#সায়াহ্নের_প্রেমছন্দ
#অন্তিম
জাওয়াদ জামী জামী
রাজ্য ইউএস গেছে একমাস হয়েছে। এই একমাসে শুধুমাত্র চারদিন কথা হয়েছে তার সাথে। তা-ও কয়েক মিনিটের জন্য। পেখম প্রতিদিনই রাজ্যের ফোনের অপেক্ষা করে। কিন্তু ওকে প্রতিদিনই নিরাশ হতে হয়। একদিন রাজ্য বলেছিল, তাকে ভিষন ব্যস্ত সময় পার করছে। তার বন্ধু এখনো সুস্থ হয়নি। বন্ধুকে সময় দেয়ার পাশাপাশি ভার্সিটিতেও জয়েন করেছে। নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছে। পেখমের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। রাজ্য ওকে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে বলেছে। পেখম পড়ছেও ঠিকঠাক। কিন্তু সর্বদা চিন্তা করছে রাজ্যের জন্য।
পরীক্ষার মাঝেই একদিন মারা গেলেন সৈয়দ শামসুল হক। পরীক্ষার মাঝে তিনদিন গ্যাপ থাকায় গ্রামে গেল পেখম। চোখের জলে দাদুকে বিদায় দিল। দাদুর মৃত্যুর দশদিন পর মারা গেলেন রাজ্যের দাদীমা। দুই পরিবারে নেমেছে শোকের ছায়া। পেখম দাদীমার মৃত্যুর সংবাদ শুনে একদিনের জন্য গ্রামে এসেছিল। এরপর আবার ঢাকা চলে গেছে। পরীক্ষা শেষ হতে আরও দশদিন লেগে যাবে।
” পেখম, রাজ্য ফোন দিয়েছিল? কেমন আছে ছেলেটা? কবে আসবে ও? ” রাবেয়া সুলতানা মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন।
” দাদীমার মৃত্যুর পরদিন কয়েক মিনিটের জন্য কথা হয়েছে। বলল তো ভালোই আছে। আসতে বোধহয় দেরি হবে। ”
” তোর পরীক্ষা শেষ হবে কবে? নাবিলা গ্রামে যেতে চাচ্ছে। ওর পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বাড়ির জন্য নাকি ওর মন কেমন করছে। রিশানেরও পরীক্ষা শেষ। আমিও চাচ্ছি তোদেরকে নিয়ে গ্রাম থেকে বেরিয়ে আসি। ”
” আগামীকাল আমার পরীক্ষা শেষ হবে। তারপর দিন চল যাই। ”
***
রাজিয়া পারভীন ছেলের বউ আর মেয়েকে দেখে ভিষণ খুশি হলেন। তিনি ওদের দু’জনের পছন্দের খাবার রান্না করতে শুরু করলেন।
গ্রামে পনেরদিন কেটে গেছে। রাজ্যের কোন খবর নেই। পনেরদিন আগে শেষবার ফোন দিয়েছিল সে। এরপর সে লাপাত্তা। পেখম লজ্জায় শ্বাশুড়িকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছেনা। কিন্তু ওর মনের ভেতর আঁকুপাঁকু করছে রাজ্যের খবর জানতে। মনটা ছটফট করছে। গোপনে কতবার কেঁদে বালিশ ভাসিয়েছে তা কেবল সে-ই জানে। তিনমাস আগে রাজ্য ইউএস গেছে। এরমধ্যে হাতেগোনা কয়েকবার কথা হয়েছে তার সাথে। শেষ পর্যন্ত লাজলজ্জা বিসর্জন দিয়ে পেখম রাজিয়া পারভীনকে জিজ্ঞেস করেই ফেলল রাজ্যের কথা।
” মা, তোমার ছেলে তোমাকে ফোন দিয়েছিল? কেমন আছে সে? ”
” অনেকদিন হয়েছে রাজ্য আমার কাছে ফোন দেয়নি। এমনকি তোর বাবার কাছেও নয়। তোর বাবা খুব চিন্তা করছে। তোর কাছেও ফোন দেয়নি ছেলেটা? ”
” নাহ্। আমি কয়েকদিন ট্রাই করেছি। কিন্তু পাইনি। অরবিন্দ দা’র কন্ট্রাক্ট নম্বর আছে তোমার কাছে? তার কাছে একবার ফোন দেবে ? ”
” অরবিন্দ আমেরিকা নেই। অফিসের কাজে ডেনমার্ক গেছে। দুইদিন আগেই ফোন দিয়ে জানালো। আমি মিশুকেও ফোন দিয়েছিলাম। রাজ্য মিশুর সাথে যোগাযোগ করেছে বিশ-পঁচিশদিন আগে। এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারিনা। একটুও বদলায়নি। আগেও যেমন মাঝেমধ্যেই উধাও হয়ে যেত, এখনো সেটাই করছে। একবার চিন্তা করেনা, আগের রাজ্য আর এখনকার রাজ্যের মধ্যে অনেক ফারাক। এখন ও শুধু কারও ছেলে, কারও ভাই নয়। একজনের স্বামী সে। সব সময়ই এমন ছন্নছাড়া হয়ে জীবন কাটাতে চাইলে হয়না। এর আগেরবার কয়েকদিন এমন ঘাপটি মেরে ছিল। কোনরকম যোগাযোগ করেনি। পরে দেশে আসার পর জানতে পারি অ্যাকসিডেন্ট করেছিল। কোমায় ছিল অনেকদিন। ছেলেটা আমাকে পাগল করে ছাড়বে। ” আহাজারি করতে করতে রাজিয়া কপাল চাপড়ালেন নিজের বোকামির জন্য। এই সময় পেখমের কাছে রাজ্যের অ্যাকসিডেন্টের কথা বলা উচিত হয়নি। তিনি অজান্তেই কথাটা বলে ফেলেছেন। এখন মেয়েটা নিশ্চয়ই রাজ্যকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করবে।
রাজ্যের চিন্তায় পেখম নাওয়াখাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। দিনরাত ঘরে চুপচাপ বসে থাকে। কারো সাথে তেমন একটা কথা বলেনা। রাজিয়া পারভীনও পেখমের মনে অবস্থা বুঝতে পারছেন। তাই তিনিও পেখমকে কোনকিছুর জন্য জোরাজুরি করেননা।
” পেখম, খাবিনা, মা? তোর বাবা তোর জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে। আজ বাবা-মেয়ে মিলে খাবি চল। ”
পেখম শ্বাশুড়িকে কষ্ট দিতে চাইলনা। খাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও ডাইনিং এরিয়ায় গেল। মীর আমজাদ হোসেন পুত্রবধূকে দেখে খুশি হলেন। তিনি নাবিলা আর পেখমকে নিয়ে খেতে বসলেন। রাজিয়া পারভীন খাবার পরিবেশন করছেন। তার বড় জা আর ভাসুর ছেলের কাছে চলে গেছেন। রাজিয়া পারভীনই এখন শ্বশুরের ভিটা আগলে রাখছেন। হয়তো তার ভাসুর-দেবররা গ্রামে এসে স্থায়ী হবেননা। বছরে দু-একবার হয়তো তারা গ্রামে আসবে। তাকেই শ্বশুরের ভিটা আগলে রাখতে হবে।
***
আজ আকাশে চাঁদ ওঠেনি। আকাশে মেঘের আনাগোনা। তারকারাজিরও দেখা নেই। অসীম নিলীমায় সব নক্ষত্র যেন ঘাপটি মেরে বসে আছে। পেখম একটু আলো দেখবার আশায় তাকিয়ে আছে অন্তরীক্ষ পানে। রাত গভীর হলেও ওর দু’চোখে ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই। বেলকনিতে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিদিনের মত আজও বেলকনির লাইট নিভানো। যখন ও অসীম নিলীমায় একটু আলোর দেখা পেতে উদগ্রীব, তখন ওকে আলোর সন্ধান দিতে হাজির হয়েছে কয়েকটা জোনাকি। বেলকনির বাহিরে তারা নিজেকে জ্বালিয়ে পেখমকে আলোকিত রজনী দিতে তৎপর। পেখম মুগ্ধ নয়নে দেখছে অন্ধকারে জোনাকির আলো। নিকষকালো আঁধারকে এই সামান্য আলোটুকই যেন আলোর স্রোতে ভাসিয়ে দিচ্ছে। পেখম মুগ্ধ নয়নে দেখছে আঁধার আর জোনাকির দলের গোপন প্রনয়। মুগ্ধতার রেশ পেখমের নয়নে। এরই মাঝে ওর কানে আসল দরজা খোলার মৃদু শব্দ। পেখম সেটাকে পাত্তা দিলনা। বিভোর হয়ে দেখছে এক নৈসর্গিক দৃশ্য। ঠিক তখনই এক অতি পরিচিত সুবাস এসে ধাক্কা দিল ওর নাসারন্ধ্রে। সুবাসে ভরে গেল বেলকনির প্রতিটি কোন। সেই সুবাসের মাঝেই অতিপ্রিয় এক পুরুষালী গন্ধ ঠিকই চিনতে পারল পেখম। থমকে গেল হৃদপিণ্ড। খুশির জোয়ারে ভাসল হিয়ার দুকূল। ঐ অবস্থাতেই পেখম ঝাঁপিয়ে পরল তার পুরুষের বুকে। আবেগে কাঁপছে ওর তনু।
” বলেছিলাম না যখন বুঝব আমাকে মন থেকে অনুভব করছ, তখনই ছুটে আসব তোমার কাছে? দুনিয়া উল্টে গেলেও রাজ্যের কথার নড়চড় হয়না। ” রাজ্য পরম আবেশে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিল তার পরম আরাধ্য নারীকে।
” কোথায় ছিলেন এতদিন? আপনার চিন্তায় পাগল হয়ে গেছি আমি। আমাকে এত যন্ত্রণা দিয়ে কি সুখ পান আপনি। ”
” তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে আমি কি ভালো থাকতে পারি ? স্রষ্টার কাছে আমার একটাই চাওয়া, তোমার সকল যন্ত্রণা আমার হোক। তুমি হও সুখের রাজ্যের রানী। আমার রানী, আমার প্রানেশ্বরী। ”
” এতদিন যোগাযোগ করেননি কেন? জানেন, আমরা সবাই আপনার চিন্তায় অস্থির হয়ে ছিলাম? ” রাজ্যের বুকে মুখ গুঁজে কম্পিত গলায় বলল পেখম।
” সরি বউ, তোমাদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্য। আমার অসুস্থ ফ্রেণ্ডকে নিয়ে টেনশনে ছিলাম। ওকে সুস্থ করতে দিনরাত এক করে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। তাই কারও সাথেই যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি। ও যেই একটু সুস্থ হয়েছে, তখনই তোমার কাছে ছুটে এসেছি। এবার বল মিস করছিলে আমাকে? ”
পেখম মাথা নাড়ায়।
” কতটুকু? ” রাজ্য আবারও জিজ্ঞেস করল।
” যার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। তবে একটুকু বলতে পারি, যতটুকু মিস করলে সেই মানুষটার জন্য হাসিমুখে প্রান দেয়া যায়, ততটুকু মিস করেছিলাম। ”
” ভালোবাসো? ”
” এক আকাশ পরিমান। যার কোন শেষ নেই। ”
” বাঁধতে চাও আমাকে তোমার বাহুডোরে? বিলীন হতে চাও আমাতে? ”
রাজ্যের এবারের প্রশ্নে লজ্জায় রাঙা হলো পেখমের মুখাবয়ব। লজ্জায় বুঝল চোখ। আঁকড়ে ধরল রাজ্যের টি-শার্ট।
রাজ্য ওর প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে। ও এক ঝটকায় পেখমকে কোলে তুলে নেয়।
***
ঘুম ভাঙ্গলে নিজেকে রাজ্যের বুকে আবিষ্কার করল পেখম। ওকে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে রাজ্য। পেখম সাবধানে রাজ্যের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। সাথে সাথেই রাজ্য সটান হয়ে শুলো। পেখম এবার তাকাল রাজ্যের মুখপানে। ওর মনে পরে গেল সেইসব দিনগুলোর কথা। যেদিন ও শুনেছিল, ওদের দুই পরিবার মিলে রাজ্যের সাথে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেদিন থেকেই ওর কিশোরী মনে রাজ্য নামক মানুষটার জন্য ভালোলাগা সৃষ্টি হয়েছিল। সে যখন দেশে আসত পেখম চুপিসারে তাকে দেখত। রাজ্য ওদের বাড়িতে গেলেও পেখম কখনোই রাজ্যের সামনে যায়নি। আড়াল থেকেই তাকে দেখে দু চোখের তৃষ্ণা মেটাত। এমন অনেক কতশত গোপন কথা লুকিয়ে আছে পেখমের ভেতর। সেগুলো সে কাউকেই জানতে দিতে চায়না। মৃদু হেসে পেখম আঙ্গুল চালালো রাজ্যের চুলের ভেতর। ঠিক তখনই ওর চোখ গেল রাজ্যের কপালের বাম পাশের কাটা দাগের দিকে। কপালের বাম পাশে আড়াআড়িভাবে সেলাইয়ের দাগ তার সুদর্শন চেহারাকে কিছুটা ম্লান করেছে। এর আগেও অনেকবার পেখম রাজ্যের দিকে তাকিয়েছে কিন্তু কখনোই এই দাগটা চোখে পরেনি। তবে অবশ্য গত দুই-আড়াই বছরের মধ্যে পেখম রাজ্যের দিকে সেভাবে তাকায়নি। বিয়েটা ভেঙে যাবার পর থেকেই ও রাজ্যকে মন থেকে বের করে দিয়েছিল। ফলশ্রুতিতে ওর দিকে তাকাতে ইচ্ছে করেনি। তবে কি বিয়ে ভাঙার পরেই সে কপালে আঘাত পেয়েছিল? হুট করেই পেখমের মনে হল, বড়মা সেদিন বলেছিল তার অ্যাকসিডেন্টের কথা। তাহলে কি সেই অ্যাকসিডেন্টের ফলেই তার এই দশা? নানান চিন্তা করতে করে পেখম রাজ্যের কপালে আলতোভাবে আঙ্গুল ছোঁয়াল। পেখমের ছোঁয়া পেতেই চোখ খুলে তাকাল রাজ্য। ওকে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। ঘুম জড়ানো গলায় বলল,
” এত ছোঁয়াছুঁয়ি করার কারন কি শুনি? আমাকে ঘুমাতে দেখেই বুঝি সুযোগ নিতে চাইছ? এত বছর ভার্জিনিটি নিয়ে গর্ব করা আমিটার ভার্জিনিটি হরণ করেও দেখছি মন ভরেনি তোমার! ”
রাজ্যের লাগামছাড়া কথা শুনে লজ্জায় চোখ বুজল পেখম। পেখমকে লজ্জা পেতে দেখে মৃদু হেসে ওর দু চোখের পাতায় চুমু দিল রাজ্য। এরপর আস্তে আস্তে পুরো মুখে চুমুয় ভরিয়ে দিল। ঘোরলাগা গলায় আবারও বলল,
” লজ্জা পেলে দেখছি আমার বউকে একদম রসগোল্লার মত লাগে! মনে হচ্ছে টুপ করে খেয়ে ফেলি। কাছে এসোতো একটু খাই। ”
” অশ্লীল কথাবার্তা বাদ দিয়ে আমাকে বলুন আপনার কপাল কেটেছিল কিভাবে? কতবড় কাটা দাগ! কপালে জ্বলজ্বল করছে। ”
পেখমের প্রশ্নে একটু হাসল রাজ্য।
” অ্যাকসিডেন্ট করেছিলাম। ”
” কবে, কিভাবে? ”
” প্রায় আড়াই বছর আগে। আমার গাড়ি ধাক্কা দিয়েছিল রাস্তার ধারের ইলেকট্রিক পোলে। ”
” মা বলেছিল, অ্যাকসিডেন্ট করে আপনি কোমায় ছিলেন। এই অ্যাকসিডেন্টেই? ” কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল পেখম।
” হুম। ”
” এত বেখেয়ালিভাবে ড্রাইভ করে কেউ? মন কোথায় থাকে? যদি আপনার কিছু হয়ে যেত, তবে মা-বাবার কি হত একবারও ভেবেছেন? ”
” এতকিছু ভাবিনি কখনোই। ভাবলে অ্যাকসিডেন্ট হতোনা। মন তো তখন আমার কাছে ছিলনা। সেসময় শুধু শরীর সর্বস্ব মানুষ ছিলাম আমি। ”
” সে সময় মানে? ”
” কিছুনা বাদ দাও। আমার ঘুম পাচ্ছে, আমার পাশে শুয়ে আমাকে ঘুমাতে সাহায্য কর। ”
” কথা ঘোরাবেননা। বলুন সে সময় বলতে কি বোঝাতে চেয়েছেন। না বলা পর্যন্ত আপনাকে ঘুমাতে দেবোনা। ” নাছোড়বান্দার মত করছে পেখম।
পেখমকে জিদ করতে দেখে কিছুক্ষণ নিরব থাকল রাজ্য। ও আরও গভীরভাবে জড়িয়ে ধরল পেখমকে। মৃদু গলায় বলল,
” তোমার বিয়ের কথা শোনার দুইদিন পরই ইউএস ফিরে গিয়েছিলাম। পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলাম সে সময়। দিনরাত বারে পরে থাকতাম। মদের সাথে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হয়েছিল তখন। মাঝেমধ্যে ট্যাক্সি চালাতাম। নিজের পড়াশোনার খরচসহ অন্যান্য খরচের একাংশ আসত এটা থেকে। একরাতে প্যাসেঞ্জারকে নামিয়ে বারে গিয়ে কিছু সময় কাটিয়ে ফ্ল্যাটে ফেরার পথে অ্যাকসিডেন্ট করি। দশদিন পর জ্ঞান ফিরলে জানতে পারি এতদিন কোমায় ছিলাম। ”
পেখম বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে রাজ্যের দিকে। ওর বিয়ের খবরে এই মানুষটা কম কষ্ট পায়নি ভেবে আজ ওর খারাপ লাগছে। পেখমের দু-চোখ বেয়ে ঝরছে অশ্রু।
পেখমকে কাঁদতে দেখে চমকে উঠল রাজ্য। ওর চোখ মুঝে দিয়ে অপরাধী গলায় বলল,
” সরি, বউ। আমি তোমাকে কাঁদাতে চাইনি। তুমি জানতে চাওয়ার পরও আমি কথাগুলো বলতে চাইনি। জানতাম তোমার খারাপ লাগবে। আমি তোমার অতীততে তোমার মন থেকে মুছে দিতে চাই। সেজন্যই অতীত নিয়ে কোন কথাই আমি বলতে চাইনা। ”
রাজ্যকে উদগ্রীব হতে দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করল পেখম।
” আমি মোটেও অতীত ভেবে কাঁদছিনা। আমি কাঁদছি আপনার কষ্টের কথা ভেবে। বিয়ে নামক সেই বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শুধু আমিই কষ্ট পাইনি, আপনিও পেয়েছেন। আমি ভুগেছি ঠকানোর কষ্টে, আপনি ভুগেছেন হারানোর কষ্টে। দু’জনের কষ্টের কারন আলাদা হলেও কষ্ট কিন্তু সমান পেয়েছি। ”
” আর তোমাকে কষ্ট পেতে দেবোনা। আজকের পর থেকে তোমার চোখে কোন অশ্রুবিন্দু ঝরতে দেবোনা আমি। তোমাকে ভাসাব সুখের সাগরে, এ আমার প্রতিশ্রতি। দুঃখের কোন অস্তিত্ব থাকবেনা তোমার জীবনে। তোমার সকল দুঃখকে নিজের করে নিয়ে তোমাকে সুখ বিলাসীনি করব আমি। এ আমার অঙ্গীকার। ”
পেখম চোখ বন্ধ করে রাজ্যের কথা শুনছে। যে কথাগুলোর মাঝে নেই কোন মিথ্যা, নেই কোন কপটতা। আছে শুধুই ভালোবাসা আর ভালোবাসা। পেখমও চায় আজন্মকাল এই ভালোবাসা পেতে। রাজ্যকে রাখতে চায় নিজের ভালোবাসার কাণ্ডারি করে। বিলীন হতে চায় তার ভালোবাসায়। পেখম আঁকড়ে ধরল ওর পুরুষকে। যার বুকেই হবে পেখমের বাস।
সমাপ্ত