সারা জাহান পর্ব-৭+৮+৯+১০

0
22

#সারা_জাহান
পর্ব,,,৭
মৌমো তিতলী
🫶

সারার ঘুম ভাঙ্গে পরদিন সকালে তুলির ডাকে। ঘুম থেকে উঠে নিজেকে রুমে নিজের বিছানায় আবিষ্কার করে সে বেশ দ্বিধায় পড়ে। সে তো কাল রাতে খামার বাড়ি থেকে ফেরার সময় গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো তাহলে এখানে কি করে এলো!
সারাকে এভাবে বোকার মতো মুখ করে বসে থাকতে দেখে তাড়া দেয় তুলি।

:- কিরে এভাবে হাবার মতো বসে আছিস কেন? ওঠ!!
ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। দেরি হলে কিন্তু জাহান ভাইয়ার রাম ধমক থেকে তোকে বাঁচাতে পারবো না। বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় তুলি।

তৈমুরের ধমকের কথা শুনে মুখ মলিন হয় সারার। এই লোকটা পারেই শুধু ধমক দিতে!!
কিন্তু সে রুমে আসলো কখন! দু হাতে মাথাটা চেপে ধরলো সারা। নাহ কিছুই মনে পড়ছে না। ভাবলো হয়তো ঘুমের ঘোরে এসেছে তাই মনে পড়ছে না। ব্যপারটা নিয়ে বেশি না ভেবে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশ রুমে চলে যায়। একবারে শাওয়ার নিয়ে বের হয়। ঢিলেঢালা প্লাজু সাথে একটা লেডিস টিশার্ট পরে বেরিয়ে আসে সারা। মাথার চুল থেকে পানি ঝরছে। পেছনে টিশার্ট অনেকটাই ভিজে গেছে তাতে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়েল দিয়ে চুলগুলো একপাশে নিয়ে মুছতে থাকে।

শিকদার বাড়ির সকলেই খাবার টেবিলে উপস্থিত। শুধু সারা আর তৈমুর এখনো আসেনি। রেশমী মুখ টিপে হাসতে হাসতে বলে,,,

:-এরা জামায় বউ একসাথে লেইট করছে কেনো আজকে?
জাহান ভাইয়া তো সারার মতো লেইট লতিফ না!

তুলি রেশমীর মাথায় ঠোকা মেরে বলে,,

:-তোকে এতো ভাবতে হবে না। চুপচাপ খা।
রেশমী মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঠোঁট উল্টে খাওয়া শুরু করে।

রিনা শিকদার সকলকে ব্রেকফাস্ট সার্ভ করে। গটগট পায়ের আওয়াজে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতে পান তৈমুর রেডি হয়ে নিচে আসছে। রিনা ছেলের খাবার রেডি করে রাখতে রাখতে তুলি কে বলেন,,

:-তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে গিয়ে দেখ এখনো কি করছে মেয়েটা।

তৈমুর চেয়ার টেনে বসতে নিয়েও মায়ের কথায় থেমে যায়। তুলি কে উঠে যেতে দেখে বলে,,

:- তুই থাক। আমি দেখছি। বলেই আবারো গটগট পায়ে উপরে চলে যায় তৈমুর।
সারার রুমের সামনে গিয়ে কোনরকম নক না করেই ভেতরে প্রবেশ করেই থমকে যায়। সারা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে। ঢিলে টিশার্ট হওয়ায় ঘাড় থেকে পিঠের ওপর অংশ অনেকটাই উন্মুক্ত। গায়ে ওড়নার বালায় নেই। এই মুহূর্তে ভিষন আবেদনময়ী লাগছে সারাকে। ঢোক গিলে তৈমুর। বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটার মতো শব্দ হয়। মস্তিষ্কে ছেয়ে যায় উষ্ণতা। তৈমুর ঠোঁট কামড়ে ধরে ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে থাকে সারার দিকে। তৈমুর জাহানের হৃদয়ে তোলপাড়। বক্ষহৃদে যত্নে লালিত ইচ্ছে গুলোর ছুটোছুটি। এক মুহুর্তে তৈমুর জাহানের ইচ্ছে হয় সামনে অবস্থানরত আনমনা মেয়েটাকে বুকের মাঝে ঝাপটে ধরতে। প্রেম পিপাসায় কাতর হৃদয়টা কে একটু শান্তির বৃষ্টি উপহার দিতে। মেয়েটা তার জন্য হালাল। কিন্তু সবকিছু থেকে বেখবর। এখনো সময় আসেনি তাকে সবটা জানানোর। তার আগেই কৌশলে মেয়েটার হৃদয়ে দূর্বলতা তৈরি করতে হবে তৈমুর জাহানের প্রতি। তা নিশ্চিত করবে এই তৈমুর জাহান শিকদার।

হুট করে আয়নায় তৈমুরের প্রতিবিম্ব দেখে থতমত খায় সারা। তাড়াহুড়ো করে পাশের হেঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা ওড়না টেনে নিয়ে ঝটপট গায়ে জড়ায়।সারার দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তৈমুর। তা দেখে সারা মিনমিন করে বলে,,,

:-আপনি কখন এলেন জাহান ভাইয়া?

সারার কথায় ধ্যান ভাঙ্গে তৈমুরের।

:-যখন থেকে তুই হাবার মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুল মুছতেছিলি।

:-আপনি আসার সময় নক করবেন না? আপনি আমার রুমে আসলে কখনো না করেন না কেনো বলুন তো?

সারার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায় তৈমুর। ধমক দিয়ে বলে,,

:-তোর মতো গেন্দা বাচ্চার রুমে আসতে এখন আমাকে পারমিশন নিতে হবে?
বের হ রুম থেকে! হরিপদ!!

তৈমুরের কথায় হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকে সারা!কি বললো তাকে!! সে গেন্দা বাচ্চা! হরিপদ! ছ্যাঃ কি সব নাম🤧

রুম থেকে বের হতে গিয়ে আবারো তাকায় তৈমুর। বলে,,

:-খাবার টেবিলে উপস্থিত হতে যদি এক মিনিট লেইট হয় তো তোকে রেখেই কিন্তু চলে যাবো। হাঁ করে দাঁড়িয়ে না থেকে নিচে আয়!! সারার জবাবের অপেক্ষা না করে বেরিয়ে আসে তৈমুর। বাইরে এসেই বুক ফুলিয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে তৈমুর। এতক্ষণ ধরে নিঃশ্বাসটা আটকে ছিলো যেন। কান দিয়ে ধোঁয়ার মতো তাপ বের হচ্ছে যেন! এই মেয়েটা তাকে পাগল করে ছাড়বে নিশ্চিত। সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায় জাহান।
সারা তার পিছনে দৌড়ে আসে। তৈমুরের কাছাকাছি এসে বলে,,,

:-এই এই আপনি আমাকে কি বললেন? কি বলে আসলেন
আমি গেন্দা বাচ্চা?
সারার কথায় ঘুরে দাঁড়ায় তৈমুর। সারার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলে,,

:-হ্যাঁ ঠিকই তো বলেছি! তুই তো গেন্দা বাচ্চায়!

ক্ষেপে যায় সারা।তাকে বাচ্চা বলায় মানে লেগেছে বেশ। নিজেকে বড় প্রমাণ করতে মরিয়া সারা ভুলেই বসেছে কার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটা স্বয়ং তৈমুর জাহান শিকদার। যার হাতের একটা মাত্র দাবাং মার্কা চড়ে সারার মতো পুঁচকে মেয়েটার কি অবস্থা হবে!!
সারা তৈমুরের দিকে এগিয়ে গিয়ে কোমরে হাত রেখে বলে,,

আমি মোটেও গেন্দা বাচ্চা নই। আপনি জানেন কলেজে আমার বয়সী অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে আর বাচ্চাও……

কথাটা শেষ করার আগেই তৈমুরের রক্তচক্ষু দেখে সারার হুস আসে এতক্ষণ সে কি করছিলো!! আঁতকে উঠে এক পা পেছনে নিতেই সিঁড়ি থেকে পড়তে নেয় সারা। চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় মুহুর্তে। কিন্তু নিচে পড়ার বদলে নিজেকে দোল খেতে অনুভব হতেই চোখ খোলে সারা।
সারার ঘাড়ের কাছে টিশার্ট তৈমুরের হাতের মুঠোয় বিদ্যামান। তৈমুর জাহানের এক হাত নিজের প্যান্টের পকেটে আর এক হাতে সারাকে উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তাতেই সারা পড়ে যাওয়া তো দুর, রিতিমত দোল খাচ্ছে! সেভাবেই এক হাতে উঁচু করেই সারাকে নিয়ে গিয়ে চেয়ারের ওপর ধপ করে বসিয়ে দেয় তৈমুর। এতক্ষণ খাবার টেবিলে উপস্থিত সকলেই হাঁ করে তাকিয়ে ছিলো তাদের দিকে। সারাকে বসিয়ে দিতেই হঠাৎ সবাই ঘর কাঁপিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো। সারা আর উত্তর দিতে না পেরে মাথা নিচু করে খাবার খেতে লাগলো। তা দেখে ঠোঁট কামড়ে মৃদু হাসলো তৈমুর জাহান।

*****
লাইফ কেয়ার হসপিটাল।

তৈমুর হসপিটালে প্রবেশ করতেই রিসেপশনে মিডিয়ার ভিড় দেখতে পায়। মিডিয়ার লোকেরা তৈমুর জাহান কে দেখতে পেয়েই তার দিকে ছুটে আসে। এক একজন এক এক রকম প্রশ্ন ছুড়ে দিতে থাকে তৈমুরের দিকে!!

:-ডঃ জাহান শিকদার হসপিটাল থেকে বাচ্চা চুরির বিষয়ে আপনার কি বক্তব্য?

:- আপনি কি হসপিটাল থেকে বাচ্চা চুরির ঘটনায় কাউকে সন্দেহ করছেন?

:-মিঃ তৈমুর জাহান শিকদার আপনি তো এই লাইফ কেয়ার হসপিটালের একজন স্বনামধন্য কার্ডিয়লজিস্ট। আপনার কি এই বাচ্চা চুরির র্যাকেটের বিষয়ে আগে থেকেই কোন ধারণা ছিলো??

নানা ধরনের প্রশ্ন করতে থাকে মিডিয়ার লোকেরা। হসপিটালের কর্মচারী ওয়ার্ডবয় রা মিডিয়ার লোকেদের তৈমুরের থেকে দূরে সরানোর চেষ্টায়। তৈমুর তাদেরকে থামতে বলে। একজনের থেকে মিনি মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলে,,,

:- দেখুন প্রথম কথা হলো আমি একজন কার্ডিওলজিস্ট। এই হসপিটালের কিডস ওয়ার্ডে আমার কোন ডিউটি থাকে না। তা ছাড়া এই বাচ্চা চুরির ঘটনা এটা দিয়ে তৃতীয় বার। বলতে গেলে আমরা নিজেরাই হয়রান এই ঘটনায়। যে বা যারা এই বাচ্চা চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা খুবই নিখুঁত ভাবে পূর্বপরিকল্পনার মাধ্যমে ঘটনাটা ঘটাচ্ছে বলে আমাদের ধারণা। তারা কোন প্রমাণ রেখে যায়নি‌। এর আগের দুটো কেসেও তদন্ত করে কোন ক্লু পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের ধারণা এই হসপিটালের কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। নয়তো বাইরে থেকে এসে এমন নিখুঁতভাবে কোন ঘটনা ঘটানোর প্রশ্নই আসে না।
দেখুন পুলিশ তদন্ত করছে এবং খুব দ্রুতই আমরা একটা সূরাহা পাবো বলে আশা করছি। আমরা আশা করছি অপরাধীদেরকে অতিসত্বর গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে।
ততদিন প্লিজ আপনারা মন গড়া কাহিনী তৈরি করে পেশেন্টদের বা সাধারণ জনগণকে লাইফ কেয়ারের বিরুদ্ধে প্রচারণা করে বিভ্রান্ত করবেন না।
ধন্যবাদ 🙏
আর কাউকে কোন কিছু না বলতে দিয়েই তো এমন নিজের কেবিনের দিকে পা বাড়ায়। ততক্ষণে কিছু পুলিশ ফোর্স সেখানে উপস্থিত হয়। পিছন থেকে অনেকেই অনেক কিছু প্রশ্ন করতে ছুটে আসতে নিলে হসপিটালের ওয়ার্ড বয় এবং পুলিশ তাদের বাধা দেয়।

নিজের কেবিনে প্রবেশ করে ধপ করে বসে পড়ে তৈমুর জাহান। দুহাতে মাথাটা চেপে ধরে টেবিলের উপর মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণ। মস্তিষ্কে চিন্তার ঝড়। হঠাৎই মনে হয় এই মুহূর্তে ডিন মিঃ আসাদ খানের সাথে কথা বলা উচিত।
হসপিটালে এত কিছু ঘটে যাচ্ছে কিন্তু ডিনের এমন লাপরোয়া ভাব দেখে বেশ অবাকই লাগছে তৈমুরের। হসপিটালে রেপুটেশন নষ্ট হলে সবথেকে বেশি ক্ষতি তো তারই হবে। তবুও তার বিশেষ কোন হেলদোল নেই। কিন্তু কেন? তৈমুরের নিকট এই হসপিটালের সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য সম্মানীয় যদি কেউ থেকে থাকেন তাহলে একমাত্র ডিন মিঃ আসাদ খান।
কথাটা মাথায় আসতে একজন ওয়ার্ড বয় কে ডেকে জিজ্ঞাসা করে,,

:-ডিন স্যার কি হসপিটালে এসেছেন?

ওয়ার্ড বয় মাথা নাড়িয়ে বলে,,,

:-না স্যার। গত তিনদিন তিনি হসপিটালে আসেননি।

:-স্ট্রেইঞ্জ! তৈমুর ফোন বের করে মিঃ আসাদ খানকে কল করে। কয়েকবার কল করার পরেও মিঃ আসাদ খানের নম্বর আউট অফ রিচ আসে।
কপালে চিন্তার ভাঁজ করে তৈমুর জাহানের। পরপর লুবানাকে কল করে। দুবার রিং হওয়ার পর ফোনটা রিসিভ হয়। তৈমুর লুবানা কে ডিন স্যারের কথা জিজ্ঞাসা করলে লুবানার কান্না জড়িত কন্ঠ শুনতে পায়।

:- তৈমুর বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আজ তিনদিন বাবা নিখোঁজ।

লুবানার দেয়া আকস্মিক খবরে হতভম্ব তৈমুর।

:-হুয়াট!! ডিন স্যার তিন দিন ধরে নিখোঁজ আর নিউজটা তুমি আমাকে এখন দিচ্ছো? তাও আমি জিজ্ঞাসা করাতে?
Lubana, what happened to you? Since when did you become so stupid?

লুবানা জবাব দেয় না। ওপাশ থেকে শুধু কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় তৈমুর। ফোনটা কেটে দিয়ে বিড়বিড় করে
:-ডিসগাস্টিং!!

সায়ান কে কল করে। সায়ান জানায় সে ট্রফিকে আটকে কিছুক্ষণই হসপিটালে পৌঁছাবে।
তৈমুর আপাতত সায়ানের অপেক্ষা করে। ডিন স্যারের সাথে নিশ্চয়ই খারাপ কিছু ঘটেছে। তিনি বিপদে আছেন। তৈমুর যদি খুব ভুল না হয়, এই বাচ্চা চুরির সাথে দিন স্যারের নিখোঁজ হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা তৈমুর জাহান শিকদারের। তাদেরকে ডিন স্যার কে খুঁজে বের করতেই হবে। তবেই অপরাধীদের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবে তারা।

চলবে,,,,

#সারা_জাহান
পর্ব,,,৮
মৌমো তিতলী
🫶

সায়ান হসপিটালে পৌঁছাতেই আগে তৈমুরের কেবিনে যায়। তৈমুর সায়ানের অপেক্ষাতেই ছিল। সায়ান কে সবকিছু খুলে বলে তৈমুর। ফের দুজনে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসে। গন্তব্য ডিন আসাদ খানের বাসা।
খান ভিলার চত্ত্বরে পুলিশের ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। লুবানা লিভিং রুমে মাথা নিচু করে বসে আছে। সামনে কয়েকজন মিডিয়ার লোক নানা রকম প্রশ্ন করে চলেছে। খান ভিলায় প্রবেশ করে তৈমুর জাহান শিকদারের গাড়ি। গাড়ি পার্কিং লটে পার্ক করে গাড়ি থেকে নামতেই মিডিয়ার লোকজন ঘিরে ধরে তাদের কে। তৈমুর তাদেরকে কোনরকম জবাব না দিয়েই ভেতরে প্রবেশ করে।
লিভিং রুমে প্রবেশ করতেই লুবানা তৈমুর কে দেখে কেঁদে দেয়। সায়ান গিয়ে বসে লুবানার পাশে। লুবানাকে শান্ত করতে বিভিন্ন কথা বলতে থাকে। তৈমুর পুলিশ অফিসারের সাথে কথা বলে। এ পর্যন্ত পাওয়া সকল খবর নেয় আর নিজের সন্দেহের ওপর কিছু তথ্যও দেয় অফিসার কে। লিভিং রুম শূন্য হতেই তৈমুর লুবানা কে আসাদ খানের নিখোঁজ হওয়ার আগের এক্টিভিটিজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে লুবানা জানায় আসাদ খানের ফোনে কয়েকদিন ধরেই কারা যেন ফোন করছিলো‌। তারপর থেকে কিছুটা ঘাবড়ে থাকতেন আসাদ খান। তৈমুরের ধারনা আরো দৃঢ় হয়। নিশ্চয় ডিন স্যার এমন কিছু জানতো যার ফলে শত্রু পক্ষ তাকে কিডন্যাপ করেছে। কিন্তু তৈমুরের মনে অন্য রকম একটা সন্দেহ উঁকি দেয়। যারাই ডিন স্যারকে অপহরণ করে থাকুক তাদের মোটিভ সম্পর্কে ধারনা করা গেলেও তারা যে টাকার বিনিময়ে ডিন স্যারকে ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছে এমনটা হয়তো নয়‌। নয়তো তিনদিনে বিনিময় দাবি করে একটা ফোন অবশ্যই আসতো। তবে কি তারা ডিন স্যার কে…
ভাবতে পারে না তৈমুর। তার ধারনা অনেক বড় র্যাকেট কাজ করছে এর পেছনে। লুবানাকে সাবধানে থাকতে বলে আরো কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করে সায়ানকে নিয়ে খান ভিলা থেকে বেরিয়ে আসে তৈমুর জাহান।

*****

সাইফ শিকদার ড্রইং রুমে বসে অফিসের কিছু কাগজপত্র চেইক করছিলেন। সারা এসে সাইফ শিকদারের পাশে বসে। তিনি হাতের কাজ করতে করতেই সারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলেন,,

:- কি হয়েছে আমার সারা মায়ের?

:-কিছু হয়নি আঙ্কেল। আমার একটা আবদার ছিলো।

সাইফ শিকদার এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় সারার দিকে। এত বছরে নিজ থেকে সারা কখনো কোন আবদার করেনি। আজ হঠাৎ এমন কি হলো!

:-কি আবদার বলো!

:- আসলে আঙ্কেল, কলেজের ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা এডুকেশনাল ট্রিপে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রিন্সিপাল স্যার বলছিলেন যে সব স্টুডেন্টদের যেতেই হবে। তাই…

সারার কথা মন দিয়ে শুনছিলেন সাঁইফ শিকদার। ট্রিপে যাওয়ার কথা শুনে চিন্তিত হলেন তিনি। জানতে চাইলেন,,

:- কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

:- সুন্দরবন যাবে বলেছে।

সাইফ শিকদার কিছু ভেবে বলেন,,

:- ঠিক আছে। কিন্তু তুমি একা কিভাবে!

:-একা কোথায় আঙ্কেল। ডিপার্টমেন্টের সবাই থাকবে আর সামিরাও তো আমার সাথেই থাকবে‌।

:-সারা মা এ ব্যাপারে একমাত্র ডিসিশন দিতে পারে জাহান। আর তুমি তো জানো তাদের হসপিটালে এখন কেমন সিচুয়েশন চলছে। নিউজে দেখেছো নিশ্চয়ই। তা ছাড়া জাহানের এখন মন মেজাজ ভালো নেই। এই মুহূর্তে তোমার বাইরে যাওয়া সে অ্যালাও করবে কিনা জানিনা। তারপরেও তোমার ট্রিপ যদি বাধ্যতামূলক হয় আর তুমি যদি যেতে চাও তাহলে জাহান কে জিজ্ঞাসা করো। জাহান পারমিশন দিলে যেতে পারো। আমি সময় করে জাহানের সাথে কথা বলবো।

সাইফ শিকদারের কথায় মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যায় সারার। হসপিটালের ঘটনা তারা আজ সকালেই নিউজে দেখেছে। তাদের খারাপও লেগেছে ভীষণ।
সারা ঘাড় উঁচু করে ওপরে বারান্দার দিকে তাকায় সারা। তুলি আর রেশমী দোতলার বারান্দায় পিলারের পাশেই ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
আসলে সারা তুলি আর রেশমীর সাথেও ট্রিপের ব্যাপারে বললে তারাও একই কথা বলেছে সারাকে। সারা পন্ডিতি করে বড় মুখ করে ওদেরকে বলে আঙ্কেল কে বলে রাজি করাতে পারলেই হবে‌। তুলি রেশমী দুজনেই বলে জাহান ভাইয়াকে না জানিয়ে বাবা কিছুতেই রাজি হবে না। আর হলোও তাই!

:-ঠিক আছে আঙ্কেল! বলে মুখটা আমশি করে ওপরে আসে সারা। তুলি, রেশমীর কাছে আসতেই হিহি করে হাসতে থাকে দুজন। সারা ঠোঁট উল্টে নিজের রুমে চলে যায়।

তৈমুর বাসায় আসে রাত ১১ টায়। হসপিটালের সিচুয়েশন এখন উত্তপ্ত। হালাত আরো বিগড়ে যাচ্ছে। মস্তিষ্কে ভারি চিন্তা নিয়ে বাসায় ফেরে তৈমুর। ততক্ষণে শিকদার বাড়ির সকলেই ডিনার সেরে যে যার রুমে চলে গেছে‌। নিত্যদিনের মতো আজও শুধু মাত্র রিনা শিকদার এখনো ড্রইং রুমে ছেলের অপেক্ষায় জেগে বসে আছেন। তৈমুর খাবার টেবিলে বসেই অর্ধ ঘুমে ঢুলছেন। মায়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে তৈমুর। মা কে লাখ মানা করা সত্ত্বেও তিনি এভাবে ছেলের অপেক্ষায় বসে থাকেন। এই জন্যই হয়তো ওপরওয়ালা মা কে দয়া,মায়ার এক জীবন্ত প্রতিমা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মাকে ডেকে তুললো তৈমুর। খাবার রেডি করতে বলে নিজের রুমে আসে।শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে
নিচে আসে‌। মায়ের সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে খাবার শেষ করে। হসপিটালের সিচুয়েশন নিয়েও কথা হয়।

খাওয়া শেষ করে মা কে শুয়ে পড়তে বলে ওপরে আসে তৈমুর। নিজ রুমে প্রবেশ করার আগে সারার রুমের দরজায় এসে দাঁড়ায়‌। দরজায় হালকা হাতে পুশ করতেই খুলে যায়। ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করে জাহান। বিছানায় এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে সারা। সারার পরনে প্লাজুর সাথে ঢিলে লেডিস টিশার্ট। এক পায়ের প্লাজু হাঁটুর ওপরে উঠে গেছে ‌। বালিশ এক দিকে আর মাথা আরেক দিকে ।পায়ের কাছে ভাঁজ করে রাখা চাদরটা পড়ে আছে ফ্লোরে। টিশার্টটাও ঠিকঠাক অবস্থানে নেই। বুকের কাছে উঠে থাকার ফলে ইনারের নিচের অংশ দৃশ্যমান। বউয়ের শোয়ার এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখে হতাশ তৈমুর জাহান। তৈমুর বরাবরই খুব গোছালো। এমন এলোমেলো হয়ে ঘুমানো তার সাথে যায় না কোনকালেই। তারই একমাত্র বউটার কিনা এমন বেহাল দশা ভাবতেই মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে তৈমুরের।
বেডের কাছে গিয়ে সারার ড্রেস ঠিকঠাক করে সোজা করে শুইয়ে দেয়। পায়ের কাছে পড়ে থাকা পাতলা চাদরটা টেনে শরীর ঢেকে দেয়। এসির পাওয়ার কমিয়ে সারার মুখের কাছে ফ্লোরে বসে পড়ে তৈমুর। অপলকে তাকিয়ে থাকে সারার মুখের দিকে। বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে আছে সারা। দেখে মৃদু হাসে তৈমুর জাহান। সারার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কপালে ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে কিছুক্ষণ। ক্ষিণ স্বরে বিড়বিড় করে বলে,,,

:- সেদিন কবে আসবে বলতো,যেদিন তোকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিজের সমস্ত দুশ্চিন্তা, সারাদিনের জমিয়ে রাখা সমস্ত ক্লান্তি দূর করতে পারবো। যেদিন আর এভাবে রোজ রাতে লুকিয়ে তোর কাছে আসতে হবে না। একা একা খুঁজতে হবে না ভালোবাসার নীড়। বড্ড বেশি ভালোবাসি যে‌। যেদিন থেকে মহান আল্লাহর নামে শপথ করে তোকে কবুল করেছিলাম সেই মুহুর্ত থেকে আজ পর্যন্ত তো আমি একাই ভালোবেসে গেলাম‌। একাই এই বক্ষপিঞ্জরে সম্পর্কটাকে ভালোবেসে লালন করে গেলাম। তুই কেনো ভুলে গেলি সারা? পাঁচ বছর বয়সে তো অনেকে অনেক কিছুই মনে রাখতে পারে। তাহলে এতো বড় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুই কি করে ভুলে গেলি বল? তুই তো সেদিন লাল টুকটুকে বউ সেজেছিলি। কাজী সাহেব কবুল বলতে বললে তুই আমার হাতে হাত রেখেই কবুল বলেছিলি। তা তোর মন থেকে কি করে মুছে দিলি? তুই আমাকে বুঝিস না সারা। যখনই বুঝতে পারি তোর দুচোখে আমার জন্য কোন অনুভূতি নেই বিশ্বাস কর আমার বুকের মাঝে আগুন জ্বলে ওঠে। এই তৈমুর জাহান শিকদারের শক্ত ব্যক্তিত্ব নাড়িয়ে দেয় তোর ভালোবাসা হীন এক নজরে। অসহ্য ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে হৃদয়।
হঠাৎ চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে তৈমুরের। রাগে চোখের রগ গুলো রক্তিম হয়। সারার হাতটা নিজ হাতের মুঠো থেকে ছুড়ে ফেলে বলে,,
:-এই সবকিছুর হিসাব তোকে দিতে হবে সারা! তোর ডেস্টিনি, তোর স্বামী কে ভুলে যাওয়ার হিসাব তোকে অবশ্যই দিতে হবে।
ফ্লোর থেকে উঠে দ্রুত পদক্ষেপে বেরিয়ে যায় সারার রুম থেকে। নিজের রুমে এসে ধম করে দরজা লাগিয়ে দেয়। দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। নিজেকে শান্ত করে ধীর পায়ে আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আলমারির ড্রয়ারে স্বযত্নে রাখা একটা ডায়রি সাথে কিছু ছবি বের করে স্ট্যাডি টেবিলে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে। এক এক করে ছবি গুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। ছবিতে গোল্ডেন শেরোয়ানিতে তৈমুর জাহান পাশেই লাল টুকটুকে শাড়ি জড়িয়ে মাথায় জরির পাড়ের ঝলমলে ওড়না মাথায় সারা। ছবিতে তৈমুরের হাত ধরে তার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে সারা। তাও আবার সামনের একটা দাঁত মিসিং । ছবিটার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ওঠে তৈমুর। নিতান্তই বাচ্চা সারা। তবুও ছবিটা ভীষণ প্রিয় তার কাছে। প্রত্যেক রাতেই কত শতবার ছবিগুলো সে দেখে। ডায়রিতে লিখে রাখে সারা কে না বলতে পারা হাজারো হৃদয়ুক্তি। লেখা শেষে আবারও ড্রয়ারে সযতনে তুলে রাখে ডায়েরি আর ছবিগুলো। সবশেষে বিছানায় গিয়ে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে তৈমুর। দুচোখে ঘুমের ছিটেফোঁটা নেই। তবুও চোখ বন্ধ করে পড়ে রয় চুপচাপ। এভাবে থাকতে থাকতেই একসময় গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।

********
সকাল সকাল তোলপাড় গোটা শহর। টেলিভিশনের প্রত্যেকটা নিউজ চ্যানেলের হেডলাইন, “শহর থেকে দূরে জঙ্গল থেকে লাইফ কেয়ার হসপিটালের ডিন আসাদ খানের লাশ উদ্ধার করেছেন স্থানীয় পুলিশ ফোর্স। লাশটা যে আসাদ খানের তা নিশ্চিত করেছে হসপিটালের ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট”
চারদিন ধরে নিখোঁজ আসাদ খানের মৃত দেহ উদ্ধারে এক রহস্যময় আতংক ছড়িয়ে আছে গোটা শহরে।
তৈমুর,সায়ান দুজনেই সকাল থেকেই হসপিটালে উপস্থিত। মিডিয়া আর পুলিশ ফোর্সে গিজগিজ করছে গোটা হসপিটাল। লুবানা ফরেনসিক রিপোর্ট গুলো বুকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। মিডিয়ার লোকজন লুবানাকে প্রশ্ন করতে চাইলে ধমক দেয় তৈমুর। লুবানা আপাতত কথা বলার মানসিকতায় নেই। ছোট বেলায় মা কে হারানো লুবানার পুরো পৃথিবী টায় ছিলো বাবা আসাদ খান। তাকেও হারিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে লুবানা।
সায়ান লুবানাকে একপাশে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিতে থাকে। যদিও তার এই মুহূর্তে কোন শান্তনায় কাজে আসবে না।
আসাদ খানের অপহরণ তারপর হত্যার পর লুবানাক খান ভিলায় একা ছাড়তে ভরসা পাইনা তৈমুর,সায়ান। তৈমুরের প্রতি লুবানার দুর্বলতা আছে তা তৈমুর,সায়ান দুজনেই জানে। লুবানার পাগলামীতে বিরক্ত হলেও বন্ধুত্বের ক্ষাতিরে তাকে একা ছাড়তে রাজি নয় কেউ। লাইফ কেয়ার হসপিটালে জয়েন করার পর থেকে তৈমুর,সায়ান,লুবানা তিনজন ভালো বন্ধু ছিলো। কিন্তু লুবানার তৈমুর কে প্রোপজ করা আর পাগলামীর কারনে সেই বন্ধুত্বে ফাটল ধরেছিলো। তবে এখন সিচুয়েশন আলাদা। এভাবে এই মুহূর্তে লুবানাকে একা ছাড়া যাবে না। সায়ান ব্যাচেলর মানুষ। বাবা মা দুজনেই ফরেনে। নিজ ফ্ল্যাটে একা থাকে সায়ান। সেদিকে থেকে তার সাথে পাঠানো লুবানার জন্য ঠিক হবে না। অনেকে অনেক ধরনের গসিপ করতে পারে।সবদিক বিবেচনা করে তৈমুর আপাতত লুবানাকে শিকদার বাড়িতে রাখতে চায়। তা অবশ্যই বাবা-মা এবং ছোট মায়ের সাথে পরামর্শ করে। রিনা শিকদার তো শুনেই রাজি হয়ে যান। লুবানার এই কঠিন পরিস্থিতিতে মাতৃ হৃদয় ব্যথিত হন রিনা শিকদার এবং সিমা শিকদারের।
আইন এবং হসপিটালের সমস্ত ফর্মালিটিজ শেষে আসাদ খান কে দাফন করার পর লুবানা কে নিয়ে শিকদার বাড়িতে নিয়ে আসে তৈমুর জাহান শিকদার।

ড্রইং রুমে বসে আছে পুরো শিকদার পরিবার। আলিফ শিকদারও আজ বাড়িতে উপস্থিত। রিনা শিকদার এবং সিমা শিকদারের মাঝখানে বসে আছে লুবানা। কয়েকদিনের চিন্তা, কষ্ট,ক্লান্তি তার মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। এই মুহূর্তে তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই কতটা ফ্যাশন সচেতন এই মেয়েটা। কেঁদে কেঁদে চোখ দুটো ফুলে আছে। একপাশে সোফায় বসে আছে সাইফ শিকদার আর আলিফ শিকদার। পাশেই একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে তৈমুর জাহান। তার পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে তুলি, রেশমী আর সারা। সকলের চক্ষু লুবানার দিকেই নিবদ্ধ।
রিনা শিকদার লুবানা কে নানা ভাবে বোঝায়। নিজেকে সামলাতে বলে।
:- দেখো লুবানা ঘটনাটা অত্যন্ত দুঃখজনক কিন্তু জীবন মৃত্যু তো আমাদের কারো হাতে থাকে না। পুলিশ যখন তদন্ত করছেন অপরাধীরা ঠিক ধরা পড়বে। তুমি নিজেকে সামলাও। আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।
রুবানা কিছুটা শান্ত হয়। রিনা শিকদার তুলি কে বলে লুবানা কে তার ঘরে নিয়ে যেতে। আপাতত লুবানা তুলির সাথে তার ঘরেই থাকবে বলে ঠিক করা হয়।
তুলি লুবানা কে নিয়ে ওপরে চলে যায়। এক এক করে সবাই নিজের ঘরে চলে যায়। রিনা শিকদার কিচেনে যান রুমানার জন্য কিছু খাবার নিয়ে যাবেন ওপরে। মেয়েটা নিশ্চয় কয়েকদিন ধরে ঠিকমতো খায়নি। তারওপর আজ তো সারাদিনই না খাওয়া।

তৈমুরও উঠে দাঁড়ায় ওপরে যাওয়ার জন্য। পেছন ঘুরে দাঁড়াতেই দেখতে পায় সারা এখনো সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে। দৃষ্টি তার দিকেই নিবদ্ধ। হঠাৎ তৈমুরের দিকে এমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকে যায় তৈমুরের। তৈমুর কে তাকাতে দেখে থতমত খায় সারা। তৈমুর সুধায়,,

:- কি হয়েছে রুমে না গিয়ে এভাবে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

কিছু না বলে একবার তৈমুরের দিকে তাকিয়ে আরেকবার ওপরে তুলির রুমের দিকে তাকায় সারা। সারার দৃষ্টি অনুসরণ করে তৈমুরও তাকায় সেদিকে। তারপর কিছু না বলে গটগট করে ওপরে চলে যায়। কিছু একটা ভেবে ঠোঁট কিঞ্চিত প্রসারিত হয়ে মুহূর্তে মিলিয়ে যায়। তৈমুর জাহান পা বাড়ায় নিজের রুমের দিকে। পেছনে ঠাই দাঁড়িয়ে রয় সারা।

চলবে,,,,

#সারা_জাহান
পর্ব,,,৯
মৌমো তিতলী
🫶
অ্যালার্ম ঘড়িতে বেলা ৯:১৫ মিনিট। স্নিগ্ধ সকালের মিষ্টি হাওয়ার সাথে জানালার ফিনফিনে সাদা পর্দাটা দুলছে। উঠতি বরুনরশ্বি জানালা ভেদ করে রুমের ভেতরে ফ্লোরে হুটোপুটি খাচ্ছে। রুমের মাঝবরাবর ধুসর রঙের বিছানা জুড়ে শুয়ে আছে সৌষ্ঠব এক সুদর্শন। উন্মুক্ত বক্ষ,পা থেকে কোমর পর্যন্ত পাতলা চাদরে ঢাকা। নিঃশ্বাসের দীর্ঘতায় তার ঘুমের গভীরতা অনুমানীয়। গতরাতে একটু দেরিতেই বিছানায় এসেছিল তৈমুর জাহান। আসাদ খানের মৃত্যুর পর এক সপ্তাহ কেটে গেছে। এই এক সপ্তাহ তৈমুর আর সায়ানের দিন কেটেছে শুধুমাত্র থানা আর হসপিটালের চক্কর কাটতে কাটতে। কয়েকজন কে সন্দেহমূলক ভাবে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মেইন কার্লপিটকে এখনো পাওয়া যায়নি। বর্তমান হসপিটাল কিছুদিন বন্ধ থাকার আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সেগুলো নিয়ে সারাদিনই বেশ ধকল গেছে তৈমুরের। বাসায় ফিরতে রাত একটা বেজে গেছে। তারপর ফ্রেশ হয়ে ডিনার সেরে ঘুমাতে প্রায় আড়ায়টা।

কিচেনে রিনা শিকদার এবং সিমা শিকদার রান্নার কাজে ব্যস্ত। ড্রইং রুমে সাইফ শিকদার বসে আছেন এক হাতে পত্রিকা আরেক হাতে চায়ের কাপ নিয়ে। কিছুক্ষণ পর তুলি, রেশমী,সারা নেমে আসে নিচে। সারা রান্নাঘরে গিয়ে রিনা শিকদারের গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। সারাকে দেখে ওষ্ঠ প্রসারিত হয় রিনা শিকদারের। সারাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলেন,,,

:-গুড মর্নিং আম্মু।

:-গুড মর্নিং খালামণি।

:-কিছু খাবে? চা দেই?

সারা ঠোঁট উল্টে বলে,,

:- তোমাকে চা করতে হবে না খালামণি। আজ আমি চা করবো।

:-আচ্ছা ঠিক আছে করো। তবে আঙ্কেলের জন্য করতে হবে না। তোমার আংকেল চা খেয়েছেন। বলে রিনা শিকদার চায়ের সরঞ্জাম গুলো এগিয়ে দেন সারাকে। সারা সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসে। ততক্ষণে লুবানাও নিচে এসে বসেছে। লুবানা এখন বেশ অনেকটাই সামলে নিয়েছে নিজেকে। এই এক সপ্তাহ সে শিকদার বাড়িতেই আছে। বাড়ির প্রত্যেকে লুবানাকে ভালো রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। লুবানাও এই এক সপ্তাহে সবার সাথে মিলে মিশে গেছে।
সবাই লুবানা কে পছন্দ করলেও সারার কেনো যেনো লুবানা কে ঠিক ভালো লাগে না। কেনো সেটা সারা নিজেই বুঝতে পারেনা। তবে সারা তার ব্যবহারে এই খারাপ লাগা টুকু কখনো প্রকাশ করে না।
সারা সবাইকে চা দেয়। লুবানাকেও দেয়। লুবানা হাসিমুখে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে ওপর দিকে তাকিয়ে বলে,,,

:-তৈমুর এখনো নিচে আসেনি?

লুবানার কথায় তুলি বলে,,

:-তুমি জানো না লুবানা আপু! কাল ভাইয়া অনেক রাত করে বাসায় ফিরেছিলো। তাই হয়তো এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।

:-ওহ আচ্ছা! বলে সৌজন্য মূলক হাসে লুবানা।

কিন্তু তৈমুরের ব্যপারে লুবানার এই আগ্রহী মনোভাবটায় সারার ভালো লাগে না। লুবানার দিকে তাকিয়ে মৌন হয় সারা, আচ্ছা লুবানা আপু কি জাহান ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড!! তাই হবে হয়তো। নয়তো জাহান ভাইয়া তাকে এই বাড়িতেই কেনো আনলো! আর লুবানা আপুও কেমন সবসময় তৈমুর তৈমুর করতে থাকে। নিশ্চয় লুবানা আপু জাহান ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ডই হবে। কথাটা ভাবতেই কেমন বিষন্নতায় ছেয়ে যায় মনটা। চায়ের স্বাদটাও কেমন বিষাদ লাগে সারার। চায়ের কাপটা টেবিলের ওপর রেখে উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকে সারা।

এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে। কলিং বেলের শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে সারার। তড়িৎ গতিতে গিয়ে দরজা খুলতেই সায়ানের হাসিমুখ প্রকট হয়। সারাকে দেখে সে হাসি আরো প্রসারিত হয়। বলে,,,

:- আরে কেমন আছো ছোট ভা… আপু??

সায়ানের কথায় সারা কপাল কুঁচকে বলে,,

:-ভা-আপু আবার কি সায়ান ভাইয়া? আপনি সবসময় আমাকে ভা-আপু বলে ডাকেন কেনো বলুন তো!

সারার কথায় থতমত খায় সায়ান। বোকা বোকা হেসে বলে,,

:-আসলে কি বলোতো ছোট আপু!! আমি তো সবাইকে ছোট ভাই, ছোট ভাই বলে ডাকি তাই তোমাকে ডাকতে গিয়ে স্লিপ অফ টাঙ হয়ে যায়।

:- আজিব লজিক! বাই দা রাস্তা, আপনি ভেতরে আসুন।
সারার কথায় শব্দ করে হাসে সায়ান। ড্রইং রুমে এসে বসে লুবানার পাশে।

:-হাই লাবু ডার্লিং। হাউ আর ইউ?

লুবানা মুখ কুঁচকে তাকায় সায়ানের দিকে। বলে,,

:-খুবই বাজে ফ্লার্ট ছিলো!

সায়ান দাঁত বের করে হেসে ফিসফিস করে বলে,,,

:-তা কেমন লাগছে লাবু ডার্লিংয়ের শশুর বাড়ি? পছন্দ হয়েছে তো?

এবার সায়ানের কথায় ব্লাশ করে লুবানা। তা দেখে আরো বেশি করে লুবানার পেছনে লাগে সায়ান।

:-আয় হায় লাবু ডার্লিং ব্লাশ করছে!! আহা কি সুন্দর লাগছে তোমাকে ডার্লিং!!

লুবানা নিচ থেকে সায়ানের পায়ে পাড়া দেয়। ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে সায়ান।

তুলি আর রেশমী সায়ান আর লুবানার খুনসুটি দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সারা বোঝার চেষ্টা করছে সায়ান কি বললো লুবানা কে যার জন্য লুবানা এভাবে ব্লাশ করছিলো।

:কি করছিস তোরা?
হঠাৎ গম্ভীর কণ্ঠে সিঁড়ির দিকে তাকায় সবাই। হুট করে সারার হার্টবিট বেড়ে যায়। অপলক তাকিয়ে থাকে সিঁড়ির অভিমুখে দাঁড়িয়ে থাকা তৈমুর জাহানের দিকে। সদ্য গোসল সেরে এসেছে তৈমুর। ব্ল্যাক থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট সাথে সি-গ্রীন কালারের হাফস্লিভ টিশার্ট। চুল এখনো ভেজা থাকায় কিছু চুল কপালে লেপ্টে আছে। জীম করা নিটুট শরির কাপড়ের উপর দিয়ে ফুলে উঠে নিজেদের ফিটনেসের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।

ঠিক একই ভাবে তৈমুরের দিকে তাকিয়ে আছে লুবানাও। সায়ান তা খেয়াল করে মুচকি হাসে।
তৈমুর ধীর পায়ে নিচে এসে সারার পাশে বসে। তৈমুর পাশে বসতেই পারফিউম, শ্যাম্পু আর তৈমুরের নিজেস্ব একটা পুরুষালী স্মেল মিলেমিশে মোহনীয় গন্ধ সারার নাকে গিয়ে ধাক্কা খায়। গলা শুকিয়ে আসে সারার। আবারো আড়চোখে তাকায় তৈমুরের দিকে।
সারাকে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে তৈমুর ভারি স্বরে বলে,,

:-এক কাপ কফি করে নিয়ে আয় তো!!

সারা তৈমুরের আদেশ মত উঠতে নিতেই লুবানা বলে,,

:-সারা তুমি বসো। আমি তৈমুরের জন্য কফি করে আনছি। বলেই লুবানা উঠে দাঁড়ালো,,

:-মিস লুবানা। তুমি এখন আমাদের বাড়ির মেহমান। তোমাকে আমার জন্য কফি করার জন্য এখানে আনা হয়নি। পরপর সারার দিকে তাকিয়ে ধমকের ওঠে তৈমুর,,,,

:-তুই এখনো বসে আছিস কেন? বললাম না কফি নিয়ে আয়। যা!!

তৈমুরের ধমকের তড়িঘড়ি উঠে কিচেনে দৌড় দেয় সারা।

লুবানা তৈমুরের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়। কিন্তু মুখে হাসি রেখে বলে,,

:-আসলে তৈমুর আমি জানি তোমরা আমাকে একা ছাড়তে চাওনি তাই এখানে আমাকে নিয়ে এসেছো‌ কিন্তু তুমি তো আমার বন্ধু। তোমার জন্য কি আমি কফি করতে পারি না??

:-আচ্ছা!! তাহলে তুমি এক কাজ করো লুবানা। তুমি বরং সায়ানের জন্য কফি করে নিয়ে এসো।

তৈমুরের কথায় একরকম লাফিয়ে উঠে দশ হাত দুরে গিয়ে দাঁড়ায় সায়ান। আর্তনাদ করে বলে,,,

:-একদম না!! আজ থেকে আমি কফি খায় না। লুবানার আমার জন্য কফি করার কোন দরকার নেই। মনে মনে ফ্ল্যাশ ব্যাকে যায় সায়ান,,, হসপিটালে একবার তৈমুরের জন্য কফি করে নিয়ে এসেছিলো লুবানা,, সায়ান তাতে খিল্লি উড়িয়ে হেসেছিলো বলে,তৈমুর পানিশমেন্ট স্বরুপ সেই কফি সায়ানকে দিয়ে গিলিয়েছিলো। কি জঘন্য তেতো ছিলো সেই কফিটা। সায়ানের মনে হয়েছিলো গলা থেকে পেটের ভেতর হার্টা,কিডনি লিভার পর্যন্ত তেতো হয়ে গেছে। আবারো সেই লুবানাকে কফি করে আনতে বলছে শুনেই আঁতকে উঠেছে সায়ান।
সায়ানের রিয়্যাকশন দেখে বাঁকা হাসে তৈমুর।

সারা কফি নিয়ে এসে তৈমুরের দিকে এগিয়ে দেয়। তৈমুর কফিটা শেষ করে উঠতে নিলে সেখানে উপস্থিত হন সাইফ শিকদার। ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন,,

:-তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো জাহান।

তৈমুর একবার সকলের দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বলে,,

:-এখানে বলবে নাকি কনফিডেন্সিয়াল?

:-না না এখানেই বলা যায় সমস্যা নেই। আসলে সারা মা বলছিলো ওর কলেজ থেকে একটা এডুকেশনাল ট্যুরের আয়োজন করা হয়েছে। সবাই সেখানে যাবে। সারাও যেতে চায়ছে!!

তৈমুর শোনে সবটা। সারার দিকে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,,

:-বাহ!! আজকাল বাড়িতে দেখছি আমাকে টপকে সুপারিশ নেয়া হচ্ছে।

ছেলের কথায় হাসেন সাইফ শিকদার। সারা হঠাৎ সকলের সামনে এভাবে বলায় আমতা আমতা করতে থাকে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে সারা। তুলি,রেশমী আগ্রহী হয়ে তাকিয়ে আছে তৈমুরের দিকে। এদিকে সারার ট্যুরে যাওয়ার সাথে তৈমুরের অনুমতির কি সম্পর্ক বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে লুবানা।
সাইফ শিকদার ছেলেকে বলেন,,

:-ব্যপারটা সেরকম কিছু নয় জাহান। সারা আমাকে ট্যুরের বিষয়টা জানিয়েছিলো আরোও এক সপ্তাহ আগে। এই কয়েকদিনে তুমি অনেক ব্যস্ত ছিলে তাই কথাটা জানানোর সুযোগ হয়নি। তুমি অনুমতি দিলে আমি নিজে গিয়ে প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলবো।

তৈমুর সারার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

:-যাওয়াটা কি বাধ্যতামূলক?

:-সারা একবার তৈমুরের দিকে তাকিয়ে মাথা ওপর-নিচু করে!

তৈমুর তপ্ত শ্বাস ফেলে বাবাকে বলে,,

:-তোমাকে কিছু বলতে হবে না। প্রিন্সিপালের সাথে আমি কথা বলে নেবো। বলেই গটগট করে ওপরে চলে যায়।
সায়ানও তৈমুরের পিছু পিছু ছোটে।

তুলি রেশমী সারাকে দুদিক থেকে ধরে হাসতে হাসতে বলে,,,

:-যাক অনুমতি পেয়ে গেলি তাহলে। সারাও মুচকি হাসে।

লুবানার কাছে বিষয়টা কেমন যেন লাগে। এতদিনে সে জেনেছে সারা রিনা আন্টির বোনের মেয়ে। বাবা মায়ের মৃত্যুর পর সারা তার খালামনির কাছে এই বাড়িতে থেকে বড় হয়েছে। সেদিক থেকে তো রিনা আন্টি আর সাইফ আঙ্কেল সারার অভিভাবক হয়‌। এখানে সবাই তৈমুরের অনুমতি নিলো কেনো!!

তৈমুরের রুমে গিয়ে চেয়ার টেনে বসতে বসতে সায়ান বলে,,,

:-একটা কথা বলি দোস্ত!!

তৈমুর বিছানায় বসে ল্যাপটপ খুলতে খুলতে জবাব দেয়,,

:-হুম

সায়ান উৎফুল্ল হয়ে বলে,,

:-আমার মনে হয় ছোট ভাবি তোকে নিয়ে কিছু ভাবছে! লাইক সামথিং পজেসিভনেস ফর ইউ!!

:-আর এরকমটা তোর কেনো মনে হচ্ছে?

:-আই ডোন্ট নো! বাট আমার মনে হয়েছে তোর প্রতি লাবু ডার্লিংয়ের কারসার্ন হওয়াটা ছোট ভাবি পছন্দ করছে না।

সায়ানের কথায় ঠোঁট কামড়ে হাসে তৈমুর। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,,

:-আই নো দ্যাট! এটা আমি খেয়াল করেছি যেদিন লুবানা কে আমি এই বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। সেদিনই ওর হাবভাব দেখে বুঝতে পারছিলাম আমার সাথে কোন মেয়েকে দেখে সারার মোটেও ভালো লাগেনি।

:-আরে বাহ!! এটা তো দারুন ব্যাপার। যাক লাবু ডার্লিং তাহলে কিছু কাজে তো এলো।

সায়ানের কথায় তৈমুরের হাসি গাঢ় হয়!!

বিছানায় পড়ে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে কল করে সারার কলেজের প্রিন্সিপাল কে। কথা বলে সবকিছু জেনে নেয়। আরো কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করে ফোন রাখে।

এই সময় লুবানা আসে তৈমুরের রুমে। এসেই তৈমুরের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে,,,

:-সারার ট্যুরে যাওয়া নিয়ে আঙ্কেল আন্টি অনুমতি না দিয়ে তোমার অনুমতি কেনো নিলো? কই এই কয়দিনে তুলি বা রেশমীর কোন ব্যাপারে তো এমনটা করতে দেখিনি। তাহলে সারার ব্যপারটা কেনো আলাদা? ও তো তোমার খালাতো বোন হয় তাইনা?

লুবানার কথায় নড়েচড়ে বসেছে সায়ান। তৈমুরের মুখ দেখেয় বুঝতে পারে রেগে গেছে।

তৈমুর লুবানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

:-Are you asking me for an apology? Will this Taimur Jahan Sikder explain to you what is happening in the Sikder house now and why it is happening?

তৈমুরের কথায় ভড়কে যায় লুবানা। আমতা আমতা করে বলে,,

:-না না!! আমি আসলে সেরকম কিছু বলতে চায়নি। তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। আমি তো….

:-Just shirt up!! ভুলে যেওনা তুমি এবাড়িতে মেহমান। শিকদার বাড়ির সদস্যদের নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।

তৈমুরের কথায় মনে মনে আরো আক্রোশে ফুঁসে ওঠে লুবানা। সামান্য আশ্রিতা মেয়েটার জন্য তৈমুর তাকে ইনসাল্ট করলো!! কে হয় মেয়েটা তৈমুরের! খালাতো বোনই তো নাকি অন্য কিছু!

চলবে,,,

#সারা_জাহান
পর্ব,,,১০
মৌমো তিতলী
🫶
অম্বরে অগ্নিসম সূর্য মাথার উপরে বিরাজমান। তপ্ত দুপুরের ঝাঁঝালো রোদ্দুরে গরমে ঘেমে নেয়ে মানুষের অবস্থা কাহিল। সারা মাত্রই ম্যাথ ক্লাস থেকে বেরিয়ে করিডরে পা রাখলো। গরমের তাপদাহে নাজেহাল অবস্থা সারার। নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে রোদের সোনালী আভায় তা হিরকখন্ডের মতো চকচক করছে। সারা ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে তা নাকে চেপে ধরে তা। পাশাপাশি হাঁটছে সামিরা। হাতে পাতলা নোট চেপে একটু বাতাস পাওয়ার প্রয়াসে ঘনঘন নাড়ছে। তবুও গরমের সাথে পেরে উঠছে না তার কাগজের নোটের পাখা। বিরক্ত হয়ে সারাকে বলে,,

:- সারা পরের পিরিয়ডটা তো খালি। ক্লাস নেই এখন। চল একটু লাইব্রেরী যে গিয়ে বসি। কোলাহল মুক্ত আর একটু এসির বাতাস খেয়ে আসি। গরম আর সহ্য হচ্ছে না।

:- ঠিকই বলেছিস। আজকে যেন একটু বেশিই গরম। তবে যাওয়ার আগে ক্যান্টিনে চল। একটা ঠান্ডা কিছু নিয়ে যায়।

দুজনে কলেজ ক্যান্টিন থেকে দুটো কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে লাইব্রেরীতে গিয়ে এক কোনায় চেয়ার টেনে বসে। হাফ ছাড়ে দুজন। এই সময়ে লাইব্রেরীতে তেমন কোন স্টুডেন্ট থাকে না। সবারই প্রায় ক্লাস থাকে। সিনিয়র কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে বইয়ের পাতায় মুখ ডুবিয়ে বসে থাকতে।

সারার হাতের কোল্ডড্রিংকস শেষ হওয়ার আগেই পাশে কাউকে ধপ করে বসতে দেখে চমকে ওঠে সারা। ঘাড় ঘুরিয়ে পরিচিত অথচ অনাকাঙ্খিত একটা মুখ দেখে অবাক হয়। সিনিয়র আব্র ভাই। সারার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি টেনে বললো,,

:-হোয়াট হ্যাপেন গাইস!! প্রাইভেসি নষ্ট করলাম নাকি??

সারা কিছু বলবে তার আগেই সামিরা হেসে বলে,,,

:- না না ভাইয়া তেমন কোন ব্যাপার নয়। আমরা তো জাস্ট বসে ছিলাম।

:- ওহ আচ্ছা। আমি ভাবলাম ভুল সময়ে এসে পড়লাম কিনা! সারার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

:-তা কেমন আছো তোমরা?

:-সারাও সৌজন্য হেসে জবাব দেয়,,,

:- জ্বী ভাইয়া ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?

আব্রর হাসি চওড়া হয়। মাথা দুলিয়ে বলে,,

:-আমি তো অলওয়েজ ভালো থাকি! তা তোমারা কলেজের ট্যুরে যাচ্ছো তো?

:- জ্বী! হয়তো।

:- আরে এখনো হয়তো কেন? এটা তো Mandatory. তোমাদের Department সবাইকেই যেতে হবে। আমারও সেইম ডিপার্টমেন্ট তাই সিনিয়রদের মধ্যে আমাদের কয়েকজন কে তোমাদের গাইড করার জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে। অর্থাৎ আমিও আছি তোমাদের সাথে।

সামিরা ভীষণ এক্সাইটেড হয়ে বলে,,,

:- ওয়াও সিরিয়াসলি ভাইয়া? আপনি যাচ্ছেন আমাদের সাথে ট্যুরে?

আব্র কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে,,

:-Yeah, you know we’re experienced…..

সামিরা হাসিমুখে বলে হ্যাঁ তা তো অবশ্যই। আমি তো ভিষণ খুশি।

আব্রর নজর সারার দিকে। সারা চুপচাপ বসে সামিরার হ্যাংলামো দেখছে‌। মানছে সামিরার ক্রাশ আছে আব্রর প্রতি। তাই বলে এভাবে,,,,, এই মেয়েটা আর ভালো হলো না।

:-আআমম তুমি কিছু বলছো না যে! ট্যুরের জন্য এক্সাইটেড নও নাকি?

আব্রর প্রশ্নে ধ্যান ভাঙ্গে সারার। অপ্রস্তুত হেসে বলে,,

:- আসলে তেমন কিছু না। লাইফে এটাই আমার প্রথম ফ্যামিলি ছেড়ে একা কোথাও বেরোনো। তো এক্সাইটিং এর থেকে নার্ভাসনেস বেশি কাজ করছে।

সারার কথায় শব্দ করে হাসে আব্র।

:-হোয়াট নার্ভাসনেস! কি বলছো তুমি! আর একা কোথায়? তোমার পুরো ডিপার্টমেন্ট,অল টিচার্স এমনকি আমরা সিনিয়ররাও তোমাদের গাইডের জন্য থাকছি‌। এখানে তো তোমাদের একা হওয়ার কোন চান্সই নেই!

:-হ্যাঁ এটা আপনি ঠিকই বলেছেন। আমিই হয়তো একটু বেশি ভাবছি।

:-ইটস ওকে। এসব নার্ভাসনেস কাটিয়ে দারুন এক Adventure এর জন্য নিজেকে Prepared করো।

সারা সামিরা দুজনই সহমত জানাই। সারা হাতে বিদ্যামান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়ায়।

:-সরি ভাইয়া এখন আমাদের উঠতে হবে। পরবর্তী ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। সো!

:-না না ইটস ওকে। You can go now…!! ভালো লাগলো তোমাদের সাথে কথা বলে।

সারা সামিরা ব্যাগ নিয়ে উঠে যায়। বেরিয়ে আসে লাইব্রেরী থেকে। পেছনে ফেলে যায় মুগ্ধতায় ঘেরা দুটো চোখ। যা এখনও লাইব্রেরীর এক্সিট ডোরের দিকে বিদ্যামান।

*****

সারা কিছুক্ষণ আগেই কলেজ থেকে ফিরেছে। মাত্রই গোসল করে বেরিয়েছে। মাথার চুল গুলো হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আঁচড়ে নেয়। গলার ওড়নাটা টেনে রাখে বিছানায়। হাতের তালুতে কিছুটা সানস্ক্রিম নিয়ে চোখ বন্ধ করে মুখে ভালো করে লাগাতে থাকে। এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজ পায়।এমন সময় তুলি বা রেশমী ছাড়া সারার রুমে কারো আসার প্রশ্নই আসে না। তাই খুব একটা গুরুত্ব দেয়না সারা।

এদিকে তৈমুর হাতে একটা কাগজ নিয়ে সারার রুমে এসেই সারাকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে ক্রিম লাগাতে দেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।চোখে তার দারুন নেশা অথচ তার মুখভঙ্গি স্বাভাবিক। যেন সারাকে এমন অবস্থায় দেখে সে অভ্যস্ত। তবে তার ঘোর লাগা দুই চোখে এক সমুদ্র পরিমান মুগ্ধতা।
সারা মুখে ক্রিম লাগানো শেষ করে। তৈমুর জানে এরপর কি হতে চলেছে!! আগেই কানে হাত চেপে রেখে। সারা চোখ খুলে ঘুরে দাড়াতেই তৈমুর কে দেখেই চিৎকার করে ওঠে। তাড়াহুড়ো করে বিছানায় রাখা ওড়না টেনে গায়ে জড়ায়। তৈমুর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
সারা তৈমুরের দিকে তেড়ে গিয়ে বলে,,,

:-জাহান ভাইয়া আপনাকে বলেছি না রুমে আসার আগে নক করতে!! আপনি সবসময় এমন করেন!

তৈমুর ঠোঁট উল্টে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,,

:-আগেই বলেছি তোর মতো….

:- I know! I know! আপনি কি বলবেন! But kind for information আমি মোটেও গেন্দা বাচ্চা নই। আমি এখন বড় হয়েছি!

:-আচ্ছা বড় হয়েছিস বলছিস? কোথায় দেখি!! তৈমুর এগিয়ে যায় সারার দিকে।

এদিকে তৈমুর কে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে খুক খুক করে কেশে ওঠে সারা।

:-এটা কি!! বড় হয়েছি দুর থেকে দেখেই তো বোঝা যায়। কাছে এসে দেখার কি আছে!! অন্ধ নাকি আপনি?

:- বাহ রে!! আমি তো দুর থেকে দেখেই ভেবেছিলাম তুই এখনো বাচ্চা। কিন্তু তুই যখন বলছিস তুই বড় তখন হাতে ধরে চেইক করবো না?

তৈমুরের কথায় চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায় সারার। কান লাল হয়ে ওঠে। আমতা আমতা করে বলে,,

:- এটা আবার কেমন কথা! অশ্লীল! বড় হওয়া কি জামা কাপড়! যে হাতে ধরে গায়ে পরে চেইক করতে হবে!!

:- হবে! কত বড় হয়েছিস তার প্রমাণ না পেলে পরবর্তীতে আবার নক না করেই তোর রুমে ঢুকে পড়বো তখন আবার আমাকে কথা শোনাবি।
তৈমুর সারার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। সারাও তৈমুর কে এগিয়ে আসতে দেখে এক পা এক পা করে পেছাতে থাকে।
এক সময় দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে যায়। সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে সারা‌। তৈমুরও যেন কোন অদৃশ্য মন্ত্রবলে এগিয়ে যেতে থাকে। সারার কাছে এসে দেয়ালের দুপাশে হাত রেখে সারাকে আবদ্ধ করে দাঁড়ায়। তৈমুর কে এতোটা কাছে আসতে দেখে বুকটা ধুকপুক করে সারার। অন্যরকম অনুভূতিতে ছেয়ে যায় হৃদয়। লতানো তনু তিরতির করে কাঁপতে থাকে। তৈমুরের ঘোর লাগানো চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না সারা। মুখ নামিয়ে নেয়।

সারাকে মুখ লুকাতে দেখে বাঁকা হাসে তৈমুর। হাস্কি স্বরে বলে,,

:-লুক অ্যাট মি সারা!!

তৈমুরের হৃদয় কাঁপানো হাস্কি স্বরে সারার শরীরে এক অজানা শিহরণ খেলে যায়।
তৈমুর এক হাতে সারার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় সারা কে। তৈমুরের অপ্রত্যাশিত ছোঁয়ায় কেঁপে ওঠে সারা। চোখ দুটো বড় বড় করে তাকায় তৈমুরের দিকে।
তৈমুর ডুবে গেছে সারাতে। নিজেকে কোন রুপ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাও করছে না তৈমুর জাহান শিকদার। এক হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে সারার থুতমি চেপে ধরে আরো ঝুঁকে দাঁড়ায় তৈমুর। সারার কম্পিত ঠোঁট দুটো দেখে গলা শুকিয়ে আসে তৈমুরের আস্তে আস্তে মুখ এগিয়ে নিতে থাকে সারার দিকে। এদিকে তৈমুরের এই অবিশ্বাস্য অভাবনীয় কাজে খেই হারিয়ে বসে আছে সারা হৃদস্পন্দনের গতি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায় তার। যেন হৃদপিন্ড বক্ষ ভেদ করে বেরিয়ে আসবে এক্ষুনি। তৈমুর কে ঝুঁকতে দেখে চোখ নিচে বন্ধ করে নেয় সারা।
তৈমুর মুখ নামিয়ে আনলো সারার কানের কাছে। গলার স্বর অত্যাধিক খাদে নামিয়ে ফিসফিস করে বলে,,,

:-আপনি তো শুধু বড়ই হননি। আপ বহুত আগে নিকাল গেয়ি ম্যাডাম সারা জাহান!!

সারা ফট করে চোখ খুলতেই দেখে তৈমুর ওর চোখের সামনে একটা কাগজ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

সারা বিচলিত হয়ে বলে,,

:-আপনি আমাকে কি….

আরো কিছু বলতে নিতেই থামিয়ে দেয় তৈমুর। সারার হাত টেনে নিয়ে কাগজটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,,

:-তোর কলেজ ট্যুরের টিকেট। এটা দেখিয়েই বাসে ওঠাবে সবার। আমি প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে নিয়েছি‌। প্রথমবারের মতো তোকে একা ছাড়ছি‌। খেয়াল রাখবি নিজের। সবসময় টিমের সঙ্গে থাকবি। ক্লিয়ার??

টিকেট টা একনজর দেখেই আবার কিছু বলার চেষ্টা করতেই আবারও থামিয়ে দেয় তৈমুর।

:-চুপ একটাও কথা নয়, তোর ছোট মাথায় অত চাপ দিতে হবে না। বলেই সারার মাথায় ঠোকা মেরে বলে ডাম্পো একটা!! বলেই হনহন করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। বাইরে গিয়ে হাফ ছাড়ে তৈমুর। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বলে, উফফফ সি’জ ডেঞ্জারাস!!

এদিকে তৈমুরের পেঁচানো কথায় খেই হারিয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে সারা। এক ভ্রু উঁচু করে হা করে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে।

:-What did he say to me? সারা জাহান! কিন্তু আমি তো সারা চৌধুরী। পরপর মাথায় চাপ্পড় মেরে বিড়বিড় করে,,,

:-আমিও না!! কি সব ভাবছিলাম তখন! চোখের সামনে ভেসে ওঠে তৈমুরের কাছাকাছি আসার মুহূর্ত!! গাল লাল হয় সারার।

*********

কলেজের সব স্টুডেন্ট রা ট্যুরের জন্য রেডি হয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়েছে। বড় বড় দুটো বাস এসে দাঁড়িয়েছে কলেজ ফিল্ডে। স্যারেরা এক এক করে টিকেট দেখে সিট অনুযায়ী বসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।
আব্র অনেক্ষণ ধরে বার বার কলেজ গেটের দিকে তাকালো। কাঙ্খিত মানুষটাকে এখনো দেখতে পায়নি। ব্যস্ত ভঙ্গিতে ঘড়ি দেখলো কয়েকবার। নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে চললো সারা কেন এখনো ক্যাম্পাসে পৌঁছায়নি তা ভেবে উদ্বিগ্ন হয় আব্র। “সারা কি যাচ্ছে না ট্যুরে” এমন একটা ভাবনা মনকে অশান্ত করে তুলেছে আব্রর।

মিনিট খানেক পরই কলেজের গেট দিয়ে একটা ব্ল্যাক মার্সিডিজ প্রবেশ করে।কলেজে সাধারণত এরকম দামি গাড়িতে কেউ আসে না। কোন অনুষ্ঠানে ভিওআইপি গেস্ট ছাড়া। তাই মার্সিডিজটা কলেজ ফিল্ডে ঢুকতেই অল কলেজের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিতে সময় লাগে না। একরকম কৌতুহল নিয়েই সবাই গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। গাড়ির ডোর খুলে বেরিয়ে আসে তৈমুর। গাড়ি থেকে নেমে ওপাশে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই বেরিয়ে আসে সারা। সকলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। শহরের পপুলার হ্যান্ডসাম ব্যাচেলর কার্ডিওলজিস্ট তৈমুর জাহান শিকদারকে কে না চেনে!! তার সাথে সারাকে দেখে অনেকে অবাকের চুড়ান্তে পৌঁছে গেছে, তো অনেক মেয়েরা ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকিয়ে আছে। আব্র সারাকে দেখে যতটা খুশি হয়েছে ততটাই অবাক হয়েছে ডেইলি ম্যাগাজিন স্টার শত শত মেয়েদের হার্টথ্রব কার্ডিওলজিস্ট তৈমুর জাহানকে দেখে।
সারার সাথে তৈমুর জাহান শিকদারের কি সম্পর্ক বুঝতে পারলো না আব্র। আর সারায় বা ওনার সাথে কেনো এসেছে,সারা ওনার কে হয় যার জন্য তাকে গাড়ির ডোর খুলে দেয় স্বয়ং তৈমুর জাহান শিকদার।

এতো দিনে বাড়ির সাধারণ বিএমডব্লিউ গাড়িতেই সারা,তুলি,রেশমীদের কলেজের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে হসপিটালে যেত তৈমুর। মার্সিডিজ টা সে কিছুদিন আগেই নিয়েছে পার্সোনাল হিসেবে। তাতে আজকে প্রথম সারাকে নিয়ে এসেছে তৈমুর। সারা গাড়ি থেকে নামতেই আশেপাশের সকলের দৃষ্টি তাদের দিকে বুঝতে পেরে অস্বস্তি বোধ করে। তৈমুর অবশ্য এসব চারদিকের গুঞ্জনের ধার ধারে না। সারার হাতটা আলতো করে ধরে টিচার্সদের দিকে এগিয়ে যায়।
প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে বিশেষ করে সারার দিকে খেয়াল রাখতে অনুরোধ করে। প্রিন্সিপাল স্যার সহ কলেজের সকল স্যারেরা তৈমুর জাহান শিকদার কে সম্মান সমাদর করে আশ্বাস দেয় তারা খেয়াল রাখবে। তৈমুর সারাকে বাসে তার নির্দিষ্ট সিটে বসিয়ে দেয়। সামিরা কে সারার পাশের সিটে বসার ব্যবস্থা করে। প্রয়োজনীয় আদেশ উপদেশ দিয়ে নেমে আসে বাস থেকে।
সকল স্টুডেন্টদের বাসে উঠার পর যথা সময়ে কলেজ চত্বর ছাড়ে ট্যুর বাস দুটো। সারাদের বাসটা ছুটে যায় হাইওয়ের ওপর দিয়ে। তৈমুরের হৃদয়ে যেন টান পড়ে। কেন যেন সারাকে একা ছেড়ে মুহুর্তেই মনটা বিষাদে ভরে ওঠে। শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকে রাস্তার দিকে। বাসটা যত দুরে চলে যাচ্ছে তৈমুরের মনে হচ্ছে সারা ততই ওর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত একটা দোলাচলে হৃদয়টা ব্যাথিত হয়ে ওঠে।

প্লিজ সাবধানে থাকিস জান। তোকে যে একা ছাড়তে একদমই ইচ্ছে করছে না। তুই তো জানিস না তুই এই তৈমুর শিকদারের সারা জাহান। কোন ভুল করলাম না তো তোকে একা ছেড়ে। প্লিজ নিজের খেয়াল রাখিস হার্টবিট। আর সুস্থ ভাবে ফিরে আয় জান। অস্থির হয়ে বিড়বিড় করে তৈমুর।

চলবে,,,,,