সারা জাহান পর্ব-১+২+৩

0
31

#সারা_জাহান
পর্ব,,,১
মৌমো তিতলী
🫶

“আপনারা অনুমতি দিলে আপনাদের বাড়ির ছোট মেয়েটাকে আমরা আমাদের একমাত্র ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে চাই”
বেশ বড় মাপের বিজনেসম্যান সালাম শাহরিয়ারের এই এক বাক্যে শিকদার বাড়ির খাবার টেবিলে একটা বড়সড় বজ্রপাত ঘটলো। বাড়ির কর্তা সাইফ শিকদারের মাত্রই মুখে তোলা খাবার টুকু তালুতে উঠে বিষম লেগে গেলো। তিনি মাথায় হাত চেপে কাশতে লাগলেন। পাশেই তার সহধর্মিণী রিনা শিকদার খাবার পরিবেশন করছিলেন। সালাম সাহেবের কথায় তিনিও থ মেরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু স্বামীর দমবন্ধ অবস্থা দেখে পানির গ্লাস নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন। সাইফ শিকদার স্ত্রীর হাত থেকে পানিটা নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটাই খেয়ে নিলেন। স্থির হয়ে আড় চোখে টেবিলের শেষ প্রান্তে খাবারের প্লেটে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বসে থাকা শিকদার বাড়ির একমাত্র কর্নধার তৈমুর জাহানের দিকে তাকালেন। তৈমুর তা অনুভব করতে পেরে তাৎক্ষনাক স্বাভাবিক ভাবে আবার খাওয়া শুরু করলো।
সালাম সাহেব হঠাৎ এমন বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় অপ্রস্তুত হলেন বেশ। তিনি খানিকটা সময় নিয়ে বললেন,
:- সাইফ ভাইজান, একসাথে ব্যবসায়ের ক্ষাতিরে আমাদের অনেক বছরের চেনা জানা। আপনি তো জানেন আমার স্ত্রী সাফিয়ার সাথে রিনা ভাবিজানের সাথে কতটা আত্মিক সম্পর্ক। সাফিয়ায় আমার কাছে আবদার টা রেখেছিল। তা ছাড়া সারা মামণিকে আমারো বেশ পছন্দ। কত মিষ্টি ফুটফুটে মেয়েটা। এত ছোট বেলায় বাবা মা কে হারিয়েছে ভাবলেও মায়া হয়। কিন্তু আপনারা তো তাকে বাড়ির মেয়ে হিসেবেই বড় করেছেন। আপনারাই তার বর্তমান অভিভাবক। তাই আপনাদের কাছেই প্রস্তাব টা রাখা। কিন্তু আপনাদের প্রতিক্রিয়া দেখে আমার মনে হয় একটু বেশিই তাড়াহুড়ো করে ফেললাম।
ততক্ষণে তৈমুর খাবার শেষ করে উঠে দাড়ালো। ঘুরে যেতে নিয়েও আবার দাড়িয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলল,,
:- সারার আগে শিকদার বাড়িতে বিয়ের উপযুক্ত আরো দুটো মেয়ে আছে। তাদের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত সারার কথা কেউ ভাববে না।
কথাটা শেষ করেই কারো জবাবের অপেক্ষা না করে ধীর অথচ দৃঢ় পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল।

সালাম সাহেব তৈমুরের জবাব শুনে আমতা আমতা করে বললেন,,
:-ভাইজান আপনারা যদি সময় নিতে বলেন তো..

সালাম সাহেবের কথা শেষ করার আগেই সাইফ শিকদার বললেন,,
:- সালাম সাহেব এই ব্যাপারে আমরা না হয় অন্য কোন দিন কথা বলবো। আমার ছেলে যে কতটা বললো সেটাও যথার্থ। আমাদের বাড়ির বড় দুজন মেয়েকে আমরা আগে বিয়ে দিতে চাই। তা ছাড়া সারা মা এখনো ছোট। মাত্রই সে কলেজে ভর্তি হয়েছে। তার বিয়ের কথা আমরা এখন ভাবতেই পারিনা।
সাইফ শিকদারের কথায় সালাম শাহরিয়ার কিছু বলতে নিবেন তার আগেই উপর থেকে নেমে এলো শিকদার বাড়ির তিন কন্যা। সাইফ শিকদারের একমাত্র মেয়ে তুলি শিকদার,সাইফ শিকদারের ছোট ভাই আলিফ শিকদারের মেয়ে রেশমী আর সারা। তিনজনই ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিচে এসেছে। তুলি আর রেশমী সমবয়সী। তারা দুজনেই এবার অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। সারা এবারই কেবল মাত্র কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হয়েছে। সে কমার্সের স্টুডেন্ট। সারার কলেজ আর তুলি, রেশমীর ভার্সিটি একই জায়গায় হওয়াতে তাদের একসাথে যাতায়াত করতে সুবিধা হয়। আর তাদেরকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দেয় স্বয়ং শিকদার বাড়ির কর্নধার তৈমুর জাহান শিকদার। ৬ ফিট ১ ইঞ্চির তৈমুর জাহান পেশায় একজন ডক্টর। তৈমুরের হালকা ধূসর বর্ণের চোখের মণি জেনেটিক ভাবেই লাভ করেছে তার দাদাজান সরোয়ার শিকদারের থেকে। দেখতে লম্বা চওড়া পেশীবহুল শরীরের সুদর্শন অ্যারোগেন্ট তৈমুর জাহান অত্র শহরের একজন টপ কার্ডিওলজিস্ট।

সারা চৌধুরী। রিনা শিকদারের বড় বোন মিনা চৌধুরী এবং রাজিব চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে।দেখতে সে ছোটখাটো একটা বার্বি ডলের মতো। গোলগাল চেহারা। গায়ের রং উজ্জল ফর্সা। গাঢ় কালো ডাগর ডাগর চোখ আর মাথায় কোমর ছাড়ানো লম্বা সিল্কি চুল। পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চির উচ্চতা সারার।
সারার পাঁচ বছর বয়সে তার বাবা মা এক রোড অ্যাকসিডেন্টে মৃত্যু বরণ করেন। তখন থেকেই সাইফ শিকদার এবং রিনা শিকদারের কাছেই বড় হয়েছে সারা। খালামণি এবং খালুজানের কাছে সারা তার বাবা মায়ের ভালোবাসা পেয়েছে। তুলি আর রেশমীর কাছে পেয়েছে বড় বোনের ভালোবাসা। তবে তৈমুর জাহানের ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। সে না সারার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে আর না কোন রকম স্নেহ ভালবাসা জাহির করে। শিকদার বাড়িতে এই একমাত্র ব্যক্তি যার কাছে সারার অস্তিত্ব প্রায় শূন্য। তাতে অবশ্য সারার কোন সমস্যা নেই। বরং সে মনে মনে স্বস্তি বোধ করে। কারণ তার কাছে আতঙ্কের আরেক নাম তৈমুর জাহান শিকদার। তার রাশভারী গলার এক একটা হুঙ্কারে সারার প্রাণ যায় যায় অবস্থা হয়। তাই তাকে ইগনোর করে চলতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করে সারা।

শিকদার বাড়ির তিন কন্যা নিচে আসতেই সালাম শাহরিয়ারের কথার ইতি ঘটে। তুলি, রেশমী,সারা তিনজনই সালাম সাহেব কে দেখে কুশল বিনিময় করে। তিনিও তাদের মাথায় হাত রেখে দোয়া করেন। তাদের কে নিয়ে তৈমুর শিকদার বেরিয়ে যেতেই সালাম শাহরিয়ার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলেন,,
:-আচ্ছা ভাইজান আমরা না হয় অন্য কোন দিনই এই বিষয়ে কথা বলবো। আপাতত আমাদের অফিসে পৌঁছানো দরকার। পরপর হেসে বললেন,,,
:-আমিতো সাইফ ভাইজান কে নিতে এসে নিজেই আটকে খেলাম।

রিনা শিকদার সালাম সাহেবের কথায় হেসে বলেন,,

:- তাতে কি ভাইজান। আপনি তো এখন আর তেমন আসেন না। তাই আমরাও আপনাকে সেভাবে পাই না। মাঝেমধ্যে তো এমন আসতে পারেন আমাদের বাসায়।

সালাম শাহরিয়ার এবার শব্দ করে হাসেন। স্ব-কৌতুকে বলেন,,
:-যা বলেছেন ভাবিজান। কাজ না থাকলেও মাঝে মধ্যে আপনার হাতের সুস্বাদু খাবারের টানে কিন্তু আসায় যায়।

সালাম শাহরিয়ার এর কথায় উপস্থিত সবাই হেসে উঠলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই রেডি হয়ে সাইফ সিকদার এবং সালাম শাহরিয়ার অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলেন।

সাইফ শিকদার এবং আলিফ শিকদার তাদের সহধর্মিণী রিনা শিকদার এবং আলিফ শিকদারের স্ত্রী সিমা শিকদার তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই শিকদার বাড়িতে একসাথে বসবাস করেন।
আলিফ শিকদার বড় ভাইয়ের সাথে বিজনেস দেখাশোনা করার অপশন থাকা সত্ত্বেও তার এই বিজনেসের প্রতি কোন আগ্রহ নেই। ওনার নিজেস্ব একটা বড় পশুপাখির খামার আছে। সেখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি পশু পাখি পালন করেন। পশুপাখির প্রতি ওনার ছোটবেলা থেকেই একটা তিব্র টান রয়েছেন যা তার স্ত্রী সিমা শিকদারের কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়। আলিফ সিকদার একমাত্র এই পশু পাখির প্রতি পাগলামির কারণে বাড়ি ছেড়ে খামারবাড়িতে গিয়ে থাকেন।
আলিফ সিকদার সারাকে বড় ভাই ভাবীর মত স্নেহ ভালবাসা দিলেও এ বাড়িতে একমাত্র সীমা শিকদার ছাড়া কে একটু অন্যরকম চোখে দেখেন। সব সময় অনাথ বলে আড়ালে আবডালে খোঁটা দিয়ে কথা বলেন। তিনি সারা কে খুব একটা সহ্য করতে পারেন না। তার কারণ তিনি মনে মনে যে পরিকল্পনা করেছেন আজীবন, তা একমাত্র সারার কারণেই ধুলিস্যাৎ হয়েছে। এর কারণ অবশ্য আপনারা একে একে জানবেন।

সিমা শিকদার এতক্ষণ কিচেনে কাজে ব্যস্ত ছিলেন। খাবার টেবিলের এতক্ষণ ঘটে যাওয়া সকল কথায় তার কানে এসেছেন। মনে মনে কিছু একটা ভেবে তিনি উৎফুল্ল হন। রিনা শিকদার বাসন নিয়ে রান্নাঘরের বেসিনে রেখে ঘুরে দাড়াতেই সিমা শিকদার তার সামনে গিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলেন,,

:- আপা সালাম ভাই তখন সারার ব্যপারে কি বলছিলেন? তিনি তার ছেলের জন্য সারাকে নিতে চান?

ছোট জায়ের কথা শুনে রিনা শিকদার বলেন,,
:- হ্যাঁ। সালাম ভাইজান বলছিলেন কিন্তু,,,

:-আরে আপা এখানে কিন্তু কি? সালাম ভাইয়েরা যথেষ্ট বড়লোক‌‌। তার ছেলেও উচ্চশিক্ষিত। আমরা তো তাকে দেখেছি‌। কত ভালো ছেলেটা। তার সাথে বিয়ে হলে ছাড়া তো ভালোই থাকবে। ওর ভবিষ্যৎ নিয়েও আর চিন্তা করতে হবে না।

সীমা শিকদারের কথা শুনে তাজ্জব বনে গেলেন রিনা শিকদার। থমথমে মুখে ছোট জায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,,
:-তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ছোট? কি সব আবোল তাবোল বকছিস? কি বলছিস সেটা আদৌ ভেবে বলছিস? এটা কি আদৌ সম্ভব?? তাছাড়া জাহান কি বলল শুনলি না?
এখানে জাহানকে অগ্রাহ্য করে কিছু বললে তুফান বয়ে যাবে শিকদার বাড়িতে জেনে রাখ।

চলবে,,,,

#সারা_জাহান
পর্ব,,, ২
মৌমো তিতলী
🫶

ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামায় তৈমুর। একে একে তুলি, রেশমী আর সারা গাড়ি থেকে নামে। তৈমুর গাড়ির কাচ নামিয়ে বোনকে ডাকে। তুলি এগিয়ে এসে দাড়াতেই বলে,,
:- ভার্সিটি শেষে এখানেই অপেক্ষা করিস। আমি নিতে আসবো। একবার সারার দিকে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,,
:-ওকেও রাখিস তোদের সাথে। একা যেন না যায়।
ভাইয়ের কথা শুনে তুলি নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসে। আড়চোখে সারার দিকে তাকিয়ে বলে,
:-ওক্কে ভাইয়া। তুমি চিন্তা করোনা। আমরা এখানেই থাকবো।

:-হুম সাবধানে থাকিস। বলেই গাড়ি স্টার্ট করে হসপিটালের উদ্দেশ্য প্রস্থান করে তৈমুর। তুলি, রেশমী,সারাও ভার্সিটির ভেতরে প্রবেশ করে যার যার ক্লাসে ঢুকে।

*******
লাইফ কেয়ার হসপিটাল। শহরের বেশ নামীদামী, ব্যয়বহুল হসপিটালের মধ্যে অন্যতম। এই হসপিটালেরই টপ শ্রেণীর একজন কার্ডিওলজিস্ট তৈমুর জাহান শিকদার। একই হসপিটালে তৈমুরের বেস্ট ফ্রেন্ড সায়ান মাহমুদও একজন ডক্টর হিসেবে নিযুক্ত। সায়ান একজন সার্জন। তৈমুর,সায়ান একই সাথে মেডিকেলে পড়াশোনা করেছে। তখন থেকেই দুজনের মধ্যে স্ট্রং বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। এখনো দুজন একই হসপিটালে নিযুক্ত থাকায় সম্পর্কটা আরো দৃঢ় হয়েছে। এমন কোন বিষয় নেই যা দুজন দুজনের ব্যপারে জানে না। এক কথায় অসাধারণ সম্পর্ক দুজনের। গম্ভীর অ্যারোগেন্ট তৈমুর জাহান শিকদার তার মনের কথা একমাত্র উন্মুক্ত ভাবে নির্দ্বিধায় সায়ান কেই ব্যক্ত করে। সায়ানও তাই।
তবে সায়ানের চারিত্রিক গুণাবলী তৈমুরের সম্পূর্ণ বিপরীত। পুরো লাইফ কেয়ার সায়ান কে ফ্লার্টিং বয়, প্লেবয় বলে জানে। অত্যান্ত চটপটে আর স্মার্ট সুদর্শন যুবক হওয়াতে মেয়েরা সহজেই পটে যায়। সায়ানের ফ্লার্টিং স্কিল এতটাই ইউনিক আর স্ট্রং যে মেয়ে রা একটু বেশিই অ্যাটেনশন দেয় তাকে। সায়ানও তার ফায়দা নিতে ভুলে না। সারাক্ষণই কারো না কারো পিছে ফ্লার্টিং করা সায়ানের স্বভাব। একদিকে ছটফটে,কথার ফুয়ারা ঝরানো সায়ান আর ওপর দিকে কম কথা বলা শীতল, গম্ভীর,অ্যারোগেন্ট তৈমুর জাহান শিকদার।
তবে তৈমুরের এই অ্যাটিটিউড এর প্রেমে পড়া রমনীদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সেখান থেকে বাদ পড়ে না হসপিটালের ডিনের মেয়ে লুবানা সিঁথিও। মেয়েটা একরকম জোঁকের মতো তৈমুরের পিছে পড়ে আছে। শুধুমাত্র হসপিটালের ডিনের মেয়ে বলেই তৈমুর তাকে সহ্য করে। তবে ইগনোর করে ১০০%।

আজও তৈমুর হসপিটালে এসে নিজের কেবিনে ঢুকতেই লুবানা এসে হাজির। তৈমুর লুবানা কে দেখেই বিরক্তিতে “চ” শব্দ করে অস্ফুটে। লুবানা অতিরিক্ত মর্ডান। সাজগোজ আর ড্রেসআপ দেখলে সবসময় একজন মডেল বলে ভুল করবে সবাই। এখনো সে একটা লেডিস জ্যাগিন্সের সাথে স্লিভলেস টপ পরেছে। মাথায় কার্লি হেয়ার গুলো স্টাইলিশ ভাবে সেট করা। ঠোঁটে কড়া রঙের লিপস্টিক,মুখে পুরু মেকআপের আস্তরণ, আঙ্গুলে ফলস নেইলস। তৈমুরের কেনো যেনো লুবানা কে পুরাই জোকার লাগে। তৈমুর মেয়েদের এসব অত্যাধুনিক সাজগোজ, ওয়েস্টার্ণ ড্রেসআপ আর এসব ঢঙ্গি ভাবভঙ্গি পছন্দ করে না।
তৈমুর ভাবে তাহলে তার কেমন মেয়ে পছন্দ?? প্রতিবারের মতো এবারও হৃদস্থলে অতি সাধারণ অগোছালো আলুথালু ইমম্যাচিউর একটা মুখ উঁকি দিয়ে যায়। তৈমুরের ভাবনা বেশিদুর আগাতে পারে না। লুবানা ন্যাকামিতে গলে পড়ে তৈমুরের ওপর। গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আহ্লাদী স্বরে বলে,,

:-হেই তৈমুর শিকদার। গুড মর্নিং!!

তৈমুর অনিচ্ছা সত্যেও গম্ভীর গলায় জবাব দেয়,
:-মর্নিং। তবে চোখ তুলে একবারও তাকায় না লুবানার দিকে।
তখনই কেবিনে প্রবেশ করে সায়ান। লুবানা কে দেখেই তৈমুরের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে অসুবিধা হয় না বন্ধু তার বড়ই বিরক্তবোধ করছে। তবে সায়ান তা পাত্তাও দিলো না,,বরং এসেই লুবানার হাত ধরে চপাৎ করে একটা চুমু দিয়ে বলল,,,
:- হাই!! কে তুমি সুন্দরী,, আগে তো দেখিনি,,

লুবানা সায়ানের বাঁদরামিতে হতাশ হয়। সায়ানের ফ্লার্টিং আর স্বভাব দেখে মাঝেমধ্যে লুবানারও মনে হয়, তৈমুরের মত একটা গুরুগম্ভীর এরোগেন্ট লোকের সাথে সায়ানের মত একটা বাদর মার্কা ছেলের বন্ধুত্ব কি করে হলো!
লুবানা সায়ানের হাত ছেড়ে বলে,,

:- স্টপ ইট সায়ান! ডোন্ট ফ্লার্টিং মি!!

সায়ানও আশ্চর্য হওয়ার ভান করে মুখে হাত চেপে বলে,,,

:- একি 😱 লুবানা তুমি!! তুমি এত সুন্দর কেনো? আর আজ এতো সেজেছো কেনো?
সায়ান লুবানা কে সুন্দর বলায় লুবানা একটু লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলে,,
:- কি যে বলো সায়ান!! তারপর হতাশ হয়ে বলে,,
:-সুন্দর হয়েই বা কি!! আড়চোখে তৈমুরের দিকে তাকিয়ে তাকে ঠেস দিয়ে বলে,,

:- কোন সুদর্শন পুরুষের নজরে তো আমার সৌন্দর্য পড়ে না।

লুবানার কথা শুনে সায়ান বাপ্পারাজের মত কপালে হাত রেখে চিৎকার করে ওঠে,,

:-না আমি বিশ্বাস করিনা! এটা তুমি কি বললে! কোন সুদর্শনের নজর পড়ে না এটা তুমি বলতে পারলে লাবু? আমাকে কি তোমার সুদর্শন বলে মনে হয় না? আমি কি সুদর্শন সুপুরুষ নই?

এদের দুজনের ন্যাকামি কথা শুনে বিরক্তীতে কপাল কুঁচকে যায়। তৈমুরের বিরক্ত চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,,

:- You two shut up now,,,and get out of my cabin immediately!!

তৈমুরের গর্জন শুনে লুবানা সুড়সুড় করে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। সায়ান তৈমুরের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসতে থাকে 😁

তৈমুর সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

:- অ্যান্ড ইউ সায়ানাইড! তোকে কি ইনভাইটেশন কার্ড দিতে হবে? গেট আউট ফর্ম মাই কেবিন!

সায়ান বেরিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে আয়েশ করে চেয়ারে বসে পড়ে!! হাসতে হাসতে বলে,,,

:- সক্কাল সক্কাল নেকু নাম্বার ওয়ানের রাগ আমার ওপর ঝাড়ছিস কেনো? নাকি অন্য কোন ব্যাপার আছে ব্রো! মেজাজ এতো তুঙ্গে কেনো?

সায়ানের কথায় কপাল কুঁচকে বিড়বিড় করে তৈমুর।
:-আজকাল বাড়িতেই নিজের বিয়ে করা বউয়ের ঘটকালি দেখতে হয়,মেজাজ আর কতো ভালো থাকবে!

তৈমুর কে বিড়বিড় করতে দেখে সায়ান জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে?
তৈমুর সকালে ঘটে যাওয়া সবকিছু খুলে বলে। তৈমুরের কথা শুনে সায়ান ঘর কাঁপিয়ে হাসতে থাকে,,

তৈমুর বিরক্ত হয়ে বলে,,

:-Why are you laughing like an idiot? This isn’t funny!!

সায়ান কোনমতে হাসি থামিয়ে বলে,,,

:-ফানি নয়তো কি? শ্বশুরের কাছে বউমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাও আবার হাজব্যান্ডের সামনে। বলে আবারো হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে তৈমুরের দিকে তাকাতেই দেখে তৈমুর কটমট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে,,সায়ান কষ্টে হাসি কন্ট্রোল করে নেয়। সিরিয়াস হয়ে বলে,,

:- দেখ দোস্ত! আমার মনে হয় তোদের এবার বিষয়টা ছোট্ট ভাবিকে জানানো উচিত। মানে ভাব একবার,কত ছোট্ট বয়সে তোর সাথে তার বিয়ে হয়েছিলো যে এই বিয়ের কথা তার মনেই নেই। কিন্তু তোর তো মনে আছে। তোদের বাড়ির প্রতিটা মানুষের মনে আছে। কিন্তু তুই নিজেই সেই বিয়ের দিন থেকে আজ পর্যন্ত এই সম্পর্কটা নিয়ে কারো সাথে কোন রকম আলোচনা করিসনি। এমনকি ছোট্ট ভাবির সাথেও তোর কথা বলা প্রায় শূন্য। তোর প্রতি তার তো কোন অনুভূতিই নেই। বাড়ির সকলেরও ধারণা হয়েছে তুই হয়তো তোর পনের বছর বয়সে হওয়া বিয়েটা মেনে নিসনি। দেখ তৈমুর তুই, আমি আর তোর বাড়ির লোকজন ছাড়া তো এই বিয়ের কথা কেউ জানেই না। এমনকি তোর বউও না। আজ বাইরে থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে কাল যদি ছোট্ট ভাবির অন্য কাউকে পছন্দ হয়! যদি তোর জায়গা অন্য কেউ,,,,

এতক্ষণ সায়ানের প্রত্যেকটা কথা তৈমুর মন দিয়ে শুনছিলো। এ পর্যায়ে এসে হুঙ্কার দিয়ে ওঠে তৈমুর,,,

:-অসম্ভব! কখনো তা আমি হতে দেবো না। সারার জীবনের এক এবং একমাত্র পুরুষ আমি। এই তৈমুর জাহান শিকদার। সেখানে ওর মনে তো দুরের কথা ওর চৌহদ্দির মধ্যে আমি কাউকে অ্যালাও করবো না। কথা বলতে কপালের রগ ফুলে ওঠে তৈমুরের।

সায়ান তৈমুরের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে,,
:- ওকে ওকে রিল্যাক্স! দেখ আমি বলছি না এরকমটা হবেই। কিন্তু এটা তো ভাববি কারো মনের ওপর কিন্তু অন্য কারো হাত চলে না। হাত তখনি চলে যখন ওপর দিকের মানুষটার মনে তার দৃঢ় প্রভাব থাকে। কিন্তু তুই তো ভাবির সাথে সেভাবে কথায় বলিস না। তোর প্রতি তার আগ্রহ অনুভব কি করে তৈরি হবে?

সায়ানের কথায় বাঁকা হাসে তৈমুর। বলে,,,
:- এর জন্যও ফুল প্ল্যান আছে আমার কাছে। সারার এখন সতের বছর চলছে। সামনেই ওর বয়স আঠারো হবে। ওর এইচএসসি পরীক্ষার পর আমি ওর মনে ধীরে ধীরে আমার তীব্র প্রভাব বিস্তার করে নেবো। ওকে ওর দ্বিতীয় পরিচয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। ও আমাকে অনুভব করতে বাধ্য। আর তা আমি তৈমুর জাহান শিকদার নিশ্চিত করবো। সারা আমার। একান্তই আমার। আমার শরীরের অংশ সে। আমার #সারা_জাহান…..

চলবে,,,

#সারা_জাহান
পর্ব,,,৩
মৌমো তিতলী
🫶

শিকদার বাড়ির তিন কন্যা কে নিয়ে মাত্রই বাড়ি ফিরেছে তৈমুর। তুলি, রেশমী,সারা যে যার মতো নিজেদের ঘরে চলে যায় ফ্রেশ হতে। তৈমুর ড্রইং রুমে বসে মাকে আওয়াজ দেয়,,

:- আম্মু এক গ্লাস পানি দাও তো।

কিচেনে কাজে ব্যস্ত ছিলেন রিনা আর সিমা শিকদার। রিনা শিকদার ছেলের ডাকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে ড্রইং রুমে উপস্থিত হন। ছেলের হাতে পানির গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে পাশেই বসেন তিনি।
তৈমুর পানিটা শেষ করে উঠতে নিলেই বাঁধ সাধলেন রিনা।

:- তোমার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো আব্বা। সময় হবে তোমার?
মায়ের কথায় ঘুরে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তৈমুর বুঝতে পারে মা কি ব্যাপারে কথা বলবেন। শান্ত স্বরে বলে,,

:-আমি সময় করে তোমার রুমে যাবো আম্মু। এখন নয়। এখন খুব ক্লান্ত লাগছে।
রিনা শিকদার ছেলের কথায় ব্যস্ত কন্ঠে বলেন,,,

:- ঠিক আছে আব্বা। তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করো আমি তোমার খাবারটা ওপরে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

তৈমুর মায়ের কথায় আর জবাব দেয় না। চুপচাপ ওপরে চলে যায় নিজের রুমের উদ্দেশ্যে।
পরপর চারটা ঘর। প্রথম থেকে তুলি, রেশমী তারপর সারার রুম। সারার রুমের পাশেই শেষ রুমটা তৈমুরের। তুলি, রেশমীর রুম পেরিয়ে সারার রুমের সামনে আসতেই দরজা খুলে বেরিয়ে আসে সারা। তার দিকে নজর পড়তেই কোন এক অদৃশ্য মন্ত্রবলে তৈমুর জাহানের পা দুটো এখানেই আটকে যায়।
সারা সদ্য গোসল করে বেরিয়েছে বুঝতে অসুবিধা হয় না তার। ভেজা লম্বা চুল গুলো থেকে টুপটাপ করে মুক্তদানার মতো পানি ঝরে পড়ছে। চোখের পাপড়িতে পানি জমে আছে। সাদা বেগুনী রঙের একটা লং গাউন জড়িয়ে ঠিক সকালের শিশির ভেজা স্নিগ্ধ কলমি ফুল মনে হচ্ছে সারাকে। তৈমুর জাহান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয় অপলক।

এদিকে অপ্রত্যাশিত ভাবে তৈমুরের সামনে পড়ে অপ্রস্তুত হয় সারা। তার ওপর তৈমুরের তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তিতে মিইয়ে যায় যেন। পারে না আবারো নিজের রুমে গিয়ে ধাম করে দরজা টা লাগিয়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে‌। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে এক পাও নড়তে পারে না সারা। তৈমুর জাহানের সামনে দাঁড়িয়েই ইতিউতি তাকিয়ে হাত কচলাতে থাকে। সেদিকে খেয়াল করে নিজেকে স্বাভাবিক করে তৈমুর। সামান্য গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,,,

:-কোথায় যাচ্ছিলি এভাবে?

তৈমুরের কথায় সারা এক নজর চোখ তুলে তাকায়। ফের চোখ নামিয়ে নিয়ে মিনমিন করে বলে,,
:-তুলি আপুর কাছে যায়।

সারার কথায় তৈমুর বলে,,
:- চুল থেকে পানি পড়ছে দেখিস না? মুছিসনা কেন ভালো করে? পুরো ফ্লোর তো পানিতে ভিজিয়ে দিয়েছিস। এরপর তুইই পিছলে পড়বি। এখনি গিয়ে ভালো করে চুল মুছে আয়।

তৈমুরের বলতে দেরি কিন্তু সারার তার সামনে থেকে উধাও হতে দেরি নেই। সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের রুমে চলে যায় তৈমুর।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তুলি, রেশমী, সারা নিচে নেমে আসে। ডাইনিং টেবিলে বসতেই সিমা শিকদার তাদেরকে খেতে দিয়ে দেয়। তাদের খাওয়া শেষ হতেই রিনা শিকদার সারাকে ডেকে তৈমুরের খাবারটা ওপরে দিয়ে আসতে বলেন। সারা আঁতকে উঠে বলে,,

:-আমি কেনো খালামণি! তুলি আপু না হয় রেশমী আপুকে বলো না। ওরা কেউ গিয়ে দিয়ে আসুক।
রিনা শিকদার সারার কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে যেন সারার মনের ভাবটা বুঝতে পারেন। বলেন,,

:- তুই আমার ছেলেটাকে এতো ভয় পাশ কেনো সারা? জাহান কি তোকে কখনো বকেছে? ধমক দিয়েছে?

:-কি বলছো খালামনি!! আমি তা কখন বললাম।

:-আচ্ছা বললি না তাহলে নে ধর খাবারটা। আর অজুহাত না দিয়ে জাহানকে গিয়ে দিয়ে আয়। এখনো না খেয়ে আছে ছেলেটা।

সারা আর কিছু না বলে খাবার নিয়ে আস্তে আস্তে ওপরে চলে যায়। দু হাতে খাবারের ট্রে ধরে রাখায় নক করতে পারে না তাই তৈমুরের রুমের সামনে গিয়ে মৃদু স্বরে ডাকে ,,,

:- জাহান ভাইয়া!! দরজা খুলুন। খালামনি আপনার খাবার পাঠিয়েছে। ভেতর থেকে কোন জবাব আসে না। সারা আবারো ডাকে,,
:- জাহান ভাই….

সারার ডাক সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই দরজা খুলে বেরিয়ে আসে তৈমুর। সারার হাতে খাবারের ট্রে দেখে দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। সারা মৃদু পায়ে রুমে প্রবেশ করে। খাবারের ট্রে টেবিলের ওপরে নামিয়ে রেখে চলে যেতে নিলেই পেছন থেকে তৈমুরের ডাকে আবার থেমে যায়।

:-কোথায় যাচ্ছিস?

:-নিচে যাচ্ছি। আপনি খেয়ে নিন। খালামনি এসে প্লেট নিয়ে যাবে।

:- তুই এতো ম্যানার্সলেস কবে থেকে হলি? কাউকে খাবার দিয়ে যে তার খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাশে থাকতে হয় জানিস না?
তৈমুরের কটাক্ষে থতমত খায় সারা। বোকার মতো তাকিয়ে থাকে তৈমুরের দিকে।

তৈমুর খেতে বসে‌ পাশের চেয়ারটা টেনে নিয়ে সারাকে সেখান বসতে বলে। সারা কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে হাত কচলাতে শুরু করে। তারপর ধীর পায়ে গিয়ে বসে।

খেতে খেতেই তৈমুর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সারার দিকে। সারার কোন ধারালো চোখের বাজপাখির সামনে নিজেকে ছোট্ট চড়ুই মনে হচ্ছে। নীরবতা এসেই থাকে চারিপাশ। হঠাৎ তৈমুর নিরবতা ভেঙ্গে প্রশ্ন করে,,

:- তোর আঠারো বছর হবে কবে?

সারা তৈমুর এর এমন প্রশ্নে খেয় হারালো যেন। হঠাৎ ওর বয়স নিয়ে পড়লো কেনো?

:-কিরে একটা প্রশ্ন করেছি তো! জবাব দিস না কেন?

:-এই বছরেই অক্টোবরের ৫ তারিখে।

:-ওহ। তাহলে তো বেশি দেরি নেই। পারফেক্ট।

:-কিসের জন্য জানতে চাইছেন? আর পারফেক্ট কিসের জন্য?

সারার কৌতুহলি প্রশ্নে মজা পায় তৈমুর। তবে মুখ তার যারপরনায় গম্ভীর। মুখটা সিরিয়াস রেখেই বলে,,

:- তোর বিয়ের জন্য পারফেক্ট।

তৈমুরের কথায় সারা তাজ্জব বনে যায়। তৈমুর জাহান যে কিনা সারার সাথে সেভাবে কথায় বলে না। যার উপস্থিতিই তৈমুরের চোখে পড়ে না সেই তৈমুর জাহান শিকদারের মুখে বিয়ের কথা শুনে সারার মুখ হাঁ হয়ে গেল।

:-কি বলছেন আপনি এসব? বিয়ে মানে? কার বিয়ে? কিসের বিয়ে?

:-তোর বিয়ে। তোর জন্য তো আজকাল বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব আসছে। তাই ভাবছি তোর বিয়েটা এবার দিয়ে দেবো।

:-মানে? আপনি বললেই হলো নাকি? তুলি আপু রেশমী আপুরই এখনো বিয়ে হলোনা আমার বিয়ে কি করে হবে? আমি এখন বিয়ে করবো না।

:- তুলি বা রেশমীর জন্য তো সম্বন্ধ আসেনি। এসেছে তোর জন্য। তাহলে বিয়ে তো তোকেই দিতে হবে।

:-মগের মুল্লুক নাকি!! আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো না। আমি পড়াশোনা করবো। বলেই তৈমুরের ঘর থেকে ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে যায় সারা। সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে তৈমুর। খাবারের খালি প্লেট ট্রের ওপর গুছিয়ে রাখতে রাখতে ভাবে,
তার পাগলি বউ টা তো এটাই জানে না সে অলরেডি বিবাহিত। এই তৈমুর জাহান শিকদারের বিয়ে করা বউ সে। সারা জাহান শিকদার।

*****
সারা বিরহ মুখে তুলির রুমে গিয়ে ধাম করে খাটের উপর বসে। তুলি আর রেশমী পড়ার টেবিলে বসে একটা অ্যাসাইনমেন্ট কম্পিলিট করছিলো। সারাকে এভাবে মুখ গোমড়া করে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে। সারা তৈমুরের বলা কথা গুলো ওদের সাথে খুলে বলে। সব শুনে তুলি তো হেসে কুটি কুটি। বলে,,,

:-ভালোই তো। আমাদের সারা মনি বিয়ে করে শশুর বাড়ি চলে যাবে! আমরা একটু বিয়ে খেতে পারবো।

তুলির রসিকতায় আরো মন খারাপ করে সারা। রেশমীও তুলির সাথে হাসলেও সারার মন খারাপ হতে দেখে থেমে যায়। সারাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে সারার গালে চুমু দিয়ে বলে,,

:-ইসস বললেই হলো। আমাদের সারা বেবি কে আমরা এ বাড়ি থেকে কোথাও বিয়ে দেবো না। জাহান ভাইয়া নিশ্চয়ই মজা করেছে তোর সাথে।

সারা হতাশ গলায় বলে,,

:-জাহান ভাইয়া আর মজা? জাহান ভাইয়া কখনো মজা করতে পারে নাকি? সব সময় তো রাগী রাগী হয়ে থাকে যেন এখনি সব ভেঙ্গে ফেলবে।

সারার কথায় দুজন হাসতে থাকে । তুলি এমনিতেই হাসলেও রেশমী ভাবছে সারার কথা একেবারে ফেলে দেয়ার মতো না। জাহান ভাইয়া সারাকে বিয়ের সম্বন্ধ আসছে কেনো বললো? একটা প্রশ্ন মনের ভেতর ঘুরতে থাকে রেশমীর। নাহ ব্যপারটা জানতে হচ্ছে। ভাবে বাড়িতে এমন কিছু হলে তার মা নিশ্চয়ই জানবে। মায়ের কাছেই জিজ্ঞাসা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। তাৎক্ষনাক রেশমী উঠে মায়ের ঘরে যায়।

বিকেলের দিকে সিমা শিকদার নিজের ঘরেই থাকেন। টুকটাক কাজ করেন। রেশমী মায়ের ঘরে গিয়ে দেখে তিনি ঘরের আসবাবপত্র গুলো ঝাড়া মোছা করছেন। সিমা শিকদার রোজই এমনটা করেন। মেয়েকে দেখে মিষ্টি হাসি দেন তিনি। রেশমী মায়ের ঘরে বিছানায় গিয়ে বসে। মায়ের উদ্দেশ্য বলে,,

:-মা আমাদের বাড়িতে কি সারার জন্য কোন বিয়ের প্রস্তাব এসেছিলো?
মেয়ের আকস্মিক প্রশ্নে হাত থেমে যায় সিমার। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,,
:-মানে? তোকে কে বললো?
রেশমী সারার বলা তৈমুরের কথা গুলো মাকে বললে তিনি প্রফুল্ল চিত্তে মেয়ের পাশে এসে বসেন। বলেন,,,

:-কি বলছিস সত্যি নাকি? তাহলে আমিই ঠিক ছিলাম। জাহান বাবা সারার সাথে তার বিয়েটা মেনে নেয়নি। এই জন্যই তো সালাম সাহেবের প্রস্তাব টা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবছে।
মায়ের কথায় স্তব্ধ হয়ে রেশমী। কি বলছে মা এসব। রেশমী মায়ের কথায় বলে,,

:-এসব কি বলছো তুমি? জাহান ভাইয়া কখনো নিজের মুখে বলেছে সে বিয়েটা মেনে নেয়নি?

:-শোন রেশমী সব কথা না মুখে বলতে হয়না। মেনে নিলে জাহান সারার সাথে মিশে সম্পর্কে টা ভালো করতে চাইতো। সারাকে বিয়ের ব্যাপারে অবগত করতো। সেসব যখন কিছুই করেনি উল্টে আরও অন্য কোথাও বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতো না। একবার সারার বিয়েটা অন্য কোথাও হয়ে যাক। তারপর আমি জাহান বাবার সাথে তোর বিয়ের প্রস্তাব রাখবো বড় ভাইয়ের কাছে।
মায়ের কথায় বিরক্ত হয় রেশমী। এই এক বাক্যে সে টিনেজ জীবন থেকে শুনে আসছে। বিরক্ত হয়ে বলে,,

:-তুমি থামবে মা? এত অবুঝ কেনো তুমি? কতবার বলেছি এই কথা আর কখনো‌ বলবে না। জাহান ভাইয়া কে আমি বড় ভাই বলে মানি। ঠিক যেমনটা তুলি ভাবে। ভাই ছাড়া কখনও অন্য নজরে দেখিনি। সেখানে বারবার তোমার এই কথা গুলো শুনতে বড্ড কুৎসিত লাগে মা। ভুলে যেওনা সারা জাহান ভাইয়ার বিয়ে করা বউ।

মেয়ের কথায় ক্ষেপে যান সিমা শিকদার। স্বামীর সারাজীবন সংসারের প্রতি উদাসীনতা নিয়ে নিজের আক্ষেপ মিটিয়ে গজগজ করতে থাকেন।

:-হ্যাঁ এখন আমি কিছু বললেই কুৎসিত লাগে। আমি তো তোর ভালো চাই না। তোর বাপ আমাকে বিয়ে করে এ বাড়িতে নিয়ে আসার পর থেকেই খামার বাড়িতে জানোয়ারগুলোর সাথে সংসার করছে। তার যে একটা মেয়ের বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে এটাতে তার কোন চিন্তা নেই। নিজেদের এত বড় ব্যবসা থাকতে সেখান থেকে তিনি হাত-পা গুটিয়ে রেখেছেন ।এত বড় সম্পত্তির কোন কিছুই বুঝে নেওয়া তো দূরে থাক সারাজীবন উদাসীন হয়ে কাটিয়ে দিলো। ভেবেছিলাম জাহানের সাথে তোর বিয়েটা দিয়ে অন্তত তোর জীবনটা নিশ্চিত করতে। কি ভুলটা ভেবেছি আমি?

রেশমি মায়ের কথায় তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে,,,

:-মা তোমার মেয়ে শিকদার বাড়ির মেয়ে। তোমার মেয়ে পথে পড়ে নেই। তাছাড়া অন্যের ঘর ভেঙে নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাইছো? তুমি এরকমটা কেন ভাবছো মা? দুনিয়াতে কি সুপাত্রের অভাব পড়েছে? প্লিজ মা, আমি তোমাকে অনুরোধ করছি, ভবিষ্যতে জাহান ভাইয়াকে নিয়ে এধরনের কোন কথা বলবে না। আর সারাকে মেনে নিতে শেখো। জাহান ভাইয়া অবশ্যই তাদের বিয়েটা মানে আর সারা কে ভালোও বাসে। দেখে নিও তোমরা।

চলবে,,,