সারা জাহান পর্ব-২৩+২৪+২৫+২৬

0
18

#সারা_জাহান
পর্ব,,,২৩
মৌমো তিতলী
❤️❤️❤️❤️❤️

সন্ধ্যার একটু আগে ভাগে নিজ ফ্ল্যাটে ফেরে সায়ান। বেশ বড়সড় ফ্ল্যাট। ডুপ্লেক্স আর বেশ বিলাসবহুল বলা যায়! তিন আর চারতলা মিলে এই ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট টা নিজেদের জন্য রেখে বাকিগুলো রেন্টে দেয়া। ঢাকার উত্তরা সিটির মতো ব্যাস্ত আভিজাত্য শহরের এই নয় তলা ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন সায়ানের দাদু তাজওয়ার মাহমুদ। তিনি পেশায় একজন ব্যারিস্টার ছিলেন। আগেকার যুগে বিলেত ফেরত জর্জ হিসেবে ওনার সুখ্যাতি ছিলেন বেশ। সায়ানের বাবার পৈতৃক বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানেই এখনো পর্যন্ত সায়ানের গ্রামের বাড়ি অবস্থিত। গ্রামে দুই চাচা এক ফুফুও আছে । তারা নিজেদের মতো গুছিয়ে নিয়েছেন গ্রামেই। সায়ানের বড় চাচা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক,ছোট চাচার বাজারে কাচা মালের আড়ৎ আছে। তা ছাড়া পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে বেশ জমিজমা, আটপৌরে জমকালো বাড়ি, পুকুর,বাগান সবই আছে। সেই হিসেবেই নিজের নিঝঞ্ঝাট জীবন যাপন করছেন তারা। সায়ানের বাবা সরোয়ার মাহমুদ ভাইদের মধ্যে মেজো।ঢাকার বাড়িটা তিনি পৈতৃক সূত্রেই পেয়েছেন।
সরোয়ার মাহমুদ উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে ইতালি পাড়ি জমিয়েছিলেন সেই যৌবন বয়সেই। সেখানেই ইন্ডিয়া থেকে পড়তে আসা সোহিনী খান কে ভালোবাসে বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলে সায়ান আর মেয়ে সুহানি কে নিয়ে ইতালিতেই সেটেল্ড‌ হন তিনি। কিন্তু ইন্টারমিডিয়েটের পর সায়ান জেদ ধরে বসে সে বাংলাদেশে আসতে চায়। নিজ দেশে থেকে ডাক্তারি পড়তে চায়। সায়ানের জেদের কাছে হার মেনে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেন সরোয়ার মাহমুদ।
ঢাকায় আসার পর থেকেই নিজেদের এই ফ্ল্যাটেই বসবাস সায়ানের। দেশে আসার প্রথম চার বছর চট্টগ্রামে কাটে তার। এখানে এসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তৈমুরের সাথে একই ফ্ল্যাটে থাকা,পরিচয় এবং বন্ধুত্ব হয় সায়ানের। তখন থেকে এখন পর্যন্ত দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েই রয়েছে।

ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে চারদিকে চোখ বুলায় সায়ান। প্রয়োজনীয় সবকিছুই আছে এই বাসায়। দামি দামি আসবাব পত্র, মস্ত মস্ত পাকা কাঠের তৈরি কারুকার্য খচিত সব সোফা, আলমারি,বেড দিয়ে সাজানো এক একটা ঘর আর লিভিং রুম। সায়ানের ব্যবহৃত রুমটা ছাড়া বাকিগুলো তালা মারাই থাকে। নিজের জন্য একটা বেডরুম, লিভিং রুম আর কিচেন এইটুকু নিয়েই সায়ানের বসবাস। মাঝেমধ্যে বন্ধুবান্ধব বলতে তৈমুর আর লুবানার আনাগোনা হয় কয়েকবার। আর রান্নার জন্য সায়ানের বড় চাচার পাঠানো মাঝবয়সী মহিলা তারা বেগম থাকেন এই বাসায়। সায়ান তাকে তারা ফুফু বলে ডাকে। তারা বেগমের একটা মেয়ে ছাড়া দুনিয়ায় কেউ নেই। স্বামী গত হয়েছেন আরো সতের বছর আগে। মেয়েটার বিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে শশুর বাড়ির লোকেরা তেমন একটা সুহৃদয়ের নয়! একা অসহায় মায়ের খোঁজখবর নিতে আসার নামে ঘনঘন বাপের বাড়ি আসা তারা পছন্দ করে না। নিঃসঙ্গ তারা বেগমকে তাই সায়ানের বড় চাচা শহরে ভাইপোর দেখাশোনা আর রান্না করে দেয়ার জন্য পাঠান তিনি। তারা বেগম বেশ মিশুকে স্বভাবের মহিলা। সায়ানকে ছেলের মতই দেখেন। তারা বেগমের আরেকজন পছন্দের মানুষ হলো তৈমুর জাহান শিকদার। তৈমুর কে তিনি বেশ স্নেহ করেন আর মান্যোও করেন। কিচেনের পাশে ছোট্ট একটা গেস্টরুমে থাকেন তারা বেগম।
সায়ান বাসায় আসতেই এক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে হাজির হন তারা বেগম। সায়ান হাসিমুখে শরবতটুকু শেষ করে বলে,,,

:-আগামী শুক্রবারে বাবা মা আর বোন দেশে আসবে ফুফু। ঘরবাড়ি একটু পরিষ্কার করে রেখো তুমি।

তারা বেগম শুনে বেশ খুশী হন। “আইচ্ছা” বলে কিচেনের দিকে চলে যান।

সায়ান দম ফেলে ওপরে আসে। নিজের রুমে প্রবেশ করেই এসি অন করে ওয়াশ রুমে ঢুকে।ফ্রেস হয়ে শাওয়ার নিয়েই বের হয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটা কালো ট্রাউজার আর এ্যাস কালারের টিশার্টে আবৃত করে নিজেকে। চুলগুলো সেট করে বিছানায় গিয়ে বসে। ফোন চেপে তুলির কয়েকটা ছবি নেড়েচেড়ে দেখে। আজ তৈমুরের ফোন থেকে জবরদস্তি ছবিগুলো আদায় করেছে সায়ান। কারন বিয়ে ঠিকঠাক হওয়ার আগে পর্যন্ত তুলির সাথে কথা বলতে না করেছে তৈমুর। বিনিময়ে ছবিগুলো আদায় করেছে সায়ান। ফোনের স্ক্রিনে তুলির হাসিমাখা মুখ ভাসছে। সেদিকে কয়েকপল তাকিয়ে থাকে সায়ান। ঠোঁট নেড়ে বিড়বিড় করে,,,

:-এখন শুধু মাত্র সময়ের অপেক্ষা তুলা!! এরপর তুমি আমার হবে। এই ঘরেই সংসার করবে তুমি আমার সাথে। আমার বউ হয়ে।
বলতেই মুখে লাজুক হাসি ফুটে ওঠে সায়ানের ঠোঁট জুড়ে। তুলির ছবিটা জুম করে তাতে ঠোঁট ছোঁয়ায়!!
ফের হাসে। অবুঝ মনটাকে শান্তনা দেয়!
“এখন শুধু ছবিতেই দিলাম কিন্তু! একবার হালাল সম্পর্কে নিজের করে নেই তারপর শুধু তোমার ঠোঁট নয়, তোমার পুরোটা জুড়েই থাকবে এই সায়ান মাহমুদের বিচরণ” আমার নরম নরম কোমল তুলা।

**********

আকাশে পূর্ণিমার গোলাকার চাঁদ। ঝলমলে জোৎস্না ঝরে পড়ছে চারপাশে। ছাদ ভর্তি ফুলের বাগান থেকে বিভিন্ন ফুলের মিষ্টি সুবাস ভেসে আসছে। এক মগ গরম কফি হাতে রাতের এই অপার্থিব সৌন্দর্য উপভোগ করছে‌ সারা। রেজাল্টের দিন ঘনিয়ে আসছে। তার আগেই সারাকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিংয়ে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে তৈমুর।
কয়েকদিন ধরে সারার কেনো যেনো মনে হচ্ছে কেউ তাকে ফলো করছে। কিন্তু আসেপাশে চোখ বুলিয়েও সন্দেহ করার মতো কাউকে দেখতে পায় না। বিষয়টা সত্যি নাকি তার মনের ভুল বুঝতে পারছে না সারা। এই দোটানায় তৈমুর কেও কিছু জানাতে পারছে না। সবমিলিয়ে একটা অস্বস্তিকর অবস্থায় দিন কাটছে তার। তৈমুরও আজকাল খুব ব্যস্ত থাকছে। সারার সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগেই তৈমুর হসপিটালে চলে যায়। আবার ফেরেও রাত করে।
এসব ভাবনার মাঝেই পেছনে কারো অস্তিত্বের আভাস পায় সারা। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখতে পায় তৈমুর ছাদের দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নজর তার দিকেই নিবন্ধ। হুট করে তৈমুর কে আজ এতো তাড়াতাড়ি বাসায় দেখে অবাকই হয় সারা। তৈমুর কে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে নড়েচড়ে দাঁড়ায়। তৈমুর গিয়ে সারার হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে আরামসে সিপ নেয়! তা দেখে সারা ব্যস্ত হয়ে বলে,,,

:-একিইই! জাহান ভাইয়া আপনি এটা খাচ্ছেন কেনো? এটা তো এঁটো হয়ে গেছে। আমি খাচ্ছিলাম তো!

সারার কথায় তৈমুর শীতল দৃষ্টিতে তাকায়। পরপর আবারও ঠোঁট ছোঁয়ায় কফির মগে। হাঁ করে তাকিয়ে আছে সারা। তৈমুর কে সে সূচিবায় জনিত রোগী বলেই জানে। একজন ডক্টর বলেই হয়তো তৈমুরের সবকিছুতে এতো খুঁতখুঁতুনি। অথচ এখন আরামসে সারার আধ খাওয়া… সরি আধা পান করা কফিতে নির্দ্বিধায় চুমুক দিয়ে চলেছে। পুরো মগ খালি করেই রেলিংয়ের ওপর ঠাস করে রাখে মগটা। মাথা ব্যাথার কারণে এখন কফির ভীষণ দরকার ছিলো তৈমুরের। সারাকে তাই কফি করার জন্যই খুঁজছিলো সে। ছাদে এসে আনমনা রুপসী কন্যা কে চন্দ্র বিলাস করতে দেখে অন্তর শীতল হয়। ঘোর লেগে যায় চোখে। কিছুক্ষণ পর অনুভব করে মাথা ব্যাথা যেন অর্ধেক কমে গেছে ‌। পরপর সারার হাতে কফির মগ দেখে সোনায় সোহাগা হলো যেন। এখন কফিটা শেষ করে বেশ ভালো লাগছে। মাইন্ড ফ্রেস করা দরকার। তারজন্য এবার প্রয়োজন সারা কে।
কফির মগটা রেখেই আচমকা দুহাতে সারার কোমর চেপে ধরে রেলিংয়ের ওপর বসিয়ে দেয় তৈমুর। সারা ভয় পেয়ে আর্তনাদ করে উঠে তৈমুরের গলা জড়িয়ে ধরে। তৈমুরও ঝটপট সারাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে সারার বুকে মুখ গুঁজে চোখ বন্ধ করে নেয়। তৈমুরের কাজে গলা শুকিয়ে আসে সারার। আজকাল মানুষ টার এতো গভীর ছোঁয়া সামলাতে পারে না মেয়েটা। কেউ যদি এই মুহূর্তে ছাদে চলে আসে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এই ভয়ে সারা মুচড়ামুচড়ি শুরু করে,,,তাতে বিরক্ত হয় তৈমুর।
সারার বুকে মুখ গুঁজেই বলে,,,

:-চিংড়ি মাছের মতো এতো ছটফট করছিস কেন? একটু চুপচাপ বসে থাকে না।

তৈমুরের কথায় ভেংচি কাটে সারা। আস্তে আস্তে বলে,,

:-ক..কি করছেন ছাড়ুন। কেউ এসে পড়বে।

তৈমুরের কোন হেলদোল নেই। ঘুমিয়ে পড়লো নাকি!! হাঁসফাঁস করে ওঠে সারা। তৈমুরের মাথায় কেশ রাশিতে হাত ডুবিয়ে আলতো করে নেড়ে ডাকতে থাকে,,

:-জাহান ভাইয়া!! শুনছেন! কেউ এসে পড়লে সর্বনাশ হবে। প্লিজ একটু সরে দাঁড়ান না।

তৈমুর ফুস করে শ্বাস ফেলে বলে,,,

:-উফফফ কেউ আসবে না। তোর শশুর শাশুড়ি রাতে ছাদে আসে না। আর তুলি,রেশমি নিজেদের রুমে বসে পড়ছে। তাই ফালতু চিন্তা বাদ দিয়ে চুপচুপ বসে থাক। পারলে মাথায় হাত বুলিয়ে দে। মাথা ব্যাথা করছে।

তৈমুরের মুখে “তোর শশুর শাশুড়ি” কথাটা শুনে শরীরে শিহরণ বয়ে যায় সারার। কেমন অদ্ভুত অনুভুতি দোল খেয়ে যায় অন্তরে। ঠোঁট চেপে মুচকি হাসে সারা। চুপচাপ তৈমুরের মাথায় আঙ্গুল বুলাতে থাকে।

প্রায় আধাঘণ্টা ধরে একই ভাবে বসে আছে সারা। তৈমুর এখনো সারার বুকে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। আবারো নড়াচড়া করতে থাকে সারা‌। এবার সারাকে ছেড়ে দাঁড়ায় তৈমুর। চোখদুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো সারার আঙ্গুল বুলানোর ফলে। তৈমুরের চোখের দিকে তাকিয়ে আঁতকে ওঠে সারা। চিন্তার ভাঁজ পড়ে কপালে। দুহাত তৈমুরের কাঁধে রেখে বলে,,

:-আপনার চোখ এতো লাল দেখাচ্ছে কেনো? মাথা ব্যাথা কমেনি একটুও?

সারার চিন্তিত স্বরে আলগোছে হাসে তৈমুর। সারাকে রেলিং থেকে নামিয়ে নিজের সাথে লেপ্টে দাঁড় করায়। এক হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে কানের নিচে দিয়ে গাল উঁচু করে ধরে। ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে থাকে সারার মুখের দিকে। হাস্কিস্বরে বলে,,

:-উমমম একদম মাথা ব্যাথা করছে না আর। কয়েকদিন ঠিকমতো ঘুম হয়নি তাই এমন লাগছে। তুই বল,তোর কোচিং কেমন চলছে?

:- হুম ভালো। আর দু সপ্তাহ পরেই এইচএসসি রেজাল্ট দিবে কিন্তু।

:-হুম জানি।

:-আপনি কোনো আগেই আমাকে কোচিংয়ে ভর্তি করালেন? যদি রেজাল্ট খারাপ আসে!

:-উহুম আসবে না। তোর ওপর আমার ভরসা আছে।

তৈমুরের কথায় মুচকি হেসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো সারা। তৈমুর সারার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,,

:-মাথা নিচু করলি কেন? তাকা আমার দিকে? আমাকে দেখ। চুমু খা আমাকে।

তৈমুরের কথায় কান গরম হয়ে যায় সারার। লজ্জায় লাল হয়ে যায় গাল দুটো। তিরতির করে কাঁপতে থাকে শরীর। তৈমুরের কাঁধে রাখা হাত দুটো আলগা হয়ে আসতেই তৈমুর খিচে নিজের দিকে টেনে নেয় সারাকে।
কোমর জড়িয়ে উঁচু করে ধরে নিজের সাথে। অতঃপর দুজনের ওষ্ঠের মিলন ঘটে। সফট অথচ উতলা হয়ে সারার অধরজোড়া শুষে নিতে থাকে তৈমুর তার তৃষ্ণার্ত অধর দিয়ে। পলপল করে সময় পেরিয়ে যায়। তবুও থমকে থাকে একজোড়া প্রেমিক যুগলের কিছু ঘোর লাগা মুহূর্ত।

***********

তালহা এহমাদ স্যারের হুমকি পাওয়া সত্ত্বেও ইচ্ছে করে আরো তিন চার দিন ছুটি কাটিয়ে আজ ভার্সিটিতে এসেছে রেশমি। এই কয়দিন সাহসের সাথে কাটালেও আজ ভার্সিটিতে এসে ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে বেচারির। একরকম লুকিয়ে লুকিয়ে থাকছে সে। কোনোভাবেই ক্লাসের আগে তালহা স্যারের সামনে পড়া যাবে না। ক্লাসে নিশ্চয় অতো স্টুডেন্টদের মধ্যে তাকে কিছু বলতে পারবে না।
চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে মাথায় বড় করে আধহাত ঘোমটা টেনে টুপ করে ক্লাসে ঢুকে চুপচাপ বসে থাকে রেশমী। আজ দুনিয়া এদিক থেকে ওদিকে হয়ে গেলেও এখান থেকে উঠে বাইরে যাবে না না না।

এদিকে সালমা,নিশি,রাতুল,নিরব সবাই এসে ঢুপঢাপ করে বসে পড়ে নিজেদের জায়গায়। সালমা পাশ ফিরে কাউকে আধ হাত ঘোমটা দিয়ে বসে থাকা দেখে চেঁচিয়ে ওঠে ,,,,

:-একিইই আফনে কেডা চাচি??? আরে চাচি এইডা আমাগোর মতো পোলাপান দের ক্লাসরুম। আফনে এইখানে ক্যামনে ঢুকছেন চাচী?

সালমার কথায় রেশমী দুহাতে ঘোমটা কিছুটা উঁচু করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,

:-কে চাচী? তুই চাচী! তোর বাপ চাচী,তোর মা চাচী,তোর পুরো খানদান চাচী!!

রেশমীর কথায় সালমা বোকা হেসে বলে,,,

:-এমাআআ রেশমী! এটা তুই? আমি ভাবলাম কে না কে। তা তুই এমনে প্যাকেট হয়ে আছিস ক্যা??

:-শখ হয়েছে তাই! তুই চুপ করে থাক। নিশি রাতুল নিরব হাঁ করে তাকিয়ে আছে সালমা আর রেশমির দিকে।
তখনই ক্লাসে প্রবেশ করে তালহা এহমাদ স্যার। রেশমি নিরব ,রাতুল আর নিশিকে ফিসফিস করে বলে,,,

:-এই তোরা তিনজন আমার সামনে বসে আমাকে কভার করে রাখ। স্যার তালহা যেন আমাকে কিছুতেই দেখতে না পায়।

রাতুল চোখ বড়বড় করে রেশমীর মতোই ফিসফিস করে বলে,,,

:-ক্যা রে! তুই স্যারের থেকে এমনে লুকাচ্ছিস কেন? তুই স্যারের কি চুরি করেছিস সত্যি করে বল!

রেশমী টেবিলের নিচে দিয়ে রাতুলের পায়ে পাড়া দিয়ে বলে,,,

:-মাইর না খাইতে চাইলে বেশি পকপক না করে যা করতে বলছি তাই কর ।

রাতুল দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করে বসে পড়ে নিজের জায়গায়। পেছনে তাকিয়ে চোখ রাঙানি দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,,,

:-শয়তানের নানি! স্যার একবার বের হোক ক্লাস থেকে। তোর দেখিস কি করি!
রেশমী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ভেংচি কাটে।

তালহা ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে রেশমী দের দিকে তাকাচ্ছে। মাঝে আধ হাত ঘোমটা দিয়ে বসে থাকা রেশমীর দিকে তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।

তালহা মনে মনে তাচ্ছিল্য হেসে ভাবে,,
“বোকা মেয়ে ভাবছে এভাবে নিজেকে প্যাকেট করে রাখলে মনে হয় তাকে চিনতে পারবে না” সে তো জানে না হাজারটা এরকম প্যাকেটের মধ্যে তাকে চোখ বন্ধ করে বের করে আনতে পারবে এই তালহা এহমাদ।

চুপচাপ বিনা বাঁধায় ক্লাস শেষ করে তালহা। ঘন্টা পড়লে যথারীতি ল্যাপটপ ভাঁজ করে ব্যাগে রাখে। ব্যাগটা হাতে নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে তালহা কে বেরিয়ে যেতে দেখেই হাফ ছেড়ে মাথার ঘোমটা সরিয়ে শ্বাস ফেলে রেশমি। ঠোঁটে হাসি টেনে বলে,,,

:-যাক! খাড়ুশ টা তাহলে চিনতে পারেনি।

এক এক করে সকল স্টুডেন্ট রা ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসে। সবশেষে রেশমী, সালমা, নিশি, রাতুল, নিরব বের হবে। নীরব রেশমীর মাথায় গাট্টা মেরে বলে,,,

:-ঘটনা কি রে দোস্ত!!! তুই আবার স্যার তালহার কোন পাকা ধানে মই দিয়ে এসেছিস?

রেশমী দাঁত বের করে হেসে বলে,,,

:-সব বলছি আগে ক্যান্টিনে চল! ক্ষিদে পেয়েছে। কিছু কিনে খেতে খেতে বলবানে।

সকলে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বেরিয়ে আসে ক্লাস রুম থেকে। সবশেষে বের হয় রেশমী। তখন ঘোমটা দেয়ার ফলে ওড়নায় লাগানো একটা সেফটিপিন বাজে ভাবে আটকে গেছে ওড়নায়। উল্টোপাল্টা টান লাগলে ওড়নাটা ছিড়বে নিশ্চিত। আলতো হাতে আলগোছে পিন ছুটাতে গিয়ে পায়ের গতি মন্থর হয়। পিছিয়ে পড়ে বন্ধুদের থেকে।
সিঁড়ির কাছে গিয়ে নিচে নামতে নিলেই পেছন থেকে কেউ এসে মুখ চেপে ধরে। আতঙ্কে হৃদপিন্ড ছলকে ওঠে রেশমীর। ছটফটিয়ে ছাড়াতে গেলে হাতের চাপ জোরালো হয়। নিচে নামার পরিবর্তে ওপরে ছাদের দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। নিজের ব্যালেন্স রাখতে তার সাথে সাথেই পা মিলিয়ে ওপরে উঠতে বাধ্য হয় রেশমী। অজ্ঞাত ব্যক্তির শরীরে যে অসুরসম শক্তি তা আগেই টের পেয়েছে সে। ধস্তাধস্তি করেও লাভ হবে না বেশ বুঝতে পারছে। অগত্যা ছাদে উঠে আসে। ছাদে পা রেখেই সেই ব্যক্তি রেশমী কে একপ্রকার ছুড়ে মারে ছাদের করিডোরে। নিজেকে সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে রেশমী। পরপর ধড়াম করে দরজা লাগানোর শব্দে পেছন ফিরে তাকায়। ছাদের দরজা আটকে দিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রেশমীর দিকে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে রাগে ফুঁসছে রগচটা তালহা এহমাদ স্যার।

এদিকে স্যার তালহা কে দেখে বুকের ভেতর ধড়াস করে ওঠে রেশমীর। চোখ দুটো যারপরনাই বড়বড় হয়ে গেলো। রেশমীর ছাদের ফ্লোরে ধাক্কা লেগে কনুইয়ের কাছে ছিলে গেছে একটু। সেখানেই হাত ঢলতে ঢলতে উঠে দাঁড়ায় সে।
রাগে চিল্লিয়ে ওঠে তালহা। এগিয়ে এসে রেশমির বাহু একপ্রকার খামচে ধরে,,,

:-এই বেয়াদব মেয়ে, সেদিন বলেছিলাম না ভার্সিটিতে আসতে? কোন সাহসে আমার কথা অমান্য করলে তুমি? সেদিন তো আসোইনি আবার পরপর চারদিন অফ করেছো? হুয়াই?? আমার কথার মূল্য নেই? হ্যাঁ! এই কথা বলো… মূল্য নেই আমার কথার?

তালহার এমন খাপছাড়া আচরণে হতবাক হয়ে যায় রেশমী। তালহার এমন আচরণের কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে। শুধু মাত্র তার কথা অমান্য করে ভার্সিটি না আসায় এমন উদ্ভট আচরণ করছে? নাকি এর পেছনে অন্য কোন কারণ আছে বোধগম্য হলো না। তালহার খামচে ধরায় হাতে প্রচুর ব্যথা পাচ্ছে মেয়েটা। চোখ ছাপিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে ফর্সা তুলতুলে নরম গাল বেয়ে।
হুট করেই রেশমীর অশ্রুসিক্ত নয়নে দৃষ্টি আটকে যেতেই হাত শিথিল হয়ে আসে তালহার। রেশমী কে ঝাড়া মেরে দুরে সরিয়ে দিয়ে এক হাত কোমরে রেখে আরেক হাতে মাথার চুল গুলো খামচে ধরে নিজেকে সামলায়। টানা টানা শ্বাস ফেলে শান্ত করে নিজেকে। ফের রেশমীর দিকে তাকায়। মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা। ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেলে এগিয়ে যায় রেশমীর দিকে। স্বর কিছুটা নরম করে বলে,,,

:-I’m sorry Roshi, please don’t cry.!!

রেশমী তাও ফুঁপাতে থাকে। এবার তালহা আরো কিছু টা এগিয়ে গিয়ে দুহাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে রেশমীর চোখ মুছে দেয়। নরম সুরে বলে,,,

:-আরে সরি বললাম তো। দেখি আর কাঁদে না। আল্লাহ! এই মেয়ে!

এবার রেশমীর কান্না কিছুটা কমে আসে।

তালহা ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,,,

:-সেদিন তো খুব বড় মুখ করে বলেছিলে তুমি নাকি বাচ্চা নও। তুমি এডাল্ট। তাহলে এখন এমন বাচ্চাদের মতো করে কাঁদছো কেন হুম?

নিজের করা কাজে বেশ লজ্জা পায় রেশমী।
হুট করেই একটা কিছু মস্তিষ্কে ধাক্কা খায়। ফলে কান্না পুরোপুরি বন্ধ হয় রেশমীর। অবাক হয়ে তালহার দিকে তাকায় রেশমী।
রেশমীকে এভাবে তাকাতে দেখে তালহা বলে,,,

:-হুয়াট!!

রেশমী ঢোক গিলে বলে,,,

:-স্যার আপনি আমাকে তুমি করে কথা বলছেন!!

রেশমীর কথায় হকচকিয়ে যায় তালহা। মুহুর্তেই বলে,,

:-হ্যাঁ সে তো আপনি বাচ্চাদের মতো নাকের জল চোখের জল এক করছিলেন বলে।

রেশমী লজ্জিত হয়ে মিনমিন করে বলে,,,

:-আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম।

তালহা এবার কিছুটা ঝুঁকে রেশমীর মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে,,

:-আর এখন ভয় করছে না? এই যে এখানে আপনি একা। এখন যদি আমি আপনাকে কে ঠুস করে ছাদ থেকে ফেলে দেয়!!

তালহার কথায় চোখ বড়বড় করে তাকায় রেশমী,,

:-আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন স্যার? ভার্সিটিতে না আসার অপরাধে কেউ মার্ডার করে নাকি??

:-কেউ করে না। কিন্তু আমি করবো। এই বলে আচমকা রেশমীর বাহু ধরে কিনারে টেনে নিয়ে যায়। এবার চিৎকার করে ওঠে রেশমী,,,,

:-স্যার আপনি কিন্তু এরকম করতে পারেন না। আমি কিন্তু প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে আপনার নামে কমপ্লেইন করবো।

:-হাহঃ বেঁচে থাকলে তো কমপ্লেইন করবেন? এবার রেশমীকে এক হাতে শূন্যে তুলে ধরে তালহা। প্রচন্ড ভয় পেয়ে তালহার গলার কাছে শার্ট খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে চিল্লাই রেশমী,,,

:-স্যার ..স্যার সরি স্যার। আর কখনো এমন হবে না। আর কখনো আপনার কথা অমান্য করবো না। প্লিজ আমাকে ফেলে দিবেন না স্যার। এখান থেকে পড়ে গেলে আমি মরে যাবো স্যার। আমার হাত পা ভাঙ্গা তো পরে আমি একদম পাউডার হয়ে যাবো।

:-সত্যি আমার কথা শুনবেন তো? প্রমিজ??

:-স্যার প্রমিজ! প্রমিজ। জীবন থাকতে আর আপনার কথা অমান্য করবো না। করলে আমার বর হবে চোর!!

রেশমীর কথায় নাক মুখ কুঁচকে রেশমী কে ছাদের ওপরে তুলে ধপ করে ছেড়ে দিয়ে বলে,,,

:-ছ্যাঃ আমার এতো ভালো সম্মানের চাকরি ছেড়ে আমি হঠাৎ চোর হতে যাবো কোন দুঃখে??

রেশমী বুকে হাত রেখে হাঁপাতে ব্যাস্ত থাকায় ঠিক করে শুনতে পেলো না তালহার কথাটা।

চলবে,,,

#সারা_জাহান
মৌমো তিতলী
পর্ব,,২৪

বিড়বিড় করে তালহার গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে ক্যান্টিনে পৌঁছায় রেশমী। এদিকে সালমা নিশি রাতুল নিরব টেবিল দখল করে বসে আছে। এক একটার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে রেগে ষাঁড় হয়ে আছে সবগুলো। এতক্ষনে রেশমিকে ক্যান্টিনে আসতে দেখে একরকম ঝাঁপিয়ে পড়ে চারজন। তেড়ে আসে রাতুল। রেশমীর মাথার ওপরের ওড়না খামচে ধরে বলে,,

:-ওই শয়তানের নানি! আমাদের ক্যান্টিনে আসতে বলে তুই কোন রাজ কাজে গিয়েছিলি রে?

রেশমী বিরক্ত হয়ে রাতুলের হাত ঝাড়া দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,,,

:-এই একদম ফালতু কথা বলবি না। আমি শয়তান? তাহলে তোরা কি? বন্ধু নামের কলঙ্ক তোরা! তোদের পেছন থেকে একজনকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেলেও তোরা টের পাসনা। কিডন্যাপ তো ছাড়,কেউ মার্ডার হয়ে গেলেও তোরা টের পাবি বলে মনে হয় না। আবার আসছে জিজ্ঞাসা করতে!

নীরব রেশমীর হাত ধরে টেনে নিয়ে বলে,,,

:-কি বলছিস বেইব‌। কে তোকে কিডন্যাপ করলো? কার এতো বড় সাহস? শুধু একবার নাম বল। তারপর দেখ তার কি অবস্থা করি!

:-এইই ছাড় তো! এসব আবালের মতো ফাঁকা আওয়াজ দিবি না একদম। বলিউড কাহেকা!!

বলেই সালমার পাশে ধপ করে বসে পড়ে। সালমা এবার রেশমীর কাঁধে হাত রেখে বলে,,,

:-আচছা আচ্ছা মাথা গরম করিস না। ঘটনা কি খুলে বল! আর হুট করে কই গায়েব হয়ে গেছিলি তুই?

মুখ ভোঁতা করে তাকায় রেশমী। তারপর একে একে খুলে বলে সবকিছু ‌। সবটা শুনে সালমা নিশি রাতুল নিরব সবার মুখ হাঁ হয়ে গেছে। রেশমী সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। মনে হচ্ছে সবগুলো সাদগেমে স্ট্যাচু হয়ে গেছে। রেশমী টেবিলের ওপর জোরে থাবা মেরে বলে,,,,

:-বল এখন আমার কি করা উচিত! স্যার তালহা এহমাদ কে একটা শিক্ষা দিতে হবে না?

সালমা মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ায় ভান করতেই নিশি তাকে আগলে ধরে,,,সালমা মাথা চেপে ধরে বলে,,,

:-ওরেএ কে কোথায় আছিস! আমাকে কেউ ধর! আমি মনে হয় হার্ট অ্যাটাক ফ্যাটাক করে ফেলবো!

রাতুলও চোখ বড়বড় করে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে,,,

:-এই ব্যাটা যে এইরকম বোম ব্লাস্টিং ক্যারেক্টার এতো দিন লুকাই রাখছিলো আমি তো বিলিভ করতে পারছি না দোস্ত!! কেউ আমারে চিমটি কাট!!
বলতেই নিরব স্ট্যাচু থেকেই রাতুলের বাহুতে চিমটি কাটে। মুহুর্তেই আউচচচচ বলে চিৎকার করে ওঠে রাতুল।

রেশমী এদের এক এক টার কান্ড দেখে বিরক্ত হয়ে বলে,,,

:-ধুর বা*ল ওভার অ্যাক্টিং বন্ধ করবি তোরা??আমি মরে যাচ্ছি টেনশনে আর তোরা কি শুরু করলি?

এতক্ষণে মুখ খোলে নিশি। নাকের ওপরে চশমা টা ঠেলে দিয়ে বলে,,

:-I think he likes Reshmi!!

নিশির এক বাক্যে ছোটখাটো বজ্রপাত হলো যেন! সবাই একসাথে চিৎকার করে ওঠে,,

:-কিহ??😳

:-নাহলে তোরাই ভেবে দেখ। ভার্সিটিতে হাজার হাজার স্টুডেন্ট অ্যাবসেন্ট থাকে। কেউ কেউ তো জীবনেও কখনো ক্লাস করে কিনা সন্দেহ। তাদের কথা ছাড়! এই যে কয়দিন আগে সালমার সাত নম্বর ব্রেকআপের পর ওভারে ডিপ্রেশনে সে পাক্কা গুণে গুণে দশ দিন ভার্সিটিতে আসলো না! কই তালহা স্যারের তো কিছু এলো গেলো না। আসা-যাওয়া তো দুরের কথা স্যার হয়তো সেটা নোটিশই করেননি। তাহলে রেশুর বেলায় উল্টো কেনো? তোরা কেউ খেয়াল করেছিস কিনা জানিনা, তবে আমি কিন্তু নোটিশ করেছি যে কয়দিন রেশু ভার্সিটিতে আসেনি, স্যার তালহা ক্লাসে এসেই যেন তার চোখ কাউকে খুঁজতো। বেশিরভাগ সময় আমাদের বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে কেমন গুম হয়ে যেতেন। বাকি ক্লাসে পড়ানো ব্যাথিত দ্বীতিয় কোন শব্দ উচ্চারণ করতেন না। আর আজকে রেশমীর মুখে যা যা শুনলাম তাতে মনে হচ্ছে স্যার রেশমী কে পছন্দ করেন। বা হয়তো তার থেকে বেশি। আই থিঙ্ক “Sir Talha Aahmad fall in love with Reshmi”

এতক্ষণে সকলে নিশির কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে। রেশমী বালে সবাই মাথা নেড়ে সায় দেয়।

:-হ্যাঁ হ্যাঁ আমাদেরও তাই মনে হয়। এটাই হয়েছে। অসম্ভব কিছু তো নয়!

এদিকে এদের সবার কথা শুনে বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেছে রেশমী! কি বলছে এরা এসব!! এটা কি আদৌ সম্ভব!! স্যার তালহা এহমাদ কি সত্যিই তাকে……
না না । কি সব ভাবছে সে। কিন্তু তা যদি না হবে তাহলে সত্যিই তো সে এমন কেনো করছে রেশমীর সাথে!! কেমন দোনামোনা করে ওঠে মনটা।

***********
দু সপ্তাহ পর

শিকদার হাউসে আজ টানটান উত্তেজনা। আজ সারার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পাবে। সকাল থেকেই মেয়েটা টেনশনে ঘাবড়ে আছে। তুলি, রেশমী দুদিক থেকে দুই হাত ধরে রেখেছে সারার। প্রচন্ড অস্থিরতায় ভুগছে মেয়েটা। সাইফ শিকদার পাশেই বসে আছেন। হাতে চায়ের কাপ। তিনি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলেন,,

:-আহ সারা মা! এতো টেনশনের কি আছে! দেখো যা হবে ভালোই হবে। জাহান তো বললো রেজাল্ট বের হলেই জানাবে।

রিনা শিকদার সিমা শিকদার কে বাইরে এনে বসিয়ে দিয়ে হাতে ফ্রুট্সের প্লেট তুলে দিতে দিতে বলেন,,

:-সারা তোর নিজের ওপর কনফিডেন্স আছে তো নাকি?? বলেছিলি তো পরিক্ষা ভালই হয়েছে। তাহলে এতো চিন্তা করছিস কেন?

সিমা শিকদারও বলেন,,,

:-ঠিকই তো সারা। এসএসসিতেও তো তোর রেজাল্ট দুর্দান্ত ছিলো। মেধাবী স্টুডেন্ট তুই। দেখবি রেজাল্ট ভালো আসবে। খামাখা টেনশন নিস না।

সবাই একে একে শান্তনা দিতে থাকে। এদিকে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও তৈমুরের ফোন আসেনি। সারা আরও ঘাবড়ে গিয়ে এবার কেঁদেই ফেললো। কেউ থাকে বুঝিয়ে কিছু বলেও থামাতে পারছে না। এদিকে তুলি বারংবার ভাইয়ের ফোনে ট্রাই করেই চলেছে। রিসিভ করছে না তৈমুর। প্রায় আধাঘণ্টা পর সদর দরজায় কলিং বেল বেজে ওঠে। রেশমী দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দু হাতে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে হাসিমুখে প্রবেশ করে সায়ান। পেছন পেছন তৈমুরও প্রবেশ করে। তারও হাত ভর্তি মিষ্টির প্যাকেট। শিকদার বাড়ির সকলেই যা বোঝার বুঝে গিয়েছেন।

সায়ান মিষ্টির প্যাকেট সেন্টার টেবিলের ওপর রেখে বসতে বসতে হাসতে হাসতেই বলে,,,

:-ছোট ভা,,,আপু তো ফাটিয়ে দিয়েছে!! একদম জিপিএ ফাইভ ছিনিয়ে নিয়েছে। কনগ্রাচুলেশন ছোট্ট আপু।

ড্রইং রুমের সকলে “আলহামদুলিল্লাহ” বলেন।সারার মুখেও মুচকি হাসি ফুটে ওঠে। পরক্ষনেই সারা গুম হয়ে তৈমুরের দিকে অভিমানি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
এতক্ষন খামাখা টেনশনে রাখার জন্য রাগ হচ্ছে তার।

রিনা শিকদার মুচকি হেসে ছেলের হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেট টা নিতে নিতে সারার দিকে ইশারা করেন। মায়ের ইশারা বুঝতে পেরে তৈমুরও আড় চোখে তাকায় সারার দিকে।
“আহাঃ কেঁদে কেঁদে চোখ মুখের কি অবস্থা করেছে তার অবুঝ বউটা। আদর আদর লাগছে তৈমুরের। পরন্তু মুখটা স্বাভাবিক রেখেই এগিয়ে গিয়ে বসে বাবার পাশে। তৈমুর বসতেই সারা উঠে গটগট করে ওপরে চলে যায়। কথায় বলবে না আজ সে ওই লোকটার সাথে। পাজি বদমাশ লোক একটা!

সারা উঠে যেতেই হাসির রোল পড়ে ড্রইং রুমে। সায়ান আড়চোখে চেয়ে থাকে তুলির হাসিমাখা মুখের দিকে।
তৈমুর তুলি আর রেশমির দিকে তাকিয়ে বলে,,,

:-বনু তোরা ওপরে যা তো। এখানে বড়রা কিছু কথা বলবে।

তৈমুরের কথায় রেশমী কিছু না বুঝলেও তুলির বুকের ভেতর যেন ধড়াস করে উঠলো। ভাই কি তার আর সায়ানের ব্যপারে কথা বলবে! তুলি যেতে যেতে আড়চোখে সায়ানের দিকে তাকায়। সায়ান আগেই তুলির দিকে তাকিয়ে ছিলো। তুলি তাকাতেই চোখাচোখি হলো। সায়ান বাঁকা হেসে ভ্রু নাচিয়ে চোখ টিপ দেয়। তুলি হকচকিয়ে গিয়ে চোখ রাঙানি দিয়ে ওপরে চলে যায়।

তুলি,রেশমী ওপরে যেতেই সাইফ শিকদার ছেলের মুখের দিকে তাকায়। চিন্তিত মুখে বলেন,,

:-কি হয়েছে জাহান? কি বিষয়ে কথা বলার কথা বলছো? গুরুত্বপূর্ণ কিছু নাকি?

বাবার কথায় তৈমুর সোফায় গা ছেড়ে দিয়ে বসে বলে,,,

:-গুরুত্বপূর্ন না হলে আমি অবশ্যই বলতাম না বাবা।

রিনা শিকদারও এবার শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে সিমা শিকদারের পাশে বসে। দুই জা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। কি নিয়ে জাহান বৈঠক বসালো বুঝতে পারছেন না তারা।

সাইফ শিকদার এবার ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেন,,,

:-আচছা বলো কি বলবে?

তৈমুর প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করতে করতে বলে,,,

:-বলবো আগে ছোট চাচু আসুক।
বলেই কল লাগায় আলিফ শিকদারের ফোনে।
ফোন রিসিভ হলে জানান পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাসায় আসছেন তিনি। কাছাকাছিই আছেন। অসময়ে প্রেগন্যান্ট বউয়ের জন্য আলিফ শিকদার আচার কিনতে গিয়েছিলেন বাজারে। বউটার খুব বেশিই খেয়াল রাখছেন কিনা😄

আলিফ সিকদার বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে বসেন ড্রইং রুমে। সকলে এক সাথে হলে মুখ খোলে তৈমুর।

:-বাবা-চাচু, আম্মু-ছোট চাচি সকলকে বলছি। আগামী দুদিন পর সায়ানের বাবা মা শিকদার হাউসে আসবেন তুলি আর সায়ানের বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে।

তৈমুরের কথায় ড্রইং রুমে ছোটখাটো বোম ব্লাস্টিং হলো। আলিফ শিকদার হাঁ করে তাকিয়ে আছেন তৈমুরের দিকে। সাইফ শিকদারও বেশ অবাক হয়েছেন। হুট করে মনে শঙ্কা হয়,,

“তুলির সাথে এই বদমাশ ছেলেটার কোন সম্পর্ক নেই তো? নয়তো হুট করে বিয়ের কথা আসছে কেনো” তিনি আড়চোখে তিক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত করেন সায়ানের দিকে।

সায়ান দাঁত কেলিয়ে সাইফ শিকদারের দিকেই তাকিয়ে ছিলো!! জানতো! তার হিটলার শশুর মশাই প্রস্তাব টা শুনে আগেই সন্দেহের তীর টা তার দিকেই ছুঁড়বেন। এদিকে সায়ানের সাথে চোখাচোখি হতেই থতমত খান সাইফ শিকদার।
তিনি গলা ঝেড়ে তৈমুরের উদ্দেশ্য বলেন,,,

:-বুঝলাম। কিন্তু হুট করে এমন প্রস্তাব রাখার হেতু কি?

:-হুট করে নয় বাবা। এ বিষয়ে আমি অনেক আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলাম। কিন্তু কিছু বলা হয়ে ওঠেনি। তবে সম্প্রতি সায়ানের থেকে জানতে পারলাম সেও তুলিকে পছন্দ করে।
তৈমুরের কথায় সাইফ শিকদার আবারো তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকান সায়ানের দিকে। বাবার দৃষ্টি অনুসরণ করে তৈমুর আবারো বলে,,,

:- তবে ভাববেন না সায়ান বা তুলির একে অপরের সাথে কোন সম্পর্ক আছে। সায়ান প্রথমে ব্যাপারটা আমাকেই বলেছিলো। পরে আমি তুলির সাথেও কথা বলেছি। তুলিও জানিয়েছে পরিবারের সকলের মতামত থাকলে তারও এই সম্বন্ধে কোন আপত্তি নেই। আর সায়ানের বাবা মা অর্থাৎ আঙ্কেল আন্টিও যথেষ্ট ভালো মানুষ। সায়ানের থেকে তুলির সম্পর্কে জানতে পেরে ওনারাও তাৎক্ষনাক ইতালি থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। এখন আমাদের বাড়িতে আসতে চান আপনাদের কাছে তুলির হাত চাইতে। এখন আপনারা বলুন আপনাদের এই বিষয়ে কি মত!

তৈমুরের কথায় এবার নড়েচড়ে বসেন সাইফ শিকদার। ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেন,,,

:- দেখো জাহান! তুলি যেমন আমাদের মেয়ে তেমন তোমারও বোন। মাশাআল্লাহ তার বিয়ের বয়সও হয়েছে। যদিও আমি এখনো পর্যন্ত তুলির বিয়ের ব্যাপারে কিছু ভাবিনি কিন্তু তুমি যখন বলছো আর বিষয় টা এতো দুর পর্যন্ত এসেছে,তারা যখন তুলির জন্য সম্বন্ধ আনবেন বলে দেশে চলেও এসেছেন তখন আমাদের তো না বলার কোন সুযোগ নেই।
সায়ান একটু বাঁচাল হলেও পাত্র হিসেবে খারাপ না। তাকে জামায় বানাতে আমার কোন আপত্তি নেই। বাকি সবাই এখানেই আছে। তাদের মতামতও শুনে নাও।

এদিকে সায়ান ভ্রু কুঁচকে সাইফ শিকদারের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বললো হিটলার শশুর আব্বা! সে বাঁচাল! হাউ!
তৈমুর বাকিদের দিকে তাকালে তারাও হাসিমুখে সম্মতি দেয়। রিনা শিকদার আর সিমা শিকদার তো ভীষণ খুশি হয়। এতো অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দুই জায়ের। মনের বাসনা পূর্ণতা পেলো খুশি না হয়ে উপায় কই! রিনা শিকদার ঝটপট একটা প্লেটে মিষ্টি নিয়ে আসেন। সকলকে দিয়ে বলেন,,,

:-ডবল সুসংবাদে সবার মিষ্টিমুখ হয়ে যাক!
সায়ানের কাছে গিয়ে গাল টেনে দিয়ে আদর করে দেন রিনা শিকদার। এই ছেলেটাকে তার ভীষণ পছন্দ। একদম নিজের ছেলের মতো মনে হয়। বড্ড আপন যেন। সে নাকি সত্যিই এবাড়ির জামাই হবে। তাদের ছোট্ট তুলির বিয়ে হয়ে যাবে। শশুর বাড়ি চলে যাবে তাদের আদরের মেয়েটা। আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখ দুটো ভরে আসে রিনা শিকদারের।

***********
সারা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে নিজের রুমে। তৈমুরের ওপরে ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। কত বড় ফাজিল লোক। ইচ্ছে করে টেনশনে রাখলো তাকে‌। ফোন করে বললে কি হতো! সে কি কাঁদতো তাহলে! পাষান লোক একটা।

হঠাৎ দরজা বন্ধের শব্দে পেছন ফিরে তাকাতে নিলেই আবদ্ধ হয় কারো প্রসস্থ চওড়া বুকে। পারফিউমের মন মাতানো সুঘ্রাণেই বুঝিয়ে দিলো মানুষটার অস্তিত্ব। সারাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে আছে তৈমুর। সারা জোর করে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করে ওঠে। এই খারাপ লোকটার সাথে আর কোন কথায় নেই। ভালোবাসা দেখাতে আসছে। হুহঃ

সারার অভিমান বেশ ভালোই উপলব্ধি করতে পারছে তৈমুর। সারা যতো ছাড়ানোর চেষ্টা করছে, তৈমুর ততই মুচকি হেসে আরো জোরে আঁকড়ে ধরছে। এক সময় তৈমুরের শক্তির সাথে না পেরে থেমে যায় সারা। রাগে আর কান্নার তোপে কেঁপে কেঁপে ওঠে নরম কোমল শরীর। তৈমুর দু হাতে সারার মুখটা তোলে সযত্নে। কপালের এলোমেলো চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে আদুরে স্পর্শ ছুঁয়ে দেয় কপালে। তারপর দুহাতের বুড়ো আঙুল দ্বারা চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,,,

:-এতো অবুঝ কেন তুই? তোকে সারপ্রাইজ দিতে আগে রেজাল্টের কথা জানায়নি। কিন্তু আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো তুই একটা নাদান গেন্দা বাচ্চা।

তৈমুরের মুখে আবারো “গেন্দা বাচ্চা” কথাটা শুনে রেগে যায় সারা। নাকের পাটা ফুলে ওঠে রাগের চোটে। তৈমুরের বুকে কিল মেরে বলে,,,

:-কি বললেন আপনি? আমি গেন্দা বাচ্চা? গেন্দা বাচ্চা হলে জড়িয়ে ধরেছেন কেনো? ছাড়ুন আমায়! ছাড়ুন বলছি!

তৈমুর মুখ উঁচু করে নিঃশব্দে হাসে। সারাকে আবারো বুকে জড়িয়ে ধরে বলে…

:-সত্যি যদি ছেড়ে দেয় তাহলে খুশি হবি তুই?

তৈমুরের কথায় হুঁশ হয় সারার। কি বললো লোকটা?
সারা অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকে তৈমুরের মুখের দিকে। সারার দৃষ্টি দেখে তৈমুর তাচ্ছিল্য হেসে বলে,,,

:-কি? তাকাচ্ছিস কেনো? তুই তো বললি ছেড়ে দিতে!!

সারা ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না সংবরণ করতে করতে বলে,,,

:-আমি এমন ছাড়ার কথা বলিনি।

সারার রিয়াকশনে ভীষণ হাসি পাচ্ছে তৈমুরের। তবে তা মুখে প্রকাশ করলো না। মুখটা যথাযথ গম্ভীর রেখে ধীরস্বরে বলে,,,

:-তাহলে কেমন ছাড়ার কথা বললি?

মুখ ফুলিয়ে তৈমুরের মুখের দিকে তাকায় সারা‌,,,

:-এই যে এখন জড়িয়ে ধরে ভালোবাসা দেখাতে আসছেন। তাই ছাড়তে বলেছি।

:-তুই বললেই কি আমাকে ছাড়তে হবে?

:-আপনি কেনো আগে ফোন করলেন না? আমি ভয় পেয়েছিলাম।

:-কেনো তোর নিজের ওপর কনফিডেন্স নেই?

:-তবুও। আপনি ফোন ধরছিলেনও না।

:-বললাম তো রে বাবা! সারপ্রাইজ দিতে চেয়ে দেখছি বড্ড ভুল করে ফেলেছি। মহারানী যে কেঁদে কেটে সাগর বানিয়ে ফেলতে পারে তা আগেই ভাবা উচিত ছিল।
সারা মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। তৈমুর এবার সারাকে কোলে তুলে নিলো। আচমকা হকচকিয়ে তৈমুরের গলা জড়িয়ে রাখলো সারা‌।

:-ক.. কি করছেন!!

:-শশশশ!! কোন কথা নয়। চোখ মুখের কি অবস্থা করেছিস সে খেয়াল আছে? ওয়াসরুমে গিয়ে এখুনি ফ্রেশ হবি। বলেই গালে শব্দ করে চুমু খায়। লাজে রাঙা হয়ে ওঠে সারার মুখটা। তা দেখে শব্দ করে হাসে তৈমুর।
সারাকে বুকের মাঝে লেপ্টে নিয়ে ওয়াশ রুমের দরজায় এসে নামিয়ে দেয় । বলে,,,

:-পাঁচ মিনিট সময় দিলাম। ফ্রেস হয়ে ঝটপট নিচে চলে আয়। সবাই একসাথে লাঞ্চ করবো কেমন!!
মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় সারা। সারার রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার মতো মুখটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তৈমুর। হুট করে বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে সারার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরে তৈমুর। হাত দুটো অবাধে বিচরণ করছে সারার লতানো কোমর জুড়ে।পাক্কা দুই মিনিট পর ছেড়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আসতে বলে।

পরপর দ্রুত পায়ে একরকম হুড়মুড়িয়ে সারার কামরা থেকে বেরিয়ে যায় তৈমুর। বাইরে এসে মাথা নেড়ে লম্বা চুল গুলোই আঙ্গুল চালাতে চালাতে দম নেয়।
“আরেকটু হলেই যা তা করে ফেলতো তৈমুর!! মেয়েটাকে কাছে পেলেই যেন পুরুষালী আদিম অনুভুতির উত্তেজনা শরীরের প্রতিটি শিরায় আসক্তির ন্যায় ছড়িয়ে পড়ে। বেসামাল হয়ে পড়ে তৈমুর জাহান। মেয়েটাকে একান্ত নিজের করে পেতে, প্রেয়সীর সমস্ত সত্ত্বায় নিজের অস্তিত্ব বিলিন করতে কিলবিল করে ওঠে হৃদয়।

*********

আজ শিকদার বাড়িতে বেশ জোরেশোরেই মেহমানদের আপ্যায়নের আয়োজন চলছে। আজ সায়ানের পরিবার আসবে তুলিকে দেখতে। এতো ব্যাস্ততার মাঝেও সিমা শিকদারকে কোন রকম কাজ করতে দিচ্ছেন না রিনা শিকদার। একজন হেল্পিং হ্যান্ড কে নিয়ে রান্না বান্না নিজেই সামলাচ্ছেন। সিমা শিকদার কিচেনের এক কোনে মুখ ভোঁতা করে বসে আছেন। রান্নার এক ফাঁকে রিনা কিছু ফল কেটে সিমা শিকদারের হাতে দিতে দিতে বলেন ,,,

:-তোকে কত করে বললাম ছোট,এই গরমে এখানে বসে থাকিস না। ড্রইং রুমে নয়তো নিজের রুমে গিয়ে ঠান্ডায় বস গিয়ে। শুনি না আমার কথা।

:-মেয়েটাকে দেখতে আসবে আর আমি নিজ হাতে কিছুই করতে পারছি না আপা। আমার খারাপ লাগে না বলো তো? বললাম দাও তরকারিটা অন্তত আমি কেটে দেয়। তাও করতে দিলে না ‌।

:-রাখতো তোর খারাপ লাগা। এসব কাজ করার ঢের সময় পাবি। এখন চুপচাপ ফলগুলো খেয়ে শেষ কর।
বলেই হাত চালাতে লাগলেন কড়াইয়ে। গরুর মাংস সেদ্ধ হচ্ছে তাতে।

_______

সাইফ শিকদার আর আলিফ সিকদার দু হাতে দই, মিষ্টি আর সেভেনেআপের বড় বড় দুই বোতল হাতে বাড়িতে প্রবেশ করলেন। ঝকঝকে তকতকে ড্রইং রুমের প্রতিটি কোনায় আভিজাত্যের ছোঁয়া। একদম নিট এন্ড ক্লিন সবকিছু। অতিথি আপ্যায়নের কোন ত্রুটি রাখতে চান না তারা। এটা এই বাড়িতে দ্বীতিয় বার বিয়ের কথাবার্তা হলেও প্রকাশ্যে এটাই প্রথম। বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ হবে বলে কথা।

সারা আর রেশমী মিলে তুলি কে সাজিয়ে দিচ্ছ। সারা আর রেশমী যবে থেকে জানতে পেরেছে সায়ান ভাইয়া আর তুলি একে অপরকে পছন্দ করে আর তাদের বিয়ের কথা চলছে তবে থেকেই খুশিতে বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করছে দুজন। সায়ান ভাইয়া দু’জনেরই খুব প্রিয় কিনা।
খয়েরি রঙের জামদানি শাড়ি টা তুলির ফর্সা শরীরে ভীষণ মানিয়েছে। পিঠ পর্যন্ত সিল্কি চুল গুলো ছেড়ে রাখা। কানে গোল্ডের ঝুমকা গলায় হালকা ডিজাইনের নেকলেস। হাতে দুইটা পাথরের চুড়ি। এতেই যেন অপ্সরী লাগছে তুলি কে। সারা ঘুরে ফিরে তুলিকে দেখে। গালে হাত রেখে আপ্লুত হয়ে বলে,,,,

:-হাআআআ😱 আপু কি সুন্দর লাগছে তোমাকে দেখতে! সায়ান ভাইয়া নির্ঘাত অজ্ঞান হবে আজ!

তুলি হেসে সারার বাহুতে আলতো চড় দিয়ে হেসে বলে,,,

:-দুষ্টু!

রেশমীও হেসে বলে,,

:-সিরিয়াসলি তুলি! খুব সুন্দর লাগছে তোকে। দেখবি সায়ান ভাইয়ার বাবা মা আজকেই তোকে তাদের বাড়ির বউ করে নিতে চাইবে।

লজ্জায় রাঙা হয় তুলির ফর্সা সুন্দর মুখটা। দুচোখে হাজারো স্বপ্ন বুনতে থাকে প্রেমিক পুরুষ টাকে নিয়ে।
**†****

#চলবে

#সারা_জাহান
পর্ব,,,,২৫
মৌমো তিতলী
❤️❤️❤️❤️❤️

শিকদার বাড়িতে জমজমাট আয়োজন। মেহমানরা এসে গেছেন আরো আধাঘণ্টা আগেই। হালকা চা- নাস্তার পর্ব চলছে এখন। তৈমুর -সায়ান কেউই আজ হসপিটালে যাইনি। মেহমানদের সবকিছু নিজ হাতে তদারকি করছে তৈমুর। তার আদরের বোনের বিয়ের কথাবার্তা বলে কথা। সোফায় একপাশে বসে আছেন সাইফ সিকদার এবং আলিফ সিকদার। আর এক পাশে সীমা সিকদার এবং রিনা শিকদার।
সামনের সোফায় বসেছেন সায়ানের বাবা সরোয়ার মাহমুদ পাশেই স্ত্রী সোহিনী মাহমুদ। তাদের একমাত্র মেয়ে সুহানাও এসেছে। সুহানা বেশ ছটফটে মেয়ে। সবে মাত্র ক্লাস নাইনে উঠেছে সে। এবাড়িতে এসেই সারা আর রেশমীর সাথে বেশ ভাব হয়েছে। রেশমী তাকে তুলির রুমে নিয়ে গেছে। সায়ান আজ একদম স্যুট বুট পরে জেন্টলম্যান সেজে এসেছে। কিছুক্ষণ পর তৈমুর রেশমী কে ডেকে তুলি কে নিয়ে আসতে বলে।তুলির নিজেকে আজ ভীষণ নার্ভাস লাগছে।
রেশমী আর সারা দুজনে তুলিকে ড্রইং রুমে নিয়ে আসে। সোহিনী মাহমুদ তুলির হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে দেন।
সায়ান তো তুলিকে দেখেই তব্ধা মেরে হাআআ করে তাকিয়ে আছে। চোখের পলকটাও ফেলতে ভুলে গেছে যেন।
সুহানা ছটফট করে মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। হাসতে হাসতে বলে,,

:-মাম্মি দেখো ভাবি কত সুন্দর! আমার ভাবীকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে! মাম্মি ভাবিকে আজকেই আমরা আমাদের সাথে করে নিয়ে যাই??

মেয়ের বাচ্চামোতে বেশ লজ্জা পান সোহিনী মাহমুদ। মেয়ের দিকে চোখ রাঙিয়ে চুপ থাকতে বলেন। সরোয়ার মাহমুদ হেসে বলেন,,

:- কিছু মনে করবেন না ভাইজান! আমার মেয়েটা একটু বেশি ছটফটে।

সাইফ সিকদার ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলেন,,,

:- আরে না না! কি যে বলেন । আমরা কিছু মনে করিনি। সুহানা মা তো কত মিষ্টি একটা মেয়ে।

এদিকে মাথা নিচু করে বসে হাতের নখ খুঁটছে তুলি। ভীষণ লজ্জা লাগছে তার। মেয়েটা সবার সামনে কেমন ভাবি ভাবি বলে উঠলো। তুলির লজ্জা রাঙা মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোট টিপে হাসতে থাকে সায়ান।
সোহিনী মাহমুদ সকলের দিকে তাকিয়ে বলেন ,,,

:-ভাইজান আপনাদের মেয়ে কিন্তু সত্যি খুব মিষ্টি দেখতে। যদিও আগেই ছবি দেখেছিলাম,কিন্তু এখন সামনে আরো বেশি ভালো লাগছে। আপনাদের মেয়েকে আমাদের ভীষণ পছন্দ হয়েছে।

স্ত্রীর কথাই হালকা হেসে নড়েচড়ে বসেন সরোয়ার মাহমুদ। সাইফ শিকদারের দিকে তাকিয়ে বলেন,,,

:-ভাইজান যেহেতু মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে,ছেলেরও পছন্দ। আর আপনারা তো আমাদের ছেলেটাকে জানেন, চিনেন। এখন সবার যদি সম্মতি হয় তাহলে বিয়ের বিষয়ে কথা আগানো যাক!

সাইফ শিকদার,আলিফ শিকদার দুজনেই তাদের স্ত্রীদের দিকে তাকান সম্মতির উদ্দেশ্য। রিনা শিকদার এবং সিমা শিকদার দুজনেই হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেন। তারপর সকলে তৈমুরের দিকে তাকাতেই তৈমুরও ঝটপট সম্মতি দেয়। সকলের সম্মিলিত সম্মতিতে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। সোহিনী মাহমুদ তুলির হাতে দুটো বেশ মোটা আর ভারি কারুকার্য খচিত স্বর্নের বালা পরিয়ে দেন। সরোয়ার মাহমুদও একটা স্বর্ণের চেইন পরিয়ে দেন তুলিকে।

দেখাদেখির পর দুপুরে খাবারের পর্ব শেষ হতে বিকেল হয়ে যায়। সকলে বিশ্রাম নিতে ড্রইং রুমে বসে। সরোয়ার মাহমুদ তো রিনা শিকদারের রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তা নিয়ে সাইফ শিকদার আলিফ শিকদারের সাথে বেশ হাসিঠাট্টা করছেন তিনি। তিনজনের উল্লাস দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতটা খুশি আর সন্তুষ্ট তারা।

সোহিনী মাহমুদও রিনা শিকদার আর সিমা শিকদারের সাথে অনেক গল্প করেন। সিমা শিকদারের প্রেগন্যান্সির খবর শুনে তো তিনি প্রথমে বেশ অবাকই হয়েছিলেন। পরে খুশি হয়ে কনগ্রাচুলেশনও জানিয়েছেন।

যদিও সিমা শিকদার প্রথমে একটু অপ্রস্তুত হয়েছিলেন যে, মেয়ের হবু শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তার প্রেগনেন্সির খবরটা কিভাবে নিবেন সেটা ভেবে। কিন্তু সায়ানের বাবা মা উচ্চশিক্ষিত মানুষ। তাছাড়া বিদেশের আদব-কায়দায় অভ্যস্ত তাদের কাছে এসব কিছু বিশেষ ম্যাটার করেন না। এটা জেনে বেশ হালকা বোধ করেন সিমা শিকদার।

তৈমুর আর সায়ান বাইরের গার্ডেন থেকে ঘুরেফিরে ড্রইং রুমে প্রবেশ করে। পরে বাবার পাশে গিয়ে নিচু হয়ে কিছু একটা বলে। সাইফ শিকদারও ছেলের সাথে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেন। তৈমুরও সায়ানকে নিয়ে ওপরে এসে একবারে তুলির রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজায় নক করে ডাকলে সারা এসে দরজা খুলে দেয়। দরজার বাইরে তৈমুরার সায়ানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একপাশে সরে দাঁড়ায় তৈমুর সারাকে পর্যবেক্ষণ করে বলে,,

:- তুলি কই?
সারাও ইশারা করে রুমের ভেতরে দেখিয়ে দেয়।
তৈমুর গিয়ে তুলির পাশে বসে মাথায় হাত রেখে বলে,,,

:- সায়নের সাথে আলাদা কোন কথা থাকলে সেরে ফেল। আমরা বাইরে আছি।
বলে রেশমি ,সারা আর সুহানা কে নিয়ে বাইরে এসে দরজাটা আলগোছে ভেজিয়ে দেয়।

সায়ান গুটি গুটি পায়ে দিয়ে তুলির পাশে বসে পড়ে। তুলির আজ হলো কি! সায়ানের সামনে এতটা লজ্জা সে কখনোই পায় না। অথচ আর লজ্জায় মাথাটাও তুলতে পারছে না। মাথা নিচু করে বসে আঙ্গুলে শাড়ির আঁচল পেচাতে থাকে তুলি।
তুলির ভাবভাব লক্ষ্য করে ঠোট কামড়ে হাসে সায়ান। তারপর টানটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। দুষ্টু হেসে বলে,,,

:-আহঃ বিছানাটাও দেখি আমার বউয়ের মত তুলা!!

সায়ানের কথাই তব্ধা খেয়ে তাকিয়ে থাকে তুলি। সায়ান আবারো উঠে বসে। তুলির কাছাকাছি গিয়ে বসে। কেঁপে ওঠে তুলি। সরে বসতে যাবে তার আগেই সায়ান দুহাতে তুলির মুখটা উচু করে ধরে অকালকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,,,

:- তুমি জানো তুলা! এই মুহূর্তে তোমাকে এখন আমার কি ইচ্ছে করছে! ইচ্ছে করছে কামড়ে কুমড়ে খেয়ে ফেলি। তুমি এত সুন্দর কেন বউ?

এতক্ষণে হুঁশ ফিরে তুলির। এই লোকটা কখনো শোধরাবে না‌। তুলি হাতের কনুই দিয়ে সায়ানের পেটে গুতা মেরে বলে,,

:-ছিঃ অসভ্য পুরুষ একটা!!

সায়ান পেট চেপে ধরে আউচচচচ করে ওঠে। পরমুহূর্তেই হাসতে হাসতে বলে,,,

:-পৃথিবীর সব পুরুষই তার বউয়ের কাছে অসভ্য। অসভ্য না হলে কি বউ থাকবে বলতো? আমি তো আরো অসভ্য হতে চাই আমার তুলার কাছে। যতোটা অসভ্য হলে আমার আর তুলার মাঝে কোন ফাকা জায়গা থাকবে না। একদম সায়ানের বুকের সাথে তুলা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে ততটা অসভ্য হতে চাই।

তুলির দাঁতের দাঁত চেপে বসে থাকে। সায়ানের এসব উল্টোপাল্টা কথাই বুকের ভেতরে তোলপাড়!!লাজে রাঙা হয় তুলির ফর্সা মুখটা।

সায়ান এবার সিরিয়াস ভাবে বলে,,

:-তুমি খুশি তো তুলা?

সায়ানের প্রশ্নে লাজুক হেসে মাথা নাড়ায় তুলি। ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে সায়ানের। আলতো করে বক্ষ পিঞ্জরে জড়িয়ে ধরে তার মনের দখলদারিনী কে।

************
সন্ধ্যার আগ দিয়ে সায়ানের পরিবার ফিরে যায়। এখন শিকদার হাউসের সবাই ড্রইং রুমে বসে বিয়ের বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনায় ব্যস্ত। সারা রিনা শিকদারের পাশে বসে তার বাহুতে মাথা রেখে বসে আছে। রিনা শিকদার একহাতে সারার মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বাকিদের সাথে কথা বলছেন। এদিকে তৈমুর সাইফ শিকদারের পাশে বসে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে আপেলে কামড় দিচ্ছে। নজর যে তার সারার দিকেই স্থির, সারা তা ঠিকই ঠাহর করতে পারছে। প্রেমিক পুরুষকে এহেন নজরে তার পেটের ভেতরে হাজারো প্রজাপতি উড়াউড়ি করছে !

এদিকে রেশমী নিজের রুমে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় রাখা ফোনটা হাতে নিয়ে শান্ত হয়ে বসে। আজও যে সে ভার্সিটিতে যায়নি। স্যার তালহা নিশ্চয় রেগে বোম হয়ে আছেন। কাল ভার্সিটিতে গেলে যদি সত্যি সত্যি ছাদ থেকে ফেলে দেয়! তার চেয়ে ফোন করে জানাবে। ভাবনা মোতাবেক ফোনে ডায়াল প্যাডে তালহা স্যারের নম্বর তুলে বসে থাকে!
হাত কাঁপছে রেশমির। অস্বস্তি হচ্ছে। ধুর,, ধুর ভাল্লাগে না!! ফোন করবে কি করবে না দোনামোনা করতে করতে একসময় কল করেই ফেললো।

নিজ রুমে বসে ল্যাপটপে পরবর্তী ক্লাসের লেকচারের বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু কাজ করছিলো তালহা। চোখে সাদা গোল ফ্রেমের চশমা। এ্যাস কালারের প্যান্ট আর হালকা বেগুনি রঙের টিশার্টে আবৃত তালহা অত্যাধিক সুদর্শন। মাথার হালকা বড়বড় সিল্কি চুল গুলো কপালে এসে হুটোপুটি খাচ্ছ। এমন সময় পাশে রাখা ফোনটা বেজে উঠলো। গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাঝে ফোনের শব্দে বেশ বিরক্ত হলো তালহা। কপাল কুঁচকে এলো বিরক্তিতে। ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে চোখ রাখতেই গুটিয়ে রাখা কপাল শিথিল হলো‌। চোখে ভর করলো বিষ্ময়।
স্ক্রিনের ওপর স্পষ্ট ভাসছে Rope of love 🩷

এই প্রথম বার কাঙ্খিত নাম্বার থেকে কল পেয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে তালহা। ফোনের দিকে তাকিয়ে স্ট্যাচু হয়ে বসে থাকে সে। ভুলে যায় ফোনটা রিসিভ করতে। ফোনটা বাজতে বাজতে একসময় কেটে গেলো। রিংটোন অফ হতেই সম্বিত ফিরে এলো তালহার। সেকেন্ডের মাঝেই কল দিলো কাঙ্খিত নাম্বারে।

ফোন রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে সালাম ভেসে আসে। চোখ দুটো বন্ধ করে সেই রিনরিনে স্বর অনুভব করে তালহা। ধীরে সুস্থে সালামের জবাব দেয়।

কিছু মুহূর্ত দু’জনেই চুপ থাকে। রেশমীর কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। এদিকে তালহা অধির আগ্রহে বসে আছে রেশমীর কথা শুনতে। রেশমী কে কিছু বলতে না দেখে বিরক্ত হয় তালহা। গম্ভীর স্বরে বলে,,,

:-আপনি কি কিছু বলবেন মিস রশি! যদি গুরুত্বপূর্ণ কিছু না বলার থাকে তাহলে ফোনটা রাখতে পারেন!

রেশমি বিচলিত হয়ে হড়বড়িয়ে বলে,,,

:-স্যার না,, মানে স্যার!

:-হুয়াট!

:-স্যার একচুয়ালি আমি তো আজ ভার্সিটিতে যায়নি,তাই মানে,,এই জন্য ফোন…

রেশমির কথা সম্পূর্ণ না হতেই ওপাশ থেকে আবারো গম্ভীর স্বর ভেসে আসে,,,

:-না আসার কারণ!

:-একচুয়ালি স্যার আমাদের বাড়িতে আজকে মেহমান মানে আসলে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিলো!

রেশমীর কথায় তালহার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো যেন, হুশ জ্ঞান খুইয়ে চিৎকার করে উঠলো তালহা,,

:-What? What did you say? Say it again?

তালহা স্যারের আচমকা এমন চিৎকারে চমকে কেঁপে ওঠে রেশমী। হড়বড়িতে কি বলেছে নিজেই বুঝতে পারেনি।

:-স্যার আসলে ওই পাত্রপক্ষ…..

রেশমির কথা সম্পূর্ণ করতে দিল না তালহা। রাগে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তার। “পাত্রপক্ষ” শব্দটা শুনেই মাথা খারাপ হয়ে গেছে, তার উপরে রেশমিকে পাত্রপক্ষের সামনে সেজেগুজে বসে থাকতে ইমেজিন করতেই ক্রোধে মাথা কিলবিল করে ওঠে তালহার।আবারও হুংকার ছেড়ে বলে,,,

:-How dare you say this to me! for God’s sake, Rashmi I will kill you…যদি তুমি এটা বলো যে তুমি বিয়ে করবে বলে সেজেগুজে ধেই ধেই করে পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে বসেছো!

তালহার কথায় বিস্ময়ের চরমে পৌঁছে গেছে রেশমী! এমন প্রতিক্রিয়া? এমন অধিকারবোধ নিয়ে কথা বলা?এভাবে কেন বলছে স্যার তালহা? যদিও রেশমি ঠিক গুছিয়ে ব্যাপারটা বলতে পারেনি তাই হয়তো স্যার ভেবেছে পাত্রপক্ষ আসলে রেশমীকে দেখতে এসেছিলো।
কিন্তু স্যারের প্রতিক্রিয়া তে তার সেই ভুলটা ভাঙ্গানোর কথা ভুলে বসেছে মেয়েটা।তা ছাড়া তালহা আবারো তাকে তুমি সম্বোধন করছে। রেশমি এটা খেয়াল করেছে, যখনই তালহা ভীষণ রেগে যায় বা হাইপার হয়ে যায় তখনই রেশমিকে তুমি বলে সম্বোধন করে।
মনে পড়ে বন্ধুদের বলা কথাটা “I think Sir Talha must love Rashmi”

ওদিকে রেশমীকে চুপ থাকতে দেখে আরও বেশি অস্থির হয়ে ওঠে তালহা। অস্থির কন্ঠে বলে,,,

:-চুপ করে আছো কেনো? এই কথা বলো? তোমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে একথা আমাকে আগে জানাওনি কেনো? নাচতে নাচতে তাদের সামনে বউ সেজে বসবে বলে??

এবার কিছুটা রেগে যায় রেশমী। যা নয় তাই বলে যাচ্ছ মানুষ টা। রেশমী ধীরস্বরে বলে,,,

:-আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে কি বিয়ে করে নিয়ে যাবে তা আমি আপনাকে কেনো জানাতে যাবো?

এ পর্যায়ে কিছুটা নিভে যায় তালহা। আসলেই তো! রেশমী কেনো তার জীবনে ঘটা কোনোকিছু তাকে জানাতে যাবে! রেশমীর মনে তো আর তার জন্য কোনো অনুভূতি নেই। এটা ভাবতেই কেমন বিষাক্ত অনুভূতিতে ছেয়ে যায় তালহার সমস্ত অস্থিমজ্জা।
অনেকটা ভেজা কন্ঠে বলে,,,

:-নাহ! আসলে! দেখো তোমরা এখন ভার্সিটিতে যে পর্যায়ে আছো ,এই মুহূর্তে তোমাদের এসব বিয়ের মতো জটিল সম্পর্ক জড়ানোটা পড়াশোনার ক্ষতি করবে। তাই….

:-তাহলে এই সেমিস্টারের পরে বিয়ে করলে অসুবিধা নেই তাই তো??

রেশমীর কথায় চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তালহার। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,

:-মনে হচ্ছে বিয়ে করার জন্য বেশ উতলা হয়ে আছো। পাত্র কি খুব বেশি পছন্দ হয়েছে নাকি??

তালহার কটাক্ষে ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দে হাসে রেশমী। বলে,,

:-সে আর বলতে। জানেন ছেলেটা সেই হ্যান্ডসাম ছিলো। যেমন দেখতে তেমনই ক্যারিয়ার। পাত্র আবার ডক্টর কিনা!! পছন্দ না হয়ে যাবে কোথায় বলুন!!

:- শার্ট আপ রেশমীঈঈ!!!! 😡 I swear কাল তুমি একবার আমার সামনে এসো! তোমার বিয়ে করার শখ আমি জাস্ট বের করবো!!

তালহার ধমকে আঁতকে ওঠে রেশমী। আরে সে তো মজা নিতেই এমন মিছেমিছি বলছিলো। তালহা যে এতো রেগে যাবে বুঝতে পারেনি।

:-আরে স্যার আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো বলুন তো! আর পাত্রপক্ষ আমাকে তো দেখতে আসেনি। এসেছিলো আমার বোন তুলির জন্য।

রেশমীর কথা বোধগম্য হতেই হুট করেই ক্রোধ শান্ত হয়ে গেলো তালহার। পাজি মেয়েটা যে এতক্ষণ তার সাথে মজা নিচ্ছিলো বেশ বুঝতে পারে। তবে কিছুটা শঙ্কিত হয়!! বুঝে গেলো নাকি কিছু মেয়েটা! তার আরও সংযতো হয়ে কথা বলা উচিত ছিলো। আহ! সেই বা কি করবে! মেয়েটা এমন এমন কাজ করে যে, নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না তালহা।

:-তুমি এতক্ষণ আমার সাথে মিথ্যা বলছিলে বেয়াদব??

:-বাহ রে! শুরুতেই তো আমি বলতেই যাচ্ছিলাম। আপনিই তো সুযোগ দিলেন না। তার আগেই ষাঁড়ের মতো চিল্লানো শুরু করে দিলেন।

:-হুয়াট!! What do you mean by ষাঁড়ের মতো??

:-সেকি স্যার আপনি ষাঁড় চেনেন না?

:- এবার কিন্তু তুমি বেশি বেশি করছো রেশমী। স্যারের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না? থাপড়ে গাল লাল করে দেবো বেয়াদব মেয়ে!!

বলেই রেশমি তে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিল তালহা। এদিকে রেশমি হেসে কুটি কুটি!!

বিড়বিড় করে সে” স্যার আপনি যে ধরা পড়ে গেছেন” এখন শুধু হাতেনাতে প্রমাণ হওয়ার অপেক্ষা।দেখবো এবার আপনি কোথায় পালান। আমার সামনে তো আপনাকে এক্সপোজ করেই ছাড়বো। নয়তো আমার নামও রেশমী শিকদার নয়। হাহঃ

________

সারার কোচিং সেন্টারের সামনে এসে বাইক থেকে নামলো আব্র। ভার্সিটির ফাইনাল সেমিস্টারের পরীক্ষা চলছিলো এতো দিন। পরীক্ষার কারণে সারার সাথে অনেকদিন দেখা হয় না। যেহেতু আব্র ভার্সিটির লাস্ট সেমিস্টারের স্টুডেন্ট তাই এবার তার ভার্সিটি থেকে বিদায় নেবার পালা। ভার্সিটি থেকে পাস আউট হলে সারাকে আর রোজ রোজ দেখা হবে না। বুকের ভিতরে কেমন শূন্য অনুভব হয় আব্রর। অপেক্ষা করে সারার বের হওয়ার।
প্রায় বিশ মিনিট পর সারা আর সামিরা কোচিং সেন্টার থেকে বেরিয়ে আসে। কোচিং সেন্টারের সামনে আব্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমকে দাঁড়ায় দু’জন। কেমন অস্বস্তি হয় সারার। অনেকদিন পর আব্রকে দেখে উৎফুল্ল হয়ে তার দিকে এগিয়ে যাই সামিরা।

:- আরে আব্র ভাইয়া আপনি!

:- হ্যাঁ এদিকেই এসেছিলাম একটা কাজে। কেমন আছো তোমরা?

:-জ্বী আমরা ভালো আছি।

আব্রর কথাটা ঠিক বিশ্বাস হলো না সারার। আব্রকে দেখে কেনো যেনো মনে হলো সে এখানে দাঁড়িয়ে তাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। কাজের কথাটা শুধুমাত্র অযুহাত।
তবে সামিরা সেসব নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন মনে করলো না। সে আব্রকে সন্দেহও করেনি। দিব্বি হাসিমুখে কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে যাচ্ছে সে। আব্র সামিরার সাথে কথায় সায় দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে এ কথায় সে কোথায় হাসছে। কিন্তু তার নজর বেশিরভাগ সময়টাই সারার ওপরে নিবন্ধ। আর আব্রর এই দৃষ্টিটাই সারার অস্বস্তির কারণ।

চলবে,,,,

#সারা_জাহান
পর্ব,,,,২৬
মৌমো তিতলী
❤️❤️❤️❤️❤️

কোচিং সেন্টারের পাশেই একটা ক্যাফেতে মুখোমুখি বসে আছে সারা, সামিরা আর আব্র। সারা আর সামিরা একপাশে বসেছে। সারার সামনের চেয়ারে বসেছে আব্র। ওয়েটার এসে তিন কাপ কফি আর চিকেন ফ্রাইয়ের দুটো প্লেট টেবিলে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ে গেলো। আব্র কফির কাপ সারা আর সামিরার দিকে এগিয়ে দিলো। নিজেও উঠিয়ে নিলো এক কাপ। সামিরা খুশি মনেই কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে। মনের ভেতরে অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে তার। এই প্রথম বার ক্রাশের সাথে বসে কফি খাচ্ছে সে। অনুভূতিটা সুন্দর।
এদিকে সারার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। কেনো যেনো মনে হচ্ছে অদৃশ্য কোন দৃষ্টি তাদেরকে গভীর ভাবে দেখছে। সারা অস্থির হয়ে এদিক ওদিক তাকালো। সন্দেহজনক কাউকেই দেখলো না। অদ্ভুত! তার কেনো এমন আনকমফর্টেবল লাগছে? এটা কি শুধুই আব্রর সামনে বসে আছে বলে, নাকি অন্য কিছু।

সারার অস্থিরতা লক্ষ্য করে প্রশ্ন করে আব্র,,

:-Any problem Sarah?

সারা সৌজন্য হেসে মাথা নাড়ায়। তারপর কফির কাপটা উঠিয়ে নিয়ে সিপ নেয়।

:-তারপর সারা! কোথায় ভর্তির ইচ্ছে আছে? এই ভার্সিটিতেই তো?

মাথা নাড়ায় সারা।

:-হ্যাঁ ভাইয়া! এখানেই ভর্তি পরীক্ষা দেবো। তবে ঢাবি আর জবিতেও দেবো।

:-আচছা। আশা করি কোন একটাই ঠিক চাঞ্চ পেয়ে যাবে। তোমার তো রেজাল্ট ভালো।

হালকা হেসে মুখ নামিয়ে নেয় সারা। আব্র সামিরাকেও জিজ্ঞাসা করলো কোথায় ভর্তি হবে। সেও জানালো সারা যেখানে যেখানে দিবে সেও সেখানেই দিবে।
এর মধ্যে সামিরার ফোনে কল আসলে সামিরা “এক্সকিউজ মি” বলে ওখান থেকে উঠে একটা ফাঁকা জায়গায় গিয়ে কথা বলতে থাকে।

সামিরা উঠে যেতেই আরো অস্বস্তিরা এসে ঘিরে ধরে সারা কে। ভালো লাগছে না তার। আব্র কেমন অদ্ভুত মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সারার দিকে। অস্বস্তি কাটাতে সারা একটা চিকেন ফ্রাইয়ের পিচ তুলে মুখে দেয়। দুর্ভাগ্যবশত একটুখানি সস লেগে যায় সারার ঠোঁটের কোণে।
আব্র দেখলো তা। কেমন অধর টেনে হাসলো। হুট করেই উঠে ঝুঁকে এলো সারার দিকে । আচমকা আব্রকে তার দিকে ঝুঁকতে দেখে মাথা খানিকটা পিছিয়ে নিলো সারা‌। কিন্তু আব্র তার হাত বাড়িয়ে দিলো সারার দিকে। মুহুর্তেই সেই হাত স্পর্শ করলো সারার অধরে। হাতের আঙ্গুল দিয়ে সারার ঠোঁট থেকে সসটুকু মুছে সারার সামনে ধরলো। অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে বসে রইলো সারা। মনে মনে নিজেকে হাজারটা গালি দিলো সে। কেনো এখানে আসতে গেলো আব্রর কথায়। সামিরার ওপরেও রাগ হলো বেশ। তখন আব্র কোথাও বসতে চাইলে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে সেও রাজি হয়ে গেলো। অগত্যা সারাকেও আসতে হলো।
কিছুক্ষণ বাদেই সামিরা এসে বললো,,

:-সরি ভাইয়া। অনেক লেইট হয়ে গেলো। বাড়ি থেকে ফোন দিয়েছে। আমাদের এখনই যেতে হবে।
ভালো থাকবেন।

যাওয়ার কথা শুনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো সারা। আব্রও আর জোর করলো না। সারা আর সামিরা কে একটা রিকশায় উঠিয়ে বিদায় দিয়ে সেও বাইকে উঠে স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।

********

আজ ভার্সিটিতে একটু তাড়াতাড়িই এসেছে রেশমী। বন্ধুদেরকেও আসতে বলেছে। সাত আট মিনিটের মধ্যে সালমা নিশি রাতুল নিরবও এসে হাজির হয়। সবাই গিয়ে ক্যাম্পাসে কাঠবাদাম গাছের নিচে গোল হয়ে বসে।
রেশমী ধীরে সুস্থে কালকের সব ঘটনা খুলে বলে সবাইকে। রেশমীর কথায় বাকি সবাই ৯৯% শিওর হয়ে যায় স্যার তালহা রেশমী কে পছন্দ করে।
রেশমী জানায় সে তাকে হাতেনাতে ধরতে চায়। তার জন্য প্ল্যান দরকার। সবাই একমত হয়। এক এক করে নিজেদের প্ল্যান দিতে থাকে সবাই। কিন্তু একটাও রেশমীর মনমতো হয়না। শেষে রাতুল বলে,,

:- আমার কাছে একটা ঝাক্কাস প্ল্যান আছে দোস্ত!!

সবাই আগ্রহ ভরে জানতে চাই কি প্ল্যান! রাতুল আস্তে আস্তে প্ল্যানটা সবাইকে বর্ণনা করে‌। বলে এটা এক্সিকিউট করতে পারলে স্যার কে এক্সপোজ করা ১০০% পসিবল হবে। কারন আমরা ছেলেরাই ছেলেদের সিচুয়েশন বুঝতে পারি।
এই প্ল্যানটা পছন্দ হয় রেশমীর। সালমা বলে,,,

:-ঠিক আছে তাহলে জায়গা ঠিক কর। আজকেই পরীক্ষাটা হয়ে যাক!

রেশমি আমতা আমতা করে বলে,,

:-একটু বেশি তাড়াহুড়ো হয়ে যাবে না। না মানে আজকেই কেন?

সালমা রেগে গিয়ে বলে,,

:-ধুরর! রাখতো। সন্দেহ যখন করছিস তখন এত দেরি করে লাভ কি? যত তাড়াতাড়ি হয় ততই তো ভালো!

রেশমী মুখটা ভোঁতা করে বলে,,,

:-ঠিক আছে তাহলে বল কোথায় যাব?

নীরব বলে,,,

:-এক কাজ কর, রবীন্দ্র সরোবর নয়তো রমনায় যা‌।

সালমার দাঁতমুখ খিচিয়ে বলে,,,

:-ইউউউ,,, এসব কমন জায়গা চলবে না। তাছাড়া এই দুইটা জায়গায় আমাদের ভার্সিটি খুব কাছে। এমন জায়গায় যেতে হবে যেখানে কোন কারণেই স্যারের যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।

রাতুল বলে,,,

:-তাহলে গাজীপুর সাফারি পার্কে যা।

আঁতকে উঠে রেশমি। বলে,,

:-এটা একটু বেশিই দূরে হয়ে যায়। তাছাড়া একা বাড়ি ছেড়ে এত দূরে গেলে তৈমুর ভাইয়া জানতে পারলে মেরেই ফেলবে।

:-তাহলে দিয়াবাড়ি যাবি?

:-হ্যাঁ এখানে যাওয়া যায়।

:-ব্যাসসস তাহলে আর কি! উঠে পড়!

:-দেখ তোদের ভরসায় এরকম একটা পদক্ষেপ নিচ্ছি। বাল ভয় করছে! হিতে বিপরীত হবে না তো?

এতক্ষণে নিশি বলে,,,

:-ভালোবাসার প্রমাণ পেতে এত টুকু রিস্ক তো নিতেই হবে। বলেই চশমাটা নাকের উপর ঠেলে দিলো।
রেশমিও আনমনে মাথা দোলায়।
পরক্ষণে সালমা বলে,,,

:-শোন তোরা দুইজন এদের দুইজনকে তোদের বাইকে নিবি। আর এখানে দায়িত্বটা আমি দেখে নিচ্ছি।

নিরব রাতুল ওকে! বলে বাইকে উঠে বসলো। রেশমি আবার ও সালমার দিকে তাকিয়ে বলে,,

:- প্ল্যান সাকসেস হবে তো! আমার কেমন লাগছে। যদি সত্যিই হয় তাহলে কি করবো?

সালমা রেশমির কাঁধে হাত রেখে বলে,,,

:-তোর মন কি চায়? দেখ তোর যদি মনে হয় স্যারকে তুই সুযোগ দিবি, তাহলে মেনে নিবি। আর যদি মনে হয় তোর মন সায় দিচ্ছে না, তাহলে স্যারকে সরাসরি জানিয়ে দিবি। সিম্পল!!

:-দেখ তোরা তো জানিস তালহা স্যার আমার ক্রাশ। আমি স্যারকে ঠিক ভালোবাসি কিনা জানিনা, কিন্তু তার জন্য একটা অন্যরকম অনুভূতি তো আমার হৃদয়ে আছে। এটা তো অস্বীকার করা যায় না।

:-তাহলে দেরি করিস না। Go ahead!!

লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে রাতুলের বাইকে উঠে বসে রেশমি। নিশিও গিয়ে নিরবের বাইকের পেছনে গিয়ে বসে। পরপর দুটো বাইক শা শা করে এগিয়ে চলে উত্তরার রাস্তা ধরে!!

____

হসপিটালে নিজের কেবিনে বসে আছে তৈমুর জাহান। চোখ তার ল্যাপটপে আটকে। এমন সময় সায়ান এসে ধপ করে বসে পড়ে। টাই টা টেনে ঢিলে করে ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেলে।

তৈমুর সায়ানের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে আবারো ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে বলে,,,

:-খুব বেশি ক্লান্ত??

টেবিলের উপর থেকে গ্লাস টেনে নিয়ে ফিল্টার থেকে পানি ভরে নেয় সায়ান । ঢকঢক করে পুরোটাই শেষ করে বলে,,

:-আরে ইয়ার! সকাল থেকে ছুরি কেচি চালিয়ে চলেছি। আজকাল মানুষের যে এত রোগ হয় কেন বুঝি না।কোন কিছুতেই মানুষের ডিসিপ্লিন নেই। তার উপরে খাদ্যে ভেজাল। সকাল থেকে সাতটা ওটি করেছি, তার মধ্যে চারটায় কিডনিতে পাথর। ভাব একবার এই রোগটা কি পরিমানে প্রভাব ফেলেছে মানুষের উপরে।

মাথা নাড়ে তৈমুর। বলে,,

:-ঠিকই বলেছিস! তবে মানুষের কিডনিতে পাথর (Kidney Stone) বা “রেনাল ক্যালকুলাস” বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন ধর পানি পান করা। (Dehydration) যখন শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকে না, তখন প্রস্রাবে থাকা খনিজ পদার্থগুলো জমাট বাঁধে এবং পাথর তৈরি হয়।
অতিরিক্ত সোডিয়াম (লবণ) গ্রহণ। খাবারে বেশি লবণ খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, যা কিডনিতে পাথর তৈরির সম্ভাবনা বাড়ায়।
প্রোটিনযুক্ত খাবারের অতিরিক্ত গ্রহণ। বেশি পরিমাণে মাংস, ডিম, মাছ ইত্যাদি খেলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে, যা ইউরিক অ্যাসিড পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়।
তারপর ক্যালসিয়ামের ভারসাম্যহীনতা। দেখবি খুব বেশি বা খুব কম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলেও পাথর হতে পারে। সাধারণত অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট থেকেও এই সমস্যা হয়।
এরপর অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া। চা, চকোলেট, পালং শাক, বাদাম, বিট — এসব খাবারে অক্সালেট বেশি থাকে, যা ক্যালসিয়ামের সাথে মিলে পাথর তৈরি করতে পারে। আবার স্থূলতা ও অনিয়মিত জীবনধারাও এর কারণ হতে পারে। যেমন,,ওজন বেশি হলে এবং একটানা বসে থেকে জীবনযাপন করলে কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়ে।
আবার (Genetic Cause)বা যদি পরিবারের কারো কিডনিতে পাথর হয়, তাহলে অন্য সদস্যেরও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এমনি যদি প্রস্রাবের রাস্তার সংক্রমণ (UTI) হয়।
বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন থেকেও স্ট্রুভাইট নামের পাথর তৈরি হতে পারে।
যেমন:

গাউট (Gout),হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম,কিডনির টিউবুলার সমস্যা,সিস্টিনুরিয়া এসব কারনেও কিডনিতে পাথর হয়।

সায়ান মনোযোগ দিয়ে শোনে তৈমুরের কথা। এমন নয় যে এগুলো সায়ান জানে না। আফটার অল সেও তো ডক্টর। তবে তৈমুরের বর্ননা করাটা সায়ানের কাছে অসাধারণ লাগে বরাবরই। তৈমুর নিঃসন্দেহে একজন ভালো ডাক্তারের পাশাপাশি একজন ভালো মেডিকেল টিচারও।

:-হ্যাঁ তুই ঠিকই বলেছিস। আমাদের উচিত নিজেদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এসব ছোটখাটো বিষয়েও নজর দেয়া। নিয়মিত শরীরচর্চা, খাদ্য গ্রহণ, ঘুম এগুলো প্রপারলি করলেই মানুষের রোগের ঝুঁকি কমবে।

:-হুম।

:-আচছা বাসায় যাবি কখন? কাজ আছে নাকি তোর?

:-নাহ! তেমন কাজ নেই। অল্প কিছুই আছে এগুলো সেরেই যাবো।

:-আচ্ছা যাওয়ার আগে আমাকে ডাকিস। বলে সায়ান তৈমুরের কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।

***********

তালহা মাত্রই ফাস্ট সেমিস্টারের ক্লাস শেষ করে বেরিয়েছে। ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির দিকে আসতেই তার কানে কিছু কথা এসে ধাক্কা খায়। উল্টো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সালমা। কানের ফোন চেপে কথা বলছে কারো সাথে। স্পষ্টই সালমার কন্ঠে রেশমির নাম শুনতে পেলো।
রেশমির নাম শুনতেই অদৃশ্য কোন মায়াবলে পা দুটো থেমে গেল তালহার। রেশমিকে আজ ভার্সিটিতে কোথাও দেখেনি তালহা। মেয়েটা কি আজও আসেনি? একটা মেয়ে এত ইরেসপন্সিবল কি করে হয়! সামনে সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা অথচ ঠিকমতো ভার্সিটিতেও আসছে না মেয়েটা। সালমা হঠাৎ রেশমিকে নিয়ে কি বলছে শোনার আগ্রহ জন্মালো মনে। নিজেকে কিছুটা আড়াল করে দাঁড়ালো। স্পষ্টই শুনতে পেল সালমা কাউকে বলছে,,,

:-আরে ভাই না, রেশমি আসেনি। ও তো বলেছিলো আজকের দিয়াবাড়িতে ওই ছেলেটার সাথে দেখা করতে যাবে। দেখ অনেকদিন থেকেই তো ওকে প্রপোজ করছে। হয়তো রেশমি আজ তার মতামত জানিয়ে দেবে। কতদিনই বা আর সিঙ্গেল থাকবে বল?

এদিকে সালমার কথা শুনে পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল তালহার। পৃথিবীটা চোখের সামনে দুলছে মনে হলো । বুকের বা পাশটা থরথর করে কেঁপে উঠলো।
কি বললো সালমা? কার সাথে দেখা করতে গিয়েছে রেশমি? কে প্রপোজ করেছে ওকে? এতো নজরে,এতো আগলে রাখার পরেও কোন ফাঁকে কে এসে প্রপোজ করে দিলো আর অমনি মেয়েটা নাচতে নাচতে এতো দূর চলে গেলো তার সাথে দেখা করতে?
রাগের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তালহার। সালমার কথা যদি সত্যি হয়, এই মেয়ে যদি সত্যিই এতো দূর কোন ছেলের সাথে দেখা করতে গিয়ে থাকে, তাহলে আজকের রেশমির অদৃষ্টে বেজায় দুঃখ আছে। তাকে আজ উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে তালহা।
রেগেমেগে গট গট করে অফিসের দিকে চলে গেল সে।

তালহা প্রস্থান নিতেই সেদিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিল সালমা।

নিজের কেবিনে গিয়ে হাতের বইটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো তালহা। দুহাতে মাথার চুল খামচে ধরে নিজেকে শান্ত করতে চাইললো। অদ্ভুত এক রাগের বশে চোখদুটো লাল হয়ে গেল তালহার। বুকের ভেতর হাটুড়ি পেটাচ্ছে। অদ্ভুত এক বিষ ব্যাথা ছড়িয়ে গেছে সমস্ত শরীরে।
হুট করে টেবিলের উপর থেকে ফোন আর গাড়ির চাবিটা নিয়ে প্রিন্সিপালের রুমে গিয়ে নক করলো। ভেতর থেকে অনুমতি পেতেই প্রবেশ করলো সে।

প্রিন্সিপাল কে বলে আজকের জন্য লিভ নিয়ে নিলো। তালহা এহমাদ তার চাকরির জীবদ্দশায় কখনো একটা ক্লাসও লিভ নেয়নি। হঠাৎ করে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস বাদ রেখে লিভ নিতে দেখে চিন্তিত হলেন প্রিন্সিপাল স্যার।
কপালে ভাঁজ ফেলে প্রশ্ন করলেন,,

:-are you okay? Everything is fine Talha??

:-Yeah I’m okay but I’m feeling a little sick! I need the day off today.!

:-okay okay.. you can leave!

:-thank you sir!

বলেই অফিস রুম থেকে বেরিয়ে এলো তালহা । পার্কিং লটে গিয়ে গাড়ি বের করলো। মুহুর্তেই গাড়ি নিয়ে ভার্সিটির গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলো।

এতক্ষণ তালহার গতিবিধি লক্ষ্য করছিল সালমা। সত্যি সত্যি তালহা কে লিভ নিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেল সালমার। এই প্রথমবার! এই প্রথমবার স্যার লিভ নিলো। রেশমিদের কাছে প্রমাণ না হলেও সালমার কাছে এখন পরিষ্কার! তালহা এহমদ স্যার সত্যিই ভালোবাসে রেশমিকে । সালমা শিওর তালহা স্যার এখন রেশমীর পিছু পিছু দিয়াবাড়ি যাবে।
ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করতে করতে বিড়বিড় করে সালমা,,
“রেশু রে! আজকে তুই খাতাম!
টা টা!
গুড বাই!
গ্যায়া!!
কারণ তালহা এহামদ নামের মিসাইল ছুটে যাচ্ছে তোর দিকে। বাঁচতে চাইলে পালা।

***********
এদিকে দিয়াবাড়িতে এসে ওয়াশরুমে গিয়ে রেশমি আর নিশি একে অপরের ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো। নিশি আর রেশমির শারীরিক গঠন প্রায় একই রকম হওয়াতে সহজেই একে অপরের ড্রেসে ফিট হয়ে গেল। এর মধ্যেই সালমা ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে তালহা এহমাদ স্যার ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেছে। সেই মোতাবেক প্ল্যান এক্সিকিউট করবে তারা।
অদ্ভুত অস্থিরতায় হাত দুটো কচলাচ্ছে রেশমি। রাতুল এসে মাথায় গাট্টা মেরে বলে,,

:-এত টেনশন নিস না রেশমি চুড়ি ! দেখবি যা হবে ভালোই হবে।

:-তুই চুপ কর তো বাল! আমার টেনশন হচ্ছে স্যারের ঝাড়ি আর ধমক তো আর তোকে খেতে হয় না। তোরা তো ভাই তোদের কাজ করেই খালাস! কিন্তু আমার কি হবে একবার ভেবে দেখ।
নিশি ওড়না দিয়ে নিজের মাথা ভালো করে ঘোমটা দিয়ে বলে,,,

:-আরে কিছু হবে না। স্যার তো এসে দেখবেন আসলে তুই কোন ছেলের সাথে দেখা করতে আসিস নি! তাহলে এত ভয় পাচ্ছিস কেন?

:-সে ঠিক আছে! কিন্তু পাকনামি করে যে এত দূর এলাম। আর এই ফাতরামির জন্য স্যার ঠিক থাপড়ে গাল লাল করে দেবে। আর আমাদের এই ইউজলেস প্লানের ব্যাপারে জানলে তো কথায় নেই। ঠিক ধমকে রুহ বের করবে আমার।

রাতুল কিছু বলতেই যাবে তখনই নীরবের কল আসে। ফোন রিসিভ করতেই জানাই স্যার চলে এসেছেন।শুনে রেশমির হাত পা কাঁপতে থাকে।
তালহা স্যার সত্যিই এলেন? শুধু মাত্র রেশমীর জন্য? এতো জেলাসি?টেনশনেও মুখে লাজুক হাসি ফোটে রেশমীর।

রাতুল আর নিশি ঝটপট গিয়ে ঝিলের ধারে বসে পড়ে। মাথায় আধহাত ঘোমটা টেনেছে নিশি। রাতুলের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে যথাসম্ভব নিজেকে ঢেকে বসেছে সে। রাতুলও নিশির এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় ধরে রেখেছে। পিছন থেকে দেখলে যে কেউ বলবে ঠিক যেন কোন লাভার কাপল।
রেশমি নিশির জামা কাপড়ে নিজেকে আবৃত করে মুখে একটা মাস্ক পরে নেয়। ওদের থেকে কিছুটা দূরে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে তালহার গাড়ি এসে ব্রিজের কাছে থামে। গাড়ি এক পাশে পার্ক করে নেমে আসে তালহা।

এখান থেকে স্পষ্টই তালহাকে দেখতে পারছে রেশমী । গাড়ি থেকে নামতেই তালহার চোখ মুখ দেখে আঁতকে ওঠে সে। চোখ দুটো অসম্ভব রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। মুখ আর কান দুটোও কেমন লাল দেখাচ্ছে। রোদের তেজে নাকি রাগের তেজে বুঝলো না রেশমী।
গাড়ি থেকে নেমে তালহা চারিদিকে চোখ বুলিয়ে কাঙ্খিত মানুষদেরকে খুঁজলো। কোথায় সেই বেয়াদব টা? আজকে তো তার সাহসের মাত্রাটা সে মেপে দেখবে। কত্ত বড় সাহস! শহর থেকে এতো দুরে কোথাকার কোন উড়ে এসে জুড়ে বসা কার না কার সাথে দেখা করতে চলে এসেছে। একবার সামনে পাক! মেরে হাত পা ভেঙ্গে রেখে দেবে।
আগুন চোখেই এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে এদিকেই এগিয়ে আসছে তালহা।

আড়াল থেকে সবটাই লক্ষ্য করছে রেশমি। এতক্ষণ সাহস দেখালেও এই মুহূর্তে তালহাকে দেখে ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে রেশমির। তালহা স্যারের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতটা রেগে আছে মানুষটা। রেশমীকে সামনে পেলে যেন নুন মরিচ ছাড়াই কাঁচাই চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে!!

চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে কিছুটা এগিয়ে আসতে ঝিলের ধারে দুজন কাপলের দিকে চোখ আটকে যায় তালহার। দুম করে মাথায় রক্ত উঠে গেল তার! ড্রেস দেখে ঠিক চিনেছে এটা রেশমীর। কিন্তু পাশের ছেলেটার সাথে তার বসে থাকার ভঙ্গি দেখে রাগের দপদপ করে উঠলো মাথাটা। রাগে তেড়ে এগিয়ে গেলো সেদিকে।
নিশি আর রাতুলের কাছে গিয়েই নিশির বাহু ধরে হ্যাঁচকা টানে উঠে দাড় করায় তাকে। আচমকা টানে খেই হারিয়ে উঠতে নিলে মাথা থেকে ওড়না সরে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই চমকে উঠে নিশির হাত ছেড়ে দিলো তালহা! কেমন একটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।

এদিকে নিশি আর রাতুল অবাক হওয়ার ভান করে এমনভাবে তালহা কে দেখে চমকে উঠলো যেন তালহাকে তারা এখানে আশাই করেনি। দুনিয়া থেকে একেবারেই অজ্ঞাত তারা দুজন। রাতুল এমনই আশ্চর্য কন্ঠে বলে ওঠে,,

:-স্যার আপনি এখানে??

তালহা একটু কনফিউজড একটু অপ্রস্তুত কন্ঠে প্রশ্ন করে,,

:-তোমরা এখানে কি করছো? আর তোমাদের সাথের সেই বেয়াদব টা কোথায়? কার সাথে দেখা করতে এসেছে?

নিশি আরো অবাক হওয়ার ভান করে বলে,,

:-বেয়াদবটা কে স্যার?? কার কথা বলছেন?

:-রেশমী কোথায়? কার সাথে দেখা করতে এসেছে সে?

তখনই তালহার পেছন থেকে কেউ বলে ওঠে,,,

:-আমি এখানে স্যার!

রেশমীর গলা কর্ণ গোচর হতেই পেছনে তাকায় তালহা। রেশমী ঠিক তার পেছনে বুকে হাত বেঁধে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

রেশমী কে দেখেই আবারো রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো তালহার। দাঁত মুখ খিচিয়ে কটমটে করে বললো,,

:-শহর থেকে এতো দুরে এখানে কার সাথে দেখা করতে এসেছো? কে আছে সাথে? কোথায় সেই পুরুষ তার সাথে দেখা করতে ভার্সিটি বাঙ্ক করে এসেছো!

তালহার প্রশ্নের জবাব দেয়ার আগে স্যারের পেছনে অবস্থিত রাতুল আর নিশি কে ইশারা করলে তারা দুজন সেখান থেকে চলে যায়। রেশমী এবার সরাসরি তাকায় তালহার চোখের দিকে‌। শান্ত গলায় বলে,,,

:-আমি ভার্সিটি বাঙ্ক দিয়ে কার সাথে দেখা করতে এসেছি সেটা দেখতে আপনিও ক্লাসের লেকচার বাঙ্ক মেরে জাসুসি করতে এলেন?

:-হোয়াট ননসেন্স!

:-কিসের ননসেন্স! আজ তো আপনার পরপর সবগুলো ক্লাস ছিল। আপনি সেসব বাদ দিয়ে এখানে কি করছেন স্যার?

তালহা এবার রেগে রেশমির দিকে এগিয়ে গেল। দুহাতে রেশমির কাধ খামচে ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে হিসহিস করে বলল,,,

:-don’t dare Reshmi! Don’t you dare talk to me like that.! যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটার উত্তর দাও।Who is the man you came here to meet??

:-তাতে আপনার কি?

:-Listen, Reshmi, don’t test my patience..tell me honestly, who that men?.

:-আমি যার সাথে দেখা করতে আসি। আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? আপনার কি আসে যায় আমি কার সাথে দেখা করবো না করবো তাতে!

:-অবশ্যই যায় আসে। কেন অন্য কারো সাথে দেখা করবে তুমি। তোমার জীবনে অন্য কোন পুরুষ আসতে পারে না রেশমী। I will not tolerate anyone else in your life!

রেশমি এবার তালহার হাত যারা মেরে জোর গলায় বলে,,

:-Why can’t you tolerate any man in my life? Why?

:-because! Because I love you Dam it!! I love you! I love you like crazy…. শুনতে পেয়েছো?
হয়েছে শান্তি। Now tell me who you came to meet.??

রেশমি ঠোঁটে হাসি টেনে বলে,,,

:-কারো সাথেই না। আমি নিশি আর রাতুল তিনজনই এসেছি শুধু!

:-মিথ্যে বলছো তুমি আমায়। আমি নিজের কানে সালমা কে বলতে শুনেছি! কেউ তোমাকে প্রপোজ করেছে, আর তুমি তার সাথে দেখা করতে এখানে এসেছো!

এবার খিল খিল করে হেসে ওঠে রেশমি। হুট করে রেশমি এভাবে হাসতে দেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে তালহা। এতক্ষণে টলক নড়ে, দুষ্টু মেয়েটা ভয়ংকর ভাবে বোকা বানিয়েছে তাকে।

রেশমি হাসতে হাসতেই বলে,,,

:-দ্য গ্রেট তালহা এহমাদ স্যার! শুধুমাত্র একটা কথার ভিত্তিতেই সবটা বিশ্বাস করে নিলেন? জেলাসিতে একদম বোকা হয়ে এতদূর চলে এলেন যাচাই করতে?

রেশমির দিকে তেড়ে গেলো তালহা। রাগী গলায় বলল,,

:-তার মানে তুমি ইচ্ছে করে মিথ্যে বলিয়েছো সালমা কে দিয়ে? আর এতক্ষণ ধরে নাটক করছিলে আমার সামনে? নাটক? নায়িকা সাজা হচ্ছে? দাঁড়াও তুমি! আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন।
বলেই তাড়া করে রেশমিকে। রেশমিও খিলখিল করে হাসতে হাসতে উল্টো দৌড় দেয়। আর বলে,,,

:-সরি স্যার সরি!! কিন্তু আমি কি করবো? আপনি এভাবে অধিকার দেখাচ্ছিলেন, আবার স্বীকারও করছিলেন না যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন। তাই তো এই নাটক করতে হলো।

তালহাও রেশমীর হাত টেনে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,,,

:-আচছা!! এবার আমি দেখাই নাটকের রিভিউ! কি হলো বলো? দেখাই??

বলেই রেশমির দিকে ঝুঁকতে নিতেই লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢাকে রেশমী।

বানান ভুল থাকতে পারে। রিচেইক দেয়া হয়নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন 🙏

চলবে,,,,