সুখান্বেষণ পর্ব-০৭

0
2

#সুখান্বেষণ পর্ব:৭

#আরশিয়া_জান্নাত

তাশরিফ মানুষ হিসেবে কেমন সেটা গত ৪মাসে সম্পূর্ণ না বুঝলেও এটা বুঝতে পারি উনি খারাপ না। পরিবারের সবার সঙ্গে তার সম্পর্ক বন্ধুত্ব সুলভ, তার আত্মীয়স্বজনরাও তাকে নিয়ে সুধারণা রাখে। বিপদে আপদে সবার খোঁজখবর রাখার ও সাধ্যমতো সাহায্য করার প্রবণতা চোখে পড়ার মতোই। আমার প্রতিও সে ভীষণ যত্নশীল। তবে কিছুক্ষেত্রে তার চিন্তাভাবনা একটু রক্ষণশীল। দোষ বলতে গেলে এটাই আসবে সে যেখানে না বলে সেখানে হ্যাঁ বলানোর সাধ্য কারো নেই। এই একরোখা স্বভাব বাদে তার মধ্যে আপাতত কোনো দোষ দেখছি না।
তাকে আমি ভরসা করতে পারি তবে সেটা একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা টেনে।
নাফিসার বিষয়ে আমার দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। আমি ব্যাপারটা মায়ের সঙ্গে আলাপ করবো নাকি তাশরিফের সঙ্গে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেছি বটে। কিন্তু বাইরে থেকে ফেরার পর তার চেহারা দেখে কিছু বলার আর সাহস হয়নি। মুখ ভার করে চুপচাপ ডিনার সেরেই যখন শুতে চলে গেল আমি অবাক না হয়ে পারিনি। কেননা সে রোজ রাতে ঘুমানোর আগে সূরা মূলক পাঠ করে। আমিও কিছু না বলে মশারি টানিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে নাস্তা খেয়েই সে বেরিয়ে গেলো। কোথায় গেছে কখন আসবে কোনো কিছু ই বলে যায়নি। বাবা বললেন, হয়তো কোনো ইন্টারভিউ তে যাচ্ছে, এটা বলতে অস্বস্তি হওয়ায় বলেনি হয়তো। মাও তার সঙ্গে একমত পোষণ করে বললেন, “বারবার এক কথা বলতে ওর লজ্জা লাগে। তাই বলেনি তুমি টেনশন নিও না।”

যতোই মনকে বলি মন তবুও মানেনা। আমি জানি উনি বেকার থাকাটাকে পছন্দ করছেন‌‌ না। তাই চেষ্টা করছেন দ্রুত কিছু করার। সেদিন প্রতিবেশী একজন তো কথার ছলে বলেই ফেলেছিল কী বিয়ে করালেন ছেলেকে কয়েকমাসের মধ্যেই বেকার হয়ে গেল। ঘরে বৌ এলে সবার ভাগ্য খুলে আপনাদের দেখি ভেঙে গেল।
যদিও মা অনেক রেগে গিয়েছিলেন, মহিলাটিকে কিছু কড়া কথা শুনিয়ে বিদায় দিয়েও তার রাগ পড়েনি। আমার শ্বশুর শাশুড়ি অনেক ভালো মানুষ বলেই আমাকে এরূপ কোনো অপবাদ দেননি, যদি তাদের জায়গায় অন্য কেউ হতো এতো দিনে এ কথা আমি ঘরেই শুনতে পেতাম। লক্ষ্মি অলক্ষ্মীর ব্যাপার আমাদের ধর্মে না থাকলেও সংস্কৃতিতে মিশে আছে। অপয়া কুফা যে নামেই বলেন‌না কেন এসব চলে আসেই। আর কারো কথা বাদ আমার বাবা যদি শোনেন সবার আগে উনিই বলবেন, “কুফার পা পড়েছে না ধ্বংস তো হবারই ছিল!”
আমি মোনাজাতে শুধু বলি ওর একটা ভালো চাকরি হোক, আমার মানসম্মান নষ্ট না হোক।

সারাদিন শেষেও যখন তাশরিফ ফিরলোনা আমি তাকে কল করি। সে রিসিভ করে বলল, “আমার ফিরতে একটু দেরি হবে, তুমি খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে যেও। টেনশন করোনা আমি ঠিক আছি।”

মা অনেক বার বললেও আমি না খেয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমার একটা বাজে অভ্যাস হচ্ছে টেনশনে আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। যদি জোর করে কিছু মুখে তুলি বমি করে ফেলে দিতে হয়। উনাকে না দেখে আজকে আমার গলা দিয়ে এক ফোঁটা পানিও নামবে না। বেলকনিতে গিয়ে একটু পরপর উঁকি দিচ্ছি সে আসছে কি না দেখতে। বহুকষ্টে রাত ১২টা অবধি চোখ মেলে রাখলেও এরপর আর সম্ভব হলোনা। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারিনা। মাঝরাতে আচমকা ঘুম ভেঙ্গে যায় পাশে হাঁতড়ে খুঁজি সে আছে কি না। আমার অস্থিরতা হয়তো সে বুঝে। আমার গা ঘেষে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমি আছি, শান্তি তে ঘুমাও।”

আমি তার বুকের ওমে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলি, কোথায় ছিলেন সারাদিন? কখন ফিরেছেন ডাকেন নি কেন আমাকে?”

সে ঘুম জড়ানো গলায় বললো, “কাল সকালে সব বলবো। আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে।”

আমি মুখ তুলে তার গালে চুমু দেই, আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে বলি, “আপনি সুস্থ থাকুন, আমার পাশে থাকুন। আর কিছু চাই না আমার।”
সে আরো গভীরভাবে আলিঙ্গন করে গাঢ় নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো। বুঝলাম জনাব ভীষণ ক্লান্ত।

ফজরের পর তার সঙ্গে বাইরে বের হবার পর সে বলল, “একটা কথা কী জানো হুমায়রা কখনো কারো উপকার করে বিনিময় আশা করতে নেই। কারণ মানুষ উপকার মনে রাখেনা।”

“হুম ঠিক।”

“যাক আল্লাহ ভরসা, দুঃসময় আসে মানুষ চেনাতে। আমি ঠিক করেছি যেকোনো একটায় জয়েন করে ফেলবো। অযথা সময় নষ্ট করার চেয়ে ঢুকে যাওয়া বেটার। পরবর্তীতে ভালো সুযোগ আসলে নেয়া যাবে।”

“যা হবে ভালোর জন্য হবেই ইনশাআল্লাহ।”

“আমি খুব স্যরি হুমায়রা। মা বলছিলো তুমি নাকি আমাকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা করো। আমি ও খেয়াল করেছি এ কয়েকদিনে তোমার চেহারা বদলে গেছে। তুমি আর টেনশন করোনা সব আবার ঠিক হয়ে যাবে।”

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই।

তাশরিফ পরিকল্পনামাফিক একটা কোম্পানিতে জয়েন করে। আগের রুটিনে ব্যাক করায় তার জীবনধারা স্বাভাবিক হয়। আমি ও স্বস্তি পাই।
নাফিসার স্কুলে হলিডে চলায় ওর ব্যাপারটা নিয়ে আপাতত চিন্তা নেই।

একদিন দুপুরে রান্নার কাজ করছিলাম তখন দরজায় নক পড়ে। মা তড়িঘড়ি এসে বললেন, “তানহা তোমার ফুফু শাশুড়ি এসেছে, গিয়ে কদমবুসি করে ভালোমন্দ খোঁজ খবর নিবে।”

আমি মায়ের কথামতো তার শরবত নিয়ে তার কাছে যাই, বাবা পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর কদমবুসি করতেই উনি বলেন, “তাশরিফের বৌ এটা!”

উনার চেহারায় তাচ্ছিল্যের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠলেও মুখে আর কিছুই বললেন না। আমি উনাকে যাই প্রশ্ন করলাম অন্য দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ না তে জবাব দিলেন। যেন আমার দিকে তাকানোর রুচি তার নেই।

বাবা বললেন, “বৌমা রান্না শেষ হয়েছে? তাহলে তোমার ফুফুর জন্য ভাত বেড়ে ফেলো। অনেক দূর জার্নি করে এসেছেন.. আপা তুই হাতমুখ ধুয়ে নে?”

“এখনই ব্যস্ত হইস না, আমি কোথাও চলে যাচ্ছি না।আসছি যখন সপ্তাহখানেক বেড়াবো।”

“তোর যতদিন ইচ্ছে থাক দিনের হিসাব করছিস কেন? বাড়ির সবাই ভালো আছে তো? আমার ভাগ্নে ভাগ্নীর কি খবর?”

“আছে সবাই ভালো। তোদের কি অবস্থা? ”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

আমি খাবার পরিবেশন করে উনাদের ডাক দিলাম। মা বললেন, আপা আপনি আসবেন জানলে ভালোমন্দ রান্না করতে পারতাম। উপস্থিত যা আছে কষ্ট করে খেয়ে নেন।”

উনার পাতে খাবার দিতে হাত বাড়াতেই বললেন,”আমি বেড়ে খেতে পারবো। পরের বাড়িতে তো আসি নাই, নিজের ভাইয়ের বাড়িতে আসছি। আমাকে মেহমানের মতো করতে হবেনা।”

আমি হাত সরিয়ে পিছিয়ে গেলাম, মা বললেন,” তানহা তুমি গোসল করে নামাজ পড়ে নাও তাহলে।”

“জ্বি আচ্ছা।”

আমি রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াই। আমাকে দেখতে কী এতোটাই জঘন্য লাগছে যে আমার দিকে তাকাতেও কারো ঘেন্না হয়? আমার হাতে বাড়া খাবারে অরুচি?
আমি দ্রুত ওয়াশ রুমে ঢুকি। সময় নিয়ে গোসল করি। নামাজ পড়ে সিঁড়ি তে পা রাখতেই শুনি উনি বাবা মায়ের উপর চেঁচিয়ে বলছেন, “আমার রাজপুত্রের মতো ছেলেটার জন্য এ কি মেয়ে আনলে? দুনিয়াতে মেয়ের কী অভাব পড়েছিল?”

বাবা,”এসব কি ধরনের কথাবার্তা বলছো? মানুষ কে বাহ্যিকভাবে জাজ করার অভ্যাস তোমার গেলোনা! কয়দিন থাকো বুঝবা ও কত ভালো মেয়ে, আমাদের সবাইকে কত যত্ন করে।”

“তা তো করবেই, যত্ন না করলে বশে আনবে কেমনে। যাদের চেহারা নাই তারাই শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সেবাযত্ন করে মন জুগিয়ে চলে। নয়তো ভাত মিলবে নাকি?”

“রিজিক কারো জন্য থেমে থাকেনা। আর মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি, এটা কারো হাতে নাই। তুমি ওকে কটু কথা বলে বরং আল্লাহর সৃষ্টিকর্ম কে অপমান করতেছো।”

“বাবারে মেয়ের দেখি আসলেই অনেক তেজ! তোদের সবাইকে তাবিজ করছে নাকি? যেভাবে পক্ষ নিচ্ছিস.. তাশরিফের মনে ধরছে তো নাকি তোরা বাধ্য করে বিয়ে দিলি? মেয়ের বাপের অনেক টাকা?”

“ছি আপা এই চিনেন আপনি আপনার ভাইকে? উনি টাকার জন্য ছেলে বিয়ে করাবেন না এইটুকু তো আপনার জানা কথা!”

“তোমরা সবাই নির্বোধ হয়ে গেছো। আমার ই ভুল হয়েছে, যখন বলছিলা ওর জন্য মেয়ে দেখতেছো তখন ই আসা উচিৎ ছিল। যাক এসব বলে আর লাভ কী এখন। আমার ভাতিজার জীবন শেষ…”

আমি আর নিচে গেলাম না। নিজের ঘরে বসে রইলাম চুপচাপ। আমি জানি মানুষ আমাকে প্রথম দেখায় কখনোই পছন্দ করেনা। যারা দেখতে সুন্দর হয় তাদের প্রতি মানুষের বিশেষ আগ্রহ ও ভালোবাসা জন্মে। প্রথম দেখাতেই মানুষের মন জয় করে ফেলে‌ ওরা। আমরা যারা আহামরি সুন্দর নই বরং চাপা রঙের তারা যতোই আন্তরিকতা দেখাই, কলিজা কেটে খাওয়াই; মানুষ আমাদের সহজে পছন্দ করতে চায়না। আমাদের গায়ের রং টা যেন সব ছাপিয়ে যায়।
আমি মানুষের এসব রিয়েকশনে অভ্যস্ত। এখন‌ বরং যারা আমাকে পছন্দ করে তারা কেন‌ করে এই টেনশনে মরে যাই। ম্যাসেজের শব্দ শুনে ফোন হাতে তুলে দেখি তাশরিফ টেক্সট করেছে,”লাঞ্চ করেছে আমার বিবিজান?”

“করবো একটু পর। আপনার খাওয়া হলো?”

“হ্যাঁ মাত্র ই। আজ দেরি যে?”

” রান্না শেষ করে গোসল করতে দেরি হলো তাই আর কি।”

“ওহ আচ্ছা তাহলে খেয়ে নাও। ”

“ছোট ফুফু এসেছেন। আসবার সময় উনার জন্য কিছু নিয়ে আসবেন..”

উনি কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললেন,”হুমায়রা তুমি কী জানো একটা বিশেষ কথা? যে কথা পুরো পৃথিবীতে রটে গেছে?

“কী কথা?”

“তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি”

“তাই নাকি!”

“হুম সত্যিই তাই।”

“আচ্ছা জেনে ভালো লাগলো।”

“সত্যি ভালো লেগেছে?”

“হ্যাঁ।”

“তাহলে ছুটি নিয়ে চলে আসি?”

“নাহ, মন‌ দিয়ে কাজ করুন।”

“নিষ্ঠুর নারী! যাই হোক খেয়ে নাও, অনিয়ম করো না কেমন? খেয়ে এসে টেক্সট দিবে অবশ্যই।”

“আচ্ছা।”

আম্মু যখন শুনলো ফুফু শাশুড়ি এসেছেন তাদের দাওয়াত করতে আব্বুকে নিয়ে আসেন এ বাড়িতে। আমি মনে মনে শুধু দোয়া করছিলাম ফুফু উনাদের সামনে কোনো বেফাঁস মন্তব্য না করে বসেন। কিন্তু যার যে ন্যাচার তা সে লুকোবে কিভাবে! তিনি হাসতে হাসতে বললেন, “আপনার গায়ের রং টা পাইলেও তো মেয়েটার ভাগ্য খুলে যাইতো, কেউ বলবে এতো সুন্দর মায়ের মেয়ে এটা!”

আমি চায়ের ট্রে হাতে থমকে গেলাম। উপস্থিত সবার চেহারা বদলে গেল। আব্বু তার হাসিতে হাসি মিলিয়ে বললো,”আমার মা আল্লাহর মেহমান হওয়ার পর আল্লাহর দয়া হইছিল এই এতিমের জন্য, তাই মায়ের মতোই আরেক মা মেয়েরূপে পাঠাইছে। ওর চেহারা গায়ের রং সবকিছু ই অবিকল আমার মায়ের মতো। ওর ভাগ্য খুলছে কিনা জানিনা তবে আমার ভাগ্য ঠিক ই খুলছে ওর জন্মের পর।”

আব্বু আমার পক্ষ টেনে কথা বলেছে আমি যেন আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আব্বুর জবাবে আমার ফুফু শাশুড়ির চেহারা পাংশু হয়ে গেলেও আমার বুকটা আনন্দে ভরে গেল। জীবনের এই প্রথম তিনি আমাকে নিয়ে এতো সুন্দর মন্তব্য করেছেন। আমি সবাই কে চা দেয়ার পর আম্মুর পাশে বসলাম। আব্বু খুব আন্তরিকতার সাথে সবাইকে দাওয়াত দিলেন ওখানে যাওয়ার জন্য।
আম্মু আমার ঘরে বসে বললেন, “তোর ফুফুর কথায় মন খারাপ করিস না মণি। বুড়ো মানুষদের মুখে মিষ্টতা কম থাকে।”

” মন খারাপের কী আছে মিথ্যা কিছু তো বলেনাই। তোমাকে দেখলে সবাই এই কথা বলতো, অনেকে তো মানতেই চাইতো না আমি তোমার মেয়ে হিহি…”

“তোর যতো আজেবাজে কথা।”

“আমি তো আজকে অবাক না হয়ে পারলাম না হিটলার সাহেব কিভাবে কিভাবে এতো ভালো কথা বলছে!”

“ফাজিল মেয়ে,কোনো বাবাই তার মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে মুখ ছোট করতে চায়না। সন্তানেরা তো বাবা মায়ের ই অংশ। ওদের কে ছোট করা মানে নিজে ছোট হওয়া। নিজে যতোই বকাঝকা করুক অন্য কেউ সেটা করলে সহ্য করা যায়না।”

“তাই নাকি!”

“তোর মনটা ভরে উঠেনাই বল?”

“উঠেছে, অনেক খুশি হয়েছি।”

“শুনলাম জামাইয়ের চাকরি ছিল না, কিছু তো বলোস নাই আমাকে। কিভাবে চলছিলি তখন? কোনো অসুবিধা হয়েছিল?”

“আরেহ না, কী অসুবিধা হবে। তুমি অযথাই দুঃশ্চিন্তা করতা তাই বলিনাই‌।”

আম্মু আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,” আমার মেয়েটা দেখি সংসারী হয়ে গেছে! হ্যাঁ রে মণি মাঝেমধ্যে গিয়ে দেখে আসতে পারিস না? বুকটা কেমন খাঁ খাঁ করে তোর জন্য। আমি বড় একা হয়ে গেছি…”

“ছোটুকে বিয়ে করাই দাও, ও তো বলেই সবসময় বিয়ে করবে। এখন কম বয়সে ছেলেদের বিয়ে দেওয়া ট্রেন্ড।”

“তোর মনে হয় ও পারবে? বিয়ে কী ছেলেখেলা? বুঝদার হয়েও অনেকে সংসারের ঘানি কাঁধে তুলতে চায়না সেখানে ও তো…”

“তোমার কাছে আমরা সবাই ই ছোট খোকা। এখনো কী সেই যামানা আছে তিন কুত্তার বয়স না হলে বিয়ে করা যাবে না?”

“ভয় লাগে যদি বড় হলে মনে হয় তাড়াতাড়ি বিয়ে করিয়ে ওকে ঝামেলায় ফেলেছি? এখন তো আবেগের কারণে বলে, ছেলেদের মন আকাশের চেয়েও দ্রুত বদলায়। পরে বৌকে ভালো না লাগলে!”

“তুমি সেলিব্রিটিদের নিউজ পড়ে পড়ে এসব বলতেছো বুঝছি তো। তোমার প্রিয় আমির খানের প্রতিবেদন পড়ে পড়ে তোমার মাথায় এই লজিক আসছে এখন তাই না!”

“শুধু তার দোষ কেন‌ দেস তাহসান মিথিলা, সাইফ আলী খান সবাই তো এই কথা বলে এখন। অল্প বয়সে বিয়ে করে সংসার করছে, বিচ্ছেদের পর বলে কম বয়সে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।”

“ওরা গ্ল্যামার দুনিয়ার মানুষ, তাই এসব বলে। আচ্ছা যাও তোমার যা ইচ্ছা করো। তোমাদের চোখে ছেলেদের বয়স ধরা খায় না। অথচ মেয়ের বেলা ১৩/১৪ থেকেই শুরু…”

“আমার মেয়ের বেলা আমি দেরি করেছি, এই খোঁটা আমাকে দিতে পারবি না।”

আমি দু’হাত জোড় করে বললাম, “ভুল হয়েছে মা ক্ষমা দাও!”

আম্মু হাসতে লাগলেন। বললেন,”কী ভেবেছিস যুক্তিতর্ক শুধু তোরাই দাঁড় করাতে পারিস? ডিজিটাল যুগের ছেলেমেয়েদের সামলাতে সামলাতে আমরাও ডিজিটাল হয়েছি বুঝলি!”

আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম, আসলেই সবাই ডিজিটাল হয়ে গেছে।

চলবে…