বুবু? ”

দাদুর প্রশ্নে চমকায় পেখম। মলিন হেসে তাকায় দাদুর দিকে৷

” আমার ভেতরের রাগ, অভিমান সেই কবেই জলাঞ্জলী দিয়েছি, দাদু। শৈশব, কৈশোর আমার কেটেছে নিজেকে পরিনত করতে করতে। এটা আর কেউ না জানলে তুমি কিন্তু ভালোভাবেই জান। তারপরও কেন জিজ্ঞেস করছ! ”

” আমি জানি, সবটাই জানি, পরী বুবু। তবুও অপরাধবোধ থেকেই প্রশ্নটা করে বসেছি। আমিতো জানি রাগ-ক্ষোভ, অভিমান জলাঞ্জলী দিলেও কষ্টকে প্রশমিত পারনি আজ পর্যন্ত। তোমার ভেতরে কষ্টের পাহাড় থাকলেও তুমি কাউকে সেটা বুঝতে দেবেনা। মাঝেমধ্যে নিজেকে ঘৃণ্য-বর্বর বলে মনে হয়। একটা স্বাভাবিক জীবন তোমারও হতে পারত। শুধু আমারই জন্য আজ তোমাকে এতকিছু দেখতে হচ্ছে। আমাকে ক্ষমা করে দিও, পরী বুবু। ”

দাদুর কথা শুনে খিলখিলিয়ে হাসল পেখম। হাসির দমকে ওর চোখে পানি এসে পরল। দাদুর কথার উত্তর না দিতেই তার এই অভিনয়।

” আমার মত কালো মেয়েকে ‘ পরী ‘ ডেকে পরীদের তুমি অপমান করছ, দাদু। তারা তাদের দুনিয়া থেকে এসব দেখে নিশ্চয়ই রাগে ফেটে পড়ে। ”

” তাদেরও দুনিয়া আছে নাকি! ”

” আছেই তো। ছোটবেলায় দাদীমা কত গল্প শোনাত। পরীদের আলাদা দুনিয়া আছে। সেই দুনিয়ায় তাদের সংসার আছে। তারা সেখান থেকে আমাদের দেখতেও পায় আবার সব কথা শুনতেও পায়। ”

” শুনলে শুনুক। আমিতো আর ভুল কিছু বলিনা। আমার নাতনীটা পরীর থেকে কি কোনও অংশে কম? পরীরাও লজ্জা পাবে আমার পরী বুবুর রূপ দেখে। ”

” এভাবে আর কতদিন আমাকে তোল্লাই দেবে দাদু? তোমার নাতনীও বড় হয়ে গেছে। চেনা জগতের বাহিরে গিয়ে অচেনা জগতের মুখোমুখি হবার সময় এসেছে। প্রতিকুল পরিবেশে লড়াই করার এখনই উপযুক্ত সময়। ”

পেখমের কথায় সৈয়দ শামসুল হক কপাল কুঁচকে তাকালেন নাতনীর দিকে। তিনি পেখমের কথার মর্মার্থ বুঝতে পারলেননা।

” অচেনা জগত বলতে তুমি কি বোঝাতে চাইছ, পরী বুবু? ”

পেখম কিছুক্ষণ দম আটকে রাখল। এরপর এক নিঃশ্বাসে জবাব দিল,

” এসএসসির রেজাল্টের পর আমি ঢাকা যেতে চাই, দাদু। সেখানের কোন একটা ভালো কলেজে ভর্তি হতে চাই। এবং সেখান থেকেই আমার স্বপ্ন পূরণের পথ সুগম করতে চাই। ”

পেখমের শেষের বাক্যে যা বোঝার বুঝে নিলেন সৈয়দ শামসুল হক। তিনি বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। এরপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পেখমের হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন,

” তোমার মামা’র বাসায় থাকতে চাও? নাকি অন্য কোথাও? ”

” আমি আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে তুমি আর মা আর দুই একজন ব্যক্তি ছাড়া কাউকেই পাশে রাখতে চাইনা। আমার মামা’রা সেই দুই-একজনের মধ্যে পরেনা। ”

” তোমার রেজাল্ট কবে দেবে? ”

” ঠিক চারদিন পর। ”

” আমি চাই আমার নাতনী ভালো রেজাল্ট করে ঢাকার সবচেয়ে ভালো কলেজে ভর্তি হোক। তার জন্য আমার যা যা করার প্রয়োজন সেটাই আমি করব। তুমি মানসিকভাবে প্রস্তুত হও। ”

***

টাইমস স্কয়ার, নিউইয়র্ক। রাত সাড়ে দশটা। রঙ্গিন আলোয় ঝলমল করছে নিউইয়র্কের আকাশ। জোড়ায় জোড়ায় তরুন-তরুনী হাত ধরাধরি করে হাঁটছে। কেউ কেউ এখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে চুমোয় মেতেছে। আশেপাশের লোকজন যে তাদের দেখছে সেই তোয়াক্কাই করছেনা। দুনিয়ার রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক সিটি যেন একটু বেশিই সুন্দর।

রাজ্য দু’জন বন্ধুর সাথে বসে আছে কাউন্টারে। ওদের সবার হাতে স্যাম্পেনের বোতল। দু’জন বন্ধুর একজন ভারতীয় আর একজন আইরিশ।

” হেই রাজ্য, এত তাড়াতাড়ি দেশ থেকে ফিরলে যে? তুমি না দেড়মাসের ট্যুরে গিয়েছিলে! কিন্তু বিশ দিন না হতেই ফিরে আসলে? ” রাজ্য’র ভারতীয় বন্ধু অরবিন্দ রায় স্যাম্পেনে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করল। দেশ থেকে আসার পর আজই ওর সাথে দেখা হয়েছে রাজ্য’র।

অরবিন্দের কথায় তার দিকে তাকায় রাজ্য। চিন্তা করছে ছেলেটাকে কতটুকু বলা যায়। গত দুই বছরে ছেলেটাকে যতটুকু চিনেছে, তাতে রাজ্য’র মনে হচ্ছে এর সাথে সবকিছু শেয়ার করাই যায়।

” পরিবারের লোকজনের প্যারায় আসতে হল। তারা আমার মাথা খাওয়ার উপক্রম করছিল। ”

” ওয়াট ডিড ইউ সেই? আর ইউ ক্রেজি? পরিবারের লোকজন বলতে কি বোঝাচ্ছ? ”

রাজ্য মৃদু হেসে একে একে সবকিছু বলল অরবিন্দকে। সব শুনে অরবিন্দ কিছুক্ষণ নীরব থাকল।

” এ কি করেছ তুমি! অথচ আমি এতদিন তোমাকে বুদ্ধিমান ভেবে এসেছি! কতবড় বোকামোই না করেছি। ” অপ্রসন্ন গলায় বলল অরবিন্দ।

” হেই ডুড, আর ইউ ইনসাল্টিং মি? বাট হোয়াই? হয়্যার’স মাই মিসটেক? ”

” তুমি এত বড় ঘটনা ঘটিয়ে আবার জিজ্ঞেস করছ? তুমি জানো, বিয়ে বাঙালী মেয়েদের কতবড় ইমোশনের নাম? একটা মেয়ের বিয়ে নিয়ে কত ফ্যান্টাসি থাকে? কতশত স্বপ্ন দেখে? কিন্তু তুমি একটা মেয়ের লাইফ থেকে সুখের স্বপ্নই কেড়ে নিয়েছ। এরপর থেকে সে কোন পুরুষকেই বিশ্বাস করতে পারবেনা। ইভেন বিয়ের প্রতি তার অনিহাও আসতে পারে। আমাদের কলকাতায় মানে হিন্দু সমাজে, বিয়ের লগ্নে বিয়ে ভেঙে গেলে, সেই মেয়েকে লগ্নভ্রষ্টা উপাধি দেয়া হয়। তখন সমাজের চোখে তাকে কত হেনস্তা হতে হয় জানো? দোষী না হয়েও তাকে দোষ নিজের কাঁধে নিতে হয়। অনেক সময় পরিবার হাজার চেষ্টা করেও তাদের ভালো পরিবারে বিয়ে দিতে পারেনা। আমার জানামতে, তোমাদের দেশেও সেটাই হয়। আমার পিসতুতো দিদি সুইসাইড করেছিল জানো? শুধু বিয়ে ভাঙ্গার জন্য। তারা ছিল নবাবগঞ্জের। আমার পিসি দিদির শোকে শেষ পর্যন্ত পাগল হয়ে গেছে। এবার বুঝতে পারছ তোমার মিস্টেক কোথায়? ”

অরবিন্দের প্রতিটা কথা মনযোগ দিয়ে শুনল রাজ্য। কথাগুলো ওর মনে গেঁথে যায়। এত গভীরভাবে আগে কখনোই চিন্তা করেনি, তাই নিজের ভুলও চোখে পরেনি৷ আজ যখন একটু গভীরভাবে চিন্তা করল, তখন অনেককিছুই উপলব্ধি করতে পারল। বুঝতে পারল নিজের খামখেয়ালীপনার জন্য কত বড় ভুল করে বসেছে। ওর একটা সিদ্ধান্তের জন্যই দুই পরিবারের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। নিজের মা-ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বাড়ি ছেড়ে আসার পর মা প্রতিদিন কয়েকবার ফোন দিত, কিন্তু রাজ্য একবারও কথা বলেনি। ওকে না পেয়ে মিশুকে রিকুয়েষ্ট করেছে, যেন রাজ্য একটিবার তার সাথে যোগাযোগ করে। কিন্তু রাজ্য সেটাও করেনি। অবশেষে মা ক্লান্ত হয়ে ওর খোঁজ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। নিজেকে আজ সন্তান হিসেবে অযোগ্য মনে হচ্ছে। নানান ভাবনা এসে ভীড় করেছে রাজ্যের মনে। অরবিন্দের স্পর্শে সচকিত হয় রাজ্য। ছেলেটা ওর কাঁধে হাত রেখেছে । মলিন হেসে ওর দিকে তাকায় রাজ্য।

” জানো অরু, আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই সুসম্পর্ক দেখেছি দুই পরিবারের মধ্যে। কিন্তু সেদিন মিশু আপুর কাছে শুনলাম, দুই পরিবারের কেউ কারো মুখ দেখছেনা। সেদিন কথাটা শুনে মনে হয়েছিল, এটা একটু বাড়াবাড়ি। কিন্তু তোমার কথা শোনার পর সেটা আর মনে হচ্ছেনা। দশ বছর থেকে এই দেখে থাকছি। এত নিয়মকানুন আমার জানা ছিলনা, তাই আবেগের বশেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, আমাদের দেশের মেয়েরাও বোধহয় এদের মতই ফরোয়ার্ড। বিয়ে হওয়া না হওয়ায় তাদের কিছুই যায় আসেনা। ”

” এখনো সময় আছে দেশে ফিরে যাও। তোমার হাতেই সবকিছু। তুমি ক্ষমা চাইলেই দেখবে সব আগেরমত হয়ে গেছে। ”

” সম্ভব নয়। বাবা নাকি বলেছে, আমি বাড়িতে সে বাড়ি ছাড়বে। আমার মুখোমুখি হতে চায়না সে। এমনকি মৃত্যুর সময়ও আমাকে তার পাশে চায়না। ” রাজ্য ধরা গলায় বলল। চোখের পানি লুকাতে এদিকসেদিক চাইল।

” তো এখন তোমার ভবিষ্যৎ প্ল্যান কি? দেশে যেতে চাওনা? ”

” আমার প্ল্যান শুধু একটাই। পড়াশোনা শেষ করে, ভার্সিটিতে জয়েন করা। এই স্বপ্নটাই সারাজীবন দেখে এসেছি। ”

” আর দেশে যাওয়ার কি হবে? ”

” দু-চার বছর যেতে দাও। ততদিনে বাবা-মা’র মন ঠিকই নরম হয়ে আসবে। আমি সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই ক্ষমা করে দেবে। এই সিচুয়েশন না আসা পর্যন্ত আপাতত দেশে যাওয়ার চিন্তা বাদ। ”

” আর সেই মেয়েটির কি হবে? ”

” হয়তো মেয়েটি আমাক ঘৃণা করতে শুরু করেছে। যেহেতু আমার কারনেই দুই পরিবারের বহু বছরের সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে, সেহেতু আমাকে মেনে নেয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। এখন তার সামনে গিয়ে দাঁড়ানো মানে, আরও অশান্তির সৃষ্টি করা। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তার সময় প্রয়োজন। কিছুটা সময় সে নিক। এরপর আমার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইব তার কাছে তার পরিবারের কাছে। তারা যদি রাজি থাকে, তবে বিয়ে অব্দি যেতে পারি। ”

” হুটহাট কোন সিদ্ধান্ত নিওনা। তোমার একটা সিদ্ধান্ত দুই পরিবারকে বিভক্ত করেছে। তাই আরেকটা সিদ্ধান্ত নিতে হলে তোমাকে কয়েকবার ভাবতে হবে। ”

” আমি আজ বুঝলাম, তুমিই আমার সত্যিকারের বন্ধু। এরপর থেকে যা করব, চিন্তা-ভাবনা করেই করব। ”

***

সৈয়দ বাড়িতে খুশির বন্যা বইছে। এসএসসির রেজাল্ট দিয়েছে। ও বোর্ডে মেয়েদের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে। সৈয়দ শামসুল হক নাতনীর সাফল্যের জন্য গ্রামসুদ্ধ মানুষকে দাওয়াত করেছেন। পেখমের চাচারাও মেয়েটার অর্জনে ভিষণ খুশি। তারা খুশিমনে অতিথি আপ্যায়ন করছেন। সবাই খুশি থাকলেও মেহনাজের মুখ ভার। ভেতরে ভেতরে তার রাগ হচ্ছে। পেখমকে নিয়ে এমন আদিখ্যেতা সে মানতে পারেনা।

” যতসব ঢং। এমন ভাব করছে যেন আর কেউ এমন রেজাল্ট করেনা। শুধু যেন আদরের ঢংগী মেয়েই ভালো রেজাল্ট করেছে। আর পেখমকেও দেখ, মনে হচ্ছে দেমাগে মাটিতে পা পরছেনা। ”

পেখমকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল মেহনাজ। তার কথা শুনে হাসছে প্রতিবেশি একজন। পেখম সব শুনেও কিছু বললনা। নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরল।

***

” পেখম মা, আমি পরশকে বলেছি, ও তোর জন্য ভালো ফ্ল্যাট দেখছে। কিন্তু প্রান্তর ভিষণ রেগে গেছে। ও চাইছে তুই ওর বাসায় গিয়ে থাক। আমি অনেক কষ্টে ওকে সামলেছি। শোন, তোর যখন যেটা প্রয়োজন হবে তুই তোর ভাইয়াদের সাথে সাথেই জানাবি। মনে রাখিস, ঢাকায় তোর পুরো পরিবার থাকবেনা কিন্তু তোর দুই ভাই থাকবে। যারা তোর জন্য জান দিতে দুইবারও ভাববেনা। ”

বড়মা’ র কথায় মাথা নেড়ে সায় জানায় পেখম।
এই বাড়িতে মা, দাদুর পর বড়মাই ওকে বেশি ভালোবাসে। কন্যাহীনা এই রমনী সব সময়ই বলেন, তার তিনটা সন্তান। দুই ছেলে এক মেয়ে। তার মতই পরশ, প্রান্তরও পেখমকে ভালোবাসে। পারভীন আক্তার পুত্রবধূ হিসেবে যেমন পারফেক্ট তেমনি বড়মা হিসেবেও তার অপার স্নেহ পেয়ে ধন্য পেখম।

” তুমি এত চিন্তা করোনাতো, বড়মা। আমিতো ভাইয়াদের কাছাকাছিই থাকব। যখন মন চাইবে তখন ভাইয়াদের বাসায় বেড়াতে যাব। ”

” আমি ভালো করেই জানি তুই কি করবি। আমার থেকে ভালো তোকে কেউ জানেনা এমনকি তোর মা-ও নয়। তাই কি করতে হবে না হবে সব আমিই বলে দেব। তুই শুধু ফোন নিজের কাছে রাখবি। ”

বড় জা’য়ের কথা শুনে হাসলেন পেখমের মা। পেখমের জন্য তার চেয়েও বেশি চিন্তা করে পারভীন আক্তার এটা তিনি জানেন। তবে আজ আরেকবার স্বচক্ষে অবলোকন করলেন তিনি।

পনেরদিন পর মা, বড়মা আর দাদুর সাথে ঢাকার পথে রওনা দিল পেখম। পেছনে ফেল গেল শৈশব, কৈশরের হাজারো স্মৃতি ঘেরা গ্রামকে। ফেলে গেল দুরন্ত সেই দিনগুলি। সেই সাথে ফেলে যাচ্ছে কিছু দুঃসহ স্মৃতি আর দুর্বিষহ বেদনা। যা সে কখনোই স্মরণ করতে চায়না। অতীতের খাতায় লিখে রাখতে চায় যেগুলো। আর সেই অতীতকে সাফল্যের চাদরে ঢাকতে নতুন গন্তব্যের দিকে ছুটে চলা।

চলবে…