#সায়াহ্নের_প্রেমছন্দ
#পার্ট_৬
জাওয়াদ জামী জামী
” বড় বউমা, রাশেদকে ফোন করবে একবার? গতকাল ছেলেটার সাথে কথা হয়নি। কেমন আছে ওরা? ঋত, রাত কেমন আছে? ওদেরকে গ্রামে এসে বেরিয়ে যেতে বল। ”
সৈয়দ শামসুল হক অনুনয় করলেন পারভীন আক্তারকে। আজকাল তার শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছেনা। বন্ধুর সাথে কথা হয়না কতদিন। হয়তো জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার সাথে আর দেখা হবেনা। চিন্তাটা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। এসব নানান চিন্তার জন্যই তিনি ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
” আমি এখনই রাশেদকে ফোন দিচ্ছি, আব্বা। গতকাল আপনার বড় ছেলে ওকে ফোন দিয়েছিল। ও অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিল। তাই বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেনি। ”
” তোমাকে একটা কথা বলব, বউমা? কিছু মনে করবেনাতো? ”
” এভাবে বলবেননা, আব্বা। কি বলবেন বলুন? ”
” রেজাউলের কোন খবর জানো? কেমন আছে ও? রাজ্য কি ফিরে এসেছে? ”
শ্বশুরের প্রশ্নে নিশ্চুপ থাকলেন পারভীন আক্তার। তিনি মনে মনে উত্তর সাজিয়ে নিচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর মুখ খুললেন তিনি।
” আপনিতো দুই পরিবারের অবস্থা জানেন, আব্বা। আপনার ছেলেরা ওদের নামই শুনতে চায়না। ওরা ও তাই। আর আমিও ঐ বাড়িতে ফোন দেয়ার সাহস করতে পারিনা। চাচার ছেলেরা যদি জানতে পারে, তবে অনর্থ হয়ে যাবে। তবে দুইদিন আগে কাননের সাথে দেখা হয়েছিল। ওর কাছ থেকেই সবার খবর নিয়েছি। সবাই ভালো আছে। রাজ্য এখনো কারও সাথে যোগাযোগ করেনি। ”
পারভীন আক্তারের কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন সৈয়দ শামসুল হক। দিন যত যাচ্ছে, তিনি ততই নিরাশ হচ্ছেন। আশার প্রদীপটুকু ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে। এতদিনও তিনি রাজ্য ফিরবে বলে আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই বাঁধন ঢিলে হয়ে আসছে। ফিঁকে হয়ে যাচ্ছে জীবনের যত রং।
পারভীন আক্তার রাশেদকে ফোন করেছেন। তিনি রিসিভ করলে শ্বশুরের কাছে ফোন হস্তান্তর করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন পারভীন আক্তার। সৈয়দ শামসুল হক ছেলের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন।
***
” হেই ডুড, লেইসট গো অন অ্যান আউটিং টুডেই। ” রাজ্য ফোন রিসিভ করতেই জ্যানেটের গলা শুনতে পায়।
” আই’ল বি বিজি টুডেই। উড’ন্টট ইট বি এনি আদার ডেই? ”
” ইউ অলওয়েজ হ্যাভ অ্যান এক্সকিউজ। আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াই আই ফলো ইউ। হাউ স্টুপিড আই অ্যাম! সামটাইমস আই ফিল সরি ফর মাইসেলফ। এ্যানিওয়ে, কিপিং ইট। ইউ ক্যান কল ইফ ইউ ওয়ান্ট। আই ডোন্ট মাইন্ড। ”
” হেই জ্যানেট, আর ইউ ক্রেজি! আ’ম বিজি টুডেই। বাট আই’ল বি ফ্রি নেক্সট উইক। ”
” ফরগেইট হোয়াট আই সেইড। আই’ল নট ডিস্টার্ব ইউ এনিহয়্যার। অ্যাজ লং অ্যাজ ইউ ডোন্ট কেয়ার এ্যাবাউট মি, আই’ল স্টে এ্যাওয়ে। ”
জ্যানেট ফোন কেটে দিলে রাজ্য হতভম্ব হয়ে যায়। ও বেশ বুঝতে পারে জ্যানেট মেয়েটা ওর প্রতি দূর্বল। অথচ রাজ্য মেয়েটাকে কখনোই সেই দৃষ্টিতে দেখেনি। সেই যে রাতে মেয়েটা রাজ্যের ক্যাবে উঠেছিল, সেদিন মেয়েটা রাজ্য’র নম্বর নেয়, নিয়মিত যোগাযোগ করে রাজ্য’র সাথে। একটা সময় ওরা বেশ ভালো বন্ধু হয়। কিন্তু কিছুদিন থেকেই জ্যানেটের আচরণ রাজ্যের কাছে অন্যরকম লাগে। রাজ্য ভেবেছে এই নিয়ে জ্যানেটের সাথে কথা বলবে, কিন্তু আজ সেটা সম্ভব হবেনা। মিশু ওকে ডেকেছে। ওর বাসায় যেতে হবে।
আধাঘন্টা পর মিশুর বাসায় এসে হাজির হয় রাজ্য।
” ওয়েলকাম, অমাবস্যার চাঁদ আই মিন মীর সাহেব। ” মিশু সাদরে সম্ভাষণ জানালো রাজ্যকে।
রাজ্য বোনের দিকে তাকিয়ে তার মনমর্জি বোঝার চেষ্টা করল।
” কি ব্যাপার, কিপ্টার বউ টেম্পারেচার বোধহয় হট? কিপ্টা কি আজকাল বাজারের টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে? ”
” মুখে লাগাম দে, বেয়াদব পোলা। তরে কে কইছে, আমার জামাই কিপ্টা? আয় ভেতরে আয়। ”
রাজ্য ভেতরে ঢুকে মিশুর বেবিকে কোলে নেয়। ওর হাতের প্যাকেট দেয় মিশুকে।
” এবার বল, মুখের ঢং এমন হয়েছে কেন? মনে হচ্ছে কতকাল মেক-আপ করোনি। কিপ্টা কিনে দেয়না? ”
” আবার? তুই থামবি নাকি কানে দড়ি বাঁধব? অকাজ করার সময় মনে থাকেনা, এখন আসছে আমাকে রাগাতে। ”
” আমি আবার কি করলাম! একমাস পর তোমার বাসায় আসলাম আর তুমি আমাকে ঝারি দিচ্ছ! তা-ও আবার ডেকে নিয়ে এসে ঝারি দিচ্ছ। এটা অন্যায়। ”
” ছয়মাস পেরিয়েছে দেশ থেকে এসেছিস, এরমধ্যে একবারও মামীর কাছে ফোন করেছিস? নানা ভাইয়ের সাথে কথা বলেছিস? নানা ভাই তোর চিন্তায় অসুস্থ হয়ে গেছে। ”
মিশুর কথা শুনে মাথা নিচু করল রাজ্য। কি উত্তর দেবে মিশুর কথার? সত্যিই তো সে গত কয়েকমাসে বাড়িতে যোগাযোগ করেনি। আপনজনদের পর করে দিয়েছে।
” এখন মুখ বন্ধ কেন? নাকি কথা ফুরিয়ে গেছে? কথা ফুরিয়ে গেলে বল, একটা মানুষ ভাড়া করি তোর হয়ে কথা বলার জন্য। ”
” প্লিজ, আপু এইভাবে বলোনা। আর কিছুদিন যাক, আমি কথা বলব সবার সাথে। দাদু, আম্মু আর বাসার সবাই কেমন আছে? ”
” এত জেনে কি করবি? আর সবাই কেমন আছে এটা জানা কি খুব বেশি প্রয়োজন? তুই কেমন আছিস সবাইকে ছেড়ে এটা জানা আমাদের দরকার। অবশ্য তুই খারাপ থাকতেই পারিসনা। শুধু শুধু নানা ভাই তোর চিন্তা করে। তুইতো এখানে বিন্দাস লাইফ কাটাচ্ছিস। শুনলাম, আজকাল নাকি সাদা চামড়ার গার্লফ্রেন্ডও জোগাড় করেছিস! ভেরি ইমপ্রেসিভ। এজন্যই বোধহয় নানা ভাইয়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে না করে পালিয়ে এসেছিস? ”
” আপু, জ্যানেট আমার ফ্রেন্ড। এর বাহিরে ওর সাথে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। ”
” মেয়েটার নাম জ্যানেট! নাইস নেইম। তবে জাস্ট ফ্রেন্ডের সাথে দিনের পর দিন উইকেন্ডে সময় কাটানো যায়! কিংবা সপ্তাহে দুইদিন রেস্টুরেন্টে যাওয়া যায়! অথবা মাঝরাতে লং ড্রাইভে যাওয়া যায় বুঝি? আমাকে এসব বোঝাতে আসিসনা। ”
” তুমি আমাকে ভুল বুঝছ, আপু। তোমার সাথে ওর পরিচয় করাব, তখন বুঝবে আমি সত্যি বলেছি না মিথ্যা বলেছি। ”
” প্রয়োজন নেই তোর জাস্ট ফ্রেন্ডের সাথে পরিচিত হবার। ”
রাজ্য বুঝতে পারেনি আগামী কয়েকঘন্টা ওকে ঝাড়ির ওপর থাকতে হবে। এখানে আসার পর সেটা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে। মিশুর জায়গায় অন্য কেউ হলে ও এতক্ষণ রিয়্যাক্ট করত। মিশু ওকে থাপ্পড় মারলেও তাকে কিছু বলার সাধ্য নেই রাজ্যর। ছোটবেলা থেকেই মিশু ওকে ভাইয়ের আদর দিয়ে বড় করেছে। কখনো বুঝতে দেয়নি সে ওর ফুপাতো বোন। আমেরিকা আসার প্রথম দিনগুলোতে মিশুই ওর সাথী আর পরম বন্ধু ছিল। এখনো আছে। মিশু ওর শরীরে কখনো আঁচড় পরতে দেয়নি। বিয়ের পরও সে বড় বোনের দ্বায়িত্ব পালন করেই চলেছে। তাই মিশু হাজার কিছু বললেও রাজ্য কোন প্রত্তুত্যর করেনা।
***
পেখম এখন বেশ সানন্দেই কলেজে যায়। কেউ ওকে জ্বালাতন করেনা। এমনকি ওর দিকে ফিরেও তাকায়না। ও পড়াশোনার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে। কলেজেও কারও সাথে খুব একটা মেশেনা। নিজের ভুবনে ডুবে থাকতে ভালোবাসে।
গত ছয়মাসে সে একবারও গ্রামে যায়নি। প্রতিমাসেই বাড়ি থেকে কেউনা কেউ আসে ওকে দেখতে। এতেই পেখম খুশি। অতীত নিয়ে কখনোই মাথা ঘামায়না। ভুলে যেতে চায় সেই বেদনার অতীত। এগিয়ে যেতে চায় সামনে। ভবিষ্যৎ গড়তে চায় নিজের ইচ্ছেয়।
***
দুই বছর পর,
পেখমের রেজাল্ট দিয়েছে। এসএসির মত ও এইচএসসি তে এবারও দেশ সেরাদের একজন হয়েছে। পেখমের এই অর্জনে সৈয়দ পরিবারের সবাই ভিষণ খুশি। দাদু বারবার ফোন করছেন। তিনি চান পেখম এবার গ্রামে যাক। দুই বছর মেয়েটা গ্রামে যায়না। তবে পেখম এখনই গ্রামে যেতে চাইছেনা। এডমিশনের পরই ও গ্রামে যাবে। এটাই ওর প্রতিজ্ঞা। পারভীন আক্তারকে সে কথাই জানায় পেখম৷
***
” আরে প্রফেসর সাহেব যে! গরীবের বাড়িতে ডায়নোসরের পা! এটা অবাক করার মতই বিষয় তাইনা? ” দরজা খুলে রাজ্যকে দেখে মন্তব্য করল মিশু৷
” তুমি আবারও শুরু করলে, আপু? ”
” এখনতো ভালো লাগবেইনা। তুই কোথায় আর আমি কোথায়। ”
” আরও কিছু বলবে? রান্না করেছ? খেতে দাও, খেতে খেতে তোমার খোঁচা শুনব। ”
রাজ্যর দিকে তাকিয়ে মিশু বুঝল ছেলেটা ক্ষুধার্ত। সেই সাথে ক্লান্তও। তাই তাকে আর কিছু বললনা সে। ওকে ডাইনিং টেবিলে বসতে বলে রান্নাঘরে গেল।
” তুই কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস আর দেশে যাবিইনা? ” রাজ্য’র খাবার মাঝখানে জিজ্ঞেস করল মিশু।
” যাবতো। ”
” কবে? নানা ভাইয়ের মৃত্যুর পর? ”
” আপু! কি বল তুমি? ”
” ভুল কিছু বলেছি? দুই বছরের বেশি সময় হয়েছে তুই কারও সাথে যোগাযোগ রাখিসনি। বাড়ির খবর জানিস কিছু? ”
” তুমিই তো বলেছিলে, আম্মু আমাকে ফোন করতে নিষেধ করেছে? সেজন্যই আর ফোন করিনি। ”
” মামী না হয় রাগ করে বলেছে। কিন্তু তুই বোকা নয়। কেন বুঝলিনা মা’য়ের রাগে-অভিমান? নানু তোর চিন্তায় বিছানা নিয়েছেন। তোকে একনজর দেখার জন্য সে আহাজারি করছে। কোনদিন খবর পাব সে আর নেই। ”
” দাদু এতটাই অসুস্থ হয়ে গেছে! আমাকে আগে বলোনি কেন? ”
” আমার সাথে কথা বলার সময় আছে তোর! ফোনে তোকে পাওয়া যায়? গতরাতেই বড় মামা জানাল, নানা ভাই খাবার খেতে পারছেননা। বিছানা থেকে ওঠার অবস্থায় নেই সে। ”
রাজ্য নিনির্মেষ তাকিয়ে থাকে মিশুর পানে। চোখের সামনে দাদুর মুখটা। তার হাসি ধাক্কা দিচ্ছে কর্নকুহরে। রাজ্য টের পেল ওর চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। নিজের জেদ বজায় রাখতে অনেকগুলো মানুষকে সে কষ্ট দিয়েছে। আর নয়। এবার দেশে যেতেই হবে। ক্ষমা চাওয়ার সময় এসেছে।
” আমি দেশে যাব, আপু। ”
***
পেখম গ্রামে এসেছে। সৈয়দ শামসুল হক নাতনীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। তিনি খুশিতে কাঁদছেন। তার প্রত্যেক নাতি-নাতনিই মেধাবী সেটা তিনি জানেন। তাই পেখম বুয়েটে চান্স পেয়েছে শুনে একটুও অবাক হননি। তিনি এমনটাই আশা করেছিলেন।
” পরী বুবু, তুমি স্বপ্ন পূরণের পথে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলে। তোমার চলার বাকি পথটুকু যেন নিষ্কণ্টক হয়, মসৃণ হয় সেই দোয়াই করি। ”
” তোমার দোয়া আমার জন্য লাকী। একটু বেশি করে দোয়া করতো, দাদু। ”
” বাহ্ দাদা-নাতনি মিলে আমাকে ছাড়াই গল্প করছ? দাদু তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসোনা। ” হঠাৎই ঋত এসে দাঁড়ায় দাদুর রুমে।
” তোমাকেও ভালোবাসি, ঋত মনি। তুমিও এসে বস আমার পাশে। তোমার রেজাল্ট যদি পরী বুবুর মত হয় তবে আমি আশেপাশের দশ গ্রামের মানুষকে দাওয়াত করব। আমার প্রতিটা নাতি-নাতনি আমার নয়নের মণি। ”
” তুমি ভালো করেই জানো আমি পেখম আপুর মত মেধাবী নই। তাই আমার রেজাল্ট শুনে কোন আয়োজনও হবেনা। তুমিও খুশি হতে পারবেনা। ” ঋত মন খারাপ করে বলল।
” তুমিও পারবে ঋত মনি। শুধু একটু মন দিয়ে পড়াশোনা কর। ”
পারভীন আক্তার পেখমকে ডেকে পাঠালে পেখম বাহিরে যায়। পেখম বাহিরে যেতেই সৈয়দ শামসুল হক ঋতের কানে কানে জিজ্ঞেস করলেন,
” ঐ বাড়ির খবর কিছু জানো? কেমন আছে তোমার মীর দাদু? ”
” দাদু নাকি অসুস্থ। কানন ভাইয়া বলল। তাকে ঢাকা নিয়েছিল চাচ্চুরা। ”
বন্ধুর অসুস্থতার খবর শুনে মন খারাপ হয়ে যায় সৈয়দ শামসুল হকের। দুই বছরের বেশি সময় তিনি বন্ধুকে দেখেননি। এতদিন ধৈর্য্য ধরলেও এখন কিছুতেই নিজেকে মানাতে পারছেননা। বারবার ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে বাল্যবন্ধুর নিকট।
” তুমি আমার একটা কাজ করে দিতে পারবে, ঋত মনি? ”
” কি কাজ, দাদু? ”
” তুমি ভিডিও কলে রেজাউলের সাথে আমার কথা বলিয়ে দিতে পারবে? কিন্তু কেউ যেন জানতে না পারে। বিশেষ করে তোমার বাবা-চাচা আর রেজাউলের ছেলেরা। ”
” কেউ জানবেনা, দাদু। আমি কালকেই ঐ বাড়িতে যাব। আর বড়মা, চাচীদের ম্যানেজ করে দাদুকে তোমার সাথে কথা বলিয়ে দেব। ”
” তুমি সত্যিই পারবে, ঋত মনি! ”
” অবশ্যই পারব, দাদু। তোমার এই নাতনিটি লেখাপড়ায় মেধাবী না হলে কি হবে, সে আউট সাবজেক্টে পারদর্শী। ”
রাকিব আহমেদ রুমে এসে পরায় দাদু-নাতনির আর কোন কথা হলোনা। চাচাকে আসতে দেখে ঋত রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
***
অনেক দিন পর গ্রামের ধুলোর স্পর্শ পেয়ে শিউরে উঠল রাজ্য। এই পথ দিয়েই সেদিন চুপিচুপি বাড়ি থেকে পালিয়েছিল। তারপর কেটে গেছে দুই বছর কয়েক মাস। সন্ধ্যা হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হয়। আলো-আঁধারির মাঝে এগিয়ে চলেছে অটোরিকশা। এদিক-সেদিক তাকিয়ে প্রিয় গ্রাম দেখার বৃথা চেষ্টা করল।
মীর বাড়ির সীমানায় এসে বুক ধুকপুক করতে শুরু করল রাজ্য’র। সামনে ওর জন্য কতগুলো জুতোর বারি অপেক্ষা করছে সেটা গুনতে গুনতে কম্পমান পায়ে এসে দাঁড়ায় গেইটের কাছে। বাহিরের উঠানে প্রতিবেশীদের দুই-একজন বসে গল্প করছে। তারা রাজ্য’কে দেখে এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করল।
বড় জা’য়ের সাথে রান্নাঘরে ব্যস্ত ছিলেন রাজিয়া পারভীন। কলিং বেলের শব্দ শুনেছেন তিনি। তারা দুই জা ভাবলেন কেউ হয়তো তাদের শ্বশুর বাবাকে দেখতে এসেছে। তাই এত মাথা ঘামালেননা। শুধু বড় জা’কে বললেন, চা-নাস্তা রেডি করতে হবে।
” আম্মু? ”
পরিচিত সেই ভরাট কণ্ঠস্বর শুনে থেমে গেল রাজিয়া পারভীনের হাত। কতদিন পর তিনি শুনছেন এই কণ্ঠস্বর। নিমেষেই গলে জল হয়ে গেল তার সকল অভিমান। রাগ আর অভিমান কান্না হয়ে ঝড়তে থাকল। ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে থাকল তার বুক, চাপা সকল কষ্ট উবে যাচ্ছে।
চলবে…