সাহেবা পর্ব-২২

0
231

#সাহেবা
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
____

২২.(প্রথম অংশ)
বেলী তামজীদের থেকে দুরে দুরে থাকছে। তার মনে হচ্ছে তামজীদকে নিশ্চিত কোনো ভুত টুত ভর করেছে। দেখা হলেই যেভাবে ‘বিয়ে করবে’ বলে তাতে বেলীর মাথা ঘুরিয়ে ওঠে। বেলী ছন্দের পেছনে লুকিয়ে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। কোথায় তামজীদ? তার খোঁজার মাঝেই পেছন থেকে কেউ কাঁধে চাপড়ায়। বেলী পিছে না তাকিয়েই বলে,

‘এ্যা কে রে? বিরক্ত করিস না। যা।’

কাঁধে আবারও টোকা পড়লে বিরক্ত হয়ে হাত সরিয়ে দেয় বেলী। কিন্তু তৃতীয়বারের বেলা হাত পড়লে বিরক্তি নিয়ে কিছু বলতে গিয়ে পিছে তাকিয়ে দেখে তামজীদ। চমকে গিয়ে পড়ে যেতে নিলে ছন্দকে আঁকড়ে ধরে। তামজীদ ভ্রু নাচিয়ে শুধায়,

‘কী? ওদিকে কাকে খোঁজো?’

ছন্দ ফিরে তাকায়। তামজীদকে দেখে শব্দ করে হেঁসে ফেলে। তামজীদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। বেলী চোখ গরম করে কিন্তু ছন্দ হাসি না থামিয়েই বলে, ‘সে কী রে, বেলী! যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়!’

বলেই হাসতে থাকে। তামজীদ নিজের দিকে আঙুল দিয়ে ঈশারা করে বলে, ‘আমাকে খুঁজছিলে?”

বেলী চট করে দুদিকে মাথা নাড়ায়। ছন্দ ফাক বুঝে শো করে ছুটে চলে যায়। বেলী সেদিকে তাকিয়ে দু বার ডেকে কটমট করতে থাকে। মেয়েটা এতো স্বার্থপর! তাকে বিপদের মুখে ফেলে চলে গেলো! অ’সভ্য, বে’য়াদব মেয়ে। মনে মনে ছন্দের পুরো গোষ্ঠীকে সে ধুয়ে দিতে ভোলেনি শুধু ভুলে গেছে যে ছন্দ এবং সে একই বংশের৷ তামজীদ বেলীর হাবভাব দেখে প্রশ্ন করে,

‘কী? ছন্দকে বকছো?’

বেলী আগের ন্যায় দুদিকে মাথা নাড়ায়। তামজীদ ফের বলে, ‘মুখে কী হইছে তোমার?’

‘কই? কিছু হয় নাই তো।’

‘তাহলে এতক্ষণ শুধু মাথা নাড়ছিলে কেনো?’

বেলী হাতের তালুতে হাত ঘষতে থাকে। মাথা নত। তামজীদ তা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে৷ নিজের হাসি দমিয়ে গম্ভীর গলায় বলে, ‘তুমি আমাকে খুঁজছিলে কেনো?’

বেলী আমতা আমতা করে জবাব দেয়, ‘কই? আমি তো আপনাকে খুজিনি। আমি তো..সাজানো দেখছিলাম।’

তামজীদ এক কদম এগিয়ে শুধায়, ‘তাই?’

বেলী পিছিয়ে যায়৷ মাথা উপর-নীচ নাড়িয়ে আশে পাশে তাকায়। তামজীদ বরাবরের মতো আজও পকেট থেকে ফুল বের করে বেলীর কানের পৃষ্ঠে গুঁজে দেয়। বেলী কাঠ হয়ে দাড়িয়ে থাকে৷ তামজীদ মুখ এগিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

‘আমার হৃদয়হরণ করে তুমি পালাতে চাও দুরে! আমি তোমাতে বন্দী হয়েছি তবে ছেড়ে দেই কেমন করে?’

বেলী থমকায়৷ চোখ বন্ধ করে অনুভব করে৷ তার বুকের বা’পাশে বোধহয় যুদ্ধ শুরু হয়েছে৷ এতো দ্রুত ছুটছে যে তার মনে হয় যখন তখন বেড়িয়েও আসতে পারে৷ তামজীদ বেলীর মুখে ফু দিয়ে চলে যায়। বেলী ওভাবেই সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে৷ তার মনেও যে অনুভূতির আন্দোলন চলছে তা কী সে টের পেয়েছে?


বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে সাইরাহ্ আর সাহিত্যকে নিয়ে যাওয়া হবে সাইরাহ্-দের বাড়িতে৷ এতে সুফিয়ার বেশ আপত্তি থাকলেও স্বামীর কথার উপরে সে যেতে পারবে না। তাই যায়-ও না। চুপচাপ নিজের ঘরের দরজা আটকে বসে থাকে৷ সাহিত্যও চুপচাপ চলে যায় না। মায়ের ঘরের বন্ধ দরজার পাশে অনেক বার ডাকে। এবং শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে বাহির থেকেই বিদায় নিয়েই শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। সাইরাহ্দের বাড়িতে আসতেই তাহেরা যতটুকু পারে সাহিত্যের সেবাযত্ন করতে থাকে৷ সবুর মিয়ার যদিও এসবে আগ্রহ নেই তবুও সাইরাহ্ ঘাড় থেকে নেমেছে এই খুশিতে সে সাহিত্যর আপ্যায়নেস ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে। সাহিত্যও বোঝে সবুর মিয়ার মনের খবর। সবুর মিয়ার মুখের দিকে তাকিয়েই সে কুটিল হাসে৷ বিড়বিড় করে আওড়ায়,

‘শ্বশুর আব্বাকে উপহার না দিয়ে এতো সহজে ছেড়ে দেওয়া কী উচিত হবে? কিন্তু শ্বশুর আব্বা হাত পা ভাংলেও তো আবার বউ ঘ্যানঘ্যান করবে। বেচারা সাহিত্য!’

নিজেই হা হুতাশ করতে থাকে৷ সময়টা তখন রাতের দিকে৷ সকলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাহিত্য সাইরাহ্-র চৌকিতে শুয়ে উপরের চাতালের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ সাইরাহ্ মা বোনের সাথে কথা বার্তা শেষ করে এসে দেখে সাহিত্য তখনও জেগে৷ বিছানার দিকে এগোতে এগোতে বলে,

‘এখনো ঘুমান নাই? জেগে আছেন কেন?’

‘তুই এতো তাড়াতাড়ি আসলি কেন? আরেকটু পর আসতি।’

সাইরাহ্ বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে, ‘মানে?’

সাহিত্য শুধু নীরব দৃষ্টিতে তাকায়। জবাব দেয় না৷ উঠে বসে বলে, ‘আমার একটু শহরে যাইতে হবে। কাল সকাল হইতে হইতে চলে আসবো।’

সাইরাহ্ বোকার মতো এবারও প্রশ্ন করে, ‘মানে?’

সাহিত্য কটমট করে বলে, ‘মানে মানে করা ছাড়া আর কিছু বলতে পারিস না?’

‘না।’

সাইরাহ্-কে তার মতো ত্যাড়া ভাবে জবাব দিতে দেখে সাহিত্যের কপালে ভাজ পড়ে। সাইরাহ্ দাঁত বের করে হেঁসে বলে, ‘আপনি যেমন সোজা তেমন সোজা উত্তর।’

‘তোর আর মানে বুঝা লাগবে না। সারা রাত বসে বসে মশার সাথে প্রেমালাপ কর।’

‘মশা কথা বলতে পারলে অবশ্যই করতাম। কিন্তু আপনি এতো রাতে শহরে যাবেন কেনো? আর সকালের মধ্যে ফিরবেন কেমনে? এটুকু সময়ের জন্য যাবেন-ই বা কেনো?’

‘এতো প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো না৷ তুই শুধু সকাল হওয়া পর্যন্ত একটু সাবধানে থাকবি৷ তোর বাপ যেনো না জানে যে আমি বাড়ি নাই!’

সাইরাহ্ বুঝে ওঠে না। সাহিত্য ঘরের জানালা দিয়ে বাহিরে উঁকি দেয়। সাইরাহ্ প্রশ্ন করে, ‘আব্বা জানলে কি হবে?’

‘তোর আব্বা জানলে সর্বনাশের উপরে কিছু থাকলে ওইটাই হবে।’

সাইরাহ্ চোখ গরম করে তাকায়। সাহিত্য পাত্তা না দিয়ে বলে, ‘তুই ওভাবে তাকালেই আমি ভয় পাবো নাকি?’

‘না পাইলেন। আপনি এতো রাতে কোন রাজকার্যে যাবেন? এটা তো বলে যান।’

সাহিত্য বেশ শান্ত ভাবেই বলে দেয়, ‘কাজ আছে৷ এসে বলবো।’

সাইরাহ্ ভ্রু কুঁচকে কোমড়ে হাত রেখে বলে, ‘শহরে কী আরো একটা বউ আছে নাকি? তার কাছে যাচ্ছেন?’

সাহিত্য বের হওয়ার জন্য এগিয়েছিলো কিন্তু সাইরাহ্-র কথা শুনে আহম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে। সাইরাহ্ ভ্রু নাচায়। সাহিত্য কপাল চাপড়ে বলে,

‘আমার সাথে তামজীদও কি আমার বউয়ের কাছে যাবে?’.

‘তামজীদ ভাই যাবে?’

‘হ্যাঁ।’

সাহিত্যের ‘হ্যাঁ’ বলতে দেড়ি হলেও সাইরাহ্-র ‘তাহলে যান’ বলতে দেড়ি হয়নি৷ সাহিত্য ভ্রু কুঁচকায়। সন্দিহান কন্ঠে বলে, ‘এতক্ষণ তো এতো প্রশ্ন করলি! যেই শুনলি তামজীদ যাবে সাথে সাথেই ‘যান’ বলে দিলি!’

সাইরাহ্ হাসে৷ জবাব দেয় না। সাহিত্যও আর কথা বাড়ায় না৷ ‘সাবধানে থাকিস’ বলে বের হতে গিয়েও বের হয় না। ফিরে এসে দাঁড়ায় সাইরাহ্-র সামনে। সাইরাহ্ প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালে সাহিত্য সামান্য হেঁসে সাইরাহ্-র বাহুতে হাত রেখে বিছানার ওপর বসায়। শীতল কন্ঠে বোঝানোর মতো করে বলে,

‘সাহেবা, আমি সবসময় তোর পাশে থাকবো না৷ থাকতে পারবোও না। তাই তোর নিজেকে নিজের পাশে সবসময় রাখতে হবে৷ সাইরাহ্ থেকে পুরোপুরি সাহেবা হয়ে উঠতে হবে। আমি সবসময় পারবো না আম্মার সামনে রুখে দাঁড়াতে তখন তোর নিজেকে নিজের জন্য রুখে দাঁড়াতে হবে। লোকে ক’টু কথা বললে সবসময় আমি জবাব দেওয়ার জন্য থাকবো না তখন তোর নিজেকে জবাব দিতে হবে। এই যে আজ যেমন আমি যাচ্ছি তেমন বহুবার আমাকে যেতে হবে আর ততবার তোর নিজেকে নিজের সুরক্ষা বানাতে হবে। নিজেকে নিরাপদ রাখতে হবে। যেকোনো বিপদ, পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। একটা কথা সবসময় মনে রাখবি, আমি আছি৷ সাহিত্য তার সাহেবার পাশে আছে। কিন্তু আজীবন থাকতে পারবো কী না এটা তুইও জানিস না, আমিও জানি না৷’

সাইরাহ্ জবাব না দিয়ে তাকিয়ে থাকে। আজীবন থাকবে না? দু হাত মুঠো করে শক্ত হয়ে বসে থাকে। মাথায় সাহিত্যের প্রত্যেকটা কথা বাজতে থাকে। সাহিত্য সাইরাহ্-র কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায় ছুইয়ে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে যায়। খুব সাবধানে বের হয়। সাইরাহ্ বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে সাহিত্যের যাওয়ার পানে। যতক্ষণ অন্ধকারে সাহিত্য মিলিয়ে না যায় ততক্ষণ সাইরাহ্ তাকিয়ে থাকে। কিসের টানে তাকিয়ে থাকে নিজেও বোঝে না।

চলবে..

#সাহেবা
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_____

২২.(বর্ধিতাংশ)
সাহিত্য আর তামজীদ একসাথে শহরের দিকে রওয়ানা দিচ্ছে। নিজেদের মাঝে কথা বলতে বলতে এগোতেই চোখ পড়ে দুরে একজন নদীর পাড়ে বসে আছে। দুজন একবার নিজেদের দিকে তাকিয়ে একসাথে সেদিকে এগোয়। কাছে যেতেই স্পষ্ট হয় সীমান্তের মুখ। সাহিত্য অবাক কন্ঠে শুধায়,

‘সীমান্ত? এতো রাতে এখানে কী করছিস?’

সীমান্ত পিছু ফিরে তাকায়। শান্ত স্বরে জবাব দেয়, ‘বাড়িতে ভালো লাগছিলো না তাই এখানে এসে বসে আছি।’

তামজীদ বলে, ‘এতো রাতে বাহিরে থাকা নিরাপদ না। বাড়ি যা।’

সীমান্ত ছোট্ট করে ‘হু’ বলে। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজ থেকেই প্রশ্ন করে, ‘তোরা কোথাও যাচ্ছিস?’

‘হ্যাঁ। একটু শহরে যাবো। কাজ আছে। তুই বাড়ি চলে যা।’

‘এতো রাতে শহরে? কী কাজ আছে?’

‘আছে। তুই সাবধানে বাড়ি যা। মামাসাহেব খুঁজবে।’

সীমান্ত আর প্রশ্ন করে না। ‘সাবধানে যাস’ বলে এগোতে নিলেই সাহিত্য হাত ধরে আটকে দেয়। কোনো কথা ছাড়াই সরাসরি জড়িয়ে ধরে। সীমান্ত আগের মতোই শান্ত থাকে। সাহিত্য জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই বলে,

‘আমার হাতে আর কিছু নেই ভাই। তুই কষ্ট পাস না। নিজেকে সামলে নে।’

সীমান্ত জবাব দেয় না। সাহিত্য আর তামজীদ বিদায় নিয়ে চলে যায়। সীমান্ত নিজের জায়গা থেকে নড়ে না। সেখানেই আবার বসে পড়ে। একটা একটা করে ঢিল ছুড়তে থাকে পানিতে। মনের ক্ষ’ত গলা চেপে ধরে আছে৷ আটকে যাওয়া শ্বাস নিয়েই ঘাসের ওপর শুয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করতে থাকে।


প্রধানের বাড়ির পেছনে কালো পোশাক পড়া সেই আগন্তুককে দেখা যায়। যার মুখ ঢাকা। খুব বিচক্ষণতার সাথে আশে পাশে নজর বুলিয়ে প্রধানের ঘরের দিকে তাকায়। দু তলায় থাকে প্রধান আর তার বউ। এসময় সবাই গভীর ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। পা টিপে টিপে খুব সাবধানে ঘরের নিচে এসে দাঁড়ায়। কুটিল হেঁসে বিড়বিড় করে আওড়ায়,

‘প্রধান, সবচেয়ে বড় শ’য়’তা’ন তো তুমি। বড়টাকে মা’রতে পারলে ছোটগুলারে ধরতে পারা শুধু সময়ের ব্যাপার।’

আরেকবার চারপাশে নজর বুলিয়ে খুব সাবধানে একটা ঢিল ছোড়ে ঘরের জানালায়। প্রথম বারে কাজ হয় না বলে দ্বিতীয় বারের মতো আবার ছোড়ে। কিছুক্ষণ বাদেই প্রধান জানালা খুলে চিৎকার করে ডেকে ওঠে,

‘ক্যাডা রে? রাইত বিরাতে মজা পাইছো? ধরতে পারলে ঠ্যাং ভাইঙ্গা হাতে ধরাই দিমু।’

নিচে থাকা আগন্তুকটি সাথে সাথেই একটা দড়ি ছুড়ে মা’রে প্রধানের দিকে। দড়ির মাথায় গিট দিয়ে গোল করে বাধা ছিলো। যাতে করে সেই গোল অংশ প্রধানের গলার ভেতর ঢুকে যায়। আগন্তুকের ছুড়ে দেওয়া দেখে মনে হয় সে এসবে খুবই অভিজ্ঞ। প্রধান আকস্মিক আক্রমণে চিৎকার করে ওঠে। আগন্তুকটি সাথে সাথেই দড়িতে হেঁচকা টান দেয় যাতে করে সরাসরি প্রধান উল্টে পড়ে নিচে। বিকট চিৎকারে প্রধান গিন্নির ঘুম ভেঙে যায়। আশে পাশে নিজের স্বামীকে দেখতে না পেয়ে ভয়ে ভয়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়। ততক্ষণে আগন্তুকটি প্রধানের কাছে চলে আসে। ওপর থেকে নিচে পড়ায় প্রধানের মাথা ফেটে গেছে। আগন্তুক প্রধানের ছটফট করা দেখে প্রশান্তি পায়। একটা রাম দা বের করে প্রধানের সামনে ধরতেই প্রধান গিন্নি চেঁচাতে শুরু করে। রীতিমতো গলা ফাটিয়ে সবাইকে ডাকছে৷ আগন্তুক বিরক্ত হয়ে রাম দা দিয়ে এক কো’প দেয় প্রধানের গলার দিকে৷ কিন্তু হুশ থাকায় প্রধান সরে যায়। কো’পটা পড়ে যায় তার হাতে। আগন্তুক কটমট করে তাকায়। আরেক কো’প তুলতেই বাড়ির ভেতর থেকে বেলীর বাবারা দৌড়ে আসতে শুরু করে। আগন্তুক রাম দা নিয়েই হাওয়ার গতিতে ছুটে পালিয়ে যায়। জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে কোনদিকে যায় বোঝা যায় না। প্রধান গিন্নি হাউমাউ করে কান্না শুরু করেছে৷ প্রধানকে সেই রাতেই দ্রুত শহরে নেওয়া হয়।

সকালের আলো ফোটার আগেই সাহিত্য ফিরেছে। সাইরাহ্ সারারাত ঘুমায়নি। সাহিত্য আসার পরই একটু ঘুমাতে পেরেছিলো। তাও সকালে চেচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেছে। ঘুম কাটানোর চেষ্টা করে বাহিরে বের হতেই দেখে আশে পাশের মানুষরা ছোটাছুটি করছে। সাইরাহ্ বুঝতে না পেরে তাহেরা শুধায়,

‘কি হইছে আম্মা? সবাই এমনে ছোটে ক্যান?’

তাহেরা স্বাভাবিক ভাবেই বলে, ‘রাইতে ক্যাডা জানি প্রধানের ওপর হামলা করছিলো। তাই সবাই ওইদিকেই যাইতাছে।’

সাইরাহ্ অবাক হয়ে যায়। মুখ থেকে আপনাআপনি বের হয়ে যায়, ‘মানে? কি কও আম্মা? কখন হইলো এগুলা?’

‘জানি না।’

সাইরাহ্ দৌড়ে আবার ঘরের ভেতরে যায়। সাহিত্যকে জাগানোর জন্য গায়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে বলে, ‘সাহিত্য ভাই, তাড়াতাড়ি উঠেন। প্রধান কাকারে কারা জানি হামলা করছিলো! তাড়াতাড়ি উঠেন।’

সাহিত্য বিরক্তি নিয়ে তাকায় সাইরাহ্-র দিকে৷ চোখ মুখ কুঁচকে বলে, ‘আমারে কী তুই শান্তিতে ঘুমাইতে দিবি না সাহেবা? সারারাত তো নিজে পড়ে পড়ে ঘুমাইছিস, এখন আমারে ঘুমাইতে দে।’

সাইরাহ্ কপাল চাপড়ায়। বিড়বিড় করে বলে, ‘তার জন্য চিন্তায় আর ঘুমাইলাম কখন? সে এখন আমারেই ধমকায়। আশ্চর্য লোক!’

দম নিয়ে আবার ধাক্কা দেয় সাহিত্যকে। সাহিত্য উঠে বসলেই একই কথা সাইরাহ্ আবার বলে, ‘আপনার মামা সাহেবরে কাল কে বা কারা হামলা করছিলো। সবাই ছুটতেছে ওইদিকে।’

সাহিত্য যেনো জানতো এমন কিছু হবে কিন্তু এতো দ্রুত হবে সে বুঝে ওঠেনি৷ তাই অবাক চোখে চেয়েই ব্যস্ত ভাবে উঠে পড়ে৷ সাইরাহ্-কে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘তুই থাক, আমি আসতেছি।’

সাইরাহ্ চেঁচিয়ে বলে, ‘আমিও যাবো। দাঁড়ান! ‘

সাহিত্য দাঁড়ায় না। ছুটতে ছুটতেই বলে, ‘খবরদার আসবি না। আমি আসতেছি।’

সাইরাহ্ সেদিকে তাকিয়েই হতাশ শ্বাস ফেলে। তাহেরা রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে শুধায়, ‘কী রে? জামাই কই যাইতাছে এতো হড়বড় কইরা?’

‘প্রধান কাকার বাড়ি।’

তাহেরা ফিরে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বিড়বিড় করে, ‘যা হইছে এক্কেরে ভালা কাম হইছে। এই শ’য়’তা’নগুলার লাইগা আমার মাইয়া খালি ম’রে নাই।’

সাহিত্য আর তামজীদ একসাথে প্রধানের বাড়ি যায়। সেখানেই শুনতে পায় প্রধান শহরের হাসপাতালে। ভাগ্য ভালো থাকায় সে বেঁচে গেছে। তবে আ’ঘাতটা গভীর। সাহিত্য তামজীদকে ফিসফিস করে বলে,

‘মামাসাহেব তো স্বর্ণভাগ্য নিয়ে জন্মাইছেরে তামজীদ। ম’রতে ম’রতেও বাইচা গেলো।’

তামজীদের হাসি চলে আসলেও সে চাপিয়ে নেয়। সীমান্ত বাড়ি নেই। সেও গেছে শহরে। তামজীদ আশে পাশে নজর বুলাতেই চোখে পড়ে বেলীকে। বেলী আতঙ্কিত ভাবে দুরে দাঁড়িয়ে আছে। গতরাতে সেও ভ’য়ং’কর ওই দৃশ্য দেখেছে। তারপর থেকেই তার চোখের সামনে ওই ঘটনাটা বার বার ভেসে বেড়াচ্ছে। তামজীদ সাহিত্যকে দাঁড়াতে বলে সাবধানে বেলীর দিকে এগিয়ে যায়। বেলী তামজীদকে দেখেই নিজেকে আরো গুটিয়ে নেয়। তামজীদ ভীষণ নরম স্বরে শুধায়,

‘কী হইছে বেলী? কিছু হইছে? এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?’

বেলী নড়ে ওঠে। দেয়ালের সাথে আরো মিশে যায়। তামজীদ আরো নরম সুরে বলে, ‘তুমি আমাকে ভয় পাচ্ছো বেলী?’

বেলী দুদিকে মাথা নাড়ায়। তামজীদ ফের শুধায়, ‘তাহলে?’

বেলী শ্বাস আটকে বলে দেয়, ‘গত রাতে আমি দেখেছি। বড় আব্বাকে কীভাবে ওই লোক!’

তামজীদ আরো শান্ত হয়ে যায়। বেলী যে কতটা ভয় পেয়েছে সে আন্দাজ করতে পারে। তাই বড় বড় দুটো শ্বাস নিয়ে বোঝানোর মতো করে বলে, ‘ভয় পেও না বেলী। আমরা আছি না? ভয় কিসের? কিছু হবে না।’

বেলী উপর-নীচ মাথা নাড়ায়। সে কাউকে বোঝাতে পারবে না তার ভেতর কোন ঝড় বইছে! সে কাউকে বলতেও পারবে না। গতরাতে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে সেই আগন্তুকের মুখ সে দেখেছে। এতো পরিচিত মুখের এতো ভ’য়ং’কর রূপটা সে মেনে নিতে পারছে না। কাউকে বলা উচিত হবে কী না তাও ভেবে পাচ্ছে না। তামজীদ বেলীকে বোঝায়। বেলী শুধু মাথা নাড়ায়। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। তামজীদ চলে যেতে নিলে বেলী পেছন থেকে বলে ওঠে,

‘আমি কাল তাকে দেখেছি তামজীদ ভাই।’

তামজীদ চমকে ওঠে৷ চট করে পিছু তাকিয়ে অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করে, ‘কাকে?’

বেলী জবাব না দিয়ে ছুটে চলে যায়। তামজীদ সেদিকে তাকিয়ে দ্রুত পা বাড়ায় সাহিত্যের কাছে৷ এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা সাহিত্যকে জানাতে হবে। বেলী আগন্তুককে দেখেছে মানে নিশ্চয় সে ওই খু’নীকে চিনতে পারবে।


ক’দিন থেকে ছন্দর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। দু মাস হলো তার পিরিয়ড মিস গেছে। ক’দিন থেকে শুধু বমি হচ্ছে। মাছ, গোস্তর গন্ধ সে একদমই সহ্য করতে পারছে না। আজ সকাল থেকেও তার ৩ বার বমি হয়েছে। মন ইঙ্গিত দিচ্ছে সে গর্ভবতী। কলপাড়েই ছন্দ বসে পড়ে। একদিকে তার বাবার এই অবস্থা। অন্যদিকে সে গর্ভবতী হয়ে গেলে মুখ দেখানোর উপায় থাকবে না। কী করবে ভেবে পায় না। চোখ থেকে অনবরত পানি ঝড়তে থাকে। মনে পড়ে যায় ২ মাস আগের সেই বিকেলের কথা। বেলী আর সে পড়তে যাচ্ছিলো। কিন্তু ক’দিন শাহিদের সাথে দেখা না হওয়ায় সেদিন সে শাহিদের সাথে দেখা করে। বেলী চলে যাওয়ার পর তারা নদীর পাড়ে বসে কথা বলছিলো। হঠাৎ-ই ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামে। দুজনে ভিজে কোনো রকমে দুরে থাকা একটি কুড়েঘরে উঠে পড়ে। এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেদিন দুজনে ঘোরের বশে কাছাকাছি চলে আসে। পরে অবশ্য দুজনেই কপাল চাপড়াচ্ছিলো। এছাড়া আর উপায়ও ছিলো না। তবে শাহিদ কথাও দিয়েছিলো কিছুদিনের মাঝেই তাকে বিয়ে করবে। ছন্দ শুধু নখ কামড়াচ্ছিলো। বেলী এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। বাড়ির কেউ জানলে তাকে কে’টে টু’করো টু’করো করে ফেলবে। অনেকক্ষণ থেকে ছন্দ কলপাড় থাকায় বাহির থেকে বেলীর মা ডাকে,

‘ছন্দ, ভেতরে কী করতাছো? শরীল খারাপ লাগতাসে? বাইর হও দেহি।’

ছন্দ ভয় পেয়ে যায়। কোনোরকমে নিজেকে সামলে চোখে মুখে পানি দেয়। বড় বড় শ্বাস নিয়ে বলে, ‘ঠিক আছি কাকি। সমস্যা নাই।’

এরপর বের হয়ে আসে। বেলীর মা তাকে আবারও প্রশ্ন করে। বিনিময়ে ছন্দ হেঁসেই আবারও একই জবাব দেয়। তারপর সরাসরি নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। বেলী আর সে একই ঘরে থাকে। ছন্দ ঘরে ঢুকতেই দেখে বেলী সেখানে আগে থেকেই ছিলো। ছন্দ ঘাবড়ে যাওয়া মুখ নিয়েই ঘরে ঢোকে। বেলী সেদিকে তাকিয়ে শুধায়,

‘কি হইছে ছন্দ? চোখ মুখ এমন লাগে কেন?’

ছন্দ বুঝে ওঠে না সত্যিটা বলবে নাকি বলবে না। বার বার ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মোছে। বেলী কাছে এসে বাহুতে হাত রাখে। আবারও প্রশ্ন করে, ‘কি হইছে ছন্দ? তোর শরীর খারাপ?’

ছন্দ বেলীকে জড়িয়ে ধরে। শব্দ করে কেঁদে ফেলে। বিড়বিড় করে আওড়াতে শুরু করে, ‘আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি, বেলী। আমি এখন কী করবো?’

কিন্তু কান্নার শব্দে বেলী কথাগুলো শুনতে পায় না। মুখ উঁচু করে ধরে চোখের পানি মুছে দেয়। নিজ থেকেই বলে, ‘বড় আব্বার জন্য কষ্ট হচ্ছে?’

ছন্দ ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে। উপর-নীচ মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। বেলী ছন্দকে শান্ত করে। ছন্দ নিজের ভেতরের ঝড় উগলে দিতে পারে না। বেলীও সরল মনে ছন্দের কথা বিশ্বাস করে নেয়। বেশ অনেকক্ষণ দুজনে একসাথে বসে থাকে। কথা বলে। বেলীকে তার মা ডাকলে খুব সাবধানে ছন্দও বেড়িয়ে যায়। উদ্দেশ্য শাহিদের সাথে দেখা করা। কোনোরকমে নিজেকে সামলে ছুটতে থাকে। শাহিদদের বাড়ির সামনে এসে অনেক সাহস নিয়ে দরজা অব্দি যায়। কিন্তু গেইটে তালা দেয়া দেখে তার মাথা ঘুরায়। আশে পাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে আরো হতাশ হয়। চলে আসতে নিলে ওই পথেই একজন লোক আর একজন মহিলাকে দেখে ছুটে যায়। ব্যস্ত ভাবে শুধায়,

‘এই বাড়ির কাকারা কোথায় গেছে জানেন?’

মহিলাটি জবাব দেন, ‘কোন জানি আত্মীয়ের বাড়ি গেসে। আমরা ঠিকটা জানি না।’

ছন্দ আর আটকায় না। শাহিদ কোথায় গেলো হঠাৎ করে? এই সময় তার শাহিদকে প্রয়োজন। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে তা ভেবেই ছন্দের কান্না আসে। বার বার নিজেকে ধিক্কার দেয়। শাহিদ তাকে বিয়ে করবে তো? মেনে নিবে তো সবকিছু?


সাহিত্য ফিরে এসেছে। ক্লান্ত ভাবে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সাইরাহ্ আসে। ব্যস্ত গলায় শুধায়, ‘ওদিকের কী অবস্থা?’

সাহিত্য গা ছাড়া ভাবে টিটকারি করে বলে, ‘ম’রে নাই। বাঁইচা আছে।’

সাইরাহ্ বোঝে না লোকটা এমন কেন! হতাশ গলায় বলে, ‘আপনার দ্বারা সোজা ভাবে জবাব দেওয়াটা সম্ভব না!’

‘না।’

সাইরাহ্ কপাল চাপড়ায়। ঘর থেকে বের হতে নিলে পেছন থেকে সাহিত্য ডেকে বলে, ‘আমার জন্য একটু পানি তুলে দে। গোসল করবো। আর তুইও গোসল করে খেয়ে দেয়ে তৈরী হয়ে নিবি।’

‘কেন? কোথায় যাবো?’

‘ও বাড়ি যাবো আমরা আজ। ওই বাড়ি থেকে কেউ নিতে আসবে এই আশা করিস না। তোর যা বাপ! আমাকে খাওয়াচ্ছে এটাই আমার ভাগ্য আর যদি আমার গোষ্ঠীসহ সব তোকে নিতে আসে তাহলে এখানেই পড়ে ম’রে যাবে।’

‘সাহিত্য ভাই!’

‘কী?’

‘আব্বাকে নিয়ে এগুলা বলবেন না।’

সাহিত্য উঠে বসে। চোখ মুখ কুঁচকে বলে, ‘তা কী বলবো?’

‘কিছুই বলবেন না।’

‘আচ্ছা যা, বলবো না।’

সাইরাহ্ জানে এর সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই৷ তাই পানি তোলার জন্য চলে যায়। কলপাড়ে পানি তুলে এসে আবার ডেকে যায়। সাহিত্য প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে কলপাড়ে চলে যায়। গোসল করে বের হলে তার ঘরেই তাহেরা খেতে দেয়। সাইরাহ্ সাহিত্যের সামনে বসে আছে আর উশখুশ করছে। সাহিত্য খাওয়ায় মনোযোগ রেখেই বলে,

‘খাইতে মন চাইলে বল, কিন্তু আমার খাওয়ার দিকে নজর দিস না।’

সাইরাহ্-র মুখ হা হয়ে যায়। অবাক হয়ে বলে, ‘আমি খাবারে নজর দিচ্ছি?’

‘তোর ভাবসাব দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। ‘

সাইরাহ্ কটমট করে ওঠে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘কী এমন মহাভারত খাচ্ছে উনি যে তার দিকে আবার আমার নজর দেওয়া লাগবে!’

‘তাহলে কী বলতে চাচ্ছিলি?’

‘বলতে চাচ্ছিলাম আমি ক’দিন এখানে থাকি। তারপর চলে যাবো।’

সাহিত্য খাবার তুলে সাইরাহ্-র মুখের সামনে ধরে। সাইরাহ্ একবার খাবারের দিকে আরেকবার সাহিত্যের দিকে তাকায়। সাহিত্য কপাল কুঁচকে বলে, ‘হা কর।’

‘আপনি খেয়ে নেন। আমি পরে খেয়ে নিবো।’

সাহিত্য তবুও সরায় না দেখে ইতস্তত করতে করতে হা করে। সাহিত্য এক লোকমা ভাত সাইরাহ্-র মুখে দিয়ে তারপর বলে, ‘এখন বল, কী বলতে চাচ্ছিলি! এখানে থাকবি?’

সাইরাহ্ উপর-নীচ মাথা নাড়ায়। সাহিত্য আরেক লোকমা ভাত সাইরাহ্-র মুখে দিয়ে বলে, ‘একদিনের জন্য আসছি দুজন তাই তোর বাপ খাওয়ানোর শোকে আ’ধ’ম’রা হয়ে গেছে আর যদি শোনে ক’দিন থাকবি তাহলে টাটা বায় বায় করে উপরেই চলে যাবে।’

সাইরাহ্ চোখ গরম করে। সাহিত্য পাত্তা দেয় না। আরেক লোকমা ভাত সাইরাহ্-র মুখের সামনে ধরলে সে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সাহিত্য মুখ ধরে সোজা করে গাল চেপে মুখের ভেতর ভাত দেয়। তারপর বলে,

‘পরে আবার নিয়ে আসবো। এখন আর থাকা লাগবে না। তাছাড়া আমার নতুন বউ। আমি রেখে একা একা থাকতে পারবো না।’

সাইরাহ্ মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে হেঁসে ফেলে। সাহিত্য নিজে খায় আর সাইরাহ্-কেও খাইয়ে দেয়। তারপর দুজনে মিলে তৈরী হয়ে তাহেরার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। তাহেরা থাকতে বললে সাহিত্য বুঝ দিয়ে দেয়। দুজন পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে সাহিত্যদের বাড়ির দিকে যায়। দুজনের মাঝেই নিস্তব্ধতা বিরাজমান। সেই নিস্তব্ধতা কাটে ছন্দকে দেখে৷ রাস্তার মাঝেই ছন্দকে এভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে সাইরাহ্ আর সাহিত্য এগিয়ে যায়। সাইরাহ্ ছন্দকে আগলে নিয়ে বলে,

‘কী হইছে ছন্দ? তোমারে এমন লাগে কেন?’

ছন্দ বড় বড় শ্বাস টানে। সাহিত্যকে দেখে আর কোনো কথা বলে না। সাইরাহ্-র থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কোনো কথা ছাড়া-ই ছুট লাগায়। সাইরাহ্ হতভম্ব হয়ে বলে, ‘কী হলো এটা?’

সাহিত্য গম্ভীর চোখে ছন্দের যাওয়ার দিকে তাকায়। তারপর সাইরাহ্-কে শান্ত স্বরে বলে, ‘তোর ভাবা লাগবে না। চল!’

সাইরাহ্ বুঝে ওঠে না। আরেকবার পিছে তাকিয়ে সাহিত্যের পাশে হাঁটতে শুরু করে। সাহিত্যর ব্রেইনে ততক্ষণে যুদ্ধ লেগে গেছে৷ সব মিলিয়ে সে সমাধানের চেষ্টায় আছে।

চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)